text
stringlengths
8
24.4k
১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর মৃত্যুর অল্প সময় আগে তোলা নূর হোসেনের ছবি। ১০ নভেম্বর, ১৯৮৭ সাল। শাহবাগ, পুলিশ কন্ট্রোল রুম। ঝাঁকড়া চুলের শ্যামলা রঙের ছেলেটিকে আমরা যখন দেখি, তখন তার দেহ রক্তাক্ত। কিন্তু তার শরীরে সাদা রঙে লেখা শ্লোগান তখনো জ্বলজ্বল করছে। আমরা তখনো জানি না, ছেলেটি কে, কী তার নাম। শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের ছোট্ট এক সেলে পড়েছিল কয়েকটি রক্তাক্ত দেহ। আমরা ছিলাম ঠিক পাশের আরেকটি সেলে। সেই কয়েদখানা তখন ক্রমশ রাজনৈতিক বন্দীতে ভরে উঠছে । আমার বয়স তখন ১৯, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। সেদিন সকালে ঢাকা শহরে ছিল চরম উত্তেজনা। সব বিরোধী দল মিলে ঢাকায় সচিবালয় অবরোধের ডাক দিয়েছে। শাহবাগে পুলিশের যে কারাগারে ফেলে রাখা হয়েছিল নূর হোসেনের গুলিবিদ্ধ দেহ সারাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় এসে সরকারের প্রশাসনযন্ত্রের মূল কেন্দ্র অচল করে প্রেসিডেন্ট এরশাদকে পদত্যাগে বাধ্য করবে, এটাই ছিল পরিকল্পনা। কিন্তু ১০ই নভেম্বরের আগে প্রেসিডেন্ট এরশাদ নিজেই ঢাকাকে কার্যত সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। সব জেলার সঙ্গে সড়ক-রেল-নৌ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে ছাত্রদের ছাত্রাবাস ছাড়তে বলা হয়। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে সারাদেশে ব্যাপক হারে ধরপাকড় করা হতে থাকে বিরোধী দলের কর্মীদের। কিন্তু এত বিধিনিষেধের মধ্যেও হাজার হাজার বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী তখন পৌঁছে গেছেন ঢাকায়। সেদিন সকাল নয়টায় পুরানা পল্টন এলাকার আশে-পাশে এসে জড়ো হচ্ছিলেন যারা, তাদের মধ্যে ছিলাম আমিও। সকাল নয়টায় আমি সহ বেশ কয়েকজন সেখানে দাঙ্গা পুলিশের হাতে ধরা পড়ি। আমাদের লাঠি দিয়ে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়। এরপর একটি লরিতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে। দিন যত বাড়ছিল, ঢাকা শহরের পরিস্থিতি ততই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছিল। আর শাহবাগে পুলিশের কারাকক্ষে নিয়ে আসা হচ্ছিল অনেক আহত মানুষ। এদের অনেকের শরীরে ছিল গুলির আঘাত। বুকে লেখা শ্লোগান পাশের সেলটি থেকে আমরা বেশ কিছুক্ষণ ধরে আহত মানুষের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। সহ্য করতে না পেরে আমরা একটু পরে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেছিলাম। ততক্ষণে সেখানে পড়ে থাকা দেহগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই, তারা জীবিত না মৃত। ছোট্ট সেলটিতে যেভাবে তাদের ফেলে রাখা হয়েছিল, তাতে বোঝা যাচ্ছিল না, শরীরের কোন অংশটি কার। একজনের শরীরের নীচে চাপা পড়েছে আরেকজনের শরীর। কিন্তু একই সঙ্গে একজনের উদোম বুকে সাদা রঙে লেখা এক শ্লোগানে আমাদের চোখ আটকে গিয়েছিল। "স্বৈরাচার নীপাত যাক।।" আমাদের এক তীব্র ধাক্কা দিয়েছিল, শিহরিত করেছিল সেই শ্লোগান। পাভেল রহমানের তোলা যে ছবি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক তখনো আমরা জানতাম না, এই তরুণের নাম নূর হোসেন। আমরা জানতাম না বুকে-পিঠে শ্লোগান লিখে রাস্তায় নামা নূর হোসেনের ছবিই হয়ে উঠবে আমাদের প্রজন্মের গণতন্ত্রের দীর্ঘ এবং রক্তাক্ত সংগ্রামের প্রতীক। নূর হোসেনকে নিয়ে পরবর্তীকালে রচিত হয়েছে অনেক কবিতা, গান, বই। তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ছবি, প্রকাশ করা হয়েছে ডাকটিকেট। আর ঢাকার যে স্থানটিতে তার ওপর গুলি চালিয়েছিল পুলিশ, সেটির নাম এখন নূর হোসেন স্কোয়ার। নূর হোসেনের যে ছবি চিরকালের জন্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছে, সেই ছবিগুলো পরে বহুবার দেখেছি আমি। কয়েকটা প্রশ্ন বারে বারে আমার মনে জেগেছে- ঢাকার এক শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত পরিবারের এই তরুণ কী