text
stringlengths
8
24.4k
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এক ঐতিহাসিক ফ্লাইটে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান ১ সেপ্টেম্বর এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। সেখানে বাহরাইনের তরফ থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা দেয়া হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সপ্তাহে এরকমটাই জানিয়েছেন। এই শান্তি চুক্তি যে পাঁচটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ তা বিশ্লেষণ করেছেন বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদদাতা জেরেমি বোয়েন: ১. উপসাগরীয় দেশগুলো দেখছে বাণিজ্য এবং আরও অনেক কিছুর সম্ভাবনা উচ্চাকাঙ্ক্ষী আমিরাতিদের সাহায্য করবে এই চুক্তি। সংযুক্ত আরব আমিরাত উপসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের এক সামরিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদের দেশ হয়ে উঠেছে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটনের এক বড় কেন্দ্র। মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এই শান্তি চুক্তির ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে রাজি করিয়েছে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র দেয়ার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে। অতীতে এরকম সমরাস্ত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগালের বাইরে ছিল, তারা কেবল এমন সমরাস্ত্র কেনার স্বপ্নই দেখতে পারতো। এরকম সমরাস্ত্রের মধ্যে আছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং ইএ-১৮জি গ্রোলার ইলেকট্রনিক যুদ্ধ বিমান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক বাহিনী এমনিতে যথেষ্ট সুসজ্জিত। এই বাহিনীকে তারা যুদ্ধে পাঠিয়েছে লিবিয়া এবং ইয়েমেনে। কিন্তু তাদের সবচেয়ে সম্ভাব্য বড় শত্রু কিন্তু ইরান। উপসাগরের ঠিক উল্টো দিকে যে দেশটি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপদেষ্টা এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার ইরানকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যেরকম সন্দেহের চোখে দেখে, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রও তাই। বাহরাইনও সন্দেহ করে ইরানকে। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ইরান দাবি করতো বাহরাইন তাদের দেশেরই অংশ। বাহরাইনের শাসকরা সুন্নি। কিন্তু দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শিয়া। কাজেই সুন্নি শাসকরা এই শিয়াদের ইরানের সম্ভাব্য 'ফিফথ কলাম' বা 'ঘরের শত্রু বিভীষণ' বলে ভাবেন। এই দুটি উপসাগরীয় দেশ অবশ্য ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে রাখঢাক কমই করে। এখন তারা ইসরায়েলের সঙ্গে খোলাখুলি বাণিজ্য করার আশায় তাকিয়ে আছে। ইসরায়েল হচ্ছে প্রযুক্তির দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর দেশগুলোর একটি। কোভিড মহামারি যখন ছিল না, তখন ইসরায়েলিরা কিন্তু ছুটি কাটাতে প্রচুর বেড়াতো। কাজেই উপসাগরীয় দেশগুলোর মরুভূমি, সৈকত আর শপিং মলে যেতে তারা উদগ্রীব থাকবে। কাজেই দুতরফের জন্যই হয়তো এটি এক ভালো ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ। ২. মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের নিঃসঙ্গতা কমবে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারটা ইসরায়েলের জন্য সত্যিকার অর্থেই এক বিরাট অর্জন। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাদের ইহুদী রাষ্ট্র এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে 'আয়রন ওয়াল' বা 'লৌহ প্রাচীরের' কৌশলে বিশ্বাসী। ১৯২০ এর দশকে এই কৌশলের কথা প্রথম বলা হয়। এই কৌশলের মূল কথা হচ্ছে, ইসরায়েলকে এতটাই শক্তিশালী হতে হবে যাতে করে শেষ পর্যন্ত আরবরা বুঝতে পারবে ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই। কিন্তু ইসরায়েল আবার মধ্যপ্রাচ্যে একদম একঘরে হয়ে থাকতে চায় না। মিশর আর জর্ডানের সঙ্গে শান্তি চুক্তি হয়েছে সত্যি, কিন্তু সম্পর্ক কখনোই উষ্ণ ছিল না। তবে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের বেলায় ইসরায়েল হয়তো একটু বেশি আশাবাদী হতে পারে। কারণ জেরুসালেম আর অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল থেকে এই দেশগুলো অনেক দূরে। আর ইরানের বিরুদ্ধে জোট আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারটা তো আছেই। মিস্টার নেতানিয়াহু মনে করেন ইরান হচ্ছে তার দেশের এক নম্বর শত্রু। মাঝে মধ্যে তিনি ইরানের নেতাদের তুলনা করেন নাৎসীদের সঙ্গে। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্ভাব্য অস্ত্র চুক্তি সম্পর্কে তার যে আপত্তি ছিল, তিনি আপাতত সেটা চেপে গেছেন। তবে মিস্টার নেতানিয়াহু স্বদেশের রাজনীতিতে কোনঠাসা হয়ে আছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, এই অভিযোগে তার বিচার হতে পারে। তিনি জেলে যেতে পারেন। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় তিনি শুরুটা ভালোই করেছিলেন, কিন্তু এরপর ব্যাপারটা একেবারেই তালগোল পাকিয়ে গেল। বিরোধী দলগুলো এখন প্রতি সপ্তাহেই জেরুসালেমে তার বাসভবনের বাইরে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। কাজেই এরকম এক দুঃসময়ে হোয়াইট হাউজে এমন এক শান্তি চুক্তির অনুষ্ঠান তার জন্য যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ৩. ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির জন্য এক বিরাট সাফল্য এই চুক্তি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্যও নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। মিস্টার ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের কৌশলে বিশ্বাসী। এই শান্তি চুক্তি তার সেই কৌশলের পক্ষে সমর্থন আরও জোরালো করবে। আর নির্বাচনের বছরে এটি তার জন্য একটি দারুণ অস্ত্রও বটে। তিনি যে সবসময় বড়াই করে বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে বড় ''ডিল-মেকার'' হচ্ছেন তিনি, সেটা এখন আরও জোর গলায় বলতে পারবেন। আরও পড়ুন: ইসরায়েলের সাথে শান্তিচুক্তি: আমিরাত ও বাহরাইনের পর কি সৌদি আরব? ইসরায়েল-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক: যেসব কারণে সম্ভব নয় ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি সংঘাতের মূলে যে দশটি প্রশ্ন ইউএই-ইসরায়েলের মধ্যে প্রথম ‘ঐতিহাসিক‘ ফ্লাইট ইসরায়েলের কাছে আরবরা কেন পরাজিত হয়েছিল? গত আগষ্ট মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই তথাকথিত "আব্রাহাম চুক্তি" ঘোষণা করেন। তার যে কোন কাজ, যেটিতে ইসরায়েলের সুবিধা হয়, বা আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সুবিধা হয়, সেটা আমেরিকার ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টানদের খুশি করবে। এই ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টানরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনের একটা বড় ভিত্তি। ইরানের বিরুদ্ধে মিস্টার ট্রাম্প আমেরিকার বন্ধুদের যে জোটের কথা বলেন, সেটা অনেক বেশি ভালোভাবে কাজ করবে যদি উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে গোপন সম্পর্কের খোলস থেকে বেরিয়ে প্রকাশ্যে খোলাখুলি সম্পর্ক স্থাপন করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তথাকথিত "শতাব্দীর সেরা সমঝোতা" বলে যে শান্তি চুক্তির কথা বলতেন, সেটার কোন নিশানা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে এই সমঝোতা, যেটার নাম দেয়া হয়েছে 'আব্রাহাম চুক্তি', তা মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। মিস্টার ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস স্বাভাবিকভাবেই এটিকে তাদের পররাষ্ট্রনীতির এক বিরাট অর্জন বলে বর্ণনা করছে। ৪. ফিলিস্তিনির মনে করছে তারা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার আবারও ফিলিস্তিনিদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে কাঠের চামচ। আব্রাহাম চুক্তিকে তারা এরই মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা বলে বর্ণনা করেছে। আরব দেশগুলোর মধ্যে বহু বছরের একটা ঐকমত্য ছিল। সেটি হচ্ছে, ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক একমাত্র ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার মাধ্যমেই হতে পারে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা যখন পূর্ব জেরুসালেম আর পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের মধ্যে দুঃসহ দিন কাটাচ্ছে, গাজার খোলা কারাগারে বন্দী, তখন ইসরায়েল এই আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক সুদৃঢ় করছে। আবুধাবীর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানই কার্যত সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসক। তিনি বলেছিলেন, এই চুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাজি হতে হবে যে পশ্চিম তীরের এক বিরাট ফিলিস্তিনি এলাকা তারা নিজেদের সীমানাভুক্ত করবে না। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অবশ্য পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি অঞ্চল সীমানাভুক্ত করার পরিকল্পনার জন্য প্রচন্ড আন্তর্জাতিক বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। এ কারণে তাকে মনে হচ্ছিল যেন এই পরিকল্পনা থেকে পিছু হটতে হচ্ছিল। এখন অবশ্য তিনি এই রাজনৈতিক কানা-গলি থেকে বেরিয়ে আসতে যেন মুখ রক্ষার একটা সুযোগ পেলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে এই চুক্তির সুবাদে। তবে এই কাজ তারা কখনোই করতে পারতো না সৌদি আরবের সম্মতি ছাড়া। আরব শান্তি চুক্তি প্রণয়নকারী অন্যতম দেশ হচ্ছে সৌদি আরব, যাতে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার দাবি তোলা হয়েছিল। সৌদি বাদশাহ সালমান হচ্ছেন ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র দুটি স্থানের জিম্মাদার। এই সুবাদে তিনি বিপুল কর্তৃত্বের অধিকারী ইসলামী দুনিয়ায়। কাজেই হঠাৎ করে তিনি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে বসবেন এমন সম্ভাবনা কম। তবে তার ছেলে এবং রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান হয়তো অতটা আপত্তি করবেন না। ৫. ইরানের জন্য এক নতুন মাথাব্যাথা ইরানের নেতারা এই চুক্তির ব্যাপক নিন্দা করেছেন। এটা শুধু বাগাড়ম্বর নয়। আব্রাহাম চুক্তি আসলেই তাদের একটা বাড়তি চাপের মুখে ফেলবে। ইরানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন সেটা এমনিতেই যথেষ্ট অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। এখন তাদের জন্য যোগ হলো এক নতুন কৌশলগত মাথাব্যাথা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তি চুক্তির বিরুদ্ধে ইরানে বিক্ষোভ ইরান থেকে ইসরায়েলের বিমান ঘাঁটিগুলো বহু দূরে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান ঘাঁটিগুলো উপসাগর পাড়ি দিলেই অপর তীরে। ইরানের পরমাণু স্থাপনার ওপর যদি কখনো বিমান হামলার কথা উঠে, তখন এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ইরানীদের জন্য নড়াচড়ার জায়গা যেন আগের চাইতে অনেক বেশি সংকুচিত হয়ে আসলো।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আজ হোয়াইট হাউসে এক ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিতে সই করবে।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে মরণপণ লড়াই চলে টানা নয় মাস ধরে ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই পরাজয়ের ভীতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল ঢাকায় পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের ভেতর। তখনকার ঘটনাবলী খুব কাছ থেকে দেখেছেন পূর্ব পাকিস্তানে গভর্নর ডা. এম এ মালিকের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক। রাও ফরমান আলী তার বই "হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড" এবং সিদ্দিক সালিক তার লেখা লেখা 'উইটনেস টু সারেন্ডার' বইয়ে সেই সময়কার ঘটনাবলীর বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন, জানিয়েছেন ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে তখন পরিস্থিতি কেমন ছিল। ডিসেম্বরের দুই তারিখে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খানের ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে জানানো হয় তিনি আসবেন না। সেই খবরে যুদ্ধের পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে অনেকেই পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। রাও ফরমান আলীর বর্ণনা অনুযায়ী, যেদিন ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়, সেই ৩রা ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজীকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। ''কারো মধ্যে কোন আতঙ্ক ছিল না। সবাই খুব আস্থার সঙ্গে কথা বলছিলেন। অসামরিক সরকারের কাছ থেকে তারা কিছু প্রত্যাশা করেন কি-না, জানতে চাইলে জেনারেল নিয়াজী বলেন, আমরা আমাদের দেখাশোনা করতে পারবো। আমাদের সব কিছুই আছে।'' কিন্তু খুব দ্রুতই সেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় পাকিস্তান বাহিনীর সবগুলো বিমান অকেজো হয়ে পড়ে। ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখে কুমিল্লার দক্ষিণ অঞ্চলে একটি পাকিস্তানী ব্যাটালিয়নের আত্মসমর্পণের পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুঝতে পারলেন যে তাদের সৈন্যদের মনোবল ভেঙ্গে গেছে। যুদ্ধের সময় যশোর রোডের সড়ক মেরামত করছেন ভারতীয় সেনারা জেনারেল নিয়াজী সন্দেহাতীতভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। অনেকে জেনারেল নিয়াজীকে তাঁর অফিসে কাঁদতেও দেখেছে বলে দাবী করেন রাও ফরমান আলী। কিন্তু বাইরে থেকে জেনারেল নিয়াজী নিজেকে শক্ত হিসেবে উপস্থাপন করছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য ৭ই ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজীকে ডেকে পাঠান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা. এম এ মালেক, জেনারেল রাও ফরমান আলী লিখেছেন "হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড" বইয়ে। ''গভর্নর বলতে শুরু করেন, যুদ্ধে যে কোনও কিছুই ঘটতে পারে। যখন দুটি পক্ষ যুদ্ধ শুরু করে, তখন একপক্ষ জেতে, অন্য পক্ষ হেরে যেতে পারে। কোনও সময় একজন কমান্ডারকে আত্মসমর্পণ করতে হতে পারে, এবং অন্য সময় .... গভর্নর আরও কিছু বলার আগে আমি একটি চিৎকার, একটি কান্না এবং উচ্চ শব্দে ফোঁপানো শুনতে পেলাম। আমি দেখলাম, নিয়াজী তাঁর দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রয়েছেন এবং কাঁদছেন। সেই সময় কক্ষে আসা একজন পরিচারক চা নিয়ে প্রবেশ করছিল, তাকে দ্রুত বের করে দেয়া হয়। সে বাইরে গিয়ে বলেন, সাহেবরা ভেতরে কান্নাকাটি করছেন। এই খবরটি দ্রুত ঢাকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। যা থেকে পাকিস্তান আর্মির ভয়াবহ ও মরিয়া অবস্থার কথাই প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল।'' আরো পড়তে পারেন: আত্মসমর্পণের আগে পাকিস্তানী সেনাদের মুহূর্তগুলো বাংলাদেশ যুদ্ধ জয়ের কৃতিত্ব নিয়ে পাল্টা-পাল্টি দাবী এই ছবি দেখেই কি আত্মসমর্পণ করেছিলেন নিয়াজী? ইউনেস্কোর তালিকায় ৭ই মার্চের ভাষণ যুদ্ধের সমাপ্তি - ঢাকার রেসকোর্সে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ তখনও সেনা কর্মকর্তারা আশায় ছিলেন যে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাহায্য পাওয়া যাবে। সিদ্দিক সালিক লিখেছেন, জেনারেল নিয়াজীর মনোবল ঠিক রাখার জন্য রাওয়ালপিন্ডি এক অভিনব পন্থা উদ্ভাবন করে। (সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড থেকে) তারা তাকে জানায় যে চীন ও আমেরিকা থেকে সাহায্য আসছে। এ প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজী তার 'দ্যা বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান' বইতে লিখেছেন, ''১২ই ডিসেম্বর চীফ অব জেনারেল স্টাফ গুল হাসান আমাকে টেলিফোন করে পশতু ভাষায় বলেন, 'উত্তর দিক থেকে পীত আর দক্ষিণ দিক থেকে শ্বেতাঙ্গরা এগিয়ে আসছে (সম্ভাব্য চীন ও মার্কিন সহায়তাকে বুঝাতে তিনি প্রতীকী ভাষা ব্যবহার করেন)। সিজিএস আমাকে কেন ধোঁকা দিলেন, আমি তা বুঝতে পারিনি।'' তবে সেই সময়ে তিনি অবশ্য এটিকে ধোঁকা বলে বুঝতে পারেননি। নিয়াজী এই খবর শোনার পর সেটি সব সৈন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বলেন। এর ফলে কিছু বিভ্রান্তিও তৈরি হয়। টাঙ্গাইলে ভারতীয় প্যারাট্রুপারদের নামতে দেখে পাকিস্তানি সৈন্যদের একটি দল তাদের স্বাগত জানাতে গিয়ে ভারতীয়দের হাতে বন্দী হয়। জেনারেল এ এ কে নিয়াজীকে প্রথমে ধারণা দেয়া হয়েছিল যে ১২ই ডিসেম্বরের মধ্যে এই সাহায্য পাওয়া যাবে। ঢাকায় চীন বা আমেরিকার কনস্যুলেট এই তথ্যের ব্যাপারে কিছুই নিশ্চিত না করলেও ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের তখন সবাই চীনা সাহায্যের জন্য উত্তর দিকে, আর আমেরিকার নৌ সাহায্যের আশায় দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে ছিল। ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি এলাকা সেই সময় ক্যান্টনমেন্টে এই সম্ভাব্য বিদেশি সাহায্যের বর্ণনা দিয়ে সিদ্দিক সালিক লিখেছেন, 'ঢাকায় কৌশলগত ইউনিটের সদর দপ্তরে একজন ব্যাটম্যানকে দুই ব্যান্ডের একটি ট্রানজিস্টার ঠিক করতে দেখছিলাম। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে স্যালুট দিলো। 'কোন খবর আছে?' আমি জানতে চাইলাম। সে ঠাণ্ডা কণ্ঠে জবাব দিলো, 'চীনা বা আমেরিকার সাহায্যের কোন খবর নেই।''' লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান 'মেমোরিজ অব গুল হাসান' বইয়ে দাবি করেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন চীফ অব স্টাফ জেনারেল হামিদের নির্দেশক্রমে তিনি ওই বার্তা পাঠিয়েছিলেন। যুদ্ধের সময় ঢাকায় অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লেখা থেকে বোঝা যায় যে, সাহায্য আসার সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে ১২ই ডিসেম্বর পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তারা যুদ্ধের বিষয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাদের লেখা বই থেকে এটা বোঝা যায় যে পাকিস্তানী বাহিনীর মনোবল একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছিল। কিভাবে যুদ্ধ থামানো যায়, সে চেষ্টা করছিলেন ঢাকায় অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তারা। ওই কর্মকর্তারা চেষ্টা করছিলেন, দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়ে এসে ঢাকা রক্ষা করতে। ''কাগজে কলমে ঢাকা প্রতিরক্ষার অনেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল," লিখেছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক তার 'উইটনেস টু সারেন্ডার' বইয়ে। "কিন্তু ভূমিতে পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। সৈন্যদের নৈতিক মনোবল ছিল না, অস্ত্রশস্ত্র ছিল সেকেলে ধরণের, নির্ভুল নয় বা অকার্যকর। সব চেয়ে খারাপ ছিল যে তাদের যুদ্ধ করার কোন ইচ্ছাই ছিল না। তারা বোবার মতো তাদের জায়গায় দাঁড়িয়েছিল এবং ছোট্ট একটা চাপেই ভেঙ্গে পড়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।'' সেই সময় ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে বর্ণনায় "হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড" বইয়ে রাও ফরমান আলী লিখেছেন, ''ঢাকাকে রক্ষা করার জন্য তখন কোনও নিয়মিত ট্রুপস পাওয়া যাচ্ছিল না। কোর এইচ কিউ ঢাকার প্রতিরক্ষার জন্য কিছু ট্রুপস পাঠানোর জন্য অধীনস্থ ফর্মেশনগুলোকে বলেছিল। কিন্তু পরিবহনের অভাবে ট্রুপস সংগ্রহ করা যায়নি।'' তিনি আরও লিখেছেন, ঢাকা একটি ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছিল এবং মুক্তিবাহিনীর তৎপরতার ভয়ের কারণে বেশিরভাগ সময় ঢাকা থাকত কারফিউর অধীনে। ''ঢাকায় জীবন একেবারে থেমে গিয়েছিল। নগরীর ভেতরে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা মোকাবিলার উদ্দেশ্যে কারফিউ লাগানো হয়েছিল। সকল সড়কেই সড়ক প্রতিবন্ধক নির্মাণ করা হয়েছিল, তারপরেও গেরিলাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত ছিল।'' পরাজয় আসন্ন বুঝতে পেরে পাকিস্তান সমর্থক বেসামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যেও। ''সিভিলিয়ান অফিসিয়ালরা তো বটেই, এমনকি আর্মি অফিসারদের অনেকে ভীত হয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিবাহিনী গণহত্যা করবে বলে তারা আশংকা করছিলেন," লিখেছেন রাও ফরমান আলী। "অনেক অফিসার ও সৈনিক আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, আপনারা কেন আমাদের মাংসের কীমা বানাচ্ছেন? দয়া করে কিছু করুন। যারা কোনও অপরাধ করেছিল, বিশেষ করে তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল।'' আর সিদ্দিক সালিক লিখেছেন, ''দুইজন অফিসার কাঁধে প্রচুর পরিমাণ তকমা ঝুলিয়ে আমার কাছে এলেন এবং বললেন, জেনারেল নিয়াজীর কাছে যাতায়াত আছে তোমার। কেন তাকে বাস্তববাদী হতে বলছো না? নইলে কুকুরের মতো মৃত্যু ঘটবে আমাদের।'' বিবিসি বাংলা থেকে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে প্রচারিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার খবর। ভারতীয় বিমান বাহিনীর আক্রমণে ৮ই ডিসেম্বরের মধ্যেই পাকিস্তানীদের বিমান শক্তি অচল হয়ে যায়। বিমানবন্দরে বোমার আঘাতে রানওয়েতে বড় বড় গর্তের তৈরি হয়। রানওয়ে মেরামত করতে ব্যর্থ হয়ে অবশিষ্ট বৈমানিকদের রেঙ্গুন হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে ভারতীয় আক্রমণের ব্যাপারে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর বা তার কর্মকর্তারা আগে কোন আভাস পাননি বলে দাবি করেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। তিনি জানান, ৩রা ডিসেম্বর যখন ভারতীয় আক্রমণ শুরু হয়, তখন তিনি বিবিসির দুইজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। যখন তিনি তাদের বলছিলেন যে, ভারতের সঙ্গে কোন যুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা নেই, তখনই তাকে সেনা সদর থেকে টেলিফোন করে জানানো হয় যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। গভর্নরও এটি জানতেন না। এমনকি পাকিস্তানের নৌ বাহিনীর প্রধান এবং আইএসআই প্রধানও এ বিষয়ে আগে জানতেন না বলে উল্লেখ করেন রাও ফরমান আলী। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে পড়লেও জেনারেল নিয়াজী তখনও আশাব্যঞ্জক নানা রিপোর্ট পাঠাচ্ছিলেন সদর দপ্তরে। সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান 'মেমোরিজ অব গুল হাসান' বইয়ে লিখেছেন, পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড থেকে পাওয়া রিপোর্টগুলো এই ধারণাই তৈরি করলো যে শত্রুর হামলাকে ভোঁতা করে দেয়া হয়েছে। "সিওএস অফিস জুড়ে প্রবল আশাবাদ - একবার আমাকে বলেই ফেললেন, বল এখন নিয়াজীর পায়ে। কিন্তু নিয়াজীর পায়ে বল বেশিদিন থাকেনি। পশ্চিমে আমাদের বিমান হামলার জবাবে ৩রা ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তুমুল লড়াই বেধে যাওয়া মাত্রই বল চলে যায় তার পা থেকে। ....ওগুলো আঁকড়ে থাকার অর্থ পরাজয়কে ডেকে আনা হলেও নিয়াজী আশাব্যঞ্জক রিপোর্ট পাঠিয়ে যাচ্ছিলেন। আমার অনুমান, প্রেসিডেন্ট ও তার মুরুব্বি সিওএসকে খুশি রাখার উদ্দেশ্যে।'' তিনি আরও লেখেন, নিয়াজীর রঙচঙ দেয়া রিপোর্টের ওপর আস্থা স্থাপনে যারা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, তারা এক প্রবল ঝাঁকুনি খান ৯ই ডিসেম্বরে। "পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড প্রকৃত অবস্থা জানিয়ে রিপোর্ট করে। তার মূলকথা ছিল, শত্রুর তৎপরতা আর বিদ্রোহীদের হামলার ফলে ঢাকা রক্ষার জন্য সৈন্যদের সরিয়ে আনা যাচ্ছে না। শত্রুর বিমান ব্যাপক ধ্বংসসাধন করেছে।'' সেই সময় পরিস্থিতি বুঝে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গভর্নরকে ক্ষমতা দেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। তিনি যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব পাঠান জাতিসংঘে। তবে সেই প্রস্তাবের কথা পরে রাওয়ালপিন্ডি থেকে অস্বীকার করা হয়। ১২ই ডিসেম্বরে পরিষ্কার হয়ে যায় যে চীন বা আমেরিকা থেকে কোন সাহায্য আসছে না। সেই সময় নিয়াজী একেবারেই হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি কয়েকদিন ধরে কারো সঙ্গেই কথাবার্তা বলছিলেন না। রাও ফরমান আলী লিখেছেন, ১২ই ডিসেম্বর ঢাকায় প্রথমবারের মতো মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনীর কামানের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তিনি জানান, ১৩ই ডিসেম্বর তার বাসায় ছোট একটি মিটিং হয় মেজর জেনারেল রহিম, নিয়াজী এবং জামশেদের মধ্যে। সেখানে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটানোর ব্যাপারে তিনজনই একমত হয়ে রাওয়ালপিন্ডিকে তা জানানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন বলে তার মনে হয়েছে। ওই দিনই গভর্নর হাউজে ভারতীয় বিমানবাহিনী গোলাবর্ষণ করার পর গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এ এম মালিক এবং তিনি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আশ্রয় নেন। যুদ্ধবিরতির প্রত্যাশা নিয়ে ১৪ই ডিসেম্বর বিকেলে জেনারেল নিয়াজী ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেলের কাছে যান। সাথে ছিলেন রাও ফরমান আলী। ভারতীয় ছত্রীসেনাদের যে অনুশীলনের ছবি ভারতীয় সেনারা টাঙ্গাইলে প্যারাড্রপিং-এর ছবি হিসাবে সংবাদমাধ্যমে প্রচারের জন্য ব্যবহার করেছিল তখন জেনারেল নিয়াজীর সঙ্গে মার্কিন কনসাল জেনারেলের যে কথা-বার্তা হয়েছিল, সেটি রাও ফরমান আলী তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন। "নিয়াজী একজন বন্ধু হিসেবে তার সাহায্য চাইলেন। জবাবে কনসাল জেনারেল বললেন, আপনারা কেন যুদ্ধ শুরু করেছিলেন? ইউএস আপনাদের সাহায্য করতে পারবে না। আমি বড়জোর যা করতে পারি তা হলো, আপনার বার্তাটি ভারতীয়দের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। আমি বার্তা প্রেরকের কাজ করবো, যোগাযোগকারী নয়। আমাদের বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে এবং যেখানে যার কাছে বার্তা পাঠাতে চান, আপনি পাঠাতে পারেন।" যুদ্ধবিরতির জন্য ভারতীয়দের কাছে যে বার্তা পাঠানো হয়েছিল, তার জবাব এসেছিল ১৫ই ডিসেম্বর। ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল স্যাম মানেকশ সেটির উত্তর দিয়েছিলেন। ওই বার্তায় জেনারেল মানেকশ বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি তখনই কার্যকর হবে যখন পাকিস্তানী বাহিনী অগ্রবর্তী ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে। ভারতীয় সেনাপ্রধানের এই বার্তা রাওয়ালপিন্ডিতে পাঠিয়ে দেয়া হলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান ঢাকায় জানিয়ে দেন জেনারেল মানেকশ'র প্রস্তাব মেনে নিতে। বাংলাদেশে গণহত্যার ইতিহাস তুলে ধরতে খুলনায় গণহত্যা জাদুঘর।
তেসরা ডিসেম্বর যখন ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তখন শুরুতে পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল তারা ভারতকে হারিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের সেই ধারণা ভেঙ্গে যায়।
এলিট ফোর্স র‍্যাব: ক্রসফায়ার কি বিপথগামী অফিসারের কাজ নাকি প্রাতিষ্ঠানিক? সে বিষয়ে একটি চিঠি দিয়ে আজ শুরু করছি। লিখেছেন খুলনার দাকোপ থেকে মুকুল সরদার: ''অবসর প্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এতো তীব্র হয়ে উঠলো কেন, এ বিষয়টিতে বিবিসি বাংলার টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রবাহে তাফসির বাবুর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন দেখলাম। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের মনে যে ঘৃণা জন্মেছে মি. সিনহা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের মাধ্যমে তারই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে বলেই আমার মনে হয়। ''এখনো পর্যন্ত যেসব তথ্য জানা গেছে তা থেকে মনে হচ্ছে, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ক্রস ফায়ারে অতি উৎসাহী ছিলেন। তবে এসব অপকর্মের সাথে কেবল মি. দাশ একা জড়িত নয়, অনেক রথী-মহারথীরাও জড়িয়ে রয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস। কিছু মানুষ তাদের স্বার্থ উদ্ধারে পুলিশ বাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যদের ব্যবহার করে থাকেন আর দোষটা গিয়ে পড়ে পুরো পুলিশ বাহিনীর উপর। কাজেই সরকার এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও এগিয়ে আসা উচিৎ পুলিশ বাহিনীর উপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে।'' প্রয়াত টেকনাফ পৌর নেতা একরামুল হকের পরিবার কবে সুবিচার পাবে? আমরা প্রায়ই শুনে থাকি মি. সরদার, যে দোষ ব্যক্তি বিশেষের, তাই বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা ঠিক হবে না। তবে এ'কথা তখনি ধোপে টিকবে, যখন দেখা যাবে 'বিপথগামী' অফিসারদের নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে তদন্ত করে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে, শাস্তি দেয়া হয়েছে। আমরা সেটা বাংলাদেশে পুলিশ বা র‍্যাবের ক্ষেত্রে কতটুক দেখি? টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক ২০১৮ সালের ২৬শে মে র‍্যাবের হাতে নিহত হন। তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা হয়েছিল যেটা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। কিন্তু সেই হত্যার কোন বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। তার হত্যায় জড়িত অফিসাররা কি শুধু বিপথগামী ছিলেন, নাকি প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে একটি পরিকল্পিত অভিযানের অংশ ছিলেন? আঠারো বছর আগে সেনা-পরিচালিত 'অপারেশন ক্লিন হার্ট এবং ২০০৪ সালে র‍্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশে চার হাজারের বেশি মানুষ কথিত 'ক্রস ফায়ার'-এ প্রাণ হারিয়েছেন (মানবাধিকার সংস্থা 'অধিকার'-এর তথ্য অনুযায়ী)। প্রায়ই বলা হয় প্রতিটি ঘটনার দাফতরিক তদন্ত করা হয়েছে। কিন্তু আদালত পর্যন্ত কয়টা পৌঁছেছে? নারায়ণগঞ্জে র‍্যাবের হাতে সাত খুনের মামলা ছাড়া আর কোন একটিও কি আপনার মনে পড়ছে? কাজেই আমার মনে বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করার দিন শেষ হয়েছে, এবং 'ক্রসফায়ার' বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তার অবসান প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেই ঘটাতে হবে। লেবানন বিস্ফোরণের মুহুর্ত পরের চিঠি লিখেছেন বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে মাকামে মাহমুদ চৌধুরী। তিনি লিখেছেন আরেকটি বন্দর নগরী. লেবাননের রাজধানী বৈরুতে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ নিয়ে: ''গত ৫ই অগাস্ট লেবাননের বৈরুত বন্দরে অনিরাপদে এবং অব্যবস্থাপনায় মজুদ করে রাখা ২,৭৫০ মেট্রিক টন এমোনিয়াম নাইট্রেট এর ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো রাজধানী বৈরুত শহর। বিবিসি বাংলায় জানতে পারলাম সেগুলো নাকি আবার ২০১৪ সাল থেকে মজুদ রাখা ছিল। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে এমন বিস্ফোরক দ্রব্যের এভাবে অনিরাপদে ফেলে রাখা কর্তৃপক্ষের অবহেলার মানসিকতার কোন পর্যায়ে পড়ে তা আমার জানা নেই। ''এরকম বিস্ফোরণের ঘটনা নতুন নয়, প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে ঘটতে দেখা যায়। বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরণের জন্য দায়ী কর্তৃপক্ষ থেকে লোক দেখানো কিছু কাজ করা হলেও কিছু দিন যেতে না যেতে সে আগের মতো যাচ্ছেতাই অবস্থা, যেন আহত নিহত এবং স্বজন হারানো মানুষের দুঃখ-কষ্টের বেদনা তাদের কাছে কিছুই না, তারা যেন নিতান্ত একটি সংখ্যা মাত্র। লেবাননের এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ থেকে সবার শিক্ষা নেয়া উচিত। কোথাও কোন রাসায়নিক বিস্ফোরক দ্রব্য অব্যবস্থাপনায় রাখা হয়েছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা প্রয়োজন।'' বাংলাদেশের বিশেষ করে ঢাকা শহরের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা আছে এই বিষয়ে - দশ বছর আগে নিমতলীতে আর গত বছরই চুড়িহাট্টায়। পুরনো ঢাকার আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক দ্রব্য গুদামজাত করার ফলে যে মানবিক বিপর্যয় একাধিকবার হয়েছিল, তা নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যায়নি। প্রত্যেক ট্র্যাজেডির পরই মানুষ আশা করে এবার সব কিছু ঠিক হবে। হয়তো সুদূর লেবাননের বিস্ফোরণের ফলে অনেকের টনক নড়বে। বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য নিরাপদ স্থানে না রাখলে কী হতে পারে, তা বৈরুতের ঘটনা সবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ব্যাঙ্গালুরোতে ভাংচুর নিয়ে বিবিসির ভিডিও। এবারে একটি অভিযোগ। আমদের পরিবেশনায় নামের ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ করেছেন মাহফুজুর রহমান তবে তিনি কোথা থেকে লিখেছেন তা বলেন নি: ''আপনাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে একটি নিউজ প্রকাশিত হয় যার বিষয়টা ছিল ভারতের ব্যাঙ্গালুরোতে প্রিয় নবী মোহাম্মদ (সাঃ)-কে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করার কারণে সৃষ্ট দাঙ্গা নিয়ে। আপনাদের ইউটিউব চ্যানেলে নিউজটির যে শিরোনাম দিয়েছেন তা বাংলাভাষী মুসলমানদেরকে অত্যন্ত মর্মাহত করেছে যা প্রত্যক্ষ করেছি উক্ত নিউজটির মন্তব্যগুলো পড়ে এবং একজন মুসলমান হিসেবে আমিও মর্মাহত হয়েছি। আমি আশা রাখি উক্ত নিউজটির শিরোনাম পরিবর্তন করে মার্জিত ও রুচিসম্মত একটি শিরোনাম নির্ধারণ করবেন যা শুধু মুসলমানদেরকে নয়, কোন ধর্মের মানুষদেরকে আঘাত করবেনা।'' আপনি খুলে বলেন নি মি. রহমান, আমাদের শিরোনাম কেন আপনাকে মর্মাহত করেছে। আমাদের মতে খবরটির শিরোনাম বিবিসির নীতিমালা মেনে মার্জিত ভাষা ব্যবহার কর্রেই দেয়া হয়েছিল। বিবিসি বাংলায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে হযরত মোহাম্মদকে 'ইসলামের নবী মোহাম্মদ' হিসেবেই সম্বোধন করে আসছি। যেমন বিবিসির ইংরেজি পরিবেশনায় তাঁকে Prophet Muhammad বলা হয়। এর ফলে অন্য ধর্মের কেউ কখনোই মর্মাহত হননি। আমাদের শ্রোতা পাঠকদের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম এবং তাদের বেশির ভাগ কখনোই তাতে আপত্তিকর কিছু দেখেননি। আমাদের শ্রোতা-পাঠকদের অধিকাংশই জানেন যে বিবিসি বাংলায় ব্যক্তি বিশেষের নামের আগে বা পরে আমরা কোন বিশেষণ যোগ করি না, শুধু নামই ব্যবহার করি বা পরিচিতির জন্য যা যোগ দেবার প্রয়োজন তা যোগ করা হয়। মানুষের কাছে তিনি 'বাপুজি' বা মহাত্মা গান্ধী। কিন্তু বিবিসি বাংলার স্টাইল অনুযায়ী তিনি মোহনদাস গান্ধী। যেমন, হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে রাম চন্দ্র দেবতা তুল্য। বিবিসিতে আমরা তাঁকে রাম চন্দ্র হিসেবেই সম্বোধন করি, যদিও তাঁর ভক্তদের কাছে তিনি 'ভগবান শ্রীরাম চন্দ্র'। ভারতের একজন পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে সবাই 'মহাত্মা গান্ধী' হিসেবেই চেনেন। কিন্তু আমাদের পরিবেশনায় তিনি মোহনদাস গান্ধী। পরিবেশনার ক্ষেত্রে আমাদেরকে সম্পূর্ণ ভাবে আবেগহীন হয়ে নিয়ম সবার বেলায় একই ভাবে প্রয়োগ করতে হয়। ভবিষ্যতে যদি আমাদের স্টাইলে পরিবর্তন আনা হয়, তাহলে সেটাও সবার ক্ষেত্রে এক যোগে প্রযোজ্য হবে। তবে ইদানিং সামাজিক মাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে গালি-গালাজ করার একটা প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করছি। কিন্তু আপনি ইউটিউবে যেসব মন্তব্যর কথা বলছেন, তাদের অনেকগুলো যে ভাষায় করা হয়েছে, তা দেখে তো আমার মনে হয় না তারা কোন ধর্ম বা মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য সেটা করছেন। প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকেই সেপ্টেম্বরের আগে ফিরতি ফ্লাইট পাচ্ছেন না। এবারে করোনাভাইরাস নিয়ে দু'একটি চিঠি। প্রথমটি লিখেছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে মোহাম্মদ রেজাউল রহিম: ''সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা ( আইওএম) বাংলাদেশের ১২টি জেলায় বিদেশ ফেরত অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সে রিপোর্টের চুম্বক অংশে ছিলো : ১. তাঁরা কোভিড-১৯ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এবং পরিবারের কাছে ফেরার আকুলতা ছিলো প্রবল। ২. ফেরত আসা অভিবাসীরা জীবিকা ও আর্থিক সংকটে নিদারুণ জীবনযাপন করছে। ৩. তারা চড়া সুদে ঋণের বোঝা বহন করছেন। তাছাড়া তাদের পূর্বের কাজে ফেরত যেতে কোভিড- ১৯ নেগেটিভ সনদ ও প্লেনের টিকিট প্রাপ্তির ঝামেলা তো রয়েছেই। যাদের অবিশ্বাস্য পরিশ্রমে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ সেই প্রবাসী শ্রমিকদের কতটুকু খোঁজ রাখছে রাষ্ট্র?'' ভাল প্রশ্ন করেছেন মি. রহিম। এই মহামারিতে কম-বেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তবে প্রবাসী শ্রমিকরা হয়তো আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও বাড়তি মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। তবে আশা করা যায়, বিমান সংস্থাগুলো শীঘ্রই বেশি করে ফ্লাইট চালু করে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে পারবে। মধ্যপ্রাচ্যের কোম্পানিগুলো অবশ্যই জানে এই শ্রমিকরা নিজের দোষে দেরীতে কাজে যোগ দিচ্ছে না। পরিস্থিতি সবারই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এখানে বাংলাদেশ সরকার বড় ভূমিকা পালন করতে পারে, কূটনীতির মাধ্যমে এবং বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে। প্রেসিডেন্ট পুতিন: বিশ্বে প্রথম করোনাভাইরাস টিকা তৈরির ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। এবারে টিকা নিয়ে লিখেছেন খুলনার কপিলমুনি থেকে মোহাম্মদ শিমুল বিল্লাল বাপ্পি: ''করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে , যেমন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কন্যার শরীরে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করার খবর। আমি জানতে চাই, করোনা কোন্ কোন‌্ দেশে ইতিমধ্যে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ হয়েছে? আমি জানতে চাই, করোনার প্রতিষেধক টিকা কীভাবে সকল দেশের মানুষের জন্য উন্মুক্ত হবে ? আর কোন দেশে কীভাবে টিকা প্রয়োগ করা হবে? আক্রান্ত দেশগুলি কীভাবে এই টিকা সংগ্রহ করবে?'' আমার মনে হয় বেশির ভাগ দেশেই করোনাভাইরাস বেশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে কয়েকটি দেশে, যেমন ইরান, স্পেন, অস্ট্রেলিয়ায় দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফ্রান্স এবং জার্মানিতেও নতুন করে কিছু সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে তবে সেটা প্রথম দফার তুলনায় কম। এই মুহূর্তে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপে মহামারি চলছে ভারতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ব্রাজিল, মেক্সিকো আর পেরুতে। রাশিয়াতে এখন মহামারি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে এসেছে বললেই চলে। আর টিকা নিয়ে যে প্রশ্ন করেছেন, তার বিস্তারিত উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন। কক্সবাজার: কেন এতো স্পর্শকাতর অঞ্চল হয়ে উঠছে? এই মহামারিতে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক যারা বাংলাদেশে আটকে পড়েছেন। তাদের নিয়ে লিখেছেন রাজশাহী থেকে বিশ্বজিৎ ব‍্যানার্জী রাজিব: ''করোনা পরিস্থিতির কারণে গত মার্চ মাসে ভারতীয় নাগরিক যারা বাংলাদেশে এসেছিলেন বিভিন্ন কাজে, ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তাঁরা দেশে ফিরতে পারছেন না। দু'তিন মাস যাবত চেকপোস্ট ও যানবাহন বন্ধ থাকায় তাঁরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী এলাকায় তাঁদের অনেকে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। অথচ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব আটকে পড়া যাত্রীদের দেশে ফিরে যাবার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন বলে মনে হচ্ছে। ''এমন একজন আটকে পড়া বয়স্ক মহিলা (আমার খালা) মুক্তি সরখেল কলকাতা থেকে বেড়াতে এসে বর্তমানে রাজশাহীতে আমার বাসায় অবস্থান করছেন। অন্য আরেক জন ভারতীয় মোহাম্মদ কাইউম নামে বেহালা, কলকাতার এক ফল ব্যবসায়ী ফরিদপুরে অবস্থান করছেন বলে জেনেছি। বিবিসি বাংলা এই বিষয় ও সমস্যাটি নিয়ে একটি অনুসন্ধানী খবর প্রচার করলে বহু ভুক্তভোগী উপকৃত হতে পারেন।'' বাংলাদেশে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিক নিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই একাধিক খবর করেছি মি. ব‍্যানার্জী। আমাদের কলকাতা সংবাদদাতাও এ'বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং আশা করছি শীঘ্রই আরো খবর প্রচার করা সম্ভব হবে। জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ এবারে ভিন্ন প্রসঙ্গ। ইলিশ নিয়ে লিখেছেন ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকে মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান: ''এ'মাসের ১০ তারিখে সানজানা চৌধুরীর "ইলিশ: বাংলাদেশে যেসব কারণে এখন ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে" শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়লাম। প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হলো - মাছে ভাতে বাঙালি যেন তার পুরানো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে। ''বিগত বছরগুলোতে ইলিশ প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল এবং এমন প্রেক্ষাপটে মা ইলিশ শিকারের উপর অবরোধসহ সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন মাছের বাজারে গেলে চোখে পড়ে বড় বড় রূপালি ইলিশ। স্বাদ ও সাধ্য মিলিয়ে কেনা যায় পছন্দের ইলিশ এবং এবছর দামও বেশ নাগালের মধ্যে।'' এ'সব দেখেই বোঝা যায় মি. রহমান যে, কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকর করলে অনেক কিছু অর্জন সম্ভব। ইলিশ যেভাবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, হয়তো আরো অনেক কিছুই ফিরিয়ে আনা যাবে যা অব্যবস্থাপনা, নীতিমালার অভাব, বা স্রেফ সদিচ্ছার অভাবের কারণে হারিয়ে গিয়েছিল। সব শেষে ঢাকার গেণ্ডারিয়া থেকেই আরেকটি চিঠি, লিখেছেন মাহবুবা ফেরদৌসি হ্যাপি: ''এ'বছর এমনিতেই করোনা মহামারির কারণে মানুষের জীবন জীবিকা চরম পর্যুদস্ত। অনেকে সংসারের ব্যয় নির্বাহে বেশ হিমশিম খাচ্ছে অথচ এ চরম দুঃসময়ে গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়, স্মরণকালের ভয়াবহ ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিল, যা অসহায় মানুষকে চরম বিপদে ফেলে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পূর্বপরিকল্পনা মতো এলাকা ভেদে ১০ থেকে ৬১ শতাংশ বেশি বিল করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে বেশি বিল করার দায় এবং এই অপরাধের শাস্তি কোম্পানির কর্মকর্তা কর্মচারীরা কেন পাবেন না? ''রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি গ্রাহকের সাথে শঠতার আশ্রয় নিবে, তা ভাবতেই অবাক লাগে। নিয়মানুযায়ী বাড়ি/বাসায় গিয়ে বিদ্যুতের মিটার দেখে বিদ্যুতের বিল তৈরি করার কথা, কিন্তু যদি এভাবে পরিকল্পনা করেই বেশি বেশি বিদ্যুৎ বিল আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়, তবে বাড়ি/ বাসায় মিটার বসানোর দরকার কী? স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, এসব মিটার কি শুধুই লোক দেখানো ভেলকিবাজি? সর্ষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে, তবে সে ভূত তাড়াবে কে?'' ভাল প্রশ্ন করেছেন মিজ ফেরদৌসি। বিদ্যুতের বিল যে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে সেটা অনেকেই টের পেয়েছেন এবং প্রতিবাদ করেছেন। এ'বিষয়ে বিবিসি সহ অনেক মিডিয়াতেই সংবাদ হয়েছে। কিছুটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মানুষের ক্ষোভ যদি দ্রুত কমে যায় তাহলে কর্তৃপক্ষও বিষয়টির ফয়সালা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। অর্থাৎ, সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান-এর হত্যাকে ঘিরে অনেক গল্প-কাহিনী স্থানীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে। সব দেখে মনে হচ্ছে দেশের পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি, যেটা এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে খুব একটা ভাল নেই, তা এখন চরম প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
নিজের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার পর শক্তিশালী এক মিশন শুরু করেছেন শেরেলে মুডি খুব কম বয়স থেকেই, নিজের মায়ের কাছে বছরের পর বছর ধরে সহিংস নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। যতবারই তার মা তাকে আঘাত করতো, ততবারই পালিয়ে যেতে চাইতো সে- অন্তত সমাজকল্যাণ বিষয়ক কর্তৃপক্ষ তাকে ফিরিয়ে আনার আগ পর্যন্ত এমনটাই হয়েছে। কিন্তু যে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা তার জীবন পাল্টে দিয়ে নতুন মোড় নিতে সহায়তা করেছিল সেটি তার সাথে নয় বরং একটি ছোট মেয়ের সাথে ঘটেছিল। যার সাথে কখনোই দেখা হয়নি তার। ১৯৯০ সালে মিস মুডির সৎ বাবা নয় বছর বয়সী স্টেসি অ্যান ট্রেসি নামে এক মেয়েকে অপহরণ এবং ধর্ষণের পর হত্যা করে। তারপর তার মরদেহ আবর্জনার ব্যাগে ভরে একটি নালায় ফেলে দেয়। 'পেটের ভেতর অদ্ভুত অনুভূতি' কুইন্সল্যান্ডে ব্যারি হ্যাডলো যখন স্টেসি-অ্যানকে হত্যা করে তখন মিস মুডির বয়স ছিলো ১৮ বছর। আর তাই ওই হত্যাকাণ্ডের পর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বেশ ভালো ভাবেই মনে করতে পারেন তিনি। সেসময় কিশোরী মুডি সবে মাত্র তার মায়ের বাড়িয়ে ফিরেছিল। কারণ তার ছোট বোন ক্যারেন খুব খারাপ সময় পার করছিল। "আমি আমার চাকরী ছেড়ে সোজা বাড়িতে চলে আসি যাতে করে সে ভাল থাকে," তিনি বলেন। আরো পড়তে পারেন: 'প্রকাশ্যে মলত্যাগ' করায় পিটিয়ে শিশু হত্যা ছেলে শিশুরা ধর্ষণের শিকার হয়েও বিচার পায় না কেন? শিশু নির্যাতক আপন ঘরেরই লোক, কাছের লোক ব্যারি হ্যাডলোতে গ্রেফতার করা হয় এবং প্যারোলে থাকা অবস্থায় খুন করার অভিযোগ প্রমাণিত হয় তার সৎ বাবা তাকে আনতে যায়। গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সে বর্ণনা করতে থাকে যে কিভাবে তাদের এলাকার একটি ছোট মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে। "পরের দিন তল্লাসি অভিযানে যোগ দিতে পেরে তাকে বেশ উচ্ছ্বসিতই মনে হচ্ছিলো," তিনি বলেন। "আমার মনে পরে যে, রাজ্যের জরুরী সেবা বিভাগের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীর পোশাক পড়ে তল্লাসি অভিযানে বেরিয়ে পরে সে।" এর পরে তিনি যা মনে করতে পারেন তা হল, দরজায় বেশ কয়েক বার জোরে জোরে আঘাত আর তাদের বাড়িতে তল্লাসি চালাতে আসা পুলিশ বাহিনী। যা তাকে "হতবিহবল" করেছিল। নিজের সৎ বাবার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষের হয়ে সাক্ষ্য দেন তিনি। তার মা, লিওনি, হ্যাডলো'র পক্ষে সমর্থন দেন- যাকে তিনি মিস মুডির ১৫ বছর বয়সের সময় বিয়ে করেছিলেন। "আদালতে তার সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিল মা। যা দেখতে মোটেই ভাল লাগেনি আমার," মিস মুডি বলেন। মিস মুডি স্টেসি-অ্যানের শেষকৃত্যে অংশ নিয়েছিলেন। "আমি এখনো সেই ভয়ংকর অনুভূতির কথা মনে করতে পারি। আমার পেটের ভেতর অদ্ভুত ধরণের অনুভূতি হচ্ছিলো এটা জেনে যে আমার সৎ বাবা এই ঘটনা ঘটিয়েছে এবং আমার মা তাকে সমর্থন দিচ্ছে," তিনি বলেন। ৯ বছর বয়সি স্টেসি-অ্যান যাকে ধর্ষণ এবং হত্যা করেছিল হ্যাডলো আরেকটি আঘাত আসা তখনও বাকি ছিল: আর তা হল, তার সৎ বাবার এটিই প্রথম খুন ছিল না। পুলিশ মিস মুডিকে জানায় যে, ২৭ বছর আগে, সে ৫ বছর বয়সে স্যান্ড্রা বেকন নামে আরেকটি শিশুকে অপহরণ ও হত্যা করেছিল। তার মরদেহ ভুট্টার বস্তায় জড়িয়ে একটি গাড়ির বুটের ভেতর রাখা হয়েছিল। প্রতিবারই হ্যাডলো তার হাতে নিহতদের বাড়ির আশপাশেই বাস করতো। আর স্টেসি-অ্যানকে হত্যার সময় প্যারোলে মুক্ত ছিল সে। "সমাজব্যবস্থা তাকে এই ঘটনা ঘটানোর সুযোগ করে দিয়েছিল যা উচিত হয়নি," মিস মুডি বলেন। মিস মুডির মা কখনোই হ্যাডলোর প্রতি তার সমর্থন প্রত্যাখ্যান করেননি। কার এই বিষয়টিই মা-মেয়ের সম্পর্ক ভেঙ্গে দিয়েছিল: "আমার মনে হতো যে সে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। সে বাড়িতে একজন খুনিকে জায়গা দিয়েছে যে এমন একজন মেয়েকে অপহরণ করেছে যে আমার যমজ দুই বোনের বয়সী।" স্যান্ড্রা বেকন ৫ বছর বয়সে ব্যারি হ্যাডলোর হাতে হত্যার শিকার হয় মিস মুডির বয়স এখন ৪৮ বছর। কিন্তু ২১ বছর বয়স থেকে নিজের মায়ের সাথে আর দেখা করেননি তিনি। ২০০৭ সালে কারাগারে মারা যায় হ্যাডলো। অপরাধ বোধ থেকে ক্রোধ মিস মুডি জানান, হ্যাডলোর গ্রেফতারের পর থেকে 'জীবনের খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি" এবং কখনোই 'ভালো জীবন যাপন করতে পারেননি তিনি।' কিন্তু পড়াশুনা শেষ করে সাংবাদিক হওয়ার পর আবারো বাঁচার আশা খুঁজে পান তিনি। "প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর আমার পুরো জীবন, আমার বাবার হাতে স্টেসি-অ্যানের হত্যার অপরাধ-বোধে ভুগেছি আমি," তিনি বলেন। "এমন কোন দিন পার করিনি যেদিন আমি তাকে নিয়ে ভাবিনি।" সম্প্রতি বছরগুলোতে তার অপরাধ বোধ ক্রোধে পরিণত হয়েছে। তিনি জানেন যে এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে, অবসর সময়ে কিছু একটা করতে হবে তাকে। আর এ চিন্তা থেকেই উৎপত্তি হয় অস্ট্রেলিয়ায় লিঙ্গের কারণে হত্যার শিকার নারী বা ফেমিসাইড এবং শিশু মৃত্যুর মানচিত্র। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে, মিস মুডি ১৮০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় সহিংসতায় মৃত্যু হওয়া নারী ও শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করে চিত্রায়িত করছেন। এই ম্যাপের প্রতিটি হৃদয় চিহ্ন অস্ট্রেলিয়ায় একজন নারী কিংবা শিশুর মৃত্যুকে নির্দেশ করে এসব নারী আর শিশুদের স্মরণীয় করতে সাংবাদিক হিসেবে নিজের দক্ষতা ব্যবহার করেছেন তিনি। যার কারণে এই তথ্যগুলো শুধুমাত্র পরিসংখ্যান হয়ে থাকেনি। "আমার ভাবতে খারাপ লাগে যে, স্টেসি-অ্যানের পরিবারের সদস্যরা এবং আমি তাকে ভুলে যাওয়ার পর তার মৃত্যুর ঘটনা আর কেউ মনে রাখবে না," তিনি বলেন। "প্রতিটি দেশ তাদের সেনাদের মৃত্যুকে স্মরণীয় করে রাখে। কিন্তু সহিংসতায় যারা মারা যায় তাদের কথা মনেও রাখে না। আমাদের সম্প্রদায়ে সহিংসতার প্রকৃত বিস্তার, প্রভাব এবং লৈঙ্গিক প্রকৃতি সম্পর্কে দলিল বা নথিভুক্ত করতে চাই আমি।" বাস্তবতা হচ্ছে, আপনি পুরুষ, নারী কিংবা শিশু-যাই হোন না কেন, একজন পুরুষের হাতে খুন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে আপনার। "পরিবর্তন আনতে আমরা তাদের গল্পগুলো ব্যবহার করতে পারি, বিশেষ করে পুরুষ সহিংসতার গল্প- নারীদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারি যা তাদেরকে এ ধরণের অপরাধ করতে চালিত করে।" অস্ট্রেলিয়ার ইন্সটিটিউট অব ক্রিমিনোলজির হালনাগাদ পরিসংখ্যান মতে, গড়ে প্রতি সপ্তাহে দেশটিতে একজন নারী তার বর্তমান কিংবা সাবেক সঙ্গীর হাতে প্রাণ হারায়। ম্যাপে প্রতিটি হৃদয় চিহ্নে ক্লিক করলে সহিংসতায় হত্যার একেকটি কাহিনী পাওয়া যাবে। সত্য এসব ঘটনা মিস মুডি পুরনো সংবাদপত্র, ময়না তদন্তের প্রতিবেদন এবং আপিলের রায় নিয়ে গবেষণা করে বের করেছেন। এসব কাহিনীতে অবহেলা, পারিবারিক সহিংসতা এবং অচেনা মানুষের দ্বারা সহিংসতার তথ্য পাওয়া যায়। এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের কি হয়েছে সেসব তথ্যও এতে উল্লেখ করেছেন মিস মুডি। যেখানে দরকার সেখানে স্বজন হারা পরিবারের সদস্যদের পক্ষে আওয়াজও তুলেছেন তিনি। এই নথিতে প্রথম যে মৃত্যুর ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি তার সৎ বাবার হাতে নিহত স্টেসি-অ্যানের খুনের ঘটনা। এর পর থেকে ১৮৮০টি সহিংস মৃত্যুর ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন তিনি। প্রতিটি ঘটনায় গড়ে এক ঘণ্টা করে সময় দিয়েছেন তিনি। যা একান্তই তার ব্যক্তিগত সময়। ২০ বছর বয়সে মিস মুডি সহিংস ঘটনায় জড়িত অনেকের নাম মাত্র সাজা হয়েছে। মিস মুডি বলেন: "বেশিরভাগ সাজাই নাম মাত্র। আমি মাত্রই এক নারীর হত্যার বিষয় নথিভুক্ত করেছি যাকে এক জন পুরুষ ৪০ বার ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে। কিন্তু ওই হত্যাকারী ছয় মাসের মাথায়ই ছাড়া পেয়েছে। সে তার নিজের জীবন উপভোগ করছে। আর ওই নারীটি একটি হৃদয় চিহ্ন হয়ে আমার ফেমিসাইড ম্যাপে জায়গা করে নিয়েছে মাত্র।" একটি নতুন সূচনা প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষ হিসেবে মিস মুডি তার ফাইল সমাজকল্যাণ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেছে। যা ছিলো নির্যাতন, অবহেলা আর সহিংসতার গল্পে ভর্তি। তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা প্রতিটি ঘটনার সাথে তাকে গভীরভাবে জড়িয়ে ফেলে: "আমি এই নারীদের প্রত্যেককেই আমার হৃদয়ে ধারণ করেছি।" ২০১৫ সালে মিস মুডির শুরু করা রেড হার্ট ক্যাম্পেইনের অংশ হচ্ছে ফেমিসাইড ম্যাপ। সেসময় ক্রমেই বেড়ে চলা পারিবারিক সহিংসতা নিয়ে প্রতিবেদন করছিলেন তিনি। ক্যাম্পেইনটি শুরু হয়েছিল গল্প-বলার একটি ভিত্তি বা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। তবে পরে এটি নারী ও শিশুদের উপর সহিংস ঘটনার রেকর্ডিং প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়। এটি ১২ মাসেরও কম সময়ে ৫ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে। তবে সবাই ভাল প্রতিক্রিয়া দেখায়নি; মিস মুডি নিয়মিতভাবেই খুন এবং ধর্ষণের হুমকি পান। এটা শুধু অনলাইনে ট্রলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সেপ্টেম্বরে, তার ঘোড়াটিকে মেরে ফেলা হয়। ঘোড়াটির ঘাড় ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল। এর আগে তার কুকুরকে ভয়ংকর ভাবে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়। দুটি ঘটনাই তদন্ত করছে পুলিশ। এগুলোর সাথে প্রতিবেশী চার পুরুষ বাসিন্দার দেয়া হুমকির কোন যোগসূত্র আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। "এই পুরুষরা ম্যাপটি সরিয়ে ফেলতে চায়। কারণ এটি লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার মাত্রা কতটা ভয়াবহ তা দেখায়," তিনি বলেন। ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসে জুন মাসে যখন মিস মুডি অস্ট্রেলিয়ায় সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ পুরষ্কার দ্য ওয়াকলেস'র জন্য তালিকাভুক্ত হন। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে এই অসাধারণ কাজের জন্য তাকে নির্বাচিত করা হয়। "এটা আসলে ধন্যবাদহীন একটা কাজ। তাই যখন স্বীকৃতি মেলে তখন এটা আসলেই অসাধারণ মনে হয়," তিনি বলেন। পরিচয় গোপন রাখতে এই প্রতিবেদনের কিছু নাম পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে।
শেরেলে মুডির কাছে সহিংসতা নতুন কিছু নয়। অবসর সময় অস্ট্রেলিয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করা নারী আর শিশুদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা ছাড়াও এ বিষয়ে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতাও রয়েছে।
সার্স ভাইরাস 'সিভিয়ার একিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম' বা সার্স নামের এই রোগের খবর প্রথম বেরোয় ২০০৩ সালে। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। ছয় মাসের মধ্যেই এ রোগে ৭ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, আর বেশির ভাগ মৃত্যুই হয় পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। সংক্রমণের ভয়ে ওই অঞ্চলের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ভ্রমণের ওপর নানা রকম নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। দু:স্বপ্নের মতো এ রোগের সূচনা হয় ২০০২ সালের শেষ দিকে দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং-এ। তবে এ রোগ চীনের বাইরে ছড়িয়েছিল একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। গুয়াংডং-এর এক ডাক্তারের হংকং যাত্রা সেটা পরের বছর ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। গুয়াংডং-এর এক ডাক্তার ড: লু জানলুং এক অস্বাভাবিক ধরণের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ক'জন রোগীর চিকিৎসা করে তার পারিবারিক এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হংকং গেলেন। হংকং ২০০৩, একজন সার্স রোগীকে নিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা হংকংএর মেট্রোপোল হোটেলে ৯১১ নম্বর কক্ষে উঠলেন তিনি। হয়তো লিফটে তিনি একবার হাঁচি দিয়েছিলেন, এবং তা থেকেই আরো সাতজন লোক এতে সংক্রমিত হন। এই সাতজন ভাইরাসটিকে নিয়ে যান ক্যানাডা, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনামে। হংকং পরিণত হলো সার্স ছড়ানোর কেন্দ্র বা এপিসেন্টারে। হাসপাতাল কর্মী টম বাকলির অভিজ্ঞতা হংকংএর প্রিন্সেস মার্গারেট হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট সেবার প্রধান টম বাকলি। "আমার উদ্বেগ ছিল, ওই হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে যারাই আসছিল তাদের কেউই সেরে উঠছিল না। আমার মনে আছে পাঁচ-ছ'দিন পর এমন অবস্থা হলো যে ইউনিটের প্রায় পুরোটাই রোগীতে ভরে গেল। মাত্র একটি কি দুটি বেড খালি ছিল।" "আমি বাড়িতে ঘুমাতে পারছিলাম না। শুধু মনে হতে লাগলো, এর পর যে রোগীরা আসবে তাদের আমি কোথায় থাকতে দেবো? ভোর পাঁচটার সময় আমি একটা ফোন পেলাম। আমাকে বলা হলো, আরো একজন রোগী এসেছে - এবং আমাকে আইসিইউতে যেতে হবে। " হংকং হাসপাতালের প্রধান উইলিয়াম হো সে সময় হংকং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রধান ছিলেন উইলিয়াম হো। "আমরা নিয়ম করেছিলাম যে সব নিউমোনিয়ার রোগীকে এক সাথে রাখা হবে। তবে তাদের চিকিৎসা হবে আলাদা আলাদাভাবে।" সার্স রোগে আক্রান্ত একজনের জন্য খোলা শোকবইয়ে স্বাক্ষর করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা "আমাদের মেডিক্যাল স্টাফদের দু-ভাগে ভাগ করা হলো - 'ক্লিন' টিম আর 'ডার্টি' টিম। ক্লিন টিমে যারা ছিলেন তারা এই ইউনিটের কোন রোগীর পরিচর্যা করেন নি, তারা সব সময়ই অন্য ওয়ার্ডে কাজ করেছেন।" "অন্যদিকে ডার্টি টিমের সদস্যরা শুধু এই সংক্রমণে আক্রান্তদেরই পরিচর্যা করেছেন, তারা অন্য কোন ওয়ার্ডের রোগীদের স্পর্শও করতেন না। তখন এর চেয়ে ভালো কিছু করার উপায় ছিল না।" 'বাড়িতেও মুখোশ পরে থাকতাম আমরা' টম বাকলি বলছিলেন. হাসপাতালের স্টাফদের অনেককে হোটেলে থাকতে হয়েছিল। "আমি আমার অফিসের মেঝেতে ঘুমোতাম। মাঝে কখনো বাসায় গেলেও আমি বসার ঘরে সোফাতেই ঘুমোতাম। আমি বাড়ি যেতাম অনেক রাতে, আবার অনেক ভোরে বেরিয়ে পড়তাম - আমার স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েরা ঘুম থেকে ওঠার আগেই ।" টম বাকলির কথায় - "আমি বাড়িতে গেলেও কি কি নিয়ম মেনে চলতে হবে তার একটা গাইডলাইন তৈরি করে দেয়া হয়েছিল। এমনকি আমরা বাড়িতেও মুখোশ পরে থাকতাম, যেটা একটা পরাবাস্তব ব্যাপার বলে মনে হতে পারে।" "আমাদের সম্পূর্ণভাবেই আলাদা থাকতে হতো। বাসায় আমাদের টুথপেস্ট, সাবান - এসবও ছিল আলাদা, যাতে আমার থেকে কোনভাবে অন্য কেউ সংক্রমিত হতে না পারে।" চীনে সার্স ভাইরাস সংক্রমিত একজনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে "এমনকি টয়লেট কি ভাবে ব্যবহার করতে হবে তারও একটা গাইডলাইন ছিল। একটা জরিপে দেখা গিয়েছিল যে আপনি যদি টয়লেটের ঢাকনাটা খোলা রেখে ফ্লাশ করেন - তাহলেও সেখান থেকে ছড়ানো পানির কণা ছাদ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে।" সংবাদ মাধ্যমে ঘোষণা প্রচারিত হচ্ছিল, কীভাবে মানুষ নিজেদেরকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করবে। ঘোষণায় বলা হয়, এই রোগ শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় নির্গত পানির কণার মাধ্যমে, এবং রোগীর দেহনি:সৃত তরল থেকে ছড়ায়। সংক্রমণের ঝৃঁকি কমাতে তরল সাবান দিয়ে বার বার হাত ধুতে হবে। এবং যে তোয়ালে দিয়ে হাত মুছবেন - তা ফেলে দিতে হবে। "আপনার চোথ, নাক বা মুখ স্পর্শ করার আগে হাত ধুতে হবে। হ্যান্ডশেক করা এড়িয়ে চলুন।" 'রাস্তাঘাটে মুখোশ পরা লোক বাড়তে লাগলো' টম বাকলি বলছিলেন, "প্রথম দিকে হংকংএর লোকজন এত সচেতন ছিল না যে কি ঘটছে। তবে এ অস্বাভাবিক নিউমোনিয়া মোকাবিলার ব্যাপারে সরকার সক্রিয় হয়ে ওঠার পর, টিভিতে এ বিষয়ে নানা রকম নির্দেশিকা প্রচারিত হতে লাগলো।" "প্রথম দিকে শহরের কাউকেই প্রকাশ্যে মুখোশ পরতে দেখা যেতো না ।" "কিন্তু ধীরে ধীরে রাস্তাঘাটে মুখোশ পরা লোক বাড়তে লাগলো, এবং দিন দশেকের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ লোকের মুখে মুখোশ দেখা যেতে লাগলো।" হংকংএর সাবওয়েতে মুখোশ পরে ভ্রমণ করছেন যাত্রীরা, ২০০৩ "মানুষও অনেক সচেতন হয়ে উঠলো, তারা নিজে থেকেই রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া বা রেসকোর্সে যাওয়া বন্ধ করে দিলো, শপিংএ যাওয়া কমিয়ে দিলো। মার্চের শেষ দিকে হংকংএ সার্স নিয়ে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভাষণ দিলেন উইলিয়াম হো। তার পরপরই তিনি নিজেও সার্স সংক্রমণে আক্রান্ত হন। 'আমি কল্পনাই করতে পারিনি যে আমার সার্স হতে পারে' উইলিয়াম হো বলছিলেন, "ওই সম্মেলনে আমিই প্রথম বক্তব্য দিলাম। তার পর আমি হাসপাতালে গেলাম, পরে আবার কনফারেন্সের ডিনার ইত্যাদির জন্য ফিরে এলাম।" "সেদিন ছিল শনিবার। পর দিন রোববার সকালেই আমার অসুস্থ, জ্বর-জ্বর বোধ হতে লাগলো।" "ভাবলাম নিশ্চয়ই সার্স নয়, অন্য কিছু হয়েছে - তবে নিশ্চিত হবার জন্য আমি একটা এক্সরে করালাম।" "এক্সরে থেকেই এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে আমার সার্স হয়েছে। আমার সহকর্মীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো।" "এটা ছিল আমার কাছে এক বিরাট আঘাত। তখন পর্যন্ত আমি কখনো কল্পনাই করতে পারি নি যে আমার সার্স হতে পারে। আমার জীবনে হঠাৎ করেই যেন একটা বিরাট ছেদ পড়ে গেল।" হংকং ২০০৩, সার্স আতংকের মধ্যে মুখোশ পরে টিভি ইন্টারভিউ সংবাদমাধ্যমে এটা ছিল এক বিরাট খবর - কারণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী স্বয়ং সার্স রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে হংকং এ ভ্রমণ না করার জন্য এক নির্দেশিকা জারি করলো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা । হংকং বাসিন্দাদের মধ্যে ততদিনে আতংক তৈরি হয়েছে। হংকং-এ সার্স আতংক টম বাকলি বলছিলেন, তার বন্ধুদের ৮০ শতাংশই হংকং ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। "আমি ও আমার স্ত্রী একটা পরিকল্পনা তৈরি করলাম - এ পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে আমরা কী কী করবো।" "আমরা ঠিক করলাম, আমরা যেখানে থাকি - সেখানে কেউ সংক্রমিত হলে আমরা পুরো পাড়াটাকেই কোয়ারেন্টিন করে ফেলবো, যেখানে মোট সাতটি পরিবার থাকতো।" "আর যদি এ পরিবারগুলোর মধ্যেই কারো কিছু হয় - তাহলে আমার পরিবার নিজেদেরকে এবং আমাদের বাড়িটাকে কোয়ারেন্টিন করবে। সুপার মার্কেটে যাবো আমি, খাবার কিনে দরজার সামনে রেখে যাবো।" 'ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমার হাত-পা ফুলে গেল' সার্স আক্রান্ত উইলিয়াম হো-কে হাসপাতালের একটি কোয়ারেন্টিন ইউনিটে আলাদা করে রাখা হলো। সার্সের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তাই ডাক্তাররা তাকে পরীক্ষামূলকভাবে স্টেরয়েড এবং এন্টিভাইরাল ওষূধ দিতে লাগলেন। হো বলছিলেন, তাতে তার বেশ তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছিল। "আমার যেহেতু বয়স খুব বেশি নয় তাই আমার জীবন বাঁচাতে কড়া ডোজে স্টেরয়েড দেয়া হলো। ফলে আমার হাত-পা ফুলে গেল। তারা ইনজেকশন দেবার জন্য শিরা খুঁজে পাচ্ছিল না।" "আমি আবার তাদের কাছে জানতে চাইছিলাম বাইরের অবস্থা কি, হাসপাতালে ভাইরাস সংক্রমণ রোধ করা গেছে কিনা, আমার মনের মধ্যেও একটা যুদ্ধ চলছিল।" "আমি ঠিক অন্যরোগীদের মতো ছিলাম না। আমার সহকর্মীরা যখন এই রোগের বিরুদ্ধে লড়ছে, তখন আমি নিজে আমার মনকে শান্ত করতে পারছিলাম না।" হংকংএর একটি স্কুলে মুখোশ পরা ছাত্রছাত্রীরা, ২০০৩ "আমার নিজের ফুসফুসের মধ্যে যেমন ভাইরাস ছড়াচ্ছিল, তেমনি হাসপাতালের ভেতরেও রোগ ছড়াচ্ছিল। ফলে দুটি বিষয় নিয়েই আমার দুশ্চিন্তা হচ্ছিল।" ডা. হো অবশ্য সার্স থেকে পুরোপুরি সেরে উঠেছিলেন। তবে হাসপাতাল থেকেই তিনি দেখেছিলেন হংকং শহরের ওপর এই রোগ কী প্রভাব ফেলেছে। 'সমাজের ভালো দিকগুলো দেখতে পেয়েছিলাম' "হংকংএর জন্য এটা ছিল খুবই অন্ধকার সময়। টিভিতে দেখছিলাম শহরের বিমানবন্দর এবং রাস্তাঘাট জনশূন্য, ভুতুড়ে চেহারা নিয়েছে। শহরের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।" "তবে শহরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ ছিল। অনেক স্বাস্থ্যকর্মী যারা বাড়ি যেতে পারতেন না - তাদের ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করছিলেন প্রতিবেশীরা।" "যারা এ রোগের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন, তারা নানাভাবে মানুষের সমর্থন পেয়েছেন। আমাদের সমাজের এই সংহতির ভালো দিকগুলো তখন দেখতে পেয়েছিলাম। আশা করি সেটা টিকে থাকবে। শেষ সার্স রোগীর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল ২০০৪ সালের মে মাসে। তার পর আর কেউ এ রোগে আক্রান্ত হয় নি। সে বছর জুন মাসের ৫ তারিখ একটা ভালো খবরের কথা জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। "আমরা মনে করছি আমরা এই মহামারির সবচেয়ে খারাপ পর্বটি পার হয়ে এসেছি। এর পরে কী ঘটবে তা আমরা জানি না। আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসেছে, আমরা এতে স্বস্তি বোধ করছি। কিন্তু লোকজনকে এখনো সতর্ক থাকতে হবে" - বলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা। করোনাভাইরাস গাইড: আপনার প্রশ্নের উত্তর করোনাভাইরাস: লক্ষণ দেখা দিলে আলাদা থাকতে হবে কীভাবে করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন যে পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে করোনাভাইরাস
দু'হাজার তিন সালে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল সার্স নামের এক সংক্রামক ভাইরাস, যাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮ হাজারেরও বেশি লোক এবং ১৭টি দেশে মৃত্যু হয়েছিল ৭৭৪ জনের।
পালোমার ইউটিউব চ্যানেলে এখন মোট সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৬ লাখ ২৫ হাজার। তবে সেখানে একমাত্র সমস্যা ছিল: তিনি দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের সেতে লাগোয়াস শহরে থাকেন। যার লোকসংখ্যা মাত্র দুই লাখ সাঁইত্রিশ হাজার। তিনি কখনোই এই শহর ছেড়ে যাননি। এবং এখনও এখানেই থাকেন। একসময় তিনি এটাও জানতেন না যে মেকআপ কিভাবে দিতে হয়। কিন্তু এখন তার ইউটিউব চ্যানেলে (পালোমা সিপ্রিয়ানো) মোট সাবস্ক্রাইবার বা অনুসারীর সংখ্যা ছয় লাখ ২৫ হাজার। তবে তিনি সেখানে কোন সমুদ্র সৈকত বা লিপস্টিকের রং নিয়ে কথা বলেন না। ইউটিউবে ২৫ বছর বয়সী এই তরুণীর আলোচনার বিষয় বিভিন্ন ধরণের নির্মাণ কাজ। তিনি ব্রাজিলের একমাত্র নারী সদস্য যিনি নির্মাণ বিষয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন। মূলত মা আইভনির পরামর্শেই পালোমা তার মূল পরিকল্পনা পরিবর্তন করে নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য এমন একটি ভিন্ন বিষয়বস্তুকে বেছে নেন। আরও পড়তে পারেন: পিউডিপাই-কে হারিয়ে ইউটিউবের শীর্ষে টি-সিরিজ মাস্তানাম্মা: রান্না দিয়ে ইউটিউব মাতানো শতবর্ষী দাদীমা ইউটিউবে ১৭৬ কোটি টাকা আয় সাত বছরের রায়ানের পালোমার "কিভাবে দেয়ালে প্লাস্টার করবেন" নামের ভিডিও। হলুদ হেলমেট পরে মা মেয়ের যাত্রা: "তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে নিজের মেঝের টাইলস বসানোর একটি ভিডিও আপলোড করা যেতে পারে। প্রথমে শুনে এই আইডিয়াটা খু্ব একটা আকর্ষণীয় মনে হয়নি। তারপরও আমি সেটা পোস্ট করেছিলাম।" বিবিসি নিউজ ব্রাজিলকে বলেছেন পালোমা। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও এখন পর্যন্ত ৭৫ লাখ বার দেখা হয়েছে। ওই ভিডিও টিউটোরিয়ালে তিনি দেখিয়েছিলেন যে কিভাবে একটি দেয়ালে প্লাস্টার করতে হয়। নির্মাণ শিল্প কেন্দ্রিক ইউটিউব চ্যানেলের হিসেবে ব্রাজিলের অন্য যেকোনো চ্যানেলের তুলনায় পালোমা অনেক বেশি অনুসারী অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তার ইনস্টাগ্রামেও ফলোয়ারের সংখ্যা ৪৫ হাজারেও বেশি। তার চ্যানেলে অন্যান্য ভিডিওগুলোয় ধাপে ধাপে ডিআইওয়াই (ডু ইট ইওরসেল্ফ) অর্থাৎ যেকোনো কাজ নিজে করার মতো উপায় দেখানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে মেঝেতে টাইলস বসানো, পানির কল ফিট করা এমনকি, কি করে একটি দেয়াল তুলতে হয় সেটাও। পালোমার এই ভিডিওগুলো বেশ সোজাসাপ্টা আর সহজ নির্দেশাবলী সম্পন্ন। "আমি মানুষকে দেখাই যে যদি আমি এটা করতে পারি, অন্য সবাই পারবে।" বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: যে কারণে বাকশাল নিয়ে এত বিতর্ক বাংলাদেশী টিভি অনুষ্ঠানে দর্শকদের অনীহা কেন 'সুন্দর' হতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলা নারীরা ভারতের রাজনীতিতে ত্রাস ছিলেন যে নির্বাচন কমিশনার অনেকে বিশ্বাসই করতেন না যে পালোমা এসব নির্মাণ কাজ একা একাই করছেন। প্রয়োজন থেকে নিজেই শিখছেন পালোমা পালোমা এক পর্যায়ে তার তীব্র প্রয়োজনীয়তা থেকেই বিভিন্ন নির্মাণ কাজ শিখতে শুরু করেন। একদিন পালোমা ও তার মা আইভোনেকে নিজেদের দুই রুমের বাড়িটি বর্ধিত করার কাজ করতে হয়েছিল। কারণ শ্রমিকদের দিয়ে করানোর মতো অর্থ তাদের কাছে ছিলনা। পরে মায়ের বান্ধবীরা তাকে রোজগারের একটি পথ দেখিয়ে দেন। আর পালোমাও সেই পথের প্রেমে পড়ে যান দ্রুতই। এই নির্মাণ শিল্প বিষয়ে জানার প্রয়োজনীয়তা থেকেই ২০১৩ সালে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। তবে ইউটিউব চ্যানেলে নিজের সমস্ত সময় উৎসর্গ করার জন্য প্রথম সেমিস্টারেই তিনি ঝরে পড়েন। পালোমা বিশ্বাস করেন যে তিনি নিজের বাড়ির উন্নয়নের কাজ নিজে করার মাধ্যমে প্রায় ৭০০০ ডলার সঞ্চয় করতে পেরেছেন। "আমি যা করেছি তা অন্য কাউকে দিয়ে করার মতো সামর্থ্য আমার ছিল না।" বলেন পালোমা। ব্রাজিলের নির্মাণ কাজে নারীর উপস্থিতি ৪% এরও কম। পুরুষদের রাজত্বে এক নারী ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) -এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রাজিলের নির্মাণ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের মধ্যে কেবলমাত্র ৩.২% নারী। তাই পুরুষ আধিপত্যের এই সেক্টরে পালোমার বিরল সফলতায় প্রধান অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন তার মা আইভোনে। "আমার মা সব ধরণের কাজ করেছেন। যখন আমরা ছোট ছিলাম তখন তিনি ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে জমি থেকে আগাছা পরিষ্কারের কাজ করতেন। তার ইচ্ছাশক্তি আমাকে শক্তি দেয়।" তবে পালোমার ভাইবোনেরা ভিন্ন ভিন্ন দিকে কাজ করেছেন। তার দুই বোন ভবনের কাজ থেকে দূরেই ছিলেন। কিন্তু তার ১৩ বছর বয়সী ছোট ভাই, তার ভিডিওগুলি তৈরি করতে সহায়তা করে। "সে এখনো তার হাত নোংরা করেনি, কিন্তু আমি তাকে শেখাচ্ছি।" অনেক চ্যানেল অনুসারীরা পালোমার এমন খ্যাতি অর্জনে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। 'আমাদের বুঝিয়ে দিতে হবে যে আমাদের নিজেদের উন্নয়নে কোন পুরুষের সাহায্যের দরকার নেই'- বলছেন পালোমা সেক্সিস্ট ট্রলিং পালোমা বলেন, "আমি খুব দুঃখ পেতাম যখন লোকেরা বলতো যে আমি কাজটি করছিনা এবং কোন না কোন পুরুষ নিশ্চয়ই এই কাজের পেছনে রয়েছে।" তবে ধীরে ধীরে তিনি এসব মন্তব্যকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন। বিশেষ করে যেগুলো নির্মাণ শিল্পে কর্মরত পুরুষদের থেকে আসতো। "উদাহরণ স্বরূপ, যখন আমি ভিউয়ার্সদের উদ্দেশ্যে বলতাম যে এই কাজটি এই নির্দিষ্ট নিয়মে করা উচিত, তখন কিছু লোক মানতে চাইতো না এবং বলতো যে আমি ভুল বলছি।" "কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমিই ঠিক ছিলাম। কিছু মানুষের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও তারা মনে করে যে, অন্যের খুঁত তাদের বের করতেই হবে।" পালোমা এখন ওই মন্তব্যগুলো হয় এড়িয়ে যান, নাহলে মুছে ফেলেন। পালোমার অনুসারীদের মধ্যে ৬০% পুরুষ। কিন্তু দিন দিন তার চ্যানেলে নারী অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে বলেও তিনি জানান। তিনি জানান যে, তার চ্যানেলের নারী অনুসারীরাই সবচেয়ে বেশি উৎসাহব্যঞ্জক প্রতিক্রিয়া দেন। তার মধ্যে একটি মন্তব্য এমন- " এ ধরণের কাজ করার জন্য আপনাকে অভিনন্দন। আপনার ভিডিওগুলোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি কোন নির্মাণ শ্রমিক ছাড়াই আমার বাড়ী তৈরির কাজ শেষ করেছি"। আবার আরেকজন নারী উল্লেখ করেছিলেন- "আমি আমার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, এরপর আমি আপনার চ্যানেলে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই।" পালোমা ও তার মা নিজেদের ঘর বানাতে নিজেরাই কাজ করেছেন নিজে নিজেই করুন, নারীরা পালোমার ব্যবসা বাড়ানোর একটি কৌশল আছে: তিনি আরও বেশি নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে তাদের নিজে নিজে কাজ করার তাগিদ দেন, যেটা ইংরেজিতে ডু ইট ইউরসেল্ফ বা সংক্ষেপে ডিআইওয়াই নামেই বেশি পরিচিত। "যদি আমি প্রকৌশলবিদ্যার কোন ডিগ্রী ছাড়াই একটি কংক্রিট স্তম্ভ তৈরি করতে পারি, তাহলে তারা কেন বৈদ্যুতিক ঝরনা বসাতে পারবে না?" তিনি প্রশ্ন করেন। এই নির্মাতা বিশ্বাস করেন যে নারীরা নিজেরা সেই কাজ করতে ইচ্ছুক না হলেও তারা ব্যবসা শিখতে পারবেন। "প্রশ্ন এটা নয় যে, যদি তারা জানতে পারে তারা এটা কিভাবে করবে, কিন্তু যথেষ্ট তথ্য থাকা যেন তারা কখনই সুবিধা গ্রহণ না করে।" হাসিঠাট্টার মধ্যেও, পালোমা আরেকটি মূল বিশ্বাসের কথা জানান। "পুরুষরা যতোটা ভাবে যে তাদেরকে আমাদের অনেক দরকার, আমাদের এটা দেখাতে হবে যে, আমাদের এগিয়ে যেতে তাদের কোন প্রয়োজন নেই।" ফেলে দেয়া জিনিষপত্র থেকে আসবাব বানানো যায় পেশাজীবী ইউটিউবর পালোমার ইউটিউব চ্যানেলে ১৫০টির বেশি ভিডিও রয়েছে এবং তিনি বলতে গেলে একজন পেশাদার ইউটিউবর হয়ে উঠেছেন। তিনি নিজেই এসব ভিডিও ধারণ করেন, সম্পাদনা করেন এবং প্রযোজনা করেন। অথচ আগে তিনি ছিলেন মুদ্রলেখক (টাইপিস্ট) এবং সেলসওম্যান (বিক্রয়কর্মী) হিসেবে কাজ করতেন। অনেক সময় রাস্তায় রাস্তায় লিফলেট বিলির কাজ করে তাকে উপার্জন করতে হয়েছিল। পালোমার প্রতিটি ভিডিও ধারণ করা হয়েছে শুধুমাত্র একটি ক্যামেরা দিয়ে। এবং তার এই কাজ শেষ করতে গড়ে এক থেকে তিন দিন সময় লাগতো। প্রতিটা ভিডিওর বিষয়বস্তু বা থিম বের করার ক্ষেত্রে পালোমা চিন্তা করতেন তার বাড়িতে নিজের প্রয়োজনে কোন কাজগুলো করতে হয়। সেই প্রয়োজনীয়তা অনুসন্ধান করেই তিনি ভিডিও নির্মাণের বিষয় নির্বাচন করতেন। তিনি বলেন, "আমাদের বাড়িতে যা যা করার দরকার হয়, আমি তাই করি। আমি বাড়ির দেয়াল রং করেছি, বইয়ের/কাপড়ের তাক বানিয়েছি এমনকি সুইমিংপুল বানানোও বাদ যায়নি।" যে নারী এক সময় ভ্রমণ নিয়ে ব্লগিং করার স্বপ্ন দেখতেন, এখন তিনি তার চ্যানেলের সুবাদে অনেক জায়গাতেই ঘুরে বেড়ান। তবে তার উদ্দেশ্য বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নিয়ে মানুষকে শেখানো আর উদ্বুদ্ধ করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার এই চলাচলের খরচ বহন করে থাকে ডিআইওয়াই দোকানগুলো। স্পন্সরের থেকে পাওয়া এই টাকা তাকে একটি ডিগ্রী নিতে, সেইসঙ্গে আত্মীয়-স্বজনদের প্রয়োজনেও কাজে আসছে। "আমি জানি যে আমার জীবনের অভিজ্ঞতা অন্যান্য নারীদের মতো নয়, কিন্তু আমি মনে করি মানুষ যা চায় সেটা নিয়ে সন্দেহ করার পরিবর্তে আর খুব বেশি চিন্তা না করে সেটা অর্জনে লেগে পড়া উচিত। "যখন এটি হয়ে যাবে, তখন আপনি মূল্যায়ন করবেন এবং এটা থেকেই শিখবেন।"