ভেবে সেদিন শরীরে এই শ্লোগান লিখেছিল? কে তাকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করেছিল? তার শরীরে কে লিখে দিয়েছিল এই শ্লোগান? তার অভূতপূর্ব প্রতিবাদের নেপথ্য কাহিনী জানতে তেত্রিশ বছর পর আমি এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করি । নূর হোসেনের খোঁজে নূর হোসেনের বাবা মুজিবুর রহমান ছিলেন এক দরিদ্র অটোরিকশা চালক। তারা তখন থাকতেন পুরনো ঢাকার বনগ্রাম রোডে। তিনি মারা গেছেন প্রায় পনের বছর আগে। কিন্তু আমি নূর হোসেনের বড় ভাই আলি হোসেনকে খুঁজে পাই। টেলিফোনে তিনি আমাকে বলছিলেন, ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর যা ঘটেছিল সেটা তার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। "ঘটনার দুদিন আগে নূর হোসেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আমাদের বলেছিল, একটা জায়গায় যাচ্ছি, চিন্তা কইরেন না।‍" নূর হোসেনের অটো-চালক বাবা মুজিবুর রহমান ততদিনে বুঝে ফেলেছেন, তার ছেলে রাজনীতিতে জড়িয়ে গেছে, ছেলে মিছিলে যায়। "পরপর দুই রাত যখন ও ঘরে ফিরলো না, তখন আব্বা-আম্মা ওর খোঁজে বের হলো। দশ তারিখ সকালে রাজউকের কাছে একটা মসজিদে গিয়ে ওকে পাওয়া গেল। সেখানে গিয়ে উনারা দেখেন, নূর হোসেন কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। নুর হোসেন আব্বা-আম্মাকে দেখে তাড়াতাড়ি গায়ে কাপড় জড়িয়েছে। আব্বা জিজ্ঞেস করছে, তোর গায়ে কী লেখা আছে? ও বললো কিছু না।" নূর হোসেনকে ঘরে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তার বাবা-মা ঘরে ফিরে আসেন। কিন্তু দুপুরের দিকেই তাদের বনগ্রাম রোডের বাড়িতে খবর আসে, নূর হোসেন গুলিবিদ্ধ। বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। ছেলের সন্ধানে মুজিবুর রহমান ছুটে যান বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে। আলি হোসেন জানান, সঙ্গে ছিলেন তিনি এবং তার নানী। "আমরা তিনজন বেরুলাম। পার্টি অফিস, পুলিশ হাসপাতাল, কোথাও না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আমরা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে গেলাম। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ওরা কেউ কিছু বলতে পারছে না। কিন্তু ভেতর থেকে আসা পুলিশের এক সেপাই আমাদের বললো, একটা ছেলে আছে এখানে, ওর গায়ে পিঠে কিছু লেখা। " "তখন আব্বা বললো, আমাকে ভেতরে যেতে দিতে হবে। এ নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে ভেতর থেকে অফিসাররা চলে আসলো। একজন পুলিশ অফিসার তখন আব্বাকে বললো, এখানে যদি এখন আমরা আপনার ছেলেকে দিতে যাই, আরও লাশ পড়বে। আপনি কি তা চান?" আলি হোসেন: ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভাইয়ের মৃতদেহের সন্ধানে ছুটে গেছেন নিরাশ হয়ে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে ফিরে এলেন তারা। নূর হোসেনের গায়ে শ্লোগানটা কে লিখেছিল, সেটা কি আলি হোসেন জানেন? "হ্যাঁ, জানি। ওর নাম ইকরাম হোসেন। সাইনবোর্ড লেখার দোকান ছিল ওর।" যেভাবে লেখা হয়েছিল শ্লোগান আলি হোসেনের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে আমি ইকরাম হোসেনকে ফোন করি। "হ্যাঁ, আমিই সেই লোক, আমিই নূর হোসেনের গায়ে শ্লোগান লিখেছিলাম", বললেন তিনি। "আমি মূলত সাইনবোর্ড, ব্যানার এসব লেখার কাজ করতাম। মতিঝিলে বিসিআইসি ভবনের কাছে ছিল আমাদের দোকান।" ১৯৮৭ সালে ইকরামের বয়স ছিল ১৮। তার দোকানটির নাম ছিল পপুলার আর্ট, আরেকজনের সঙ্গে মিলে এটি চালাতেন তিনি। আর থাকতেন তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে বঙ্গভবনের স্টাফ কোয়ার্টারে। তাঁর বড় ভাই ছিলেন বঙ্গভবনের চাপরাশি। ৯ই নভেম্বর, ১৯৮৭। ঢাকা শহর তখন অবরুদ্ধ, সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। পরদিন ঢাকায় সচিবালয় অবরোধ। পরিস্থিতি ভালো নয়। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বিকেল পাঁচটাতেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইকরাম। কিন্তু বিকেল সাড়ে চারটাতেই তার কাছে এসে হাজির নূর হোসেন। ছেলেটির সঙ্গে সেরকম কথা হয়নি কখনো ইকরামের, তবে মুখ চেনা। "ও আমাকে বললো, ইকরাম ভাই, আপনি এমন এক জায়গায় আজকে লিখবেন, যেখানে জীবনেও লেখেন নাই।" ইকরাম হোসেনের শিল্পী মনে কৌতূহল জাগলো। কি এমন লেখা, যা জীবনে লেখেননি? অফিস পাড়ায় তখন শীতের সন্ধ্যা নামছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা হতে শুরু করেছে। ইকরামকে নিয়ে নূর হোসেন ঢুকে গেলেন এক ছোট্ট গলিতে। তারপর যা করলেন, তাতে হতভম্ব হয়ে গেলেন ইকরাম হোসেন। নূর হোসেন তার গায়ের জামা খুলে ফেললেন এক ঝটকায়। "আমি অবাক হয়ে বললাম, আপনি জামা খুললেন কেন। নূর হোসেন আমাকে বললেন, ইকরাম ভাই, আপনি আমার বুকের এখানে লিখবেন 'স্বৈরাচার নিপাত যাক', আর পিঠে লিখবেন , 'গণতন্ত্র মুক্তি পাক'। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। আমি তো জীবনেও কোন মানুষের গায়ে লিখিনি। আমি কাউকে কখনো মানুষের গায়ে লিখতে দেখিনি।" "আমি একটু ভয় পেলাম। আমার বড় ভাই প্রেসিডেন্ট এরশাদের চাপরাশি। আমি থাকি বঙ্গভবনের কোয়ার্টারে। প্রেসিডেন্ট এরশাদের বিরুদ্ধে তো আমি এরকম একটা জিনিস লিখতে পারি না। আমি বললাম, না, এটা আমি লিখতে পারবো না। আপনি এটা লিখে বাইরে গেলে পুলিশের মার খাবেন। তারপর জেলে যাবেন। আপনি মরেও যেতে পারেন।" কিন্তু নূর হোসেন ছিলেন নাছোড়বান্দা। ইকরাম হোসেন: 'নুর হোসেনের শরীরে শ্লোগান লিখেছিলাম আমি‌' "নূর হোসেন আমাকে বলেছিল, ইকরাম ভাই আমি একা না, আরও একশো জনের গায়ে এটা লেখা থাকবে। আমরা সবাই কাল এক সঙ্গে মিছিল করবো।" নাছোড়বান্দা নূর হোসেনের চাপে শেষ পর্যন্ত ইকরাম হোসেন কাজটি করে দিলেন। কী লিখতে হবে, তা নূর হোসেন নিজেই চক দিয়ে প্রথমে দেয়ালে লিখেছিলেন। সেই লেখা দেখে নূর হোসেনের বুকে আর পিঠে তিনি সাদা রঙে আঁকলেন সেই বিখ্যাত শ্লোগান: স্বৈরাচার নীপাত যাক।। গণতন্ত্র মুক্তি পাক।। যেভাবে ভুল বানানে নূর হোসেন চক দিয়ে দেয়ালে লিখে দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবে। বুকে-পিঠে দুদিকেই শ্লোগান লিখে শেষে দুটি করে দাড়ি দিয়েছিলেন। এটি কেন করেছিলেন, জানতে চাইলাম আমি। "এটা আমি করেছিলাম একটা উদ্দেশ্য মাথায় রেখে। যেহেতু নূর হোসেন বলেছিল আরও একশো জনের গায়ে শ্লোগান লেখা থাকবে, তার মধ্যে আমার লেখা শ্লোগান যেন আলাদা করে চেনা যায়, সেজন্যে। কিন্তু নূর হোসেন আমাকে আসলে মিথ্যে কথা বলেছিল। সে একাই আসলে সেদিন এভাবে রাস্তায় নেমেছিল। আর কেউ গায়ে শ্লোগান লিখে নামেনি সেইদিন।" সেই বিখ্যাত ছবি পেছন থেকে তোলা যে বিখ্যাত ছবিটি নূর হোসেনের প্রতিবাদকে অমর করে রেখেছে, সেই ছবিটি তুলেছিলেন খ্যাতিমান আলোকচিত্র সাংবাদিক পাভেল রহমান। তখন তিনি কাজ করেন ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশনে। পাভেল রহমানের পরিষ্কার মনে আছে ছবি তোলার আগের সেই মূহুর্তগুলো। নভেম্বরের সকাল। রোদ বাড়ছিল। আটটা সাড়ে আটটার দিকে পল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের এক দফা সংঘর্ষ মাত্র শেষ হয়েছে। "হঠাৎ দেখলাম সেখানে আমার ঠিক গা ঘেঁষে একটি ছেলে চলে যাচ্ছে। ছেলেটার পুরো পিঠ-জুড়ে লেখা 'গণতন্ত্র মুক্তি পাক'- যেন এক চলমান পোস্টার। ওকে দেখে আমার হার্টবিট বেড়ে গেল। আমি ক্যামেরাটা চোখে তুললাম। দুটি শট নিলাম। একটা হরাইজন্টাল। একটা ভার্টিক্যাল।' নূর হোসেনের সেই বিখ্যাত ছবি হাতে ফটোগ্রাফার পাভেল রহমান এরপর ছেলেটা মিছিলে হারিয়ে গেল। তাকে আর খুঁজে পেলেন না পাভেল রহমান। সন্ধ্যায় যখন তিনি পত্রিকার ডার্করুমে কাজ করছেন, তখন এক সহকর্মী জানালেন, গায়ে শ্লোগান লেখা সেই বিক্ষোভকারী মারা গেছেন। ছবিটি প্রকাশ করা হবে কীনা তা নিয়ে সেদিন নিউ নেশনে কিছুটা বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। সরকার ক্ষিপ্ত হতে পারে এই আশংকায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছবিটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত হলো। পরেরদিন