চার বছর আগে, পালোমা সান্তোস সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ভ্রমণ বা ফ্যাশন নিয়ে পরামর্শ দিয়ে খ্যাতি অর্জনের স্বপ্ন দেখতেন।
অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে নানা আকারের ও দামের গরু ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরে যাতে কোন ধরণের পশুর হাট বসানো না হয় - সেজন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠিত। বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থদের হাটে না যাওয়ার জন্যেও পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে অনলাইন শপ। এসব ওয়েবসাইটে নানা দামের গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। অনলাইনে গরু বিক্রি করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন 'ডিজিটাল হাট' নামের একটি প্লাটফর্ম চালু করেছে, যার সঙ্গে রয়েছে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু কোরবানির গরু প্রাণী অনলাইনে কেনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা কতটুকু? গ্রাহকদেরই কোন বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা উচিত? কোরবানির পশুর যোগান দিচ্ছেন যে নারীরা কোরবানির গরু কেন অনলাইনে কেনা? গরু বিক্রির একটি অনলাইন শপ থেকে কোরবানির জন্য একটি গরুর কিনেছেন ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা মহসিনউজ্জামান খান। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান মি. খান বলছিলেন, ''করোনাভাইরাসের কারণে বাইরে বের হওয়া কঠিন, নিরাপত্তার একটা ঝুঁকি আছে। গরুর হাটে যাওয়াও অসুবিধাজনক। তাই সবকিছু মিলে এবার অনলাইনে গরু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'' আরেকজন সম্ভাব্য ক্রেতা ব্যবসায়ী ইব্রাহিম মুন্সী বলছেন, ''এই বছর গরুর হাটে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এমনিতেই তো সেখানে অনেক ভিড়-ভাট্টা হয়, বৃষ্টিবাদলে কাদাও হয়। তাই এইবার অনলাইনে গরু কেনার কথা ভাবছি। তবে এখনো যাচাই-বাছাই করছি। কয়েকদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেবো।'' অনলাইন শপ থেকে গরু কেনার প্রধান কারণ হিসাবে হাটে যাওয়া বা ভিড় এড়ানোর মতো কারণ তারা উল্লেখ করছেন। বিক্রেতা গরুটি ঈদের আগে আগে বাড়িতে পৌঁছে দেবেন বিধায় এটিও তাদের জন্য সুবিধাজনক বলে তারা মনে করছেন। কোরবানির পশুর হাটে বিপুল লোকসমাগম হয়। যেভাবে অনলাইনে গরু কেনা যাবে গরু বিক্রেতা একটি অনলাইন শপ, দেশীগরুবিডি ডটকমের প্রধান নির্বাহী টিটো রহমান জানাচ্ছেন, ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ক্রেতারা বিভিন্ন আকারের ও দামের গরুর ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে পছন্দ করতে পারবেন। এরপর প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা যাবে। ক্রেতা চাইলে ভিডিও-কলের মাধ্যমে গরুর ভিডিও দেখতে পারবেন এবং গরুর পালনকারীর সাথে কথাও বলতে পারবেন। পছন্দ হলে প্রথমে অর্ধেক টাকা পরিশোধ করতে হবে। ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে এই টাকা জমা করা যাবে। তাহলে গরুটি বুকিং হয়ে গেল। ঈদের এক-দুইদিন আগে গরুটি সরবরাহ করা হবে। তখন নগদ বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাকি টাকা পরিশোধ করতে হবে। আরো পড়ুন: বাংলাদেশে অর্গানিক গরুর চাহিদা কেন বাড়ছে? কোরবানির উপযুক্ত সুস্থ গরু যেভাবে চিনবেন পাচার হওয়া গরু কি কোরবানির উপযুক্ত? প্রশ্ন তুলেছে বিএসএফ কোভিড বিস্তার ঠেকাতে বড় চ্যালেঞ্জ এখন কোরবানির পশুর হাট সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে অনলাইনে কোরবানি অনলাইন ক্রয়ে ঝুঁকি কতটা? অনলাইনে গরুর মতো প্রাণী কেনার ক্ষেত্রে খরচ অর্ধ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু এরকম ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ছবি দেখে, অনলাইনের মাধ্যমে গরু ক্রয়ের আদেশ দেয়া কতটা নিরাপদ? মহসিনউজ্জামান খান বলছেন, ''আমি যে ওয়েবসাইট থেকে গরু কিনেছি, তাদের বলেছিলাম যেন আমাকে ভিডিও-কলের মাধ্যমে গরুটি দেখানো হয়। তারা আমাকে দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। তারপরে আমি অর্ডার দিয়েছি।'' গরু বিক্রেতা একটি অনলাইন শপ, দেশীগরুবিডি ডটকমের প্রধান নির্বাহী টিটো রহমান বলছেন, ''আমরা আসলে খামারীদের সঙ্গে ক্রেতাদের সমন্বয়ের কাজটি করছি। এতে একদিকে যেমন খামারীদের সহায়তা করা হচ্ছে, তেমনি ক্রেতারাও প্রচলিত হাটের ঝামেলা এড়িয়ে নিরাপদে গরু কিনতে পারেন।'' এর আগে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গরু কেনার পর, প্রতিশ্রুতি মাফিক কাঙ্ক্ষিত গরু না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন কোন কোন গ্রাহক। তবে টিটো রহমান বলছেন, ''গরুর দাম পরিশোধ থেকে শুরু করে গরু সরবরাহ করা পর্যন্ত সবকিছুর দায়িত্ব আমাদের অনলাইন শপের থাকবে। খামারীদের কাজ থেকে আমরা গরু সংগ্রহ করলেও, পুরো দায়িত্ব থাকবে আমাদেরই। যদি গরুর কান, লেজ কাটা থাকে, রঙ ঠিক না থাকে, তাহলে ক্রেতা গরুটি বদলে নিতে বা রিফান্ড নিতে পারবেন।'' দেশের বিভিন্ন স্থানে খামারে গরু লালনপালন করা হচ্ছে। খামার মালিকদের কাছ থেকে গরু নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলছেন, ''ডিজিটাল হাটে যেসব সদস্যরা অংশ নিয়েছে, তাদের দায়িত্ব আমাদের সংগঠন নিচ্ছে। কারণ এখানে সব জেনুইন খামার ও গরুই বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে। ফলে তাদের পেমেন্ট এবং ডেলিভারির গ্যারান্টি আমাদের অ্যাসোসিয়েশন নিচ্ছে।'' কোরবানির জন্য দেশি গরু কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অনলাইনে গরু কেনার সময় কি ধরণের সতর্কতা নিতে হবে? ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলছেন পরামর্শ দিচ্ছেন, শুধুমাত্র ফেসবুক ভিত্তিক বা অপরিচিত ওয়েবসাইট থেকে গরু কেনার আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নেয়া উচিত। বিশেষ করে তারা যেন বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট থেকে গরু কেনেন। ''কোন ওয়েবসাইট থেকে কেনার আগে সেটার বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করে দেখা উচিত। প্রয়োজনে আগের ক্রেতাদের রিভিউ দেখা যেতে পারে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কিনা সেটাও দেখা উচিত।'' তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, পেমেন্ট করার আগে শর্তগুলো ভালো করে দেখা উচিত, বুঝে নেয়া উচিত যে, তারা সুস্থ গরু পাবেন কিনা। কি শর্তে কীভাবে গরু সরবরাহ করা হবে, সেগুলো বিশেষভাবে বুঝে নেয়া উচিত। প্রয়োজনে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ই-ক্যাবভুক্ত কোন সদস্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সেক্ষেত্রে তাদের অ্যাসোসিয়েশন ব্যবস্থা নিতে পারবে। কিন্তু ই-ক্যাবভুক্ত নয়, এরকম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাদের করার কিছু থাকবে না। গরুর ক্রেতা মহসিনউজ্জামান খান বলছেন, ''অর্ডার চূড়ান্ত করার আগে আমি ভিডিও কলে ভালো করে গরুটি দেখে নিয়েছি। তারপরে যখন ডেলিভারি দেবে, তখন তো দেখার সুযোগ আছে।'' বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান গরু সরবরাহের ক্ষেত্রে আলাদা ডেলিভারি চার্জ ধরে থাকে। আগেই সে বিষয়ে কথা বলে নেয়া ভালো। কেনার সময়ের তুলনায় ডেলিভারির মধ্যে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধান থাকায় গরুর ওজনের কম বেশি হতে পারে। এসব বিষয়ে বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে পরিষ্কার করে নিতে হবে। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: কন্যাসহ ঐশ্বরিয়া রাই-ও এবার করোনা আক্রান্ত, অমিতাভ ও রেখার বাংলো সিল করোনাভাইরাস ঠেকাতে নিউজিল্যান্ড কীভাবে এত সফল হলো? আহমদিয়া শিশুর লাশ কবর থেকে তোলার ঘটনায় চাঞ্চল্য 'মানুষটা হঠাৎ করে কয়েকদিনের অসুখে নাই হয়ে গেলেন' অনলাইন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বিক্রয় ডটকম তাদের ওয়েবসাইটে গরু কেনার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে বলেছে, প্রথমেই বিক্রেতার সঙ্গে ভালো করে আলাপ করে বুঝে নেয়া উচিত যে, তারা ভালো অফার দিচ্ছে কিনা। বিক্রেতার কাছ থেকে গরুর ছবি বেশি করে চেয়ে নিয়ে ভালো করে যাচাই করতে হবে, প্রয়োজনে ভিডিও কল করে দেখা যেতে পারে। আরও ভালোভাবে দেখার জন্য সরাসরি বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করে বাস্তবে গরু যাচাই করা যেতে পারে। কোন বিক্রেতা যদি গরু স্পষ্ট করে দেখাতে না চান, তাহলে সেরকম বিক্রেতাদের কাছ থেকে গরু না কেনাই ভালো। এই ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠানটিতে আরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে, গরুর দাম চূড়ান্ত করার আগে লোকাল হাট ও অনলাইন মার্কেট যাচাই করে দাম ঠিক করা উচিত। অতিরিক্ত কম দাম হলে যেমন সন্দেহজনক, তেমনি অতিরিক্ত দাম দিয়ে ঠকা থেকেও নিরাপদ থাকতে হবে। শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পরেই দাম পরিশোধ করতে হবে। সবচেয়ে ভালো গরুটি হাতে পাওয়ার পর নগদে দাম পরিশোধ করা। দেশীগরুবিডি ডটকমের প্রধান নির্বাহী টিটো রহমান বলছেন, ''গরুটি সুস্থ আছে কিনা, ওয়েবসাইটটি কতটা নির্ভরযোগ্য, সরকার অনুমোদিত কিনা ইত্যাদি বিষয় দাম পরিশোধের আগেই যাচাই করে দেখা উচিত। সেজন্য দরকার হলে একটু সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই করা ভালো। অনেক সময় ফেসবুকে অস্বাভাবিক কম দামের গরু বিক্রির অফার পাওয়া যায়। কিন্তু সেগুলোয় পা দিয়ে প্রতারিত না হওয়াই ভালো।''
বাংলাদেশে ঈদুল আযহার আর কয়েক সপ্তাহ বাকি থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে গরুর হাটে যেতে অনেকের অনীহা রয়েছে।
কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য ভারতের সমাজে বেশ পুরনো। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ঘাটালের বাসিন্দা বাপন ধাড়ার স্ত্রী সওয়া দুমাস আগে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। মি. ধাড়া মুম্বাই, হায়দ্রাবাদের মতো নানা শহরে ঘুরে শ্রমিকের কাজ করেন, আর তার স্ত্রী পরিচারিকার কাজ করতেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে দুজনেরই সব রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমন একটা সময়েই মেয়ের জন্ম হয়। কদিন আগে হাওড়ার এক দম্পতির কাছে মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে ধাড়া পরিবার, এমন খবর পেয়ে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন জেলা চাইল্ড লাইনের কোঅর্ডিনেটর বিশ্বনাথ সামন্ত। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, "এরা সত্যিই খুব দরিদ্র। ঘরে কোথাও ত্রিপল টাঙ্গানো, কোথাও টালি লাগানো। আমরা যখন জানতে চাই যে কেন সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন, তখন ভদ্রলোক বলেন বিক্রি নয়, সন্তানকে লালন-পালন করার জন্য এক দম্পতিকে দিয়েছেন। আমরা চেপে ধরি, তাহলে টাকা নিলেন কেন? মাত্র আড়াই হাজার টাকার জন্য মেয়েকে বিক্রি করলেন?" "জবাবে তিনি আবারও সেই কথাই বলতে থাকেন। তবে আমাদের কাছে স্পষ্ট যে তিনি টাকা নিয়েই মেয়েকে বিক্রি করেছিলেন। ওই শিশুকে হাওড়া জেলা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে," জানাচ্ছিলেন জেলা চাইল্ড লাইনের কোঅর্ডিনেটর বিশ্বনাথ সামন্ত। এক মেয়ে সহ শিশুটির মা নিখোঁজ। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা রুজু করেছে, আর শিশুটির বাবাকে জেরা করা হচ্ছে। "পরিবারটি দরিদ্র ঠিকই। কিন্তু শিশুটি যদি পুত্র হত, তাহলে কিন্তু তিনি লালন পালন বলুন আর বিক্রি বলুন - সেটা করতেন না। আমাদের কাছে তিনি স্পষ্টই বলেছেন এটা। মেয়েকে বড় করা, বিয়ে দেওয়া এসব দায়িত্ব পালন করতে এখনও বহু পরিবার দুশ্চিন্তায় পড়ে। মাঝে মাঝে নিজেদেরই দোষী মনে হয় যে আমরাই বোধহয় সচেতন করতে পারি নি মানুষকে," বলছিলেন বিশ্বনাথ সামন্ত। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: লকডাউনে এর মধ্যেই ভারতে বেকার সোয়া বারো কোটি মানুষ ভারতে দুই কোটির বেশি 'অবাঞ্ছিত কন্যা' শিশুর জন্ম ভারতে কন্যা শিশু কেন এত অনাকাঙ্ক্ষিত? কন্যাসন্তানকে বড় করার জন্য নানা সরকারি প্রকল্প থাকলেও সব স্তরের মানুষ যেমন সেই প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারছেন না, আবার প্রকল্পগুলির ব্যাপারে প্রচারও সবার কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া যায় নি। তবে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী চ্যাটার্জী বলছিলেন, যতই প্রকল্প থাকুক, সেগুলিরও সীমাবদ্ধতা আছে। "এই যে কন্যা শিশু, সে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আসবে ১৩ বছর বয়সে। তার আগে আরও একটা মাসোহারার ব্যবস্থা আছে -মাসিক দুহাজার টাকা করে দেওয়া হয় জেলাশাসকের মাধ্যমে। কিন্তু তাও তিন বছরের জন্য। এখন আমরা এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তাতে যতই নানা প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হোক, এরকম ঘটনা আরও দেখার জন্য বোধহয় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে," বলছিলেন মিজ. চ্যাটার্জী। শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সনের ব্যাখ্যা, একদিকে মহামারি, অন্যদিকে আম্পানের তান্ডব - এই দুইয়ের জোড়া আক্রমণে পশ্চিমবঙ্গে এরকম ঘটনা যে আরও হতে পারে, সেই আশঙ্কা তাদের ছিলই। তার কথায়, "ওই পরিবারটি খুবই গরীব, সেটা মেনে নিলেও কেউ অভুক্ত থাকছেন, এমন কিন্তু নয়। সকলেই সরকারি রেশন পাচ্ছেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ, রোজগার হারানো এসব তো চলছিলই, তারই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় এসে সব তছনছ করে দিয়েছে। জোড়া ধাক্কা আমাদের রাজ্যের জন্য।" অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনই বলছে পশ্চিমবঙ্গের যে কয়েকটি অঞ্চল নারী আর শিশু পাচারের সর্বভারতীয় ভরকেন্দ্র বলে পরিচিত হয়ে গেছে, সেই সব এলাকাতেই করোনা সংক্রমণের মধ্যেই আম্পান বয়ে গেছে। তাই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নারী আর শিশু পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। যেরকমটা দেখা গিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আয়লার পরেও।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এক দম্পতির বিরুদ্ধে তাদের আড়াই মাসের কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে। ওই সদ্যোজাত শিশুর বাবা আর মা দুজনেই লকডাউনের কারণে কাজ হারিয়েছেন, রোজগার বন্ধ। এইরকম এক সময়ে সামান্য অর্থের বিনিময়ে এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতে মেয়েকে তুলে দিয়েছিলেন শিশুটির বাবা-মা। পুলিশ ওই শিশুটিকে উদ্ধার করেছে।
২০১৯ সালে দিল্লিতে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী ভারতে নাগরিকত্ব আইন এবং মুসলমিদের নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকার বা বিজেপির রাজনীতি অনেক সময় বাংলাদেশকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ট্রানজিট সুবিধাসহ ভারতের নানা চাহিদা পূরণ করার পরও বাংলাদেশ কী পেয়েছে- সেই প্রশ্ন উঠছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ২৬শে মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি এবং মুজিব জন্ম শতবর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তার এই সফর। এই সফরকে সামনে রেখে গত ৯ই মার্চ সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর ওপর একটি সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। সেতুটি সরাসরি যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলোকে। এখন ভারতের এই রাজ্যগুলো সেতু দিয়ে সহজে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আনা নেয়া করতে পারবে। পাঁচ বছর আগেই ভারতের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার বা ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ফারাক এখন নানা আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। ২০১৫ সালে ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে স্বাগত জানানোর আয়োজন ছিল ব্যাপক 'ভারত সবই পেয়েছে' সাবেক একজন পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারত তাদের চাহিদার সবই পেয়েছে। কিন্তু তার তুলনায় বাংলাদেশের প্রাপ্তি না থাকায় এখানে হতাশা বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। "ভারতের কিছু উদ্বেগ ছিল বাংলাদেশ নিয়ে। ধরুন, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী কিছু গ্রুপ যে কার্যকলাপ চালাচ্ছিল। তারপর তাদের ট্রানজিটের ব্যাপার ছিল। এই সমস্যাগুলোতে কিন্তু বাংলাদেশ পরিপূর্ণভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের উদ্বেগ দূর করার জন্য। এসব ব্যাপারে ভারতের কিন্তু আর চাওয়ার কিছু নাই," মন্তব্য করেছেন তৌহিদ হোসেন। "ফেনীর নদীর ওপর এই ব্রিজ উদ্বোধন হল। তাতে করে কানেকটিভিটির আরেকটা সুযোগ সৃষ্টি হল। আসলে ত্রিপুরার মানুষের জন্য এটা বিরাট সুবিধা হল ভারতের অন্য অংশ থেকে বা বিদেশ থেকে পণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রে।" মি. হোসেন আরও বলেছেন, "এগুলো সবই হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের যে কয়েকটা চাওয়া ছিল, দৃশ্যত তাতে কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।" এই সাবেক পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্য হচ্ছে, "তিস্তা নদীর পানি নিয়ে কিন্তু আমরা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে তা হবে। কারণ বেশ কয়েক বছর যাবৎ একাধিক প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন। এবং সই হওয়ার কাছাকাছিও গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এটা এখন অনেকটাই কোল্ডস্টোরেজে চলে গেছে। যেটা একটা হতাশার কারণ।" "আরেকটা খুব ছোট্ট অ্যাকশন ভারত নিতে পারে, সেটা হল সীমান্তে হত্যা বন্ধ করা। কিন্তু ভারতের নেতৃত্ব যে কারণেই হোক, এটার খুব প্রয়োজন মনে করছেন না," মন্তব্য করেন মি: হোসেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন যে ঢাকা সফরে আসছেন, এবারও তিস্তা নদীর পানি বন্টন প্রশ্নে সমাধানের কোন ইঙ্গিত নেই। এই সফরকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন আগে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নে তার বক্তব্য ছিল, তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে ভারত সরকার আগের অবস্থানেই আছে। আর সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধের প্রশ্নে তিনি সীমান্তে অপরাধ কমানোর বিষয়ে জোর দিয়ে বলেছিলেন,"অপরাধ নয়, মৃত্যুও নয়।" ফলে বাংলাদেশের মূল দু'টি ইস্যুতে সমাধানের ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ যে সংকটে পড়েছে, এই সংকট সামলানোর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভারতকে সেভাবে পায়নি। আরো পড়ুন: সম্পর্কটা কেমন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, বাংলাদেশের উদ্বেগগুলো ভারতের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। "আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আমরা দেখি প্রতিটা রাষ্ট্রেরই ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট (জাতীয় স্বার্থ) কিন্তু প্রাধান্য পায়। কিন্তু তার যে প্রতিবেশীর সাথে এমন ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যেখানে বাংলাদেশ তাদের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রণে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে, সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত অন্তত নিরপেক্ষ ভূমিকা নেবে-সেটা আমরা আশা করেছিলাম। সেটাও কিন্তু করেনি।" অধ্যাপক ইয়াসমিন আরও বলেছেন, "সে কারণে এই ক্ষোভটাও কিন্তু বাংলাদেশে রয়ে গেছে যে এখানে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, সেটা কিন্তু স্ট্রাটেজিক (কৌশলগত) নয়, যেটাকে আমরা বলি ট্যাকটিক্যাল। এর মানে হচ্ছে, যখন যেটা প্রয়োজন, সেই প্রয়োজনের ভিত্তিতে সম্পর্কটা নির্ধারিত হচ্ছে।'' তিনি বলছেন ভারত বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের বিষয়টা দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করছে না বলে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের উদ্বেগের জায়গাাগুলোকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে না। "এর আগেও আমি যেটা বলতাম যে ভারতের নেইবারহুড পলিসিটা (প্রতিবেশীদেশের সাথে সম্পর্কের নীতি) ঠিকই আছে। কিন্তু তাদের এই নীতিতে বাংলাদেশের কনসার্নগুলো (উদ্বেগগুলো) কিন্তু প্রয়োরাটাইজ (অগ্রাধিকার) একদমই করা হচ্ছে না। যেটা আমরা বার বার দেখতে পাচ্ছি," বলেন অধ্যাপক ইয়াসমিন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ছিল তিস্তার পানি ভাগাভাগি প্রসঙ্গে। তবে দু দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি সই হলেও তিস্তা নিয়ে চুক্তি হয়নি। তিস্তা চুক্তিতে জট তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি সই না করার ক্ষেত্রে কয়েকবছর ধরেই ভারতের পক্ষ থেকে তাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার বিষয়কে কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। তবে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে দেশটির রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কেউই এর দায়িত্ব নিতে চায় না। তিস্তা ইস্যুসহ বাংলাদেশের চাহিদাগুলোর ক্ষেত্রে ভারত সংকীর্ণ স্বার্থ দেখছে বলে তিনি মনে করেন। "প্রত্যেক দেশই তাদের জাতীয় স্বার্থ দেখবে। জাতীয় স্বার্থ দুইভাবে দেখা যায়, একটা হল সংকীর্ণভাবে এবং আরেকটা হল আপনি অনেক কিছু দিয়েও নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে পারেন। আমার মনে হচ্ছে, ভারত তাদের সংকীর্ণ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।" মি: হোসেন আরও বলেছেন, "কেন্দ্রীয় সরকারকেইতো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরাতো পশ্চিমবঙ্গের সাথে চুক্তি সই করবো না। আমি মনে করি না যে, মমতা ব্যানার্জি প্রকৃত অর্থে খুব অসন্তুষ্ট হতেন, যদি কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তি করে ফেলতো। ''তিনি (মমতা ব্যানার্জি) তার ভোটের কারণে দেখাতে চান না যে উনিই কাজটা করেছেন। একই কারণে বিজেপিও চায় না এর দায়িত্ব নিতে। মানে তারা প্রত্যেকে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সংকীর্ণ স্বার্থ দেখছে" বলেন মি. তৌহিদ হোসেন। সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো নিয়েও উদ্বেগ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরের বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। তখন ভারতে ছিল কংগ্রেস সরকার। সেই প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালে ঢাকা সফরে এসেছিলেন দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড: মনমোহন সিং। ২০১১ সালে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মানমোহন সিং-এর সাথে শেখ হাসিনা । পরে ভারতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গঠনের পরও আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ট হওয়ার কথা বলা হয় দু'পক্ষ থেকেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১২ বছরে বাংলাদেশের প্রত্যাশার জায়গায় ফারাক রয়ে গেছে। অন্যদিকে ভারতে নাগরিকত্ব আইন এবং মুসলিমদের নিয়ে মোদী সরকার বা বিজেপির রাজনীতিও বাংলাদেশে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক ইউনিভার্সিটির সিস্টেমের শিক্ষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ মনে করেন, ভারতের বিজেপি সরকারের আচরণের কারণে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে বা তার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। "আমরা যেটা দেখছি, ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবং এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মতো ব্যক্তিরাও প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখছেন যে, অবৈধ অভিবাসী যারা আছে, তাদের ভারত থেকে বের করে দেয়া হবে। এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে নানান নেতিবাচক ও খুব অবজেকশনমূলক বক্তব্য তারা দিচ্ছেন।" মি: আহমেদ আরও বলেছেন এ ধরনের বক্তব্য আগে তারা শোনেননি। ''অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের পূর্ববর্তী সময়ে তখন সাম্প্রদায়িক যে রাজনীতিটা ছিল, সেই রাজনীতিটাকে আবার তারা সামনে এনেছেন এবং সেই সাম্প্রদায়িক রেটরিকগুলো আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। যেটা বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ একটি নতুন ডাইমেনশন।" সঈদ ইফতেখার আহমেদ বলছেন: "এর প্রতিক্রিয়ায় আমরা দেখছি বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির একটা ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। যার ফলে ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্টটা আরও ব্যাপকহারে বাড়ছে।" নরেন্দ্র মোদীর এবারের ঢাকা সফরেও বাংলাদেশের মূল সমস্যাগুলো দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কতটা অগ্রাধিকার পাবে-তা নিয়েও বিশ্লেষকদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। 'খুব বেশি মাথা ব্যাথার কারণ নেই' তবে সীমান্তের তিনপাশে লাগোয়া এবং বড় প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভারতের সাথে এখনকার সম্পর্ককে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে খুবই ইতিবাচক হিসাবে তুলে ধরা হয়। দশকের পর দশক ধরে ঝুলে থাকা ছিট মহল বিনিময় সমস্যার সমাধান হওয়া এবং ৭৪ এর মুজিব ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তি কার্যকর করার বিষয়কে উদাহরণ হিসাবে দেখানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি নিয়ে হতাশার প্রশ্নকে নাকচ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন "দেখেন, উনি (নরেন্দ্র মোদী) বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ এবং আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন। এই কোভিড-১৯ এর পরে ভারতের বাইরে এটাই ওনার প্রথম সফর। সেজন্য উই আর ভেরি হ্যাপি।" মন্ত্রী মি: মোমেন বলেছেন, "আর আপনি যে হতাশার কথা বলছেন, সেগুলো আমাদের ডিকশনারিতে নাই। কারণ ভারতের সাথে যত ধরনের বড় বড় সমস্যা, সেগুলো আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছি। ছোটখাট কিছু সমস্যা এদিক ওদিক থাকতে পারে-একটি যেমন আছে যে মাঝে মধ্যে সীমান্তে লোক মারা যায়। কিন্তু উভয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটা লোকেরও যেন মৃত্যু না হয়। "বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি আছে। কিন্তু নীতিগতভাব উই হ্যাভ টেকেন দ্য ভাও। সুতরাং আমাদের হতাশা নাই। মাঠে সিদ্ধান্ত ইমপ্লিমেনটেশনের দুর্বলতা বা ঘাটতি দূর করার জন্য আমরা যৌথভাবে মনিটর করার ব্যবস্থা নিচ্ছি," বলেন মি: মোমেন। তিস্তা নদীর পানি বন্টন ইস্যু নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, "তিস্তা চুক্তি সই হয়ে আছে। বাস্তবায়ন হয়নি, কারণ তাদের কিছু সমস্যা আছে। আর চুক্তি হলে আমরা যে পানি পেতাম, আমরা এখনও তা পাচ্ছি। সুতরাং এনিয়ে আপনাদের মাথা ব্যাথা খুব বেশি হওয়ার কোন কারণ নাই।" ভারতের কাছে বাংলাদেশ এখন পার্টনারশিপের চেয়ে বেশি: ভারতীয় বিশ্লেষক ভারতের বিশ্লেষকদেরও অনেকে দুই দেশের সম্পর্কের এখনকার পরিস্থিতিকে ইতিবাচক দিক থেকেই ব্যাখ্যা করছেন। দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন ভারতের একটি বেসরকারি সংস্থা বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউণ্ডেশনের শ্রীরাধা দত্ত। তিনি বলেছেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের চাওয়াকে অগ্রাধিকার দেয় বলে তিনি মনে করেন। শ্রীরাধা দত্ত তিনি বলেন, দুই দেশের সরকারের মধ্যে বা রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কের ভিত্তিতে বহুমাত্রিক অনেক কাজ হচ্ছে। ''কিন্তু আমি এটাও মানি, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে পানি। আর পানি চুক্তি হচ্ছে না বলে একটা হতাশা বলুন বা চিন্তা বলুন- সেটা আছে। "কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদীতো বারবারই বলেছেন যে, এটা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের কারণে সমস্যা হওয়ায় আটকে আছে। কিন্তু ভারতের কাছে বাংলাদেশ এখন পার্টনারশিপের চেয়ে অনেকে বেশি কিছু। সেজন্য বাংলাদেশ কী চাইছে বা কী দরকার- তা নিয়ে আমাদের চিন্তাতো করতেই হবে। সেটা নিয়ে কোন দোমনা নেই," মন্তব্য করেছেন শ্রীরাধা দত্ত। দিল্লিতে দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী। অক্টোবর, ২০১৯ কানেকটিভিটি ও ব্যবসা-বাণিজ্য এখন বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কানেকটিভিটির ওপর জোর দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতির বিষয়টি আলোচনায় আসছে। ঢাকায় একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখনও অনেক চাওয়া এবং পাওয়ার বিষয় রয়েছে। "বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে। তখন শুল্ক বা কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার বিষয়টা চলে যাবে। সেখানে বাংলাদেশের চাওয়ার বিষয়টা হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নমীল দেশ হওয়ার পরও ভারত যেন সেই সুবিধাগুলো আরও কয়েকবছর অব্যাহত রাখে। বন্ধু দেশ হিসাবে ভারতের কাছে এখন বাংলাদেশের এটা বড় চাওয়া হতে পারে।" পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য হচ্ছে, দুই দেশ যোগাযোগের বিষয়কে প্রাধান্য দেয়ায় তা বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য অনেক লাভজনক হবে। "এই ট্রেড এবং যোগাযোগের ফলে আমাদের কত যে উন্নতি হচ্ছে। আমরা জিনিস বিক্রি যেমন করছি, তেমনি আমরা এখন তাদের কাছে বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করি। আগে দুইশ মিলিয়ন হতো, এখন তার চেয়ে পাঁচগুণ বেড়েছে।" মি: মোমেন বলেছেন, "আমরা বিশ্বাস করি, কানেকটিভিটির কারণে আমাদের সারা দেশের উন্নতি হবে। যারা হতাশা দেখে তারা নানা কথা বলে। কিন্তু থিংকস আর মুভিং।" তিনি আরও বলেছেন, দুই দেশের এখনকার গভীর সম্পর্কের পটভূমিতে বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান সম্ভব হবে বলেই তারা বিশ্বাস করেন। তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন, মানুষের মাঝে হতাশা বৃদ্ধির কারণগুলো বা বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের এগুনো উচিত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এমন এক সময়ে ঢাকায় আসছেন, যখন ভারতের সাথে সম্পর্কে প্রত্যাশার ক্ষেত্রে হতাশা বেড়েছে বাংলাদেশে।
বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার না থাকায় হিন্দু নারীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নির্যাতনের নানান অভিযোগে হিন্দু নারীদের মধ্যে স্বামী থেকে আলাদা থাকার প্রবণতা বাড়ছে। বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার না থাকায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। বিধবা নারীদের সম্পত্তির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নও এখন উঠছে। ঢাকার লক্ষীবাজার এলাকায় হিন্দু এক প্রেমিক যুগল তাদের পরিবার রাজি না হলেও ঢাকঢোল বাজিয়ে শাস্ত্র মেনে বিয়ে করেছিলেন। পরে পরিবার মেনে নিয়েছিল। কিন্তু কয়েকমাসের মধ্যেই সেই সংসারে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় সন্তান নেয়া না নেয়ার প্রশ্নে। স্ত্রী সন্তান নেয়ার ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে থাকলে তাঁকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে কন্যা শিশু জন্ম দেয়ার পর সেই নারী স্বামীর বাড়িতে ফেরত এসে আশ্রয় পাননি। সেই থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাকার লক্ষীবাজার এলাকায় তিনি স্বামী থেকে আলাদা হয়ে কন্যা নিয়ে বসবাস করছেন। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি বলছিলেন, তাদের ধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যবস্থা না থাকায় আমৃত্যু তাঁকে একা থাকতে হবে, এটা মেনে নেয়া ছাড়া তাঁর কোনো উপায় নেই। "আমি স্বামীকে ডিভোর্স দিতে পারছি না। যদিও সালিশের মাধ্যমে আলাদা হওয়ায় তিনি আমাকে ভরনপোষণের জন্য মাসে নয় হাজার টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু এটাতো জীবন নয়। আমার মেয়ে আমাকে বলে,আমার আব্বু কেনো সাথে থাকে না? স্কুলে বন্ধুদের সকলের আব্বু আছে। মেয়ের এমন কথায় আমার খুব কষ্ট হয়।" একবার বিয়ে হলে যেহেতু বিচ্ছেদের কোনো ব্যবস্থা নেই, সেই সূত্র ধরে নারীদের দ্বিতীয় বিয়ে করারও অধিকার নেই। অন্যদিকে হিন্দু পুরুষদের স্ত্রীর অনুমতি না নিয়েই একাধিক বিয়ে করার সুযোগ রয়েছে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত নির্যাতিত নারীদের আইনী সহায়তা দেন। তিনি বলেছেন,অনেক নারী নির্যাতিত হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে স্বামী থেকে আলাদা থাকেন। কিন্তু এই ব্যবস্থার আইনগত কোনো ভিত্তি থাকে না। তিনি আরও বলছিলেন, "ধর্ম অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন থাকতে হবে আমৃত্যু। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শাস্ত্র বা মন্ত্র তাদের জায়গায় আছে। আর বাস্তবতা হচ্ছে, ঘরে স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধও আছে। স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে একা থাকছে। এই সুযোগে স্বামী আরেকটা বিয়ে করছে। এটাই বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।" হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত নির্যাতিত নারীদের আইনী সহায়তা দেন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র নির্যাতিত নারীদের অভিযোগ নিয়ে সে ব্যাপারে আইনী সহায়তা দিয়ে থাকে। সংগঠনটি বলছে, তাদের অভিযোগ কেন্দ্রে এখন হিন্দু নারীদের অভিযোগের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এই বিভাগের প্রধান নীনা গোস্বামী বলেছেন, "হিন্দু নারীরা মূলত ঘরে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে স্বামী থেকে আলাদা থাকার আবেদন নিয়ে আসেন।" "তখন সালিশ-সমঝোতার মাধ্যমে ভরনপোষণের অর্থ নিয়ে তারা আলাদা হচ্ছেন। বিয়ের কিন্তু সমাপ্তি ঘটছে না। সেখান থেকে তাদের বেরুবার কোনো পথ নেই। হিন্দু নারীরাএখন বিবাহ-বিচ্ছেদরে অধিকার চাইছেন"-বলেছেন নীনা গোস্বামী। যখন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে বা জীবন আটকে যাচ্ছে,তখন অনেক নারী ধর্ম বা শাস্ত্র সবকিছু এড়িয়ে অন্তত স্বামী থেকে আলাদা থাকছেন বা থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বড় অংশই চোখ বুঁজে সব মেনে নিচ্ছেন। আর সেখানে বন্ধনের চেয়ে জীবন টিকিয়ে রাখাই মুল বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন। হিন্দু নারীদের সম্পত্তির ওপর কোনো অধিকার নেই। বাবার ঘরে ছেলেদের মতো মেয়েরা সম্পত্তির ভাগ পায় না। বিয়ের পর স্বামীর ঘরেও সম্পত্তির মালিক হতে পারেন না। বিধবা হলে আশ্রিত হয়ে যান। বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের দ্বিতীয় বিয়ের অধিকার না থাকলেও পুরুষদের স্ত্রীর অনুমতি না নিয়েই একাধিক বিয়ে করার সুযোগ রয়েছে প্রায় দুই দশক আগে আকস্মিক অসুস্থতায় স্বামী মারা যায় ফরিদপুর জেলা শহরের নীলটুলী এলাকার সুপ্রিয় দত্তের। তখন তাঁর কোলে দুই শিশু সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে লেখাপড়া করা এই নারী ফরিদপুরে একটি কলেজে শিক্ষকতা করার সুবাদে আর্থিকভাবে সমস্যায় তাঁকে পড়তে হয়নি। তবে বিধবা হওয়ার পর থেকে তিনি যেনো শ্বশুরবাড়িতে আশ্রিত আছেন, এমনটাই তাঁর মনে হয়। সুপ্রিয় দত্ত বলছিলেন, "স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আমি শ্বশুর বাড়িতে আছি। আমার একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে। আমার ছেলে আছে বলে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে পারছি। কিন্তু সম্পত্তির ওপর আমার কোনো মালিকানা নেই।" "বাবার বাড়িতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমার নিজের বলে কোনো সম্পত্তি নেই। শ্বশুর বাড়িতে আমি আশ্রিত বলতে পারেন।" তিনি মনে করেন, এ ধরণের ব্যবস্থায় নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আসলে এর সংস্কার প্রয়োজন। বিধবা নারীর নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে কারণ আইনী কোনো সুরক্ষা নেই, তাদের আবার বিয়ে করারও সুযোগ শাস্ত্রে নেই। তখন তাদের অসহায় পরিস্থিতি মেনে নেয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। রানা দাশগুপ্ত মনে করেন, এমন ব্যবস্থা পুরো সমাজকেই অসহায় করে রেখেছে। "বিধবা নারীদের একটা বড় অংশই চোখের জল ফেলে বাকি জীবনটা পার করেন। আইনজীবী হিসেবে আমার কাছে অনেকে সহায়তা চান। কিন্তু আইনগতভাবে আমার কিছুই করার থাকে না।" "তখন সন্তানদের ডেকে তাদের ময়ের সাথে সাথে ভাল আচরণ করার অনুরোধ করে দায়িত্ব শেষ করি"-বলছিলেন রানা দাশগুপ্ত। হিন্দু আইন নামের ব্রিটিশ আমলের একটি আইন আছে। তাতে বিবাহ বিচ্ছেদ, পরিবার, বা সম্পত্তির মালিকানা প্রশ্নে ঐ ধর্মের শাস্ত্রের ব্যবস্থাগুলোই রয়েছে। ভারতে এবং নেপালে আইনে অনেক সংস্কার হয়েছে। হিন্দু নারীরা বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারেন অথবা বিধবা হলে তারা বিয়ে করার অধিকার পেয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা নীনা গোস্বামী বলছেন, তাদের অভিযোগ কেন্দ্রে এখন হিন্দু নারীদের অভিযোগের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে শুধু নিবন্ধনের বিষয়ে একটি আইন হয়েছে ২০১২ সালে আওয়ামী রীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে। সেটিও বাধ্যতামুলক করা হয়নি। তখন আইনমন্ত্রী ছিলেন শফিক আহমেদ। তিনি মনে করেন, বিবাহ বিচ্ছেদ এবং সম্পত্তির মালিকানাসহ হিন্দু নারীদের অধিকারের প্রশ্নে আইন প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নিলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগ তোলা হতে পারে, এমন ভয় সরকারের মধ্যে কাজ করে বলে তাঁর ধারণা। এনজিওদের একটি ফোরাম একটি আইনের খসড়া তৈরি করে সরকারের কাছে দিয়েছে। কিন্তু হিন্দুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, এমন সংগঠনগুলোর নেতারা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়ে আছেন। বিবাহ নিবন্ধন আইনটি বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারেও তাদের কোনো আগ্রহ নেই। রানা দাশগুপ্ত বলছিলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাদেরকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া তৈরি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। তিনি বলছিলেন, "এখনকার পরিস্থিতি হলো, সংখ্যালঘুদের ওপর সামগ্রিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে। তারা অস্তিত্বের সংকটে আছে। ফলে এখন অস্তিত্ব রক্ষা করবে নাকি অভ্যন্তরীণ সংস্কারের বিষয়ে কাজ করবে। এসব প্রশ্নে একটা বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেজন্য কোনো উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না।" হিন্দু নারীরা তাদের অসহায় পরিস্থিতি মেনে নিতে বাধ্য হলেও সংস্কার চাইছেন । রানা দাশগুপ্ত যেমন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর সামগ্রিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগের কথা বলে নারীদের অধিকার প্রশ্নে উদ্যোগের বিষয় এড়িয়ে গেলেন। তাদের বেশিরভাগে নেতাই এখনও এমন আইনের বিপক্ষে রয়েছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক বলছিলেন, বিয়ে বা পরিবার নিয়ে ধর্মের স্বীকৃত বিধান চলে আসছে দীর্ঘ সময় ধরে। সেজন্য তাতে সংস্কারের ব্যাপারে তাদের সমাজে জড়তা আছে বলে তিনি মনে করেন। একইসাথে তিনি বলেছেন, বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হলে তখন ঠুনকো বিষয়েই পরিবারগুলোর বন্ধন ভেঙ্গে যেতে পারে। সমাজে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এমন ভয়ও তাদের অনেকের মধ্যে রয়েছে। তবে, হিন্দু নারীদের অধিকারের প্রশ্নে তাদের নেতাদের একটা বড় অংশ পুরোনো ব্যবস্থাকেই আঁকড়ে থাকতে চাইছেন। তারা এখনও বিভক্ত। কবে তারা একমত হতে পারবেন, সেটা তারাই বলতে পারেন না । নারীরা কিন্তু অসহায় পরিস্থিতি মেনে নিতে বাধ্য হলেও সংস্কার চাইছেন। তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। কিন্তু কে নেবে সেই উদ্যোগ সেটাই এখন প্রশ্ন।
বাংলাদেশে হিন্দু পারিবারিক আইনে সংস্কার না হওয়ায় নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।
নেনি শুশাইদাহ, মালয়েশিয়ার শরিয়া আদালতের নারী বিচারক। বিচারক নেনি শুশাইদাহ দিনে পাঁচটির বেশি মামলার বিচারিক কাজ পরিচালনা করেন এবং সপ্তাহে প্রায় ৮০টি মামলার শুনানি করে থাকেন। মালয়েশিয়ায় শরিয়া আইনের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। দুই ধারা বিশিষ্ট আইনি ব্যবস্থায় পারিবারিক ও নৈতিক বিষয়ের বিচার চাওয়ার ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার অনেক মুসলিমই শরিয়া আইনের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। মালয়েশিয়ায় শরিয়া আইনের জনপ্রিয়তা মালয়েশিয়া অনেকটা মধ্যমপন্থী ইসলামিক আইন অনুশীলন করলেও সেখানে কট্টরপন্থী মতবাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিচারক শুশাইদাহ অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের মামলা থেকে শুরু করে শরিয়া আইনে নারী-পুরুষ সম্পর্কে নৈতিকতার দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন ধরণের মামলার বিচার করে থাকেন। আরো পড়ুন: অনলাইনে হয়রানির শিকার মালয়েশিয়ার মুসলিম নারীরা 'প্রতিবন্ধী বলে সবাই বলেছিল আমাকে মেরে ফেলতে' বাংলাদেশের যে নারী বিবিসির ১০০ নারীর তালিকায় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পরিণতি কী হতে পারে? হাসিনাকে নিয়ে ছবির নামে বানান ভুল, উকিল নোটিশ মালয়েশিয়া একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। তবে পারিবারিক দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে সন্তানের ভরণপোষণ বিষয়ক মামলা এবং বহুগামিতা বিষয়ে বিচার করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ তিনি। বিচারক শুশাইদাহ বলেন, "প্রতিটি ঘটনাই জটিল এবং অন্যটির চেয়ে ভিন্ন। ইসলামী আইনের অধীনে গৎবাঁধা কোনো সমাধান আপনি দিতে পারবেন না।" মুসলিম ধারণা অনুযায়ী, একজন পুরুষ চারটি বিয়ে করতে পারেন, যা মালয়েশিয়ায় আইনত বৈধ। বিচারক শুশাইদাহর আদালতে বহুবিবাহের অনুরোধ নিয়ে আসা ব্যক্তিসহ তার পরিবারের বাকিদেরও উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। শুশাইদাহ বলেন, "আমি সবার বক্তব্য নিতে চাই, শুধু পুরুষদেরটা নয়।" "নারীদের সাথে কথা বলে আমি নিশ্চিত হতে চাই যে তারাও বিষয়টি নিয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। তারা যদি সব বিষয়ে পুরোপুরি না জেনে থাকেন তাহলে আমি তাদের অনুমতি দেই না।" বিচারক শুশাইদাহ জানান, মালয়েশিয়ার অধিকাংশ নারীই এ ধরণের নিয়ম পছন্দ করেন না। "কিন্তু ইসলাম অনুযায়ী এটি বৈধ এবং মালয়েশিয়ার আদালত এই আইন বাস্তবায়ন করতে বেশ কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।" একজন পুরুষের দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে চাওয়ার পেছনে অত্যন্ত শক্ত যুক্তি থাকতে হয় বলে মন্তব্য করেন বিচারক শুশাইদাহ। এই দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রী'র স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি বাধ্যতামূলক বলেও নিশ্চিত করেন বিচারক শুশাইদাহ। বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগে সমালোচকরা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রায়ই শরিয়া আইনের বিরোধিতা করে থাকেন। শরিয়া আসলে কী? ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরানে বর্ণিত মতাদর্শ অনুযায়ী তৈরি আইনি অবকাঠামোকে শরিয়া বলা হয়। একই সাথে নবী মুহাম্মদের বক্তব্য আর জীবনধারণের আদর্শ বা 'হাদিস' এবং ইসলামী পণ্ডিতদের দ্বারা নির্ধারিত আইন বা 'ফতোয়া'ও অন্তর্ভুক্ত শরিয়া আইনে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন পরিসরে ব্যবহৃত হয়ে থাকে শরিয়া আইন। শরিয়া আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে "ভুল, অতি কঠোর এবং অমানবিক" বলে মানবাধিকার কর্মীরা এর সমালোচনা করে আসছেন। তবে অনেকসময় কঠিন শাস্তি দিলেও বিচারক শুশাইদাহ মনে করেন, সুবিচার নিশ্চিত করতেই শরিয়া আইন কখনো কখনো কঠোর অবস্থান নিয়ে থাকে। শরিয়া আইনেরে বিরোধিতা করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া শাখার উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন বিবিসিকে বলেন, "যেই শরিয়া আইন নারী, সমকামী বা সংখ্যালঘুদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে না, সেই শরিয়া আইনে আমার কোনো আপত্তি নেই।" "কিন্তু মালয়েশিয়ায় শরিয়া আইনের সমস্যা হলো তারা প্রায়ই এ ধরণের কাজ করে থাকে।" তবে বিচারক শুদাইদাহ মনে করেন শরিয়া আইন সবসময় পুরুষদের পক্ষে রায় দেয়, এমন ধারণা সত্য নয়। "নারীদের অধিকার রক্ষার জন্য তৈরি হয়েছে আমাদের আইন। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা হয়েছে এই আইনে।" নেনি শুশাইদাহ। মালয়েশিয়ার আইনে নারীর অবস্থান বিচারক শুশাইদাহ সবচেয়ে বড় চিন্তা, শক্ত শরিয়া আইনের ফাঁক গলে বিদেশে গিয়ে বিয়ে করছে মালয়েশিয়ার পুরুষরা। "মালয়েশিয়ার পুরুষ বিদেশে গিয়ে বিয়ে করলে মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তির অধীনে আনা যায় না।" মালয়েশিয়ার নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংঘ 'সিস্টারস ইন ইসলাম'এর মতে, মালয়েশিয়ার আদালতে 'নারী প্রতিনিধিত্বের ভয়াবহ ঘাটতি' এবং পুরো বিচার বিভাগে 'পুরুষত্ববাদের তীব্র ছায়া' বিদ্যমান রয়েছে। ঐ সংস্থার একজন মুখপাত্র মাজিদাহ হাশিম বলেন, "মালয়েশিয়ার শরিয়া আইনের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায় তা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবাদী আচরণ করে থাকে। এমনকি সামাজিকভাবে নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে নারীদের দোষারোপও করা হয়ে থাকে।" মিজ. হাশিম মনে করেন, সরকারি ইসলামিক প্রতিষ্ঠানগুলো নারীদের প্রাপ্য বিচার নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। যে কারণে বিচারক শুশাইদাহর নিয়োগ ছিল মালয়েশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। "একসময় শরিয়া আইনের অধিকাংশ বিচারকই ছিলেন পুরুষ, যারা বিচারিক প্রক্রিয়ায় নারীর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন।" তবে আদালত পরিচালনায় বিচারক শুশাইদাহর বলিষ্ঠ ভূমিকার মাধ্যমে ঐ ধারা পরিবর্তিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করতেই পারেন মালয়েশিয়ার মুসলিমরা। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: মালয়েশিয়ার রাজনীতি: ব্যাগ ও স্যান্ডেলের গল্প মালয়েশিয়ার রাজনীতি যেন শেক্সপিয়ারের নাটক লেসবিয়ান সেক্সের অভিযোগে দুই নারীকে বেত্রাঘাত
ইসলামী আইন বা শরিয়া আইন অনেকসময় দোষীকে অতি কঠোর শাস্তি প্রদান করে থাকে বলে সমালোচনা করা হয়ে থাকে। কিন্তু মুসলিম অধ্যুষিত মালয়েশিয়ার শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া উচ্চ আদালতের একজন নারী বিচারক মনে করেন, তিনি নিজের পদমর্যাদা বলে তিনি মুসলিম নারীদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
তামিম ইকবাল, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং মুশফিকুর রহিম ছাড়া একটি একাদশ বৃহস্পতিবার মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশের অনেকে এই পাঁচজনকে ডাকেন পঞ্চপান্ডব বলে। আজ ঠিক এমন আরেকটি দিন। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে বৃষ্টিবিঘ্নিত টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মিডিয়া বিভাগ নিশ্চিত করে যে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ থাকছেন না এই ম্যাচে, ফলে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন লিটন দাস। যেখানে ১০ ওভারের একটি ম্যাচেও ৬৫ রানে হেরে গেছে দলটি। এর আগেই চোটের কারণে মুশফিকুর রহিম বাদ পড়েছেন। তামিম ইকবাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। সাকিব আল হাসান তৃতীয় সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কারণে কয়েকদিনের ছুটি কাটিয়ে এখন কলকাতায় কোয়ারেন্টিন পালন করছেন, আর অপেক্ষায় আছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে মাঠে নামার। আর মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ২০১৭ সালেই অবসর নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে। ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদ রিফাত এমিলের মতে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখনও পরিসংখ্যান বা সংখ্যার দিক থেকে এই পাঁচজনকে অতিক্রম করতে পারে এমন ক্রিকেটার পাওয়া যায়নি। "এটা একদিক থেকে ভালো যে এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে দীর্ঘদিন পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাদের জায়গায় কে খেলবে, সেটা নিয়ে যখন এখনও প্রশ্ন থেকে যায়, তা আবার কিন্তু নেতিবাচক।" এই পাঁচজনের পরিবর্তে কে বা কারা দলে সুযোগ পাচ্ছেন? বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কিছু খবর যা আপনি পড়তে পারেন: বাংলাদেশ ক্রিকেটে 'পঞ্চপাণ্ডব' অধ্যায় কি শেষের দিকে? 'টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ' সাব্বির কেন 'পাড়ার ক্রিকেট' খেলছেন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ম্যাচে লিটন দাসের তারতম্য কতটা? বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে ইমরুল কায়েস নেই কেন? তামিম ইকবাল: মোট রানের হিসেবে তামিম ইকবাল এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। ২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে তামিম ইকবালের সাথে জুনায়েদ সিদ্দিকি, নাজিমুদ্দিন, ইমরুল কায়েস, শাহরিয়ার নাফীস, এনামুল হক বিজয় কিংবা মোহাম্মদ আশরাফুল নানা সময়ে ওপেন করেছেন বাংলাদেশের হয়ে। তবে কেউ তামিম ইকবালের কাছাকাছি পারফর্ম করা তো দূরে থাক, তামিমের সঙ্গী হিসেবেও দলে টিকতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত খুব একটা ধারাবাহিক না হলেও, সৌম্য সরকার ও লিটন দাস নিয়মিত হয়েছেন দলে। কিন্তু তাদের পারফরম্যান্সও খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। অনেকদিন পরপর একটা দুটো ভালো ইনিংস খেলেন তারা। বিশেষত, লিটন দাসের ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চিত্র পুরোই ভিন্ন। সৌম্য সরকারও ২০১৫ সালে যেভাবে ব্যাট করে নিজের সম্পর্কে প্রত্যাশার পারদ উঁচুতে উঠিয়েছিলেন, তা আর ধরে রাখতে পারেননি। বরং সময়ের সাথে সাথে তার পায়ের কাজ, শট সিলেকশন, ধৈর্য্য - এসবই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। মুশফিকুর রহিম: উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে নানা অভিযোগ আছে বাংলাদেশে ক্রিকেট সমর্থকদের, বিশ্লেষকরাও মনে করেন তিনি উইকেটরক্ষক হিসেবে বিশ্বমানের নন। কিন্তু ব্যাটসম্যান মুশফিক বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম স্তম্ভ হয়ে আছেন গত এক দশক ধরে। তার জায়গাটিতেও অনেককে নিয়ে নানাভাবে পরীক্ষার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাটিংয়ের পরীক্ষায় তারা আর টিকে থাকতে পারেননি। একজন বাড়তি ক্রিকেটার শুধুমাত্র কিপিংয়ের জন্য নেয়া আধুনিক ক্রিকেটে বিলাসিতাও বটে। এনামুল হক বিজয়, মোহাম্মদ মিঠুনরা নানা সময়ে উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু তাদের ব্যাটে যথেষ্ট রান না থাকায় বেশি দিন টিকতে পারেননি। সাকিব আল হাসান: ব্যাট, বল, ফিল্ডিং, ক্রিকেটীয় চিন্তা - সব দিক থেকে বলা যায় সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্পূর্ণ ক্রিকেটার। পরিসংখ্যানও তার হয়ে কথা বলে। একই সাথে টানা ১৪ বছর একটা দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যাটসম্যান ও বোলার হয়ে ওঠার কাজটা তিনি করে গেছেন গেছেন নিয়মিত ভাবেই। আবার মাঠের বাইরেও খবরের পাতায় সাকিবই সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি। ব্যাপারটা এমন, সাকিব খেলছেন এটা যেমন খবর, সাকিব খেলছেন না এটা আরও বড় খবর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাকিব যখন সিদ্ধান্ত নিলেন এবারে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলবেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের বদলে, তখন তিনি তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন। আবার দেশের ক্রিকেট বিশারদরা এই প্রশ্নও তোলেন সাকিবের বদলি হিসেবে ক্রিকেটার গড়ে না তোলার ব্যর্থতা কার? সাকিব দলে না থাকলেই পুরো একাদশে প্রভাব পড়ে অবধারিতভাবেই, পুরো দশ ওভার বল করা একজন বোলার এবং নির্ভরযোগ্যভাবে ব্যাট করা একজন ব্যাটসম্যানের অভাববোধ করে টিম ম্যানেজমেন্ট। যে ঘাটতি পুষিয়ে ওঠা অনেকসময় কঠিনই হয়ে পড়ে। নাসির হোসেন, সোহরাওয়ার্দী শুভ, তারও আগে ফরহাদ রেজা - এরা নানা সময়ে বাংলাদেশের নতুন 'সাকিব' হয়ে ওঠার একটা ইঙ্গিত দিলেও কেউই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত হতে পারেননি। বরং এখন মেহেদী হাসান মিরাজ, শেখ মেহেদী হাসান কিংবা আফিফ হোসেনের দিকে নজর বাংলাদেশ ক্রিকেটের থিঙ্কট্যাঙ্কের। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা: এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। মাশরাফী শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন ২০০৯ সালে - তবে এখনও মাশরাফীর পাওয়া ৭৮ উইকেটকে অতিক্রম করতে পারেননি বাংলাদেশের কোনও পেস বোলার। মুস্তাফিজুর রহমানকে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান পেস বোলারদের একজন মনে করা হলেও বিদেশের মাটিতে, যেখানে গতি ও বাউন্স আছে, সেখানে তিনি কার্যকর বোলিং করতে পারেননি। ২০১৫ বিশ্বকাপে মাশরাফীর পার্টনার ছিলেন তাসকিন আহমেদ। তিনি ইনজুরি ও ফর্মের নানা সমস্যা কাটিয়ে দলে ফিরেছেন বটে, কিন্তু তিনি মাশরাফীর মানে পৌঁছুতে পারবেন কি-না, তা এখনই বলা মুশকিল। মাশরাফী ছাড়া রুবেল হোসেন বাংলাদেশের হয়ে দীর্ঘদিন বোলিং করেছেন। কিন্তু মাশরাফী যেভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পেস আক্রমণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই অবস্থানটি এখনও কেউ নিতে পারেননি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে রিয়াদ ও মুশফিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ: বাংলাদেশ ক্রিকেটের বহুল আলোচিত এই 'পঞ্চপান্ডব'-এর মধ্যে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের পরিচিতি 'সাইলেন্ট কিলার' বা নীরব ঘাতক। বাংলাদেশের অনেক বড় বড় জয়ের নায়ক বা সহ-নায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তার পজিশনে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট দলে তারা থিতু হতে পারেননি কিংবা টিম ম্যানেজমেন্ট তাদের ওপর ভরসা করতে পারেননি। তাই পিঠের ব্যথা সত্ত্বেও চলমান নিউজিল্যান্ড সিরিজে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২০১৫-১৬ সালেই সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত চেষ্টা করেও রিয়াদের চেয়ে বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারেননি। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথে জয়ে অর্ধশতক, ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি এবং দুটো সেঞ্চুরি, ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার মাটিতে রুদ্ধশ্বাস একটি ম্যাচে ছয় মেরে জয়, ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিবের সাথে জুটি গড়ে শত রানের ইনিংস খেলে নিউজিল্যান্ডকে হারানো - মনে রাখার মতো সব স্মৃতিতেই আছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এখন পর্যন্ত রিয়াদের জায়গায় খেলানোর মতো ক্রিকেটার পায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যানেজমেন্ট। 'গত পাঁচ বছরে পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট' বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গেম ডেভেলপমেন্টের সাবেক ন্যাশনাল ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিমের মতে, গত ৪-৫ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেট বরং বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে। তিনি ২০১৫-১৬ সালে যে দলটিকে দেখেছিলেন, সেটি ছিল আত্মবিশ্বাসে ভরা। বিশেষত, ওয়ানডে ক্রিকেটে শক্তিশালী দল হিসেবে তখন চিহ্নিত হয়েছিল বাংলাদেশ। মি. ফাহিম বলেন, এখন বাংলাদেশ যে শুধু টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ তা-ই নয়, ওয়ানডেতেও নিচের দিকের দল। কোচ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভুল, ক্রিকেটার নির্বাচনে ভুল, ক্রিকেটার পরিচর্যায় ভুল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ঘরোয়া ক্রিকেটে আকাশ পাতাল পার্থক্য, মেধাবী ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে এসে ক্রিকেট খেলাটা শেখা - এসবকেই বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার কারণ বলে মনে করেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। "ওরা যে স্কুলে পড়ে, সেটা ঠিক আন্তর্জাতিক মানের না," এভাবেই হতাশা ব্যক্ত করেন মি. ফাহিম।
২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৬। শেষবার এই দিনে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল এমন একটি একাদশ নিয়ে মাঠে নামে যে দলে ছিলেন না তামিম ইকবাল, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বা মুশফিকুর রহিমদের কেউ একজন।
ইউএস বাংলা ফ্লাইটের ধ্বংসাবশেষ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোমবারের এই দুর্ঘটনার তদন্তে এই কথোপকথন ছাড়াও নানা দিক খুঁটিয়ে দেখা হবে। ভারতের এক্সিউটিভ পাইলট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট এবং বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ ভি কে ভাল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, দুর্ঘটনার পর প্রধানত দুটো দিক দেখা হয় - যন্ত্র বিকল হয়েছিল, নাকি মানুষের ভুল হয়েছিল। "সাধারণত যন্ত্রের কারণেই অধিকাংশ বিমান দুর্ঘটনা হয়"। মি ভাল্লাহ বলেন, তদন্ত শুরু করা হয় বিমান টেক-অফ করারও অনেক আগের ঘটনাপ্রবাহ থেকে। "ফ্লাইটের আগে পাইলটকে কী ব্রিফ করা হয়েছিলো, আগের দিনগুলোতে ঐ বিমানে কোনো ত্রুটি কখনো ধরা পড়েছিলো কিনা। ধরা পড়লে সেটা শোধরানো হয়েছিলো কিনা। বিমান ওভারলোড ছিলো কিনা...ইত্যাদি বহু কিছু। সংশ্লিষ্ট বহু মানুষের সাথে কথা বলা হয়"। কিন্তু তদন্তের প্রধান দুটো সূত্র- ব্লাক বক্স এবং ফ্লাইই ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর)। ইউএস বাংলা বিধ্বস্ত ফ্লাইটের ধ্বংসাবশেষ থেকে এই দুটো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রই উদ্ধার করা হয়েছে। ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা হাসপাতালের বাইরে স্বজনদের ভিড় বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর ইকবাল হোসেন বিবিসিকে বলেন, দুর্ঘটনার আগের সমস্ত কথোপকথন বা যান্ত্রিক গোলমালের সমস্ত তথ্য জমা থাকে এই দুটিতে। "আগুনে পুড়লেও এগুলো নষ্ট হয়না, এবং প্রধানত এই দুটো যন্ত্র থেকে পাওয়া তথ্য থেকে বিমান দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয় করা হয়"। মি হোসেন জানান, ব্লাক বক্স থেকে তথ্য বের করার সক্ষমতা অধিকাংশ দেশের এখনও নেই। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাউ)সহায়তা নিয়ে থাকে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল সংস্থা এফএএ এসব ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে। কমোডর ইকবাল বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ এবং নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এ ধরনের সক্ষমতা নেই, সুতরাং তারা হয়তো ব্লাক বক্স আইকাও বা এফএএ'র কাছে নিয়ে যাবে। তদন্তের দায়িত্ব কার? কমোডর ইকবাল বলেন, দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয়ের প্রধান দায়িত্ব যে দেশে দুর্ঘটনা ঘটে এবং যে দেশের বিমান সেই দুই দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের। সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলার এবং ব্লাক বক্স বা এফডিআরের তথ্য জানার অধিকার প্রধানত তাদেরই থাকে। তিনি জানান, প্রতিটি দেশের বেসামরিক চলাচল কর্তৃপক্ষেরই বিশেষ একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি থাকে যাদের প্রধান দায়িত্ব দুর্ঘটনা হলে তার তদন্ত করা। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট বিমান পরিবহন সংস্থা, বিমান নির্মান প্রতিষ্ঠান বা বীমা কোম্পানীগুলো নিজেরাও দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের প্রধান দায়িত্ব স্ব স্ব দেশের বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থার।
কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা ফ্লাইটের দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে, কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত কিভাবে হয়? কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের সাথে দুর্ঘটনা কবলিত ফ্লাইটের পাইলটের কথোপকথনের একটি রেকর্ড ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ার পর দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে নানা জল্পনা চলছে।
মিয়ানমারে ফিরে যেতে অনাগ্রহের কথা জানিয়েছে রোহিঙ্গারা গত দুবছরই জাতিসংঘে শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যে প্রাধাণ্য পেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু। ২০১৭ সালের অগাস্টের শেষ দিকে বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক হত্যা, নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। বর্তমানে ১১ লক্ষের মত রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে রয়েছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখার সময় অন্যান্য বিষয়ের সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরেন। সেই পাঁচটি প্রস্তাব গুলো হল: ১.অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও 'জাতিগত নিধন' নিঃশর্তে বন্ধ করা। ২. অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা। ৩. জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় (safe zones) গড়ে তোলা। ৪. রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫. কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। ২০১৮ সালের জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক বৈশ্বিক প্রভাব শীর্ষক এক বৈঠকে তিনি আরো তিনটি সুপারিশ করেন। সুপারিশ গুলো হল: ১ . মিয়ানমারকে অবশ্যই বৈষম্যমূলক আইন ও নীতি বিলোপ, এবং রোহিঙ্গাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বন্ধ ও তাদের সে দেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে। ২. মিয়ানমারকে অবশ্যই সকল রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব প্রদানের সঠিক উপায়, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় মিয়ানমারের ভেতরে 'সেফ জোন' তৈরি করতে হবে। ৩. মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৈরাজ্য রোধে অপরাধীদের জবাবদিহিতা, বিচার, বিশেষ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের সুপারিশমালার আলোকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। এই বিষয়ে আরো পড়ুন: রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহে শুরু করা গেলো না প্রত্যাবাসন মিয়ানমারে সরকারি স্থাপনা তৈরির জন্য রোহিঙ্গা গ্রাম ধ্বংস রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার পরিবেশ কি আছে রাখাইনে? 'ইন্ধনদাতা এনজিওগুলোর তালিকা করছে বাংলাদেশ' এখন দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সুপারিশ গুলো বাস্তবায়নের পথে কতটা এগিয়েছে? কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় রয়েছে যারা মূলত রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের কাজ করছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে যারা প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব এবং রোহিঙ্গা ইস্যু পর্যবেক্ষণ করছেন তারা এসব প্রস্তাবের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু তথ্য জানাচ্ছেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত হূমায়ূন কবির বলছিলেন, প্রধানমন্ত্রী যে প্রস্তাব গুলো দিয়েছেন সেগুলো কিছু কিছু বিভিন্নভাবে হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গভাবে কোনটাই সফল হয় নি। মিয়ানমারের ভেতরে 'সেফ জোন' ও ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের সুপারিশমালা মি. কবির বলছিলেন "আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যে সকলেই যদি সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে তাহলে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব" আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলতে তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যে ৫টি সদস্য দেশ রয়েছে তাদের কথা বলেছেন। সহিংসতার মুখে পালিয়ে সীমান্ত পার হয়ে রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিনি বলছিলেন "তাদের মধ্যে একটা ঐক্যমত্য গড়ে তোলা প্রয়োজন। যেহেতু সেই ঐক্যমত্যের জায়গা তৈরি হয়নি তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারিনি"। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান। তিনি বলছিলেন "মিয়ানমারের ভিতরে সেফ জোন তৈরি করা বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সেই ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আমরা যে তথ্য পাচ্ছি তার কোন নিশ্চয়তা দেখছি না"। তবে বিচারের বিষয়ে যে সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন তার কিছুটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন মি. খান। তিনি মনে করেন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের মাধ্যমে দালিলিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যেটা কাজে লাগবে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেশন মেকানিজম ও নির্যাতনের বিচার ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের পর একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেশন মেকানিজম তৈরি করা হয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে। রোহিঙ্গাদের আগমনের দ্বিতীয় বছর পূর্তিতে শরণার্থী শিবিরে সমাবেশ। সম্প্রতি তারা একটা রির্পোট তৈরি করেছেন। সেখানে তারা কিছু সুপারিশমালা তৈরি করেছেন। মি. কবির বলছেন "যে জায়গাগুলোতে সফলতা অর্জন করা গেছে সেজায়গাগুলো মূলত দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক পর্যায়ে রয়েছে"। জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে চীন,বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে একটা ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। তারা তদারকি করবে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কতটা অগ্রসর হল কি হল না। মি. কবির 'এই ফোরামের থিউরিটিক্যাল বা তাত্ত্বিক মুভমেন্ট লক্ষ্য করছেন' বলে উল্লেখ করেন। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেশন মেকানিজম মিয়ানমারে কী কী অপরাধ হয়েছে বা হয়নি সেগুলো মূল্যায়ন করে তারা একটা সিদ্ধান্তের জায়গায় পৌঁছেছে যে মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, মানবতা-বিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এবং একটা জনগোষ্ঠীকে উৎখাতের জন্য বলপ্রয়োগ করা হয়েছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেশন মেকানিজম বলেছে এই ডকুমেন্ট বা তথ্যগুলো জাতিসংঘে সংরক্ষিত থাকবে। যদি কখনো ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে (আইসিসি) মিয়ানমারের যারা এই অপরাধ করেছে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, তাহলে তাদের অপরাধকে প্রমাণ করার জন্য সাক্ষী হিসেবে এই তথ্যগুলো ব্যবহার করা যাবে। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে প্রধান করে গঠন করা হয় এই কমিশন যদিও মিয়ানমার বলছে যে তারা কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করছে কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, পর্যবেক্ষক এবং রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের উপর সেই ভরসা পাচ্ছে না। "কারণ তারা যে কথা বলছে এবং কাজ করছে তার মধ্যে অনেক ফারাক রয়েছে" বলে মন্তব্য করেন মি. কবির। মি. খান বলছিলেন, কফি আনান কমিশন একটা প্রতিবেদন দিয়েছে এটাই একটা অগ্রগতি। এছাড়া দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। "তবে এই রিপোর্ট ধরে ধরে কোন কিছুরই অগ্রগতি হচ্ছে না। কেবল মাত্র বিচারের ক্ষেত্রে তথ্য অনুসন্ধান, দালিলিক প্রমাণ , সাক্ষ্য গ্রহণ এই কাজটি এগুচ্ছে এর বাইরে এখন পর্যন্ত কোন অগ্রগতি নেই" বলছিলেন মি.খান। প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ দুইবার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে। ওপারে বাংলাদেশ সীমান্ত, এপারে মিয়ানমার। এই পথ ধরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি হয় নি বরং কয়েকটি দফা তারা তুলে ধরে যেগুলো পূরণ না হলে তারা ফেরত যাবে না বলে জানিয়েছে অগাস্টে টেকনাফের উখিয়াতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে করা এক সমাবেশে। মি. খান বলছিলেন "রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যে পরিবেশ তৈরি করা দরকার , যে আইনি স্বীকৃতি থাকা দরকার সে বিষয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ মিয়ানমারের তরফ থেকে দেখা যায় নি"। "রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমারকে সব করতে হবে এখানে বাংলাদেশের কিছু করার নেই। আন্তর্জাতিক মহলকে সাথে নিয়ে মিয়ানমারের উপর চাপ তৈরি করা, যাতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপে মিয়ানমার এই জায়গাগুলোতে পদক্ষেপ গ্রহণ করে" বলছিলেন মি. খান। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে দুই দফা যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে করে তিনি আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছেন। জনমত গঠনে এটা ভূমিকা রেখেছে। তবে যে মাত্রায় মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করা দরকার সেই মাত্রায় আন্তর্জাতিক মহল অংশ নিতে পারেনি, বলছেন পর্যবেক্ষকরা। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনার প্রস্তাব কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে দুর্নীতিবিরোধী চলমান অভিযান কি সফল হবে? সৎ বাবার জোড়া খুনে বদলে গেছে যে সাংবাদিকের জীবন ক্ষমতাসীনদের সাথে সমঝোতা ছাড়া কি ব্যবসা করা সম্ভব?
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭শে সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে।
সৌদি আরবে মেয়েদের গাড়ি চালানো নিষেধ সৌদি আরবে কি আদৌ পরিবর্তন ঘটবে কোনদিন? এ প্রশ্ন করলে আগে উত্তর মিলতো: পরিবর্তন হবে, নিজের মতো করেই হবে এবং তাদের সময় অনুযায়ী হবে। এর মানেটা পরিস্কার, পরিবর্তন আসতে অনেক সময় লাগবে। হয়তো কোনদিনই আসবে না। সৌদি আরবে তেল বিক্রি থেকে আসে সরকারের ৯০ শতাংশ আয় কিন্তু আজকের সৌদি আরবে একটু ভিন্ন কথা শোনা যাচ্ছে। সৌদিরা এখন পরিবর্তনের কথা বলছে বছরের হিসেবে নয়, মাসে। সফল এক সৌদি নারী ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল মেয়েদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে। "আমি আমার এক পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে বাজি ধরেছিলাম যে এ বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। কিন্তু আমার পুরুষ সহকর্মীর ধারণা এটা আসলে ঘটবে এ বছরের শেষ ছয় মাসে।" "কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে এটা আসলে ঘটবে সামনের বছর। আর হয়তো শুধু চল্লিশের বেশি বয়সী নারীদেরই গাড়ি চালানোার অনুমতি দেয়া হবে", বললেন এই নারী ব্যবসায়ী। রিয়াদের রাজকীয় পরিমন্ডলেও অবশ্য এখন এমন সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। অনেকে বলাবলি করছে, তরুণীদেরও হয়তো গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া হবে। সৌদি আরবে রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতাদের নিয়ন্ত্রণ এতটাই কঠোর যে সেখান পরিবর্তনের গতি খুবই ধীর। অনেকে সৌদি তরুণ-তরুণী বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছে কিন্তু বিগত বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে তেলের দাম পড়ে গেছে, তা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদনকারী এই দেশটির শাসকদের বাধ্য করছে পরিবর্তনের গতি বাড়াতে। তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় সৌদি আরবের আয় কমে গেছে অর্ধেক। ফলে তাদের এখন অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে নতুন অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে। সৌদি আরবের আয়ের ৯০ শতাংশ আসে তেল বিক্রি থেকে। সৌদি সরকার 'ভিশন ২০৩০' নামে এক মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে গত বছর। এর পেছনে আছেন ৩১ বছর বয়সী সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। মোটা বেতনে গাদা গাদা বিদেশি কনসালট্যান্ট নিয়োগ করে তৈরি করা হয়েছে এই মহাপরিকল্পনা। সৌদি যুবরাজ এবং তাঁকে ঘিরে থাকা লোকজন ভালো করেই জানেন যে একদিন তাদের তেলের কূপগুলো শুকিয়ে যাবে। আর হয়তো তারও অনেক আগে ইলেকট্রিক কারের ব্যাপক প্রচলন ঘটবে। ফলে তেলের চাহিদা কমবে। "ভিশন ২০৩০ এবং এর লক্ষ্য অর্জন করা এজন্যেই এতটা গুরুত্বপূণ", বলছিলেন সৌদি তেলমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ। "এই মহাপরিকল্পনার কতটা আমরা ২০৩০ সাল নাগাদ অর্জন করতে পারি, সেটা আমরা দেখতে চাই।" অর্থনৈতিক চাপের মুখে সৌদি আরবে সরকারী কাজে মোটা অংকের বেতন এবং দরাজ হাতে দেয়া সুযোগ সুবিধা সংকুচিত করে আনা হচ্ছে। অর্থনীতিতে বেসরকারী খাতের গুরুত্ব বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে সেখান থেকেই বেশিরভাগ প্রবৃদ্ধি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এখনো সেখানে কোন গতি দেখা যাচ্ছে না। রেস্টুরেন্টে নারী-পুরুষের এক সঙ্গে বসার ওপর আছে অনেক বিধিনিষেধ একজন সৌদি পরিসংখ্যানবিদ বললেন, তার সংশয় আছে 'ভিশন ২০৩০' আসলে কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে। সৌদি আরবের ৩১ বছরের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বর্তমান বাদশাহ সালমানের সবচেয়ে প্রিয় সন্তান বলে পরিচিত। যুবরাজ জানেন, পরিবর্তনের জন্য সময় ঘনিয়ে আসছে দ্রুত। সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ মানুষের বয়স তাঁর সমান বা তার চেয়ে কম। সরকারী বৃত্তির আওতায় হাজার হাজার সৌদি ছেলে-মেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এসেছে। এরা এখন কাজ খুঁজছে। কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনের নিগড়ে বাঁধা স্বদেশে বিনোদনের জায়গা খুঁজে বেড়াচ্ছে। অথচ সেখানে সিনেমা পর্যন্ত নিষিদ্ধ। কয়েকটি কঠিন নিয়মের কথা ধরা যাক। সৌদি আরবে কোন খাবার দোকানে একজন পুরুষ কেবল তার আত্মীয় নারীর সঙ্গে এক টেবিলে বসতে পারবেন। কিন্তু এক বছর আগের সফরের তুলনায় এবার যেন কিছু পরিবর্তন দেখতে পেলাম। সৌদি আরবের রাস্তায় দেখা যেত যে কুখ্যাত ধর্মীয় পুলিশ, বা মুতাওয়া, যাদের কাজ ছিল পাপাচার বন্ধ করা আর পূণ্য ফেরি করে বেড়ানো, তাদের এবার চোখে পড়লো না। নতুন বিনোদনের সুযোগ পেয়ে খুশি অনেক সৌদি নাগরিক রিয়াদের ধনী লোকদের অনেকে বেশ উৎসাহের সঙ্গে জানাচ্ছিলেন সেখানে নতুন খোলা রেস্টুরেন্টগুলোর কথা, যেখানে নারী-পুরুষের একসাথে বসা নিয়ে আগের মতো কড়াকড়ি নেই। যেখানে উচ্চ শব্দে বাজানো হয় গান। "আমাদের এখানে সিনেমা খোলা দরকার। আর দরকার মেয়েদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া", বলছিলেন ওয়ালিদ আল সায়েদান। সৌদি সরকার এখন গঠন করেছে 'জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটি' বলে একটি সংস্থা। এর কাজ যদিও সাংস্কৃতিক কাজ-কর্মের ওপর খবরদারি করা, কিছু কিছু বিনোদনের অনুমতি তারা দিচ্ছে। এর প্রধান আহমেদ আল খতিব বললেন, "আমার কাজ মানুষকে খুশি করা। আর্ট ফেস্টিভাল থেকে লাইট শো এমনকি মিউজিক কনসার্টেরও অনুমতি দিচ্ছেন তারা। এ পর্যন্ত এরকম ৮০টি ইভেন্ট তাদের ক্যালেন্ডারে রয়েছে। জানুয়ারিতে এক মিউজিক কনসার্টে ভিড় করে শত শত মানুষ আমরা উদারপন্থী এবং রক্ষণশীল, সব ধরণের মানুষের জন্যই বিনোদনের সুযোগ করে দেব, বললেন তিনি। কিন্তু সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয়: সেই রাজনৈতিক সংস্কার, মানবাধিকার, কিংবা মহিলাদের স্বাধীনতা-- সেসব নিয়ে কিন্তু একেবারেই কোন কথা শোনা যাচ্ছে না। সৌদি আরবের মানুষ সবসময় সস্তায় পেট্রোল কিনেছে। কোনদিন ট্যাক্স দেয়নি। বিনামূলে পানি আর বিদ্যুৎ পেয়েছে। মেয়েদের উৎসাহিত করা হচ্ছে সরকারের নতুন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করতে কিন্তু সরকার এখন এসব ভর্তুকি তুলে নিচ্ছে। ট্যাক্স বসাচ্ছে। এসবই সৌদি অর্থনীতি আর সমাজকে বদলে দেয়ার নানা চেষ্টা। কিন্তু যে গতিতে তারা আগাচ্ছে, কতদূর যেতে পারবে? "আমাদের অবস্থা আসলে চাকা লাগানো কচ্ছপের মতো", বললেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক হাসান ইয়াসিন। " আমাদেরকে দ্রুত আগাতে হচ্ছে একই সঙ্গে স্থানীয় চাহিদা মেটানো এবং ২১ শতকের লক্ষ্য অর্জনের কথা মাথায় রেখে।"
কঠোর ধর্মীয় অনুশাসনে চলা সৌদি সমাজে কী শেষ পর্যন্ত পরিবর্তনের হাওয়া লাগছে? সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে গিয়ে বিবিসির সাংবাদিক লিস ডুসেট অর্থনীতি এবং সামাজিক ক্ষেত্রে নানা ধরণের পরিবর্তনের আঁচ পেয়েছেন। কিন্তু রক্ষণশীলতার আগল ভেঙ্গে কতদূর যেতে পারবে সৌদি আরব? লিস ডুসেটের পর্যবেক্ষণ:
রাশিয়ার একটি ডেইরি ফার্মে দুধ প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে কিভাবে মানুষের শরীরে অন্য প্রাণীর দুধ হজম করার ক্ষমতা তৈরি হলো? ইদানীং বাজারে প্রাণীর দুধের নানা 'প্রতিযোগী' এসে গেছে। যেমন সয়া দুধ, আমন্ড বাদামের দুধ - এগুলো বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠছে। যারা 'ভেগান' - তাদের জন্য, অথবা যাদের দুধে এ্যালার্জি আছে - তাদের জন্য এই বিকল্পগুলো বেশ সুবিধাজনক। কিন্তু এগুলো এখনো জনপ্রিয়তার দিক থেকে প্রাণীজ দুধের কাছাকাছি আসতে পারে নি। বিবিসির মাইকেল মার্শাল এক রিপোর্টে লিখছেন, প্রাণীজ দুধের সাথে মানুষের সম্পর্ক হাজার হাজার বছরের পুরোনো। এর ইতিহাসও অতি বিচিত্র উত্থান-পতনে ভরা। মানুষ হয়ে অন্য প্রাণীর দুধ খাওয়াটা কি একটা 'আজব' ব্যাপার? দুধ খাওয়াটা মানুষের কাছে এতই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে যে কেউ যদি বলে - এটা একটা আজব কাজ - তাহলে এ কথা যে বলবে তাকেই বরং আপনার একটা উদ্ভট লোক বলে বনে হবে। কারণ আমরা কখনো এভাবে চিন্তা করি না। একটি গরু বা অন্য কোন প্রাণীর দেহে দুধ তৈরি হয় - তার বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু মানুষ কি করছে? তারা গরুটার বাঁট টিপে টিপে সেই দুধ বের করে নিয়ে নিজেরা খাচ্ছে। এটা কি একটা আজব ব্যাপার নয়? বাংলাদেশের গাজীপুরের কালীগঞ্জে একজন কৃষক গরুর দুধ দোয়াচ্ছেন কিন্তু এমন সংস্কৃতিও আছে, যেখানে প্রাণীর দুধ খাবার কথা অনেকেরই প্রায় অজানা। এই সেদিন, ২০০০ সালে চীনে একটা প্রচারাভিযান শুরু হয়েছিল যাতে লোকে স্বাস্থ্যগত কারণেই আরো বেশি করে দুধ এবং দুধজাত খাবার খায়। এই প্রচারাভিযানটিকে চীনের বয়স্ক লোকদের দিক থেকে গভীর সন্দেহের মোকাবিলা করতে হয়েছিল। দুধ থেকে যে পনির তৈরি হয় - তা এখনও চীনের অনেক মানুষকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে। বলা হয়, মানব প্রজাতির ইতিহাস মোটামুটি তিন লক্ষ বছরের। সে তুলনায় দুধ খাবার ইতিহাসকে প্রায় 'নতুন' বলা যায়। মোটামুটি ১০ হাজার বছর আগেও মানুষ দুধ প্রায় খেতোই না। খেলেও তা ছিল খুবই বিরল। প্রথম যে মানুষেরা দুধ খেতে শুরু করে তারা ছিল পশ্চিম ইউরোপের কৃষক ও পশুচারণকারী জনগোষ্ঠীর লোক । এরাই ছিল প্রথম মানুষ যারা গরু বা অন্য পশুদের পোষ মানিয়ে গৃহপালিত প্রাণীতে পরিণত করা এবং তাদের দুধ পান শুরু করেছিল। বর্তমানে উত্তর ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং অন্য আরো অনেক জায়গায় দুধ পান করাটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। মানুষের জন্য অন্য প্রাণীর দুধ খাওয়াটা যে 'অস্বাভাবিক' তার একটা বৈজ্ঞানিক যুক্তিও আছে। 'বৈজ্ঞানিক যুক্তি' দুধের মধ্যে আছে এক বিশেষ ধরণের শর্করা - যাকে বলে ল্যাকটোজ। ফল বা অন্যান্য মিষ্টি খাবারে যে শর্করা থাকে তার চেয়ে এটা অনেক আলাদা। আমরা যখন শিশু ছিলাম, আমাদের শরীর এক বিশেষ ধরণের এনজাইম তৈরি করতো যাকে বলে ল্যাকটেজ - যার কাজ ছিল আমাদের মায়ের দুধ হজম করতে সহায়তা করা। কিন্তু শিশু যখন মায়ের দুধ খাওয়া ছেড়ে দেয় - তখন অনেকের দেহেই সেই ল্যাকটেজ তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। একজন মিশরীয় গরুর দুধ দোয়াচ্ছে, মেথেথি সমাধিসোৗধে আনুমানিক ২৫০০ খ্রীষ্টপূর্বব্দের দেয়ালচিত্র। এই ল্যাকটেজ ছাড়া দুধ ঠিকমত হজম হয় না। তাই একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ যদি বেশি দুধ খায় তাহলে তার পেটে গ্যাস হওয়া, পেটে ব্যথা, খিঁচুনি অথবা ডায়রিয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। মানুষ ছাড়া অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন গরু, কুকুর বা বিড়ালের মধ্যেও দেখা যায় যে তারা পূর্ণবয়স্ক হলে তাদের দেহে ল্যাকটেজ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে অনেকেই দুধ খেয়ে হজম করতে পারেন, কারণ তাদের দেহে ল্যাকটেজ তৈরি বন্ধ হয় না। মানুষের ক্ষেত্রে এটা কিভাবে ঘটলো? দুধ হজম করার 'ল্যাকটেজ' এনজাইম কারো দেহে সারাজীবন থাকে, কারো থাকে না প্রথম যে প্রাপ্তবয়স্ক ইউরোপিয়ানরা দুধ খেয়েছিল - তাদের হয়তো প্রচুর গ্যাস হতো। কিন্তু কিছুকালের মধ্যেই তাদের মধ্যে একটা বিবর্তন ঘটেছিল। তারা মায়ের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিলেও তাদের দেহে ল্যাকটেজ উৎপাদন অব্যাহত রয়ে গেল, দেখা গেল তারা দুধ খেলেও কোন বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে ডিএনএ'র একটি অংশকে চিহ্নিত করা হয়েছে - যা ল্যাকটেজ জিনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। হংকং-এ একটি সয়া মিল্কের দোকান বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: সুপারফুড: আসছে তেলাপোকার দুধ শিশুকে কত বছর মায়ের দুধ পান করানো উচিত? দুধ খাওয়ায় কি কোন উপকার হয়? এই প্রবণতাকে বলে ল্যাকটেজ পার্সিস্টেন্স এবং এর বিবর্তন নিয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন প্যারিসের 'মিউজিয়াম অব হিউম্যানকাইন্ড'-এর অধ্যাপক লোরে সেগুরেল। তিনি বলছেন, "ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে প্রথম ল্যাকটেজ পার্সিস্টেন্স দেখা যায় এখন থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে। আর মধ্য ইউরোপে এটা প্রথম দেখা যায় ৩ হাজার বছর আগে।" বর্তমানে অনেক জনগোষ্ঠীর মধ্যেই এ প্রবণতা অর্থাৎ 'দুধ হজম করার ক্ষমতা' খুবই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। উত্তর ইউরোপে এখন ৯০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরই দেহে ল্যাকটেজ এনজাইম তৈরি হচ্ছে। আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। কিন্তু এমন অনেক জনগোষ্ঠী আছে যাদের দেহে ল্যাকটেজের অব্যাহত উপস্থিতি অনেক বিরল। আফ্রিকানদের অনেকের মধ্যেই এটা নেই। এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকাতেও এটা সাধারণত দেখা যায় না। কেন এমন হয়, তা এখনো এক ধাঁধাঁ বৈজ্ঞানিকরা বলছেন: কোন কোন মানবগোষ্ঠীর মধ্যে কী কারণে দুধ খাবার অভ্যাস গড়ে উঠেছে এবং তাদের প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে ল্যাকটেজ এনজাইম তৈরি হচ্ছে - এটার কোন সূত্র বের করা খুবই কঠিন। মি. সেগুরেল বলছেন, "দুধ খাওয়াটা 'উপকারী' হয়ে উঠেছে কেন, বা অন্য অনেক রকম খাদ্যের উৎস থাকলেও একেবারে অন্য রকম একটি খাদ্য এই দুধই কেন এতটা 'গুরুত্বপূর্ণ' হয়ে উঠেছে - এটা বলা কঠিন।" কেউ হয়তো বলতে পারেন, দুধ পান করার ফলে মানুষ নতুন একটি পুষ্টিদায়ক খাবারের সন্ধান পেয়েছে, তাদের অনাহারে থাকার ঝুঁকি কমেছে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এ যুক্তি খুব বেশি খাটে না। যেসব লোক দুধ খেয়ে হজম করতে পারে না, তারাও অল্প পরিমাণ দুধজাতীয় খাবার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই খেতে পারে। তা ছাড়া দুধ থেকে যে মাখন, দই, ক্রিম এবং পনির তৈরি হয় - এর সবগুলোতেই ল্যাকটোজের পরিমাণ অনেক কমে যায়। চেডার এবং পারমিজিয়ানো নামে যে বিশেষ ধরণের পনির আছে তাতে মাত্র ১০ শতাংশ বা তারও কম ল্যাকটোজ থাকে। "ঘন ক্রিম এবং মাখনে ল্যাকটোজের পরিমাণ সবচেয়ে কম" - বলছেন সেগুরেল। পারমিজিয়ানো নামে পনির উৎপাদন হচ্ছে। এতে ল্যাকটোজের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায়। জানা যায়, চিজ বা পনির তৈরির কৌশল মানুষ বেশ দ্রুতই উদ্ভাবন করেছিল। গত বছর সেপ্টেম্বরে বর্তমান ক্রোয়েশিয়ায় পড়ে এমন একটি এলাকায় পুরাতত্ববিদরা কিছু মৃৎপাত্রের অংশ খুঁজে পান - যাতে ফ্যাটি এসিডের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এতে মনে হয় ওই পাত্র দই বা ছানা জাতীয় কিছু তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতো - যা পনির উৎপাদনের একটি ধাপ। এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে বলতে হবে দক্ষিণ ইউরোপের লোকেরা ৭,২০০ বছর আগেই পনির তৈরি করতো। ইউরোপের অন্যত্র আরো হাজারখানেক বছর পরের পনির উৎপাদনের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। মনে রাখতে হবে তখনও ইউরোপের প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের দেহে ল্যাকটেজ পার্সিস্টেন্স অর্থাৎ দুধ হজম করার এনজাইমের স্থায়ী উপস্থিতি তৈরি হয় নি। তবে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জেনেটিক্সের অধ্যাপক ডালাস সোয়ালো বলছেন, কোন ধরণের লোকের দেহে পরিণত বয়সে উচ্চ মাত্রায় ল্যাকটেজ থাকে এবং কাদের থাকে না - তার একটা স্পষ্ট প্যাটার্ন আছে। তিনি বলছেন, যারা পশুচারণ করতো, গরু-ছাগল-ভেড়া পালতো - তাদের দেহে উচ্চ মাত্রায় ল্যাকটেজ পাওয়া যায়। কিন্তু যারা শিকারী এবং কোন প্রাণী পুষতো না - তাদের মধ্যে জিনের ওই পরিবর্তনটি ঘটেনি। যেসব জনগোষ্ঠী শুধু চাষাবাদ করতো কিন্তু কোন পশুপালন করতো না - তাদের দেহেও 'ল্যাকটেজ পার্সিস্টেন্স' নেই। তার মানে হচ্ছে - যাদের জীবনধারার কারণে প্রাণীর দুধ সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল না, তাদের দেহকে দুধ পানের উপযোগী করে তোলার জন্য বিবর্তিত হওয়ার কোন চাপ ছিল না। তাহলে প্রশ্ন হলো, কিছু কিছু পশুচারণকারী জনগোষ্ঠীর দেহে এই বৈশিষ্ট্য তৈরি হলেও অন্যদের ক্ষেত্রে তা হলো না কেন? সুদানের একটি গো-পালন শিবিরে দুধ দোয়াচ্ছে এক বালক সেগুরেল বলছেন, মঙ্গোলিয়ার মতো পূর্ব এশিয়ায় যেসব পশুচারণকারী জনগোষ্ঠী আছে তাদের দেহে ল্যাকটেজের উপস্থিতি অত্যন্ত কম - যদিও তারা খাদ্য হিসেবে তাদের পালিত পশুর দুধের ওপর বিপুলভাবে নির্ভরশীল। অথচ নিকটবর্তী পশ্চিম এশিয়া বা ইউরোপের জনগোষ্ঠীগুলোর জিনে এ পরিবর্তন হয়েছে, কাজেই পূর্ব এশিয়ার গ্রুপগুলোতেও এ পরিবর্তন ছড়াবে এটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু তা হয় নি, এবং এটা একটা ধাঁধাঁ হিসেবে রয়ে গেছে, বলছেন সেগুরেল। দুধ খাওয়ার কি কোন উপকারিতা আছে? সেগুরেল বলছেন, পুষ্টিগুণ ছাড়াও দুধ পানের হযতো আরো কিছু উপকারিতা আছে। তিনি বলছেন, গবাদিপশুর যেসব রোগ হয় - তাদের পালনকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যেও সেসব রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। এটা হতেই পারে যে গরুর দুধ পান করলে মানবদেহে এমন কিছু এন্টিবডি তৈরি হয়, যাতে এ্যানথ্রাক্স ক্রিপটোস্পোরিডিওসিসের মতো রোগ সংক্রমণ ঠেকাতে পারে। বাচ্চাদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর একটি উপকারিতাও তাই - শিশুর দেহকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা। তবে কোন কোন জনগোষ্ঠীর দেহে যে ল্যাকটেজের উপস্থিতি থাকে না - এটা হয়তো নিতান্তই দৈবক্রমে ঘটেছে - এমনটাও হতে পারে। কলম্বিয়ার বোগোটায় শিশুকে স্তন্যদানরত একজন মা। অধ্যাপক সোয়ালো বলছেন, "আপনি যদি পশুচারণকারী হন তাহলে আপনার দেহে দুধ হজম করার স্থায়ী ক্ষমতা তৈরি হবে - এটাই হচ্ছে সবচেয়ে আমাদের ছবিটার সবচেয়ে যৌক্তিক অংশ।" "কিন্তু দুধ হজম করতে হলে আপনার জিনের সেই বিশেষ মিউটেশনটা হতেই হবে - প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রশ্নটা আসবে তার পরে।" অধ্যাপক সোয়ালো বলছেন, মঙ্গোলিয়ান গো-চারণকারী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দেখা যায় যে তারা সাধারণত গাঁজানো দুধ খায় - যাতে ল্যাকটোজের পরিমাণ কমে যায়। অধ্যাপক সোয়ালোর ছাত্রী ক্যাথরিন ওয়াকার বলছেন, "মানুষ দুধকে গাঁজিয়ে ল্যাকটোজ কমিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে এত উন্নতি করেছে, কিন্তু তার পরও তার দেহে দুধ হজমের এনজাইম রয়ে যাচ্ছে কেন সেটাও একটা প্রশ্ন - যার উত্তর পাওয়া কঠিন।" হয়তো মানবদেহে ল্যাকটেজ পার্সিস্টেন্স তৈরি হবার একটি নয় বরং অনেক কারণ রয়েছে। অধ্যাপক সোয়ালো বলছেন, "দুধে প্রচুর চর্বি, প্রোটিন, শর্করা বা সুগার, এবং ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডির মতো অন্যান্য পুষ্টিগুণ রয়েছে - এবং এটাই হয়তো মানবদেহে দুধ হজম করার এনজাইমের স্থায়ী উপস্থিতির আসল কারণ। তা ছাড়া এটা পরিষ্কার পানিরও একটা উৎস। এটাও হয়তো কোন কোন জনগোষ্ঠীর বিবর্তনের কারণ হতে পারে।" মানবদেহে এই পরিবর্তনটা এখনো ঘটছে কিনা তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। উত্তর পশ্চিম ফ্রান্সে একটি খামারের দুধেল গরু অধ্যাপক সোয়ালো ২০১৮ সালে একটা জরিপ চালিয়েছিলেন চিলির কোকুইম্বো এলাকায় পশুচারণকারী একটি জনগোষ্ঠীর ওপর। প্রায় ৫০০ বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকায় নতুন আসা ইউরোপিয়ানদের সাথে এই জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের যৌনমিলন ও সন্তান উৎপাদন হয়। এখন এই গোষ্ঠীটির মধ্যে দুধ হজম করার ক্ষমতা ছড়িয়ে পড়ছে। ঠিক যেমনটা ৫ হাজার বছর আগে উত্তর ইউরোপে ঘটেছিল। তবে কোকুইম্বো জনগোষ্ঠী দুধের ওপর নির্ভরশীল, তাই তাদের অবস্থাটা পৃথিবীর অন্য জায়গার মতো নয়। দুধ খাবার অভ্যাস কি কমছে? গত কয়েক বছর যাবৎ যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হতে পারে, লোকজন বোধহয় দুধ খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে ব্রিটেনের দৈনিক গার্ডিয়ান একটি রিপোর্ট করে। এতে বলা হয়, ব্রিটিশ জনগণের মধ্যে গরুর দুধের প্রতি আকর্ষণ কমে যাচ্ছে, বরং ওট এবং বাদামের দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ক্রমাগত বাড়ছে। এতে মনে হয় ঐতিহ্যগত দুধের জন্য একটা লড়াই আসন্ন। কিন্তু পরিসংখ্যান দেখলে দেখবেন ব্যাপারটা উল্টো। আইএফসিএন নামের ডেইরি রিসার্চ নেটওয়ার্ক তাদে ২০১৮ সালের রিপোর্টে বলছে, ১৯৯৮ সাল থেকে বৈশ্বিক দুধের উৎপাদন প্রতি বছরই বেড়েছে। ২০১৭ সালে বিশ্বে দুধ উৎপাদন হয়েছে ৮৬ কোটি ৪০ লাখ টন। আইএফসিএন বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ দুধ উৎপাদন আরো ৩৫ শতাংশ বাড়বে। মানুষ কী খাচ্ছে তার ওপর ২০১০ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে দুধ খাওয়ার পরিমাণ গত দু দশেকে কমেছে, এর জায়গায় কোমল পানীয় পান বেড়েছে। অন্যদিকে এশিয়ায় দুধ খাওয়া বেড়েছে। ২০১৫ সালে ১৮৭টি দেশে চালানো আরেক জরিপে দেখা যায়, বয়স্কদের মধ্যে দুধ খাওয়া বাড়ছে, এর অর্থ হতে পারে তরুণদের মধ্যে দুধ অতোটা জনপ্রিয় নয়। এশিয়ায় দুধ পানের প্রবণতা বাড়ছে, আমেরিকায় কমছে কাজেই বিশ্বে দুধের প্রতি আকর্ষণ যেভাবে বাড়ছে - তাতে 'বিকল্প দুধ' যে তার জায়গা দখল করে নেবে, বা বাজারে আঘাত হানবে - এমন মনে হয় না। তা ছাড়া সয়া, ওট বা আমন্ডের মতো বিকল্প দুধে দুধের মতো পুষ্টিগুণও নেই। এটা শুথু ভেগান বা দুধে এ্যালার্জি আছে এমন লোকদের জন্যই সুবিধাজনক। এশিয়াতে দুধের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে সেটা বেশ বিস্ময়কর। কারণ এশিয়াতে বেশির ভাগ লোকের ক্ষেত্রেই বড় হবার পর তাদের দেহে দুধ হজম করার ল্যাকটেজ এনজাইম উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তুলনামূলকভাবে দুধের উপকারিতার চেয়ে অধিকাংশ এশিয়ানের ক্ষেত্রে এটা হজম করতে গিয়ে যে সমস্যা হয় - তার পরিমাণ বেশি। উন্নয়নশীল কিছু দেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মানুষের মধ্যে লামার মতো অন্য প্রাণীর দুধ প্রচলিত করার চেষ্টা করেছে, কারণ এটা হয়তো গরুর দুধের চেয়ে সহজপ্রাপ্য বা সস্তা হবে। এ বছরই জানুয়ারি মাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ জরিপে এমন কিছু বৈশ্বিক স্বাস্থ্যকর খাবারের কথা বলা হয়েছে - যাতে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে, আবার পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়াও কম হবে। এতে রেড মিট অর্থাৎ গরু-ছাগল-ভেড়ার মাংস ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ বা তার সমমানের কিছু খাবার কথা ঠিকই বলা হয়েছে। সুতরাং মানুষের খাদ্য হিসেবে দুধ এখনো ভালোভাবেই টিকে আছে, এবং এখনো তার প্রসার হচ্ছে। যদিও আমাদের দেহে এই দুধ হজম করার ক্ষমতার বিবর্তন থেমে গেছে।
বিবর্তনের প্রথম দিকে মানুষ অন্য প্রাণীর দুধ হজম করতে পারতো না। কিন্তু এখন অনেক জনগোষ্ঠীই গরু, উট, বা ছাগলের দুধ খায়।
বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহামেদের ছবি আঁকছেন একজন শিল্পি। ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে বাবা ও ছেলের মতবিরোধ স্পষ্ট হচ্ছে গত দুদিনে সৌদি রাজপরিবারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্যের মুখে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে যা শোনা গেছে তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ইসরায়েলি নেতারা। সৌদি আরব পিছিয়ে গেলে বাকি আরব দেশগুলোর সাথে স্বাভাবিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি দাঁড়াবে তা নিয়েও তাদের মনে উদ্বেগ ঢুকছে সন্দেহ নেই। গত মাসে সৌদি আরবের নিওম শহরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সৌদি যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমানের মধ্যে গোপন এক বৈঠকের পর পর্যবেক্ষকরা বলতে শুরু করেন যে সৌদি আরব-ইসরায়েল কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যদিও সৌদি আরব ঐ বৈঠক হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে, কিন্তু ইসরায়েল সরকারের মৌনতা এবং পশ্চিমা গোয়েন্দাদের ইঙ্গিতের ভিত্তিতে প্রায় সবাই নিশ্চিত যে বৈঠকটি হয়েছিল। কিন্তু বাহরাইনের রাজধানী মানামায় মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা নিয়ে এক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে শনিবার সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সল বিন ফারহান বার্তা সংস্থা এফপির সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক নিয়ে যেসব কথা বলেন, তাতে সৌদি মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রিন্স ফয়সল বলেন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না হলে ইসরায়েলের সাথে সৌদি আরবের স্বাভাবিক সম্পর্ক হবেনা। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সৌদি অবস্থান শক্ত। “সৌদি আরব এ নিয়ে খুব স্পষ্ট যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইলে ফিলিস্তিন বিরোধ সমাধান করতে হবে, ২০০২ সালে আরব শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাধীন টেকসই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হতে হবে।“ বাহরাইনে নিরাপত্তা সম্মেলনে রোববার ভিডিও কলে যোগ দিয়ে ভাষণ দিচ্ছেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাবি আশকেনাজি কারণ, সৌদি মন্ত্রী বলেন, “ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের বিরোধ না মিটলে এই অঞ্চলে সত্যিকারের শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসবে না।“ ২০০২ সালে সৌদি উদ্যোগে ঐ শান্তি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে - ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূমি ইসরায়েলকে ছেড়ে দিতে হবে, এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। ইসরায়েল সবসময় এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের যুক্তি এতে তাদের নিরাপত্তা দারুণভাবে বিঘ্নিত হবে। সৌদি এই অবস্থানের ফলে তো ইজরায়েলের সাথে অদূর ভবিষ্যতে স্বাভাবিক সম্পর্কের সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে যাবে? এই প্রশ্নে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ফিলিস্তিন বিরোধের সমাধানের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।" বাহরাইনে ঐ সম্মেলনে আরো আক্রমণাত্মক কথা বলেছেন সৌদি সাবেক গোয়েন্দা প্রধান এবং রাজপরিবারে প্রভাবশালী সদস্য প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সল যিনি সৌদি প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন। সরাসরি ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন “ইসরায়েল সবসময় নিজেদেরকে দেখায় যে তারা ছোট একটি দেশ আর চারদিকে শত্রু সব দেশ সবসময় তাদের ধ্বংস চায়।" “কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ইসরায়েল নিজে একটি পারমানবিক শক্তিধর দেশ।" প্রিন্স তুর্কি, যিনি সৌদি বাদশাহ সালমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, বলেন, এখনও ইসরায়েল জবরদস্তি করে ফিলিস্তিনিদের ঘরছাড়া করছে, তাদের গ্রাম ধ্বংস করছে। “আব্রাহাম চুক্তি (ইসরায়েলের সাথে ইউএই এবং বাহরাইনের চুক্তি) ঐশ্বরিক কোন দলিল নয়। শরীরের ঘা থাকলে তা ব্যথার ওষুধ দিয়ে সারানো যায়না।" বাবা ও ছেলের বিভেদ প্রশ্ন হচ্ছে সৌদিরা তাদের উপসাগরীয় মিত্রদের ঠেলে দিয়ে নিজেরাই এখন কেন পিছিয়ে যাচ্ছে? লন্ডনে ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রধান ড সাদি হামদি বিবিসি বাংলাকে বলেন, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সলের বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কের প্রশ্নে বাদশাহ সালমান এবং তার ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদের মধ্যে কতটা মতভেদ রয়েছে। “প্রিন্স তুর্কি বাদশাহ সালমানের খুবই ঘনিষ্ঠ। তিনি মানামায় ইসরায়েলকে আক্রমণ করে যা বলেছেন তা সৌদি বাদশাহের মনোভাবের প্রতিফলন। ফিলিস্তিনিদের কিছু না পাইয়ে দিয়ে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সৌদি বাদশাহর তীব্র আপত্তি রয়েছে।" সৌদি রাজপরিবারের প্রভাবশালী সদস্য প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সল। মানামায় সম্মেলনে ফিলিস্তিন ইস্যুতে রোববার ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি এছাড়া, তিনি বলেন, সৌদি নেতৃত্বের বড় একটি অংশ এখনও সাধারণ আরব জনগণের মতামত নিয়ে চিন্তিত। “তারা মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব নিয়ে চিন্তিত। তলে তলে ইসরায়েলের সাথে বেশ অনেকদিন ধরে নানা সম্পর্ক থাকলেও সৌদি নেতৃত্বের এই অংশটি এখনও দেখাতে চায় যে মক্কা ও মদিনার মসজিদের রক্ষক হিসাবে ফিলিস্তিন সমস্যার মত মুসলিম বিশ্বের মূল কিছু বিষয়কে সৌদি আরব গুরুত্ব দেয়।" “সুতরাং এটা প্রজন্মের বিভেদ, বাবা ও ছেলের মধ্যে বিভেদ।" ইসরায়েল কতটা উদ্বিগ্ন? সৌদি প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সল যখন বাহরাইনের মানামায় রোববার ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করছিলেন তখন জেরুজালেম থেকে ভিডিও কলের অন্য প্রান্তে বসে তা শুনছিলেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাবি আশকেনাজি। তার বক্তব্যের শুরুতেই ইসরায়েলি মন্ত্রী সৌদি প্রিন্সের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে যে পরিবর্তন শুরু হয়েছে, আমি মনে করি না সৌদি প্রতিনিধির এই ধরনের বক্তব্য তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।" ইসরায়েলি মন্ত্রী বলেন, আরব বিশ্বের সাথে সম্পর্কের অর্থ এই নয় যে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ চাপা দেওয়া হচ্ছে। “বরঞ্চ আব্রাহাম চুক্তি এই সঙ্কট সমাধানের সুযোগ করে দিয়েছে।" তিনি ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন তারা যেন কোনো শর্ত ছাড়া ইসরায়েলের সাথে মীমাংসা আলোচনায় এগিয়ে আসেন, যদিও এ ধরণের আহ্বানের কোনো গুরুত্বই নেই। দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসা আলোচনা ২০১৪ সালের পর থেকে বন্ধ হয়ে রয়েছে। সম্মেলনে ভাষণ শেষ করে মি. আশকেনাজি টুইট করেন, “মানামার সম্মেলনে সৌদি প্রতিনিধির অভিযোগ ভিত্তিহীন। তার বক্তব্য আমি প্রত্যাখ্যান করছি। এই ধরণের দোষারোপের দিন শেষ হয়েছে। আমরা নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছি। এই যুগ শান্তির যুগ।" আরও পড়ুন: ইসরায়েল-সৌদি আরব গোপন বৈঠকের পেছনে কী হিসেব-নিকেশ কাজ করেছে? সৌদি আরব-ইসরায়েল গোপন আঁতাতের কারণ কি ইসরায়েলের সাথে শান্তিচুক্তি: আমিরাত ও বাহরাইনের পর কি সৌদি আরব? কিন্তু সৌদি এই অবস্থানের গুরুত্ব ইসরায়েলের জন্য কতটা? ইসরায়েলে নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা জেরুজালেম ইন্সটিটিউট অব স্ট্রাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটি‘র (জেআইএসএস) গবেষক ড. জনাথন স্পায়ার বিবিসি বাংলাকে বলেন, সম্পর্ক নিয়ে সৌদিদের এই দ্বিধা অবশ্যই ইসরায়েলের কাছে কিছুটা উদ্বেগের কারণ সৌদি আরব “খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। অন্য কিছু দেশ তাদের সিদ্ধান্তের জন্য রিয়াদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যেমন, মরক্কো।" ড. স্পায়ার বলেন, “ইসরায়েল বুঝতে পারছে, সৌদি নেতৃত্বের মধ্যে একটি প্রজন্মগত বিরোধ চলছে এবং আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক হতে সময় লাগবে।" কিন্তু, তিনি মনে করেন, বেশ কয়েকবছর ধরে দুই দেশের মধ্যে গোপনে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা চলছে তা অব্যাহত থাকবে। “ইসরায়েল সৌদি আরবের জন্য এখন একটি প্রয়োজন। যুবরাজ মোহাম্মদ তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে বদ্ধপরিকর। ইসরায়েলের প্রযুক্তি তার দরকার। ইরানের হুমকি রয়েছে। তাছাড়া সৌদি নেতারা খুব ভালো জানেন যে, মানবাধিকার বা বিভিন্ন ইস্যুতে যে ভাবমূর্তির সঙ্কট পশ্চিমা বিশ্বে তাদের রয়েছে ওয়াশিংটনে দেন-দরবার করে তার কিছুটা সুরাহা করে দেওয়ার ক্ষমতা ইসরায়েলের রয়েছে।" সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু ড সাদি হামদিও মনে করেন ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কের শর্ত হিসাবে ফিলিস্তিনিদের প্রসঙ্গ নিয়ে আসার অর্থ এই নয় যে সৌদি আরবের অবস্থানে মৌলিক কোনো পরিবর্তন হচ্ছে। “মিশর ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর তৎকালীন সৌদি বাদশাহ যে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেছিলেন ইউএই'র বেলায় তো তা দেখছিনা। সৌদি বাদশাহ কি ইউএই'র নিন্দা করেছেন? সৌদি সবুজ সংকেত ছাড়া বাহরাইন এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নিতে পারতো না। ইসরায়েলের বিমানের জন্য সৌদি আকাশ খুলে দেওয়া হয়েছে।" “সৌদি নেতাদের কাছ থেকে যা শুনছি তার কিছুটা অভ্যন্তরীণ মতভেদের বহিঃপ্রকাশ এবং কিছুটা জনসংযোগের চেষ্টা।" তাহলে সৌদিদের বক্তব্য-বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের খুশি হওয়ার তেমন কি কোনো কারণ নেই? ড. সাদি হামদি মনে করেন, কিছুটা স্বস্তির কারণ হলেও ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের সুরাহার কোনো সম্ভাবনা নেই। “ফিলিস্তিনিরা হয়ত কিছুটা স্বস্তি পাবে যে তাদের ইস্যুটি একদম মাটির নীচে চলে যায়নি। একটা চাপ তো অবশ্যই ইসরায়েলের ওপর তৈরি হবে। কিন্তু তা খুব সামান্যই।" ড. জনাথন স্পায়ারও মনে করেন, সৌদি বাদশাহ চাইছেন বলেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে ইসরায়েল উদ্যোগ নেবে সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। “সমস্যা খুবই জটিল। একটি বৈঠক বা কারো দাবিতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন সেখানে হবেনা। ফিলিস্তিনিরা নিজেরাও বিভক্ত। গাজায় হামাস আর পশ্চিম তীরে ফাতাহর মধ্যে কোনো যোগাযোগ কথাবার্তা নেই। এই অচলাবস্থা অদূর ভবিষ্যতে কাটবে না।" ড. হামদি বলেন, “ইসরায়েলিরা জুয়া খেলবে। অপেক্ষা করবে বাদশাহ সালমানের মৃত্যুর জন্য। তারা এটাও জানে জো বাইডেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বদল চাইবেন না।"
ইসরায়েলের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক করতে তার আরব মিত্রদের সামনে ঠেলে দিলেও সৌদি আরব নিজে যে পিছিয়ে যাচ্ছে সেই ইঙ্গিত দিনে দিনে স্পষ্ট হচ্ছে।
১৯৮৯: আইএনএফ চুক্তির আওতায় সোভিয়েত এসএস-২৩ মিসাইল ধ্বংস করা হচ্ছে ঐতিহাসিক ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) ট্রিটি নামের ওই চুক্তিটি ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতারা স্বাক্ষর করেন। গত কয়েক বছর ধরে ওয়াশিংটন অভিযোগ করছে যে, ওই চুক্তির শর্তের বাইরে গিয়ে রাশিয়া ক্রুজ মিসাইল তৈরি করছে। শুক্রবার একটি বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ''আজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। চুক্তিটি নষ্ট করার জন্য রাশিয়া পুরোপুরিভাবে দায়ী।'' গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওই চুক্তিটি ছয়মাসের জন্য স্থগিত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়াও এরপরে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারাও চুক্তিটি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা স্থগিত করে। এটি বাতিল হওয়ার ফলে বিশ্বজুড়ে মারণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণে বড় ধরণের সংকট তৈরি হবে এবং আরো অনেক বিপদজনক অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনা তৈরি করবে। ওই চুক্তি সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত বর্ণনা করা হচ্ছে। এই চুক্তিটি বাতিল হলে কীভাবে বিশ্বের জন্য মারণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও বিপদজনক অস্ত্র তৈরির সম্ভাবনা তৈরি করবে? আরো পড়ুন: রাশিয়া চুক্তি থেকেও সরে দাঁড়ালো যুক্তরাষ্ট্র নতুন রুশ ক্ষেপণাস্ত্র বদলে দেবে সামরিক ভারসাম্য রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র: বাস্তব না কল্পনা ? ১৯৮৭ সালে মিখাইল গর্বাচেভ এবং রোনাল্ড রিগ্যান আইএনএফ চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন আইএনএফ কি? এটি হলো যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি। সেই সময় দুই পরাশক্তি সম্মত হয়েছিল যে, তারা তাদের পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পন্ন সব মিসাইল ধ্বংস এবং পাঁচশো থেকে সাড়ে পাঁচহাজার কিলোমিটার দূরে আঘাত হানার ক্ষমতা সম্পন্ন মিসাইলগুলো স্থায়ীভাবে অকেজো করে ফেলবে। ছোট আকারের, সহজে বহনযোগ্য এবং সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুতে সহজে আঘাত হানতে সক্ষম এসব অস্ত্রকে চরম হুমকি হিসাবে দেখা হতো, বলছেন বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা জোনাথন মার্কুইস। সত্তরের দশকের শেষের দিকে, পশ্চিম ইউরোপের নানা স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করে এসএস-২০ মিসাইল মোতায়েন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন নেটো সামরিক জোটে থাকা অনেক দেশ উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। আইএনএফ চুক্তিটি কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ? চুক্তিটির ফলে প্রথমবারের মতো পরাশক্তিগুলো তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা কমিয়ে আনতে সম্মত হয়। একটি ক্যাটেগরির সব পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল এসোসিয়েশনকে অস্ত্রের ঘাটিগুলো পরিদর্শনের সুযোগ দেয়া হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৯১ সালের জুন মাসের মধ্যে সবমিলিয়ে ২৬৯২টি স্বল্পমাত্রার, মধ্যম মাত্রার এবং আন্ত মহাদেশীয় মিসাইল ধ্বংস করে। চুক্তির আওতায় নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো ৫৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র এখন কেন সংকট তৈরি হলো? ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ তোলে যে, 9M729 নামের নতুন ধরণের মিসাইল তৈরি করে রাশিয়া ওই চুক্তির লঙ্ঘন করছে, যা নেটোর কাছে এসএসসি-এইট নামে পরিচিত। কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ার এ ধরণের প্রায় একশো মিসাইল রয়েছে। পহেলা ফেব্রুয়ারিতে একটি সংবাদ সম্মেলনে মাইক পম্পেও বলেছেন, '' অনেক বছর ধরে কোনরকম বিকার ছাড়াই রাশিয়া ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস টিট্রির শর্তগুলো লঙ্ঘন করছে রাশিয়া।'' ''যদি স্বাক্ষরকারী পক্ষগুলো মেনে না চলে, তাহলে এমন কোন চুক্তি স্বাক্ষরের মানে নেই।'' মস্কো বলছে, তাদের মিসাইলগুলো পাঁচশো কিলোমিটারের কম যেতে সক্ষম। তাদের যুক্তি, পোল্যান্ড এবং রোমানিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিরক্ষা মিসাইলগুলো রয়েছে, সেগুলোকে পরিবর্তন করে আক্রমণকারী মিসাইলে রূপান্তর করা সম্ভব, যা হয়তো রাশিয়ার বিপক্ষে ব্যবহৃত হতে পারে। ওয়াশিংটন বলছে, মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি আইএনএফ চুক্তির সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে তৈরি করা হয়েছে। আরো পড়তে পারেন: যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ২০জন নিহত ঢাকায় এডিস মশা নিধনে কেন এই ব্যর্থতা গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসে কীভাবে কাশ্মীরে চরম আতঙ্ক: দলে দলে পালাচ্ছে লোকজন ফেব্রুয়ারিতে আইএনএফ চুক্তি স্হগিত করার প্রতিবাদে বার্লিনে মুখোশ পরে প্রতিবাদ জানায় অ্যাক্টিভিস্টরা এটা কি তাহলে নতুন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার শুরু? বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা জোনাথন মার্কুইসের মতে, আইএনএফ চুক্তিটি বাতিল হওয়ার মানে- যা এক পুরো একটি বিশেষ ধরণের পারমাণবিক অস্ত্রের নির্মূল করে দিয়েছিল- বিশ্বের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে বড় ধরণের পিছিয়ে যাওয়া। বিশ্লেষকদের মতে, ঐতিহাসিক এই চুক্তি বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতা দেখা দিতে পারে। মার্কুইসের মতে, এই চুক্তির অবসানের বিষয়টি বিশেষভাবে চিন্তার এই কারণে নতুনভাবে জেগে ওঠা রাশিয়ার হুমকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে উদ্বেগে রয়েছে। ''মস্কো বা ওয়াশিংটন, কেউই ওই চুক্তিকে আর গুরুত্ব দিতে চাইছে না বলেই মনে হচ্ছে,'' মার্কুইস বলছেন। থমাস কান্ট্রিম্যান, আর্মস কন্ট্রোল এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান, বলছেন, '' রাশিয়ার শর্ত লঙ্ঘনের জবাবে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে আসার পরে হয়তো এমন পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে, যা আশির দশকে দেখা গেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়ন একে অপরকে জবাব দিতে মিসাইল মোতায়েন করেছে।'' বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, আইএনএফ চুক্তি অবসানের ফলে আবার পাল্টাপাল্টি অস্ত্র মোতায়েন দেখা যেতে পারে রাশিয়া কি বলছে? যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার আগে আগে মস্কো পরামর্শ দিয়েছে যে, চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলেও যুক্তরাষ্ট্র যেন কিছু শর্ত বজায় রাখে। রাশিয়ার তাস বার্তা সংস্থাকে দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, '' যুক্তরাষ্ট্র যদি নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় কোন অস্ত্র মোতায়েন না করে, তাহলে রাশিয়াও সেরকম আচরণ থেকে বিরত থাকবে।'' এই চুক্তিটি বাতিল আরো একটি কারণে উদ্বেগজনক। তা হলো স্টার্ট নামের একটি চুক্তি নবায়নের ডেটলাইন রয়েছে ২০২১ সালে, যা হয়তো সংকটে পড়তে পারে। ২০১০ সালের ওই চুক্তিতে দূরপাল্লার মিসাইলের সংখ্যা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়া যদি সম্মত হয়, তাহলে নতুন স্টার্ট চুক্তিটি আরো পাঁচবছরের জন্য হতে পারে। কিন্তু অনেক বিশ্লেষকের আশঙ্কা, বর্তমান উদ্বেগজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটি ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বিশ্বের অনেক স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে নিরাপত্তার ওপর কী প্রভাব পড়তে যাচ্ছে? ওয়াশিংটন এবং মস্কোর এই উত্তেজনায় যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার তুলনায় বেশি প্রভাব পড়তে যাচ্ছে ইউরোপের নিরাপত্তার ওপর। ''নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা যদি শুরু হয়, তাহলে ইউরোপিয়ানরা প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার নতুন অস্ত্রের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকবে,'' বলছেন মার্কুইস। গত মাসে নেটোর মহাসচিব জেনারেল জেনস স্টলতেনবার্গ বিবিসিকে বলেছিলেন যে, রাশিয়ার মিসাইলগুলো পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম, সহজে বহন করা যায় আর সনাক্ত করা কঠিন। কয়েক মিনিটের মধ্যে সেগুলো ইউরোপের শহরগুলোয় আঘাত হানতে সক্ষম। তিনি বলেছেন, ইউরোপে ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল মোতায়েনের কোন পরিকল্পনা নেটোর নেই, কিন্তু প্রচলিত আকাশ ও মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, নতুন কৌশল ও প্রস্তুতি, নতুন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সবভাবেই মোকাবেলা করা হবে। ''আইএনএফ চুক্তি ছাড়া একটি বিশ্ব এবং আরো রাশিয়ান মিসাইলের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।'' তিনি বলেছেন। উত্তর কোরিয়ার ব্যালেস্টিক মিসাইল পরীক্ষা যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে চীন এবং অন্যান্য দেশের জন্য কী বার্তা? অনেকে বলছেন, আইএনএফ চুক্তিটি যখন স্বাক্ষর করা হয়েছিল, তারপরে বিশ্বের পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। জোনাথন মার্কুইস বলছেন, '' হয়তো ওয়াশিংটন আর মস্কোকে নিয়ে দ্বিপাক্ষিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের যুগ শেষ হতে চলেছে।'' ''চীন এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া ছাড়াও আরো অন্তত দশটি দেশের আন্ত-মহাদেশীয় পারমাণবিক মিসাইল রয়েছে।'' এসব দেশ কখনোই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে পক্ষ হয়নি, ফলে তারা এ জাতীয় অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। ২০০২ সালে অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ট্রিটি (এবিএম) থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। তখন তারা যুক্তি দিয়েছিল যে, ইরান বা উত্তর কোরিয়া দূরপাল্লার মিসাইল তৈরি করছে।
স্নায়ু যুদ্ধের সময় থেকে চলে আসা একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক মিসাইল চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