পত্রিকার ফোল্ডের নীচে দুই কলামে ছাপা হলো পেছন থেকে তোলা নূর হোসেনের সেই বিখ্যাত ছবি। "ছবিটা প্রকাশ হওয়ার পর বেশ সাড়া পড়ে গেল। আমি কিছু ফোন পেলাম নানা জনের কাছ থেকে। প্রেসিডেন্ট নাকি খুবই ক্ষিপ্ত হয়েছেন এই ছবি দেখে। সরকার বলছিল, এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি। ফটোগ্রাফার এই ছবিটি বানিয়ে তুলেছে।" "একথা শুনে আমি ভয় পেয়ে যাই। কয়েকদিনের জন্য আমাকে গা ঢাকা দিতে হয়।" এই ছবি পরে পোস্টার করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল সারা দেশে। "আমি প্রায় ৪৫ বছর ধরে ফটোসাংবাদিকতায় জড়িত। কিন্তু এই একটি ছবি আমাকে যত খ্যাতি, যত পরিচিতি দিয়েছে, তা বোধহয় আর কোন ছবির বেলায় হয়নি।" "এখনো যখন আমি ছবিটা দেখি, আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। ছেলেটা হেঁটে যাচ্ছে। গায়ে জামা নেই। কোঁকড়া চুল। টগবগে এক তরুণ। এরকম দৃশ্য আর কখনো দেখিনি।" তবে এই প্রতিবাদী তরুণ আসলে কে সেটা একটা রহস্যই থেকে যেত, যদি না আরেক সাংবাদিক দিনু আলম সামনে থেকে নূর হোসেনের অনেক ছবি তুলতেন। দিনু আলম এখন থাকেন কানাডায়। ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকায় নতুন বার্তা নামের একটি পত্রিকায় কাজ করতেন।' সেদিন একটি ইয়াশিকা ক্যামেরা নিয়ে তিনি সারাদিন বহু ছবি তোলেন পল্টন-সচিবালয়-জিপিও এলাকায়। এর মধ্যে অনেকগুলো ছবি ছিল নূর হোসেনের। "নূর হোসেনের যত ছবি আমি তুলেছিলাম, তার সবগুলোই সামনে থেকে। তার শরীরের পেছনেও যে গণতন্ত্র মুক্তি পাক বলে শ্লোগান লেখা ছিল সেটা আমার জানা ছিল না। নূর হোসেন যেরকম দৃপ্ত ভঙ্গীতে মিছিল করছিল, সেটা আমাকে আকর্ষণ করছিল।" নূর হোসেন হয়ে উঠেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক "সম্ভবত নূর হোসেনের জীবনের শেষ মূহুর্তগুলো আমিই বন্দী করেছিলাম ক্যামেরায়।" ১৯৮৮ সালে দিনু আলম কানাডায় চলে যান। কিন্তু ১৯৮৭ সালের ১০ই নভেম্বর তোলা সবগুলো ছবি তিনি এখনো সযত্নে সংরক্ষণ করেছেন। এগুলো তিনি সবাইকে বিনামূল্যে ব্যবহারের অনুমতিও দিয়েছেন। "আমার মনে হয়েছে এগুলো আমাদের ইতিহাসের অনন্য দলিল। এই ছবি তাই আমি সবার সঙ্গে শেয়ার করেছি।" গোরস্থানের নৈশ প্রহরী ১০ নভেম্বর মধ্যরাতে জুরাইন গোরস্থানের গেটে এসে থেমেছিল কয়েকটি গাড়ি। গোরস্থানের নৈশ প্রহরী মোহাম্মদ আলমগীর গেট খুলতে অস্বীকৃতি জানালেন। "রাত এগারোটার পর আমরা লাশ দাফন করি না", বলেছিলেন তিনি। "আমরা সরকারের লোক", জানালেন গাড়ি থেকে নামা একজন। মোহাম্মদ আলমগীরের মনে আছে, গাড়িতে ছিল অনেক সেনা, সঙ্গে পুলিশ। পেছনে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের গাড়িতে তিনটি লাশ। মোহাম্মদ আলমগীরকে খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল আমাকে। প্রায় তিন দশক জুরাইন কবরস্থানে কাজ করার পর, সম্প্রতি তিনি বদলি হয়ে এসেছেন মোহাম্মদপুরের বসিলা গোরস্থানে। এখানেও নৈশ প্রহরীর কাজই করেন তিনি। সেদিন ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের লড়াই চলছিল "কিন্তু আমি যখন জুরাইনে কাজ করতাম, তখন পাহারাদারের কাজ ছাড়াও কবরে মাটি দেয়া, গোসল করানো- সব কাজই করতে হতো।" সেদিন তার দায়িত্ব পড়েছিল লাশগুলোকে গোসল দেয়া। সব কাজ শেষ করে লাশগুলো মাটি দিতে দিতে ফজরের আজানের সময় হয়ে গিয়েছিল। "গোসল দেয়ার সময় দেখি, একটা লাশের গায়ে সাদা রঙ দিয়ে কিছু লেখা। লাশের বুকের নীচে পেটের কাছে গুলিটা লাগছিল। লেখাটার ঠিক নীচে। আমি অনেক চেষ্টা করছি, রঙটা উঠে নাই। পরে এই লেখা সহ আমরা লাশটা কবর দিছি।" সেদিন যে তিনটি লাশ তারা কবর দেন, সেগুলি কয়েকদিন পাহারা দিয়েছিল পুলিশ। কয়েকদিন পর নূর হোসেনের পরিবার খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিল জুরাইন কবরস্থানে। মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, "ওরা আইসা খুব কান্নাকাটি করতেছিল। তাদের পোলার লাশ কোথায় কবর হইছে, জানবার চায়। আমি তো আর জানি না নূর হোসেন কোন জন। হেরা কইলো আমাদের পোলার বুকের মধ্যে সাদা রঙের লেখা ছিল। আমি তো আর লেখা-পড়া জানি না, তখন যেই কবরে ঐ লাশ কবর দিছি, ঐ কবরটা দেখাইছি।" যে শ্লোগান নূর হোসেনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল বলে মনে করা হয়, শেষ পর্যন্ত সেই শ্লোগানের মাধ্যমেই ছেলের কবর চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন তার বাবা-মা। 