ব্রিটেনের যুক্তি ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন বিমান হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন নয় কেন সৌদিদের অস্ত্র জোগাতে এত আগ্রহী ব্রিটেন? এ নিয়েই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর। এই তিনটি দেশের যোগাযোগের সূত্রগুলো কোথায়? তেল সমৃদ্ধ সৌদি আরব বিশ্বে অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা দেশ। আরব দুনিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র দেশ প্রতিবেশী ইয়েমেনে বিদ্রোহীদের দমনে বিমান হামলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব। গত বছর এক রিপোর্টে ব্রিটেন নিজেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ অস্ত্র বিক্রেতা বলে বর্ণনা করেছে। ব্রিটেন যত অস্ত্র রপ্তানি করে, তার ৪০ শতাংশই বিক্রি করে শুধু একটি দেশের কাছে - সেটি হল সৌদি আরব। ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদিদের পাশে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ব্রিটিশ সরকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী তারাও ব্রিটেনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে। অস্ত্র ব্যবসার হিসাবে ব্রিটেনের তুলনায় এগিয়ে আছে একমাত্র আমেরিকা। ইয়েমেনের অবস্থান কী? ব্রিটেনের এই কোটি কোটি পাউন্ড মুনাফার অস্ত্র ব্যবসা ইয়েমেনে সাধারণ মানুষের জীবন কীভাবে বিপন্ন করে তুলেছে এবং কী ধরনের ভয়ানক প্রভাব ফেলছে, ব্রিটেনের বিরোধী রাজনীতিক ও অস্ত্র ব্যবসার বিরোধীরা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। জাতিসংঘ বলছে, ইয়েমেনে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ একটা মানবিক সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। জাতিসংঘ ইয়েমেনের পরিস্থিতিকে বিশ্বের ভয়াবহতম মানবিক সঙ্কট বলে ব্যাখ্যা করেছে জাতিসংঘ তাদের রিপোর্টে যাচাই করা তথ্য তুলে ধরে বলছে, ২০২০-র মার্চ পর্যন্ত ইয়েমেনে মূলত সৌদি নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় বেসামরিক মানুষ মারা গেছে অন্তত ৭,৭০০ জন। অন্যান্য পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী অবশ্য বলছে যে সেখানে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একটি সংস্থা এসিএলইডি-র (আমর্ড কনফ্লিক্ট লোকেশান অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট) নথিভুক্ত করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা এক লাখ, যার মধ্যে সরাসরি হামলায় নিহত বেসামরিক মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার। ইয়েমেনের জনসংখ্যা দুই কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে ৮০ শতাংশের মানবিক সহায়তা এবং সুরক্ষার প্রয়োজন। আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে বিশ লাখ শিশু গুরুতর অপুষ্টির শিকার, যাদের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুর বয়স পাঁচের নিচে। ব্রিটিশ সরকারের বক্তব্য কী? গত গ্রীষ্মে মানবাধিকার আন্দোলনকারীরা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের একটা বিজয় পেয়েছিল। তারা বিষয়টি আদালতে নিয়ে যায়, এবং আদালতের নির্দেশে ব্রিটিশ সরকার সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। আদালত সরকারের এই অস্ত্র বিক্রির নীতি ইয়েমেনে আন্তর্জাতিক আইনের "গুরুতর লঙ্ঘন" কি-না, তা বিবেচনা করে দেখার নির্দেশ দেয়। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: সৌদি যুবরাজের ব্রিটেন সফর কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ? সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে এতো শত্রুতা কেন? মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে সাইবার-নজরদারির সামগ্রী ব্রিটেন সৌদি আরবকে অস্ত্র বিক্রি করার পাশাপাশি দেশটিকে সামরিক পরামর্শ ও প্রশিক্ষণও দেয় প্রায় এক বছর পর সরকার তার মূল্যায়ন শেষে ঘোষণা করে যে তারা অস্ত্র বিক্রি আবার শুরু করবে। "সৌদি আরবের অভিপ্রায় সঠিক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার ক্ষমতা দেশটি রাখে," জানান ব্রিটেনের বাণিজ্য বিষয়কমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তিনি সরকারি বক্তব্য তুলে ধরে বলেন যে সেখানে আইন লঙ্ঘনের "বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা" ঘটেছে মাত্র। এমপিদের কাছে এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি জানান, "যেসব ঘটনা আইনের সম্ভাব্য লঙ্ঘন বলে সরকারকে বিবেচনা করে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তা ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এবং বিভিন্ন কারণে।" সমালোচনা কেন? ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমিলি থর্নবেরি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ে বিরোধী দলের মুখপাত্র। তিনি মনে করেন যে সরকার তার এই সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে "নৈতিক যুক্তি" দিতে পারবে না, এবং তিনি বলেছেন এর মাধ্যমে ব্রিটেনের "মানবাধিকারের পক্ষের ভাবমূর্তি" ক্ষুণ্ন হচ্ছে। গত বছর ব্রিটিশ সরকারকে আদালতে নিয়ে গিয়েছিল যে অস্ত্র ব্যবসা-বিরোধী সংগঠন, সেই 'দ্যা ক্যাম্পেইন এগেনস্ট আমর্স ট্রেড বা ক্যাট' বলছে এটি "নৈতিকভাবে দেউলিয়া" একটা সিদ্ধান্ত। ধারণা করা হয়, ইয়েমেনে বিশ লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে মধ্যপ্রাচ্যে বিমান হামলায় হতাহাতের বিষয়টি নজরদারি করে এমন একটি ব্রিটিশ-ভিত্তিক সংস্থা 'এয়ারওয়ারস্' বলছে, সৌদি আরবকে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার প্রক্রিয়া সন্দেহজনক এবং অনির্ভরযোগ্য। এই সংগঠনটির দাবি, মিত্র দেশ সৌদিদের কথা যদি ছেড়েও দেয়া হয়, তারপরেও ব্রিটেন নিজেই যে সংখ্যায় বিমান ইয়েমেনে হামলা চালিয়েছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। "ব্রিটেন তদন্তের ক্ষেত্রে যেসব মাপকাঠি নির্ধারণ করেছে, তাতে বেসামরিক মানুষের ক্ষতির বিষয়টা স্বীকার করে নেয়ার পথ অসম্ভব করে দেয়া হয়েছে," বলছে এয়ারওয়ারস্। সংগঠনটি তাদের যুক্তির সমর্থনে ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে ব্রিটেনের পাঁচ বছর ব্যাপী লড়াইকে দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরেছে। ব্রিটিশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ হিসাবে সিরিয়া ও ইরাকে ব্রিটেন "আইসিস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ৪,৪০০ অস্ত্র" দিয়েছে। কিন্তু ব্রিটেনের হিসাব বলে, এর মধ্যে ব্রিটিশ বিমান বাহিনী রয়াল এয়ার ফোর্সের হামলায় মারা গেছে মাত্র একজন বেসামরিক মানুষ। এয়ারওয়ারস্-এর হিসাবে নিহত বেসামরিক মানুষের সংখ্যা ছিল ৮,০০০ থেকে ১৩,০০০ এবং বেসামরিক মৃত্যু নথিভুক্ত করার ব্রিটিশ পদ্ধতি তাদের মতে "অবাস্তব, অযৌক্তিক"। কী পরিমাণ অর্থ জড়িত? ক্যাট বলছে, ২০১৫ সালে ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ব্রিটেন লাইসেন্স-এর অধীনে সৌদি আরবে ৫৩০ কোটি পাউন্ড অর্থমূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে। সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটেনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র সংগঠনটি বলছে, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সৌদি আরবের মিত্র অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে আরও একশো' কোটি পাউন্ডের অস্ত্র বিক্রির লাইসেন্স ব্রিটেন পেয়েছে। তবে ক্যাটের হিসাবে এর বাইরে আরও রয়েছে লাইসেন্স মুক্ত অস্ত্রের বিক্রি - এবং সামরিক সরঞ্জামের দেখভাল, কারিগরি ও সরবরাহ বাবদ অস্ত্র বিক্রি সংক্রান্ত আরও নানা চুক্তি থেকে অর্জিত মুনাফা। তাদের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সদস্য দেশগুলোর কাছে ব্রিটেনের বিক্রি করা অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের মূল্য "অন্তত ১৬ বিলিয়ন পাউন্ড" (দু'হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি)। যেসব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ব্রিটেন বিক্রি করেছে, তার মধ্যে রয়েছে টাইফুন এবং টর্নেডো জঙ্গী বিমান, এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের বোমা। সামরিক সরঞ্জাম ছাড়াও ব্রিটেন সৌদি জোট বাহিনীকে সামরিক পরামর্শ দিয়েছে, যার মধ্যে আছে লক্ষ্যবস্তুর ওপর বোমাবর্ষণ এবং কৌশল সংক্রান্ত পরামর্শ, এবং সৌদি সেনাদের ব্রিটেনে প্রশিক্ষণ দান। বিষয়টা কি শুধুই ব্রিটেনের অস্ত্র বিক্রির? সৌদি আরব ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যে পরিমাণ অস্ত্র আমদানি করেছে তার মধ্যে ৭৩ শতাংশ অস্ত্র্র এসেছে আমেরিকা থেকে - জানাচ্ছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশানাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রিটেন - তারা বিক্রি করেছে সৌদিতে মোট আমদানি করা অস্ত্রের ১৩ শতাংশ এবং তৃতীয় স্থানে থাকা ফ্রান্স বিক্রি করেছে ৪.৩ শতাংশ। সেই হিসাবে দেখলে, আমেরিকার তুলনায় ব্রিটিশ অস্ত্র চুক্তির পরিমাণ অনেকই কম। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: ইয়েমেন সংকট: কে কার সঙ্গে কেন লড়াই করছে? সমঝোতা সত্ত্বেও যুদ্ধ চলছে ইয়েমেনে ইয়েমেনের জন্য সংগ্রহ করা ত্রাণ কোথায় যায়? সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট যে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়ছে, তারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেয়নি সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একজন গবেষক পিয়েটার ডি ওয়েজম্যান বলছেন, আমেরিকা গত পাঁচ বছরে যত অস্ত্র বিক্রি করেছে, তার অর্ধেক বিক্রি করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি করা অস্ত্রের অর্ধেকই কিনেছে সৌদি আরব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব ও তার শরীক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বর্ণনা করেছেন "এলাকায় ইরান এবং তার দোসরদের দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে একটা সুরক্ষা দেয়াল" হিসাবে। ইরান ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন জোগাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে লড়ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনী। তবে হুতিদের সমর্থন জোগানোর অভিযোগ তেহরান অস্বীকার করে। ভবিষ্যতে কী হতে পারে? ব্রিটেনের সংবাদপত্র ফাইনানশিয়াল টাইমস-এ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব এক নিবন্ধে লিখেছেন যে ব্রিটেন ইয়েমেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে এবং মানবিক ত্রাণ ব্যবস্থায় অংশ নিচ্ছে। ইয়েমেনে দেশ জুড়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, দেশটিতে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডে সাহায্য করার জন্য ব্রিটেন, জার্মানি এবং সুইডেন যৌথভাবে অতিরিক্ত ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইয়েমেনে এ যাবত কালের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক কলেরার প্রাদুর্ভাব ছাড়াও, দেশটি কোভিড-১৯এর প্রকোপ মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। দেশটির চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থার মাত্র অর্ধেক এ পর্যন্ত কাজ করছে। জাতিসংঘ আশংকা করছে ইয়েমেনে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ বছরের যুদ্ধে দেশটিতে যে প্রাণহানি হয়েছে তাকে ব্যাপকমাত্রায় ছাড়িয়ে যাবে এপ্রিল মাসে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৌদি আরব একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। কিন্তু হুতিরা এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। তারা দাবি করে রাজধানী সানা এবং বন্দরনগরী হুদাইদা থেকে আকাশপথে ও সমুদ্রপথে দেয়া সব রকম অবরোধ তুলে নিতে হবে। ফলে অচলাবস্থার নিরসন এখনও হয়নি। জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে যুদ্ধে এ পর্যন্ত দেশটিতে যে ধ্বংসলীলা হয়েছে, তাকে হয়তো বহু গুণে ছাপিয়ে যাবে আগামীতে ধ্বংসের যে চিত্র আশংকা করা হচ্ছে, তা। জাতিসংঘ বলেছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ইয়েমেনে মৃত্যুর সংখ্যা হয়ত "গত পাঁচ বছরে দেশটিতে যুদ্ধ, রোগব্যাধি ও অনাহারে মৃত্যুর মোট সংখ্যাকে অনেকাংশে ছাড়িয়ে যাবে"।
ইয়েমেনে লড়াই চলছে পাঁচ বছর ধরে। এই যুদ্ধে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু বেড়ে চলার পটভূমিতে সৌদি আরবে অস্ত্র রপ্তানিতে ব্রিটেনের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে।
শ্বাসকষ্ট নিয়ে জেসি ক্লার্ক ভর্তি হন হাসপাতালে। এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই উপসর্গ তেমন গুরুতর ছিল না। কারও কারও দেহে কোন উপসর্গই দেখা যায়নি। কিন্তু অনেকের দেহে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। বিবিসি এধরনের তিনজনের সাথে কথা বলেছে - যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং এখন সেরে উঠেছেন। 'আমার আর আমার বাচ্চার জীবন রক্ষার লড়াই একসাথে চলছিল' কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার আগে স্বামীর সাথে ক্যারেন ম্যানারিং। ক্যারেন ম্যানারিং ইংল্যান্ডের কেন্ট-এ থাকেন। তিনি যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তখন তিনি ছয়মাসের অন্ত:সত্ত্বা। তিনি তার চতুর্থ সন্তানের জন্মদানের জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে তার জ্বর এবং প্রচণ্ড কাশি শুরু হয়। কিন্তু ডাক্তাররা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে চায়নি। এই অবস্থা নিয়ে ১১ দিন পার হওয়ার পর তার অবস্থার অবনতি ঘটে। "আমি ফোনে ৯৯৯ ডায়াল করি। আমার শ্বাস-প্রশ্বাসের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে ফোন করার কয়েক মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির হয়," ক্যারেন বলছিলেন, "শ্বাস নেয়ার জন্য আমাকে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছিল। তারা আমাকে সাথে সাথে অক্সিজেন দিতে শুরু করে।" ক্যারেনের দেহে পরীক্ষার পর করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। তার দুটি ফুসফুসেই নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে তাকে এক সপ্তাহ ভর্তি থাকতে হয়। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলছিলেন, "কাউকে আমার কাছে আসতে দেয়া হতো না। সেটা ছিল আমার জন্য একেবারেই দু:সময়। খুবই নি:সঙ্গ ছিলাম।" "দুই-তিন দিন আমি একেবারে বিছানায় পড়ে ছিলাম। টয়লেটে যাওয়ার শক্তি ছিল না। হাসপাতালের বিছানার চাদর বদলাতে হলে আগে আমাকে উল্টে দিতে হতো।" "যখন আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হতো তখন আমি বেল টিপে নার্সদের ডাকতাম। কিন্তু তারা সাথে সাথে আমার কাছে আসতে পারতো না। তাদের আগে নিরাপদ পোশাক পরতে হতো এবং শুধুমাত্র তারপরই তারা আমার কাছে আসতে পারতো।" "তবে আমি সারাক্ষণ আমার পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলতাম। তারাই আমাকে সাহস যোগাতো। আমার ভয় হতো যে আমি বোধহয় আর বাঁচবো না। আমার পরিবারও আমার জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিল। "প্রতিবার নিশ্বাস নেয়ার সময় আমাকে খুব কষ্ট করতে হতো। আমি আমার নিজের জীবন এর আমার বাচ্চার জীবনের জন্য লড়ে যাচ্ছিলাম।" ক্যারেন জানালেন, যেদিন তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন সেদিনের স্মৃতি তার এখনও মনে আছে। হাসপাতালের দরোজার বাইরে পা রাখা মাত্রই ঠাণ্ডা তাজা বাতাস তার মুখে পরশ বুলিয়ে দিয়েছিল। "বাড়ি ফেরার সময় আমার মুখ মাস্ক-ঢাকা ছিল। কিন্তু গাড়ির জানালা সেদিন আমি খুলে রেখেছিলাম। বাতাসের স্পর্শ খুব ভাল লাগছিল। ‌জীবনের তুচ্ছ বিষয়গুলোকেও অনেক মূল্যবান বলে মনে হচ্ছিল।" কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি? করোনাভাইরাসের উৎপত্তি কোথায়, কেন এতো প্রাণঘাতী 'আমি চাইছিলাম কেউ আমাকে একটু সাহায্য করুক' জেসি ক্লার্ক জানতেন তিনি করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। তিনি কঠিন এক কিডনির রোগে ভুগছিলেন। পাঁচ বছর আগে তার একটি কিডনি ফেলে দিতে হয়েছিল। ২৬-বছর বয়সী শেফিল্ড শহরের এই বাসিন্দা যেদিন থেকে প্রচন্ডভাবে কাশতে শুরু করলেন এবং তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো, তখন তিনি বুঝলেন পরিস্থিতি গুরুতর। আর এর কয়েকদিনের মধ্যে তার হাঁটাচলার শক্তিও থাকলো না। শ্বাসকষ্ট নিয়ে জেসি ক্লার্ক ভর্তি হন হাসপাতালে। "আমার বুকের পাঁজর, পিঠ এবং পেটে প্রচণ্ড ব্যথা দেখা দিয়েছিল," বলছিলেন জেসি, "মনে হচ্ছিল আমার সারা শরীরে কেউ খুব করে পিটিয়েছে।" প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যেদিন ব্রিটেনে লকডাউন ঘোষণা করলেন - তার দু'দিন পর জেসির বয়ফ্রেন্ড টম তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। কিন্তু নিরাপত্তার খাতিরে জেসিকে সাথে সাথে আলাদা ঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। "একা একা থাকতে আমার খুব ভয় করতো। কিন্তু আমার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে আমি চাইতাম কেউ আমাকে একটু সাহায্য করুক," জেসি বলছেন, "আমাকে একটি সবুজ মাস্ক পরিয়ে দেয়া হলো। এরপর আমাকে যে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হলো সেখানে শুধুমাত্র কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছিল। ওয়ার্ডে প্রতিটা বেড ছিল আলাদা। প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছিল।" "আমার করোনাভাইরাস পরীক্ষা হয়নি। তবে ডাক্তার আমাকে জানালেন সবার পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না। কারণ আমার যে করোনাভাইরাস হয়েছে তা দেখেই বলে দেয়া যায়। ডাক্তার আমাকে বললেন, আমার ফুসফুসে প্রদাহের জন্যই আমার শরীরে ব্যথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, আমাকে স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হবে এবং পেইনকিলার খেতে হবে।" "এর আগে আমি কখনই শ্বাসকষ্টে ভুগিনি। কিন্তু আর শ্বাস নিতে পারবো কিনা, কিংবা এটাই এই ভাইরাসের স্বাভাবিক উপসর্গ কিনা, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকা খুবই ভয়ের ব্যাপার। জেসিকে ছয় ঘণ্টা হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু বাড়ি ফেরার পাঁচদিন পরও জেসি ঠিকমত হাঁটাচলা করতে পারছিলেন না। তার শরীর এতটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল যে তিনি দিনে ১৮ ঘণ্টা করে ঘুমাতেন। "বয়স যাদের কম তাদের কারো কারো মনে এই বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে করোনাভাইরাস তাদের ছুঁতে পারবে না," জেসি বলছেন, "কিন্তু এখন সেই ধারণা পাল্টে গেছে। এখন তারা একে গুরুত্বের সাথেই নিচ্ছে।" 'আমি খুবই অন্ধকার এক জায়গায় চলে যাচ্ছিলাম' স্টুয়ার্ট বয়েল বলছেন, শ্বাসকষ্ট থেকে তিনি টের পেয়েছিলেন যে ভাইরাস তার ফুসফুসকে আক্রমণ করেছে। স্টুয়ার্ট বয়েলের দৃঢ় বিশ্বাস, কয়েক সপ্তাহ আগে গির্জার এক বৈঠক থেকেই তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন। "বৃহস্পতিবার ঐ বৈঠকে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছিলাম। কিন্তু রবিবারের মধ্যে আমাদের অনেকের মধ্যে ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ দেখা দেয়," বলছিলেন তিনি। এর পরের ১০ দিনের মধ্যে ৬৪-বছর বয়সী স্টুয়ার্টের অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। "প্রথমদিকে সমস্যাটা ছিল বেশি বোঝা যাচ্ছিল না," তিনি ব্যাখ্যা করছেন, "কিন্তু সিঁড়ি বেয়ে ওপরতলায় ওঠার সময় আমি বুড়ো মানুষের মতো হাঁপাচ্ছিলাম। কিছুদিনের মধ্যেই আমার হাঁটাচলা করার ক্ষমতাও চলে গেল। ভাইরাস আমার ফুসফুসকে আক্রমণ করে বসলো, আর তাকে ঠেকানোর কোন ক্ষমতাই আর আমার রইলো না।" স্টুয়ার্টের পরিবার তখন অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনে এবং তাকে হাসপাতালে সরিয়ে নেয়া হয়। "ব্যাপারটা সিনেমার মত করে ঘটলো," বলছিলেন তিনি, "তারা আমাকে হাসপাতালের 'রেড জোন'-এ নিয়ে গেল। সেখানে নানা রকম পরীক্ষা চালানো হলো। তারা বুঝতে পারলো আমার করোনাভাইরাস হয়েছে। এরপর তারা আমার ফুসফুসে অক্সিজেন দেয়া শুরু করলো।" "এর পরের কয়েক ঘণ্টা ধরে আমি বেশ কয়েকবার এমন একটা জায়গার কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম যে জায়গাটা ছিল খুবই অন্ধকার। আমার ভাবলাম, 'এই বোধহয় শেষ।' কিন্তু আমি বাঁচতে চাইছিলাম।" হাসপাতালের বিছানায় স্টুয়ার্ট বয়েল। "আমার ফুসফুসের ভেতরে যে লড়াই চলছিল তা আমি খুব টের পাচ্ছিলাম। আমার অবশিষ্ট শক্তি দিয়ে এই লড়াই চালাতে হয়েছিল। অতিরিক্ত অক্সিজেন পাওয়ার পর আমার দেহ বল ফিরে পায় এবং অবশিষ্ট শক্তি দিয়ে ভাইরাসকে দেহ থেকে বের করে দেয়। হাসপাতালের কর্মীরা কাজ করছিলেন চমৎকারভাবে। কিন্তু আপনাকে সাহায্য করার চাইতে বেশি কিছু তারা করতে পারবেন না। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে নেই কোন ওষুধ। আপনাকে একমাত্র রক্ষা করতে পারবে আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা।" গত শনিবার স্টুয়ার্টকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। তিনি বাড়িতে এখন স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তার শ্বাসনালী এবং ফুসফুসের উপশমের জন্য তিনি প্রচুর পানি পান করছেন।
ব্রিটেনে করোনাভাইরাস মৃত্যুর সংখ্যা এখন ৩০০০-এর কাছাকাছি। কিন্তু তারপরও তেত্রিশ হাজারের বেশি সংক্রমিত মানুষের মধ্যে অনেকেই সম্পূর্ণভাবে সেরে উঠেছেন।
টুঙ্গিপাড়া থেকে প্রচারাভিযান শুরু করেছেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। "নির্বাচনী প্রচারণায় যাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সুযোগ-সুবিধা তিনি ব্যবহার না করেন, সেটা নিয়ে আমরা সতর্ক", বলছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম। "নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে কোনভাবেই লংঘন না হয়, এ নিয়ে আমরা সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি। এ কারণে আজ নেত্রী যখন টুঙ্গিপাড়া সফরে গেছেন, তিনি কিন্তু ব্যক্তিগত এবং দলীয় গাড়িবহর নিয়ে গেছেন। এটি কিন্তু সরকারি সফর নয়। দলীয় সফর। এখানে সরকারী কিছু থাকবে না।" আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করেছেন টুঙ্গিপাড়া থেকে। তার সঙ্গে আছেন ছোট বোন শেখ রেহানা। আছেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা, আর দুজন চিত্র তারকা রিয়াজ এবং ফেরদৌস। টুঙ্গিপাড়ায় নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁদের গাড়িবহর গেছে কোটালিপাড়ায়। সেখানে প্রথম নির্বাচনী সভা করেছেন তিনি। টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকার জন্য এবারের নির্বাচনী লড়াইটা খুব সহজ হবে না, সেটা স্বীকার করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাও। সরকারি গাড়ির পরিবর্তে ব্যক্তিগত গাড়িতে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বেরিয়েছেন শেখ হাসিনা এইচ টি ইমামের ভাষায়, "আমরা জানি, ইনকামবেন্সির একটা ব্যাপার আছে। একটা সরকার এক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেই তার দ্বিতীয় মেয়াদে অসুবিধা হয়। আর আমরা তো চাইছি তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার সুযোগ। কাজেই আমাদের জন্য কাজটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং। তারপর এবার তো সব দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কাজেই এবার চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়।" সেই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই দলের নির্বাচনী কৌশল ঢেলে সাজিয়েছে আওয়ামী লীগ। তৈরি হয়ে গেছে নির্বাচনী ইশতেহার। দলের প্রচারাভিযানে নেতৃত্ব দেবেন শেখ হাসিনা। আর মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি অনলাইন আর সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যাপকভাবে নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করা হবে। আওয়ামী লীগের এই পুরো নির্বাচনী কৌশল আর প্রচারাভিযানের মূল সমন্বয়কারীর দায়িত্বে আছেন এইচ টি ইমাম। তিনি এর আগের নির্বাচনগুলোতেও এই দায়িত্ব পালন করেছেন।। বিবিসি নিউজ বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিস্টার ইমাম তাদের নির্বাচনী কৌশল, ইশতেহার, প্রচারাভিযান ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক ব্যবহার করবে আওয়ামী লীগ। কী থাকছে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করবে ১৮ই ডিসেম্বর। এইচ টি ইমাম জানালেন, ইশতেহার মোটামুটি ঠিক হয়েছে গেছে, এখন কেবল প্রকাশের অপেক্ষা। "মূল ইশতেহার লেখা শেষ। আমাদের নেত্রী নিজে সম্পূর্ণটা দেখে দিয়েছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে বিভিন্ন কমিটি এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন। যেমন নারীর ক্ষমতায়ন কিংবা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে আলাদা আলাদা গ্রুপ কাজ করেছে।" কী আছে এই ইশতেহারে, তার কিছু ইঙ্গিত তিনি দিলেন। চিত্রতারকা রিয়াজ এবং ফেরদৌস। নির্বাচনী প্রচারে শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী। "আমরা তো এর আগের নির্বাচনগুলোর ইশতেহারে বলেছিলাম রূপকল্প ২০২১ এর কথা। আর এবার আমরা বলছি ২০৪১ সালে আমরা বাংলাদেশকে এমন এক পর্যায়ে দেখতে চাই, যেখানে আমরা আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত, এবং অন্য সকলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি।" নতুন ভোটার এবং তরুণদের আকর্ষণের জন্য ইশতেহারে অনেক কর্মসূচী থাকবে। জোর দেয়া হবে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেয়া বিশেষ মেগাপ্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে। "ইশতেহারে গ্রাম-শহরের ব্যবধান কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। কৃষিতে জোর দেয়া হবে পুষ্টির ওপর।" কীভাবে প্রচারণা চালানো হবে এইচ টি ইমাম জানালেন, এই প্রথম কোন জাতীয় নির্বাচনী প্রচারণায় সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। "আমরা অনেকভাবেই আমাদের প্রচার চালাবো। এখন তো প্রচার মাধ্যম অনেক বদলে গেছে। বাংলাদেশে এখন টেলিভিশন চ্যানেলই অজস্র। টেলিভিশন তো থাকবেই। তারপর আছে প্রিন্ট মিডিয়া। বাংলাদেশে সাড়ে আট কোটির মতো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবো। ফেসবুক, ইউটিউব এবং অন্যান্য যা অ্যাপস আছে, তার মাধ্যমেও ব্যাপক প্রচারণা চলছে। ভালো মন্দ উভয় দিকেই। আমরাও চেষ্টা করছি এগুলো ব্যবহার করার।" এইচ টি ইমাম: "এবার নির্বাচনে জেতার চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়।" বিশ্বের অন্যান্য দেশে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিয়ে যেভাবে নির্বাচনী প্রচার চালানো হয়, আওয়ামী লীগ এবার ব্যাপকভাবে তার ব্যবহার করবে বলে জানান তিনি। "এটা তো আমরা ব্যাপকভাবে করবো। ক্যাম্পেইনের প্রচুর মেটেরিয়েল তৈরি হয়ে গেছে। আমরা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে পয়সা দিয়ে, বিজ্ঞাপন দিয়ে, যেভাবে করে, আমরা তাই করবো।" তিনি জানান আওয়ামী লীগ তাদের প্রচারণায় দুটি বিষয়কে বেশি কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। একটি হচ্ছে দলের নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি এবং জনপ্রিয়তা। অন্যটি হচ্ছে গত এক দশকে বাংলাদেশের যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সেটি। তবে বিগত নির্বাচনগুলোতে শেখ হাসিনাকে যেভাবে দেশজুড়ে জেলায় জেলায় গিয়ে নির্বাচনী জনসভা এবং পথসভায় অংশ নিতে দেখা গেছে, সেটি এবার হচ্ছে না, জানালেন মিস্টার ইমাম। কেবল নির্ধারিত কিছু কর্মসূচীতেই তিনি অংশ নেবেন। "এবার অত ব্যাপকভাবে তিনি জনসভা করবেন না। সম্ভব না। সময় অত্যন্ত কম। এই সময়ের মধ্যে উনি অতটা কভার করতে পারবেন না। যে সমস্ত জায়গায় যাওয়া খুব প্রয়োজন, উনি সেগুলোতে যাবেন। বাকীগুলো উনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারবেন। ২০০৮ সালেও এটা আমরা শুরু করেছিলাম। এভাবে উনি বিভিন্ন জায়গায় সংযুক্ত হয়ে বক্তৃতা দেবেন, মতবিনিময় করবেন।"
সকাল আটটার একটু পরে গণভবন থেকে যে গাড়িবহরটি বেরিয়ে এলো, তাতে ছিল একটি সিলভার রঙের মার্সিডিজ গাড়ি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত গাড়ি। ২০০৪ সালের ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই গাড়িটিও। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর সময় বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গাড়িটিই বেছে নিলেন।
এটা হচ্ছে প্যারাগুয়ের পূর্বাঞ্চলের অ্যাচে নামের আদিবাসী একটি সম্প্রদায়ের একজন ব্যক্তির বক্তব্য, যা তিনি নৃবিজ্ঞানী কিম হিল আর ম্যাগদালেনা হার্টাডোকে বলেছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলছিলেন, দাদী বাড়ির ছোটখাটো কাজ এবং বাচ্চাদের দেখাশোনা করতেন। কিন্তু যখন তিনি আর কোন কাজ করতে পারছিলেন না, তখন আর আবেগি হওয়ার দরকার নেই। নিষ্ঠুরভাবে মাথায় কুড়াল দিয়ে আঘাত করে তাদের হত্যা করা হতো। তবে বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে নিয়ম ছিল আলাদা। তাদের দূরে কোথাও পাঠিয়ে দেয়া হতো এবং বলা হতো যেন আর ফিরে না আসে। প্রবীণদের প্রতি আমাদের কী দায়িত্ব রয়েছে? এটি মানবজাতির মধ্যে পুরানো একটি প্রশ্ন। সেটার উত্তর: সমাজ ভেদে অনেকভাবে তা পরিবর্তিত হয়েছে। আরেকজন নৃবিজ্ঞানী, জ্যারেড ডায়মন্ড বলছেন, এরকম রীতি শুধুমাত্র আচে সম্প্রদায়ের ভেতরেই রয়েছে, এমন নয়। পাপুয়া নিউগিনির কুয়ালঙ সম্প্রদায়ের মধ্যে যখন একজন নারীর স্বামী মারা যায়, তখন তার ছেলের প্রধান দায়িত্ব হয়ে ওঠে মাকে গলা টিপে হত্যা করা। আরো পড়ুন: স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা 'দীর্ঘ রোগমুক্ত জীবন' নিশ্চিত করে বাংলাদেশে বয়স্ক মানুষের জন্যে কী করছে সরকার কাজে টিকে থাকার লড়াইয়ে জিতলেন ১০২ বছরের বৃদ্ধ চল্লিশের পর ধীরে হাঁটা 'দ্রুত বুড়ো হবার লক্ষ্মণ' জঙ্গলের গভীরে বসবাস করে শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আচে জনগোষ্ঠী আর্কটিকে চুচচি তাদের সম্প্রদায়ের বয়স্ক মানুষদের উৎসাহিত করে যেন তারা তাদের নিজেদের হত্যা করে। তাহলে পরবর্তী জীবনে অনেক ভালো পুরস্কার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু অন্য অনেক গোত্র পুরো আলাদা ধরণের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সেখানে তরুণরা বৃদ্ধদের কথা মতো পরিচালিত হয়, যাকে বলা হয় 'জিরোন্টোক্রেসি'। অনেক ক্ষেত্রে এমনকি আশা করা হয় যে, তরুণরা খাবার চিবিয়ে দেবেন, যাতে বয়স্কা এবং দাঁতহীন পিতা-মাতারা সেগুলো সহজে খেতে পারেন। আগে সাধারণভাবে একটি ধারণা করা হতো যে, যতক্ষণ আপনার দেহ পুরোপুরি অচল হয়ে না পড়ছে, ততক্ষণ কাজ করে যাবেন। কিন্তু সেই ধারণা আর সত্য নয়। পেনশন আমাদের অনেকেই আশা করি যে, একটি নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছে পেনশন পাবো, যা অতীতে আমরা যে কাজ করেছি, তার মূল্যায়ন। অর্থাৎ এখন আমরা আর কাজ করবো না, কিন্তু অতীত কাজের স্বীকৃতি ভোগ করবো। প্রাচীন রোমেও সৈনিকদের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালু ছিল। আসলে 'পেনশন' শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ 'পেমেন্ট' থেকে। কিন্তু শুধুমাত্র উনিশ শতকে এসে সেটা সেনাবাহিনীর বাইরের ছড়িয়ে পড়ে। রাষ্ট্রব্যবস্থায় পেনশন প্রথম চালু হয় জার্মানিতে, ১৮৯০ দশকে, যা চালু করেছিলেন তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর অট্টো ভন বিসমার্ক। কিন্তু বয়স্ক মানুষদের সেবা প্রাপ্তির বিষয়টি এখনো বিশ্বে একটি সমস্যা হয়েই রয়ে গেছে। এক তরুণ চুকচি শিশু বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বয়স্ক মানুষ কোন পেনশন পায় না। আবার অনেকে এতো সামান্য অর্থ পেনশন হিসাবে পান, যা দিয়ে তাদের ভরণপোষণ চলে না। অনেক দেশে তরুণ প্রজন্মকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যে, আশা করা হয় একসময়ে তারা বয়স্কদের দেখভাল করবে। কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হওয়ার ব্যাপারটি অনেক সময় চ্যালেঞ্জ হিসাবে থেকে যায়। অনেক বছর ধরে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক বার্তা দিয়ে আসছেন যে, পেনশন ব্যবস্থায় একটি সংকট তৈরি হতে যাচ্ছে। সমস্যাটি আসলে ভৌগলিক। অর্ধশতক আগে, ধনী দেশগুলোর একটি সংস্থায় অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থাভুক্ত (ওইসিডি) দেশগুলোর গড়পড়তা ৬৫ বছর বয়সী একজন নারী আরো ১৫ বছর বেঁচে থাকার আশা করতে পারতেন। এখন তারা আশা করতে পারেন বিশ বছর। আবার এই সময়ের মধ্যে পরিবার প্রতি শিশু জন্ম হার এসব দেশে ২.৭ থেকে কমে ১.৭-এ নেমে এসেছে, অর্থাৎ নির্ভর করার মতো পরবর্তী প্রজন্মের সংখ্যা কমেছে। এর অনেকগুলি প্রভাব রয়েছে, কিছু ভালো এবং কিছু খারাপ। ১৮৮১ সালে জার্মান পার্লামেন্টকে বিসমার্ক বলেন, যাদের বয়স হয়ে গেছে বা অসুস্থ, তারা নিজেদের ব্যয় নির্বাহের জন্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে ভাতা পাবেন পেনশনের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা হলো-ভবিষ্যতে আরো অনেক বেশি মানুষ অবসর নেবে, কিন্তু তাদের সাহায্য করার জন্য নতুন করদাতাদের সংখ্যা কমে যাবে। ১৯৬০ এর দশকে একজন বয়স্ক পেনশনভোগীর বিপরীতে ১২জন করদাতা ছিলেন, এখন সেই সংখ্যা আটের নিচে। ২০৫০ সাল নাগাদ সেটি চারে নেমে আসবে। সরকারি এবং বেসরকারি- উভয় পেনশন ব্যবস্থা যেকারণে এখন ক্রমেই ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। চল্লিশ বছর আগে বেশিরভাগ আমেরিকান 'সংজ্ঞায়িত-সুবিধা' পরিকল্পনার ভেতরে ছিলেন, যার মানে হলো, আপনি নির্দিষ্ট করে জানবেন যে, অবসরগ্রহণ কালে আপনি কি কি সুবিধা পাবেন। কিন্তু বর্তমানে সেই সংখ্যা প্রতি দশজনে একজন। অর্থাৎ বেশিরভাগ সংস্থা আগের মতো সুবিধা দিচ্ছে না। নতুন ধারা হলো 'সংজ্ঞায়িত-অবদান' স্কিম, যার মানে হলো আপনি অবসরের পরে কতটা পাবেন, তার বদলে আপনি জানছেন যে, আপনার নিয়োগকর্তা আপনার পেনশন হিসাবে কতটা দেবেন। এর কারণ হলো, পেনশনের পরে সুনির্দিষ্ট সুবিধাগুলো দিতে গেলে চাকরিদাতাদের জন্য বেশি ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। মার্কিন গৃহযুদ্ধের লড়াইয়ে জেন জেনওয়ের কেসটি বিবেচনা করা যায়। তার সামরিক পেনশন অনুযায়ী তিনি মারা যাওয়ার পর তার একজন পোষ্য পেনশন সুবিধা পাওয়ার কথা। যখন তার ৮১ বছর বয়স, তখন তিনি ১৮ বয়সী এক তরুণীকে বিয়ে করেন। মার্কিন সেনাবাহিনী ২০০৩ সাল পর্যন্ত তার বিধবা স্ত্রীকে পেনশন সুবিধা দিয়েছে, যা গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার প্রায় ১৪০ বছর পর পর্যন্ত। অর্থনীতিবিদরা সামনে বিপদ দেখছেন। কারণ অনেক কর্মী অবসরে যাবেন এবং তাদের পেনশন হয়তো তাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম হবে। এ কারণে সারা বিশ্বের সরকার কর্মীদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে যেন, তারা নিজেদের জন্য আরো বেশি করে সঞ্চয় করেন। বর্তমান কর্মশক্তির ওপরে পেনশন নির্ভর করে কিন্তু দূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মানুষজনকে কাজ করানো সহজ নয়। এক জরিপে দেখা দেখে, ৫০ বছরের নীচে অর্ধেকের কম মানুষ চিন্তা করে, অবসরের পরের অর্থনৈতিক ভাবনা তাদের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় নয়। যখন কেউ প্রথম বাড়ি কেনার জন্য অর্থ সঞ্চয় করে কিংবা নতুন একটি পরিবার শুরু করে, তখন নিজের বয়স্ক ভবিষ্যৎ নিয়ে কেউ ভাবতে চায় না। হয়তো নিজেকে সেই বয়স্ক চেহারায় কেউ দেখতে চায় না। অর্থনীতিবিদরা এই সমস্যার সমাধানে একটি 'চতুর' পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। সেটি হলো কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেনশন স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করা এবং পরবর্তী বেতন বৃদ্ধি থেকে আরো বেশি করে সঞ্চয় খাতে নিয়ে যাওয়া। এই পদ্ধতি বেশ ভালো কাজ করেছে। কিন্তু সেটা মৌলিক জনসংখ্যাগত সমস্যার সমাধান করছে না। যত অর্থই সঞ্চয় করুন না কেন, বর্তমান পেনশনভোগীদের সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য তাদের বর্তমান কর্ম প্রবাহ চালু রাখতে হবে। যারা নিয়মিত কাজ করে কর দেবেন, অবসর ভোগীদের সম্পত্তি ভাড়া নেবেন অথবা পেনশন তৈরি করা কোম্পানিগুলোয় কাজ করবেন। অনেকে মনে করেন, বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন দরকার। হয়তো অবসরের চিন্তার বদলে অতীতের মতো এখন এভাবে ভাবা উচিত যে, যতদিন কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে, ততদিন কাজ করে যাওয়া। কিন্তু অতীত সমাজের ভয়াবহ রীতি আমাদের থমকে দেয়। ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোনের প্রস্তাবিত পেনশন ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রতিবাদের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন প্যারিসের অপেরা নৃত্যশিল্পীরাও প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় তখন কি বয়স্করা আমাদের কাছে আশা করবেন যে, আমরা তাদের খাবার চিবিয়ে দেবো, নাকি নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে মাথায় কুড়াল মেরে তাদের বিদায় করা হবে? কারণ আদিবাসী গোত্রগুলোর চিন্তা ছিল, বয়স্করা পরিবারে যে অবদান রেখেছে, তাদের ভরণপোষণের ব্যয় সেগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। আচের মতো আদিবাসী গোত্রের কাছে সেই খরচ অনেক, কারণ খাদ্যের সন্ধানে তাদের প্রায়ই এদিক সেদিক ভ্রমণ করতে হয়। সেই তুলনায় বর্তমান সমাজগুলো অনেক ধনী এবং ভালো অবস্থায় রয়েছে- ইচ্ছা করলে আমরা পেনশন বাড়ার খরচ বহন করতে পারবো। কিন্তু সেখানেও কিছুটা জটিলতা রয়েছে। যখন কেউ অবসরে যান, তখন তিনি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং তরুণদের দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। কিন্তু জ্ঞানের ধরণ পাল্টে গেছে- কারণ স্কুল আর উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট থাকতে কে আর দাদা-দাদীর কাছে শিখতে যায়? এতোদিন পর্যন্ত বয়স্কদের ব্যাপারে যেভাবে ভাবা হতো বা দেখা হতো, হয়তো তার পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। তবে আমরা যদি মর্যাদাপূর্ণ একটি বৃদ্ধ বয়স চাই, তাহলে সেটা নিয়ে এখনি ভাবা উচিত, সেটা পরিষ্কারভাবে বলা উচিত এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
''প্রথা অনুযায়ী বয়স্ক নারীদের আমি হত্যা করি। তারা সবাই নিহত হয়েছে এই বড় নদীর পাড়ে। কিন্তু তাদের দাফন করার জন্য আমি সেখানে অপেক্ষা করিনি। নারীরা আমাকে দেখে ভয় পেতো।''
ইফতারের খাবারের জন্য বিখ্যাত পুরনো ঢাকার চকবাজার রমজান আসার সাথে সাথেই প্রতি বিকেলে পুরনো ঢাকার চকবাজারে শুরু হয়ে যায় ইফতার বিক্রেতাদের হাক-ডাক, আর পুরো রাস্তাজুড়ে ভ্যানে-টেবিলে সাজানো থাকে শত রকমের ইফতারির খাবার। চিকেন রোস্ট, চিকেন ফ্রাই, শামি কাবাব, সুতি কাবাব, শাহি জিলাপি থেকে শুরু করে হরেক রকম খাবার মিশিয়ে 'বড় বাপের পোলায় খায়' নামের অদ্ভূত এক খাবার। কি নেই চকবাজারে! "সারাদিন রোজা রাখার পর মানুষ একটু ভাজা-পোড়া খেতেই পছন্দ করে।" রমজানে ভাজা-পোড়া খাবার বিক্রির কারণ হিসেবে বললেন চকবাজারের আমানিয়া হোটেলের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ হানিফ। মি. হানিফের কথা অবশ্য ভুল নয়। শুধু পুরনো ঢাকার মানুষেরা না, এই এলাকার বাইরে থেকেও মানুষজন চকবাজার থেকে ইফতারি কিনে নিয়ে যান। পুরো মাসে সম্ভব না হলেও, মাসে অন্তত একদিন চকবাজার থেকে ইফতার কিনে বাসায় ফেরেন। ভাজা-পোড়া এবং চর্বিজাতীয় খাবার ইফতারির খাদ্যতালিকায় বেশি জনপ্রিয় তবে চকবাজারের বাইরেও যেখানেই ইফতারির খাবার কিনতে যান না কেন, সেখানেই পাবেন তেলে ভাজা পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ কিংবা জিলিপি। কিন্তু সারাদিন না খেয়ে থাকার পর এধরণের খাবার স্বাস্থ্যের ওপর কি প্রভাব ফেলে? "তেলটা যদি খারাপ হয় তাহলে এসিডিটি থেকে শুরু করে ডায়রিয়া পর্যন্ত হতে পারে। প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যদি বেশি পোড়ানো হয় তাহলে সেটি আর পরিপাক হয় না।" বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য এবং পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মাওলা। তবে শুধুমাত্র দোকানের ইফতারি নয়, রমজানে বাসায় বানানো ইফতারিতেও থাকে ভাজা-পোড়ার প্রাধান্য। ঢাকার একজন গৃহিনী আফরোজা শিল্পী বলেন, তার বাসায় ইফতারের মূল খাবার হিসেবে থাকে ভাজা ছোলা, পেঁয়াজু এবং বেগুনী। যদিও এর বাইরে শরবত এবং ফলমূলও থাকে কিন্তু তার তিন শিশুসন্তানের কথা চিন্তা করে পেঁয়াজু-বেগুনির মতো কিছু খাবার বানাতেই হয়। "এসব খাবারতো আমরা রোজার সময়ই খাই।" মায়ের কথায় সায় দিয়ে বললো কন্যা নিঝুম। ভাজা-পোড়া বাচ্চারা পছন্দ করবেই। তবে বড়রাও যে পছন্দ করে না তা নয়। বাসার ইফতারেও প্রাধান্য থাকে ভাজা-পোড়ার অধ্যাপক মাওলা বলছিলেন, ইফতারের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, শরীরে যেন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অভাব না হয়। আর সেজন্যে একটি সুষম খাদ্যতালিকা তৈরি করতে হবে। "আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালরি আসতে হবে সুষমভাবে। আমিষ, চর্বি এবং শর্করা সবগুলো থেকেই আসতে হবে।" "ইফতারে চিকেন স্যুপ খাওয়া যায়, তবে নন-স্পাইসি। কিছু সব্জি রাখতে হবে, ফল-মূল রাখতে হবে। দধিটা শরীরের জন্য খুবই ভাল কারণ এতে প্রোটিন থাকে এবং পরিপাকেও সাহায্য করে। এমন খাবার খেতে হবে যা সহজে হজম হয়।" বলেন অধ্যাপক মাওলা। বাংলাদেশে ইফতারের এই ভাজা-পোড়া খাবারগুলো কোথা থেকে এলো? সঠিকভাবে কেউ না বলতে পারলেও চকবাজারের শতবর্ষ পুরনো খাবার দোকান, আলাউদ্দিন সুইটমিটের মোহাম্মদ আমিরুদ্দিন বলেন, প্রায় পাঁচ প্রজন্ম আগে তার পূর্বপুরুষেরা এসেছিলেন ভারতের লক্ষ্ণৌ থেকে। তখন থেকেই তারা পুরনো ঢাকায় ইফতারের জন্য এধরণের খাবার বানিয়ে আসছেন। "ব্রিটিশ আমল থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষেরা এভাবেই খাওয়া-দাওয়া তৈরি করতো। সেই ঐতিহ্যই আমরা ধরে রেখেছি।" বলেন মি. আমিরুদ্দিন। তবে ইফতারের প্লেটে যাই থাকুক না কেন, পুষ্টিবিদদের মতে ইফতারিতে একটি উপাদান সেখানে অবশ্যই থাকতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে থাকতে হবে। সেই উপাদান হচ্ছে পানি। 'ইফতারে শরীরের পানিশূণ্যতা অবশ্যই পূরণ করতে হবে' বলেন অধ্যাপক গোলাম মাওলা অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলেন, সারাদিন রোজা রাখার ফলে শরীরে যে পানিশূণ্যতার তৈরি হয়, তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, শরবত, ফলের রস, পানির সাথে গুড় মিশিয়ে কিংবা অন্য যে কোন পানিসমৃদ্ধ খাবার খেয়ে শরীরের পানিশূণ্যতা পূরণ করা যায়। এদিকে গত কয়েক বছরে ইফতারের পাশাপাশি সেহরিতেও বাইরে খাওয়ার একটি প্রচলন হয়েছে। ভোররাতেও শখ করে অনেকে ভিড় করেন শহরের রেস্তোরাগুলোয়। যদিও এ সংখ্যা এখনো খুব বেশি নয়। পুষ্টিবিদ অধ্যাপক মাওলা বলেন, সেহরিতে এমন খাবার খেতে হবে যেটি অনেক্ষন পেটে থাকবে। "চিড়া-দধিটা ভোররাতের জন্য খুব ভালো খাবার। এর আগে মাছ-মাংস এবং সব্জি খাওয়া যায়। ভোররাতে এর বেশি খাবার দরকার নেই।" মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়লেও শুধু স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ইফতারে ভাজা-পোড়া খাওয়া একদম বাদ দিয়ে দেবে এমন মানুষ মনে হয় খুজে পাওয়া দুষ্কর। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, পুরোপুরি বাদ দেয়ার প্রয়োজন নেই, তবে খাওয়া উচিত পরিমিতি বজায় রেখে। রমজানের মূল নীতিতেও আছে যেই সংযমের কথা।
বছর ঘুরে আবারো চলে এসেছে রমজান মাস।
'শোন একটি মুজিবরের থেকে'- গানটির পেছনের কথা প্রায় হলুদ হয়ে যাওয়া পাতায় কালচে-নীল রঙের কালিতে ইংরেজিতে লেখা তারিখটায় লেখক দুবার কলম বুলিয়েছিলেন। গোটা গোটা অক্ষরে নিজের হাতেই গানটা লিখেছিলেন অংশুমান রায়। তাই ১৩ না ১৫, সেটা নিয়ে একটু ধোঁয়াশা রয়েছে। তারিখটা যাই হোক, সেই দিন আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে রাতে 'সংবাদ পরিক্রমা'য় বাজানো হয়েছিল একটি গান। পুরো গানটা একবারে বাজানো হয় নি অবশ্য। একটি ভাষণের মাঝে মাঝে বেজেছিল গানটি। ভাষণটা ছিল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ। আর গানটা ছিল ''শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রনি.. বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।'' কালো শক্ত মলাটের খাতাটার পাতাগুলো হলুদ হয়ে এসেছে। অনেক পাতাই আলগা হয়ে গেছে খাতা থেকে। "এটাই আমার বাবার সেই সময়কার গানের খাতা," একটা একটা করে পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বলছিলেন ভাস্কর রায়। তিনি থামলেন ১৪৭ নম্বর পাতায় এসে। বাবার গানের খাতার পাতা ওল্টাচ্ছেন ভাস্কর রায়। গোটা গোটা অক্ষরে নিজের হাতেই গানটা লিখেছিলেন অংশুমান রায়। একেবারে নীচে, বাঁদিকে লেখা আকাশবাণী থেকে প্রচারের দিন: দুবার কলম বোলানোর ফলে যে দিনটা ১৩ হতে পারে, আবার ১৫-ও হতে পারে। "তারিখটা যাই হোক, যেদিন রেডিওতে গানটা বেজেছিল বঙ্গবন্ধুর ওই ঐতিহাসিক ভাষণের মাঝে মাঝে, সেদিন সকালেই গানটা লেখা আর সুর করা হয়েছিল," জানাচ্ছিলেন অংশুমান রায়ের বড় ছেলে ভাস্কর রায়, যিনি নিজেও একজন লোকসঙ্গীত শিল্পী। তিনি আরো বলছিলেন: "গানটা লেখা আর সুর করা হয়েছিল যেভাবে, সেটাও একটা গল্প।" কলকাতার দক্ষিণে যে গড়িয়া এলাকা, সেটা তখনও এখনকার মতো শহরের চৌহদ্দিতে ঢুকে পড়েনি। ওই শহরতলি অঞ্চলের বেশির ভাগটাতেই গড়ে উঠেছে ১৯৪৭ এর দেশভাগের পরে পূর্ববঙ্গ থেকে চলে আসা উদ্বাস্তুদের কলোনি। রামগড়েরর পদ্মশ্রী সিনেমা হলের কাছেই একটা চায়ের দোকানে নিয়মিত আড্ডা বসত ওই অঞ্চলেরই বাসিন্দা কয়েকজন গীতিকার, সুরকার আর গায়কেরা। আরো পড়ুন: ইউনেস্কোর তালিকায় ৭ই মার্চের ভাষণ ৭ই মার্চের ভাষণ: যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন শেখ মুজিব বাঁ দিক থেকে: অংশুমান রায়, শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, অমিতাভ নাহা, দিনেন্দ্র চৌধুরী। "বাবা, গৌরীজেঠু (গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার), দিনেন জেঠু (দিনেন্দ্র চৌধুরী) এরা সকলেই নিয়মিত আড্ডা মারতেন। হয়তো সকালে বাজারে বেরলেন বাবা, চায়ের দোকানে আড্ডা মেরে বাজার করে তারপর বাড়ি ফিরলেন।" "আবার কখনও আমাদের বাড়িতে বা গৌরীজেঠুর বাড়িতেও আড্ডা মারতেন সবাই। ৭১ সালের যে দিনটার কথা বলছি, সেদিনও ওই চায়ের দোকানে আড্ডা বসেছে। বাবা, গৌরীজেঠু, দিনেন জেঠুরা তো ছিলেনই, এসেছিলেন উপেন জেঠুও (উপেন তরফদার)," বাবার কাছ থেকে সেদিনের ঘটনা যেভাবে শুনেছিলেন, সেটাই বলছিলেন ভাস্কর রায়। সেদিনের আড্ডায় যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার প্রখ্যাত গীতিকার। দিনেন্দ্র চৌধুরী ছিলেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসঙ্গীতের অধ্যাপক এবং সেই সময়ের একজন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিক্ষক। উপেন তরফদার ছিলেন আকাশবাণীর প্রযোজক। পুরনো দিনে যে স্পুল টেপ রেকর্ডার ছিল, সেই একটা নিয়ে এসেছিলেন। তাতে শেখ মুজিবর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণটা ওই আড্ডাতেই শুনিয়েছিলেন আকাশবাণী থেকে কেন্দ্র অধিকর্তা হিসাবে অবসর নেওয়া মি. তরফদার। ভাস্কর রায়ের কথায়, "ওই ভাষণ আর ওপার বাংলার পরিস্থিতি নিয়েই কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু গৌরী জেঠু একটু অনমনস্ক ছিলেন সেদিন। উনি আর আমার বাবা চারমিনার সিগারেট খেতেন।" "প্যাকেটের ভেতরে একদিকে সাদা যে কাগজটা থাকে, সেই কাগজটা বার করে গৌরী জেঠু কিছু একটা লিখতে থাকেন। মাঝে মাঝে টুকটাক কথাবার্তাও বলছিলেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি বাবা আর দিনেন জেঠুর হাতে ওই সিগারেটের প্যাকেটের কাগজটা দিয়ে বলেন দেখ তো চলবে কীনা এটা।" অংশুমান রায় ওটা পড়েই বলে উঠেছিলেন - "গৌরীদা এটা আপনি আর কাউকে দিতে পারবেন না। এটা আমি সুর করব, আমি গাইব।" গানটি 'হিন্দুস্তান রেকর্ড'-এর স্টুডিওতে রেকর্ড করা হয়, ৪৫ আর পি এমের রেকর্ডটির একদিকে ছিল শোন একটি মুজিবরের থেকে গানটি। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুধু হারমোনিয়াম দিয়ে গানটার সুর বেঁধে ফেলেছিলেন অংশুমান রায়। "উপেন জেঠু ওই স্পুল রেকর্ডারেই গানটা রেকর্ড করে নিয়েছিলেন। সেটা আকাশবাণীর আর্কাইভে রয়েছে। আমি শুনেছি সেটা," বলছিলেন অংশুমান রায়ের ছেলে। "বাবার গলা, হারমোনিয়াম আর তালবাদ্য বলতে একটা শক্ত মলাটের গানের খাতায় দিনেন জেঠুর তাল ঠোকা। সংবাদ পরিক্রমা যতটা সময় ধরে হত, বঙ্গবন্ধুর ভাষণটা তার থেকে কিছুটা ছোট ছিল।" "তাই প্রযোজক হিসাবে উপেন জেঠু ঠিক করেন যে ভাষণের মাঝে মাঝে বাবার গাওয়া গানটা বাজানো হবে। এটা প্রণবেশ জেঠুও লিখে গেছেন। ওইভাবেই গানটা বেজেছিল সেই রাতে," জানাচ্ছিলেন ভাস্কর রায়। আকাশবাণী কলকাতা থেকে যে ''সংবাদ পরিক্রমা'' অনুষ্ঠানটি হত সেই সময়ে (এখনও প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি, কিন্তু ৭১ এর যুদ্ধের আগে পরে ওই অনুষ্ঠানটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল), প্রণবেশ সেন ছিলেন তারই লেখক। সেই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করতেন দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। পরের দিন রোজকার মতোই বাজারে গিয়েছিলেন অংশুমান রায়। ফেরার পথে সেই চায়ের দোকানে ঢুকতেই অনেকে মিলে জড়িয়ে ধরেন তাঁকে। গোটা গোটা অক্ষরে নিজের হাতেই গানটা লিখেছিলেন অংশুমান রায়। আবার সেদিন অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয়ে যাওয়ার পরের দিন যখন উপেন তরফদার আকাশবাণী দপ্তরে ঢুকেছেন, তখন তার ডাক পড়ে কেন্দ্র অধিকর্তার ঘরে। "আমাদের বাড়িতে অনেক পরে একটা আড্ডায় উপেন জেঠু বলেছিলেন যে তিনি সরাসরি অধিকর্তার ডাক পেয়ে একটু বোধহয় ঘাবড়িয়ে গিয়েছিলেন। ঘরে ঢুকে তিনি দেখেন আরও অনেকে সেখানে উপস্থিত। কয়েক মুহূর্ত পরে সবাই বলে ওঠেন এটা আপনি কী করেছেন জানেন?" "উপেন জেঠু বোধহয় তখনও ভাবছিলেন যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মাঝে মাঝে বাবার গাওয়া ওই গানটা বাজিয়ে বোধহয় তিনি অন্যায় করে ফেলেছেন। তবে তার ভুলটা ভাঙ্গতে সময় লেগেছিল কয়েক সেকেন্ড। সবাই বলেন যে ঐতিহাসিক একটা অনুষ্ঠান করে ফেলেছেন আগের রাতে," বলছিলেন ভাস্কর রায়। পর পর বেশ কয়েকবার ওই গান আর শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণটা সম্প্রচারিত হয় ওই রাতেই। আর এপ্রিল মাসের ২২ তারিখ গানটি 'হিন্দুস্তান রেকর্ড'-এর স্টুডিওতে রেকর্ড করা হয়। ৪৫ আর পি এমের রেকর্ডটির একদিকে ছিল 'শোন একটি মুজিবরের থেকে' গানটি। গানের সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন দিনেন্দ্র চৌধুরী। ওই গানের একটা ইংরেজি অনুবাদও হয়েছিল: A Milliion Mujiburs Singing নামে। রেকর্ডের একপিঠে ছিল বাংলা আর উল্টোপিঠে ওই একই দিনে রেকর্ড করা হয় ইংরেজি অনুবাদটিও। অংশুমান রায়ের সঙ্গে ইংরেজিতে গেয়েছিলেন করবী নাথ। বিশেষ 'সংবাদ পরিক্রমা'র রেকর্ডিং যেটি অংশুমান রায় আকাশবাণী থেকে এনেছিলেন শেখ মুজিবর রহমানকে দেওয়ার জন্য। মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই নানা জায়গায় বলেছেন বা লিখেছেন যে আকাশবাণীর কলকাতা কেন্দ্র থেকে যখনই এই গানটা বাজানো হত, তখনই নতুন করে লড়াইতে উদ্বুদ্ধ হতেন তারা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব কলকাতার বেশ কয়েকজন বেতার কর্মী এবং গায়ককে স্বর্ণপদক দিয়ে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, প্রণবেশ সেন আর অংশুমান রায়। পদক নিতে যাওয়ার কদিন আগে, কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-রাষ্ট্র দূতাবাসে একটি ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন উপ-রাষ্ট্রদূত। শনিবার, ১৯ জুলাই, ১৯৭৫ সন্ধ্যা সাতটা থেকে সেই ভোজসভা ছিল। "কিন্তু যেদিন বঙ্গবন্ধু পদকটা পাওয়ার কথা, তার আগে ১৫ই অগাস্ট তো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হল। সেই ইতিহাস সবাই জানি। বাবা কখনও আর বাংলাদেশে যেতে পারেন নি। পাসপোর্ট করানো ছিল যদিও।" অংশুমান রায়ের মৃত্যুর আগে শেষ অনুষ্ঠানে - সঙ্গে পুত্র ভাস্কর রায়। "বাবা ৯০ সালে চলে গেলেন। কিন্তু এই একটা ইচ্ছা পূরণ হয়নি তাঁর। আমাকে তার পুত্র হিসাবে ময়মনসিংহে একটা অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয় ২০১০ সালে। আমি সেই প্রথমবার বাংলাদেশে যাই। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নিয়ে গিয়েছিল আমাকে," বলছিলেন ভাস্কর রায়। তার কথায়, "জাতীয় সঙ্গীতের পরেই আমার বাবার গাওয়া ওই গানটা গাওয়া হয়েছিল। আমাকে বলা হয়েছিল বাবার গাওয়া ওই গানটাকে বাংলাদেশের মানুষ এতটাই শ্রদ্ধা করেন যে জাতীয় সঙ্গীতের পরেই এটা গাওয়া হয় অনেক জায়গায়।" "অনুষ্ঠানটার কথা ভাবলে এখনও আবেগে আমার গলা বুজে আসে কান্নায়। ওই আবেগ থেকেই বোধহয় সেদিন বলে ফেলেছিলাম যে বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে স্বর্ণপদক না নিতে পারার জন্য বাবার আক্ষেপের কথাটা। পরের দিন সেটা কাগজে বেরিয়েছিল।" মি. রায় জানান, "তার বেশ কিছুদিন পরে আমাকে জানানো হয় যে মুক্তিযুদ্ধের মৈত্রী সম্মাননা দেওয়া হবে বাবাকে - প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর মরণোত্তর সম্মানটা নিতে আমাকে যেতে হবে। এ এক অদ্ভুত সমাপতন।" "তার বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পদক দেওয়ার, কন্যা দেশনেত্রী হয়ে সেই সম্মান জানাচ্ছেন আর আমি বাবার হয়ে সেই সম্মানটা নিতে যাব!" বলছিলেন অংশুমান রায়ের ছেলে। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: বাংলাদেশে 'রোগা বঙ্গবন্ধু' খুঁজছেন শ্যাম বেনেগাল শেখ মুজিব হত্যার পর জেনারেল জিয়া যে মন্তব্য করেছিলেন শেখ মুজিব হত্যার পর ৩২নং রোডের বাড়ী কেমন ছিল?
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস। তারিখটা ১৩ অথবা ১৫।
১৫ ই সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম বৈঠক তবে ইশতেহারের কাজ এগিয়ে গেলেও নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোন আলোচনাই শুরু হয়নি শরীক দলগুলোর মধ্যে। আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের শরীক দুটি দলের নেতা জানিয়েছেন, সিট বণ্টনসহ মহাজোটের বেশ কিছু নির্বাচনী পরিকল্পনা আটকে আছে বিএনপি নির্বাচনে আসবে নাকি আসবে না তার উপর। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে এখন ঠিক কী পরিকল্পনায় এগুচ্ছে মহাজোট? ইশতেহারেই বা ভোটার টানার মতো নতুন কী প্রতিশ্রুতি থাকবে? ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে একটানা দুই মেয়াদে প্রায় ১০ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। প্রথম মেয়াদে মহাজোট ক্ষমতায় আসার আগে দিনবদলের একগাদা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। দশ বছরে সেসব প্রতিশ্রুতির কতটা পূরণ হয়েছে? ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে কথা হয় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাথী জিন্নাতের সঙ্গে। গত ১০ বছরে মহাজোটের শাসন নিয়ে একরকম সন্তুষ্টিই প্রকাশ পেলো তার বক্তব্যে। "সরকার তো প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের বিচার করেছে এবং করছে। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুসহ রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নেও কাজ হচ্ছে। তবে কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার মান বাড়ানোর দিকে আরো নজর দেয়ার দরকার ছিলো," বলছিলেন খাদিজা আক্তার। তবে লামিয়া হাসান নামে আরেক জন একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তিনি বলছিলেন, "সরকার আসলে উন্নয়নের একটা মিথের মধ্যে আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেন আর অবকাঠামো উন্নয়ন বলেন, এগুলো তো যুগের চাহিদা। যে সরকারই আসুক এগুলো করতেই হতো। কিন্তু আসল জায়গায় কী হচ্ছে? দেশে কি আইনের শাসন আছে? মানুষ তো এখনো পুলিশের কাছে যেতে ভয় পায়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যেভাবে দমন করা হলো, সেটা তো ঠিক হয়নি।" এ বছরের শেষ নাগাদ অনুষ্ঠিত হতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে সাধারণ মানুষের কারো কারো হয়তো প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আবার অনেকের মধ্যে ক্ষোভও দেখা যাচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন আকাংখা ও নতুন প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আসছে নির্বাচনে নতুন কী প্রস্তাবনা ভোটারদের সামনে হাজির করবে আওয়ামী লীগ? আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলছিলেন, "২০০৮ সালে আমরা ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এখন সেসব উন্নয়ন দৃশ্যমাণ। আমার বিশ্বাস জনগন ভোটের সময় এগুলো অবশ্যই বিবেচনা করবেন।" "আমরা এখন উন্নয়নের স্বর্ণদুয়ারে প্রবেশ করেছি। এটা অব্যাহত রাখার বিষয় আছে। আমরা বলছি, ২০৩১ সালের মধ্যে দেশ হবে দারিদ্রমুক্ত। ২০৪১ সালে দেশ হবে সমৃদ্ধশালী।" মি. রাজ্জাক বলছেন, তার ভাষায় দেশের চেহারা বদলে দিতে খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ ১০টি খাতে আরো ব্যাপক উন্নয়নের বিশদ প্রস্তাবনা তারা নাগরিকদের কাছে তুলে ধরবেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, উন্নয়ন অব্যাহত রাখার স্বার্থেই সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। আরো পড়তে পারেন: উঁচুপদের সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সুপারিশ বাঙালী শরণার্থীরা নাগরিকত্ব পাবেন: ইমরান খান অস্ট্রেলিয়ায় স্ট্রবেরির ভেতরে সুঁচ ঢোকাচ্ছে কে কিন্তু এসব প্রস্তাব ২০০৮ সালের মতো তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে কতটা ভূমিকা রাখবে? বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক বা কোটা সংস্কার নিয়ে তরুণদের একটা বড় অংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভ আর তা দমনে সরকারের কঠোর মনোভাবের পর তরুণরা কি ব্যাপকভাবে মহাজোটকে সমর্থন করতে পারে? মহাজোটের শরীক বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন অবশ্য মনে করছেন, নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের পক্ষেই পাবেন তারা। "বাংলাদেশে মোট ভোটারের প্রায় ১৫% তরুণ। সুতরাং তরুণদের গুরুত্ব দিতেই হবে। তরুণদের ক্ষোভের পেছনে মূল কারণটা কী? সেটা হচ্ছে কর্মসংস্থান। আমরা এটার ব্যবস্থা করবো। এছাড়া কোটা সংস্কারের বিষয়টিও আশা করছি নির্বাচনের আগেই সমাধান হয়ে যাবে।" এদিকে ইশতেহার তৈরির সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও গুছিয়ে আনছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু মহাজোটের শরীক দলগুলোর মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা কতদূর? মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলছেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে মহাজোটের মধ্যে এখনো আনুষ্ঠানিক কোন আলোচনা শুরুই হয়নি। কিন্তু কেন? জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলছেন, মহাজোট থাকলে আওয়ামী লীগের কাছে ১শ আসন চাইবে জাতীয় পার্টি। মি. কাদের বলছিলেন, "জাতীয় পার্টি মহাজোটের কাছে একশ'টি আসন চাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ে আলোচনা শুরু হচ্ছে না। কারণ বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি। বিএনপি নির্বাচনে না আসলে সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে বেরিয়ে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। আমরা সে প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছি।" তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি-না, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা এখনো দেয়া হয়নি দলটির পক্ষ থেকে। অন্যদিকে এরই মধ্যে মহাজোটের বিপক্ষে কয়েকটি ছোট দলের একটি বৃহত্তর বিরোধী জোটও গঠন হয়েছে। সেখানে বিএনপির যুক্ত হওয়া নিয়েও চলছে নানান আলোচনা। যদিও একে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। "কয়েকটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল জোট করেছে। ভোটের মাঠে তাদের গুরুত্ব কতটুকু সেটা আমরা বিশ্লেষণ করছি। ভোটের মাঠে আমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি। বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে তাহলে সেটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।'' ''আমরা আশা করবো তারা নির্বাচনে আসবে। যদি বিএনপি ভোটে অংশ না নেয় তাহলে আমার বিশ্বাস বিএনপি থেকে একটা বড় অংশ ভিন্ন নামে অথবা অন্য কোনভাবে নির্বাচনে আসবে," বলছিলেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগ বলছে, নতুন কয়েকটি দলের সমন্বয়ে মহাজোটের আকার বৃদ্ধি করতে দলের মধ্যে কিছু পরিকল্পনা আছে। তবে বিএনপি ভোট বর্জন করলে মহাজোটে দলের সংখ্যা না বাড়িয়ে সেই দলগুলোকে আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরামর্শ দেবে আওয়ামী লীগ।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে 'দিনবদলে'র নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলো, মনে করা হয় সে সময় ভোটার টানতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলো সেই ইশতেহার। দলটি বলছে, এবারও মহাজোটকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন ধরে রাখার বিশদ পরিকল্পনাসহ একটি ইশতেহার তৈরির কাজ শেষ করে আনছেন তারা।
সৌদি আরবের একটি তেল স্থাপনা সৌদি আয়ের ৭০% আসে জ্বালানি তেল থেকে। তবে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই সংস্কার পরিকল্পনার একটি অংশ হচ্ছে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত তেল সংস্থা আরামকো`র শেয়ার বিক্রি করে একটি আর্থিক তহবিল গড়ে তোলা। এই পরিকল্পনা সম্পর্কে ঘোষণা করতে গিয়ে উপ-যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মন্তব্য করেন তার দেশ তেল সম্পর্কে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সৌদি নিউজ চ্যানেল আল-আরাবিয়াকে ভিশন-২০৩০ সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে তার দেশের তেলের ওপর নির্ভরশীলতার অবসান ঘটবে। * সৌদি সংস্কার পরিকল্পনায় যা থাকছে:
সৌদি আরবের মন্ত্রিসভা ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারের এক প্রস্তাব অনুমোদন করেছে যার মধ্য দিয়ে তেল বিক্রির ওপর দেশটির নির্ভরশীলতার অবসান ঘটবে।
ভাইরাস সংক্রমণ রোধে পদক্ষেপ নেয়ার পরও জনসমাগম করে কলকারখানা শ্রমিকদের ঢাকা ছাড়া এবং পরে আবার ঢাকায় ফেরত আসার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মানুষ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এপ্রিল মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একদিকে যেমন সামাজিক সংক্রমণ দেখা দিতে শুরু করেছে, তেমনি সেটা ঠেকিয়ে রাখার জন্য ছুটি লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তারপরেও রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে হবে। পাঁচই এপ্রিল আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান সংক্রমণের তৃতীয় স্তরে প্রবেশে করেছে বাংলাদেশ। কারণ ঢাকার টোলারবাগ ও বাসাবো, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর (শিবচর), গাইবান্ধা (সাদুল্লাপুর)-এসব এলাকায় 'ক্লাস্টার' বা গুচ্ছ আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে মার্চ মাসের শেষের দিকে তিনি জানিয়েছিলেন, সীমিত আকারে কমিউনিটিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বলে তারা দেখতে পাচ্ছেন। ঢাকার বাইরের অনেকগুলো জেলাতেও করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ রয়েছে। বুধবার আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ এখন সংক্রমণের দিক থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের মাঝামাঝিতে রয়েছে। ভাইরাসটি কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়লেও সেটা এখনো ক্লাস্টার আকারে রয়েছে। সংক্রমণের প্রথম স্তর বলা হয়ে থাকে যখন দেশে কোন রোগী শনাক্ত না হয়। দ্বিতীয় স্তর বলা হয়, যখন বিদেশ ফেরতদের মাধ্যমে রোগী শনাক্ত হয়। তৃতীয় স্তর হচ্ছে সীমিত আকারে সমাজে রোগটি ছড়িয়ে পড়া। কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি? 'ক্রিটিক্যাল' এপ্রিল বার্তা সংস্থা বাসসের খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: "করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী প্রলয় সৃষ্টি করেছে। সারাবিশ্বে যেভাবে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের এখানেও বৃদ্ধি পাওয়ার একটা ট্রেন্ড আছে। তাতে আমাদের সময়টা এসে গেছে, এপ্রিল মাসটা। এই সময় আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে।" এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশে নতুন করে ৫৪ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৪১ জন। তার আগের দিন ছিল ৩৫ জন। গতকালও (৮ই এপ্রিল) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের দিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল পাঁচজন। দেশটিতে বুধবার পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০ জন। সামাজিক সংক্রমণ এড়াতে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার ভেতরেও বেশ কয়েকটি এলাকা লকডাউন বলে ঘোষণা করা হয়। লকডাউন করা এসব এলাকায় কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারবেন না। বুধবার থেকে লকডাউন করা হয়েছে কক্সবাজার জেলাকেও। মানুষের ঘরে থাকা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে রাস্তায় রয়েছে সেনাবাহিনীও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব এলাকায় একাধিক রোগী শনাক্ত হওয়ায় সংক্রমণ ঠেকাতে এসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ২৬শে মার্চ থেকে যে সাধারণ ছুটি শুরু হয়েছিল, তা বাড়ানো হয়েছে এপ্রিলের ১৪ তারিখ পর্যন্ত। এ সময় সবরকম যানবাহন, নৌযান, বিমান ও রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। মানুষজনের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনীও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিবিসিকে বলছেন, "করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের এই এপ্রিল মাসটা খুব ক্রিটিক্যাল।" তিনি বলছেন, "ঢাকা শহরেই বেশিরভাগ পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জেও বেশ কিছু রোগী পাওয়া গেছে। এরকম যেসব স্থানে বেশি রোগী পাওয়া গেছে, সেসব এলাকা লকডাউন করে রোগটি সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা যদি ঠিকভাবে করা যায় তাহলে আমরা বেঁচে যাবো।" "করোনাভাইরাস কন্ট্রোল করতে হলে সেটা এই এপ্রিল মাসের মধ্যেই করতে হবে। এর চেয়ে বেশি সময় দেয়া যাবে না। আমরা যদি সেটা করতে না পারি, ব্যর্থ হই, তাহলে অবস্থা খুব খারাপ হবে। তখন লম্বা সময় ধরে আমাদের করোনাভাইরাস পুষতে হবে। তাই এই এপ্রিল মাসটা খুব ক্রিটিক্যাল।" তিনি বলছেন, এখন সবকিছু বন্ধ রয়েছে, সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও যদি রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, তাহলে পরে আর নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, যে হারে রোগী শনাক্ত হচ্ছে, সংক্রমণের যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এক কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (ব্যাপক জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণ) বলতে বাধা নেই। মসজিদে নামাজ পড়ার বিষয়েও আরোপ করা হয়েছে বাধ্যবাধকতা রোগী আরো বাড়ার আশঙ্কা বাংলাদেশের মতো আর্থিক অবস্থার দেশ ভারতে চার সপ্তাহের পর থেকে রোগী বাড়তে শুরু করে। তবে বাংলাদেশে যেখানে ১৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হতেই একমাস লেগে যায়, ভারতে সেটি করা হয় ৬২টি কেন্দ্রে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুন্সী বলছেন, "আমরা ৩০ দিনের দিনে যে অবস্থায় আছি, ব্রাজিল ১৫ দিনের দিন সেই অবস্থায় ছিল। মানে একশো দেড়শ রোগী শনাক্ত করার হচ্ছিল। আর ভারতেও এরকম ছিল ৪৫তম দিনের দিন।" "ব্রাজিলে সেই অবস্থা থেকে আজ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার। আর ভারতে রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজারের কাছাকাছি। সুতরাং ভারতের সাথেও তুলনা করলে বোঝা যায়, আমাদের রোগীর সংখ্যা আগামী কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো কয়েক হাজারে পৌঁছে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।" চীন, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসব দেশে প্রথম দিকে করোনাভাইরাসে যে হারে রোগী শনাক্ত হয়েছে, চার সপ্তাহের পরপর পরিস্থিতির রাতারাতি অবনতি হয়েছে। রোগী সংক্রমণ ও মৃত্যু হারও অনেক বেড়ে গেছে। "পার্শ্ববর্তী দেশ হিসাবে - একই রকমের ভৌগলিক ও পরিবেশ, আচরণ অবস্থা বিবেচনায় - ভারতের সাথে তুলনা করলে, তাদের মতো ট্রেন্ড আমাদের এখানেও দেখা দিতে পারে", বলছেন অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুন্সী। তিনি সংশয় প্রকাশ করেন যে, সেরকম পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুতির এখনো অনেক ঘাটতি আছে। "পরীক্ষা নিরীক্ষা যদি আমরা পূরণ করতেও পারি, পেশেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারটি নিয়ে - ঘাটতি যদি নাও বলি - এখনো আমাদের চিন্তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। কতটি ভেন্টিলেটর, কতটি আইসিইউ, কতটি হাসপাতাল অক্সিজেন থেরাপির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আছে, সেটা জানা গেলে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তুতি বোঝা যাবে।" "কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে চিকিৎসক বলেন, আইসিইউ বলেন, অক্সিজেন থেরাপি বলেন, এগুলো আসলে শেষ অস্ত্র। আমাদের প্রধান অস্ত্র হচ্ছে লকডাউন। সেটা আমরা যতভাবে করতে পারবো, স্বাস্থ্যখাতের ওপর ততোই কম চাপ পড়বে।" অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছেন, "রোগী বাড়ার সম্ভাবনা যেহেতু আছে, তাই পেশেন্ট ম্যানেজমেন্টের ওপর জোর দেয়ার উচিত। শুধু করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেবার ব্যাপারে বিশেষ জোর দিতে হবে।" বিশেষজ্ঞরা মনে করেন পরিস্থিতির অবনতি হলে তা সামলাতে প্রস্তুতির এখনো অনেক ঘাটতি আছে আরও সমন্বয় দরকার রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক বেনজীর আহমেদ বলছেন, এখন যে রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা কাদের সঙ্গে মিশেছেন, কোথায় কোথায় গেছেন, কি করেছেন, তাদের বাড়িতে কে এসেছেন, কোন দোকানে গেছেন, সেগুলো বিশ্লেষণ করা, সেগুলো জানা দরকার।" "এজন্য স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে নিয়ে টিম গঠন করা দরকার। সেই ঝুঁকি কমাতে কি ব্যবস্থা নেয়া দরকার, কাদের কোয়ারেন্টিন করতে হবে, সেগুলো ব্যবস্থা নেয়া দরকার।" তিনি বলছেন, রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে লকডাউনের পাশাপাশি এসব দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এর ফলে সংক্রমণের হারটা কমানো যাচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয় এখনো অনেক ঘাটতি রয়েছে বলে তিনি বলছেন। তিনি বলছেন, যারা শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের ঠিকভাবে চিকিৎসা করা, সংক্রমিতদের সীমাবদ্ধ করে রাখার বিষয়টি জরুরি। যারা হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন, নমুনা সংগ্রহ করছেন, তাদের প্রশিক্ষণ সুরক্ষার ব্যাপারগুলো নিশ্চিত করা জরুরি। না হলে হাসপাতালগুলো বা চিকিৎসকরা সংক্রমিত হতে শুরু করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য অনেক হুমকি তৈরি করবে। সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ দেয়ার পরও বাংলাদেশে খোলা রাখা হয়েছে কিছু গার্মেন্টস তৃতীয় আর চতুর্থ স্তরের মাঝামাঝি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, "এখনো বাংলাদেশে কোভিড-১৯ বিস্তার ক্লাস্টার আকারে (ছোট ছোট গ্রুপের মধ্যে) রয়েছে। সেটা কমিউনিটি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বলবো না। তবে কিছু কিছু রোগী আমরা পাচ্ছি, যাদের সংক্রমণের উৎস শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।" "আমরা আসলে এটা ট্রান্সজিশন পিরিয়ডের ভেতরে রয়েছি। তৃতীয় স্তর থেকে চতুর্থ স্তরে (যখন ব্যাপক মানুষের মধ্যে সংক্রমণ দেখা দেয়) যারা লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সর্বোচ্চ স্তরে চলে গেছি সেটি আমি বলবো না।" তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ সবচেয়ে জরুরি। তারা যদি নিয়মকানুন মেনে বিচ্ছিন্ন থাকেন,ঘরে থাকেন, তাহলেই এটা রোধ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে কোভিড-১৯ পরীক্ষা বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।
জার্মানির ভলোকপ্টার কোম্পানি তাদের ভলোসিটি মডেলের বিদ্যুতশক্তি চালিত উড়ন্ত ট্যাক্সিকে প্রথম বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স দিয়েছে আসলেই তার পর থেকে প্রযুক্তি যেভাবে দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে হয়ত হলিউডের ছবি নির্মাতারা তা তখন কল্পনাও করতে পারেননি। আকাশে উড়তে পারে তাদের কল্পনার এমন অনেক যানবাহন এখনও রূপালি পর্দায় দেখা কল্পলোকের জিনিস হয়ে থাকলেও উড়ন্ত ট্যাক্সি কিন্তু এখন বাস্তবতায় রূপ পেয়েছে। উড়ন্ত ট্যাক্সি এখন আগামী দশকগুলোতে আমাদের যাতায়াত, কর্মজীবন এবং জীবনযাত্রায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে। ব্যাটারি প্রযুক্তি, কম্পিউটার এবং বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে এতটাই অগ্রগতি হয়েছে যে উদ্ভাবকরা এখন ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের উড়ন্ত গাড়ি তৈরি করছেন - সেইসঙ্গে এসব গাড়ি আকাশে কোন পথ ধরে চলবে তার পথ নির্দেশনা পদ্ধতিও তারা উদ্ভাবন করেছেন। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জ বিশাল। কেমন দেখতে হবে এসব উড়ন্ত যান? সিনেমায় দেখা বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনির উড়ন্ত যানের মত না হলেও তার কাছাকাছি কিছু তো বটেই। বাণিজ্যিক বিমানের চেয়ে আকারে অনেক ছোট। বেশিরভাগই ডিজাইন করা হয়েছে ডানার বদলে হেলিকপ্টারের মত ঘূর্ণায়মান পাখা বা রোটার দিয়ে, যাতে গাড়িগুলো খাড়াভাবে আকাশে উঠতে বা নামতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হল এই উড়ন্ত গাড়িগুলোর নক্সা তৈরি করা হয়েছে এমনভাবে যাতে তারা দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে, বিশেষ করে যানজটের শহরগুলোতে মানুষ যাতে দ্রুত তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। ১৯৮২ সালের হলিউড ছায়াছবি ব্লেড রানার আকাশ পথে উড়ন্ত গাড়ির যে ধারণা নিয়ে এসেছিল তা বাস্তবে রূপ নিতে বেশি দেরি নেই তবে এই মুহূর্তে আকাশ যানের বাজার কতটা আশাব্যঞ্জক তা বলা মুশকিল। যদিও বেশ কয়েকটি নতুন গজানো প্রতিষ্ঠান পাল্লা দিয়ে বাণিজ্যিক আকাশ-যান, উড়ন্ত মোটরবাইক এবং ব্যক্তিগত উড়ন্ত ট্যাক্সি তৈরির কাজে নেমে পড়েছে। উদ্যোক্তাদের অর্থ সহায়তা দানকারী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান, পাশাপাশি গাড়ি ও বিমান সংস্থাগুলো এই সম্ভাবনাময় শিল্পে লগ্নি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের ধারণা ২০৪০ সাল নাগাদ এটা ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের শিল্প হয়ে উঠতে পারে। এমনকি উবার কোম্পানিও এই উড়ন্ত ট্যাক্সি সেবায় তাদের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে। আকাশ পথে 'উবার এলিভেট' নাম দিয়ে তারা ব্যবসা করার ছক কাটছে। ইতোমধ্যে, বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আকাশ পথে পরিবহন ব্যবস্থার নতুন নিয়মনীতি ও নিরাপত্তার মান কী হবে তার রূপরেখা তৈরির কাজও শুরু করেছে। জার্মান ভিত্তিক কোম্পানি ভলোকপ্টার তাদের ভলোসিটি মডেলের বিদ্যুতশক্তি চালিত উড়ন্ত ট্যাক্সিকে প্রথম বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স দিয়েছে। সংস্থাটির পরিকল্পনা অনুযায়ী এই যান আগামীতে পাইলট বিহীন উড়তে পারবে। শুরুর দিকে ভলোসিটির পাইলট চালিত উড়ন্ত ট্যাক্সিতে বসতে পারবেন মাত্র একজন যাত্রী। ফলে এই রাইডের জন্য ভাড়া পড়বে একটু বেশি। কিন্তু তারা আশা করছে যাত্রীদের মধ্যে আস্থা তৈরি হলে তারা স্বয়ং-চালিত মডেল বের করবে, যেখানে চালকের প্রয়োজন হবে না। এই যান চলবে বিদ্যুতশক্তিতে, গাড়ির কোন ডানা থাকবে না। নয়টি ব্যাটারি থেকে সরবরাহ করা বিদ্যুতশক্তি দিয়ে গাড়ি চলবে। বিমান ওঠানামার জন্য যেমন বিমানবন্দর বা এয়ারপোর্ট থাকে, এইসব উড়ন্ত ট্যাক্সি ওঠানামার জন্য বড় বড় শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসানো হবে ভার্টিপোর্ট। এই ট্যাক্সি যেহেতু খাড়াভাবে (ভার্টিকালি) আকাশে উঠবে, তাই এই ওঠানামার বন্দরগুলোর নাম তারা দিতে চাইছেন ভার্টিপোর্ট। ভলোসিটি বাণিজ্যিকভাবে তাদের উড়ান শুরু করবে ২০২২ সালে। ''এটা ধনীদের জন্য একটা শখের খেলনা হোক সেটা আমরা চাই না। আমরা চাই এটা বড় শহরের সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থার অংশ হবে," বলছেন ভলোকপ্টার কোম্পানির ফেবিয়েন নেস্টমান শখের খেলনা নয় প্রাথমিক পর্যায়ে একটা উড়ানে একটা টিকেটের দাম পড়বে ৩৫০ ডলার (২৭০ পাউন্ড)। কিন্তু ভলোকপ্টার কোম্পানির ফেবিয়ান নেস্টমান বলছেন তাদের লক্ষ্য হল ক্রমশ এই খরচ প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা। উবার কোম্পানিতে যেমন উবার ব্ল্যাক নামে বেশি অর্থের বিনিময়ে উন্নত সেবার ব্যবস্থা আছে, তারা সেই মডেলের পরিষেবার কথা ভাবছেন। "তবে এটা ধনীদের জন্য একটা শখের খেলনা হোক সেটা আমরা চাই না। আমরা চাই এটা হবে বড় শহরে বাস করা যে কোন মানুষের জন্য সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থার অংশ," বলছেন মি. নেস্টমান। "প্রত্যেকের যেমন হেঁটে, গাড়ি করে বা সাইকেলে চড়ে যাতায়াতের সুযোগ আছে, তেমনি আকাশপথে যাতায়াতেরও সুযোগ তাদের থাকবে।" অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও তাদের আকাশ যান তৈরির জন্য বর্তমান গাড়ি নির্মাতাদের সাথে অংশীদার হিসাবে কাজ শুরু করেছে। যেমন জাপানে স্কাই-ড্রাইভ নামে নতুন একটি স্টার্টআপ কোম্পানি তাদের পূর্ণ বিদ্যুত-চালিত উড়ন্ত ট্যাক্সির পরীক্ষামূলক উড়ানের জন্য টয়োটা কোম্পানির সাথে একজোটে কাজ করছে। বলা হচ্ছে তাদের উড়ন্ত ট্যাক্সি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র বিদ্যুত-চালিত যান যা সোজাসুজি খাড়াভাবে আকাশে উঠতে ও নামতে পারবে। সংস্থাটি এই গ্রীষ্ম মৌসুমে বিমান চলাচল ক্ষেত্রের আশেপাশে তাদের একটি যান সফলভাবে কয়েক মিনিটের জন্য উড়িয়েছে। সেটিতে চালক ছিল। "ভোক্তাদের দিক থেকে চাহিদা আছে। কিন্তু যানজট মুক্ত বিকল্প পরিবহন এখনও মানুষকে দেয়া হয়নি," বলছেন স্কাই-ড্রাইভের মুখপাত্র তাকাকো ওয়াদা। "স্কাই-ড্রাইভ ভোক্তাদের চাহিদা এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি দুটোই বিবেচনায় নিয়ে তাদের উড়ন্ত যান তৈরি করছে।" আরও পড়তে পারেন: বড় বড় গাড়ি নির্মাতা এবং বিমান চলাচল শিল্প ইতোমধ্যেই উড়ন্ত গাড়ির বাজারে চাহিদার বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। জাপানের স্কাই ড্রাইভ কোম্পানির তৈরি এসডি-০৩ উড়ন্ত গাড়ি এবছর অগাস্টে জাপানের আকাশে পরীক্ষামূলকভাবে ওড়ানো হয়েছে। বিমান ডিজাইন করে এমন অনেক প্রতিষ্ঠানও এটাকে বিরাট একটা সম্ভাবনা হিসাবে দেখছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাটারিতে সঞ্চিত বিদ্যুতশক্তি দিয়ে চালিত গাড়ি পরিবেশ ও শব্দ দূষণ সমস্যারও সমাধান করতে পারবে বলে এর সম্ভাবনা আরও ব্যাপক বলে মনে করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে তারা তাদের গবেষণা ও উদ্ভাবনার কাজ করছে। ভার্টিকালি বা সোজাসুজি কোন যানের আকাশে ওঠানামার প্রযুক্তি এখনও খুবই নতুন। এ ক্ষেত্রেও নানাধরনের নক্সা তৈরির কাজ এগোচ্ছে। আকাশ পথে সাহায্য ব্রিটেন ভিত্তিক এয়ারোনটিকাল কোম্পানি গ্র্যাভিটি ইন্ডাস্ট্রিস বলছে আকাশে ওড়ার অনেক প্রযুক্তি আছে যেগুলোর ব্যবহার এখনও সীমিত। যেমন তাদের তৈরি উচ্চ হর্সপাওয়ারের 'জেটপ্যাক'। যেটি গায়ে পরে মানুষ আকাশে উড়তে পারে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে এটা অনেকটা রেসিং কারের মত। এই যন্ত্র গায়ে বেঁধে নিয়ে এতে সঞ্চিত গ্যাস বা জ্বালানি শক্তি দিয়ে বাতাস কেটে মানুষ দ্রুত উড়ে যেতে পারবে গন্তব্যে। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রধান পাইলট ও প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্রাউনিং বলছেন, "এই প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য দক্ষতা এখনও শুধু পেশাদার বা সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।" "তবে সেদিন হয়ত খুব বেশি দূরে নয়, যখন সুপার-হিরো চিকিৎসা কর্মীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কোন রোগীর কাছে দ্রুত জরুরি সেবা পৌঁছতে এধরনের যন্ত্র গায়ে পরে তিনি আকাশে উড়ে যাবেন কিনা।" অনেকটা ব্যাটম্যানের মত। মি. ব্রাউনিং বলেছেন সম্প্রতি অ্যাম্বুলেন্স বিভাগের সাথে মিলে তিনি এই জেটপ্যাক পরে একটি পরীক্ষামূলক সন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতার কাজ করেছেন ইংল্যান্ডের এক দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। ব্রিটেনের কোম্পানি গ্র্যাভিটি ইন্ডাস্ট্রিস একটি জেটপ্যাক তৈরি করেছে যা গায়ে বেঁধে আকাশে ওড়া যায়। প্রতিষ্ঠানটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সন্ধান ও উদ্ধারের কাজে এই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক ব্যবহার করেছে পায়ে হেঁটে ঐ পাহাড়ের ওপর ওঠার পথ খুবই দুর্গম এবং উঠতে সেখানে সময় লাগে অন্তত ২৫ মিনিট। আর জেটপ্যাক পরে মি. ব্রাউনিং সেখানে পৌঁছে যান ৯০ সেকেন্ডে। এই পরীক্ষা প্রমাণ করেছে জরুরি উদ্ধারকাজে যেখানে সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে অল্প সময়ের ব্যবধান জীবন বাঁচাতে পারে সেখানে এধরনের প্রযুক্তির গুরুত্ব কতটা। "আকাশপথে পরিবহনের স্বপ্ন অনেকদিনের," বলছেন ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে নাসার এয়ারোনটিক গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক পরিমল কোপারদেকার। "এখন নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এমন সব আকাশ যান তৈরি করার সত্যিকার সুযোগ এসেছে যা সেই সব জায়গায় পণ্য ও সেবা পৌঁছে দেবে যেখানে বিমান যেতে পারে না।" মি. কোপারদেকার নাসার এই গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করছেন স্বয়ংচালিত বিমান প্রযুক্তি নিয়ে যার মাধ্যমে আকাশপথে চলাচলের ব্যবস্থা আরও উন্নত ও আরও বিস্তৃত করা যাবে। আকাশের সড়ক পথে যান চলাচল ব্যবস্থাকে ব্যাপক পরিসরে ব্যবহারের উপযোগী করতে হলে এমন অনেক খুঁটিনাটি সমস্যার সমাধান করতে হবে, যেগুলো আপতদৃষ্টিতে সমস্যা বলে মনে নাও হতে পারে। এধরনের আকাশ যানে যখন মানুষ চলাচল করবে তখন সেক্ষেত্রে আকাশের সড়কে তা নিরাপদ কিনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ওই যানের আকাশ পথে চলাচল ও ওঠানামার জন্য বৈধ লাইসেন্স আছে কিনা, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের আস্থা থাকতে হবে এই নতুন পরিবহন ব্যবস্থার ওপর। "খুবই কঠোর পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু না করে এ ধরনের যান চলাচল বাণিজ্যিকভাবে শুরু করা যাবে না," বলছেন জার্মানির ভলোকপ্টার কোম্পানির মি. নেস্টমান, যিনি এ ব্যাপারে তাদের কোম্পানির পক্ষে জন সচেতনতা গড়ে তোলার দায়িত্বে আছেন। "এধরনের গাড়ি চলাচলের জন্য আকাশে উপযুক্ত অবকাঠামোও তৈরি করতে হবে।" চীনা ব্যবসায়ী ঝাও ডেলি নিজের জন্য তৈরি করেছেন উড়ন্ত মোটরবাইক। গত বছর চীনে তিনি এর পরীক্ষামূলক উড়ান দিয়েছেন আকাশে যখন মেলা গাড়ি চলাচল শুরু হবে তখন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থারও প্রয়োজন হবে। বিমান ওঠানামার জন্য বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মত। আকাশে গাড়ির ওঠানামা ও চলাচল নিয়ন্ত্র্রণের জন্যও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দরকার হবে। উদ্ভাবকরা বলছেন আকাশে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা হতে হবে স্বয়ংক্রিয়- ইউটিএম বা আনম্যান্ড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট। 'আকাশপথের নিয়মবিধি' বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর জন্য পুরো স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার বিকল্প নেই। নতুন চ্যালেঞ্জ থাকবে অনেক। শুধু তো আকাশে চলা গাড়ি বা অন্য ধরনের যানবাহন নয়, আকাশে আরও অনেক ধরনের ঝুঁকি থাকবে যেমন উড়ন্ত মহাজাগতিক বস্তু, পাখি, ড্রোন, আর বিমান! এদের কেউ চলার পথে এসে পড়ছে কিনা তা নিয়ন্ত্রণ জরুরি হবে। ফলে তৈরি করতে হবে নিরাপদে চলাচলের পথ, ওঠানামার জন্য আকাশে নিরাপদ করিডোর, এমনকি প্রয়োজনে আকাশে যান পার্কিং করে রাখার ব্যবস্থা। আর সেজন্যই আকাশের মহাসড়ক নিরাপদ ঝুঁকিমুক্ত করতে আকাশপথে চলাচলের নিয়মবিধি ও নতুন আইন তৈরি আবশ্যক হবে। পশ্চিম লন্ডনের আকাশে ওড়া এধরনের ড্রোন সহ আকাশে আরও নানা ঝুঁকি এড়াতে নিরাপত্তা বিধিমালা তৈরি খুবই জরুরি হবে গাড়ি নির্মাতা এবং আকাশ পরিবহনের পরিচালকদের আশ্বাস দিতে হবে যে এই নতুন যান চলাচল ব্যবস্থা আকাশ যাত্রী এবং নিচে মাটিতে যারা চলাচল করছেন তাদের জন্যও সমানভাবে নিরাপদ। নাসার মি. কোপারদেকার ও তার টিমের সদস্যরা শহরে এধরনের যান চলাচল ব্যবস্থার ঝুঁকির দিকগুলো নিয়ে গবেষণা করছেন। বিভিন্ন শহরের আকাশ চলাচলে বিভিন্ন ধরনের ইস্যু থাকবে - জটিলতা ও শহরের ঘনত্বের বিবেচনায় তারা এসব সমস্যাকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন এবং তার ভিত্তিতে তারা কোথায় যান চলাচল কতটা স্বয়ংক্রিয় করা উচিত এবং কতটা মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন রাখা উচিত তার মডেল তৈরি করছেন। খারাপ বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, পাখির সাথে ধাক্কার ঝুঁকি, হঠাৎ চলার পথে জেটপ্যাক বেঁধে উড়ে যাওয়া মানুষ এসে পড়া এসব নানাধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে তারা তৈরি করছেন নির্দেশাবলী। আকাশে ওড়া মানুষের সাথে ধাক্কা লাগার প্রকৃত ঝুঁকির অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমেরিকান একটি বিমানের এবছরই অক্টোবর মাসে । নিউ ইয়র্ক, হংকং এবং বেইজিংএর মত শহরগুলোর রাস্তা ধারণক্ষমতায় সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসা সচল রাখতে আকাশের দিকে তাকানো ছাড়া এখন আর কোন বিকল্প বিশেষজ্ঞরা দেখছেন না। ইউরোপীয় বিমান চলাচল নিরাপত্তা সংস্থা উড়ন্ত গাড়ি বা অন্য ধরনের আকাশ যানকে ওড়ার উপযোগী হতে হলে কী কী করতে হবে তারও তালিকা তৈরি করছে যেমন গাড়ির জরুরিকালীন নিগর্মন দরজা এবং নিগর্মন ব্যবস্থা, বজ্র বিদ্যুতের সময় সুরক্ষা ব্যবস্থা, আকাশে গাড়ির ভেতর নি:শ্বাস নেবার জন্য কেবিনের যথাযথ চাপ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর রাখা খুবই জরুরি। কিন্তু একটা বিষয়ে সব বিশেষজ্ঞই একমত যে নিউ ইয়র্ক, বেইজিং, হংকংএর মত বড় শহরগুলোয় গাড়ির সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, এবং তার ফলে যে ধরনের যানজট তৈরি হচ্ছে তাতে এসব দেশের জন্য তাদের ব্যবসা ও অর্থনীতি সচল রাখতে আকাশেও সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোন বিকল্প আগামীতে নেই। শহরের পুনর্বিন্যাস যানজট এখন পৃথিবীর ছোট বড় অনেক শহরের জন্য রীতিমত বিরাট সমস্যা হয়ে উঠেছে। এসব দেশের সড়কগুলোর ধারণক্ষমতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এসব সড়কে চলা গাড়িগুলো থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি করছে। বিদ্যুতশক্তি চালিত উড়ন্ত গাড়ি ও তার খাড়াভাবে আকাশে ওঠার প্রযুক্তি এধরনের বিষাক্ত নি:সরণ থেকে দূষণের মাত্রা নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দেবে। আকাশ জুড়ে গাড়ি ও যান চলাচল শুরু হলে আমাদের শহরগুলোর বর্তমান বিন্যাসের বদল ঘটানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়াবে তবে আকাশে যান চলাচল ব্যবস্থা তৈরি করতে হলে শহরের কাঠামোও পুনর্বিন্যাস করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এখন শহরে অনেক উঁচু উঁচু বাড়ি তৈরি হচ্ছে। শহরের উঁচু ভবনগুলো ভবিষ্যতে এমনভাবে তৈরির কথা নগর স্থপতিদের ভাবতে হবে যেখানে উড়ন্ত গাড়ি বা আকাশ যান ওঠানামার জন্য ল্যান্ডিং প্যাড তৈরির সুযোগ থাকবে। মাটিতে চাপ কমানোর জন্য উঁচু বাড়িগুলোকে যুক্ত করার জন্য আকাশ পথ তৈরির কথাও ভবিষ্যতে নগর পরিকল্পনাবিদদের বিবেচনায় নিতে হবে। তারা বলছেন মাটিতে গাড়ি ও রাস্তার চাপ কমানো গেলে আরও সবুজ জায়গা, পার্ক, মাঠ তৈরি করে শহরকে আরও পরিবেশ বান্ধব করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। হয়ত ২০৪০ পরবর্তী বিশ্বে মাটিতে চলাফেরার পাশাপাশি, আকাশে চলাফেরার নতুন একটি দুনিয়া তৈরি হবে। অনেকের জীবন হয়ত মাটির অনেক ওপরেই থেকে যাবে। মাটিতে চলাফেরা করা হয়ত কোন এক সময় অনেকের জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়াবে।
ভবিষ্যতে বিজ্ঞান আমাদের জীবন কীভাবে বদলে দিতে পারে তা নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে হলিউডে। যেমন ১৯৮২ সালের ছবি ব্লেড রানারে দেখানো হয়েছিল ভবিষ্যতের লস এঞ্জেলস শহরে আকাশের মহাসড়ক দিয়ে ছুটে চলেছে উড়ন্ত যানবাহন।
মিয়ানমারের সেনাদের সঙ্গে অং সান সু চি'র ২০ বছর ধরে তিক্ত সম্পর্ক থাকলেও এখন একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রেক্ষাপটে অং সান সু চির ভূমিকা নিয়ে বেশ সমালোচনা চলছে। কারণ তিনি তাঁর সরকারের পক্ষে সাফাই দিয়ে বলছেন, রাখাইনে 'রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী'দের বিরুদ্ধে এই সেনা অভিযান। গতকাল বুধবার মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেবেন না। চলতি মাসেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। আর এমন প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগছে অং সান সু চি আসলে তার দেশে কতটা ক্ষমতা রাখে? অং সান সু চি'র সরকারি পদবী হচ্ছে 'রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা'। তিনি এই পদ সৃষ্টি করেছেন, সংবিধানের একটি বিশেষ ধারাকে কেন্দ্র করে; যে ধারাটা মূলত তৈরি করা হয়েছিল তাকেই লক্ষ্য করে। কারণ মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী কারো স্বামী বিদেশি হলে বা বিদেশি নাগরিকত্ব আছে এমন কোনো ব্যক্তি দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। মিয়ানমারের অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনীতিক অং সান সু চি এবং ২০১৫ সালে দেশটির জাতীয় নির্বাচনে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বাএনএলডির বিপুল জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। মন্ত্রিসভা এবং তার দলের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্বেও আছেন মিস সু চি। দেশটির প্রেসিডেন্ট তিন কিয়াউ মিস সু চি'র কাছে জবাব দিতে হয়। দেশটির সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল পূর্ববর্তী সামরিক সরকারের আমলে। ১৯৬২ সাল থেকে শাসন ক্ষমতায় ছিল এই সামরিক সরকার । ২০০৮ সালে অবিশ্বাস্য এক গণভোটের মাধ্যমে এই সংবিধানের অনুমোদন দেয়া হয়। সে সময় সংবিধানের এই অনুমোদনে মিস সু চি কিংবা তার দল এনএলডির কোনো সায় ছিল না। সেনাবাহিনী ঘোষিত 'ডিসিপ্লিন-ফ্লোরিশিং ডেমোক্রেসি'র পরিকল্পনা ‌নিশ্চিত করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। এছাড়াও সংবিধানের এই সংশোধনীর আওতায় সংসদের এক চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। তিন কিয়াউ মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হলেও অং সান সু চি'র কাছে তাকে জবাব দিতে হয়। স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং সীমান্তসহ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী। এর অর্থ হচ্ছে দেশটির পুলিশের ওপরও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেনাবাহিনীর। শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদের ১১টি আসনের মধ্যে ছয়টি আসনেও রয়েছে সেনাবাহিনী মনোনীত ব্যক্তিরা। গণতান্ত্রিক সরকার বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে এই পরিষদের। অনেক শীর্ষস্থানীয় পদের দখল করে আছেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা। সেনাবাহিনীর ব্যবসায়িক স্বার্থও রয়েছে। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতের যৌথ বাজেটের চেয়েও ১৪ শতাংশ বেশি ব্যয় হয় প্রতিরক্ষা খাতে। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনী এবং সু চি'র অবস্থান ছিল তীব্র পরস্পরবিরোধী। মিস সু চি ১৫ বছর গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হেইং এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, রোহিঙ্গাদের জন্য তার সহানুভূতি নেই। নির্বাচনের পর তারা একসঙ্গে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করেন। জনসমর্থন ছিল তার। মিয়ানমারের জেনারেলদের হাতে ছিল আসল ক্ষমতা। সংবিধান সংশোধনের মতো সু চি'র অনেক চাওয়ার সঙ্গে সেনাবাহিনীর মতৈক্য রয়েছে। গত ৭০ বছর ধরে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সীমান্তে বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে শান্তি আলোচনা নিয়েও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভেদ আছে। তবে তারা অর্থনৈতিক সংস্কার, উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে একমত। মিস সু চির জনপ্রিয় 'মন্ত্র' হচ্ছে 'আইনের শাসন'। একই সঙ্গে দেশটিতে দ্রুত পরিবর্তনের কারণে সামাজিক উত্তেজনাও বাড়ছে। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনী এবং সু চি'র অবস্থান ছিল তীব্র পরস্পরবিরোধী। মিস সু চি ১৫ বছর গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলেন। বৈরিতা বাড়ছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অত্যন্ত সাবধানে পথ চলতে হবে অং সান সু চিকে। রোহিঙ্গাদের জন্য মানুষের মনে একটু হলেও সহানুভূতি রয়েছে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয় বলে সরকারের যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, অধিকাংশ বার্মিজও তাই মনে করে। এমনকি কয়েক প্রজন্ম ধরে এই রোহিঙ্গাদের অনেকেই দেশটিতে বসবাস করে এলেও অনেকেই তাদেরকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী মনে করে। গত বছরের অক্টোবর মাসে এবং চলতি বছরে আগস্টে পুলিশের পোস্টে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির বিদ্রোহীদের হামলার পর এই বৈরিতা বা দ্বন্দ্ব ব্যাপক বেড়েছে। রাখাইন রাজ্যের স্থানীয় বৌদ্ধরা আরো প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের সংঘাত চলে আসছে।রোহিঙ্গাদেরকে বাঙালি হিসেবে দাবি করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষেরা। রাখাইনের অনেক বৌদ্ধদের বিশ্বাস, তারা শেষ পর্যন্ত সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন। এমনকি তাদের পরিচয় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলেও শঙ্কা রয়েছে তাদের। রাখাইন ন্যাশনালিস্ট পার্টি বা এএনপি স্থানীয় বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। বৌদ্ধদের জন্য পুলিশেরও শক্তিশালী সহানুভূতি রয়েছে। পুলিশের প্রায় অর্ধৈক কর্মকর্তাই রাখাইনের বৌদ্ধ। কারা এই রোহিঙ্গা মুসলিম? তবে বাংলাদেশ সীমান্তের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যের আসল ক্ষমতায় রয়েছে সেনাবাহিনী। এই রাজ্যে প্রবেশ অত্যন্ত সীমিত এবং নিয়ন্ত্রিত। দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হেইং এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, রোহিঙ্গাদের জন্য তার সহানুভূতি নেই। স্বাধীন গণমাধ্যম বর্তামানে যে অভিযান রাখাইনে চলছে সেটাকে 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন' উল্লেখ করে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান বলেছেন, ১৯৪২ সালের আগের একটি সমস্যা শেষ করার জন্যই এ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী ওই সময়ে রোহিঙ্গা ও রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে তিক্ত সাম্প্রদায়িক লড়াই দেখে জাপানি ও ব্রিটিশ বাহিনীর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল। সেনাবাহিনী বলছে, রাখাইনে দেশের বাইরের অর্থায়নে চলা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বর্তমানে লড়াই চলছে। সেনাবাহিনীর এই মতের সঙ্গে রাখাইনের অধিকাংশ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির মিল রয়েছে। এতে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় ব্যবহৃত 'ফোর কাটস' কৌশলের প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। এই কৌশলের মাধ্যমে সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের সমর্থনকারী কোনো সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে। তবে এই ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও একটি ভূমিকা রয়েছে। গত পাঁচ বছরে মিয়ানমারে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটেছে। এর মধ্যে নতুন স্বাধীন গণমাধ্যম, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন একটি দেশে এই উন্নয়ন ঘটেছে যা সম্ভবত এক দশক আগেও কল্পনাতীত ছিল। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো কে জ্বালিয়ে দিচ্ছে? কর্তৃপক্ষ নীতিবান? তবে দেশটির গণমাধ্যম বাংলাদেশের ভেতরে কী ঘটছে অথবা রোহিঙ্গাদের ভোগান্তি কী রকম হচ্ছে তা সীমিত করে দেখিয়েছে। মিয়ানমারের অধিকাংশ গণমাধ্যমই রাখাইনে বৌদ্ধ এবং হিন্দুদের বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। যারা সংখ্যায় অল্প। ঘৃণা এবং ভুল তথ্য খুব দ্রুত ছড়াতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সুতরাং এটা বলাই যায়, রাখাইন রাজ্যের ঘটনাবলীর ব্যাপারে নিয়ে সু চি'র সামান্য ক্ষমতা আছে। রোহিঙ্গাদের সমর্থনে কোনো কথা বললেই যে তিনি বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের ক্ষোভ ও তোপের মুখে পড়বেন তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। আকাশ থেকে ধারণ করা ছবিতে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির অং সান সু চি বুঝেছেন যে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনো কিছু বলা বা সিদ্ধান্ত নেয়াটা জুয়া খেলার মতো হবে। আর মিস সু চি যে জেদি ও তার সিদ্ধান্তের বিষয়ে অনঢ় তা নতুন কিছু নয়। সবাই জানে তিনি কোনো বিষয়ে একটা কিছু ভাবলে তাতেই অটল থাকবেন। এ ছাড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর যেহেতু 'ক্ষমতায়' থাকার অভ্যাস পুরোনো, তাই সেনা হস্তক্ষেপের আশঙ্কাও রয়ে যায়। আর দেশটির গণতান্ত্রিক সরকারকে সেনাবাহিনী সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে, সে ক্ষেত্রে মিস সু চি'র রোহিঙ্গাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ঝুঁকি কতটা আসলে কতটা যুক্তিযুক্ত, সে প্রশ্নও থেকেই যায়। ২০০৩ সালে মিস সু চি'র দল গণতন্ত্রের যে রোডম্যাপের কথা ঘোষণা করেছিল সে অনুযায়ী তারা ১৪ বছর চলেছে। অং সান সু চি'র দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০১৫ সালে সরকার গঠন করলেও তার হাতে কর্তৃত্ব কম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সীমান্ত সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব সেনাবাহিনীর হাতে। মিস সু চি'র দল ক্ষমতায় থাকলেও দেশটির সেনাবাহিনী এখনও সবচেয়ে ক্ষমতাধর। এই সময়ে রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক যে প্রতিক্রিয়া আসছে তাতে যে সেনাবাহিনী মিস সু চি'কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে সেটা স্পষ্ট। রোহিঙ্গা সংকটে মিস সু চি'র মন্তব্য নিয়ে বেশ সমালোচনা রয়েচে, বিক্ষোভও হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
[বিবিসির দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সংবাদদাতা জোনাথন হেডের বিশেষ প্রতিবেদন এটি।]
বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে কাজ করছেন প্রচুর বিদেশি কর্মী। ঢাকার আরেকটি নামকরা কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে টেলিকম কোম্পানিতে দীর্ঘদিন কাজ করেন আব্দুল বাকি। পরবর্তীতে পদোন্নতি এবং চাকরির প্রতিযোগিতার কারণে তিনি সিএ এবং এমবিএ সম্পন্ন করেন। কিন্তু মধ্যম সারির চাকরিগুলোতে আবেদন করে খুব একটা সাড়া মিলছে না। প্রেক্ষাপট যখন এমন তখন দেশের ব্যবসায়ী নেতা এবং গবেষকরা বলছেন, দক্ষ জনশক্তি না পাওয়ায় বিদেশি কর্মীদের মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতি বছর কয়েকশো কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। শুধুমাত্র ভারতেই যাচ্ছে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার। এ প্রসঙ্গে মি: বাকি বলছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা- "আমি আসলে একমত হতে পারছি না। আমাদের দেশের যারা ভালো দক্ষ আছে তারাও কাজ করছে। জয়েন্ট কোলাবরেশনে তারা হয়তো কাজ করছে। তবে মধ্যম সারির কিংবা একেবারে টপ পজিশনগুলোতে নিয়োগে জোরালো রেফারেন্স লাগে।" তবে মো: আজিজুর রহমান বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইল বিষয়ে সদ্য পাশ করেছেন। দক্ষ জনশক্তির কিছুটা অভাব আছে এটা ঠিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা যারা পড়ছি আমাদের টেকনিক্যাল স্কিলগুলো বাইরের লোকজন থেকে কম। এখন বিশ্বে টেকনোলজিতে নতুন নতুন ট্রেন্ড আসছে। আর আমরা এখনো পড়ে আছি ৮০, ৯০-র দশকে। পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে সিলেবাস থেকে ট্রেনিং সবকিছু। একাডেমিক লেভেলে এবং সিলেবাস মডারেট করা দরকার।" বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স এসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ব্যবসায়ী নেতা ফজলুল হক বিবিসিকে বলেছেন, "দেশে মিড লেভেল ও টপ লেভেলের প্রফেশনালদের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত হয়ে আসা কর্মীরা চাহিদা মেটাতে পারছে না।" নিজের ব্যক্তিগত উদাহরণ টেনে মি: রহমান বলেন, "আমি নিজেইতো টেক্সটাইলে গার্মেন্টসে ইন্টার্ন করতে গিয়ে লক্ষ করেছি যারা ম্যানেজমেন্ট লেভেলে তারা শ্রীলংকার এবং ভারতীয়। এছাড়া অনেকে কারিগরী শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও, তাদের মধ্যে অন্যান্য ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, মূলত কারিগরী শিক্ষার অভাব এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার অভাবে তারা দেশীয় কর্মীদের বদলে বিদেশীদের ওপর নির্ভর করছেন। আর এভাবে বাংলাদেশ কোটি কোটি ডলার হারাচ্ছে। সদ্য পাশ করা মো: আজিজুর রহমান বলেন, "আমি যখন ইন্টার্ন করি আমার অধীনে কিছু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার কাজ করেছেন, তারা ভাল করে মেইল লিখতে পারতেন না। তো এসব ক্ষেত্রে আসলে কিছু সমস্যা আছে।" বাংলাদেশের বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি, গার্মেন্টস, ওষুধ কোম্পানি কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন অনেক বিদেশি নাগরিক। এসব কর্মীদের মধ্যে শীর্ষে আছে ভারত ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা। এর পরে পাকিস্তান, ফিলিপিন, কোরিয়া ও চীন থেকে আসা কর্মীরা। প্রবাসী বাংলাদেশীদের অর্থে দেশ সচল করার কথা বলা হচ্ছে একদিকে কিন্তু অন্যদিকে বিদেশি কর্মীদের হাত দিয়ে দেশ থেকে চলে যাচ্ছে বহু কোটি ডলার। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি বলছে, তাদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ২৪ শতাংশ তৈরি পোশাক কারখানাতে বিদেশী কর্মীরা কর্মরত আছেন। দু'বছর আগে সিপিডির আরেক গবেষণার তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে যে রেমিটেন্স যায় তার মধ্যে শুধুমাত্র ভারতেই যায় ৫০০ কোটি ডলারের মতো, জানান সিপিডির গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন। মি: হোসেন জানান, দক্ষতার ঘাটতির কারণেই বিদেশি কর্মীদের হাতে চলে যাচ্ছে দেশের অর্থ। তাঁর মতে, "দেশের ভেতরে যারা গ্রাজুয়েট হচ্ছেন, তারাও উপযুক্ত মান সম্পন্ন নন। তাদের দক্ষতার অভাব রয়েছে।" কী বলছেন পাঠকেরা? এ বিষয়ে বিবিসি বাংলার সামাজিক পাতায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে পাঠকদের মধ্যে। সেখানে মতামত দিয়েছেন বহু মানুষ। নিজামউদ্দিন নামে একজন পাঠক লিখেছেন, "বাংলাদেশে মানসম্পন্ন শিক্ষায় ঘাটতি আছে। প্রচলিত শিক্ষায় অনেক ছেলে-মেয়ে শিক্ষিত হচ্ছে কিন্তু মানসম্পন্নভাবে নয়। তার জন্য দেশের সরকারই দায়ী। এখানে অনেক ছেলে-মেয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পরেও ভালো ইংরেজি জানে না। জানবে কীভাবে? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটা যে এমন। শুধু পরীক্ষার সময় ইংরেজি গ্রামার, পেরাগ্রায়, ডায়লগ,লেটার ইত্যাদি মুখস্থ করে পরীক্ষা দাও। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি না পরিবর্তন করে, সময় উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ না করে -তাহলে এমন শিক্ষার প্রয়োজন নাই।" আসিফুর রহমান লিখেছেন, "ঘাটতি কোন সমস্যাই নয় বরং সমস্যা হচ্ছে সরকারের মানসিকতার। দেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব থাকতেই পারে কিন্তু সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে খুব সহজে এবং অল্প সময়েই তা সমাধানযোগ্য। কিন্তু সরকার চায়, বাংলাদেশে ভারতের জন্য সুযোগ খুলে দিতে।" আরিফুর রহমান নামে আরেকজনের মত, "বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে বিদেশীরা কাজ করতে পারে, আর দেশে যোগ্য লোক খুঁজে পায় না, বাংলাদেশের কয়টা কোম্পানির ট্রেনিং ও রিসার্চ সেন্টার আছে?" আরও পড়ুন:বাংলাদেশের চাকরির বাজারে বিদেশিদের দাপট? ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান সহ বিভিন্ন দেশের কর্মীদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে কোটি কোটি ডলার। শাহ শিহাব নামে আরেকজন পাঠক লেখেন, "সত্যি কথা বলতে কি! বাংলাদেশে অবশ্যই দক্ষ জনশক্তি আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশে দক্ষের চেয়ে অদক্ষ জনশক্তি বেশী এবং দক্ষ জনশক্তি বাছাই প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। আর এজন্য দায়ী আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা। সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে প্রাকটিকালি কোনকিছুই শিখানো হয়না। ...বর্তমানে সার্টিফিকেট দ্বারা কিছু বিচার করা কঠিন। ....... " প্রান্ত দাস অনুপ লিখেছেন, "বাংলাদেশের বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী সরকারি চাকুরী/ বিসিএস এর স্বপ্ন দেখে, আর অন্যদেশের মানুষরা সিইও, ম্যানেজার হওয়ার স্বপ্নে লেখাপড়া করে, পার্থক্য এই জায়গায়।" মাইদুল ইসলাম সাইমন লিখেছেন, "এটা আমাদের দেশের জন্য খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাকর ঘটনা। আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি আসলেই সময়োপযোগী নয়। আমাদেরকে যা শিখানো হচ্ছে তা কেবলই সনদ অর্জনের জন্য কাজে লাগে। বাস্তবিক ক্ষেত্রে তা খুব কমই কাজে লাগে। কী দরকার বেকার তৈরির কারখানা নামক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার। আমরা শুধু সার্টিফিকেটই অর্জন করছি আর শিক্ষিত নামধারী বেকার হচ্ছি মাত্র।" অন্যদিকে দুলাল হোসেন নামে আরেকজন লেখেন, "সমস্যা শিল্পপতিদের। তারা মনে করে বিদেশীরা তাদের প্রতিষ্ঠানে খুব ভালো কাজ করে। অথচ দেশেই অনেক যোগ্যতম প্রার্থী রয়েছে যাদের নিকট থেকে অপেক্ষাকৃত কম মজুরিতে বেশি সাপোর্ট পাওয়া যায়। কিন্তু তাদের মধ্যে একটা বিদেশ-প্রীতি কাজ করে সবসময়ই।" "দক্ষতার অভাব নয়, অভাব মানসিকতার। ভাল লোকজন প্রাইভেট সেক্টরে আসতে চায় না।কারণ সামাজিক অবস্থা। বিয়ের বাজারে ১লক্ষ টাকা বেতন পাওয়া ছেলের চাইতে সরকারি একজন পিয়নের মূল্য বেশী। আর একটা বড় কারন মালিক পক্ষ,এরা দেশী লোকদের মূল্যায়ন করে না"- লিখেছেন আরিফুল ইসলাম। আরিফ খান জয় মনে করেন, "গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করার জন্য বাংলাদেশে দক্ষ লোকের অভাব নেই তারপরও গার্মেন্টস সেক্টরে ইন্ডিয়ানদের প্রভাব খুব বেশি। এর প্রধান কারণ সরকারের ভারত প্রীতি। যেখানে একজন বাংলাদেশী লোক যদি চিকিৎসার জন্য ১ মাসের ভারতীয় ভিসার জন্য এপ্লাই করে তাকে দিবে ৭-১০ দিনের ভিসা। কিন্ত ভারতীয়রা যদি বাংলাদেশে চাকরির জন্য ভিসার আবেদন করে তাহলে তারা খুব দ্রুত ভিসা পেয়ে যায়...।" বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: হৃদরোগ ঠেকাতে সপ্তাহে অন্তত চারদিন ব্যায়াম যে দ্বীপে ১২ বছর পর প্রথম কোন শিশুর জন্ম নারীর পেটে যেভাবে এলো একশোর বেশি কোকেন ক্যাপসুল
রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখে পরীক্ষা দিতে থাকেন নাজমুন নাহার। শুরুতে সরকারি চাকরির চেষ্টা করে অবশেষে সেখানে ব্যর্থ হয়ে এরপর আবেদন করতে থাকেন বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার একটি পছন্দসই চাকরি আর পাওয়া হয়নি।
পরিবার টিকিয়ে রাখতে ফিলিস আরভিং (ডানে) দত্তক নিয়েছিলেন লিলিয়ান ফেডারম্যানকে। পরিবার টিকিয়ে রাখতে ফিলিস দত্তক নিয়েছিলেন লিলিয়ানকে। ১৯৭১ সালের দিকে যখন নারী অধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল, তখন ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করতেন লিলিয়ান ফেডারম্যান। একটি নতুন বিভাগ তৈরি করার ব্যাপারে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিষয়ক পরিচালক ফিলিস আরভিং-এর সাথে। তাদের প্রেমের গল্পের সেখান থেকেই শুরু। আর সেই গল্পের মেয়াদ কয়েক দশকের মতো। যে গল্পে রয়েছে বিভ্রান্তিকর কিছু পরিস্থিতি, যার ফলশ্রুতিতে নিজের সঙ্গিনীকে দত্তক নেয়া আবার তাকে বিয়ে করার মতো অদ্ভুত সব ঘটনা রয়েছে। এই গল্পের মেয়াদ কয়েক দশকের মতো। ভালবাসা ও গোপনীয়তা তাদের যখন পরিচয় হয়, সেসময় সমকামীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র খুব কঠিন একটি জায়গা। বিবিসির আউটলুক অনুষ্ঠানকে লিলিয়ান বলছিলেন, "সেসময় দেশের যেকোনো প্রান্তে আমাদের অপরাধী মনে করা হতো। বেশিরভাগ সমকামীরা খুব গোপনীয়তা বজায় রাখতো।" সেসময় সরাসরি কেউ বলতো না যে তারা সমকামী। সেসময় আমরা জানতাম আমাদের মুখ বন্ধ রাখতে হবে। আমরা নীরবে যে যার জীবন কাটাতাম।" কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মীরা ধীরে ধীরে আঁচ করছিলেন যে কিছু একটা চলছে। লিলিয়ান বলছিলেন, "ওরা আমাদেরকে ডাকতো 'ফিলিয়ান' ও 'লিলিস', কারণ আমরা সবসময় একসাথে থাকতাম।" "আমি যখন লেসবিয়ান সম্পর্কের ইতিহাস নিয়ে একটি বই লিখলাম তখন সবাই বুঝে নিয়েছিল যে আমরা দুজনে আসলে যুগল ছিলাম।" আরো পড়ুন: 'সমকামী বলে আমি এখন পরিবারের বিষফোঁড়া' নারী সমকামীরা কীভাবে গোপন ভাষায় কথা বলে? এক পর্যায়ে এই যুগল পরিবারের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সংসার বাধার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সেই যুগে বিষয়টি আইনগত দিক থেকে অসম্ভব ব্যাপার ছিল। দুজনে সেময় নিজেদের জন্য একটি অদ্ভুত সমাধান খুঁজে বের করলেন। একত্রে বসবাসের জন্য চল্লিশের কোঠায় থাকা ফিলিস তার তিরিশের কোঠায় থাকা প্রেমিকা লিলিয়ানকে নিজের মেয়ে হিসেবে কাগজে কলমে দত্তক নেন। কিন্তু যখন ২০০৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতে সমকামীদের বিয়ে বৈধ হল তখন তারা বিয়েও করলেন। যার ফলে মা মেয়ে হয়ে উঠলেন বিবাহিত দম্পতি। লিলিয়ান হেসে বলছিলেন, "আমার মনে হয় পৃথিবীর অন্য যেকোনো দম্পতির তুলনায় আমাদের আইনি বন্ধন অনেক বেশি।" সন্তান নেয়ার জন্য চিকিৎসককে মিথ্যে বলেছিলেন লিলিয়ান। মাতৃত্ব ও বিয়ে ১৯৭৪ সালে এই প্রেমিক যুগল সিদ্ধান্ত নিলেন যে তারা সন্তান নেবেন। ফিলিসের চেয়ে লিলিয়ান বয়সে এগারো বছর ছোট ছিলেন। তারা দুজনে শরণাপন্ন হলেন গর্ভাশয়ে কৃত্রিম উপায়ে বীর্য প্রতিস্থাপনে সহায়তা করে এমন একটি ক্লিনিকের। সেসময় বিষয়টি খুবই নতুন কিছু ছিল আর বিবাহিত না হলেতো কথাই নেই। তবে লিলিয়ান চিকিৎসককে বিষয়টি বোঝাতে সমর্থ হয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, "ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি যদি বাচ্চাই নিতে চাই তাহলে বিয়ে করিনি কেন।" "আমার উত্তর ছিল, আমার বয়স ৩৪। আমার ডক্টরেট ডিগ্রি রয়েছে। আমি ইতিমধ্যেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট। আমার মতো মেয়েদের ব্যাপারে পুরুষরা কিছুটা দ্বিধায় ভোগে।" এরপর চিকিৎসক কৃত্রিম উপায়ে তার গর্ভে বীর্য স্থাপন করেন এবং তাতে সফল হন। ১৯৭৯ সালে এভ্রমের যখন চার বছর বয়স। দুই থেকে তিন ১৯৭৫ সালে লিলিয়ান এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। যার নাম রাখা হয় এভ্রম। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই জুটি উপলব্ধি করেন তারা আইনের মারপ্যাঁচে কিভাবে আটকে যাবেন। "সেসময় আমাদের মধ্যে কোন আইনি বন্ধন ছিল না। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল যদি এভ্রম কোন কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে, আর আমি না থাকলে তাকে যদি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয় ফিলিসকে, তাহলে কোনভাবেই সে বৈধ অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত হবে না।" আরো পড়ুন: নিজের 'সমকামিতা' নিয়ে মুখ খুললেন করণ জোহর 'মুসলিম নারী হলেও সমকামী হওয়া যায়' আরও উদ্বেগ তৈরি হল যদি লিলিয়ান মারা যান, ফিলিস আইনত এভ্রমের অভিভাবকত্ব পাবেন না। সেসময় একই লিঙ্গের দুই ব্যক্তি আইনত শিশু দত্তক নিতে পারতেন না অথবা কৃত্রিম উপায়ে সন্তান নেয়াও তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। তাই এভ্রমকে দত্তক নেয়ারও কোন উপায় ছিল না। সত্তরের দশকে যুক্তরাষ্ট্রে সম-লিঙ্গের প্রেম আইনত দণ্ডনীয় ছিল। যেভাবে তারা মা মেয়ে হলেন দুজনে আবার সমাধান খুঁজতে লাগলেন। সেসময় ক্যালিফোর্নিয়ায় এক আইনের আওতায় প্রাপ্তবয়স্ক কোন ব্যক্তির সাথে আরেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির যদি দশ বছর বয়সের তফাৎ থাকে তাহলে বয়স্কদের দত্তক বৈধ। সেই সুযোগটা দুজনেই লুফে নিলেন এবং ফিলিস দত্তক নিলেন লিলিয়ানকে। যার ফলে ফিলিস আইনত এভ্রমের নানী হলেন। ফিলিস বলছিলেন, "এভ্রমের সাথে আমার একটা আইনি সম্পর্ক তৈরি করতে এটাই আমার একমাত্র উপায় মনে হয়েছিল।" কিন্তু এখন এই মা ও মেয়ে, যারা একইসাথে আবার প্রেমিক যুগল, তাহলে দেশটির আইন অনুযায়ী তারা অজাচার বা ঘনিষ্ঠ রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন কারো সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করছেন। বিষয়টি নিয়ে সাক্ষাৎকারে ফিলিস কৌতুক করলেও লিলিয়ান সেটিকে একটু গম্ভীরভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, "আমাদের কাছে বিষয়টা উদ্ভট ছিল না কারণ আমাদের একে অপরের প্রতি মা ও মেয়ের অনুভূতি ছিল না। পুরো জিনিসটাই আমরা করেছিলাম আইনত যাতে আমরা তিনজন একসাথে থাকতে পারি সে জন্যে।" "এভ্রমের যে যুগে জন্ম তখন কোন শিশুর দুটো মা ছিল না। আমাকে দত্তক নেয়া মানে সে ফিলিসকে তার বন্ধুদের কাছে নানী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারতো।", বলছিলেন লিলিয়ান।" "বিষয়টা এভ্রমের জন্য সহজ ছিল। যদিও সে বুঝতে পারতো যে ফিলিস আসলে তার আরেকজন মা।" "এভ্রম সব সময় তার আইনি নানীকে 'মামা ফিলিস' বলে সম্বোধন করতো। এখন তার বয়স ৪৫ বছর। সে এখনো ফিলিসকে একইভাবে সম্বোধন করে।" এখনো টিকে আছে তাদের সম্পর্কের আইনি ভীত। যেভাবে মায়ের সাথে হয়ে গেল মেয়ের বিয়ে ২০০৮ সালে দুজনের তখন অনেক বয়স, সেসময় ক্যালিফোর্নিয়ায় সম-লিঙ্গের বিয়ে বৈধ ঘোষণা করা হল। কোন কিছু চিন্তা না করেই যেদিন এই আইন পাশ হল তার পরের দিনই বিয়ে করে ফেললেন ফিলিস ও লিলিয়ান। কিন্তু কাগজে কলমে তখনো তারা মা-মেয়ে। বিষয়টি অদ্ভুত থেকে অদ্ভুত হতে থাকলো, যেহেতু দত্তক সম্পর্কিত কাগজগুলো তখনও বহাল ছিল। এরপর তারা বিস্ময়ের সাথে আবিষ্কার করলেন সেই কারণেই তাদের বিয়ে আসলে ক্যালিফোর্নিয়ার আইন অনুযায়ী অকার্যকর। এমন অবস্থায় তারা কিছুই করতে পারছিলেন না। আসল মা-মেয়ে না হলেও দত্তকের কারণে অজাচারের অভিযোগে তারা বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সকল অঙ্গরাজ্যে সম-লিঙ্গের বিয়ে বৈধ করা হল। সেসময় একজন আইনজীবী পরামর্শ দিয়েছিলেন দত্তকের কাগজপত্র বাতিল করে আরেক বার বিয়ে করতে। সেক্ষেত্রে তাদের বিয়ে এবার বৈধ হবে, তাদের তিনজনের সম্পর্কের একটি আইনি ভিত থাকবে। ২০০৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতে সমকামীদের বিয়ে বৈধ হলে লিলিয়ান ও ফিলিস বিয়ে করেছিলেন। ঘটনার এখানেই শেষ নয় প্রেম বা সম্পর্ক অনেক সময় আজীবন টেকে না। তেমনি ফিলিস ও লিলিয়ানের প্রেমেরও একপর্যায়ে সমাপ্তি হল। কিন্তু এভ্রমের কী হবে? 'মামা ফিলিস' সেক্ষেত্রে আইনত আর তার নানীও থাকছেন না কারণ দত্তকের কাগজ বাতিল করা হয়েছে। ফিলিস ও লিলিয়ানের বিচ্ছেদের কারণে তার সাথে শুধু মা লিলিয়ানের আইনি সম্পর্ক রইল। এমন এক পর্যায়ে এসে এভ্রম ফিলিসকে অনুরোধ করলেন তাকে ছেলে হিসেবে দত্তক নিতে। তার ইচ্ছে পূরণ করেছেন ফিলিস। দত্তক অনুষ্ঠানে এভ্রম এসেছিলেন তার নিজের স্ত্রী ও পুত্র সন্তানকে নিয়ে। ফিলিস বলছিলেন, "খুব অসাধারণ একটা বিষয় ছিল আমার জন্য। আমি যে শিশুকে গর্ভে থাকাকালীন রোজ রাতে গান শুনিয়েছি, যার মল-মূত্র পরিষ্কার করেছি, সে চেয়েছে আমি তার বৈধ মা হই।" কয়েক দশক জুড়ে নানা উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া এই পরিবারটি তাদের আইনি বৈধতা ও সম্পর্কে টিকিয়ে রাখল। ২০০৩ সালে নিজের আত্মজীবনীমূলক 'নেকেড ইন দ্যা প্রমিসড ল্যান্ড' বইয়ে লিলিয়ান ফেডারম্যান সেই গল্পই লিখেছেন। অন্যান্য খবর: ঢাকায় বাড়িঘরে রঙ করার নোটিশ, মিশ্র প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সই করার পর এখন তালেবান কী করবে? কয়েকটি চিত্রে করোনাভাইরাসের উপসর্গ, পরীক্ষা, চিকিৎসা ও পরামর্শ