'নিজেকে অপরাধী মনে হতো‌' ১১ই নভেম্বর সকালে ইকরাম হোসেন যখন সংবাদপত্রের পাতায় নূর হোসেনের ছবি দেখেছিলেন, তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিলো। "যখন আমি বুঝতে পারলাম, নূর হোসেন মারা গেছে। আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো। আমার মনে হলো, নূর হোসেন নিহত হওয়ার জন্য আমিই দায়ী। আমার জন্যই ছেলেটা মারা গেছে।" নূর হোসেনের গায়ে শ্লোগান লিখে দেয়ার গল্পটা ইকরাম হোসেন শুধু করেছিলেন তার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধুর কাছে। তাদেরকে তিনি অনুরোধ করলেন এই ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য। তিন বছর তিনি পালিয়ে পালিয়ে ছিলেন। মিছিলে নূর হোসেন (ডানে নীচে)। গাড়িতে বসা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং সেসময়ের বিরোধী রাজনীতিক শেখ হাসিনা। "যদি তখন আমার নাম কেউ প্রকাশ করতো, আমার পুরো পরিবারকে জেনারেল এরশাদ বন্দী করতেন। আমার ভাই তখনো প্রেসিডেন্টের চাপরাশি।" প্রেসিডেন্ট এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে দুজন সাংবাদিক তার কাছে এলেন। সেই প্রথম সবাই জানলো, তিনিই নূর হোসেনের গায়ে শ্লোগান একেঁ দিয়েছিলেন। সে বছরই নূর হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে জুরাইন গোরস্থানে এক অনুষ্ঠানে ইকরামের সঙ্গে দেখা হয় আলি হোসেনের। ইকরাম তাকে খুলে বললেন সব কাহিনী। সেদিন সন্ধ্যাতেই তিনি আলি হোসেনের সঙ্গে গেলেন তাদের বনগ্রাম রোডের বাসায়। সেখানে তার সঙ্গে প্রথম দেখা হলো নূর হোসেনের বাবা মুজিবুর রহমানের। "আমি উনাকে বললাম, আমার দোষে আপনার ছেলে শহীদ হয়েছে। আমি অপরাধী। তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আমার এক ছেলে মারা গেছে। কিন্তু তুমিও তো আমার এক ছেলে। তুমি কোন অন্যায় কর নাই। তখন আমার মাথা থেকে যেন একটি বোঝা নেমে গেল। আমার বুকটা যেন হালকা হলো।" ক্ষমা চাইতে এলেন এরশাদ ১৯৮৭ সালের এই আন্দোলন জেনারেল এরশাদকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু তিন বছর পর আবারও এরকমই আরেকটি গণবিক্ষোভের মুখে তার পতন ঘটে। পদত্যাগের পর তাকে কারাবন্দী করা হয়। দুর্নীতির মামলায় তাকে সাজা ভোগ করতে হয়। ১৯৯৭ সালে তিনি মুক্তি পেলেন জেল থেকে। মুক্তির পর তিনি নূর হোসেনের পিতা-মাতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বনগ্রাম রোডের বাড়িতে। আলী হোসেন জানান, "জেল থেকে ছাড়া পেয়ে একটি পাজেরোতে চড়ে উনি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। আমার বাবা মার সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চেয়েছিলেন। আমার বাবাকে বললেন, আপনার ছেলে থাকলে আপনার জন্য যা করতো, আমি তাই করবো। আমি ক্ষমা-প্রার্থী। এটা ভুল হয়েছে।" এরপর বহু বছর জেনারেল এরশাদ যোগাযোগ রক্ষা করে গেছেন নূর হোসেনের পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু তারপর আবার সেই সম্পর্কে ছেদ ঘটলো। রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৮২ সালে ক্ষমতায় আসেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ। "একবার আমার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রদের এক সভায় গিয়ে বলেছিলেন, এদেশে যেন আর স্বৈরাচারের জন্ম না হয়। এটা শুনে এরশাদ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি আব্বাকে বলেছিলেন, আপনি আবার আমাকে স্বৈরাচার বললেন? তখন থেকে এরশাদ আর আব্বার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।" জেনারেল এরশাদের মুখোমুখি যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে আমাকে কারাগারে যেতে হয়েছিল এবং নূর হোসেনের মৃত্যুর জন্য যাকে দায়ী করা হয়, তার সঙ্গে আমার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ এক দশকেরও বেশি পরে। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি তখন তার দলকে চাঙ্গা করতে সারাদেশ সফর করছেন। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নদীপথে লঞ্চে করে এরকম এক সফরে তার সঙ্গী হয়েছিলাম আমরা এক দল সাংবাদিক। জেনারেল এরশাদের একজন সহকারী তাকে জানিয়েছিলেন, ছাত্র জীবনে আমি তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারারুদ্ধ হয়েছিলাম। সকালে নাস্তার টেবিলে বসে তিনি আমাকে রসিকতা করে বললেন, "শুনলাম তুমি নাকি বিপ্লবী ছিলে।" একজন সামরিক শাসক হিসেবে যেরকম রাশভারী মানুষ বলে আমি তাকে কল্পনা করেছিলাম, বাস্তবে তার সঙ্গে পার্থক্য ছিল। তার ছিল মানুষের সঙ্গে সহজভাবে মেশার ক্ষমতা, তিনি তার কথা দিয়ে মানুষকে আকর্ষণ করতে পারতেন। কিন্তু এটি ছিল তার চরিত্রের একটি দিক মাত্র। তার ছিল অনেক চেহারা। ১৯৮২ সালে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। সারা বিশ্বে সামরিক শাসকরা যেসব কথা বলে ক্ষমতা দখল করেন, তিনিও সেসব কথাই বলেছিলেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সরকারি প্রশাসনে সংস্কার আর রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছিলেন। এরশাদের পদত্যাগের ঘোষণার পর ঢাকার রাস্তায় জনতার উল্লাস কিন্তু নিজের ক্ষমতাকে সংহত করতে আর ধর্মীয় রক্ষণশীলদের মন জয় করতে তিনি ইসলামকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে তিনি পরিবর্তন করেছিলেন। নিজেকে কবি বলে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি উদগ্রীব ছিলেন, কিন্তু নিজের নামে পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া এসব কবিতা তিনি নিজে লিখতেন, নাকি অন্য কেউ লিখে দিতেন সেটা নিয়ে অনেক গুজব ছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে ক্ষমতায় এলেও তিনিই বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম সরকার প্রধান, যাকে দুর্নীতির দায়ে সাজা-ভোগ করতে হয়েছিল। ২০১৯ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাকে প্রতিনিয়ত আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে আরও অনেক মামলায়। গণঅভ্যুত্থান তিরিশ বছর আগে, ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদের নয় বছরের শাসনের অবসান ঘটেছিল এক গণ আন্দোলনের মুখে। সেদিন ঢাকা এবং সারা বাংলাদেশে যে দৃশ্য দেখা গিয়েছিল, তা ছিল অভূতপূর্ব। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় বিজয় মিছিলে যোগ দিয়েছিল, তারা আনন্দে নাচছিল, গান গাইছিল, পরস্পরকে জড়িয়ে ধরছিল। সেদিনের এই উল্লাস-আনন্দের কথা আমি এখনো মনে করতে পারি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এমন দৃশ্য সম্ভবত আর দেখা যায়নি। যেখানে নূর হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সেই রাস্তার নাম রাখা হয়েছে নূর হোসেন স্কোয়ার মনে হচ্ছিল বাংলাদেশে এক নতুন সূর্য উঠেছে, নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে। কিন্তু এই আনন্দ ছিল ক্ষণস্থায়ী। জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে এক সঙ্গে লড়েছিল যে দুটি প্রধান দল, সেই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যে এবার শুরু হলো ক্ষমতার লড়াই। পরবর্তী দশকগুলোতে পালাক্রমে এই দুই দলের শাসনই দেখেছে বাংলাদেশ। ক্ষমতায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য তারা পুরনো শাসকের কৌশলগুলোকেই ব্যবহার করেছে। জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে যে রাজনৈতিক কর্মীরা নানাভাবে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছেন, তাদের অনেকেই বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার প্রত্যাবর্তনে ব্যথিত। আরও পড়ুন: ১৯৯০ সালের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল যে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য, নাসির-উদ-দোজা ছিলেন তার একজন প্রথম সারির নেতা। তার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৯৮৭ সালে এক অদ্ভুত জায়গায়, গ্রেফতার হওয়ার পর একটি পুলিশ লরিতে। আমাদের নিয়ে লরিটি যখন শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের দিকে ছুটছে, তখনো চলন্ত গাড়িতেই পুলিশ তাকে লাথি মেরে যাচ্ছিল। কারাগারে যখন আমাদের পাশের সেলে নূর হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ ফেলে রাখা হয়, তখন সেখানেও এক সঙ্গে ছিলাম আমরা। এরশাদের পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের বিজয় মিছিল নাসির-উদ-দোজা এখন থাকেন কানাডার টরোন্টোতে। যে দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে তারা জেনারেল এরশাদের পতন ঘটান, সেটি নিয়ে এখনও তিনি গর্বিত। "এটাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল, এটাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব ছিল। সামরিক শাসনের কবর রচনা করে আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার পথ তৈরি করেছিলাম।" কিন্তু সেই গণতন্ত্রের এখন যে অবস্থা, সেটা দেখে তিনি ক্ষুব্ধ। "আমাদের প্রজন্মের আমরা আমাদের পুরো যৌবন বিসর্জন দিয়েছি। আমাদের তারুণ্যের প্রেম বিসর্জন দিয়েছি। ভালোভাবে পড়াশোনা করে কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছি। কেন? আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল- বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।" "নিজেদের ক্ষুদ্র দলীয় আর ব্যক্তি স্বার্থে আমাদের নেতা-নেত্রীরা আমাদের সেই স্বপ্নকে হত্যা করেছেন। আমি তাদেরকে ক্ষমা করতে পারবো না।" 'জীবনের সেরা কাজ' ৩৩ বছর আগের সেই নভেম্বরের কথা মনে পড়লে ইকরাম হোসেন এখনো আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। বিশেষ করে এরশাদে পতনের পরের বছরগুলোতে যা ঘটেছে, সেটি তাকে বেশ ক্ষুব্ধ করে। "প্রথম কয়েক বছর আমরা গণতন্ত্র দেখেছিলাম। রাতের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ যেমন, যেন সেরকম। সেই গণতন্ত্র এখন কোথায়", একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রশ্ন করেন তিনি। ইকরাম হোসেনের বয়স এখন ৫২। তিনি এখনো একজন সাইনবোর্ড আর্টিস্ট হিসেবেই কাজ করেন। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর তিনি তার নতুন দোকান খোলেন হাটখোলা রোডে। মতিঝিলের যে গলিতে তিনি নূর হোসেনের গায়ে শ্লোগান এঁকে দিয়েছিলেন, সেখান থেকে বেশি দূরে নয় তার নতুন দোকান 'আর্ট হেভেন।' যখন তিনি সাইনবোর্ড লেখক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন, তখন রং আর তুলি নিয়েই ছিল তার কাজ। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। তুলি দিয়ে হাতে আর লিখতে হয় না, এখন ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে। "সেই যুগে তো ডিজিটাল বলে কিছু ছিল না। আমাদের সব হাতেই লিখতে হতো। আমার এই জীবনে শত শত সাইবোর্ড লিখেছি, ব্যানার লিখেছি।" "যেদিন নূর হোসেনের শরীরে শ্লোগান লিখি, সেদিন কাজটা করেছিলাম খুব তাড়াহুড়ো করে। আমার হাত কাঁপছিল। মনে হচ্ছিল আমরা যে সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান লিখছি, কেউ দেখে ফেলবে। আমার লেখা সেদিন বেশি সুন্দর হয়নি। কিন্তু আমি বলবো আমার জীবনের সেরা কাজ ছিল সেটি।" ইকরাম হোসেন এখন আর নূর হোসেনের গায়ে শ্লোগান লেখার জন্য অনুতপ্ত নন। "যদি আমি ৩৩ বছর আগে ফিরে যেতে পারি, এই কাজ আমি আবারও করবো", বলছেন তিনি।