এই প্রেমের গল্পের অনেক মোড়, অনেক উত্থান পতন। যার কেন্দ্রে রয়েছেন সমকামী যুগল ফিলিস আরভিং ও লিলিয়ান ফেডারম্যান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকার ইতিহাসে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে অনেক ব্যতিক্রম এবং প্রার্থীদের জন্য অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, আন্তর্জাতিক পটপরিবর্তন, তার সাথে দেশটিতে করোনাভাইরাস মহামারির মারাত্মক প্রকোপের কারণে বদলে গেছে অনেক হিসেব নিকাশ। নভেম্বরের নির্বাচনে যেসব বিষয়ের ওপর বিচার বিশ্লেষণ করে ভোটাররা তাদের রায় দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাস, চাকরি-বাকরি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, পররাষ্ট্র নীতি, অভিবাসন ইত্যাদি। করোনাভাইরাস: ডোনাল্ড ট্রাম্প: সারা বিশ্বের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুও হয়েছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের। মি. ট্রাম্প শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের হুমকিকে খাটো করে দেখিয়েছেন। ভাইরাসটিকে তিনি খুব একটা গুরুত্ব দেননি। এমনকি মহামারি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগের ব্যাপারেও তিনি বারবার বাধা দিয়েছেন। বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনাতেও তিনি কখনও কখনও মুখর হয়েছেন। করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ। জানুয়ারি মাসে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও গোয়েন্দাদের সতর্কতা সত্ত্বেও তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু মার্চ মাসের পর থেকে ধীরে ধরে তার অবস্থানের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। তখন থেকে মহামারি মোকাবেলায় জাতীয়ভাবে কিছু তৎপরতা শুরু হয়। বিভিন্ন রাজ্যের সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া হয় পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। জো বাইডেন: তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার প্রথম কাজই হবে মহামারি মোকাবেলা করা। এজন্য তিনি একটি জাতীয় পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। ফ্রি নমুনা পরীক্ষা, টেস্ট সহজলভ্য করা, কন্টাক্ট ট্রেসিং-এর জন্য এক লাখ কর্মী মোতায়েন, চিকিৎসা- এসবের জন্য সর্বোচ্চ খরচের ব্যাপারেও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রত্যেক রাজ্যের গভর্নরকে তার এলাকার লোকজনের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার বিষয়েও জোর দিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতের যে কোন মহামারি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথাও বলেছেন জো বাইডেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নির্বাচিত হলে এই সঙ্কট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি বিশ্ব নেতৃত্বের অবস্থানে নিয়ে আসবেন। তার প্রশাসন আবারও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যোগ দিয়ে মহামারি মোকাবেলায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা গ্রহণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা: আমেরিকা ফার্স্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প: করোনাভাইরাসের কারণে বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা মি. ট্রাম্পের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। 'আমেরিকা ফার্স্ট' বা সবকিছুতে আমেরিকা অগ্রাধিকার পাবে এই নীতির পক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা দীর্ঘ দিনের। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও চেষ্টা করেছেন। আগের বারের নির্বাচনী প্রচারণায় মি. ট্রাম্প কর্মজীবী আমেরিকানদের কর হ্রাসের অঙ্গীকার করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর। একই সাথে তিনি কল কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপরেও জোর দিয়েছিলেন। এসব প্রতিশ্রুতির কিছু কিছু তিনি পূরণও করেছেন। গত চার বছরে বাণিজ্য সংক্রান্ত আইন কানুনে পরিবর্তন এনেছেন, কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত আয়কর হ্রাস করেছেন এবং দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাহী আদেশও জারি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে চার লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, এই খাতে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে এবং মি. ট্রাম্পের নীতির কারণে তেমন মৌলিক কোন পরিবর্তন ঘটেনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন মহামারি শেষ হওয়ার সাথে সাথে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। যদিও সমালোচকরা বলছেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তার গৃহীত পদক্ষেপের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতি আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জো বাইডেনের স্লোগান: বিল্ড ব্যাক বেটার। জো বাইডেন: করোনাভাইরাসের তাৎক্ষণিক ধাক্কা সামাল দিতে যতো অর্থের প্রয়োজন ততো অর্থ খরচ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মি. বাইডেন। এসবের মধ্যে রয়েছে ছোট খাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া এবং পরিবারগুলোকে নগদ অর্থ সাহায্য প্রদান। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সামাজিক নিরাপত্তা হিসেবে প্রতি মাসে তিনি আরো ২০০ ডলার করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রস্তাব করেছেন, শিক্ষার্থীদের ১০,০০০ ডলার ঋণ মওকুফের। তার অর্থনৈতিক নীতিমালার স্লোগান হচ্ছে: বিল্ড ব্যাক বেটার। এর মাধ্যমে মূলত তিনি তরুণ-তরুণী ও শ্রমজীবী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চাইছেন। তিনি ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ১৫ ডলারে উন্নীত করতে চান। তরুণদের কাছে এই প্রচারণা খুবই জনপ্রিয়। আর একারণে এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের প্রচারণায় এটিকে অন্যতম ইস্যু বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়াও পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানীর পেছনে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলেছেন তিনি। আমেরিকান পণ্য ক্রয়ের জন্যেও তিনি ৪০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। এসংক্রান্ত একটি আইনের (আমেরিকান পণ্য ক্রয় করুন বা 'বাই আমেরিকান') কথাও বলছেন। উত্তর আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নাফটাকে সমর্থন দেয়ায় এর আগে জো বাইডেনের সমালোচনা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এই চুক্তির ফলে দেশের চাকরি-বাকরি বিদেশে চলে গেছে। মি. বাইডেনের পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পণ্য, সেবা, গবেষণা ও প্রযুক্তির পেছনে ৩০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাণিজ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প: চীনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের পণ্য টিকিয়ে রাখা ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরো একটি নির্বাচনী স্লোগান। তার কথা হলো, নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে। তার পর অন্য কিছু। তিনি বলেন, 'আমেরিকা প্রথম' এই কথার অর্থ এই নয় যে 'আমেরিকা একা।' বাণিজ্য ইস্যুতে মি. ট্রাম্প চীনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের পণ্যকে রক্ষা করতে তিনি কিছু নীতিমালাও গ্রহণ করেছেন। প্রথম মেয়াদে তিনি পুরনো কিছু বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে নতুন করে সমঝোতার ওপর জোর দিয়েছেন। তার মতে, এসব চুক্তি ভারসাম্যপূর্ণ নয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে নাফটা বা উত্তর আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। তাই তিনি এই সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সরিয়ে নিয়েছেন ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশীপ বা টিপিপি থেকেও। আগের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বাণিজ্য ঘাটতি (আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধান) দূর করার ব্যাপারেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গত ছয় বছরের মধ্যে এই ঘাটতি ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো হ্রাসও পেয়েছে। তবে এর ফলে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে অর্থনীতিবিদরা সেটা মানতে রাজি নন। চীন থেকে কারখানা সরিয়ে আনার ব্যাপারে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করতে অগাস্ট মাসে তিনি ট্যাক্স ক্রেডিট দেয়ার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছেন, "এর মাধ্যমে চীনের ওপর আমাদের নির্ভরতার অবসান ঘটবে।" চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধও নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপরেও কর বসিয়েছেন মি. ট্রাম্প। এসবের মধ্যে রয়েছে ইস্পাত থেকে শুরু করে ফরাসী ওয়াইন। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর কর আরোপেরও হুমকি দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি কানাডা থেকে অ্যালুমিনিয়াম পণ্য আমদানির ওপরেও নতুন করে কর আরোপ করেছেন। জো বাইডেন: বাণিজ্যের ব্যাপারে মি. বাইডেন এক জটিল ও অনিশ্চিত অবস্থানে আছেন। চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য একদিকে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করছেন আবার অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট এই প্রার্থী চীনের ব্যাপারে নমনীয় ভূমিকাও দেখাতে চান না। তিনি যে খুব বেশি মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষে তাও প্রকাশ করতে চান না। আর এসব কারণেই তিনি 'যুক্তরাষ্ট্রপন্থী এক বাণিজ্য কৌশলের' প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পররাষ্ট্র নীতি ডোনাল্ড ট্রাম্প: শুধু বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই নয়, পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান 'আমেরিকা ফার্স্ট।' হোয়াইট হাউজ এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয় এভাবে: যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব পুন-প্রতিষ্ঠা এবং প্রত্যেকটি দেশের যার যার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার। বিশেষ করে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে কি এর অর্থ এরকমই? পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান আমেরিকা ফার্স্ট। বাস্তবে যা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যারিস চুক্তি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়া। ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকেও ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও তিনি প্রতিরক্ষা জোট নেটোর মতো আন্তর্জাতিক কিছু জোট নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেছেন, এর সদস্য দেশগুলোকে আরো বেশি অর্থ দিতে হবে। বিদেশে মোতায়েন মার্কিন সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে আনারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তার সমালোচকরা বলছেন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে গিয়ে মি. ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছেন। পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ে তার কিছু সাফল্যও আছে। সম্প্রতি ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরিতে তিনি সহায়তা করেছেন। ইসলামিক স্টেটের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি এবং ইরানের সামরিক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার ব্যাপারেও তার ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। জো বাইডেন বলছেন প্রেসিডেন্ট হলে তিনি বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্ব পুন-প্রতিষ্ঠা করবেন। জো বাইডেন: মি. বাইডেন বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি জাতীয় ইস্যুকে অগ্রাধিকার দেবেন। তিনি বলেছেন, তার কোন পররাষ্ট্র নীতি নেই কিন্তু বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্ব পুন-প্রতিষ্ঠা করার জন্য তার একটি পরিকল্পনা আছে। তার এই বক্তব্য থেকে এটা বলা যাবে না যে মি. বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতি বিশ্ব পর্যায়ে 'বহু দেশের অংশগ্রহণের নীতি' থেকে দূরে সরে গেছে। কিন্তু মি. ট্রাম্পের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার পক্ষে। মি. বাইডেন বলেছেন, তার কাজ হবে এই বিচ্ছিন্নতা দূর করে আবারও আন্তর্জাতিক চুক্তি, পরিকল্পনা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রশক্তির সাথে সম্পর্ক মেরামতের কথাও বলেছেন জো বাইডেন। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা জোট নেটোর সঙ্গে। সাবেক এই ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাণিজ্যে ভারসাম্যহীন পরিবেশের জন্যে চীনকে জবাবদিহি করতে হবে। তবে তিনি বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে মিলে একটি আন্তর্জাতিক জোট করার কথা বলেছেন যা চীন উপেক্ষা করতে পারবে না। তবে তার এই প্রস্তাবের অর্থ কী সেটা খুবই অস্পষ্ট। অভিবাসন ডোনাল্ড ট্রাম্প: মি. ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন্যতম একটি ভিত্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কমিয়ে আনা। এবারও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পুন-নির্বাচিত হলে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কাজ অব্যাহত থাকবে। এখনও পর্যন্ত তিনি ৭২২ মাইল সীমান্তের মধ্যে ৪৪৫ মাইল প্রাচীর নির্মাণের অর্থ সংস্থান করতে পেরেছেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র বসবাসরত অভিবাসীদের পরিবারের সদস্যদেরকে তাদের নিজেদের দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার নীতির অবসান ঘটানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মি. ট্রাম্প লটারি ভিসা পদ্ধতি বাতিল করে যোগ্যতার ভিত্তিতে ভিসা ব্যবস্থা চালু করার কথা বলেছেন। অভিবাসন বিষয়ে দুই প্রার্থীর অবস্থানের অনেক তফাৎ। আরো পড়তে পারেন: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে যে আটটি তথ্য জেনে রাখতে পারেন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি কী ও কীভাবে কাজ করে অভিবাসন নীতি সংস্কারে তার পরিকল্পনা সম্প্রতি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চেয়েছিলেন এরকম একটি আইন বাতিল করতে যাতে শিশু বয়সে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা সাড়ে ছয় লাখ লোককে আশ্রয় দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের ওই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। জো বাইডেন: মি. বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে নির্বাচিত হলে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন সংক্রান্ত অনেক সিদ্ধান্ত, যেগুলো তিনি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করেছিলেন, সেগুলো বাতিল করে দেবেন। তার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর সীমান্তে শিশুদেরকে তাদের পিতামাতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার নীতি। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চেয়ে আবেদনের সংখ্যার ওপর মি. ট্রাম্প যে সীমা বেঁধে দিয়েছেন সেটাও বাতিল করার কথা বলছেন তিনি। বলেছেন, বেশ কয়েকটি মুসলিমপ্রধান দেশ থেকে লোকজনের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার কথাও। হোয়াইট হাউজে কে বসবেন - সিদ্ধান্ত হবে ৩রা নভেম্বর। এছাড়াও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে শিশু বয়সে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা যেসব লোকজনকে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছিল তাদেরকেও রক্ষার কথা বলেছেন তিনি। স্বাস্থ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প: সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গৃহীত এক স্বাস্থ্য সেবা 'অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট' যা ওবামা কেয়ার নামে পরিচিত সেটা বাতিল করার জন্য ২০১৬ সালে প্রচারণা চালিয়েছেন মি. ট্রাম্প। পুরোপুরি বাতিল করতে ব্যর্থ হলেও ট্রাম্প প্রশাসন এর কিছু কিছু অংশ প্রত্যাহার করে নিতে সক্ষম হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জুলাই মাসে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন যার ফলে বিদেশ থেকে কম মূল্যে ওষুধ আমদানি করা যাবে। তবে কোন কোন বিশ্লেষক বলছেন যে বাজারে এর তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। মি. ট্রাম্প অপিওয়েড ড্রাগ সমস্যাকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য খাতে জরুরি অবস্থা বলে ঘোষণা করেছিলেন ২০১৭ সালে। এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে তিনি প্রায় দুশো কোটি ডলারের এক অর্থ তহবিলেরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রোগের চিকিৎসায় অপিওয়েডকে প্রেসক্রাইব করা বন্ধ করতেও তিনি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ওবামা কেয়ারের বিপক্ষে, পক্ষে জো বাইডেন। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, ওবামা কেয়ার বাতিল করে দেয়া হলে এই ড্রাগ সমস্যা মোকাবেলা আরো কঠিন হয়ে পড়বে। জো বাইডেন: মি. বাইডেন বলেছেন, ক্ষমতায় এলে তিনি স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প সম্প্রসারণ করবেন। প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে তিনি যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন এই প্রকল্পটি গৃহীত হয়েছিল। সকল আমেরিকানের ৯৭%কে এই ইনস্যুরেন্সের আওতায় নিয়ে আসারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। সবার জন্য তিনি মেডিকেয়ারের মতো স্বাস্থ্য বীমা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেছেন যাতে বয়স্ক মানুষের জন্য স্বাস্থ্য সেবার কথা বলা হয়েছে। একটি গবেষণা গ্রুপ বলছে, এজন্য আগামী ১০ বছরে মি. বাইডেনের খরচ হতে পারে সোয়া দুই ট্রিলিয়ন ডলার। জলবায়ু পরিবর্তন ডোনাল্ড ট্রাম্প: ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মি. ট্রাম্প পরিবেশ রক্ষাকারী বেশ কিছু বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে জ্বালানী কেন্দ্র ও যানবাহনের কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের সীমা। আগের বারের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি এসবের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে করা আন্তর্জাতিক প্যারিস চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তার যুক্তি হলো এই চুক্তি থেকে তার দেশ লাভবান হচ্ছে না, বরং অন্য দেশগুলো এথেকে সুবিধা নিচ্ছে। প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আরো পড়তে পারেন: ডোনাল্ড ট্রাম্প: টিভি তারকা থেকে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন: এবারের দৌড় হোয়াইট হাউসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার চাবিকাঠি কোন রাজ্যগুলোতে তবে এই চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে আসার কাজ সম্পন্ন হবে নভেম্বরের নির্বাচনের পর। অতি সম্প্রতি তিনি আলাস্কা আর্কটিক ন্যাশনাল ওয়াইল্ড-লাইফ রিফিউজে তেল ও গ্যাসের জন্যে ড্রিলিং-এর অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু পরিবেশের কথা বিবেচনা করে সেখানে এতদিন ড্রিলিং নিষিদ্ধ ছিলো। জো বাইডেন: জলবায়ুর পরিবর্তনকে অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য তিনি সারা বিশ্বকে সাথে নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। তার প্রথম কাজ হবে প্যারিস চুক্তিতে পুনরায় যোগ দেওয়া। এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা ২০২৫ সালের মধ্যে ২০০৫ সালের তুলনায় ২৮% কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়েছে। পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির গবেষণায় তিনি প্রায় পৌনে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি চান ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন শূন্যের মাত্রায় নামিয়ে আনতে। ২০১৯ সালে ৬০টিরও বেশি দেশের মধ্যে হওয়া এক সমঝোতায় এই অঙ্গীকার করা হয়েছিল। পরিবেশ দূষণকারী আরো দুটো বৃহৎ দেশ চীন এবং ভারত এখনও এই সমঝোতার পক্ষে সায় দেয়নি। বর্ণবাদ ও ফৌজদারি বিচার ডোনাল্ড ট্রাম্প: ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ায় সংস্কারের কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন মি. ট্রাম্প যাতে বিচারকদের বাড়তি কিছু ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আগের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি আইন প্রয়োগের ওপর জোর দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় থাকা কালেও তিনি একই অবস্থানে ছিলেন। সম্প্রতি পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর সারা দেশে বর্ণবাদবিরোধী 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলন শুরু হলে পুলিশের পক্ষে তার সমর্থন আরো জোরালো হয়। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আন্দোলনও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। জুন মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন যেখানে পুলিশ বাহিনীতে কিছু সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে পুলিশের হাতে নির্যাতনের ঘটনার তথ্যভাণ্ডার বা ডেটাবেইজ তৈরি করা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, সন্দেহভাজন কোন অপরাধীকে থামাতে তার গলা চেপে ধরা (যা চোকহোল্ড নামে পরিচিত) বন্ধ করতে হবে। তবে তিনি এর ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন নি। জো বাইডেন: পুলিশের নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর সারা দেশে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মুখে মি. বাইডেন বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ আছে এবং বৃহৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। তার বিল্ড ব্যাক প্রোগ্রামের একটি বিষয় হচ্ছে ৩,০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের জন্যে ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করা। ফৌজদারি অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে তিনি তার আগের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। ৯০-এর দশকে তার কথা ছিলো অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। কিন্তু এখন তিনি বর্ণবাদ, লিঙ্গ, আয় বৈষম্য, কারাগারে বন্দী থাকা এসব কমিয়ে আনা ও বন্দীদের মুক্তির পর তাদের পুনর্বাসনের জন্য বিচার ব্যবস্থায় কিছু নীতিমালা গ্রহণের প্রস্তাব করছেন। মৃত্যুদণ্ডের বিধান বাতিল করার কথাও বলেছেন তিনি। মি. বাইডেন বলেছেন, পুলিশের কাজের মান বজায় রাখতে হলে এই বাহিনীর পেছনে অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজন।
তেসরা নভেম্বর আমেরিকায় ভোটাররা সিদ্ধান্ত নেবেন আগামী চার বছর হোয়াইট হাউজে তারা কাকে দেখতে চান। তারা কি চান ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো চার বছরের জন্যে ক্ষমতায় থাকুক নাকি সেখানে তারা নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনকে বসাতে চান।
টিকটক তরুণদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। 'অপু ভাই' নামের এই টিকটকার অবশ্য তার ভাইরাল ভিডিওর জন্য খবরের শিরোনামে আসেননি। এসেছেন রাস্তায় মারপিট করে গ্রেফতার হওয়ার পর। এরপর জোর আলাপ শুরু হয়েছে টিকটকে কি ধরনের ভিডিও বাংলাদেশে বানানো হচ্ছে সেনিয়ে। অ্যাপটি ডাউনলোড করে বাংলাদেশে টিকটক সেলেব্রিটিদের পাতাগুলো দেখছিলাম। তাদের কারো কারো ভ্যারিফাইড অ্যাকাউন্টে ফলোয়ারের সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। যেমন 'শামিমআফরিনমনি', তার ফলোয়ার প্রায় ২০ লাখ। তার অ্যাকাউন্টে লাইকের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। 'রাফিভাইইউ' অ্যাকাউন্টে ঢুকে দেখা গেলো তার লাইকের সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ। বাংলাদেশে টিকটক কেন জনপ্রিয় হচ্ছে? কয়েক বছর আগেও ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করা খুব চমকপ্রদ একটা বিষয় ছিল। এখন কিছুদিন পরপরই নতুন কিছু আসছে। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট এরকম বেশকিছু অ্যাপের পর গত কয়েক বছরের ধরে নতুন যে অ্যাপটি অনেকের আকর্ষণ কেড়েছে তা হল চীনের অ্যাপ টিকটক। বাংলাদেশে টিকটক জুড়ে রয়েছে নানা ধরনের জনপ্রিয় গান, সিনেমার ডায়ালগ অথবা কোন ভাইরাল হওয়া কোন বক্তব্যের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে অভিনয়, নাচ দিয়ে মূলত হাস্যরসের ভিডিও। রাসয়াত রহমান জিকো বছর দুয়েক হল টিকটকে ভিডিও তৈরিতে ঝুঁকেছেন। তবে মূলত তিনি লেখালেখি করেন। তিনি বলছেন, "টিকটক খুব সহজ। ধরুন, একটা বই লিখতে গেলে কয়েক মাস লাগে। এত কয়েক মাস রাত জেগে কষ্ট করে একটা বই লেখার পর সেটা পাবলিশ হচ্ছে , তারপর বইটা কেউ পড়ছে, তারপর আমি ফিডব্যাকটা পাচ্ছি। কিন্তু টিকটকের ক্ষেত্রে আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে আপনি একটা টিকটক ভিডিও বানাবো। সেটা বানাতে আমার সর্বোচ্চ সময় লাগছে এক মিনিট। ভিডিও আপলোড করার সাথে সাথে খুব সহজে মানুষকে রিচ করতে পারছেন এবং প্রতিক্রিয়া পেয়ে যাচ্ছেন।" টিকটকে মজার ভিডিও তৈরি করে শেয়ার করা যায়। তিনি বলেছেন, অনেক সহজে, অল্প পরিশ্রম করেই প্রতিক্রিয়া পাওয়া, মানুষের প্রশংসা পাওয়া সেটা একধরনের আত্মতৃপ্তির কাজ করে। তার ভাষায়, এই আবেদনই বেশিরভাগ মানুষকে টিকটকের দিকে আগ্রহী করে তুলছে। জিকো নামে পরিচিত এই টিকটকার বলছেন, "আমি টিকটক করছি স্ট্রেস রিলিজ করার জন্যেও। আমি ব্যাংকে কাজ করি। ব্যাংকের কাজ খুবই স্ট্রেসফুল।টিকটকে একটু সময় দিয়ে স্ট্রেস রিলিজ করার চেষ্টা করি।" কাদের মধ্যে জনপ্রিয় টিকটক বিশ্বব্যাপী অ্যাপ ডাউনলোড চার্টের শীর্ষের দিকে রয়েছে টিকটক। টিকটকের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বব্যাপী আশি কোটি মানুষ এটি ব্যাবহার করছে। দু'হাজার উনিশ সালে জনপ্রিয় অ্যাপ ইন্সটাগ্রাম ও স্ন্যাপচ্যাটকে পিছে ফেলে বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ ডাউনলোডকারী অ্যাপে পরিণত হয়েছে টিকটক। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে 'ইনফ্লুয়েন্সার' হিসেবে জনপ্রিয় রাবা খান বলছেন, "চারপাশে অনেক নেতিবাচক বিষয় ঘটছে এখন। সেগুলো মানুষের কানে আসে। সেসব বিষয়ে খবর পড়তে হয়। মানুষ খুব একঘেয়ে বোধ করছে এবং বিনোদনের উপায় খুঁজছে। টিকটক খুব সহজ একটা বিনোদন।" বাংলাদেশে ভিডিও কন্টেন্ট স্ট্রিমিং সাইট বঙ্গবিডি'র অপারেসন্স বিষয়ক পরিচালক ফাইয়াজ তাহের বলছেন, "বাংলাদেশে মূলত তরুণ প্রজন্ম, যাদেরকে বলে মিলেনিয়াল তারাই এটি বেশ ব্যাবহার করছেন। মূলত হাসির জিনিস বানাতেই বেশি দেখা যায় তাদের।" তিনি বলছেন, বিশেষ করে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির সময়ে টিকটক অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। লকডাউনের সময় টিকটক বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। আরো পড়তে পারেন: সরকারি কর্মকর্তার বদলি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় কেন হৈচৈ ফেসবুকে যেভাবে প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কয়েকজন বিদেশি সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ৬৫ শতাংশ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী লকডাউন আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে ঘরে বসে অনেকেই নিজেকে ব্যস্ত রাখতে বা বিনোদনের জন্য টিকটক বেছে নিয়েছেন। তার ভাষ্যমতে, "আজকের দিনে তরুণ প্রজন্মের সামনে ঠিক তেমন কোন নির্দেশনা নেই। কোন রোল মডেল নেই। তারা মজার কিছু একটা পেয়েছে।" টিকটক যেভাবে কাজ করে জনপ্রিয় হতে হলে হয়ত কোন টিভি অনুষ্ঠানে, সিনেমায় অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে হয়। টিকটকে অডিশনের দরকার নেই। অ্যাপটি ডাউনলোড করুন, একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। অ্যাপটিতে রয়েছে নানা ধরনের জনপ্রিয় গান, সিনেমার ডায়লগ আর সাউন্ড এফেক্টস। অ্যাপটির মাধ্যমে নিজেকে ভিডিও করুন, তার আগে জুড়ে দিন অ্যাপটিতে থাকা পছন্দমতো গান, ডায়ালগ বা সাউন্ড এফেক্টস, ভিডিওতে গানটির সাথে ঠোঁট মেলান, সাথে ইচ্ছে হলে নাচ যোগ করতে পারেন, অ্যাপে নানা ধরনের ফিল্টার রয়েছে সেগুলো যোগ করতে পারেন, ভিডিও হয়ে গেলে পছন্দমতো যায়গায় ভিডিও এডিট করুন, খুব কম সময়ে তৈরি হয়ে গেল কন্টেন্ট, তারপর শেয়ার করুন। এসব কিছু ছাড়াও শুধু ভিডিও করতে পারেন। বাংলাদেশে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের সময়কার একটি ভিডিও হয়ত অনেকের মনে আছে। ভোটকেন্দ্রে লাইনে দাড়িয়ে থাকা নারীদের মুখে 'খুশিতে, ঠেলায়, ঘোরতে' - এই কথাগুলো অনুকরণ করে বিখ্যাত হয়েছেন অনেকেই। কোন বিশিষ্ট ধর্মীয় বক্তার ওয়াজ, কোন রাজনিতিকের বক্তৃতার মতো গলা উঁচিয়ে অনুকরণ করে ভিডিও শেয়ার করে বেশ লাইক পেয়েছেন অনেকেই। টিকটকের ভিডিও দেখা যায় ফেসবুকে অথবা ইন্সটাগ্রামে। বাংলাদেশে মূলত হাসির ভিডিও তৈরির প্রবণতাই বেশি মনে হল। রাবা খান বলছেন বিনোদনের উপায় খুঁজছে। আগে 'ভাইন' নামে একটি 'কন্টেন্ট ক্রিয়েটর' ছিল। তবে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জনপ্রিয় গান, সিনেমার ডায়ালগের ব্যাবহারের অনুমোদন নিয়ে রেখেছে টিকটক। যা অন্য অ্যাপগুলোতে নেই। সেটাও এর জনপ্রিয়তার কারণ হতে পারে। সহজে জনপ্রিয় হওয়ার উপায়? ফাইয়াজ তাহের বলছেন, "এখন আর ভিডিও তৈরিতে আর প্রফেশনাল ক্যামেরা, শব্দ যন্ত্র, নানা ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ এসব কিছুই দরকার নেই। টিকটক এতটাই সহজ। আপনার দরকার একটা স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ। এটা হয়ত এর জনপ্রিয়তার একটি কারণ।" কোন খরচ ছাড়াই, খুব সহজে মনোযোগ পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে টিকটক? রাবা খান বলছেন, "আমি অন্যদের হয়ে কথা বলতে পারবো না। তবে আপনার যদি কোন মেধা না থাকে তাহলে আপনি কাউকে আকর্ষণ করতে পারবেন না। আপনাকে চার্মিং হতে হবে। ইন্টারেস্টিং কিছু দিতে পারতে হবে। কোন কারণ ছাড়া এমনিই কেই বিখ্যাত হয় না।" তবে তার মতে, "এখন ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি হচ্ছে অনেক বেশি। আর জন্য সবচেয়ে সহজ অ্যাপগুলোর একটি হল টিকটক যা অনেকদিন আমরা পাইনি।" ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের সহজলভ্যটার কারণে জনপ্রিয় হচ্ছে টিকটকের মতো অ্যাপ। টিকটকে টাকা কামাই ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন অনেকেই। টিকটকেও সেই সুযোগ রয়েছে। সেটা সম্ভব হতে হলে অবশ্য আপনার অনেক ফলোয়ার থাকতে হবে। ভিডিওর মাধ্যমে কোন পণ্যের বিক্রি বাড়াতে অনেক ব্র্যান্ড টিকটকে যাদের ফলোয়ার বেশি রয়েছে তাদের অর্থ দিয়ে থাকেন। অনেক সময় নতুন কোন পণ্য বাজারে আনার আগে বিজ্ঞাপনদাতারা টিকটকে সেলেব্রিটিদের পণ্যের বিক্রি বাড়াতে কাজে লাগান। আপনাকে টিকটক সেলেব্রিটি হতে হবে না তবে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় ফলোয়ার থাকলে টিকটকে লাইভ করতে পারেন ব্যবহারকারীরা। তারাই মূলত পণ্যের বাজারজাতকরণে বেশি গুরুত্ব পান। টিকটকে এমনকি লাইভ চলাকালীন নিলামের নমুনাও রয়েছে। আপনার টিকটক অ্যাকাউন্টে বিজ্ঞাপন দেয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েও অর্থ উপার্জন সম্ভব। অর্থাৎ, জনপ্রিয় ভিডিও দেখার সময় এসব বিজ্ঞাপন দেখা যাবে আর তাতে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন ভিডিওটি শেয়ার করেছেন যে টিকটকার। বাংলাদেশে এভাবে সেলেব্রিটিরা কত অর্থ উপার্জন করছেন সে সম্পর্কে কোন উপাত্ত নেই। তবে এটা হয়ত বলা যায় যে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের সহজলভ্যটার কারণেও সম্ভবত এখন মোবাইল ভিত্তিক অ্যাপ নিয়ে কিছু একটা পরখ করে দেখার নেশাও বেড়েছে তরুণদের মধ্যে।
কয়েকদিন ধরে চুলে ফ্লুরোসেন্ট সবুজাভ ধাঁচের রং করা এক তরুণের ছবি খবরে বেশ দেখা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও তাকে নিয়ে বেশ আলাপ চলছে।
নিষেধ মানেনি মেয়ে। রফিকুলকে না জানিয়ে গোপনে কলেজে ভর্তি হন। চালাতে থাকেন পড়ালেখা। কিন্তু খবর গোপন থাকেনি। রফিকুল সব জেনে যায়। রফিকুল দেশে ফেরে ২০১১ সালে। স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দেবে বলে চোখ বন্ধ করতে বলে। তারপর চাপাতির এক কোপে কেটে ফেলে তার ডান হাতের চারটি আঙুল। হ্যাঁ। সারপ্রাইজ-ই বটে। একবিংশ শতকের বাংলাদেশে স্বামীর অমতে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ায় মধ্যযুগীয় কায়দায় শাস্তি দিয়ে জুঁইয়ের আঙুল কেটে নেয় তার নিয়ন্ত্রণবাদী স্বামী। হাওয়া আক্তার জুঁই: নয় বছর আগে স্বামীর আক্রমণে হাতের সব আঙ্গুল হারান। এই আঙুল কাটার প্রসঙ্গেই একবার মনশ্চক্ষে দেখে নিন হুমায়ুন আহমেদ পরিচালিত 'চন্দ্রকথা' সিনেমার একটি দৃ্শ্য। সেই দৃশ্যে সুপারি কাটার যন্ত্র— ছৎরার ভেতর আটকানো চন্দ্র'র বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙুল। গ্রামের মেয়ে চন্দ্র'র বিয়ে হয় জমিদারিহীন জমিদার সরকার সাহেবের সাথে। চন্দ্রের অপরাধের শাস্তি হিসেবে ছৎরা দিয়ে আঙুল কাটার সিদ্ধান্ত নেন ক্ষয়িষ্ণু জমিদার। আঙুল কাটার আগে চন্দ্রর আঙুল হাতে নিয়ে স্বামী বলেন, "বাহ! কী সুন্দর আঙুল। আমি এখন নিজের হাতে তোমার একটা আঙুল কেটে ফেলবো। অপরাধের শাস্তি"। জুঁই, আয়শা, রুমানা মঞ্জুর... স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে পড়ালেখা কম জানা প্রবাসী শ্রমিক রফিকুল, উচ্চশিক্ষিত রুমানা মঞ্জুরের স্বামী সাইদ হাসান, রূপালি পর্দার চরিত্র সরকার সাহেব এবং পুরাণের চরিত্র রামের মধ্যে কোনো প্রভেদ নেই। নারীকে লক্ষণগণ্ডির ভেতর বন্দী করে রাখতে মিথের চরিত্র থেকে বাস্তবের পিতা-ভ্রাতা-স্বামী— কেউ কারো চেয়ে কম নয়। প্রেমের নামে, স্নেহ-মায়া-মমতার নামে, পরিবারের মান-সম্মানের নামে, সমাজের রীতি-নীতি-প্রথা-সংস্কৃতির নামে নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা, নারীর শরীর ও মন সব কিছুকেই নিয়ন্ত্রণ করে পুরুষ। পিতা-ভ্রাতা-স্বামী ও পুত্রের ক্ষমতার দণ্ডকে সিস্টেমিকভাবে আরো পাকা-পোক্ত করেছে প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক বিবিধ নিয়মাবলী। কক্সবাজারে সার্ফিং:১২-বছর বয়স্ক রিফার মত চলচ্চিত্রের কাল্পনিক চরিত্র আয়েশাও সার্ফার হতে চেয়েছিল। দেশের অধিকাংশ নারীর জীবন 'ন ডরাই' সিনেমার আয়শার চেয়ে বিশেষ আলাদা নয়। দরিদ্র্র পরিবারের মেয়ে প্রতিভাময়ী আয়শা। সার্ফার হতে চেয়েছিল। কিন্তু তার রক্ষণশীল বড় ভাই আয়শার আশার পথে কাঁটা বিছিয়েছে। নিষেধ-বারণ না শুনে গোয়ার্তুমি করে আয়শা তবু হাতে নিচ্ছিল সার্ফিং বোর্ড। তাই, পিটিয়ে-রক্তাক্ত করে দিনের পর দিন ঘরে তালা দিয়ে বন্দি করে রেখে আয়শাকে তার ভাই বুঝতে বাধ্য করে যে, সার্ফিং 'মেয়ে মানুষের' কাজ নয়। একদিন আয়শার বিয়ে হয়ে যায়। পাত্র তার চেয়ে বয়সে ঢের বড়। তবে, আয়শার পরিবারের তুলনায় সে বড় ব্যবসায়ী, ভালো পরিবার। আয়শার মতন কত অগুন্তি আয়শার কাছ থেকে এই দেশে কেড়ে নেয়া হয় প্রিয় ফুটবল বা ক্রিকেট ব্যাট বা নাচের ঘুঙুর? কত জুঁই ও আয়শা বলি হয় স্বামীর সংসারের হাঁড়িকাঠে? রাষ্ট্র আহত বা নিহতের পরিসংখ্যান রাখে শুধু। হাঁড়িকাঠে বলি হয়ে সংসারে উৎসর্গ হয়ে যাওয়াদের নাম কে কবে হিসেব রাখে টালি খাতায়? গ্রেফতার হবার পর রুমানা মঞ্জুরের স্বামী হাসান সঈদ, ২০১১ সালের ১৫ই জুন। বউ আর ঢোল বাড়ির ওপরে রাখতে হয়... বাস্তবের জুঁইয়ের আঙুল কেটে দেয় মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী স্বামী। রূপালী পর্দার আয়শাকে মেরে আহত করে হাসপাতালে পাঠায় স্বামী। রোমানা মঞ্জুরকে অন্ধ করে দিয়েছিল যে, সে-ও 'পরম পতি'। এইভাবে ঘরে ঘরে নারীর জন্য আজও চালু আছে 'থার্ড ডিগ্রি'। প্রত্যক্ষে-পরোক্ষে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত আপামর নারীর জন্য জারি থাকা থার্ড ডিগ্রিকে সমাজও অনুমোদন করে বৈকি! সামাজিক অনুমোদন থেকেই তৈরি হয় প্রবাদ 'বউ আর ঢোল বাড়ির ওপরে রাখতে হয়'! প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, বন্দির উপরে নানান কায়দায় শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে তার থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের কৌশলকে বলা হয় থার্ড ডিগ্রি। লোহার রড, চাবুক, কাঠ বা যে কোনো কিছু দিয়ে পেটানো, অশ্লীল-অশ্রাব্য ভাষায় আপনজনদের তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা, হাত-পা বেঁধে পেটানো, যৌন অত্যাচার করা, শরীরের বিভিন্ন অংশে বা যৌনাঙ্গে ছ্যাকা দেয়া থেকে শুরু করে আরো বিভৎস কায়দায় নির্যাতন করাকেই থার্ড ডিগ্রি বলে বোঝানো হয়। এদেশের পত্রিকার পাতাগুলো স্বাক্ষী। নারীরা এদেশে দাসস্য দাস। তাদেরকে বেঁধে পেটানো থেকে শুরু করে ছ্যাকা দেওয়া বা মারতে মারতে মেরে ফেলা— এসবই আকছার ঘটে। আর চড়-চাপড় মারা বা কথার ঘায়ে বিদ্ধ ও রক্তাক্ত করা তো ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। এদেশে নারীর জন্য এখনো জারি আছে থার্ড ডিগ্রী। অত্যাচারের ইতিহাস পুরনো। রাজা-রাজড়াদের আমলে নৃশংস পন্থায় নির্যাতনের নানা বিবরণ ইতিহাসে আছে। 'মধ্যযুগীয় বর্বরতা' তো নৃশংসতার উপমা হয়ে গেছে। তবে, আজকের দুনিয়ায় নিজেদের সভ্য দাবি করা রাষ্ট্রগুলোতে কোনো বন্দির জন্যই থার্ড ডিগ্রি অনুমোদিত নয়। এই তরিকায় এমনকি গুরুতর অপরাধীর স্বীকারোক্তি আদায় করতে গেলেও এখন উল্টে পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই প্রশ্নের মুখে পড়ে। বাংলাদেশেও ২০১৩ সালে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু এদেশে নারীর জন্য এখনো জারি আছে থার্ড ডিগ্রি। স্ত্রী পেটানোর সংস্কৃতিকে আমি 'থার্ড ডিগ্রি' ছাড়া আর কোনো নামেই অভিহিত করতে চাই না। স্ত্রী পেটানো এদেশে এখনো আইনীভাবে নিষিদ্ধ নয়। স্বামীর অমতে মেয়েটি যদি গান-নাচ-নাটকের চর্চা করতে চায় তবে অনেকক্ষেত্রেই তার কপালে জোটে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। বিয়ের পর স্ত্রী হচ্ছেন তার সম্পত্তি। ফলে, স্ত্রীকে 'শাসনে রাখা' তার একান্ত কর্তব্য। ঊন-মানুষের কথকতা... রাজা-রাজড়াদের কাছে প্রজারা ছিল ঊন-মানুষ। প্রভুদের কাছে দাসরাও ছিল তাই, বস্তু তুল্য; মালিকের সম্পত্তি। এদেশের সামাজিক মনস্তত্বেও নারী আজও ঊন-মানুষ। সে আজও একদিকে পুরুষের সম্পত্তি, আরেকদিকে পুরুষের দায়িত্ব। নারী: একদিকে পুরুষের সম্পত্তি, আরেকদিকে পুরুষের দায়িত্ব। জন্মিবামাত্র প্রতিটি মানবসন্তান স্বাধীন হলেও পিতৃতান্ত্রিক পরিমণ্ডলে জন্মানোর অপরাধে বাংলাদেশের নারীরা আজও ঊনমানুষ। রাষ্ট্রে তাদের মর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের বেশি কিছু নয়। সামাজিক মনস্তত্বেও নারী আজও স্বাধীন সত্তা নয়, নারী কেবলি পুরুষের মনোরঞ্জন ও সেবার নিমিত্তে নির্মিত এক বায়োরোবট বা দম দেয়া কলের পুতুল। তাই, তাকে অল্প বা অধিক পেটানোর বৈধ অধিকার পিতা-ভ্রাতা-স্বামীর রয়েছে বৈকি! তাই, 'ন ডরাই'-এর আয়শাকে অবিবাহিত অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ করে তার ভাই। আর বিয়ের পর স্বামীই হয় আয়শার শরীর মনের 'বৈধ মালিক'। তাই, আয়শাকে তার স্বামী মেরে পিটিয়ে আহত করে হাসপাতালে পাঠানোর দৃশ্যটিকেও আস্বাভাবিক ঠেকে না। আসুন, পরিসংখ্যানে চোখ রাখি। ২০১৬ সালে ১৫ই জানুয়ারির প্রথম আলো জানাচ্ছে, "২০১১ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় পরিচালিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনের ফল ভয়াবহ। বাংলাদেশে প্রতি দশটা পরিবারের মধ্যে নয়টাতেই নারীরা পারিবারিক সহিংসতার শিকার"। সহিংসতার এই ধরনটি কেমন? সেই বিষয়েও বিস্তারিত লেখা আছে প্রথম আলোর সেই কলামে, "পারিবারিক নির্যাতনের এই হিসাবে মানসিক নিপীড়ন অন্তর্ভুক্ত আছে। কাজেই এই প্রশ্ন খুব উঠবে যে শারীরিক নির্যাতন আসলে শতকরা কত ভাগ হয়? এই প্রশ্নের উত্তরেও আপনার মাথা হেঁট হয়ে আসবে, তিনজন বিবাহিত নারীর দুজনই স্বামীর হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, শারীরিকভাবে। এর মধ্যে চড়-থাপ্পড় আছে; কোনো না কোনো হাতিয়ার দিয়ে আঘাত আছে; কিল, ঘুঁষি, লাথি আছে; পোড়ানো আছে; অ্যাসিড ছোঁড়াও আছে। ''এঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারীকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে, অনেকেই স্বামীর ভয়ে ডাক্তারের কাছে যাননি, কেউবা যাননি সামাজিক মর্যাদাহানির ভয়ে। তিনজনের মধ্যে দুজন বউ পেটান? আর 'হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে'—সেটা তো আছেই। সবটা মিলিয়ে দশজনের নয় জনই বউ পেটান, হাতে বা ঠোঁটে।" আমার দাদী সৈয়দ বানু পুরনো যুগের, ব্রিটিশ আমলের, মানুষ ছিলেন। তাঁর মুখে মাঝে-মধ্যে শুনতাম, 'বেডার রাগে বাদশাহ, বেডির রাগে বেশ্যা'। জেদ করে পুরুষ বাড়ি ছাড়লে সে ভুবন জয় করে বিজয়ীর বেশে ফিরতে পারে। কিন্তু নারী হয় পতিত কুসম। 'বেশ্যা'র চেয়ে ভালো আর কোনো খেতাব তার জোটে না। কেননা, তার পথে পথে পাতা আছে ফাঁদ। তাই, পর্দার শাবানার মতন ধৈর্য্য ধরে থাকা রপ্ত করে 'ভদ্রঘরের মেয়ে'। বেশ্যা ও বিদুষীর গল্প... এই ভূখন্ডের সামাজিক ইতিহাস বলে, নারীর জীবন সতত অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন ও লাঞ্ছনা সয়ে ঝিনুকের মতন মুখ বুজে পড়ে থাকার জীবন। নারীর জীবন নিয়ত সংগ্রাম আর বিদ্রোহের জীবন। বন্দি পাখি হয়ে যে নারী থাকতে চায় না, যে নারী চায় মুক্ত আকাশের নিচে গান গাইবার অধিকার তার পথে বিছানো থাকে কাঁটা। নারী 'বেশ্যা' বা 'বিদুষী' যেই হোক, তারা যেনো একদিকে পুরুষের মাল-সামাল, আরেকদিকে পুরুষের দাস। মাল-সামাল আগলে রাখা মালিকের কর্তব্য; আর বিনা প্রশ্নে মালিকের হুকুম তামিল করাই দাসের জীবন। কিন্তু সমাজ পাল্টাচ্ছে। হাওয়া আক্তার জুঁই-ই এর প্রমাণ। স্বামী আঙুল কেটে নিয়েছে। তার স্বপ্ন কেড়ে নিতে পারেনি। স্বামীকে ছেড়ে নিজের বাসনাকেই বেছে নিয়েছে সে। ২০১১ সালে আঙুল হারালেও শ্রুতি লেখকের সহায়তায় ২০১২ সালে সে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৩০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। সমাজ যে পাল্টাচ্ছে তার প্রমাণ রুমানা মঞ্জুর। ২০১১ সালে স্বামীর হাতে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে চোখের আলো হারিয়ে অন্ধত্ব বরণ করলেও তিনি নিজেকে হারিয়ে ফেলেননি। রুমানা ব্রেইল শিখেছেন। আইন বিষয়ে বিদেশে পড়ালেখা করে নতুন ডিগ্রি নিয়ে সেখানেই কাজ শুরু করেছেন। নারীর পড়ে পড়ে মার খাবার ইতিহাস নতুন নয়। পুরানের অহল্যা পাথর হয়ে রামের পদস্পর্শের অপেক্ষা করেছেন। আর রামের স্ত্রী সীতা সতীত্ব প্রমাণের জন্য একবার অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে রেহাই পাননি। দ্বিতীয়বারও রাম তাকে দিয়েছেন অগ্নিপরীক্ষার প্রস্তাব। এই প্রস্তাবের অপমান ও মনোপীড়া সইতে না পেরে মর্মাহত সীতা নিজেকে ধরণীর বুকে লুকিয়েছেন। কিন্তু জুঁই বা রুমানা নিজেকে লুকিয়ে ফেলেননি। উঠে দাঁড়িয়েছেন। এই উঠে দাঁড়ানোর গল্পটাই নতুন। এই গল্পের সংখ্যা যত বাড়বে, নারীর জন্য জারি থাকা থার্ড ডিগ্রির বিরুদ্ধে ততই আওয়াজ উঠবে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত এই আওয়াজ নিনাদ হয়ে ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত হে মানবিক মানুষ, আপনি নিশ্চিন্তে কী করে ঘুমান?
ফুলের মতন মেয়ে জুঁইয়ের কথা বলি। হাওয়া আক্তার জুঁই। উচ্চবিদ্যালয়ের সীমানা পেরোতে না-পেরোতেই বিয়ে। স্বামী প্রবাসী। বিয়ের পর জুঁইকে পড়ালেখা চালাতে নিষেধ করেন স্বামী রফিকুল ইসলাম।
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাটকীয়ভাবে ফিরে আসেন হোয়াইট হাউসে এবং ফিরেই খুলে ফেলেন মুখের মাস্ক কিন্তু এ পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। এইসব প্রশ্নের উত্তরের ওপর নির্ভর করবে এই ভাইরাস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কতটা ক্ষতি করবে? এর প্রভাব তার স্বাস্থ্য, তার সম্মান ও তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য কতটা ক্ষতিকর? ট্রাম্প শেষ কখন করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছিলেন? এটাই এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। পরপর তিনদিন ডাক্তাররা এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ায় এর উত্তরের দিকেই এখন সবার বেশি নজর। এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন কিছু নয়। অন্তত কঠিন হবার কথা নয়। কিন্তু এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাওয়া থেকে একটা ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, সরকারিভাবে যা বলা হচ্ছে - তা হয়ত সঠিক নয়। সরকারিভাবে হোয়াইট হাউস থেকে বলা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। তার ভাইরাস পরীক্ষা পজিটিভ আসে এবং বেশি রাতে এক টুইট বার্তার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট তার পরীক্ষার ফল ঘোষণা করেন। কিন্তু ঠিক কখন তাকে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং সেই পরীক্ষার ফল কী এসেছিল, সেটা জানা গেলে পরিষ্কার হবে যে হোয়াইট হাউস অথবা প্রেসিডেন্ট নিজে কোন পর্যায়ে তার অবস্থা গোপন করার কোনরকম চেষ্টা করেছিলেন কি না। এ ব্যাপারে যেহেতু সরকারিভাবে মুখ খোলা হচ্ছে না, তাই যে প্রশ্ন দানা বাঁধছে তা হলো, প্রেসিডেন্টকে নিয়মিতভাবে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল কি না, যেটা করার কথা। অথবা, এই খবর বাইরে আসার আরও আগে প্রেসিডেন্টের কোভিড শনাক্ত হয়েছিল। এ নিয়ে জল্পনার পেছনে আরও একটা কারণ হলো, হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক শন কনলি শনিবার বলেছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রোগ শনাক্ত হয়েছে ''৭২ ঘন্টা আগে''। সেটা হলে দাঁড়ায় মি. ট্রাম্পের কোভিড শনাক্ত হয়েছে বুধবার অর্থাৎ মিনেসোটায় তার প্রচার সমাবেশের আগের দিন। এবং এরপর বৃহস্পতিবার তিনি মিনেসোটায় গেছেন প্রচারণা করতে। হোয়াইট হাউস অবশ্য পরে এক বিবৃতি দিয়ে বলেছিল তার চিকিৎসক "ভুল বলেছিলেন''। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের ভাইরাস শনাক্ত হবার পর তা ''তৃতীয় দিন'' চলছে। ওয়াল্টার রিড জাতীয় সামরিক হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট সুইটে ডোনাল্ড ট্রাম্প চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুক্রবার যেরকম দ্রুত মি. ট্রাম্পের অবস্থার অবনতি হয়, যেটা ছিল তার রোগ শনাক্ত হবার মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে। এ থেকেই তাদের ধারণা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে থাকবেন আরও অনেক আগে। আমরা কি মি. ট্রাম্পের স্বাস্থ্য সম্পর্কে পুরো খবর জানছি? হোয়াইট হাউস এবং প্রেসিডেন্টের চিকিৎসা দল মি. ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে একইরকম অস্বচ্ছ চিত্র দিচ্ছে। শুক্রবার জানানো হয়েছিল, প্রেসিডেন্টের "মৃদু" উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তারপর থেকে, শুক্রবারই জানানো হয়, তার "বেশ বেশি" জ্বর হয়েছে, তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এবং সেজন্য তাকে অক্সিজেন সহায়তা দিতে হয়। শনিবার, ডা. কনলি সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসিডেন্ট "খুবই ভাল আছেন" এবং তার চিকিৎসক দল তাদের শারীরিক উন্নতি নিয়ে "খুবই সন্তুষ্ট"। এর অনতিবিলম্ব পরেই, প্রেসিডেন্টের স্টাফ প্রধান মার্ক মিডোস্ সাংবাদিকদের বলেন প্রেসিডেন্টের শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে তারা "খুবই উদ্বিগ্ন" এবং তিনি "যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার পথে রয়েছেন তা পরিষ্কার নয়"। আরও পড়তে পারেন: হোয়াইট হাউসের চিকিৎসা ইউনিটে যোগ দেবার আগে ডা. শন কনলি আফগানিস্তানে আমেরিকান সামরিক বাহিনীতে কাজ করেন রোববার, ডা. কনলি দুজনের এই বক্তব্যের গরমিল সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন যে, "আমি এমন কোন তথ্য দিতে চাইনি, যাতে তার অসুস্থতা অন্যদিকে মোড় নেয়"। তার এই উক্তি খুবই বিস্ময়কর - কারণ চিকিৎসকরা জনগণকে যাই বলুন না কেন, এই রোগ স্বাভাবিকভাবে যেদিকে যাবার সেদিকেই যাবে। এছাড়াও আরও কিছু অস্বাভাবিক বিষয় ঘটেছে, যাতে মনে হতে পারে চিকিৎসকদের দলটি প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সত্য তথ্য দিচ্ছে না। যেমন, রোববার ডা. কনলি বলেন প্রেসিডেন্টকে অ্যান্টিভাইরাল বিভিন্ন ওষুধের একটি মিশ্রণ দেয়া ছাড়াও তাকে স্টেরয়েড ওষুধ ডেক্সামেথাসোন দেয়া হয়েছে। ডেক্সামেথাসোন ওষুধটি কোভিড রোগীদের দেয়া হয় শুধু মাত্র রোগীর অবস্থা "গুরুতর এবং সঙ্কটজনক" হয়ে উঠলে। ডা. কনলি আরও বলেন, শনিবারও প্রেসিডেন্টের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা আবার কমে যায়। কিন্তু সেটা ঠিক কতখানি কমে গিয়েছিল তা তিনি জানাতে অস্বীকার করেন। তার বয়স এবং তার শারীরিক বিভিন্ন অবস্থার কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য জটিলতার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। কাজেই আমেরিকান নেতাকে যে সবরকম সম্ভাব্য চিকিৎসা দেয়া হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা তাদের বিবৃতিতে যেসব তথ্য ও ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তা যদি স্বচ্ছ্ব না হয়, তাহলে জনসাধারণের আস্থা যে ধাক্কা খাবে - তাতে সন্দেহ নেই। মাইক পেন্সের কি আইসোলেশনে যাওয়া উচিত? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু হলে সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এ পর্যন্ত তার কোয়ারেন্টিনে যাবার কোনরকম সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। যেখানে তিনিও ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন এমন সম্ভাবনা রয়েছে। মি. পেন্স এবং তার স্ত্রী ক্যারেন রোববার পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছেন বলে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন সেটি ছিল ওই সপ্তাহে তাদের তৃতীয়বার পরীক্ষার ফল। তবে করোনাভাইরাস মানুষের শরীরে ১৪দিন পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। কাজেই ভাইস প্রেসিডেন্ট যে নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত হননি এমন গ্যারান্টি এখুনি দেয়া সম্ভব নয়। অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার গণ্যমান্য অতিথিদের স্বাগত জানাচ্ছেন বেশ কয়েক মাস ধরেই মি. ট্রাম্প বিষয়টা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন জন-সমাবেশে হাজির থেকেছেন এবং মাস্ক পরার বিষয়টাকে তিনি গুরুত্ব দেননি। মি. পেন্স এ সপ্তাহে প্রচারণা চালিয়ে যাবার যে ঘোষণা এখন দিয়েছেন, তাতে মনে হচ্ছে মি. ট্রাম্প ঠেকে শিখলেও, আসলেই তারা আদতেই এর থেকে কোন শিক্ষা নিচ্ছেন কি না! কন্ট্যাক্ট ট্রেসে এত ধীর গতি কেন? গত নয় মাসে দেখা গেছে যে, এই ভাইরাস তার নিজস্ব গতিতে কাজ করে চলেছে। এবং মানুষ - বিশেষ করে ব্যক্তিবিশেষ, সমাজ, ও সরকার যখনই সুরক্ষায় ঢিলে দিয়েছে তখনই এই ভাইরাস নিশ্চিন্তে তার থাবা বসাতে তৎপর হয়েছে। এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত গত শনিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে মি. ট্রাম্প তার মনোনীত প্রার্থী হিসাবে এমি কোনি ব্যারেটের নাম ঘোষণার জন্য যে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন সেটি। আনুষ্ঠানিকভাবে রোজ গার্ডেনে যে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার নাম ঘোষণা করেন মি. ট্রাম্প - সেখানে উপস্থিত ছিলেন বহু মানুষ, বিশেষ করে প্রশাসনের শীর্ষ স্থানীয় বহু ব্যক্তি। এই অনুষ্ঠানকে রোগের 'মহাবিস্তারের' একটি সম্ভাব্য উৎস হিসাবে মনে করা হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা গেছে ওই অনুষ্ঠানে অতিথিরা পরস্পরকে আলিঙ্গন করছেন, কাছ থেকে কথাবর্তা বলছেন এবং কারোরই মাস্ক পরা নেই। প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডি ছাড়াও ভাইস প্রেসিডেন্টের পাশে প্রথম সারিতে যারা বসেছিলেন তাদের মধ্যে পাঁচজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জো বাইডেনের সাথে টিভি বিতর্কের প্রস্তুতি নিতে গত সপ্তাহে রবি, সোম এবং মঙ্গলবার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘরের ভেতর দীর্ঘ বৈঠক করেছেন বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে। ওই বৈঠকগুলোতে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চারজনের ইতোমধ্যেই কোভিড পরীক্ষায় পজিটিভ ফল এসেছে। শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রেসিডেন্টের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীরা একের পর এক পজিটিভ শনাক্ত হবার পরেও প্রশাসন মনে হচ্ছে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং অর্থাৎ কারা কখন কার সংস্পর্শে এসেছিলেন সে বিষয়ে যথাযথ অনুসন্ধান চালানোর ব্যাপারে উৎসাহী নয়। ওয়াশিংটন পোস্ট সংবাদপত্র বলছে গত সপ্তাহের ওই মনোনয়ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন যারা তাদের সবার সাথে সরকারের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখনও যোগাযোগই করেননি। অথচ ট্রাম্প প্রশাসন ও কংগ্রেস সদস্যদের মধ্যে প্রতিদিনই করোনা শনাক্ত হবার খবর আসছে। এছাড়াও হোয়াইট হাউসের কর্মচারীদেরও করণীয় সম্পর্কে বা তারা নিজেরা আইসোলেশনে যাবেন কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আমেরিকায় কোভিড-১৯এ এ পর্যন্ত মারা গেছে বিশ লাখ নয় হাজার মানুষ। এখন দেশটির নতুন করোনা হটস্পটে পরিণত হয়েছে হোয়াইট হাউসের প্রশাসনিক অন্দর মহল। ফলে, মি. ট্রাম্পের কোভিড পরীক্ষার দিনক্ষণ ও তার করোনা সংক্রমণের বিস্তারিত নিয়ে হোয়াইট হাউসের 'নীরবতা' প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে একটা বড় প্রশ্ন তৈরি করে দিয়েছে।
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প করোনাভাইরাসে পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন, সবাইকে চমকে দেয়া এই খবর প্রকাশ পাবার পর তিন দিন কেটে গেছে। সেই ঘোষণার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, হাসপাতাল থেকে হোয়াইট হাউসে ফিরে গেছেন এবং উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেরই শরীরে কোভিড শনাক্ত হবার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
প্রতিবছরেই আলোচনায় আসে কালো টাকা সাদা করার প্রসঙ্গ কারণ পুরো অর্থবছরেও কখনো এত বিপুল পরিমাণ টাকা সাদা করার উদাহরণ নেই। অর্থবছরের নিয়মিত আয়কর আদায়ের স্বাভাবিক যে লক্ষ্যমাত্রা সেটি করোনা মহামারির কারণে অর্জিত হবে কি-না তানিয়ে অনেকেই সন্দিহান হলেও এর মধ্যেই কালো টাকা সাদা করার রেকর্ড ভঙ্গ হলো যাতে সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডারে যোগ হলো প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের আয়কর বিভাগের কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দায়িত্বে থাকা সদস্য হাফিজ আহমেদ মুর্শেদ বলছেন, অপ্রদর্শিত আয় সম্পর্কিত আইনে পরিবর্তন এসেছে চলতি বছরের বাজেটে, যা করদাতাদের অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে উৎসাহিত করছে। "প্রধান ফ্যাক্টরটাই হলো আইন। আইনটা এবার করা হয়েছে। এর আগে কোনো আইনের আওতায় তারা দেখাতে পারছিলোনা। বেশ কয়েক বছর পর এ ধরণের আইন হওয়াতে তারা সাহস পাচ্ছে। কারণ আইন অনুযায়ী কোনো সংস্থা তাদের এখন আর কোন প্রশ্ন করতে পারবেনা"। কিন্তু অপ্রদর্শিত আয় কর পরিশোধ করে সাদা বা বৈধ করলে অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবেনা এমন বিধান তো আগেও ছিলো তাহলে এবার কেন বেশি টাকা সাদা হলো। এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আহমেদ মুর্শেদ বলেন, "এবার এটাকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। আবাসন খাতের সুযোগ আগেও ছিলো। কিন্তু এবার যোগ হয়েছে নগদ টাকার বিষয়। অর্থাৎ নগদ টাকাও অপ্রদর্শিত আয় দেখানো যাবে।" বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: বাংলাদেশে এতো কালো টাকা আসে কোথা থেকে? অর্থপাচার কেলেঙ্কারি: ফাঁস হওয়া 'ফিনসেন ফাইলস' সম্পর্কে যা জানা দরকার পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হলো যেভাবে বাংলাদেশে দুর্নীতি: সমাজ বা পরিবারের দায় কতটা? করোনার কারণে এবার বিদেশে টাকা পাচার কম হয়েছে বলে মনে করেন গবেষকরা কিন্তু যে আইনকে রাজস্ব বোর্ড হঠাৎ করে অপ্রদর্শিত আয় সাদা করার ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে বর্ণনা করছে সে আইনে কি বলা হয়েছে। বা আগে যে বছরের পর পর কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছিলো তখনকার তুলনায় নতুন আইনে বেশি কি ধরনের সুযোগ রাখা হয়েছে যা কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয়ের মালিকদের টাকা সাদা করতে উৎসাহিত করে তুলেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আয়কর আইন বিশেষজ্ঞ স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলছেন, টাকা সাদা করার যে নজিরবিহীন রেকর্ড তৈরি হয়েছে তার পেছনে আছে নজিরবিহীন দুটি সুবিধা, যা সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য দিয়েছে। "আগে ভয় কাজ করতো যে এনবিআরকে অপ্রদর্শিত আয়ের তথ্য দিলে দুদক বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে। কিন্তু এবারে পূর্ণ অ্যামনেস্টি দেয়া হয়েছে যে কোনো অথরিটি কোনো প্রশ্ন করতে পারবেনা। এটাই আস্থা তৈরি করেছে অনেকের ক্ষেত্রে । আর আগে নিয়ম ছিলো যে অপ্রদর্শিত আয় থাকলে সেটার নিয়মিত কর এবং সাথে অতিরিক্ত দশ শতাংশ কর দিতে হবে। আর এবার সব মিলিয়ে মোট দশ শতাংশ করের বিধান করা হয়েছে"। আর মূলত এ দুটি সুবিধার জন্য এবারে রেকর্ড পরিমাণ অপ্রদর্শিত আয় আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়েছে চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন দেয়ার স্বাভাবিক সময় শেষ হয়েছে। বাজেট বক্তৃতা থেকে নেয়া মিস্টার বড়ুয়া বলছেন করোনা মহামারির মধ্যে স্বাভাবিক কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এবার অর্জিত হবেনা বলেই ধারণা করা হচ্ছে এবং সে কারণে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার মাধ্যমে সরকারের যে হাজার কোটি টাকা কর আদায় হলো সেটি সরকারকে স্বস্তি দেবে। "এক হাজার কোটি টাকার মতো কর এনবিআর সংগ্রহ করতে পেরেছে এসব ইনিশিয়েটিভের কারণে। এ সম্পদ সম্পদ বিবরণীতে ঢুকে যাওয়াতে কিন্তু আর করদাতা গোপন করতে পারবেননা। এ সম্পদ থেকে আয় আসলে তাও দেখাতে হবে আবার করের ওপর সারচার্জও দিতে হবে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে একটা ইতিবাচক কর প্রভাব তৈরি হবে"। কিন্তু কারা তাদের অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করেছেন সেটি গোপনীয় তথ্য হিসেবে প্রকাশ করেনা এনবিআর। তবে তারা এটুকু বলেছে যে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা কালো টাকা প্রায় ২২ কোটি টাকা কর দিয়ে সাদা করেছেন ২০৫ জন। আর অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ, ব্যাংকে জমা রাখা টাকা, ফ্ল্যাট ও জমি বৈধ করেছেন ৭ হাজার ৪৪৫ করদাতা। আর এর বিপরীতে তারা কর দিয়েছেন প্রায় ৯৪০ কোটি টাকা। অপ্রদর্শিত আয় সাদা করতে বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে এবার অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলছেন, শুধু প্রশ্ন না করার সুযোগ কিংবা কর কমিয়ে দেয়া নয় বরং আরও কিছু সুযোগ দেয়া হয়েছে যার সুযোগ নিচ্ছেন কালো টাকার মালিকদের অনেকে। "উৎস জিজ্ঞেস করা যাবেনা এটা মূল কারণ। কিন্তু এছাড়াও এ বছর বলা হয়েছে যে কোনো ভূমি, ফ্লাট, বাড়ি, জমি লোকেশন ও প্রতি বর্গমিটার অনুযায়ী নির্দিষ্ট কর দিয়ে সাদা করা যাবে। পাশাপাশি এফডিআর বা কোনো সঞ্চয় থাকলে তাও সাদা করা যাবে। কোনো ক্ষেত্রেই উৎস জিজ্ঞেস করা যাবেনা"। তিনি বলছেন, এমন বিধান করা হয়েছে করোনা পরিস্থিতি দেখিয়ে যে একই পেশার করদাতা নিয়মিত কর দিলে বেশি কর দিতে হচ্ছে আবার যারা কর দেননি আগে তারা এখন কম কর দিয়ে টাকা সাদা করে নিচ্ছেন। "যারা বড় করদাতা তাদের কর কিন্তু ত্রিশ শতাংশে গিয়েও ঠেকে। যারা অনেক বেশি আয় করেন। একজন সৎ করদাতার কাছে এনবিআর চার্জ করবে ১৫/২০/৩০ শতাংশ। আর যিনি নিয়মিত কর দিলেন না তিনি দশ শতাংশ দিয়ে বৈধ করে নিলেন। এটা কিন্তু সৎ করদাতাকে নিরুৎসাহিত করবে"। রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর বলছে এবার অন্যদিকে তবে বাংলাদেশে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া নতুন কিছু নয়। এবার করোনা পরিস্থিতিতে বিবেচনায় নিয়ে কিছু বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে বাজেটে। বাজেটে দেয়া বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছিলেন, অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন দশ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও এপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারে ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড, বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজের ওপর দশ শতাংশ কর প্রদান করে আয়কর রিটার্নে দেখালে অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ তা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবেনা। তবে এসব সুযোগ শুধুমাত্র চলতি অর্থ বছরের জন্যই দেয়া হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী সরকারের কোনো সংস্থা টাকা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবেনা বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ কত তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসেব বা তথ্য নেই। এনবিআরের হিসেবে স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জরিমানা দিয়ে বৈধ করার মোট টাকার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবির করা অদৃশ্য অর্থনীতি শীর্ষক এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছিলো যে, জিডিপির ১০ থেকে ৩৮ শতাংশের মধ্যে কালো টাকা ওঠানামা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা বলছেন, এবার কালো টাকা ব্যাপকভাবে সাদা হওয়ার পেছনে নতুন আইনই একমাত্র কারণ নয়, বরং এবারে পাচারের সুযোগ তুলনামূলক কম থাকায় অনেকে টাকা কর দিয়ে সাদা করেছেন বলে মনে করেন তিনি। "করোনার কারণে বিদেশে সাথে সংযোগ সেভাবে হয়নি বা ব্যাহত হয়েছে। সে কারণে এ টাকা গুলো দেশের বাইরে চলে যাওয়া বা অপ্রদর্শিত রাখা সম্ভব হয়নি অনেকের পক্ষে। তারাই দেশে এখন বিশেষ সুবিধা নিয়ে টাকা গুলো সাদা করার সুযোগ নিয়েছে"। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা, আয়কর আইনজীবী ও কর বিশেষজ্ঞদের ধারণা বাংলাদেশে অপ্রদর্শিত আয়ের একটি বড় অংশই পেশাজীবীদের অপ্রদর্শিত আয়। যেমন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, এনজিও খাত কিংবা এমন অনেক পেশায় চাকুরীর বাইরেও পেশাগত চর্চার মাধ্যমে অর্থ আয়ের সুযোগ আছে। এছাড়া ঘুষ দুর্নীতি, অর্থ পাচার, নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যবসা, আন্ডার কিংবা ওভার ইনভয়েসিং এবং জমি ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কালো টাকা তৈরি হয়। সায়মা হক বিদিশা বলছেন বৈধ আয় কোনো ক্ষেত্রে হয়তো অপ্রদর্শিত আয়ে পরিণত হয়েছে কিন্তু এখন কালো টাকার বড় উৎস হলো ব্যাংক খাত আর দুর্নীতি। "ব্যাংক খাতের যে ঋণ খেলাপি হয় এগুলোই সাধারণত বিদেশে চলে যায়। আরেকটা বড় ক্ষেত্রে হলো সরকার বেসরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি। এছাড়া ঠিকাদারি, ব্যবসা ও রিয়েল এস্টেট খাতেও ব্যাপক কালো টাকা তৈরি হয়েছে"। দুর্নীতিই কালো টাকার অন্যতম প্রধান উৎস আয়কর আইন নিয়ে রাজস্ব বোর্ডের সাথে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা। তিনি অবশ্য বলছেন ব্যাংকে রাখা টাকা বা সঞ্চয়পত্র বা এফডিআর এসবের তথ্য সরকার চাইলেই এখন সহজে পেতে পারে। সে কারণে যাদের অনেকে বেশি পরিমাণে আছে তারা কোনো ঝুঁকি না নিয়ে দশ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করে নিয়েছেন। "আগে ছিলো শুধু বিল্ডিং ও ফ্ল্যাট এবং এগুলোর সাথে সম্পর্কিত জমি প্রদর্শন করে বৈধ করা যেত। কিন্তু এবার আলাদাভাবে জমির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া নগদ, ব্যাংক আমানত, সব ধরণের সঞ্চয় ও সার্টিফিকেট কর দিয়ে সাদা করার ব্যবস্থা এবারই করা হয়েছে। ব্যাংকের আমানত বা এগুলোর তথ্য এনবিআর সহজেই ব্যাংক থেকে পেতে পারে। সেজন্যই এবার এগুলো আয়কর রিটার্নে ব্যাপকভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে"। বাংলাদেশে ২০১২-১৩ সাল থেকেই জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার একটা স্থায়ী নিয়ম তেরি করা হয়েছে। কিন্তু কালো টাকা বিশেষ সুযোগ দিয়ে শেয়ার বাজার বা আবাসন খাতের মতো সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এলে সেটি দেশের অর্থনীতিতে সত্যিকারভাবে কতটা ভূমিকা রাখে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলছেন যেসব খাতে কালো টাকা আসে সেগুলো অর্থনীতিতে খুব বেশি অবদান রাখে না বলেই মনে করেন তিনি। "কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেয়া হয় তাতেও খুব একটা আসেনা বা সাদা হয়না। কিছু আসলেও সেটা উৎপাদনশীল খাত বা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এমন খাতে আসে না। মূলত শেয়ার বাজার বা ফ্লাট কিংবা এপার্টমেন্ট কেনাতেই এগুলো বিনিয়োগ হয়। সেটা অর্থনীতির কতটা কাজে লাগে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে । আর এটা সৎ করদাতাদের প্রতি অবিচার স্বরূপ"। অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা বলছেন কালো টাকার নামে অদৃশ্য অর্থনীতির প্রভাব এড়াতে কালো টাকা তৈরির সুযোগই বন্ধ করা দরকার বলে মনে করেন তারা। একই সাথে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে যেসব বিশেষ সুবিধা চলতি বছর দেয়া হয়েছে সেটি অব্যাহত থাকলে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিরই ক্ষতি হবে মন্তব্য করে তারা বলেন এ ধরণের সুযোগ আর দেয়াটাই উচিত হবেনা।
বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর বলছে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয় প্রায় সাড়ে নয়শ কোটি টাকা কর দিয়ে বৈধ করেছেন সাত হাজার ৪৪৫ জন করদাতা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
সারাদেশে ৩ হাজার ৫৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে: বলছে নির্বাচন কমিশন বুধবার দুপুরে বগুড়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে বিএনপি চেয়ারপার্সন কারাবন্দী খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় নেতা, পৌরসভা মেয়র এ. কে.এম মাহবুবুর রহমান। সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, খালেদা জিয়ার নির্বাচন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় এ আসনে আরো কয়েকজন বিএনপি নেতাও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দু বছরের বেশি মেয়াদের কারাদন্ডপ্রাপ্ত কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না - একটি মামলায় এ মর্মে হাইকোর্টের এক রায়ের পর খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে গুরুতর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। তবে তার আইনজীবীরা বলছেন, আইনী পথ এখনো আছে বলে তারা মনে করেন, তবে প্রশ্ন হলো এর জন্য হাতে যথেষ্ট সময় আছে কিনা। জামায়াতে ইসলামীর ২৪ জন ধানের শীষ প্রতীক পাচ্ছেন বিএনপির ২০দলীয় জোটের শরীক দল জামায়াতে ইসলামী বিএনপির কাছ থেকে ২৪টি আসন পেয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির একজন নেতা। বুধবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়া দল জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা-১৫ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। ডা. শফিকুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, রংপুরের একটি আসনে তার ভাষায় 'প্রশাসনের বাধার কারণে' তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়া সম্ভব হয় নি। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: এখনও কেন চূড়ান্ত হয়নি দুই দলের সিট ভাগাভাগি কোন কোন বিবেচনায় প্রার্থী বাছাই: বিবিসির চোখে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কতটা আছে? বাংলাদেশে নির্বাচনী জোট করা কেন গুরুত্বপূর্ণ? বাংলাদেশের প্রধান দলগুলো ইতিমধ্যেই একাধিক জোট গঠন করেছে নির্বাচনের আগে তাই প্রথমে ২৫টি আসনে জামায়াতের জোটগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা প্রথমে শোনা গেলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে ২৪টিতে। ডা. রহমান জানান, আরো কিছু আসনে তাদের প্রার্থীর জোটগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারে আলোচনা এখনো চলছে। অন্যদিকে, বিএনপির আরেক জোট ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কতজন প্রার্থী ধানের শীষ নিয়ে লড়বেন তা এখনো জানা যায় নি। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার ড. হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক বৈঠকে বিএনপির সাথে সিট ভাগাভাগি নিয়ে কোন ফয়সালা হয়নি। পরে জোটের শরীকরা নিজেদের মত করে মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তিন হাজার ছাপ্পান্নটি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে: নির্বাচন কমিশন নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সারা বাংলাদেশে ৩০৫৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। তিনি জানান, দলগতভাবে কোন দল কত মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে তা বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ৩০শে ডিসেম্বর মি. হেলালউদ্দিন বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেবার সময় কোন অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। সকল প্রার্থীই নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে শান্তিপূর্ণভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানান তিনি। কে কোথায় মনোনয়নপত্র জমা দিলেন এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া) ও রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন দলটির নেতারা। গোপালগঞ্জের জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। জাতীয় পার্টি জানিয়েছে, দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের পক্ষে ঢাকা-১৭ ও রংপুর-৩ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ময়মনিসংহ-৪ ও ৭ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। বুধবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনহীন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা-১৫ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। তার পক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন জমা দেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মতিউর রহমান আকন্দ। বিএনপির অপর নির্বাচনী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের নামে কোন মনোনয়নপত্র জমা পড়ে নি। মি. হোসেন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, বয়সের কারণেই তিনি নির্বাচন করছেন না।
বাংলাদেশে ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেবার শেষ দিনে অন্যতম বড় দুই ঘটনা ছিল প্রধান বিরোধীদল বিএনপির কারাভোগরত নেত্রী খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র জমা পড়া, এবং নিবন্ধনহীল দল জামায়াতে ইসলামীর এই ঘোষণা যে তারা ২৪টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে।
তবে ক্লাসরুমের বদলে ক্রিকেট মাঠে থাকলেও চলাফেরায় একেবারেই ধীর স্থির। ক্রিকেটারদের ছাত্রের চেয়ে বন্ধুই মনে করেন বেশি। এই শান্তশিষ্ট মানুষটিও অবশ্য বিশ্বকাপ ঘিরে নিজের হৃদস্পন্দন ঠিকই টের পাচ্ছেন। তার ক্রিকেটারদের কিভাবে প্রস্তুত করছেন তিনি - তা নিয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেছেন তিনি।
মুখে স্মিত হাসি লেগেই আছে। চশমা চোখে রীতিমতো প্রফেসর মনে হয়।
এসময় ডুবোজাহাজটিতে ৫৩ জন ক্রু ছিল। জাহাজটির সন্ধানে যারা উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা করছিল তারা ওই জাহাজের কিছু জিনিসপত্র পেয়েছে এবং তা থেকেই ধারণা করা হচ্ছে যে সাবমেরিনটি ডুবে গেছে। স্ক্যান থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সাবমেরিনটি সমুদ্রের সাড়ে আটশ মিটার গভীরে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে, সচল অবস্থায় এত গভীরে যাওয়ার সক্ষমতা এই সাবমেরিনের নেই। একটি টর্পেডো মহড়ার অংশ হিসেবে ডুব দেয়ার অনুমতি চাওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ সাবমেরিনটি। এটিতে শনিবার সকাল পর্যন্ত চলার মত অক্সিজেনের মজুদ ছিল।
ইন্দোনেশিয়ার বুধবার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নৌবাহিনীর সাবমেরিনটি ডুবে গেছে বলে ঘোষণা করেছে সেদেশের সামরিক বাহিনী।
এক কথায়, ফেব্রুয়ারিতেও তিনি ছিলেন হোয়াইট হাউসের দৌড়ে একজন পরাজিত ব্যক্তি। দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে হোয়াইট হাউসে যাবার যে স্বপ্ন জো বাইডেন বহুদিন থেকে লালন করে আসছেন, তা পূরণ হবার জন্য এটাই ছিল সম্ভবত তার শেষ চেষ্টা। প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দলের পূর্ব-বাছাই প্রক্রিয়া - যাকে বলা হয় প্রাইমারি নির্বাচন - তার শুরুর পর্যায়ে প্রচারণার সময় মি.বাইডেনকে এবার দেখা গেছে আবেগপূর্ণ কথাবার্তা বলতে। তিনি প্রায় পাঁচ বছর আগে তার ছেলের মৃত্যুর কথা বলেছেন, বলেছেন তার ছেলেবেলার কথা, অভাব অনটনের পরিবারে তার বেড়ে ওঠার কথা। তবে জনগণকে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন: "সবসময়ই আশা আছে।" এটাই তার বিশ্বাস। বিভিন্ন পর্যায়ের প্রাইমারিতে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও তাকে রীতিমত বেগ পেতে হয়েছে। তবে তার ব্যক্তিসত্ত্বার পরিচয় উঠে এসেছে বিভিন্ন প্রচারণা সভায় তার আবেগপূর্ণ আবেদন থেকে। তার মনমানসিকতা, তার রাজনৈতিক জীবনে ব্যক্তিগত ও পেশাগত ক্ষেত্রে মানসিক আঘাতের জায়গাগুলো এবং যেসব রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি তাকে হতে হয়েছে তার একটা ছবি পরিষ্কার হয়েছে এসব প্রচারণায়। ২০২০র প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর দৌড়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের উত্থান পতনের আবেগময় মুহূর্তের কথা তুলে ধরেছেন মি. বাইডেন "আমি ভাগ্য মানি - ভাগ্যের ওপর আমার অগাধ বিশ্বাস," মি. বাইডেন ১৯৮৯ সালে বলেছিলেন ন্যাশানাল জার্নাল নামে সরকারের একটি উপদেষ্টা সংস্থাকে। "আমার ব্যক্তিগত জীবন কখনই আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী চলেনি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে আমি যেটা চেয়েছি, সেটা কীভাবে যেন হয়ে গেছে- একটা অদৃশ্য হাত সেটা ঘটিয়ে দিয়েছে।" লড়াকু ঘনিষ্ঠ প্রিয়জনদের অকালমৃত্যুর অভিজ্ঞতা হয়েছে মি. বাইডেনের জীবনে একাধিকবার। রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জনে উপরে ওঠার সিঁড়ি যখন তিনি তৈরি করেছেন, সেগুলো ভেঙে পড়েছে। আবার তাকে নতুন করে সেগুলো গড়তে হয়েছে। বাকপটু হবার জন্য তাকে অনেক খাটতে হয়েছে। কারণ উল্টোপাল্টা ও অপ্রাসঙ্গিক শব্দ ব্যবহারের যে প্রবণতা একসময় তার ছিল, তার জন্য তাকে অনেক ব্যঙ্গবিদ্রূপ সহ্য করতে হয়েছে। জো বাইডেন প্রায়ই একটা কথা বলেন, "বাবার একটা কথা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা - কে তোমাকে কতবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল, সেটা বড় কথা নয়, কত দ্রুত তুমি উঠে দাঁড়াতে পারলে, মানুষ হিসাবে সেটাই হবে তোমার সাফল্যের পরিচয়।" প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াইয়ে হেরে গিয়েও লড়ে গেছেন মি. বাইডেন। প্রতিটা পরাজয়ের পর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। সিনেটার বব কেরি, ১৯৯০এর দশকে কংগ্রেসে মি. বাইডেনের সহকর্মী বলেছেন, "জো কখনও হাল ছাড়ে না। দরকার না হলেও তার কাজ সে করেই যায়।" অনেকের মতে মি. বাইডেন অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে টিকে থাকা একজন ব্যক্তি। ডেলাওয়ারে ১৮ই ডিসেম্বর ১৯৭২ মর্মান্তিক এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান জো বাইডেনের স্ত্রী নেইলিয়া ও শিশু সন্তান এমি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি ডিসেম্বর ১৮, ১৯৭২ - মি. বাইডেন ছিলেন ওয়াশিংটনে। টেলিফোন বাজল, তার ভাই জিমি বাইডেন ডেলাওয়ার থেকে ফোন করেছেন। বোন ভ্যালেরির সাথে কথা বলতে চাইলেন। বোন বললেন, "একটা ছোট দুঘর্টনা ঘটেছে। কিন্তু চিন্তা করার কিছু নেই।" সেদিনই আরও পরের দিকে মি. বাইডেন জেনেছিলেন ওই দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী নেইলিয়া এবং শিশুসন্তান নেওমি মারা গেছেন। তার স্ত্রী গাড়ি চালাচ্ছিলেন। একটা লরি গাড়িতে ধাক্কা মারে। গাড়িতে থাকা তার দুই ছেলে বোও আর হান্টারও গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। তারা ক্রিসমাস উৎসবের জন্য ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়েছিলেন। মি. বাইডেন তখন সবে সেনেটার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি তার কংগ্রেস অফিসের কর্মী নিয়োগের জন্য সেদিন ইন্টারভিউ নিতে ব্যস্ত ছিলেন। এছাড়াও পরিবারের থাকার জন্য একটা বাসা কেনার বিষয়টি সেদিন তিনি চূড়ান্ত করতে গিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় তিনি একেবারেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। "আমি কথা বলতে পারতাম না, বুকের ভেতরে একটা বিশাল শূণ্যতা অনুভব করতাম, মনে হতো একটা কালো গহ্বর আমাকে ভেতরে টেনে নিচ্ছে," তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন মি. বাইডেন। তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবার কথা ভেবেছিলেন, ঠিক করেছিলেন যাজক হবেন, দুই ছেলেকে মানুষ করবেন। তিনি লিখেছেন, যেসব এলাকায় খুব গুণ্ডামি হতো, সেসব এলাকায় তিনি সন্ধ্যেবেলা ঘুরে বেড়াতেন। মারপিট করতে তার ইচ্ছা হতো। "আমার ভেতরে একটা বিরাট ক্রোধ তৈরি হয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল, ঈশ্বর আমার সাথে একটা নিষ্ঠুর খেলা খেলছেন। আমার রাগ হতো।" জো বাইডেনের রাজনৈতিক জীবনে ৩০ বছরের জন্মদিন ছিল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছর না হলে সেনেটারের দায়িত্ব পালন সাংবিধানিক নিয়ম বহির্ভূত। ৩০ বছরের জন্মদিনের পার্টিতে স্ত্রী ও দুই শিশু পুত্রকে নিয়ে কেক কাটছেন মি. বাইডেন কৈশোর ও যৌবন জো বাইডেনের বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। মি. বাইডেনের জন্মের আগে তিনি ব্যবসায় সাফল্য পেয়েছিলেন। কিন্তু জো-র জন্মের পর তার ব্যবসা পড়ে যায়। জো বাইডেনের কৈশোর কেটেছে পারিবারিক অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে। পেনসিলভেনিয়ায় খুবই সাদামাটা এক বাসায় যৌথ পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি। তার পরিবার ছিল খুব ধার্মিক। ক্যাথলিক মূল্যবোধ ও তার ধর্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছিল পারিবারিক ধর্মচর্চ্চার সুবাদে। ছেলেবেলায় তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তোতলামি কাটিয়ে ওঠা। স্কুলের উঁচু ক্লাস পর্যন্ত এই সমস্যা তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। পড়তে গিয়ে তার তোতলামির জন্য সহপাঠীরা তো বটেই, এমনকী শিক্ষকরাও তাকে নিয়ে ঠাট্টা মস্করা করতেন। "এখনও আমার মনে আছে সেই যন্ত্রণার কথা, লজ্জা রাগ আর অপমানের দিনগুলোর কথা," মি. বাইডেন লিখেছেন তার স্মৃতিকথায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শান্তভাবে কবিতা আবৃত্তি ও সংযতভাবে কথা বলা আয়ত্ত করতে করতে, হাই স্কুল পার হবার পর তোতলামো কাটিয়ে ওঠেন তিনি। হাই স্কুল শেষ করে তিনি পড়তে যান ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখান থেকে সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়তে। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে যেসব তথ্য জেনে রাখতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার চাবিকাঠি কোন রাজ্যগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি কী ও কীভাবে কাজ করে মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সবচেয়ে কনিষ্ঠ আমেরিকান সেনেটার। রাজনৈতিক উত্থান কলেজেই পরিচয় হয়েছিল নেইলিয়া হান্টারের সাথে। লেখাপড়া শেষে ফিরে যান ডেলাওয়ারের উইলমিংটন শহরে। বিয়ে করেন নেইলিয়াকে। উইলমিংটনেই শুরু হয় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। একটি বড় আইনী প্রতিষ্ঠানে তিনি আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ধনী ও ক্ষমতাশালীদের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে তিনি অল্পদিনেই হাঁপিয়ে ওঠেন। সাধারণ মানুষের হয়ে বিবাদী পক্ষে আইন লড়ার কাজ নেন তিনি। নগর পরিষদের একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেতার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় রাজনীতিতে তার পথচলা। এরপর আসে সিনেটে তার বিজয় ১৯৭২ সলে। অনেকদিন ওই আসনে থাকা রিপাবলিকান সিনেটারকে হারিয়ে তিনি সবার দৃষ্টি কাড়েন। রাজনৈতিক জীবনে জো বাইডেন তখন সফল তরুণ। মাত্র ৩০ বছর বয়সে দুই মেয়াদে সিনেটার থাকা রিপাবলিকান প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি সিনেটে আসন জয় করেছেন। ওই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের যেখানে ভরাডুবি হয়েছে, সেখানে তার এই অভাবনীয় জয়ের পর রাজনীতির অঙ্গনে তিনি তখন হয়ে উঠেছেন ডেমোক্র্যাটিক দলের সম্ভাবনাময় তরুণ। ছেলে বো বাইডেনের সাথে জো বাইডেন ২০০৮ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশানে আবার আঘাত তিনি বড় ছেলে বো বাইডেনকে হারান ২০১৫ সালে। বো মারা যান মস্তিষ্কের ক্যান্সারে। বাবার মত তিনিও রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ডেলাওয়ারের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে কাজ করতেন। দু'হাজার সতের সালে লেখা তার আত্মজীবনীতে মি. বাইডেন তার ছেলের অসুস্থতা প্রসঙ্গে লিখেছেন, ২০১৬-র নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর লড়াইয়ে নামার ইচ্ছা ঘোষণার তোড়জোড় যখন তিনি নিচ্ছেন ২০১৫তে, তখন তার ছেলের অকালমৃত্যু আবার তাকে বিধ্বস্ত করে দেয়। তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টান। "মানসিকভাবে যথেষ্ট উৎসাহ পাবো কিনা আমি নিশ্চিত ছিলাম না। আগের অভিজ্ঞতায় দেখেছি শোক এমন একটা মানসিক চাপ, যা কোন সময়সূচি বা কাজের সময়ের তোয়াক্কা করে না," তিনি লিখেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে শোক ও আঘাতের পাশাপাশি তিনি তার রাজনৈতিক জীবন গড়ে তুলেছেন। সংবাদ সম্মেলনে ২৩শে সেপ্টেম্বর ১৯৮৭ জো বাইডেন ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পাবার লড়াই থেকে তিনি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। পাশে স্ত্রী জিল বাইডেন। হোয়াইট হাউসের দৌড়ে প্রথম হোঁচট এক ঝাঁক সাংবাদিকের সামনে ১৯৮৭ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর জো বাইডেন ঘোষণা করলেন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পাবার দৌড় থেকে তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন। মাত্র তিন মাস আগে তিনি প্রার্থিতার লড়াইয়ে নেমেছিলেন। "এর জন্য দায়ী আমি নিজে। নিজের ওপর রাগ আর হতাশায় ভুগছি। আমেরিকার মানুষকে আমি কীভাবে বোঝাবো এটাই জো বাইডেনের আসল পরিচয় নয়। এটা শুধু আমার মস্ত একটা ভুল," লিখেছেন মি. বাইডেন। সেটা ছিল ১৯৮৮র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লড়াই। মি. বাইডেনের প্রথমবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবার উদ্যোগ লজ্জাজনক ঘটনার কারণে হোঁচট খায়। তার বিরুদ্ধে অন্যের লেখা চুরির ও অসততার অভিযোগ আনা হলে তিনি প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। আইওয়ায় এক বিতর্কসভায় সমাপনী বিবৃতিতে মি. বাইডেন যে কথাগুলো বলেছিলেন তা ছিল ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা নিল কিনকের একটি ভাষণের প্রতিটি শব্দের হুবহু উচ্চারণ। মি. কিনক তার শ্রমিক পরিবারে বড় হয়ে ওঠা নিয়ে তার ভাষণে যা বলেছিলেন তা প্রায় হুবহু আওড়ে যান মি. বাইডেন। এর আগের এক ভাষণে একই বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি মি. কিনকের নাম উল্লেখ করলেও আইওয়ার সভায় সে কথা বলেননি। তারই এক ডেমোক্র্যাট প্রতিপক্ষ বিষয়টি সামনে আনেন। এই অভিযোগের সূত্র ধরে সামনে আনা হয় তার ছাত্র জীবনের একটি ঘটনা, যখন তিনি আইনের ছাত্র হিসাবে তার সাইটেশন পেপারে আরেকজনের লেখা হুবহু ব্যবহার করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন সেটা যে নিয়ম বহির্ভূত তা তিনি জানতেন না। এই ঘটনা মি. বাইডেনের সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বড়রকমের ধাক্কা খায়। পরে তার এক জীবনীকারকে মি. বাইডেন বলেছিলেন, ওই ঘটনা তাকে "কুরে কুরে খেয়েছে। নিজেকে আমি চিরকাল একজন সৎ মানুষ হিসাবে মনে করেছি। সেই জায়গাটা বিরাট ধাক্কা খেয়েছে।" মি. বাইডেন সেনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নিজেকে আরও তুলে ধরতে শুরু করেন। জাতীয় রাজনীতিতে তার স্ত্রী ও শিশু কন্যার মৃত্যুর পর মি. বাইডেন তার জীবনে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করেন। তার দুই ছেলেকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য ঘরে অনেক সময় দেন। প্রথম ১৪ বছর তিনি ডেলাওয়্যার থেকে ওয়াশিংটন দৈনন্দিন যাতায়াত করতেন। পরে তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন জিল জেকবস নামে এক স্কুল শিক্ষয়িত্রীকে। তাদের একটি ছেলে হয়- অ্যাশলি। মি. বাইডেন সিনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে নিজেকে আরও তুলে ধরতে শুরু করেন। প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হবার জন্য তার প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পেছনে ওই লেখাচুরির কলঙ্ক তাকে অনেকদিন তাড়া করে বেড়িয়েছে। তবে ১৯৮৮ সালের ওই নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবার ঘটনা অনেকে বলেন তার জন্য শাপে বর হয়েছিল। লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক মাসের মাথায় নিউ ইয়র্কে এক হোটেল ঘরে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন জো বাইডেন। মস্তিষ্কের রক্তনালী ফুলে ওঠার এক সম্ভাব্য প্রাণঘাতী অসুখে তিনি আক্রান্ত হন। এর পরের ছয় মাস তাকে বহুবার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সবাইকে চমকে দিয়ে বারাক ওবামা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসাবে বেছে নেন জো বাইডেনকে। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে আবার লড়াই বিশ বছর পর আবার নতুন করে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবার লড়াইয়ে নামেন মি. বাইডেন ২০০৮এর নির্বাচনের জন্য। তখন তিনি রাজনীতিতে আর নতুন মুখ নন, তিনি একজন প্রবীণ রাজনীতিক। তিনি বলেন ১৯৮৭ সালে তার প্রচারণা ছিল বড় বড় বুলি আর ছবিতে ভরা। বিশ বছর পর তিনি তার প্রচারণার ভাষা বদলে ফেলেন। "গত বিশ বছর আমার জীবনযাত্রা দেখে আপনাদের নিশ্চয়ই বিশ্বাস জন্মেছে যে আমি একজন বিশ্বাসযোগ্য মানুষ," ২০০৮য়ে আইওয়ার প্রচারণা সমাবেশে তিনি একথা বলেন। "আর সে কারণেই আবার এই পদে প্রার্থী হবার লড়াইয়ে আমি ফিরে এসেছি।" তবে সেই লড়াইয়ে তিনি সফল হননি। বারাক ওবামা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পান প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার জন্য। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে বারাক ওবামা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসাবে বেছে নেন জো বাইডেনকে। "তারা দুজনে খুবই আলাদা প্রকৃতির মানুষ," বলেছেন সাংবাদিক ও ভাইস-প্রেসিডেন্সি বইয়ের লেখিকা কেট অ্যান্ডারসন ব্রাওয়ার। "ওবামা খুব সতর্কতার সাথে কথা বলেন, খুব ভাবনা চিন্তা করে মন্তব্য করেন। কিন্তু বাইডেন একেবারে উল্টো। না ভেবেই হুটহাট কথা বলা তার স্বভাব, যে কারণে অনেকবার তাকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। বাইডেন ওবামাকে বলেছিলেন, তিনি বদলাবেন না 'আমি যেমন আমি তেমনই থাকব'," বলেছেন কেট অ্যান্ডারসন ব্রাওয়ার। বারাক ওবামা ও জো বাইডেন নির্বাচনী প্রচারে ওই নির্বাচনে মি.বাইডেনের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী নিউ মেক্সিকোর সাবেক গভর্নর বিল রিচার্ডসন বলেন, ডেমাক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারি নির্বাচন পর্বের প্রচারণার সময় ওবামা আর বাইডেনের মধ্যে একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। "ওবামা তার প্রশাসনে পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে একজন ঝানু রাজনীতিককে চাইছিলেন," তিনি বলেন। ইলিনয়ের জন সমাবেশে মি. বাইডেনকে তার রানিং মেট ঘোষণা করে মি. ওবামা বলেছিলেন, "জো বাইডেন একজন বিরল মানুষ- কয়েক দশক ধরে তিনি ওয়াশিংটনে নানা পরিবর্তন এনেছেন, কিন্তু ওয়াশিংটন তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি। আমি মনে করি আমার পার্টনার হিসাবে, দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে তিনিই সবচেয়ে উপযুক্ত।" ইরাক যুদ্ধ ও পররাষ্ট্র নীতি মি. বাইডেন পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক আমেরিকান সিনেট কমিটিতে কাজ করেছেন দীর্ঘ দিন। সিনেটের এই কমিটির সভাপতি হিসাবে ২০১২ সালের অক্টোবরে আমেরিকার রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের ইরাক যুদ্ধে যাবার বিষয়টিকে অনুমোদন দেবার সিদ্ধান্ত ছিল তার ওপর। এর ১১ বছর আগে উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশকে সাদ্দাম হুসেনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুমোদনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন মি. বাইডেন । "কুয়েতের মুক্তির জন্য আমেরিকানদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবার আগে আমাদের উচিত দেখা কোনরকম বিকল্প পথ আমরা চেষ্টা করেছি কিনা, "সিনেট কমিটির শুনানিতে বলেছিলেন মি. বাইডেন। "আমরা করিনি।" ১৯৯০এ উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ সৌদি আরবে আমেরিকান নৌ সেনাদের সাথে মি. বাইডেনের হুঁশিয়ারি স্বত্ত্বেও উপসাগরীয় যুদ্ধের পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ওই যুদ্ধে আমেরিকান মারা যায় অল্প সংখ্যক। এরপর থেকে বাইডেনকে পররাষ্ট্র ও জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির ক্ষেত্রে দুর্বলচিত্ত বলে তুলে ধরা শুরু হয়। ওই ভোট নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হবার পরবর্তী কয়েক বছর মি. বাইডেন আন্তর্জাতিক বিষয়ে কট্টর অবস্থান দেখাতে শুরু করেন, যেমন বলকান গৃহযুদ্ধে আমেরিকান অবস্থান, ইরাকে বোমা হামলা এবং আফগানিস্তানে দখলদারিত্ব কায়েমের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করে। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ইরাকের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে এই অভিযোগে যখন ইরাকে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর প্রস্তাব করেন, তখন মি. বাইডেন তাতে জোরালো সমর্থন দিয়েছিলেন। "আমি মনে করি না এটা যুদ্ধ করার জন্য একটা হুজুগ, আমার বিশ্বাস এটা শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে অভিযান," তিনি বলেন। বাইডেনের ইরাক যুদ্ধে সমর্থন নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাতা মার্ক ওয়েসব্রট বলেছেন, "যেসব ডেমোক্র্যাট এই যুদ্ধ সমর্থন করেছিলেন, তাদের মনে হয়েছিল এই যুদ্ধ সমর্থন না করার ঝুঁকিটা হল, যুদ্ধটা যদি সফল হয়ে যায়, তাহলে তার থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার ক্ষেত্রে তারা পেছিয়ে পড়বেন। " তবে তার ওই সমর্থনের কারণে অনেক ডেমোক্র্যাট সমর্থকের সমালোচনার মুখে তিনি পড়েন। তার আত্মকথায় ২০০৭ সালে ইরাক যুদ্ধ নিয়ে অধ্যায়ের শিরোনাম তিনি দেন - "আমার ভুল" । তিনি লেখেন: "তাদের আন্তরিকতা ও দক্ষতা আমি বুঝতে ভুল করেছিলাম।" ২০০৩এর এপ্রিলে আমেরিকান নৌ সেনারা বাগদাদে সাদ্দাম হুসেনের মূর্তি টেনে নামায় ইরাক যুদ্ধের পর তিনি বামপন্থার দিকে ঝোঁকেন। তিনি ইরাকে আমেরিকান সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধির বিরোধিতা করেন এবং সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী জোরদার করার এবং ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিপক্ষে পরামর্শ দেন। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হবার লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দেবার পর তিনি ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের প্রতি আমেরিকার সমর্থন বন্ধ করার পক্ষে মত তুলে ধরেন। ইরানের সাথে পরমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখা, জলবায়ু নিয়ে প্যারিস চুক্তি সমর্থন, চীনে মার্কিন স্বার্থ বজায় রাখা এবং ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক সংস্কার উৎসাহিত করা সহ নানা বিষয়ে তিনি গত কয়েক বছর কংগ্রেসের ওপর চাপ দিয়েছেন। তবে চীন ও ইউক্রেন নিয়ে মি. বাইডেনের অবস্থানকে বিভিন্ন প্রচারণায় কড়া ভাষায় আঘাত করেছেন মি. ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, মি. বাইডেন চীনের বেশি ঘনিষ্ঠ এবং ইউক্রেন নিয়ে তার আগ্রহ মূলত ইউক্রেনে তার ছেলে হান্টারের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার খাতিরে। জো বাইডেন ও তার রানিং মেট কমালা হ্যারিস লড়াইয়ের চূড়ান্ত ধাপ কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে শুরু হলেও, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের মনোনীত প্রার্থী হবার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছেন জো বাইডেন। তার প্রতিপক্ষ বার্নি স্যান্ডার্সকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট পদের টিকেট এখন মি. বাইডেনের হাতে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, তার এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ আট বছর বারাক ওবামার ডেপুটি হিসাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালন। এর সুবাদে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ ডেমোক্র্যাটদের বিপুল সমর্থন পেয়েছেন। একজন কৃষ্ণাঙ্গ-ভারতীয় বংশোদ্ভুত নারী কমালা হ্যারিসকে তিনি বেছে নিয়েছেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসাবে। প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তার তৃতীয় প্রচেষ্টা এবং দীর্ঘ ৪০ বছরের স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত পূরণ হবে কিনা তা জানা যাবে তেসরা নভেম্বরের নির্বাচনে।
শুরুটা কঠিনই হয়েছিল জো বাইডেনের জন্য। ফেব্রুয়ারির শীতে আইওয়া ককাসের ভোটের ফলাফল দেখে মুষড়ে পড়েছিলেন। ২০২০-র প্রেসিডেন্ট পদে তার প্রার্থী হবার সম্ভাবনা শেষ পর্যন্ত টিকবে কিনা তা নিয়ে বড় রকম সংশয় দেখা দিয়েছিল।
ফুটবলারের অনেক রকম সংস্কার থাকে যা তারা প্রতি খেলার সময়ই পালন করে থাকেন। তবে এটা এখন অনেকেই জেনে গেছেন যে বহু পেশাদার ফুটবলারেরই আছে বিচিত্র সব বাতিক ও কুসংস্কার, যা তারা নিষ্ঠার সাথে প্রতিটি ম্যাচেই পালন করে থাকেন। এসব সংস্কারে আসলেই কোন কাজ কাজ হয় কিনা - তা বলা নিশ্চয়ই খুবই মুশকিল। তবে ফুটবলাররা নিশ্চিত যে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং এতে কাজ দেয়। খেলায় সৌভাগ্য এনে দেবে - এই আশায় পৃথিবীর সেরা ফুটবলাররা কি ধরণের বিচিত্র সব কাজ করেন - তা কিছু দেখে নিন এখানে। খেলার আগে যা করবেন: একটি রুশ 'ক্লাসিক' গেন্নারো গাত্তুসো ছিলেন ইতালি আর এসি মিলানের এক দুর্দান্ত মিডফিল্ডার। জার্মানিতে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে তার খেলা ইতালির শিরোপা জয়ের পেছনে বড় ভুমিকা রেখেছিল। Gennaro Gattuso liked a little literary drama before playing খেলার আগে গাত্তুসো করতেন এক বিচিত্র কাজ। তিনি ম্যাচ শুরু হবার আগে রুশ লেখক ফিওদর দস্তয়েভস্কির বই পড়তেন। দস্তয়েভস্কির 'ক্রাইম এ্যান্ড পানিশমেন্ট', 'দি ব্রাদার্স কারামাজভ' এবং 'দি ইডিয়ট।' তিনি কেন এটা করতেন তা স্পষ্ট নয়, কিন্তু এটা তার জন্য নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। তিনি ফিফাকে বলেছেন, তিনি নিজে খেলার সময় যে সব সংস্কার মেনে চলতেন - বিশ্বকাপে সেগুলো করা কঠিন। "প্রতিদিন আমি সেই একই সোয়েটার পরে থাকতাম - যা আমি প্রথম দিন পরেছিলাম। আমি দরদর করে ঘামতাম, কিন্তু ওটা আমি গা থেকে খুলতেও পারতাম না। তাই আমার মেজাজ সব সময় খিঁচড়ে থাকতো।" "আমার মনে ছিল কুসংস্কারের বাসা। যেমন, চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে খেলার আগে আমি দেশে ফিরে যাবার জন্য ব্যাগ গুছিয়েছিলাম। আর এর পর থেকে প্রতিটি খেলার আগেই আমি এ কাজ করতে শুরু করলাম। কিছুতেই নিজেকে থামাতে পারছিলাম না। এটা চলেছিল টুর্নামেন্ট শেষ হওয়া পর্যন্ত। সব সময় ডান পা ব্রাজিলের উজ্জ্বলতম ফুটবল তারকাদের একজন রোনাল্ডো। তিনি বিশ্বকাপ জিতেছেন, গোল্ডেন বল আর বর্ষসেরা খেলোয়াড় সহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন। This is not the only Ronaldo to have this particular superstition তার সংস্কার ছিল: মাঠে ঢোকার সময় প্রথম ডান পা ফেলা। অন্য আরো কিছু ফুটবলার এটা মেনে চলেন। তাদের একজন ব্রাজিলিয়ান আরেক তারকা রবার্টো কার্লোস। Ronaldo liked to keep up successful routines এমনকি আরেক রোনাল্ডো - পর্তুগাল ও রেয়াল মাদ্রিদের ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো - তিনিও এক সাক্ষাতকারে স্বীকার করেছেন যে তিনিও এটা মেনে চলেন। "অন্য অনেক খেলোয়াড়ের মতো আমারও কিছু কুসংস্কার আছে" - ২০১৬ সালে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "এর একটা হলো প্রথম ডান পা ফেলে মাঠে ঢোকা।" "আমি আরো কিছু রুটিন অনুসরণ করি। বিশেষ করে আগের ম্যাচে যেসব মানায় ভালো ফল হয়েছে - সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি।" জাদুর ব্যান্ডেজ চিলির ফুটবলার হুয়ান কার্লোস পেরাল্টা বলেছিলেন, তার সংস্কার হচ্ছে ডান পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে রাখা। এটা এই জন্য নয় যে আমি আহত হয়েছি। কিন্তু প্রথম যেদিন আমি পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলতে নেমেছিলাম - সেদিন জিতেছিলাম। তার পর থেকে আমি এটা করে আসছি। তার দল কোলো কোলো-র আরেক খেলোয়াড় ইভান জামোরানোও ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলতে নামতেন - তবে পায়ে নয়, ডান হাতে কব্জিতে। Playing for Chile, Zamorano's right wrist was constantly strapped but not because of injury জামোরানো হাতে চোট পাবার কারণে একদিন ব্যান্ডেজ বেঁধে মাঠে নেমেছিলেন, এবং সেদিন তিনি তিনটি গোল করেছিলেন। তার পর থেকেই এটা তার স্থায়ী বাতিকে পরিণত হয়। মাঠে চিহ্ন দিয়ে রাখা দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ সালের বিশ্বকাপ জেতা স্পেন এবং রেয়াল মাদ্রিদের গোলকিপার ইকার কাসিয়াসও নানা রকমের কুসংস্কার মেনে চলেন। তার নানা রকমের বাতিক এতই বেশি যে মারকা নামে একটি স্প্যানিশ ওয়েবসাইট একবার মন্তব্য করে, কাসিয়াস হচ্ছেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কুসংস্কারাচ্ছন্ন খেলোয়াড়দের অন্যতম। Iker Casillas had many rituals before every game "তিনি তার জার্সির হাত কেটে বাদ দেন, মোজা উল্টো করে পরেন, আর প্রতি খেলার আগে তিনি গোল লাইন পর্যন্ত তার এলাকায় বাঁ পা দিয়ে দাগ টেনে চিহ্নিত করে রাখেন।" "তা ছাড়া তার দল যখনই গোল করে, তখন তিনি গোল মুখে ফিরে এসে ছোট একটা লাফ দেন এবং বাঁ হাত দিয়ে গোল পোস্ট স্পর্শ করেন। 'মুড আনার জন্য' প্রতিবার একই গান শোনা নিজের মাঠে ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতেছিল ১৯৯৮ সালে। ওই দলে ছিলেন লরাঁ ব্লাঁ, জিনেদিন জিদান, ফ্যাবিয়ান বার্থেজ-এর মতো তারকারা। এই দলেরও সৌভাগ্যের পেছনে কিছু সংস্কারের ভুমিকা ছিল, এমনই মনে করতেন তাদের অনেকে। তার একটা হলো - চেঞ্জিং রুমে এই দলের খেলোয়াড়রা একটি মাত্র গান বাজাতেন। সেটা হলো গ্লোরিয়া গেনরের 'আই উইল সারভাইভ'। France won the World Cup in 1998 - was it because they listened to a certain song before every game? গানটা ১৯৭৮ সালের একটা হিট গান। কিন্তু ২০ বছর পর এটা বাজাতে বাধ্য করেছিলেন ডিফেন্ডার ভিনসেন্ট কানডেলা। পরেই গানটি বিশ্বকাপজয়ী ফেঞ্চ দলের প্রতীকী গানে পরিণত হয়। শুধু ফরাসী ড্রেসিংরুমে নয়, টিম বাসে এবং ট্রেনিংএর সময়ও এটা বাজানো হতো। নীল অন্তর্বাস এটা একটা খুবই সাধারণ সংস্কার। কলম্বিয়ার গোলকিপার ছিলেন রেনে হিগুইতা। তিনি প্রত্যেক খেলায় পরতেন নীল আন্ডারওয়্যার। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি ফিফার ওয়েবসাইটে একবার বলেছিলেন, ১৯৮০র দশকের শেষ দিকে তাদের দল এটলেটিকো নাসিওনাল যাতে মিলোনারিওসের বিরুদ্ধে জিততে পারে - সে জন্য আমরা এক মহিলা গণকের কাছে গিয়েছিলাম - যিনি ভাগ্যে কি আছে বলতে পারেন। তিনি বললেন, "আমাদের ওপর অভিশাপ লেগেছে। তিনি একটি বেল্ট এবং সব খেলোয়াড়ের পরার জন্য নীল আন্ডারওয়্যার পাঠালেন।" "এর পরই সব ঠিক হয়ে গেল । আমরা কাপও জিতেছিলাম ।" Higuita liked to wear underwear of a certain colour for good luck টয়লেট বাঁ দিকে মারিও গোমেজ ছিলেন দারুণ গোলস্কোরার। তিনি স্টুটগার্ট, বায়ার্ন মিউনিখ, ফিওরেন্টিনা, আর বেসিকটাসের হয়ে খেলেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগও জিতেছেন। তাকে বলা হয় জার্মান ফুটবলের 'সুপার মারিও'। তবে তার অভ্যাস যে শুধু গোল করার ক্ষেত্রেই তা নয়। ফিফার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, খেলোয়াড়দের চেঞ্জিং রুমে তিনি সবসময়ই প্রস্রাব করার জন্য বাঁ দিকের একেবারে শেষ ইউরিনালটি ব্যবহার করেন। Mario Gomez would only use a certain urinal পেনাল্টির আগে মাঠেই প্রস্রাব করতেন গয়কোচিয়া সাবেক আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সেরজিও গয়কোচিয়া হলেন আরেক ফুটবল তারকা - যার টয়লেট 'বাতিক' রয়েছে। ইতালিতে ১৯৯০ বিশ্বকাপে যুগোশ্লাভিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে পেনাল্টির আগে তার বাথরুমে যাবার দরকার হয়েছিল, কারণ তিনি প্রচুর পানীয় খেয়েছিলেন। গয়কোচিয়া বলছিলেন, কিন্তু তার টয়লেটে যাবার সময় সময় ছিল না। তাই তিনি মাঠের মধ্যেই প্রস্রাব করেছিলেন। এর পর আর্জেন্টিনা পেনাল্টিতে ম্যাচটি জিতে গেল। এর পর সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার খেলা ছিল ইতালির বিরুদ্ধে, এবং সে খেলাও পেনাণ্টিতে চলে গেল। তখন গয়কোচিয়া করলেন ঠিক সেটাই - যা তিনি আগের ম্যাচে করেছিলেন। তিনি আবার মাঠের মধ্যে প্রস্রাব করলেন। পেনাল্টিতে আবার আর্জেন্টিনাই জিতেছিল। গয়কোচিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি এমনভাবে কাজটা করতেন যে কেউ তা বুঝতে পারতো না। টেপ প্যাঁচানো মোজা পরেন টেরি ইংলিশ ডিফেন্ডার জন টেরি ইংল্যান্ডের হয়ে কোন ট্রফি জেতেন নি। তবে তার ক্লাব চেলসির হয়ে তিনি প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপা লিগ - সবই জিতেছেন। Chelsea icon John Terry admitted he was very very superstitious at Chelsea চেলসিতে খেলার সময় একবার টেরি বলেছিলেন, তিনি খুবই কুসংস্কার প্রবণ। "আমি সব সময়ই টিম বাসে নির্দিষ্ট একটি সিটে বসি। আমার প্রতিটি মোজার চারদিকে তিনটি পাক দিয়ে টেপ লাগাই। আমি স্টেডিয়ামে যাবার পথে একটি নির্দিষ্ট সিডিই বাজিয়ে গান শোনেন। খেলার আগে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে এসে একই জায়গায় তার গাড়ি পার্ক করেন। এর পর আরো আছে। টেরিও খেলার দিন চেলসির চেঞ্জিং রুমে একই ইউরিনাল ব্যবহার করতেন। তবে সেটা মারিও গোমেজের মতো বাঁ দিকেরটা নয়, ডান দিকে একেবার শেষ মাথার ইউরিনাল। সবার শেষে বেরুতেন ববি মুর ইংলিশ ফুটবল কিংবদন্তী ববি মুর চাইতেন সবার শেষে চেঞ্জিং রুম থেকে বের হতে। কারণ তিনি তার শর্টস পরতেন সবার শেষে - যাতে ভাঁজ পড়ে না যায়। আরেক ইংলিশ খেলোয়াড় পল ইন্স-ও ড্রেসিংরুম থেকে বেরুতেন সবার শেষে। তিনি বেরিয়েই মাঠের দিকে দৌড় দিতেন এবং তার মধ্যেই তিনি গায়ে জার্সিটি পরতেন। England legend Bobby Moore liked to leave the changing room last আইভরি কোস্টের কোলো তুরেও সবার শেষে মাঠে নামতেন । একবার ২০০৯ সালে আর্সেনালের হয়ে লিগে খেলার সময় তাকে উইলিয়াম গালাসের বদলি হিসেবে নামানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি মাঠে ঢোকেন দু'মিনিট পর। তার ফলে দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম দুই মিনিট আর্সেনালকে ৯ জন নিয়ে খেলতে হয়েছিল। Kolo Touré from Ivory Coast liked to be the last one to run on the pitch তার পর তিনি যখন মাঠে নামলেন তুরেকে সতর্ক করে দেয়া হলো অনুমতি ছাড়া মাঠে ঢোকার জন্য। শটের 'অপচয়' করতেন না লিনেকার ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার। তিনি ওয়ার্ম-আপের সময় গোলে শট নিতেন না। কারণ তার ধারণা ছিল, এতে আসল খেলার সময় তার গোল করার সম্ভাবনা কমে যাবে। গ্যারি লিনেকার একই বাতিক ছিল মেক্সিকো আর রেয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তী হুগো সানচেজের। তিনিও ওয়ার্ম-আপে গোলে শট নিতে চাইতেন না। কারণ তিনি মনে করতেন, এতে শটের 'অপচয়' হবে।
কোন কোন ফুটবলার এটা স্বীকার করেন, তবে অনেকেই এ নিয়ে পালন করেন নিরবতা।
রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন প্রবীণদের সংখ্যা ক্রমশ: বাড়তে থাকলেও ভবিষ্যতে এই জনগোষ্ঠির সেবা ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং জনবল এখনও অপ্রতুল। প্রবীণদের দুঃখ-কষ্ট দেখার জন্য বাংলাদেশে সম্ভবত কোন মানুষকেই খুব বেশিদূর যেতে হয় না। ঢাকার এক রাস্তার পাশে রিকশা থামিয়ে ফুটপাথের চা-দোকানের বেঞ্চে বসে ছিলেন রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন। । ষাটের কিছু বেশি বয়সী শাহাদাত হোসেনের বাড়ি যশোরে, ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন প্রায় ৪০ বছর ধরে। তরুণ বয়সে যে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেছিলেন অচেনা শহরে এসে, এই বৃদ্ধ বয়সে এসেও তাঁর সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। "একদিন চালাই দুই-তিন দিন বসে থাকি, বয়স হয়ে গেছেতো, শরীর পাইরে ওঠে না"। বললেন, সন্তানরা বড় হলেও কেউ খোঁজ-খবর নেয়না, তাই পেটের দায়েই রিকশা চালান। বৃদ্ধ বয়সে এমন কঠিন কায়িক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এমন প্রবীণের সংখ্যা কম নয়। বাংলাদেশের সার্বিক বিবেচনায় অবশ্য রিকশাচালক মি. হোসেন একদিক দিয়ে স্বস্তিতে আছেন - তিনি এখনও কষ্ট করে হলেও নিজের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থাটি করতে পারছেন। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমানে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ প্রবীণ জনগোষ্ঠির একটি বড় অংশ সেটা পারেন না - বিশেষ করে যাদের বয়স সত্তরের বেশি। ষাট বছরের বেশী বয়সী মানুষকে বাংলাদেশে প্রবীণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসেবে, বাংলাদেশে বতর্মানে মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছর ছয় মাস। বিশ্বজুড়েই বাড়ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও মানুষের গড় আয়ু আরো বাড়বে বলেই ধরে নেয়া যায়। এই হারে বাংলাদেশে ২০৩০ সালের আগেই প্রবীণ জনগোষ্ঠির সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে, যার একটি বিশাল প্রভাব পড়বে শ্রমবাজারের ওপর। জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ কে এম নুর-উন-নবী বলছেন, ২০৪৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশে অপ্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় প্রবীণদের সংখ্যা বেশি থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন ৬৮ শতাংশের বেশি মানুষ কর্মক্ষম। কিন্তু তিন দশক পরে প্রবীণদের সংখ্যা আরো বেড়ে গেলে দেশের সার্বিক উৎপাদনেও একটি বড় ঘাটতি দেখা দেবে। "এই বয়স্ক মানুষদের যদি আমরা সমাজের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বিত করতে না পারি, তাহলে তারা একসময় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে," বলেন ড. নবী। বর্তমান হারে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠির সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে চার কোটি। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রবীণদের ৫৮ শতাংশের দারিদ্র্যের কারণে মৌলিক চাহিদা পূরণেরই সামর্থ্য নেই। সেখানে তাদের বৃদ্ধ বয়সে অন্য সেবা পাওয়াটা যে কতটা কঠিন তা বলাই বাহুল্য। অধ্যাপক এ এস এম আতিকুর রহমান। বাংলাদেশে প্রবীণদের সেবায় প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে পুরনো সংগঠন, প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম আতিকুর রহমান বলছেন যে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা। "চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রবীণদের জন্য আলাদা করে কিছু নেই। কিন্তু অন্যান্য বয়স শ্রেণীর তুলনায় প্রবীণদের স্বাস্থ্য চাহিদা অনেক বেশি জটিল এবং ব্যয়বহুল"। তিনি আরও বলেন, চাহিদা বাড়লেও সাধারণত প্রবীণের আর্থিক সক্ষমতা কমে যায় এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের তুলনায় তার চাহিদা অগ্রাধিকার পায় না। ঢাকার আগারগাঁওয়ে প্রবীণ হিতৈষী সংঘে রয়েছে একটি প্রবীণ নিবাস। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বাংলাদেশে এধরণের প্রবীণ নিবাস বা বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যাও খুব কম। সব মিলিয়ে কয়েক'শো প্রবীণের জন্য এ ধরণের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক রহমান। এই নিবাসে বর্তমানে ৪০ জনের বেশি নিবাসী রয়েছেন - তাদের একজন ৭৫ বছর বয়সী নার্গিস জাহান। তিনি জানান অল্পবয়সে স্বামীকে হারানোর পর চাকরি করে সন্তানকে বড় করেছেন। কিন্তু বৃদ্ধ অবস্থায় কেউ তাঁর দেখাশোনা করতে চায়নি। এরপর গত ১৪ বছর আছেন প্রবীণ নিবাসে। "বলেছি মরে গেলে লাশটা আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামে দিয়ে দিতে। তারাই ব্যবস্থা করবে," বলেন নার্গিস জাহান। প্রবীন নিবাসে ১৪ বছর ধরে আছেন নার্গিস জাহান। নার্গিস জাহান খুব ব্যতিক্রম নন - বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মানুষরা সাধারণত স্বেচ্ছায় সেখানে যান না। প্রবীণরা স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের সাথেই থাকতে চান এবং সামাজিকভাবেও সেটাই হয়ে আসছে। তবে সময়ের সাথে সাথে সামাজিক অবস্থা এবং পারিবারিক কাঠামোতে যে পরিবর্তন এসেছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে প্রবীণদের জন্য যথেষ্ট সেবা-ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। যৌথ পরিবারের সংখ্যা কমে আসছে এবং মানুষজন গ্রাম ছেড়ে শহরে বা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে অনেক মা-বাবাই অরক্ষিত হয়ে পড়ছেন। "অরক্ষিত এই প্রবীণদের সেবা দেয়ার জন্য যে নতুন-নতুন ব্যবস্থা প্রয়োজন তা গড়ে উঠছে না"- বলেন অধ্যাপক রহমান। জনসংখ্যাবিদরা বলছেন, প্রবীণদের আনুষ্ঠানিক সেবার প্রয়োজনীয়তা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। বিশেষ করে কয়েক দশক পরেই একজন কর্মক্ষম মানুষের ওপর প্রবীণ জনগোষ্ঠির যে চাপ পড়বে, তা সামাল দেয়া অনেকের জন্যই বেশ কঠিন হবে। "এই অবস্থা যদি স্থবির থাকে, তাহলে একটা সময় একজন কর্মক্ষম মানুষকে তিনটি প্রজন্মের দায়িত্ব নিতে হবে - তার নিজের, তার আগের (মা-বাবা) এবং তারও আগের (দাদা-দাদী)। তিনটা প্রজন্মের দায়িত্ব নেয়ার মত অর্থনৈতিক অবস্থাতো সবার থাকবে না"- বলেন অধ্যাপক নুর-উন-নবী। অধ্যাপক এ কে এম নুর উন নবী । প্রবীণ জনগোষ্ঠির জন্য সরকারের কিছু কার্যক্রম রয়েছে। সবচেয়ে বড় কার্যক্রমটি হচ্ছে বয়স্ক ভাতা, যার আওতায় সাড়ে ৩১ লাখ প্রবীণকে মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ২০১৩ সালে ষাটোর্ধ্বদের সিনিয়র সিটিজেন ঘোষণা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে চিকিৎসাসহ নানা ক্ষেত্রে প্রবীণদের অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা পাবার কথা। যদিও এখনো এটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১৩ সালেই সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দেখভাল বাধ্যতামূলক করে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইনও পাশ হয়েছে। কিন্তু সেটির প্রয়োগও খুব কম এবং এ নিয়ে সচেতনতারও অভাব রয়েছে। এর বাইরে বয়স্ক-ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত বিবেচনা বা বয়স বেশি দেখিয়ে ভাতা দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বয়স্ক-ভাতা প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী নুরুল কবির বলেন, বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে বয়স্ক ভাতা নিতে হয়, যে কারণে বয়স বাড়িয়ে দেখানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশে প্রবীণদের জন্য শুধু সরকারি সাহায্যই সীমিত নয়, বেসরকারিভাবেও প্রবীণদের নিয়ে খুব বেশি কাজ হয় না। অন্ততঃ যতটা হওয়া উচিত ততটা যে হচ্ছে না, সেবিষয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রায় সবাই একমত। ঢাকার প্রবীণ হাসপাতালের চিকিৎসক মহসিন কবির সম্প্রতি তরুণদের জন্য 'প্রবীণ বন্ধু' নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। তিনি বলছিলেন প্রবীণদের জন্য সামাজিক আন্দোলনে তরুণদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন, কারণ প্রবীণদের জন্য যখন সমস্যা প্রকট হবে তার ভূক্তভোগী থাকবে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম। "প্রবীণদের জন্য আমরা যে ফ্যাসিলিটি তৈরি করে যাব, পরে সেটা আমরাই ভোগ করবো"- বলেন ডা. কবির। বাংলাদেশ প্রবীন হিতৈষী সংঘের কার্যালয়, এখানে রয়েছে প্রবীণ নিবাস। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রবীণদের জন্য সরকারিভাবে বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে মাত্র একটি। এর বাইরে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা কিছু বৃদ্ধাশ্রম মিলিয়ে খুব অল্প কিছু প্রবীণের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অধ্যাপক নুর-উন-নবী বলেন, ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠির জন্য বিনিয়োগ করা প্রয়োজন, তা না হলে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গড়ে উঠবে না। বাংলাদেশে বৃদ্ধবয়সে সেবা দেয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাদানকারীও নেই। যেটা ভবিষ্যতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। "বয়স্ক মানুষদের নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানে তিনটা কাজ হতে পারে - চিকিৎসা বা সেবাদান, সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষণ এবং অ্যাকাডেমিক - অর্থাৎ এই পরিস্থিতিতে কী করা যায় এ নিয়ে গবেষণা"। ভবিষ্যতে এই সেবাদান লাভজনক ব্যবসা হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক নবী। অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলছেন, প্রবীণদের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এ বিষয়টি অনেকেই বুঝতে চান না। যার ফলে বার্ধক্য আসলে তখন হিমশিম খেতে হয়। বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে পেনশনের আর্থিক নিরাপত্তা থাকলেও অধিকাংশ বেসরকারি চাকুরিতে সেটি নেই। এসব মিলিয়ে বার্ধক্যের জন্য যে দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন, সেটা অনেকেই আমলে নেন না। অধ্যাপক রহমান বলেন, ৩০ বছর বয়সের পর থেকে একটি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করা গেলে বৃদ্ধবয়সে কিছুটা হলেও আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। বৃদ্ধ বয়সে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এমন অনেক প্রবীণ রয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থার উন্নতি না হলে ভবিষ্যৎ প্রবীণ জনগোষ্ঠির জন্য যে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে, তা বেশ নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। তবে বিশেষজ্ঞদের কথায় এটাও স্পষ্ট যে এ অবস্থা মোকাবেলা করাও সম্ভব। আর এজন্যে সচেতনতা তৈরি, সামাজিক এবং পারিবারিক মূল্যবোধ, বিনিয়োগ ও পেশাদারিত্ব - কোন ক্ষেত্রেই ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশে বর্তমানে তরুণ জনগোষ্ঠির সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হলেও আর মাত্র ৩০ বছরের মধ্যে প্রবীণদের মোট সংখ্যা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ছাড়িয়ে যাবে।
ভূপাতিত করা ভারতীয় বিমানের পাশে পাকিস্তানী সৈন্যরা পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের দুটো সামরিক বিমান ভূপাতিত করার দাবি করা হয়। যুদ্ধবিমানের পাইলট আভিনন্দন ভার্থামানের আটক হওয়াকে ভারতের জন্য বড় ধরনের বিপত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বুধবার পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডেকে আটক হওয়া পাইলট আভিনন্দন ভার্থামানকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতের সামাজিক মাধ্যমে বহু মানুষ তাদের প্রার্থনার কথা লিখে জানাচ্ছেন যাতে ওই পাইলট সুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরে আসতে পারেন। আরো পড়ুন: ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: আলোচনার কেন্দ্রে যে পাইলট কাশ্মীরে আকাশ থেকে যুদ্ধ, ভারতীয় বিমান 'ভূপাতিত' কাশ্মীর উত্তেজনা যা বলছেন দুই দেশের ক্রিকেটাররা পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডেকে পাইলট অভিনন্দন ভর্থমানকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পার্সন অব ওয়ার বা যুদ্ধবন্দী কে বা কারা? জেনেভা কনভেনশন অনুসারে, যখন কোন দেশের যোদ্ধারা বা সৈনিকেরা শত্রু পক্ষের সীমানার ভেতরে বন্দী হন তখন তাদের বলা হয় যুদ্ধবন্দী। ১৯২৯ সালের জেনেভা কনভেনশন ১৯৪৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে পরিমার্জিত করা হয় এবং সেখানে যুদ্ধবন্দীদের অধিকার, মর্যাদা, তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনসহ, বিভিন্ন বিষয়ে গাইডলাইন সংযুক্ত করা হয় যা জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে মানবাধিকার রক্ষার্থে অবশ্যই পালন করতে হবে। তৃতীয় জেনেভা কনভেনশনে যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচরণ এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত বিধান রয়েছে। সংঘর্ষের পরিস্থিতিতে কোনও পক্ষের কোনও বাহিনীর সদস্য যদি অন্য পক্ষের এলাকায় সেখানকার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে, তবে তাঁকে যুদ্ধবন্দীর মর্যাদা দিতে হবে। জেনেভা কনভেনশন অনুসারে, একজন যুদ্ধবন্দী মানবিক অধিকার পাওয়ার অধিকারী। তৃতীয় জেনেভা কনভেনশনের ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, যুদ্ধবন্দীদের কোনও অবস্থাতেই স্বেচ্ছাচারীভাবে হত্যা করা যাবে না, তাহলে সেটা হবে এই কনভেনশনের গুরুতর লঙ্ঘন।৷ যুদ্ধবন্দীরা দুষ্কর্ম, ভীতি প্রদর্শন এবং জন-কৌতূহলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকারী। ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে তাদের প্রতি সম্মানজনক আচরণের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে , যুদ্ধবন্দীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক যে কোনও কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তারা তাদের ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা অনুযায়ী যথাযথ সম্মান লাভের অধিকারী৷ তাদের সঙ্গে এমন কোনও আচরণ করা যাবে না যা মানবতার পরিপন্থী। তবে তৃতীয় জেনেভা কনভেনশন এর আর্টিকেল ৪৯-এ বলা আছে- যুদ্ধবন্দীর শারীরিক সক্ষমতা, বয়স লিঙ্গ ইত্যাদি বিবেচনায় তার শ্রমকে আটককারী কর্তৃপক্ষ কাজে লাগাতে পারবে। নন-কমিশন অফিসাররা যুদ্ধবন্দী হলে সুপারভাইসরি কাজ করতে পারবে। তাদের মর্যাদা সম্পর্কে আর্টিকেল ৪৫ এ বলা হয়েছে- যুদ্ধবন্দীরা অন্যান্য কর্মকর্তা কিংবা বন্দীদের তুলনায় তাদের র‍্যাংক এবং বয়স বিবেচনায় সম্মান পাবেন। যুদ্ধবন্দীকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কী বলা আছে? জেনেভা কনভেনশনের আর্টিকেল ১১৮ তে বলা আছে - যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর কোনরকম দেরি না করেই যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি এবং স্বদেশে প্রত্যাবাসন বা ফেরত পাঠাতে হবে। কিন্তু এভাবে ফেরত পাঠানোর মতো পরিবেশ যদি না থাকে বা দুই পক্ষ কোন যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে যুদ্ধরত প্রতিটি পক্ষ কোনরকম দেরি না করে ওপরের নীতির আলোকে যুদ্ধবন্দীদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে নিজস্ব একটি পরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করবে। যে পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে, তা যুদ্ধবন্দীকে জানাতে হবে। যে দেশ যুদ্ধবন্দীকে ফেরত পাঠাচ্ছে এবং তিনি যে দেশের নাগরিক, উভয় দেশ সমান হারে যুদ্ধবন্দীদের ফেরত পাঠানোর সব খরচ বহন করবে। সেসব ক্ষেত্রে দুইটি নীতি অনুসরণ করা হবে: ১. যুদ্ধরত দুইটি দেশ যদি একই সীমান্ত ব্যবহার করে, তাহলে তাকে আটক করার পর থেকেই যাবতীয় খরচের সমান অংশ দেবে ওই বন্দীর দেশ। ২. যদি উভয় পক্ষের মধ্যে এক সীমান্ত না হয়, তাহলে আটককারী দেশটি ওই বন্দীকে নিজের খরচে তাদের নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে নিয়ে আসবে, যেখান থেকে থেকে ওই বন্দীর দেশ যতটা সম্ভব কাছাকাছি হবে। যুদ্ধবন্দীদের ফেরত পাঠানোর বাকি খরচ দুই পক্ষ সমানভাবে বহন করতে সম্মত হবে। তবে যুদ্ধবন্দীদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা তৈরির কোন কারণই গ্রহণযোগ্য হবে না। আর্টিকেল ১১৯ - এ বলা আছে- প্রত্যাবাসন বিষয়ে আর্টিকেল ৪৬ থেকে ৪৮ পর্যন্ত যেসব শর্ত রয়েছে তার অনুরূপ হবে। যুদ্ধবন্দীদের কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি কোন অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ থাকলে তার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে বন্দী অবস্থায় থাকতে হবে। কেউ দোষী বলে প্রমাণিত হয়ে থাকলে তার ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য হবে। বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিংবা শাস্তির মেয়াদ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দুই পক্ষ বন্দীর পক্ষে একে অপরের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে। দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হবে বিচ্ছিন্ন বন্দীদের খুঁজতে এবং তাদের অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের উদ্দেশ্যে। আর্টিকেল ৪৯ এ বলা হয়, আহত কিংবা অসুস্থ বন্দীদের ক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ভ্রমণের জন্য সুস্থতা অর্জন না করছেন ততক্ষণ তাদের ট্রান্সফার করা যাবে না । প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ট্রান্সফারের শর্তাবলী প্রযোজ্য হবে এবং এ সম্পর্কে বলা হয়েছে আর্টিকেল ৪৬-এ। যখন আটককারী শক্তি যুদ্ধবন্দীকে ট্রান্সফারের বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন বন্দীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবেন যাতে করে তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও জটিল না হয়। ট্রান্সফার প্রক্রিয়া সবসময় মানবিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে এবং যে শর্তের অধীনে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে তা যেন আটককারী কর্তৃপক্ষের দেয়া শর্তের চেয়ে কম অনুকূল না হয়। ট্রান্সফারের সময় বন্দীর জন্য পর্যাপ্ত খাবার এবং জলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে যাতে সুস্থতা বজায় থাকে। এছাড়া সমুদ্র কিংবা আকাশপথে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আটককারী শক্তিকে সকর্তামূলক পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে । কাশ্মীর সীমান্তে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর টহল। কার্গিল যুদ্ধের পর কী ঘটেছিল? উইং কমান্ডার আভিনন্দনের গ্রেপ্তারের কারণে কার্গিল যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানের হাতে বন্দী দুই ভারতীয় পাইলটের প্রসঙ্গও উঠে আসছে। একজন পাইলটকে আটক করার পরেই হত্যা করা হয়, কিন্তু অন্যজন ফ্লাইট লেফটেনান্ট নচিকেতাকে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয় ভারত। তিনিও উইং কমান্ডার অভিনন্দনের মতোই একটি মিগ বিমান নিয়ে অভিযানে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে পাকিস্তানে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন জি পার্থসারথি। তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "গ্রেপ্তারের কিছুদিন পরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দপ্তর থেকে আমাকে জানানো হয় যে নচিকেতাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।" "আমাকে বলা হল জিন্না হলে যেতে, সেখানেই হস্তান্তর করা হবে নচিকেতাকে। ওই জিন্না হলে সাধারণত সংবাদ সম্মেলন হয়ে থাকে। তাই জানতে চেয়েছিলাম যে নচিকেতাকে হস্তান্তর করার সময়ে সংবাদ মাধ্যম উপস্থিত থাকবে কী না। আমাকে বলা হয়েছিল, হ্যাঁ, মিডিয়া থাকবে।" মি. পার্থসারথি সঙ্গে সঙ্গেই সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেছিলেন, একজন যুদ্ধবন্দীকে এভাবে মিডিয়াকে সাক্ষী রেখে হস্তান্তর করা যায় না। দিল্লিতে জানিয়ে দিয়েছিলেন বিষয়টা তিনি। কোনও যুদ্ধবন্দীর ছবি প্রকাশ করা বা তার হাত বাঁধা অবস্থায় জনসমক্ষে হাজির করা সমরনীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু উইং কমান্ডার আভিনন্দনের ক্ষেত্রে সেটাই করা হয়েছে বলে দাবি মি. পার্থসারথির। সংবাদমাধ্যমের সামনে নচিকেতার হস্তান্তরের প্রস্তাবে না বলে দেওয়ার পরে পাকিস্তান সরকার শেষমেশ দূতাবাসে পৌঁছিয়ে দিয়ে গিয়েছিল ওই ফ্লাইট লেফটেনান্টকে। পরে একটি গাড়িতে করে দুই কর্মকর্তার সঙ্গে ওয়াঘা সীমান্তে পৌঁছিয়ে দেয় ভারতীয় দূতাবাস। এখন উইং কমান্ডার আভিনন্দনকে কবে কীভাবে মুক্তি দেয় পাকিস্তান - সেদিকেই তাকিয়ে আছেন ভারতীয়রা। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: উত্তেজনা-সংঘাতের পর কাশ্মীরের সর্বশেষ যে অবস্থা ভারত-পাকিস্তানের সামরিক শক্তির পার্থক্য কতটা? একনজরে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের ইতিহাস ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে কেন এই বিরোধ
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাতে ভারতের একজন পাইলট আটক হওয়ার বিষয়কে ঘিরে পারমাণবিক শক্তির অধিকারী দুইদেশের মধ্যে উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার রাজধানী প্রায় ৫০ মাইল দূরে - মুর্শিদাবাদে। সারা রাত উটের পিঠে চেপে পরের দিন ভোরেই সিরাজ পৌঁছেছিলেন রাজধানীতে। মীর জাফর আর রবার্ট ক্লাইভ তখনও পলাশীর প্রান্তরেই রয়েছেন। পরের দিন সকালে রবার্ট ক্লাইভ একটি চিরকুট পাঠালেন মীর জাফরের কাছে। লেখা ছিল: "এই জয়ের জন্য আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই। এই জয় আমার নয়, আপনার। আশা করি আপনাকে নবাব ঘোষণা করতে পেরে নিজে সম্মানিত হতে পারব।" এই চিরকুট পাঠানোর আগে, যুদ্ধ জয়ের পরের দিন সকালেই মীর জাফর গিয়েছিলেন ইংরেজদের শিবিরে, রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে দেখা করতে। রবার্ট ক্লাইভ কিছুটা পরিশ্রান্ত, কিছুটা চিন্তিত লাগছিল তাকে। ইংরেজ সৈনিকরা তাকে নিয়ে গিয়েছিল কর্নেল ক্লাইভের তাঁবুতে। রবার্ট ক্লাইভ তখনও লর্ড হননি, কর্নেল ক্লাইভ তিনি তখন। ক্লাইভ মীর জাফরকে বললেন, "আপনার এখনই রাজধানী মুর্শিদাবাদের দিকে রওনা হওয়া উচিত। শহরটা নিজের কব্জায় করে ফেলুন। আপনার সঙ্গে কর্নেল ওয়াটসও যাবেন।" ক্লাইভ তার নিজের সেনাদের নিয়ে পেছনে পেছনে চললেন। সিরাজ যে দূরত্ব এক রাতের মধ্যে পার করেছিলেন, সেই ৫০ মাইল পেরুতে ক্লাইভ আর তার বাহিনীর লেগে গেল তিন দিন। রাস্তার নানা জায়গায় তোপ দাগার ফলে গর্ত, ভেঙ্গে পড়া গাড়ি আর সিরাজউদ্দৌলার সৈনিক আর ঘোড়ার মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিল। স্যার প্যান্ডেরল মুন তার 'দা ব্রিটিশ কনকোয়েস্ট অ্যান্ড ডোমিনিয়ন অব ইন্ডিয়া' বইটিতে লিখছেন, "ক্লাইভের ২৭শে জুনই মুর্শিদাবাদে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জগৎ শেঠ তাকে বলেছিলেন যে ক্লাইভকে হত্যার পরিকল্পনা হচ্ছে। সেজন্যই আরও দু'দিন পর, ২৯ তারিখে ক্লাইভ শহরে পৌঁছান। "মীর জাফর শহরের প্রধান ফটকে অপেক্ষা করছিলেন ক্লাইভকে স্বাগত জানানোর জন্য। দু'জনেই একসঙ্গে শহরে ঢুকেছিলেন। রবার্ট ক্লাইভই মীর জাফরকে মসনদে বসিয়ে নতুন নবাবকে স্যালুট করেছিলেন। এরপরে তিনি ঘোষণা করেন মীর জাফরের শাসনে কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না কোম্পানি। শুধু নিজেদের ব্যবসার দিকেই তাদের নজর থাকবে।" তারপর থেকে ১৮০ বছর ভারতে একচ্ছত্র রাজত্ব চালিয়েছে ইংরেজরা। পলাশীর যুদ্ধ যেভাবে রাতারাতি ইউরোপের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন হয়ে উঠলেন ক্লাইভ সিরাজউদ্দৌলার রাজকোষ থেকে পাঁচ কোটি টাকা পেয়েছিলেন ক্লাইভ। তার আশা ছিল তিনি আরও বেশি পাবেন। প্রসিদ্ধ ইতিহাসকার উইলিয়াম ডালরিম্পল তার বই 'দা অ্যানার্কি'তে লিখেছেন: "এই যুদ্ধ জয়ের জন্য ক্লাইভের পাওনা হয়েছিল দু'লাখ ৩৪ হাজার পাউন্ড। এছাড়া জমিদারীর মালিক হিসাবে প্রতিবছর ২৭ হাজার পাউন্ড পাওয়ার কথা ছিল। যদি এই বিপুল অর্থ তিনি সত্যিই পেতেন, তাহলে মাত্র ৩৩ বছর বয়সেই রবার্ট ক্লাইভ হঠাৎই ইউরোপের সবথেকে ধনী ব্যক্তিদের একজন হতে পারতেন। "পরের কয়েকটা দিন বেশ দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছিলেন ক্লাইভ। তার ভয় ছিল মীর জাফর কথার খেলাপ করবেন না তো! তাদের দেখে মনে হত, যেন দুই ক্ষমতাবান গুণ্ডা বড়সড় লুটের পরে ভাগাভাগিতে বসেছে।" পলাশীর যুদ্ধ রাত তিনটের সময়ে ছদ্মবেশে পালালেন সিরাজ যখন লুটের ভাগ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন ক্লাইভ, মীর জাফরের ছেলে মীরান তখন গোটা বাংলায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন রাজধানী থেকে পালিয়ে যাওয়া সিরাজউদ্দৌলাকে। "সিরাজউদ্দৌলা সাধারণ মানুষের বেশে রাজধানী থেকে বেরিয়ে গেছেন। সঙ্গে আছেন কিছু বিশ্বাসভাজন আত্মীয়স্বজন, আর কয়েকজন হিজড়া। রাত তিনটের সময়ে স্ত্রী লুৎফ-উন-নিসা আর কয়েকজন ঘনিষ্ঠকে ঢাকা দেওয়া গাড়িতে বসানো হল। সোনা জহরত যতটা সম্ভব নিয়ে প্রাসাদ ছাড়লেন সিরাজ," ইতিহাসবিদ সৈয়দ গুলাম হুসেইন খান লিখেছেন ফারসি ভাষায় লেখা 'সিয়ারুল মুতাখিরী' বইতে। মুর্শিদাবাদ থেকে প্রথমে ভগবানগোলা গিয়েছিলেন সিরাজ। দিন দুয়েক পরে, কয়েকবার বেশভূষা বদল করে পৌঁছিয়েছিলেন রাজমহলের কাছে। তিন দিন ধরে কিছু খাওয়া হয়নি, তাই একটু বিরতি নিয়েছিলেন সবাই। রান্না করা হয়েছিল খিচুরি। পলাশীর যুদ্ধের পর মীর জাফর ও রবার্ট ক্লাইভের দেখা করার চিত্র (১৭৬০) এক ফকিরের দেওয়া খবরে গ্রেপ্তার হলেন সিরাজ ওই এলাকাতেই থাকতেন শাহ দানা নামের এক ফকির। সে-ই গোপনে খবর দিয়ে দেয় যে সিরাজউদ্দৌলা সেখানে আছেন। এ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেল মীর জাফর, মীরানরা। দিনরাত এক করে যার খোঁজ চলছে গোটা বাংলায়, সেই সিরাজ এত কাছে রয়েছেন! খবর পেয়েই মীর জাফরের জামাই মীর কাশিম সশস্ত্র সৈন্যদের সঙ্গে করে নদী পার করে ঘিরে ফেললেন গোটা এলাকা। সিরাজকে দোসরা জুলাই, ১৭৫৭ নিয়ে আসা হল মুর্শিদাবাদে। রবার্ট ক্লাইভ তখনও সেখানেই ছিলেন। পলাশী স্মৃতি চত্বর ও মতিঝিল কমপ্লেক্সে সিরাজউদ্দৌলার ভাস্কর্য সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে শহরে আসার আগেই ক্লাইভ ফোর্ট উইলিয়ামে কোম্পানির দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। লিখেছিলেন, "আমি আশা করব মসনদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন একজন নবাবের প্রতি মীর জাফর সেই শিষ্টাচারটা দেখাবে, যা এই পরিস্থিতিতে দেখানো সম্ভব।" ওই চিঠি পাঠানোর দু'দিন পরে আরেকটি চিঠি লিখেছিলেন ক্লাইভ। "সিরাজউদ্দৌলা এই পৃথিবীতে আর নেই। নবাব মীর জাফর হয়তো সিরাজউদ্দৌলাকে কিছুটা দয়া দেখাতেন। কিন্তু মীরান মনে করলেন দেশে শান্তি বজায় রাখার জন্য সিরাজউদ্দৌলাকে মারতেই হবে। তাকে গতকাল সকালে খোশবাগে কবর দেওয়া হয়েছে," ৪ঠা জুলাইয়ের চিঠিতে লিখেছিলেন কর্নেল রবার্ট ক্লাইভ। ২৬৩ বছর পরে, আজ সেই তেসরা জুলাই। মুর্শিদাবাদের কাছে খোশবাগে সিরাজউদ্দৌলার সমাধি , এখানে ১৭৫৭ সালের তেসরা জুলাই তাকে সমাধিস্থ করা হয় সিরাজউদ্দৌলার শেষ সময় 'আ হিস্ট্রি অব দা মিলিটারি ট্র্যান্স্যাকশনস্ অব দা ব্রিটিশ নেশন ইন ইন্দোস্তান' বইতে রবার্ট ওরমে বর্ণনা দিয়েছেন সেই দিনটার। "পদচ্যুত নবাবকে মাঝ রাতে হাজির করা হল মীর জাফরের সামনে। ওই রাজমহলেই কদিন আগেও বাস করতেন সিরাজউদ্দৌলা। মীর জাফরের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে প্রাণভিক্ষা করেছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। সেপাইরা মহলের অন্য দিকে নিয়ে গেল সিরাজউদ্দৌলাকে। ওদিকে মীর জাফর তার পারিষদদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে কী করা উচিত, তা নিয়ে। "তাদের কাছে তিনটে পথ খোলা ছিল: হয় তাকে মুর্শিদাবাদেই বন্দী করে রাখা হোক, অথবা দেশের বাইরে অন্য কোথায় কয়েদ করা হোক। তৃতীয় বিকল্প ছিল প্রাণদণ্ড। অনেকেই চেয়েছিলেন সিরাজকে বন্দী করে রাখতে। কিন্তু মীর জাফরের ১৭ বছর বয়সী পুত্র মীরান কড়া বিরোধিতা করেছিলেন। মীর জাফরের নিজস্ব কোনও মতামত ছিল না," লিখেছিলেন রবার্ট ওরমে। তারপরের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ইতিহাসবিদ সুদীপ চক্রবর্তী, সম্প্রতি প্রকাশিত তার বই 'প্ল্যাসি: দা ব্যাটল দ্যাট চেঞ্জড দা কোর্স অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি'তে। মীর জাফর যেহেতু নিজস্ব কোনও মতামত দেননি সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে কী করা হবে, তাই "মীরান সেটাকেই বাবার সম্মতি বলে ধরে নিয়েছিল," লিখছেন সুদীপ চক্রবর্তী। তিনি ওই বইতে লিখেছেন, "সে তার বাবাকে বলল আপনি এখন বিশ্রাম নিন। আমি এদিকটা সামলে নেব। মীর জাফর ভাবলেন কোনও হিংসাত্মক কিছু নিশ্চয়ই হবে না। তিনি অনেক রাতে দরবার শেষ করে শয়নকক্ষে চলে যান।" সৈয়দ গুলাম হুসেইন খানের বইতেও এর পরের ঘটনাক্রম পাওয়া যায়। মীর জাফরের বাড়ি 'নমক হারাম দেওড়ি'র প্রবেশপথ তলোয়ার আর ছুরি দিয়ে হত্যা করা হল সিরাজকে "মীরান তার এক সাথী মোহাম্মদী বেগ-কে দায়িত্ব দিল সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার। মোহম্মদী বেগের আরেকটা নাম ছিল লাল মোহম্মদ। মীরান তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে যখন সিরাজউদ্দৌলার কাছে গেল, তখনই সিরাজ বুঝে গিয়েছিলেন কী হতে চলেছে এরপর। "তিনি আবেদন করলেন মেরে ফেলার আগে যেন তাকে ওজু করে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়। নিজেদের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার তাগিদে হত্যাকারীরা সিরাজের মাথায় এক ঘড়া পানি ঢেলে দেয়। তিনি যখন বুঝলেন যে ঠিকমতো তাকে ওজু করতে দেওয়া হবে না, তখন তিনি খাওয়ার জন্য একটু পানি দিতে বললেন," লিখেছেন সৈয়দ গুলাম হুসেইন খান। "ঠিক তখনই মোহাম্মদী বেগ ছুরি দিয়ে সিরাজের ওপরে প্রথম আঘাতটা হানলেন। ছুরির আঘাত হানা হতেই বাকিরা তলোয়ার দিয়ে হামলা চালাল সিরাজের ওপরে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাদের কাজ শেষ হল। মাথাটা ঝুঁকে পড়ল সিরাজের, তিনি গড়িয়ে পড়লেন," নিজের বইতে লিখেছেন রবার্ট ওরমে। তখন সিরাজউদ্দৌলার বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। মরদেহ হাতির পিঠে চাপিয়ে ঘোরানো হল গোটা শহর পরের দিন সিরাজউদ্দৌলার ক্ষত-বিক্ষত দেহ হাতির পিঠে চাপিয়ে মুর্শিদাবাদের অলি-গলি, বাজারে ঘোরানো হয়েছিল। যেন সকলের কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা যে সিরাজ পরাজিত। সৈয়দ গুলাম হুসেইন খান এই বর্বরতার কথা জানাতে গিয়ে লিখছেন, "সেই বীভৎস শবযাত্রার মধ্যেই মাহুত জেনে বুঝেই হুসেইন কুলি খাঁয়ের বাসভবনের সামনে মৃতদেহ বহনকারী হাতিটিকে দাঁড় করাল। দু'বছর আগে ওই হুসেইন কুলি খাঁকে হত্যা করেছিলেন সিরাজ। "এখন তার মৃতদেহ থেকেও কয়েক ফোঁটা রক্ত রাস্তায় গড়িয়ে পড়ল, যেখানে হুসেইন কুলি খাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।" মীরানের নিষ্ঠুরতা কিন্তু ওখানেই শেষ হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই সে আলিবর্দি খানের বংশের সব নারীদের হত্যা করেছিল। পলাশীর যুদ্ধ নিয়ে লেখা সুদীপ চক্রবর্তীর বইয়ের প্রচ্ছদ সিরাজের স্ত্রী লুৎফ-উন-নিসা মীর জাফরকে বিয়ে করতে অস্বীকার করলেন করম আলি 'দা মুজফ্ফরনামা অব করম আলি' গ্রন্থে আলিবর্দি খানের বংশের সব নারীদের হত্যা করার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, "প্রায় ৭০ জন নিরপরাধ বেগমকে একটি নৌকায় চাপিয়ে মাঝ-গঙ্গায় নিয়ে যাওয়া হয় ,আর সেখানেই নৌকাটি ডুবিয়ে দেওয়া হয়। সিরাজউদ্দৌলার বংশের বাকি নারীদের বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়। "নৌকাডুবি আর বিষ খাইয়ে যাদের হত্যা করা হল, সবাইকে একই সঙ্গে নদীর ধারেই খুশবাগ নামের একটি বাগানে দাফন করা হয়েছিল।" শুধু একজন নারীকে মেরে ফেলা হয়নি। তিনি ছিলেন সিরাজউদ্দৌলার অসাধারণ সুন্দরী স্ত্রী লুৎফ-উন-নিসা। মীর জাফর আর তার ছেলে মীরান - দুজনেই তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। করম আলি লিখছেন, "লুৎফ-উন-নিসা বাবা আর ছেলে - দু'জনের প্রস্তাবই এই বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন যে, প্রথমে হাতির পিঠে চড়েছি, এখন গাধার পিঠে চাপা সম্ভব নয়।" পলাশী যুদ্ধের স্মৃতিসৌধে সিরাজউদ্দৌলার ভাস্কর্য মীর জাফরের পতন পলাশীর যুদ্ধের বছরখানেকের মধ্যেই মীর জাফরের তেজ ধীরে ধীরে নিভে আসতে শুরু করে। কিছুদিন আগেও যে ক্লাইভ মীর জাফরের হয়ে কথা বলতেন, তিনিও তাকে 'দা ওল্ড ফুল' বা 'বোকা বুড়ো' বলে, আর তার ছেলে মীরানকে 'আ ওয়ার্থলেস ডগ' বা 'বেকার কুকুর' বলে উল্লেখ করতে থাকেন। আলস্য, অক্ষমতা আর আফিমের নেশা মীর জাফরকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল। ১৭৫৮ সালের ১১শে নভেম্বর ক্লাইভ জন পিনকে লেখা এক চিঠিতে বলছেন, "যে ব্যক্তিকে আমি মসনদে বসিয়েছিলাম, সে অহঙ্কারী, লোভী আর কথায় কথায় গালিগালাজ করা এক লোকে পরিণত হয়েছে। তার এই ব্যবহারের জন্য নিজের প্রজাদের কাছ থেকেই সে দূরে সরে যাচ্ছে।" ক্লাইভ ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার আগে অবধি মীর জাফর তার সৈন্যদের ১৩ মাসের বকেয়া বেতনের মাত্র তিনটে কিস্তি দিতে পেরেছিলেন। বেতন না পেয়ে সৈনিকরাও ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করেছিল। স্যার পেন্ডেরল মুন তার বই 'ওয়ারেন হেস্টিংস অ্যান্ড ব্রিটিশ ইন্ডিয়া' গ্রন্থে লিখেছেন, মীর জাফরের বাহিনীর ঘোড়াগুলোর অস্থিচর্মসার হয়ে পড়েছিল আক্ষরিক অর্থেই। তাদের শরীরের হাড় গোনা যেত। সেগুলোর পিঠে যারা চাপত, তাদের অবস্থা সামান্য উন্নত ছিল। এমনকি জমাদাররাও (অফিসার পদের নাম) ছেঁড়া ফাটা পোশাক পড়তে বাধ্য হতেন। পলাশীর যুদ্ধের তিন বছরের মধ্যেই ভারতের অন্যতম ধনী শহর মুর্শিদাবাদ দুস্থ হয়ে পড়ল। পলাশীর প্রান্তর, এখানেই হয়েছিল পলাশীর যুদ্ধ বাংলার সর্বনাশ করে দিয়েছিলেন মীর জাফর এই পরিণতির জন্য মীর জাফর অনেকাংশেই দায়ী। গুলাম হুসেইন খান লিখছেন, "সব সময়েই দামী গয়না-জহরত পড়ার একটা শখ ছিল মীর জাফরের। কিন্তু নবাব হওয়ার পরেই নানা রত্ন-খচিত ছয়-সাতটা গয়না পড়তে শুরু করেছিলেন তিনি। গলায় তিন-চারটে মুক্তোর মালা থাকতো সবসময়েই। তার গান শোনা চাই আর নারীদের নাচ দেখা চাই।" কিছুদিনের মধ্যেই মানুষ বুঝতে পারল যে বাংলা শাসন করার ক্ষমতা মীর জাফরের নেই। তার আচার ব্যবহার একজন অশিক্ষিত আরব সৈন্যর মতো হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যার রাজ্য সামলানোর কোনও দক্ষতাই ছিল না। স্যার প্যান্ডেরল মুন তার বই 'দা ব্রিটিশ কনকোয়েস্ট অ্যান্ড ডমিনিয়ন অব ইন্ডিয়া' বইটিতে লিখেছেন: "ক্লাইভ ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার জাহাজে ওঠার আগে বলেছিলেন, মীর জাফরের শাসন করার কোনও ক্ষমতাই নেই। প্রজাদের ভালবাসা আর বিশ্বাস জয় করতেও সে অক্ষম। তার কুশাসন বাংলাকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।" তিনশো'র বেশি হত্যা করেছিল মীরান একদিকে যখন মীর জাফরের রাজ্য শাসনে অক্ষমতা পরিষ্কার হচ্ছে, তখন তার ছেলে মীরান নিষ্ঠুরতা চালিয়েই গেছে। দয়া বা ঔদার্য - এই শব্দগুলো তার অভিধানে ছিলই না। তার সবথেকে বড় চিন্তা ছিল আলিবর্দি খানের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে - যাতে ভবিষ্যতে কোনওদিন বিদ্রোহের কোনও সম্ভাবনাও না থাকে। গুলাম হুসেইন খান লিখছেন: "আলিবর্দি খানের পুরো হারেম নদীতে ডুবিয়ে তো দিয়েইছিল মীরান, তারপরে তার নজর পড়ে সিরাজের সবচেয়ে কাছের পাঁচ আত্মীয়ের পরিবারের দিকে। সিরাজের ছোটভাই মির্জা মেহেদীকে দুটো কাঠের তক্তার মাঝে রেখে পিষে মেরেছিল মীরান। ওই হত্যাকাণ্ডের যুক্তি হিসাবে সে বলেছিল সাপ মারার পরে তার বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।" "সিরাজউদ্দৌলার পরিবারের যতজন সদস্যকে সে হত্যা করেছিল, তার একটা তালিকা সে নিজের কাছে রাখত। খুব কম সময়ের মধ্যেই সেই তালিকায় নামের সংখ্যা ৩০০-রও বেশি হয়ে গিয়েছিল," লিখছেন গুলাম হুসেইন খান। তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা আর আগের প্রশাসনের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মীরানকে রাজপ্রাসাদের প্রধান ফটকের কাছেই হয় ছুরি দিয়ে হত্যা করেছিল, বা বিষ খাইয়ে মেরেছিল। ওয়ারেন হেস্টিংস যখন সিরাজের পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যার ঘটনাগুলো শুনলেন, তারপরে তিনি কলকাতায় পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছিলেন: "এই পাশবিক হত্যাকারী যা করেছে, তার পক্ষে কোনও যুক্তি-তর্কই টেকে না। "আমি এই কথা বলার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী, কিন্তু তবুও বলছি, এরকম একজনকে আমাদের সমর্থন করা কোনওভাবেই সঠিক হবে না।"
২৩শে জুন, ১৭৫৭ সাল। পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
মা সীমা সরকার ও তার সন্তান হৃদয়ের সাথে ফটোগ্রাফার মামুনের সাক্ষাৎ তবে এ ছবির পেছনের কারিগরকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত বিবিসির উদ্যোগেই ছবির আলোকচিত্রী আল মামুনের সাথে সাক্ষাৎ হল মা সীমা সরকার ও তার সন্তান হৃদয় সরকারের। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পেরে স্বস্তির হাসি সীমা সরকারের মুখে। হৃদয় সরকার পেয়েছেন তাঁর পছন্দের বিষয়- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। কলা ভবনে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বসে তাদের সেই সংগ্রাম এবং তারপর তাদের স্বপ্ন পূরণের কথাই জানাচ্ছিলেন তারা বিবিসির ফেসবুক লাইভে এসে। এর আগে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল ওই ছবিটি যিনি তুলেছেন সেই এম এ আল মামুনকে খুঁজে বের করে বিবিসি। ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারের একপর্যায়ে তাঁকেও হাজির করা হয় সেখানে। পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় সীমা সরকার ও হৃদয় সরকারের সাথে। তাদের মধ্যে এই প্রথম দেখা হলো। এ সময় মা-ছেলে দুজনের চোখেমুখেই কৃতজ্ঞতা ফুটে উঠছিল আল মামুনের প্রতি। কারণ - ঐ একটি ছবিই যে বদলে দিয়েছে তাঁদের জীবন! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে ৪র্থ বর্ষে পড়ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের আল মামুন। ছবিটি তিনি তোলেন তাঁর নিজের আবাসিক হল বিজয় একাত্তরে। সন্তানকে কোলে নেয়া সীমা সরকারের ভাইরাল হওয়া সেই ছবি "আমার কাজিনও ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিল। ওর সাথে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ চোখে পড়ে হৃদয়কে কোলে নিচ্ছে তার মা। আমার কাছে অবাক লাগে। আমি কিন্তু ছবিতে এটিই দেখাতে চেয়েছি যে সামনে একজন হেঁটে যাচ্ছে যে হাঁটতে পারে, আর আরেকজন হাঁটতে পারে না''- এভাবেই ছবিটি তোলার পেছনের গল্প বলছিলেন মামুন। সামাজিক মাধ্যমে ছবিটি পোস্ট করার পরই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। প্রচুর লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট পড়তে থাকে। তার পরের গল্প বলছিলেন হৃদয়। "আমার এক বন্ধু আমাকে ফোন করে জানায় যে আমার ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে। এরপর আমি অনলাইনে খুঁজতে থাকি এ ছবিটি কে তুলেছে। সাতদিন পর অবশেষে ফেসবুকে তার সাথে আমার যোগাযোগ হয়। এরপর ফোনে কথা ও আজ তো সামনা সামনিই দেখা হল।'' হৃদয়ের জন্য মামুনের শুভকামনা আরো পড়তে পারেন: জামায়াতকে ধানের শীষ: কিভাবে দেখছে ঐক্যফ্রন্ট? বাংলাদেশে সংসদ সদস্য হলে কী সুবিধা পাওয়া যায়? বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর কী ধরণের সরঞ্জাম আছে? শখের বশে প্রায়ই নানা রকমের ছবি তোলেন মামুন। তবে এ ছবির সঙ্গে তার আত্মিক যোগাযোগ থাকলেও পেছনের সংগ্রামের গল্পটা জানা ছিলনা তাঁরও। "আমিও আমার মায়ের কাছে থাকি না। একদিন মায়ের সাথে কথা না হলে ভালো লাগে না। মা বিষয়টাই আসলে অন্যরকম। আমি তাঁদের স্যালুট জানাই। আমি ছবি তুলেছি কিন্তু পেছনের গল্প যে এত বিশাল তা জানা ছিলনা। এখন একটা ছবি যদি হৃদয়ের জীবনে কোন সুযোগ তৈরি করে দেয়, সেটা দারুণ।" বিবিসির ফেসবুক লাইভেও দর্শকরা স্যালুট জানান সীমা সরকারকে। হৃদয়ের জন্য শুভকামনা আর মামুনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্তব্য এসেছে অজস্র। বিবিসি বাংলার ফেসবুক লাইভ মা-কে স্যালুট, হৃদয়কে শুভকামনা আর মামুনকে ধন্যবাদ জানিয়ে দর্শকদের মন্তব্য তবে সীমা সরকারের সমস্ত ধন্যবাদ মামুনকে ঘিরে। "ও আমার আরেকটা সন্তানের মতোই, ও আমার জন্য যা করেছে, আমি ওর জন্য প্রাণখুলে দোয়া করি ও যাতে অনেক বড় হয়।'' একহাতে হৃদয় আর অন্যহাতে মামুনকে জড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন অদম্য এই মা। ভাইরাল হওয়া ছবিটি নিয়ে আরেকটা নতুন তথ্য দিলেন হৃদয়। ঐ ছবিতে সামনে থাকা মেয়েটিও তাঁর সহপাঠী, একইসাথে কোচিং ও ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন তারা। অন্যদের জন্য তাঁর পরামর্শ-"আমাদের জীবনটা খুবই ছোট। তাই যে কোন প্রতিবন্ধকতায় আপসেট না হয়ে, যে অবস্থায় থাকি না কেন সেখান থেকে উন্নতির চেষ্টা করা উচিত। আর চেষ্টা করলে অবশ্যই সেটা ভালো কিছু বয়ে আনবে। যারা প্রতিবন্ধী তারা হতাশ হবে না। তোমরা চেষ্টা কর, নিশ্চয় সফল হবে।'' অদম্য মা: প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে আজকাল অনেক কিছুই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হয় অনেক ছবিই। একজন মায়ের তরুণ সন্তানকে কোলে নিয়ে হেঁটে যাওয়ার ছবিটিও সামাজিক মাধ্যম থেকেই নজরে পড়ে বিবিসির। তারপর থেকে ওই সন্তান হৃদয় সরকারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং মা সীমা সরকারের নাম বিবিসি ১০০ নারীর তালিকায় আসার গল্পটা অনেকেরই জানা।
কমতে থাকা এবং বয়সী হয়ে যাওয়া গ্রামীণ শ্রমশক্তির কারণে কৃষিকাজের জন্য উন্নত প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে থাকা জাপান এখন সাহায্য নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। বরং এই জাপানি বিজ্ঞানী চাষাবাদের জন্য এমন একটি জিনিসের ওপর নির্ভর করেন, যেটি আসলে মানুষের বৃক্ক বা কিডনির চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হতো- আর তা হছে পরিষ্কার এবং সহজ ভেদ্য পলিমারের ঝিল্লি। ওই ঝিল্লির ওপরে উদ্ভিদ বড় হয়ে ওঠে, যা তরল এবং পুষ্টি মজুদ করে রাখে। যেকোনো পরিবেশে সবজি গাছগুলোকে বড় হওয়ার সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি, এই প্রযুক্তি প্রচলিত কৃষিকাজের তুলনায় ৯০ শতাংশ কম পানি ব্যবহার করে। সেই সঙ্গে কীটনাশকও ব্যবহার করতে হয় না- কারণ পলিমার নিজেই ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। এটি একটি উদাহরণ মাত্র, যা দিয়ে ভূমি এবং কর্ম শক্তির ঘাটতিতে থাকা জাপান কৃষি কাজে বিপ্লব ঘটিয়ে দিচ্ছে। ফলমূল এবং সবজি মাঠে চাষ করেন না ইয়ুচি মোরি। তার ক্ষেত্রে আসলে মাটি বলে কোন জিনিস নেই ''কিডনি ডায়ালাইসিসের কাজে যে ঝিল্লি ব্যবহার করা হতো, আমি সেসব বস্তু এখানে ব্যবহার করছি,'' বিবিসিকে বলেছেন এই বিজ্ঞানী। তার কোম্পানি মেবাইওল প্রায় ১২০টি দেশে এই আবিষ্কারের পেটেন্ট বা স্বত্বাধিকার নিশ্চিত করেছে। এটা আসলে জাপানের অব্যাহত একটি কৃষি বিপ্লবকে সামনে তুলে ধরেছে। মাঠগুলো এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট আর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একেকটা টেকনোলজি সেন্টারে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তি অদূর ভবিষ্যতে ভালোভাবে ফসলের নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দেবে। এ বছর পানিসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘের বিশ্ব প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে যে, বর্তমানে যে হারে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে এবং পানির ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৪০ শতাংশ শস্য উৎপাদন এবং ৪৫ শতাংশ বিশ্বের দেশজ পণ্য উৎপাদন ঝুঁকিতে পড়বে। আরো পড়ুন: 'একমণ ধানের দামের চেয়ে একজন শ্রমিকের মজুরি বেশি' অর্গানিক খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে কিন্তু মান কেমন? ভারত যেভাবে বাংলাদেশের খামারিদের জন্য আশীর্বাদ কীটনাশকও ব্যবহার করতে হয় না- কারণ পলিমার নিজেই ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। ইয়ুচি মোরির আবিষ্কৃত কৃষি পদ্ধতি এর মধ্যেই জাপানের ১৫০টি এলাকায় ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আরব আমিরাতের মতো অনেক দেশ এই প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে। বড় ভূমিকম্প প্রবণ এবং ২০১১ সালের মার্চে পারমাণবিক বিপর্যয়ে পড়া এলাকাগুলোয় নতুন করে কৃষিকাজ শুরু করার জন্য এই পদ্ধতি বিশেষভাবে সহায়তা করছে। রোবট ট্র্যাক্টর ধারণা করা হয়, বিশ্বের জনসংখ্যা সাতশো সত্তর কোটি থেকে বেড়ে ২০৫০ সাল নাগাদ নয়শো আশি কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে। ফলে বিশ্বের খাদ্য চাহিদা মেটানোর বিষয়টিকে বড় ব্যবসায়িক সুযোগ হিসাবে দেখছে কোম্পানিগুলো, পাশাপাশি যন্ত্রপাতির বড় বাজারও তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে বিশ ধরণের রোবট তৈরির ব্যাপারে ভর্তুকি দিয়ে সহায়তা করছে জাপানের সরকার, যেগুলো কৃষিকাজের নানা পর্যায়ে সহায়তা করতে পারবে। নানা ধরণের ফসলের বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহের কাজ করবে এসব রোবট। একজন ব্যক্তি একই সময়ে দুইটি ট্র্যাক্টর চালাতে পারবে। সেন্সরের কারণে এসব ট্র্যাক্টর সামনে বাধা সনাক্ত করতে পারে এবং সংঘর্ষ এড়িয়ে যেতে পারে। হাক্কাইডো ইউনিভার্সিটির সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মেশিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইয়ানমার একটি রোবট ট্র্যাক্টর তৈরি করেছে, যেটি এর মধ্যেই ক্ষেতে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। একজন ব্যক্তি একই সময়ে দুইটি ট্র্যাক্টর চালাতে পারবে। সেন্সরের কারণে এসব ট্র্যাক্টর সামনে বাধা সনাক্ত করতে পারে এবং সংঘর্ষ এড়িয়ে যেতে পারে। এ বছরের শুরুর দিকে গাড়ি নির্মাতা নিশান সৌর শক্তি চালিত একটি রোবট তৈরি করে যেটি জিপিএস এবং ওয়াইফাই রয়েছে। ডাক নামের ওই বাক্স আকৃতির রোবটটি বন্যার শিকার হওয়া ধান ক্ষেতে ঢুকে পানি নিষ্কাশন, কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস আর পরিবেশগত প্রভাব নির্ণয়ে সহায়তা করেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে যে, বর্তমানে যে হারে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে এবং পানির ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ৪০ শতাংশ শস্য উৎপাদন এবং ৪৫ শতাংশ বিশ্বের দেশজ পণ্য উৎপাদন ঝুঁকিতে পড়বে। কম মানুষকে নিয়ে খামারের কাজ প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে জাপানের সরকার তরুণ প্রজন্মকে আকর্ষিত করতে চায়, যাদের সরাসরি কৃষি ক্ষেতে কাজ করার আগ্রহ নেই, কিন্তু প্রযুক্তিতে দক্ষতা রয়েছে। এটি আসলে অর্থনীতির এমন একটি খাতকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা, যেখানে শ্রম শক্তি হারিয়ে যেতে বসেছে। গত এক দশকে জাপানে কৃষিকাজের সাথে জড়িত জাপানির সংখ্যা বাইশ লাখ থেকে কমে সতেরো লাখে দাঁড়িয়েছে। আরো জটিল ব্যাপার হলো, এখন একজন কৃষকের গড় বয়স হলো ৬৭ বছর এবং বেশিরভাগ খামারি খণ্ডকালীন কাজ করেন। জাপানে কৃষকদের গড় বয়স ৬৭ বছর জমির সংকট জাপানের কৃষিকাজের আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা, যেখান থেকে দেশটির মোট খাদ্য চাহিদার মাত্র চল্লিশ শতাংশ এসে থাকে। দেশটির প্রায় ৮৫ শতাংশ জমি হচ্ছে পাহাড়ি। চাষযোগ্য বেশিরভাগ জমিতে ধান চাষ করা হয়। ধান জাপানের প্রধান খাদ্য এবং এটি চাষের জন্য ধানচাষীদের ভর্তুকি দিয়ে থাকে সরকার। কিন্তু মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলে গেছে। একটি ড্রোন যা মাত্র আধঘণ্টা করতে পারে, একজন মানুষের হয়তো সেটা করতে পুরো একটি দিন লাগবে। আকাশ থেকে ছিটানো ১৯৬২ সালে একজন জাপানি বছরে ১১৮ কেজি চাল খেতেন। ২০০৬ সালে সেটি নেমে দাঁড়িয়েছে ৬০ কেজিতে। এর ফলে জাপানের কৃষিকাজেও ধানের বাইরে গিয়ে বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংখ্যা কম থাকায় জাপানের কৃষকদের যন্ত্র এবং জৈবপ্রযুক্তির দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। চালক বিহীন যান বা ড্রোনের মাধ্যমে আকাশ থেকে বীজ বা কীটনাশক জমিতে ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছে। একটি ড্রোন যা মাত্র আধঘণ্টা করতে পারে, একজন মানুষের হয়তো সেটা করতে পুরো একটি দিন লাগবে। উন্নত প্রযুক্তির ফলে এমনকি জমি ছাড়াই ফসলের বিস্তৃতিও ঘটানো যায়। মাটি ছাড়াই সবজি চাষের প্রবণতা জাপানে বাড়ছে গ্রিনহাউজ প্রযুক্তি এবং জল-চাষ প্রযুক্তি (যাতে মাটির পরিবর্তে খনিজ সমৃদ্ধ পানিতে উদ্ভিদ চাষ করা হয়) প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাপান ফলমূল এবং সবজি উৎপাদন করছে। চিবার একটি প্রতিষ্ঠান, মিরাই গ্রুপ মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত তাক তাক করে খাদ্যশস্য উৎপাদন শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে প্রতিদিন ১০ হাজার লেটুস সংগ্রহ করছে। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এভাবে প্রায় একশোগুণ বেশি ফসল পাওয়া যায়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করে টমেটোর চাষ করা হচ্ছে একটি সেন্সর যন্ত্রের মাধ্যমে কোম্পানি কৃত্রিম আলো, তরল পুষ্টি, কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা এবং তাপমাত্রা পরিমাপ করতে পারে। কৃত্রিম আলো এসব উদ্ভিদকে দ্রুত বেড়ে উঠতে সাহায্য করে এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা রোগবালাইয়ের সম্ভাবনা দূর করে দেয়। তবে অতিরিক্ত শক্তি খরচের পরেও, জাপানে এ ধরণের ' উদ্ভিদ কারখানা গত এক দশকে তিনগুণ বেড়ে গেছে। বর্তমানে এরকম দুইশো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশ্ব বাজারে বর্তমানে জল-চাষ প্রযুক্তিতে দেড়শ কোটি ডলারের ব্যবসা হচ্ছে। কিন্তু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যালিয়েড মার্কেট রিসার্চ ভবিষ্যতবাণী করেছে যে, ২০২৩ সাল নাগাদ এই বাজারের আকার দাঁড়াবে ছয়শ চল্লিশ কোটি ডলারে। দেশের মোট খাদ্য চাহিদার ৬০ শতাংশ জাপান আমদানি করে প্রযুক্তির হস্তান্তর জাপান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে আফ্রিকান দেশগুলোর বার্ষিক ধান উৎপাদনের হার দ্বিগুণ করে বছরে পাঁচ কোটি টনে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য বেশ কিছু প্রকল্পও গ্রহণ করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সেনেগালে জাপান কৃষি প্রযুক্তি প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করেছে এবং সেচ বিষয়ক প্রযুক্তি হস্তান্তর করেছে। ফলে, দেশটিতে প্রতি হেক্টরে ধানের উৎপাদন চার টন থেকে বেড়ে সাত টন হয়েছে এবং কৃষকদের আয় বিশ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাপানের কৌশল হলো, বেসরকারি বিনিয়োগ বিস্তারে সহায়তা করা এবং আফ্রিকা মহাদেশে টেকসই কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবসা বিস্তৃত করা। ভিয়েতনাম, মিয়ানমার এবং ব্রাজিলের সঙ্গেও দেশটির সহযোগিতার নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু জাপানের কৃষি বিপ্লবের আসল উদ্দেশ্য হলো নিজেদের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটি মোট খাদ্য চাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ নিজেরা উৎপাদন করতে চায়। আর সেটি তারা প্রযুক্তির সহায়তায় বাস্তবায়ন করতে চায়।
ফলমূল এবং সবজি মাঠে চাষ করেন না ইয়ুচি মোরি। তার ক্ষেত্রে আসলে মাটি বলে কোন জিনিস নেই।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ এরপর ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আরো দুটি সাধারন নির্বাচন হয়েছে বটে, কিন্তু সেসব নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বড় ধরণের প্রশ্ন রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ একটানা ১২ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ২০০১ সালে নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার পরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে সংবিধানে একটি বড় সংশোধনী আনে বিএনপি সরকার। অভিযোগ রয়েছে, নিজেদের পছন্দের প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে পাওয়ার জন্য এই কাজ করেছিল বিএনপি সরকার। এর উদ্দেশ্য ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিজেদের কব্জায় রেখে নির্বাচনের সময় সুবিধা আদায় করা। এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। সংঘাতময় এক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। জারী করা হয় জরুরী অবস্থা। ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হলেও কার্যত সেটি পরিচালনা করেছে সেনাবাহিনী। ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের দীর্ঘ সারি নির্বাচন আয়োজন ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে সরকার আভাস দিয়েছিল যে সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সেজন্য কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং ছবি সহ ভোটার তালিকা তৈরি। ভোটের সংকট: দায় কার? নির্বাচন কমিশন, নাকি দলের? ফিরে দেখা: যেভাবে হয়েছিল ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন একই সাথে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় তথাকথিত দুর্নীতি-বিরোধী অভিযান শুরু করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। এর মূল লক্ষ্য ছিল রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ উঠেছিল আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতির বাইরে রাখার জন্য সর্বাত্নক চেষ্টা করেছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু সেটি সফল হয়নি। এ সময় দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকায় দেশের মানুষের বড় একটি অংশ চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়। এমন প্রেক্ষোপটে ২০০৭ সালের জুন মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সেনাসদস্যদের প্রহার করার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গন্ডি পেরিয়ে সহিংস এই আন্দোলন ছড়িয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই আন্দোলনের পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনুধাবন করে যে অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচন আটকে রাখা যাবে না। তখন একজন নির্বাচন কমিশানার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তার লেখা 'নির্বাচন কমিশনে পাঁচ বছর' বইতে মি. হোসেন উল্লেখ করেন, এ ঘটনা নিয়ে শুধু সেনাবাহিনীই নয়, অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যখ্যান করে বিএনপি সংলাপ ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক ছাত্র বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের অগাস্ট মাসের শেষের দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা ঘোষণা করেন, সেপ্টেম্বর মাস থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু হবে। সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু করে দফায়-দফায় এই সংলাপ চলেছে ২০০৮ সালেও। নির্বাচনী আইন সংস্কার নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য এই সংলাপ আহবান করেছিল নির্বাচন কমিশন। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, ছাত্র বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেখাতে চেয়েছিল যে নির্বাচন আয়োজনের দিকে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন কমিশন সংলাপ শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলের সাথে যখন সংলাপ শুরু হয়, তখন বিএনপিকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে তীব্র বিতর্কের মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। খালেদা জিয়া গ্রেফতার হবার আগে বিএনপির মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া এবং যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। মান্নান ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি দল ভাঙার চেষ্টা করছেন এবং সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে হাত মিলিয়েছেন। মান্নান ভুঁইয়াকে বহিষ্কার করে খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে মহাসচিব নিয়োগ করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সবাইকে অবাক করে দিয়ে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানায় সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে। মান্নান ভুঁইয়ার বহিষ্কারাদেশ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন মেজর হাফিজসহ বিএনপির আরো কিছু নেতা, যারা সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দলের স্থায়ী কমিটির একটি অংশ খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে মহাসচিব নিযুক্ত করে। ভোট দিচ্ছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ এমন অবস্থায় বিএনপির মূলধারা হিসেবে পরিচিত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রন না জানিয়ে সংস্কারপন্থী হিসেবে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে আমন্ত্রন জানানোর বিষয়টি বিএনপির ভেতরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন যে উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের প্ররোচনায় নির্বাচন কমিশন মূলধারার বিএনপিকে বাদ দিয়ে সংস্কারপন্থীদের স্বীকৃতি দিতে চাইছে। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মেয়াদ শেষ হবার পরে ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাোয়াত হোসেন তার বইতে স্বীকার করেছেন যে নির্বাচন কমিশন তখন ভুল করেছিল। " সে ভুলের মাশুল আমাদেরকে দিতে হয়েছে। আমার এখনো মনে হয় আমাদের (নির্বাচন কমিশন) বিরুদ্ধে বিএনপি‌-এর একমাত্র ক্ষোভের কারণ আমাদের ওই অতি উ‍ৎসাহী সিদ্ধান্ত," লিখেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন। অবশ্য পরবর্তীতে খন্দকার দোলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির মূলধারার সাথেই চূড়ান্ত সংলাপ করেছিল নির্বাচন কমিশন। সংকটের আশংকা ও খালেদা জিয়ার রাজি হওয়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সেটি নিয়ে ২০০৮ সালের গোড়া থেকেই সন্দেহ শুরু হয়। নির্বাচনে অংশ নেবার বিষয়ে খালেদা জিয়ার কিছু আপত্তি ছিল। তিনি চেয়েছিলেন তার দুই ছেলে তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমানের মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। কিন্তু সেনা গোয়েন্দারা শর্ত দেন যে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে খালেদা জিয়ার শর্ত মেনে নেয়া হবে। শুরুতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে আপত্তি ছিল খালেদা জিয়ার। এই নিয়ে খালেদা জিয়ার সাথে সেনা কর্মকর্তাদের তীব্র দরকষাকষি চলে দীর্ঘ সময়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। তবে খালেদা জিয়ার সাথে সরকারের কী ধরণের সমঝোতা হয়েছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বিএনপির নেতারাও জানেন না বলে মনে হচ্ছে। 'বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড দ্যা আফটারম্যাথ (২০০৭-২০০৮)' শিরোনামের বইতে মওদুদ আহমদ অনুমান করেছেন যে ছেলেদের মুক্তি এবং বিদেশ পাঠানোর বিনিময়ে খালেদা জিয়া হয়তো নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত মেনে নিয়েছিলেন। সমঝোতা করে যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন তারেক রহমান জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ পরিচয় হঠাৎ লক্ষ্যবস্তু কেন ১/১১'র সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে ভূমিকা রেখেছিলেন প্রণব মুখার্জি ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে বিএনপি নিশ্চিত করে যে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্বাচনে অংশ নেবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। এর আগে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিএনপির সাথে নির্বাচন কমিশনের মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তখন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, খালেদা জিয়ার দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন ১১ দিন পিছিয়ে ২৯শে ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। রয়টার্স জানিয়েছিল, নির্বাচনে তারিখ প্রথমে নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ই ডিসেম্বর। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সে তারিখে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি ছিলেন। বিএনপির তরফ থেকে একটি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছিল যে খালেদা জিয়া কারগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন সেপ্টেম্বর মাসে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা প্যারোলে কারাগার থেকে বের হয়েছিলেন জুন মাসে। সেজন্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে খালেদা জিয়ার সময় প্রয়োজন বলে বিএনপির তরফ থেকে বলা হয়েছিল। নির্বাচন পিছিয়ে ২৯শে ডিসেম্বর নির্ধারন করার বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে তীব্র আপত্তি তোলা হলেও শেষ পর্যন্ত তারা সেটি মেনে নিয়েছিল। নির্বাচনী প্রচারনা ও শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাস নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রার্থী বাছাই, জোটের শরীকদের সাথে আসন ভাগাভাগি, নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন -এসব কিছুর ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে বেশ গোছানো মনে হয়েছে বিএনপির তুলনায়। তখন বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারনায় শেখ হাসিনা তুলে ধরেন ভবিষ্যতে তিনি বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চান। আওয়ামী লীগের "ডিজিটাল বাংলাদেশ‍" শ্লোগান তরুন ভোটারদের আকৃষ্ট করে। এছাড়া দুর্নীতি দমন এবং বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপির কাছে সেরকম কর্যকরী কোন প্রতিশ্রুতি ছিল না, যেটি তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদের উপস্থিতিতে ক্ষমতা গ্রহণ করছেন শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১০ই নভেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি গোপন এক তারবার্তায় লিখেছেন, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে, দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য তিনি প্রস্তুতি শুরু করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরো লিখেছেন, বিদেশ থেকে ফিরে আসার পরে দলের উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে তার খুব একটা সময় লাগেনি। ডিজিএফআই'র ভূমিকা ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর সমর্থনে ড. ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেবার পরে বাংলাদেশের রাজনীতি প্রকৃতপক্ষে নিয়ন্ত্রন করে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিজিএফআই। সেনাবাহিনী তাদের সুবিধামতো নির্বাচন আয়োজন করতে চেয়েছিল। তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন অভিযোগ উঠেছিল। শুরু থেকেই ডিজএফআই চেয়েছিল, শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে রাজনীতির বাইরে রাখতে। যেটি 'মাইনাস টু' ফর্মুলা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিল। কিন্তু তাদের সে পরিকল্পনা সফল হয়নি। ২০০৮ সালের ৩রা জুলাই ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ওয়াশিংটনে যে গোপন তারবার্তা পাঠিয়েছেন সেখানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডিজিএফআই'র ভূমিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে। মি. মরিয়ার্টির তারবার্তায় বলা হয়েছিল, ডিজিএফআই দেশের রাজনীতিতে এখনো বেশ ভালোভাবেই জড়িত আছে। রাজনীতিবিদদের হুমকি দেয়া এবং বড় দলগুলোর মধ্যে ভাঙন আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। "ডিজিএফআই যেভাবে ক্রমাগত হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছে, তাতে গণতন্ত্রে ফেরার ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রচেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং আসন্ন নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নের মুখে পড়বে," তারবার্তায় লিখেছেন মি. মরিয়ার্টি। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ২০০৮ সালের ১৫ই জুলাই তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা নির্বাচেনের রোডম্যাপ ঘোঘনা করেন। সেখানে বলা হয়, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ডিসেম্বর মাসে। রোডম্যাপের অন্য বিষয়গুলো ছিল নিম্নরূপ নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ প্রকাশের পর আওয়ামী লীগ নেত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য কমিশন অনেক বেশি সময় নিচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন এই রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়েছেন। নির্বাচনের ফলাফল নির্বাচনের দিন বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মানুষ ভোট কেন্দ্রে হাজির হয়েছিল। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের সামনে ছিল ভোটারদের দীর্ঘ সারি। যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, সেজন্য ভোটকেন্দ্রগুলোতে কোন রাজনৈতিক প্রভাব চোখে পড়েনি। নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী ২০০৮ সালের সাধারন নির্বাচনে ৮৬.২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৩০টি আসন। অন্যদিকে বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টি আসন। শুধু তাই নয়, প্রাপ্ত ভোটের হারের ক্ষেত্রে ছিল বিশাল ফারাক। আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৪৮.১৩ শতাংশ ভোট এবং বিএনপি পেয়েছিল ৩২.৪৯ শতাংশ ভোট। সে নির্বাচনে দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভরাডুবি হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর। চারদলীয় জোটের শরীক হিসেবে ৩৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র দুটি আসনে জয়লাভ করেছিল দলটি। এছাড়া ভোট পেয়েছিল ৪.৬০ শতাংশ। শপথ গ্রহণ করছেন শেখ হাসিনা ২৯ শে ডিসেম্বর রাতেই মোটোমুটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করতে যাচ্ছে। তবে জয়ের বিশাল ব্যবধান সবাইকে চমকে দিয়েছিল। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন তার বইতে লিখেছেন, "আমরা এমন রেজাল্ট আশা করিনি। আমাদের প্রাথমিক ধারণা ছিল যে মহাজোটের সাথে চারদলীয় জোটের তফাৎটা হয়তো ৪০ থেকে ৫০টি আসনের হতে পারে।" নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়া নির্বাচনের ফলাফল কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগে তখন উল্লাস আর উচ্ছ্বাস। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ আত্নবিশ্বাসী ছিল ঠিকই, কিন্তু জয়ের ব্যবধান এতো বেশি হবে সেটি অনেকে ভাবতে পারেননি। নির্বাচনে জয়লাভের পরদিন প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগ। সে সংবাদ সম্মেলনে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার আসার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ভিড় সংবাদ সম্মেলনের কক্ষ উপচে পড়ে। বাধ্য হয়ে সে সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করে আওয়ামী লীগ। এর পরদিন ঢাকা চীন মৈত্রি সম্মেলন কেন্দ্রে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র) আরো বড় জায়গায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা দেশের মানুষ এবং তাদের নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানান। তবে ২০০৮ সালের ফলাফল বিএনপিকে চমকে দিয়েছিল। মাত্র ৩০টি আসনে বিজয় কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিল না দলটি। নির্বাচনের পরদিন বাংলাদেশের পত্রিকার হেডলাইন বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তখন ফলাফল মেনে নেবার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছিল। একই সাথে নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রতিও নানা আহ্বান জানানো হয়। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার লিখেছিল, "গণতন্ত্রের প্রতি চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতি এবং বিশ্বস্ততা নির্ভর করছে জনগণের রায়কে পরাজিত পক্ষের মেনে নেবার উপর।" বাংলা দৈনিক যায় যায় দিনের ভাষ্য ছিল, "মানুষ গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিবর্তন চায়, অন্য কোনভাবে নয়।" আরেকটি ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ লিখেছিল, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে নির্বাচনে যারা ব্যাপক জয় পেয়েছে, তারা সরকার গঠনের পর অগণতান্ত্রিক আচরণ করেছে এবং ভিন্নমত দমন করেছে। পত্রিকাটি লিখেছিল, " আমরা শুধু আশা করি, আওয়ামী লীগ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবে।" আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত হবার সাথে সাথেই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং টেলিফোন করেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে মি. সিং বলেন, তার সরকারের সাথে কাজ করার জন্য দিল্লী তাকিয়ে আছে। নির্বাচন কমিশনের হিসেবে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮৬ শতাংশের বেশি ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে সংসদীয় ব্যবস্থা পুনরায় চালুর পর থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনটি ছিল সবচেয়ে বেশি অবাধ ও সুষ্ঠু। এই নির্বাচনকে বড় সফলতা হিসেবে উল্লেখ করে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, " বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো দেখিয়েছে যে কোন ধরণের সংঘাত ও সহিংসতা ছাড়াই একটি সরকারের কাছে থেকে অন্য আরেকটি সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া তদারকি করা সম্ভব।" ২০০৮ সালের সে নির্বাচনকে বেশ দ্রুততার সাথে স্বীকৃতি দিয়েছিল আমেরিকা। ভোট গ্রহণ শেষ হবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়েছিল একটি সফল নির্বাচন আয়োজনের জন্য। স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনের বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোট দিতে আসা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের মানুষের গনতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা রয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী আমেরিকান সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই) তাদের এক বিবৃতিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনকে 'বিশ্বাসযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন' বলে বর্ণনা করেছিল। এনডিআই'র বিবৃতিতে বলা হয়, "নির্বাচন বেশ ভালোভাবে পরিচালনা করা হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।" আরও পড়ুন: 'বাংলাদেশে এক-এগারো আরও শক্তিশালী করেছে হাসিনা ও খালেদাকে' যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি বাক বদল হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলাদেশের সাধারন নির্বাচনের ইতিহাসে ২০০৮ সালের নির্বাচনটি ছিল সর্বশেষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতীয় সৈন্যদের বহর অবিভক্ত ভারতের নদীয়ার বাসিন্দা মহিরুদ্দিন মন্ডল মারা গেলেন তৎকালীন মেসোপটেমিয়া বা বর্তমানের ইরাকে। সেই সময়ে তাদের অবস্থান ছিল বসরা শহরের দক্ষিণে। তারও কয়েক মাস আগে ওই অঞ্চলে পাঠানো হয়েছিল বগুড়ার ভোলানাথ চৌধুরী, ঢাকার জগদীশ চন্দ্র বসু, বর্ধমানের বগলাচরণ ব্যানার্জীএবং ময়মনসিংহের প্রমথনাথ ঘোষকে। মহিরুদ্দিন মারা যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই, ৩০ অক্টোবর, ১৯১৮ মেসোপটেমিয়ার যুদ্ধ শেষ হয় তুর্কি সেনাবাহিনীর পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে। আর তার কদিনের মধ্যেই ১১ নভেম্বর, ১৯১৮, শেষ হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। বাংলার নানা জেলা থেকে এদের মতো আরও অনেক তরুণ, যুবক গিয়েছিলেন সেখানে, যুদ্ধ করতে। পূর্ববঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের নিয়ে গড়া হয়েছিল বেঙ্গলি রেজিমেন্ট। আনুষ্ঠানিক নাম ছিল 'ফর্টিনাইনথ বেঙ্গলি রেজিমেন্ট'। এই ফর্টিনাইনথ বেঙ্গলি রেজিমেন্টের হয়েই যুদ্ধে গিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। আরও এক বহুল পরিচিত বাঙালীও এই রেজিমেন্টে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার চোখের দৃষ্টিশক্তি কম থাকায় তাকে বাহিনীতে ভর্তি করা যায় নি। কয়েক দশক পরে অবশ্য সেই বাতিল হয়ে যাওয়া সৈনিকই ব্রিটিশ সরকারের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তার নাম সুভাষ চন্দ্র বসু, ভারতের মানুষ যাকে নেতাজী বলে সম্মান দিয়ে থাকে। বাঙালীদের তখনও লড়াকু, যোদ্ধা জাতি বলে মনেই করা হত না, তাই যখন যুদ্ধ বাধল ১৯১৪ সালে, তখন গোড়ার দিকে বাঙালীদের সেনাবাহিনীতে ভর্তি করার কোনও পরিকল্পনাই ছিল না ব্রিটিশ সরকারের। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বেঙ্গল ল্যান্সারসের সৈনিক বাঙালীদের নিয়ে সন্দেহ ছিল ব্রিটিশদের যে বাঙালীরা যুদ্ধের ক'বছর আগেই বঙ্গভঙ্গ রোধ করতে পথে নেমেছিল, এবং যার শাস্তিস্বরূপ কলকাতা থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলেই ইতিহাসবিদদের অনেকে মনে করেন, সেই বাঙালীরা যুদ্ধের প্রশ্নে কী অবস্থান নেবে, তা নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। যদিও অন্যান্য প্রদেশ থেকে সেনাবাহিনীতে প্রচুর সংখ্যায় লোক নেওয়া হচ্ছিল বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই, দেশীয় রাজা-নবাবরা বিপুল পরিমানে অর্থ এবং লোকবল দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন ব্রিটিশ সরকারকে। কিন্তু বাঙালীদের সেনাবাহিনীতে নেওয়ার কথা তারা মাথাতেই আনে নি। ব্রিটিশ সরকার গোড়ায় শুধুমাত্র চিকিৎসা পরিষেবা, পরিবহন সেবার এবং সিগনালিংয়ের মতো কাজগুলিতে বাঙালীদের নিয়োগ করেছিল। কিন্তু লড়াইয়ের ময়দানে তাদের পাঠাতে আগ্রহ ছিল না। এই সময়ে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এগিয়ে এলেন এই দাবী নিয়ে, যে বাঙালীদেরও সেনাবাহিনীতে নেওয়া হোক, তাদেরও পাঠানো হোক যুদ্ধে। এদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলে কংগ্রেস নেতা স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী। নিজের সম্পাদিত ইংরেজি পত্রিকা 'বেঙ্গলি'-তে তিনি লিখেছিলেন, "সরকারের সঙ্গে আমাদের মতানৈক্য থাকতেই পারে। কিন্তু শত্রুর সামনে সেইসব ঝগড়া, মতানৈক্য ভুলে মহান সাম্রাজ্যকে রক্ষায় যা কিছু আছে, তাই দিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়া আমাদের কর্তব্য।" স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর বই থেকেই উদ্ধৃত করে দক্ষিণ এশিয়ার সমর-ইতিহাস বিশেষজ্ঞ অশোক নাথ লিখছেন, "আমার ভাষণগুলোর মূল বিষয় ছিল, যে আত্মনিয়ন্ত্রণের কথা আমাদের রাজনৈতিক নেতারা ভাবছেন, তার একটা মূল অঙ্গ হল আত্ম-সুরক্ষা। আমরা যদি রাজকীয় নাগরিকত্বের দাবী তুলি, তাহলে তার ভার ও দায়িত্বগুলোও আমাদের নিতে হবে। এই সময়ের সবথেকে গুরুদায়িত্ব হল সাম্রাজ্যকে রক্ষা করা।" সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে তৈরী হয়েছিল 'বেঙ্গলি রেজিমেন্ট কমিটি'। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য তরুণ আর যুবকদের উদ্বুদ্ধ যেমন করছিল এই কমিটি, তেমনই ব্রিটীশ সরকারের কাছে আবেদনও জানাচ্ছিল যাতে বাঙালীদের নিয়ে সেনাবাহিনীর একটা রেজিমেন্ট তৈরী হয়। ওই কমিটির মাথায় রাখা হয়েছিল বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাবকে। সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী নিজে, ঢাকার নবাব-বাহাদুর সৈয়দ নবাব আলি চৌধুরী, সরলা দেবী আর শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হক। ক্রমাগত দাবী উঠতে থাকায় অনুমতি পাওয়া গেল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। অধ্যাপক অশোক নাথ লিখছেন, "১৯১৬ সালের ৭ অগাস্ট বাঙালী সেনাদের নিয়ে দুটি কোম্পানি তৈরীর অনুমতি দেওয়া হল। এটিকে বলা হল 'বেঙ্গলি ডবল কোম্পানি'। মাথায় রাখা হল লেফটেন্যান্ট এস জি টেলরকে। এছাড়াও ছয়জন ভারতীয় অফিসার, যাদের ভাইসরয়েজ [গর্ভনর জেনারেল বা বড়লাট] কমিশনড অফিসার এবং ২১৮ জন সদস্য নিয়ে তৈরী হল এই বেঙ্গলি ডবল কোম্পানি।" "এর মধ্যে দিয়ে বাঙালীরা দুটো দিকে সফল হল। প্রথমত, ব্রিটীশ সাম্রাজ্যের অন্যান্য দেশ, যেমন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা কানাডা যেমন আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পেয়েছে, ভারতকেও সেরকমটা দেওয়া হোক, এই দাবী যেমন জোরালো ভাবে পেশ করা যাবে। দ্বিতীয়ত, বাঙালীরা লড়াকু জাতি নয়, এই তকমাটা মুছে ফেলা যাবে। তরুণ আর যুবকদের মধ্যে উৎসাহ এতটাই তৈরী হয়েছিল যুদ্ধে দেওয়ার জন্য, যাতে অন্যান্য পেশায় তিনগুণ পর্যন্ত বেশী আয় ছেড়ে দিয়েই তারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে এগিয়ে এসেছিলেন। সেই সময়ে একজন সেপাইয়ের মাসিক বেতন ছিল ১১ টাকা। বেতন কম হওয়ার কারণে পরিবারের যে ক্ষতি হবে, সেটা পুষিয়ে দিতে সমাজের বিশিষ্টজনেরা চাঁদা তুলে যুদ্ধে যাওয়া ওই যুবকদের পরিবারের হাতে তুলে দিতেন," লিখেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুইডিশ ইতিহাসবিদ অশোক নাথ। বাংলাপিডিয়া জানাচ্ছে, "এই বাহিনী পরিচিত ছিল 'বাঙালী পল্টন' নামে। ১৯১৬ সালের ৩০ অগাস্ট থেকে বাহিনীতে ভর্তি নেওয়া শুরু হয় কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে। 'বেঙ্গলি ডবল কোম্পানি'তে ভর্তি হওয়া প্রথম দশজন ১৯১৬-র ১২ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণের জন্য রওনা হন পাঞ্জাব প্রদেশের নওশেরাতে। এরপরে দফায় দফায় সৈনিকদের নওশেরায় পাঠানো হতে থাকে। মাস চারেকের প্রশিক্ষণের পরে ১৯১৭ সালের জানুয়ারীতে দ্বিতীয় দফায় প্রশিক্ষণ নিতে এই ডবল কোম্পানি করাচী যায়।" ততদিনে বাহিনীতে যোগ দিয়েছে আরও নতুন সদস্য। ব্রিটিশ সরকার তখন সিদ্ধান্ত নিল ডবল কোম্পানি থেকে এই বাহিনীকে পুরোদস্তুর রেজিমেন্টে উন্নীত করা প্রয়োজন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯১৭ সালের ১ জুলাই করাচীতে আনুষ্ঠানিকভাবে তৈরী হল ৪৯ নম্বর পদাতিক বাহিনী - ফর্টিনাইনথ বেঙ্গলিজ। কম্যান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব পেলেন ১২৬ নম্বর বালুচিস্তান ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট থেকে আসা লেফটেন্যান্ট কর্ণেল এ এল ব্যারেট। সেকেন্ড ইন কম্যান্ড হলেন মেজর ভি ভি ভি স্যান্ডিফোর্ড। বালোচরা চিরকালই যোদ্ধার জাত। সেই তাদের পরিচালনার ভার থেকে সরিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ব্যারেটকে বাঙালী রেজিমেন্টের দায়িত্ব দেওয়ায় তিনি প্রথম থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন। মি. ব্যারেট যে বাঙালীদের ওপরে কতটা খেপে থাকতেন, সেটা বোঝা যায় ১৯১৭ সালের শেষ দিকের একটা ঘটনা থেকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বাঙালী সৈন্যদের স্মরণে কলকাতায় স্মৃতিস্তম্ভ মেসোপটেমিয়ায় বাঙালী পল্টন এই 'বাঙালী পল্টন' মেসেপটেমিয়ার যুদ্ধাঙ্গনে পৌঁছয় ১৯১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। তাদের সেখানে যদিও সরাসরি যুদ্ধের কাজে লাগানো হয় নি। তারা মূলত গ্যারিসন ডিউটি করত বা মিলিটারি পুলিশ হিসাবে প্রহরার কাজ করানো হত তাদের। মেসোপটেমিয়ায় পৌঁছনর কয়েক মাস পরে, ডিসেম্বরে, ফর্টিনাইন্থ বেঙ্গলি রেজিমেন্ট পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মেসোপটেমিয়ায় ব্রিটীশ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, জেনারেল স্যার উইলিয়াম মার্শাল। নিজের স্মৃতিকথা, 'মেময়ার্স অফ ফোর ফ্রন্টস'-এ জেনারেল মার্শাল লিখছেন, "দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই আমি ওই ইউনিট পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। আমাকে স্বাগত জানালেন লেফটেনান্ট কর্ণেল ব্যারেট। পুরো বাহিনীটা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন তিনি। ছড়ানো ছিটনো কয়েকটা স্কোয়াড ছিল - কোনওটা ছোট, কোনওটা বড়। প্রথম স্কোয়াডের কাছে পৌঁছতেই লেফটেন্যান্ট ব্যারেট ঘোষণা করেছিলেন, ওটা হচ্ছে 'মিজলস [হাম রোগ] স্কোয়াড'। দ্বিতীয় স্কোয়াডটাকে পরিচয় করালেন 'হুপিং কাফ [হুপিং কাশি] স্কোয়াড' বলে, তৃতীয়টা ছিল 'স্কারলেট ফিভার স্কোয়াড'। সবগুলো স্কোয়াডের নামই তিনি দিয়েছিলেন নানা পরিচিত রোগের নামে। একজন পরিচিত বাঙালী রাজনীতিবিদের ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তিনি ওই রেজিমেন্টের একজন সিনিয়ার ভারতীয় অফিসার ছিলেন।" স্কোয়াডগুলিকে নানা রোগের নামে নাম দেওয়ার থেকেই আন্দাজ করা যায় বাঙালী পল্টনের ওপরে কতটা ক্ষোভ ছিল কম্যান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট ব্যারেটের। যদিও, এটা ঘটনা, যে বাঙালী ওই সেনাদের অনেকেই নানা রোগব্যাধিতে ভুগতেন। মধ্যপ্রাচ্যের জলহাওয়া আর কঠোর জীবন অনেকেরই সহ্য হয় নি। রোগে ভুগে মৃত্যু হত মাঝে মাঝেই। যেমন ব্রিটেনের ন্যাশানাল আর্কাইভে রাখা 'ওয়ার ডায়েরি' নম্বর ডব্লু ও ৯৫/৫০২০/৫ -এ বাগদাদ থেকে পাঠানো একটি বার্তায় ২৭ ডিসেম্বর, ১৯১৭ তে লেখা হয়েছিল, "একজন ভারতীয় সৈন্য সেরিব্রো-স্পাইনাল ম্যানেঞ্জাইটিস রোগে ভুগে বাগদাদের আইসোলেশন হাসপাতালে মারা গেছেন। ওইরকমই আরেকটি ওয়ার ডায়েরিতে, ১৯১৮ সালের ১০ জুলাই লেখা রয়েছে, "মহামান্য কমান্ডার ইন চীফের আদেশক্রমে নিম্নলিখিত ভারতীয় অফিসারকে তাঁর কমিশন্ড পদ ত্যাগ করা অনুমতি দেওয়া হচ্ছে ১৯ ডিসেম্বর তারিখ থেকে। অফিসারের নাম, জমাদার কে হাবিবুল্লা (ঢাকার নবাব)।" তিনি পদ ছেড়ে দেওয়ার আগেই অবশ্য যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা হয়ে যায়। ঢাকার নবাবই শুধু নয়, বাঙালী পল্টন বা বেঙ্গলি রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিলেন সেই সময়ের অনেক উচ্চবিত্ত বংশের সন্তানরাই। ব্রিটীশ দলকে হারিয়ে প্রথম আই এফ এ শিল্ড জেতা কলকাতার মোহনবাগান দলের সচিব ছিলেন যে শৈলেন্দ্রনাথ বসু, তিনি বেঙ্গলি রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিলেন সুবেদার মেজর হিসাবে। তার পরেই বাহিনীতে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন কুমার অধিক্রম মজুমদার, যিনি কলকাতা হাইকোর্টের একজন নামজাদা উকিল ছিলেন। ঢাকার নবাব ছাড়াও সেখানকার প্রথিতযশা ব্যবসায়ী রণদা প্রসাদ সাহাও যোগ দিয়েছিলেন এই রেজিমেন্টে। ঘটনাচক্রে, মি. সাহা ও তার ছেলেকে ১৯৭১ সালের ৭ মে পাকিস্তানী বাহিনী অপহরণ করে আরও বহু বুদ্ধিজীবির সঙ্গেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডনে বেঙ্গল ল্যান্সারস হিন্দু-মুসলিম একসাথে থাকতেন এই বেঙ্গলি রেজিমেন্টই ব্রিটিশ বাহিনীর একমাত্র ইউনিট ছিল, যেখানে ধর্ম, জাতপাত, এসব নির্বিশেষে শুধু বাঙালী বলেই সদস্যদের নেওয়া হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার সমর ইতিহাস বিশেষজ্ঞ অশোক নাথ লিখছেন, "ফর্টিনাইন্থ তৈরী করাই একটা অনন্য পরীক্ষা ছিল। এটাই ছিল প্রথম সম্পূর্ণভাবে বাঙালী রেজিমেন্ট। শিক্ষিত, শহুরে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের সন্তানরা এই রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিল। এবং বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ করা হত না, হিন্দু-মুসলমান সকলেই একসঙ্গে থাকতেন। অন্যান্য রেজিমেন্টগুলিতে যেমন মূলত অশিক্ষিত, গ্রামীন কৃষক শ্রেণীর মধ্যে থেকে বাহিনীর সদস্যদের ভর্তি করা হত, তার থেকে এখানেই তফাৎ ছিল বেঙ্গলি রেজিমেন্টের।" তবে বাহিনীতে যে 'হিন্দু ভদ্রলোক'দেরই প্রাধান্য ছিল, সেটাও উল্লেখ করছেন মি. নাথ। তার মতে, বাঙালী মুসলমানরা যদিও এই রেজিমেন্টের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিলেন, তবে তারা ছিলেন সংখ্যায় কম। এর একটা কারণ হল, খিলাফৎ আন্দোলনের প্রভাব। ইসলামের খিলাফৎ এবং অটোমান সাম্রাজ্য রক্ষা করার একটা মানসিকতা ছিল অনেক মুসলমানের মধ্যে। সেজন্যই সম্ভবত তারা বেশী সংখ্যায় এই বাঙালী বাহিনীতে যোগ দেন নি। আবার যে হিন্দুরা বেঙ্গলি রেজিমেন্টের সদস্য ছিলেন, তাদের মধ্যেও অশান্তি আর গন্ডগোল লেগেই থাকত। এরকমই একটা অশান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছিয়েছিল ৯ জুন, ১৯১৮ তারিখে। ব্রিটীশ লাইব্রেরিতে রাখা ইন্ডিয়া অফিস রেকর্ডস বলছে, বসরা শহরের দক্ষিণে সেই সময়ে অবস্থানরত বেঙ্গলি রেজিমেন্টের তিনজন ভারতীয় অফিসার গুলিবিদ্ধ হন। ওই তিনজন - সুবেদার মেজর শৈলেন্দ্রনাথ বসু, জমাদার আর এল মুখার্জী এবং সুবেদার এ কে মিত্র তাঁদের তাঁবুতে ঘুমিয়ে ছিলেন। পরে মারা যান মি. মিত্র। একজন নায়েক ও একজন সেপাহীকে গ্রেপ্তার করা হয় গুলি চালানোর জন্য। কোর্ট অফ এনকোয়ারিতে প্রমাণিত হয় যে ভারতীয় অফিসারেরা তাদের অধীনে থাকা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। সেই রাগেই গুলি চালিয়েছে ওই দুজন। তদন্তকারীরা আরও একজন ভারতীয় অফিসারকে সন্দেহ করেছিলেন গুলি চালনায় যুক্ত থাকার ব্যাপারে, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় নি। ধৃতরা দোষ স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তবে গোটা ঘটনাটিকে কিছুটা চেপে যাওয়া হয়েছিল। পত্রপত্রিকাগুলোতেও বিশেষ কিছু ছাপা হয় নি এ ব্যাপারে। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও অবশ্য বেঙ্গলি রেজিমেন্ট আরও বেশ কিছুদিন থেকে গিয়েছিল মেসোপটেমিয়াতেই। তাদের প্রহরার দায়িত্ব ছিল। কিন্তু পরের বছর, ১৯৯১ এর মাঝামাঝি কুর্দিস্তানের এক স্থানীয় নেতা, শেখ মাহমুদ আল বার্জিঞ্ঝি তাঁর প্রদেশকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন। কাছাকাছি থাকা বেঙ্গলি রেজিমেন্টকে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই একবারই বাঙালী পল্টন সরাসরি লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিল। তবে তারপরে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাম্মিনাহর বিমান ঘাঁটি পাহারা দেওয়ার জন্য। ১৯২০ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বেঙ্গলি রেজিমেন্ট সেই দায়িত্ব পালন করেছে। অন্যদিকে যুদ্ধের শেষে বাহিনীর সংখ্যা কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা করছে ব্রিটীশ সরকার। যেসব ইউনিটকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা হচ্ছিল, অথবা যাদের সম্বন্ধে খুব ভাল রিপোর্ট ছিল না, সেইসব রেজিমেন্টগুলোকেই প্রথমে তুলে দেওয়া হতে থাকে। ১৯২০ সালের ১০ অগাস্ট ব্রিটীশ পার্লামেন্টে এ নিয়ে এক প্রশ্ন করা হয়। লর্ড অ্যাম্পটহিল সরকারের কাছে জানতে চান যে বেঙ্গলি রেজিমেন্ট কী তুলে দেওয়া হয়েছে? ভারত সরকার কী তাদের যুদ্ধকালীন পারদর্শীতায় সন্তুষ্ট? জবাব দিয়েছিলেন এক বাঙালীই - লর্ড সত্যেন্দ্র প্রসন্ন সিনহা, যিনি পরে ব্যারণ হয়েছিলেন। "যেভাবে যুদ্ধের সময়ে তৈরী হওয়া অনেক সেনা ইউনিটকে অতিরিক্ত বলে তুলে দেওয়া হচ্ছে, ফর্টিনাইন্থ বেঙ্গলিকে সেইভাবেই তুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও একটা অংশকে এখনও টিঁকিয়ে রাখা হচ্ছে। মেসোপটেমিয়ায় যুদ্ধের সময়ে এই রেজিমেন্টের ব্যাপারে ভাল রিপোর্ট আসে নি," বলেছিলেন লর্ড সিনহা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সে ব্রিটিশ-ভারতীয় সৈন্য নদীয়া, কলকাতা, বগুড়া, যশোর, ঢাকা, খুলনা ... যুদ্ধের বেশ কিছু বছর পরে, কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক উল্টো দিকে কলেজ স্কোয়্যারে গড়ে তোলা হয় একটি শ্বেত পাথরের স্মৃতি সৌধ। সৌধটির নীচে একদিকে খোদাই করে লেখা আছে, "বেঙ্গলি রেজিমেন্টের সেই সব সদস্যদের স্মৃতিতে, যারা ঈশ্বর, রাজা এবং দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন ১৯১৪ থেকে ১৮র বিশ্বযুদ্ধে" বাকি তিনটি দিকে খোদাই করা আছে ৪৯ জন সৈনিক ও অফিসারের নাম, কবে মারা গেছেন আর বাংলার কোন জেলা থেকে তারা এসেছিলেন। এর মধ্যে যেমন আছে বর্ধমান, মেদিনীপুর, ২৪ পরগণা, নদীয়া বা কলকাতা, তেমনই রয়েছে বগুরা, যশোর, ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফরিদপুর, পাবনার নাম। রয়েছে ত্রিপুরার নামও। এই সৌধটি ছাড়াও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আরও দুটি স্মৃতি সৌধ রয়েছে। সবথেকে পরিচিতি এবং দৃশ্যমানটি আছে কলকাতা ময়দানে, যেটির নাম 'গ্লোরিয়াস ডেড সেনোটাফ' আর অন্যটি যুদ্ধের সময়ে নৌবাহিনীতে কর্মরত যেসব দেশীয় নাবিক বা লস্কর মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের স্মৃতিতে 'লস্কর মেমোরিয়াল'। বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির শতবর্ষে রবিবার বাঙালী পল্টন স্মৃতি সৌধ পরিষ্কার করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী, শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা ফুল-মালা দিয়েছেন। কিন্তু বছরের বেশীরভাগ সময়েই সেটি চূড়ান্ত অবহেলায় পড়ে থাকে। বিশেষ কেউ জানেনও না এই স্মৃতিসৌধটি কিসের বা কী তার তাৎপর্য।
আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর এক মাস আগের ঘটনা।
বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে সরকারি চাকরীর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে তাদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন পুলিশ, প্রশাসন, পররাষ্ট্র ও কর ক্যাডারে। পেশা হিসেবে প্রশাসনিক ক্যাডার বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে তারা মূলত ভালো বেতন ও চাকরির নিশ্চয়তার কথা বলেছেন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের এই পেশা পরিবর্তনের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ে এখন বহু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার। এবার সদ্য যোগ দেওয়া ২৩ জনের মধ্যে ১৪ জনই ইঞ্জিনিয়ার, পাঁচজন ডাক্তার।' শনিবার বুয়েটের এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি একে রাষ্ট্রের ক্ষতি বলেও উল্লেখ করেন। চিকিৎসক ও প্রকৌশলীরা পেশা পরিবর্তনের যেসব কারণ বলেছেন ইদানীং চিকিৎসা বা প্রকৌশলবিদ্যার ডিগ্রি নিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিসিএস ক্যাডার হচ্ছে বলেও এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। মূলত প্রশাসনিক ক্যাডারে চাকরি হলে ধারাবাহিক পদোন্নতি, ড্রাইভারসহ গাড়ি সুবিধা, বাংলো বা সরকারি কোয়ার্টারে থাকা, বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা, অবসরের পর পেনশন, ভাতাসহ আরও নানা সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকে। এছাড়া আলাদা অফিস কক্ষ, ব্যক্তিগত সহকারী, এবং সরকারি চাকুরীজীবী হিসেবে সম্মান তো আছেই। এই সব কিছু বিবেচনা করেই চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হওয়ার চাইতে প্রশাসনিক ক্যাডার হওয়াকেই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। আরও পড়তে পারেন: চাকরিপ্রার্থীদের ‘ফার্স্ট টার্গেট বিসিএস’ কেন? বাংলাদেশে সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহ বাড়ার কারণ কী বিসিএস উত্তীর্ণদের নিয়ে এতো মাতামাতি কেন? সরকারি চাকরির বিভিন্ন সুবিধাদি চাকরির নিশ্চয়তা গত ৩৮তম বিসিএস-এ পুলিশ ক্যাডার হিসেবে যোগ দিয়েছেন তারেক লতিফ সামি। অথচ তিনি ছিলেন কুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকে তিনি একজন প্রকৌশলী হতে চেয়েছেন। তার একবারও বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার বিষয়টি মাথায় আসেনি। মি. সামি বলেন, "কম্পিউটার সায়েন্সে পড়া শিক্ষার্থীদের সামনে দুটো পথ থাকে। এক হল, তারা দেশের প্রাইভেট ফার্মগুলোয় কাজ করতে পারে। নাহলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়ে সেখানে সেটেল হতে পারে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশেই থাকবো।" কুয়েট থেকে পাস করার পর তিনি শুরুতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। সেখানে কাজ করে তার উপলব্ধি হয় যে, এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরির কোন নিশ্চয়তা নেই। প্রতিষ্ঠান কখনও লোকসানের মুখে পড়লে ঢালাওভাবে সবার চাকরি যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, ছাঁটাই হয়। তা আপনি যতো ভালো কাজ করুন না কেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে প্রচুর তরুণ বিসিএস পরীক্ষার প্রস্ততি নিতে সময় কাটান বেতন, সম্মান ও কাজের পরিবেশ: এতো ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজ করা সত্ত্বেও তিনি মাস শেষে যে বেতন পেতেন - সেটাও যথেষ্ট ছিল না। তার সাথে পড়া অন্যান্য প্রকৌশলীদের অবস্থা ছিল চাইতেও শোচনীয়। "আইটি-তে আগের চাইতে বেতন কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু সেটাও সরকারি চাকরির তুলনায় অনেক কম। তবে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়া অনেকেই দেখেছি মাত্র ১৫ হাজার টাকার বেতনে যোগ দিতে। কারণ কোন চাকরি নেই। " এমন বাস্তবতার মুখেই মি. সামি পুলিশ ফার্স্ট চয়েস দিয়ে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেন। তার মতো সব শিক্ষার্থীর আস্থা যে বিসিএস-এ নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন দুর্নীতি হয় না। মি. সামি এখন একজন পুলিশ ক্যাডার। বাংলাদেশে আইসিটি ক্যাডার পদে সুযোগ সৃষ্টির কথা বলা হলেও সেটা আজ পর্যন্ত চালু হয়নি। বরং টেলিকমিউনিকেশন ক্যাডার পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া ২০০৭ সালেই বন্ধ করে দেয়া হয়। এমন অবস্থায় মি. সামি জেনারেল ক্যাডার বেছে নেন।, যেখানে কম্পিউটার প্রকৌশলীর প্রয়োজন আছে। মি. সামি বলেন, "পুলিশের আইটি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এখন কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। বিশেষ করে সাইবার ক্রাইমে এই বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন হয়। আমি সেটাই করছি।" মূলত ২০১৫ সালে সরকারি চাকরির বেতন স্কেল বাড়ানোর পর সরকারি চাকরির প্রতি সবার আগ্রহ বাড়তে থাকে। ৯ম গ্রেডে চাকরির শুরুতেই একজনের বেসিক বেতন থাকে ২৩ হাজার ১শ টাকা। অর্থাৎ মোট বেতন শুরুতেই ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার মতো হয়। মি. সামি বলেন, "এখানে বেতন ভালো, কাজের পরিবেশ অনেক ভাল। প্রাইভেটে কাজ করার সময় একটা ডেস্কে আমরা কয়েকজন বসতাম। এখানে আমার নিজস্ব কক্ষ আছে। অফিস সহকারী আছে।" এছাড়া বাংলাদেশের একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে তিনি যে সম্মান পেয়ে থাকেন - সেটা প্রকৌশলী থাকাকালীন ছিল না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশী চাকুরিজীবি কাজ করে ব্যক্তিমালাকানাধীন প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য ক্যাডার না হয়ে জেনারেল ক্যাডার চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্ন। এখানে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে কেউ স্বাস্থ্য ক্যাডার হলেও তারা প্রশাসনিক ক্যাডারের অনেক সুবিধাই পাননা বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক। তিনি জানান, বাংলাদেশে যেসব মেডিকেল শিক্ষার্থী এমবিবিএস ডিগ্রী সম্পন্ন করার পর বিসিএস পরীক্ষা দেন ও সুযোগ পান - তাদের নিয়োগ পেতে আরও দুই থেকে তিন বছর সময় চলে যায়। অনেক উদাহরণ এখন দেখা যাচ্ছে, যারা অন্য চাকরি ছেড়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন। চাকরির শুরুতে তাদেরকে অন্তত দুই বছর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করতে হয়। সেখানে সরকারি কোয়ার্টারে ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়, গাড়ির কোন সুব্যবস্থা নেই। এছাড়া যে বেতন দেয়া হয় - সেটাও চলার মতো যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। উপজেলায় চিকিৎসকরা নানা ধরণের অপ্রত্যাশিত আচরণের শিকার হয়ে থাকেন বলে তিনি জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তাও একজন পুলিশ ক্যাডার। এই চিকিৎসকরা পোস্ট-গ্রাজুয়েশন অর্থাৎ এমডি, এমএস, এফসিপিএস ইত্যাদি ডিগ্রী সম্পন্ন না করলে তাদের পদোন্নতির কোন সুযোগ নেই। এই পোস্ট-গ্রাজুয়েশন ডিগ্রীর জন্য একজন চিকিৎসককে কয়েক বছর একটি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপকের অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সেটার পর তিনি ফাইনাল পরীক্ষা দেন। যা শেষ করতে সব মিলিয়ে ৭ থেকে ১০ বছর সময় লাগে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। এর আগে ওই চিকিৎসক পদোন্নতির আবেদন করতে পারেন না। সরকারি চাকরির নিরাপত্তা, বেতনের কারণে সরকারি চাকরির প্রতি এতো আগ্রহ। এই পুরো সময় একজন চিকিৎসকের মাসিক ভাতা থেকে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মতো। যেখানে প্রশাসনিক ক্যাডারে বেতনও ভালো, পদোন্নতির সুযোগও পাওয়া যায় অনেক আগে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের পোস্ট-গ্রাজুয়েশন পদ্ধতি অনেক দীর্ঘমেয়াদী এবং ইন্সটিউটগুলোতে আসন সংখ্যা খুবই কম। একটি সিটের জন্য অনেক সময় ৫০ জন ডাক্তারকে লড়াই করতে হয়। সেই একই প্রচেষ্টা সে যদি বিসিএস পরীক্ষায় দেয় - তাহলে তাকে পোস্ট-গ্রাজুয়েশনের চিন্তাটা করতে হয় না। তার ক্যারিয়ার গড়ে ওঠে। এটাকেই সবচেয়ে বড় মোটিভেশন বলে তিনি মনে করেন। "১০-১৫ বছর আগে বাংলাদেশে ডাক্তারের সংখ্যা অনেক কম ছিল। এখন প্রাইভেট মেডিকেল হয়েছে অনেক। সরকারের নিয়োগ দেয়ার সক্ষমতার চাইতে এখন ডাক্তারের সংখ্যা বেশি। এতে চাকরি পাওয়ার সুযোগ কমে গিয়েছে।" তিনি বলেন। যদিও, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের হিসাব বলছে, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ২০ শতাংশের বেশি চিকিৎসক পদ খালি রয়েছে। বেসরকারি হিসাবে দেশের জেলা ও উপজেলায় ৬০ শতাংশের বেশি চিকিৎসক পদ খালি। কিন্তু দেশের জনসংখ্যা ও রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় কমপক্ষে দুই লাখ চিকিৎসক প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চিকিৎসকদের জন্য পোস্ট গ্রাজুয়েশন পরীক্ষাকে সবচেয়ে বড় চাপ বলে মনে করেন ওই সরকারি কর্মকর্তা। তার মতে, বাংলাদেশে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী ছাড়া একজন ডাক্তারের কোন মূল্য নেই। কারণ সবাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারই খোঁজে। কিন্তু এর পেছনে যে সময় লাগে - সেই সময়ে অন্য কেরিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ বেশি। তাই পোস্ট-গ্রাজুয়েশনের এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়িয়ে যেতে, এবং তার পাশাপাশি পদোন্নতি, গাড়ি বাড়িসহ অন্যান্য সুবিধা থাকার পেতে চিকিৎসকরা আজকাল মেডিকেল ক্যাডারের পরিবর্তে জেনারেল ক্যাডারে পরীক্ষা দিতেই বেশি আগ্রহী। বাংলাদেশের বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীর কাছে সরকারি চাকরির প্রাধান্য বেশি রাষ্ট্রের ক্ষতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্র মতে, এক প্রকৌশলীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলে খরচ হয় তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা। অনেক সময় তার চাইতেও বেশি। এছাড়া সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় প্রতি শিক্ষার্থীদের পেছনে অন্তত ১০লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয় বলে জানা গেছে। এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, একজন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসক হিসেবে তৈরি করতে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, সেই চিকিৎসক যখন অন্য পেশায় চলে যান, তখন তা রাষ্ট্রের জন্য বিশাল ক্ষতি। মন্ত্রী জানান যে বাংলাদেশে এক প্রকৌশল ও মেডিকেল শিক্ষার্থীর পড়াশোনার জন্য সরকারিভাবে যথেষ্ট অনুদান, ভর্তুকি দেওয়া হয়। এ কারণে ওই শিক্ষার্থীদের এই ব্যয়বহুল উচ্চশিক্ষা নিতে নিজের পকেট থেকে খুব একটা পয়সা খরচ করতে হয় না। তিনি বলেন, 'ডাক্তাররা পেশা পরিবর্তন করলে আমার দুঃখ লাগে। এত কষ্ট করে ডাক্তারি পাস হয়, যারা মানুষের সেবার জন্য, একেবারে সরাসরি হেল্প করে। তারা পরে অন্য জায়গায় গেলে এটি রাষ্ট্রের ক্ষতি।' বিবিসি বাংলায় আরো খবর: সুইস গণভোটে মুসলিমদের বোরকা-নিকাব নিষিদ্ধের পক্ষে রায় 'আমি আর বেঁচে থাকতে চাইনি'- অপরা-র সাথে সাক্ষাৎকারে মেগান ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম নারী স্নাতক কাদম্বিনী তালেবান হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে, মার্কিন সতর্কতা বাংলাদেশে নারীবাদীদের নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় কেন?
বাংলাদেশে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়াকে বেশ সম্মানজনক বলে ধরা হলেও এসব বিষয় থেকে পাস করা অনেক শিক্ষার্থী এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিভিন্ন বিসিএস ক্যাডারের পদ ।
লাইকা, মানুষের আগে যে কুকুর মহাশূন্যে গিয়েছিল ১৯৫৭ সালে নভেম্বরে লাইকা নামে কুকুরটিকে মহাশূন্যে পাঠানো হয়। চারবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার পর কুকুরটি মারা যায়। রুশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ভিক্টর ইয়াযদভস্কির বয়স যখন ৯ বছর, তখন তার বিজ্ঞানী বাবা একবার লাইকাকে গবেষণাগার থেকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। লাইকাকে নিয়ে প্রফেসর ইয়াযদভস্কি স্মৃতিচারণ করেছেন বিবিসির ওলগা স্মিরনোভার কাছে। "খুবই শান্ত স্বভাবের কুকুর ছিল লাইকা ।আদুরে চেহারার ছিল। তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়াও সহজ ছিল। তার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সবই খুব মুগ্ধ ছিল। তার চোখের রঙ ছিল কালো। তার চোখ যেন কথা বলতো।" ১৯৫৭ সালে প্রফেসর ভিক্টর ইয়াযদভস্কির বয়স ছিল ৯। তার বাবা ভ্লাদিমির ইয়াযদভস্কি ছিলেন একজন চিকিৎসক। সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচির মেডিকেল ইউনিটের প্রধান ছিলেন তিনি। "সবাই লাইকাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। সেসময় কেই জানতো না জীবিত অবস্থায় কেই মহাকাশ থেকে ফিরতে পারবে কিনা।" সবাই ধরে নিয়েছিল - লাইকা আর জীবিত ফিরবে না। ফলে ফ্লাইটে তোলার আগে প্রফেসর ইয়াযদভস্কির বাবা লাইকাকে অনেক আদর যত্ন করেছিলেন। "আমার বাবা লাইকাকে আমার দাদির বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। মস্কোর কাছেই ছিল আমার দাদির বাড়ি। সেসময় আমি এবং আমার বোন লাইকার সাথে খেলেছিলাম। আমার বাবা মনে করেছিলেন, ফ্লাইটে তোলার আগে বাড়ির পরিবেশ লাইকার জন্য দরকার ছিল।" মহাকাশে কুকুর কেন, বাঁদর কেন নয়? মহাকাশে কুকুর পাঠানোর কথা ১৯৪৮ সাল থেকেই সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা ভাবছিলেন। এবং গবেষণাগারের এই সব কুকুরগুলোর সাথে প্রফেসর ভ্লাদিমির ইয়যদভস্কির ছেলে মেয়েরা মাঝে মধ্যেই খেলাধুলো করার সুযোগ পেত। লাইকা ছিল সেই কুকুর দঙ্গলের একটি। আমেরিকান সংবাদ মাধ্যমে সেসময় লাইকাকে সাইবেরিয়ান হাস্কি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। কিন্তু লাইকা হাস্কি জাতের কুকুর ছিলনা। সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা তখন তাদের কাজের জন্য খুব সচেতনভাবে সাধারণ বেওয়ারিশ কুকুরকে বেছে নিয়েছিলেন । "তারা মহাকাশ গবেষণার জন্য খুব ভালো কোনো জাতের কুকুরের বদলে সাধারণ বেওয়ারিশ কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার নীতি অনুসরণ করছিলেন। এসব কুকুরের কোনা ঠিকানা ছিলনা, মনিব ছিলনা। কেন তাদেরকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিলে? কারণ, রাস্তায় বেওয়ারিশ হিসাবে টিকে থাকতে হতো বলে তাদের বেঁচে থাকার ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত বেশি ছিল। এবং ঐ কুকুরগুলোর চাহিদা ছিল অপেক্ষাকৃত কম। ফলে তাদেরকেই গবেষকরা অধিকতর উপযুক্ত মনে করতেন।" কিন্তু এই মহাকাশ কর্মসূচির জন্য সব বেওয়ারিশ কুকুরকেই যে উপযুক্ত মনে করা হতো, তা নয়। যোগ্যতার অন্যতম মাপকাঠি ছিল কুকুরটির ওজন। ছয় থেকে সাত কিলোগ্রামের বেশি ওজন হতে পারবে না। তাদের শরীরের রং হতে হবে সাদা, কারণ স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরায় সবসময় তাদের ছবি তোলার প্রয়োজন ছিল, এবং রং সাদা হলে ছবি তোলা সহজ। আরো পড়তে পারেন: রোহিঙ্গা সংকট: প্রয়োজনীয় অর্থের ৩৪ শতাংশ সংগ্রহ উবার-নির্ভর হয়ে উঠছে ঢাকা শহর জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প? কিন্তু আমেরিকান বিজ্ঞানীদের মতো সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা কেন বাঁদরের বদলে কুকুর ব্যবহার করে কেন এই পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? যদি বাঁদর মানব প্রজাতির খুব কাছের একটি প্রাণী। "বাঁদরকে রকেটে চড়িয়ে যখনই মহাশূন্যে পাঠানো চেষ্টা হয়েছে, বার বার তা ব্যর্থ হয়েছে। কোনো কোনো বাঁদর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। বাঁদরদের যদি চেতনা-নাশক প্রয়োগ করে পাঠানো হতো, তাহলে যে তথ্য পাওয়া যেত, তা অসম্পূর্ণ থাকতো। আরো ছোটো প্রাণী যেমন ইঁদুর যদি পাঠানো হতো, তাহলে আপনি কি করে নিশ্চিত হবেন যে মানুষ মহাশূন্যে পাঠালে তার পরিণতি কি হতে পারে। আমেরিকানরা তো মাছিও পাঠিয়েছিল মহাশূন্যে।" মহাশূন্যে কুকুর পাঠানোর পেছনে আরো একটি কারণ ছিল সোভিয়েতদের। রুশ বিজ্ঞানী পাবলভ কুকুর নিয়ে তার আগে বিস্তর গবেষণা করেছিলেন। "কুকুরের শরীরতত্ত্ব সম্পর্কে রুশ বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই অনেক কিছু জানতেন। বিখ্যাত বিজ্ঞানী পাবলভ কুকুরের হজম শক্তি থেকে শুরু করে তাদের স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়াকর্ম সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা করেছিলেন। তিনি এর জন্য নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন।" লাইকা কীভাবে তৈরি করা হয়েছিল লাইকাকে ফ্লাইটের আগে লাইকার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল । ফ্লাইটের সময় তার রক্তচাপ এবং হৃদযন্ত্রের গতির ওপর নজর রাখার জন্য লাইকার প্রধান ধমনী তার চামড়ার কাছাকাছি তুলে আনা হয়। তারপর তার ধমনীর সাথে একটি ট্রান্সমিটার বসানো হয়। তার পাঁজর এবং কাঁধের সাথেও ট্রান্সমিটার এঁটে দেওয়া হয়। এতে লাইকার শ্বাস-প্রশ্বাস এবং তার আচরণের ওপর নজর রাখার ব্যবস্থা হয়ে যায়। কিভাবে একটি কুকুরকে মহাকাশযানে খাবার পানি বা অন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল? "লাইকার সাথে সাত দিনের খাবার দিয়ে দেয়া হয়। তার জন্য বিজ্ঞানীরা বিশেষ ধরনের খাবার উদ্ভাবন করেন। কীভাবে পানির ব্যবস্থা হবে তা নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা করতে হয়েছিল, কারণ ওজন-বিহীন পরিবেশে পানি তো ভাসবে। ফলে বিজ্ঞানীরা তৃষ্ণা মেটাতে পানির পরিবর্তে একধরণের জেল তৈরি করেন। খাবার হিসাবে মাংস পিষে, পানি মিশিয়ে বিশেষ একধরণের খাবার তৈরি করা হয়। তারপর সেই খাবার একটি বিশেষ ধরণের টিউবের মধ্যে ভরা হয়।" তারপর ফ্লাইটের সময় কি হয়েছিলো লাইকার? "পৃথিবীর কক্ষপথে চারবার প্রদক্ষিণ করা পর্যন্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। ১০ ঘণ্টা পর সমস্যা শুরু হয়। প্রচণ্ড তাপে লাইকা মারা যায়। কারণ মহাকাশ যানের ভেতর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা যথেষ্ট নিরাপদ করা সম্ভব হয়নি।" সুতরাং মহাকাশে লাইকা কার্যত গরমে সেদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল? "আমি সেরকম তুলনা করবো না। আমি বলবো লাইকা অতিরিক্ত গরমে মারা যায়। সে তো একটি রক্ত মাংসের প্রাণী ছিল। শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠার পর সে তা সহ্য করতে পারেনি। ১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাস ছিল রুশ বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকী । সেদিনটিকেই সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ একটি বড় ঘোষণার জন্য বেছে নেন। ফলে তার আগেই মহাকাশে জীবন্ত প্রাণী পাঠানোর জন্য চেষ্টা হচ্ছিলো। ফলে ফ্লাইটের প্রস্তুতির সময় যথেষ্ট সময় নিয়ে ঠিকঠাক-মত সবকিছু বিবেচনা করা হয়নি। "মাহাকাশ গবেষণায় আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আমেরিকা। আমরা কি করছি, সবসময় তারা নজর রাখতো। এই কর্মসূচির সাথে অস্ত্র প্রতিযোগিতারও সম্পর্ক ছিলো। ছিল মর্যাদার লড়াই। তখন সোভিয়েত নেতা ছিলেন ক্রুশ্চেভ। তিনি আমেরিকানদের দেখাতে চাইছিলেন কে শ্রেষ্ঠ।" যাদুঘরে লাইকার প্রতিকৃতি। সোভিয়েত ইউনিয়নে সেলেব্রিটি মর্যাদা পেয়েছিল বেওয়ারিশ এই কুকুর রাস্তার কুকুরের সেলেব্রিটি মর্যাদা সুতরাং মহাকাশ নিয়ে দুই পরাশক্তির লড়াইয়ের বলি হতে হয়েছিলো বেওয়ারিশ এক কুকুরকে। তবে মহাকাশে তার করুণ মৃত্যুর পর সে সোভিয়েত সেলেব্রিটিতে পরিণত হয়েছিল। মহাকাশে ঐতিহাসিক ঐ ফ্লাইটের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের লাইকা ব্রান্ডের গিসারেট এবং দিয়াশলাই বেরিয়েছিল। বিশেষ ডাকটিকেট এবং খাম ছাড়া হয়েছিলো যেগুলোর ওপর লাইকার মুখের ছবি ছিলো। ২০০৮ সালে মস্কোতে একটি সৌধ নির্মাণ করা হয়। সৌধটি দুই মিটার উঁচু । নীচের দিকটি ছিল রকেটের মত দেখতে যেটি উপরের দিকে একটি হাতের তালুর চেহারা নিয়েছে, এবং ঐ তালুর ওপর দাড়িয়ে আছে একটি কুকুর। লাইকা প্রমাণ করেছিলো মহাশূন্যে ওজনহীন পরিবেশে একটি প্রাণী টিকে থাকতে পারে। লাইকার পরও আমার বাবা স্পুটনিকে করে মহাশূন্যে কুকুর পাঠানোর কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। যেমন ১৯৬০ সালের অগাস্টে বেলকা এবং স্ত্রেলকা নামে দুই কুকুরকে মহাশূন্যে পাঠানো হয়েছিল। এবং তারা জীবন নিয়েই পৃথিবীতে ফিরে আসে। এবং তার পরে আস্থা তৈরি হয় যে কুকুর যদি বেঁচে ফিরে আসতে পারে, মানুষও পারবে। এরপরই ইউরি গ্যাগারিন ঐ একই মহাকাশ যানে চড়ে মহাকাশে গিয়েছিলেন। সেটা সম্ভব হয়েছিল লাইকা নামের একটি কুকুরের বীরত্বের কারণে। প্রফেসর ভিক্টর ইয়াযদভস্কি এখন মস্কোতে একজন চিকিৎসক হিসাবে কাজ করেন।
পৃথিবীর কক্ষপথে প্রথম পরিভ্রমণ করেছিল কোনো মানুষ নয়, বরঞ্চ রাশিয়ার একটি বেওয়ারিশ মাদি কুকুর।