তিরিশ বছর আগে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর এক তীব্র গণআন্দোলনের মুখে বাংলাদেশে জেনারেল এরশাদের নয় বছরের শাসনের অবসান ঘটে। কিন্তু তারও তিন বছর আগে আরেকটি গণআন্দোলন তিনি নিষ্ঠুরভাবে দমন করেছিলেন। সেই আন্দোলনের সময় গণতন্ত্রের দাবিতে বুকে-পিঠে শ্লোগান লিখে রাস্তায় নামা এক তরুণ নূর হোসেন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। মৃত্যুর আগে তোলা তার একটি ছবি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠে এবং তিন বছর পরের গণআন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেনের বুলেটবিদ্ধ দেহ যে কারাকক্ষে ফেলে রাখা হয়, তার পাশের কক্ষে বন্দী ছিলেন বিবিসি বাংলার মোয়াজ্জেম হোসেন। তেত্রিশ বছর পর নূর হোসেনের সেই অভিনব প্রতিবাদের নেপথ্যে কাহিনী জানার চেষ্টা করেছেন তিনি।
সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের একটি ডরমিটরি। গাদাগাদি করে এসব জায়গায় শ্রমিকরা থাকেন বলে এগুলোর কয়েকটি করোনাভাইরাসের ক্লাস্টারে পরিণত হয়েছে এমনকী এই রোগের যখন নামকরণও করা হয়নি, সিঙ্গাপুরে চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ বহনকারীদের ব্যাপারে অন্যদের সাবধান করার কাজ শুরু হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হুহু করে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে সে দেশে। বৃহস্পতিবারে একদিনে সে দেশে নতুন ২৮৭ জন করোনারোগী শনাক্ত করা হয়, যেখানে তার আগের দিনের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪২। নতুন এই সংক্রমণ প্রধানত হচ্ছে অভিবাসীদের কলোনিগুলোতে যেখানে অল্প জায়গার মধ্যে অনেক মানুষ বলতে গেলে গাদাগাদি করে থাকে। ফলে এতদিন লকডাউনের পথ পরিহার করলেও, সিঙ্গাপুরকে এখন বাধ্য হয়ে আংশিক লকডাউন করতে হচ্ছে। স্কুল বন্ধ করা হয়েছে, এবং জরুরি নয় এমন সব ব্যবসা প্রতিষ্টান বন্ধ করা হয়েছে। মানুষজনকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। করোনাভাইরান সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের অন্যতম ধনী এই দেশটি যা করছিল, তাকে এতদিন পর্যন্ত আদর্শ মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনের পরিস্থতি দেখে এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে। ভালো কী হচ্ছিলো সিঙ্গাপুরে? সিঙ্গাপুরে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয় একেবারে গোড়ার দিকে। ২৩শে জানুয়ারি চীনের উহান থেকে একজন চীনা পর্যটক এই ভাইরাস বয়ে নিয়ে আসেন। ঐ দিনেই উহানে পুরো লকডাউন করা হয়েছিল। সিঙ্গাপুর এখন আংশিক লকডাউনে। জরুরী কাজ ছাড়া বাইরে বের হলে জেল-জরিমানা রোগটি কোভিড-১৯ নাম পাওয়ার আগেই তা সিঙ্গাপুরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই তা ঠেকানোর জন্য নানামুখি ব্যবস্থা শুরু হয়। বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়। এছাড়া, যার শরীরেরই কোনো উপসর্গ দেখা গেছে, সাথে সাথে তাকে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় যারা পজিটিভি হয়েছে, তাদের সংস্পর্ষে আসা লোকজন খুঁজে বের করে কোয়ারেন্টিন করা হয়। সে সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান এমন মন্তব্যও করেছিলেন যে সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যান্য সরকারগুলোর জন্য পথপ্রদর্শক হতে পারে। কয়েক সপ্তাহ ধরে সিঙ্গাপুর নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল খুবই কম। সহজে নতুন রোগী শনাক্ত করে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে পারছিল তারা। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ততটা বিঘ্নিত করার প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি সতর্কীকরণ নেটওয়ার্কের প্রধান এবং সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেল ফিশার বিবিসিকে বলেন, মানুষজন যখন বলছিল সিঙ্গাপুর খুব ভালো কাজ করছে, আমার উত্তর ছিল, “এখন অবধি।“ “এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন,“ তিনি বলেন। পরিস্থিতি কখন খারাপ হতে শুরু করে? মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে পরিস্থিতি আয়ত্বের মধ্যে ছিল, বলছেন সিঙ্গাপুরের স্য সুই হক স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন অধ্যাপক ইক ইন টিও। এ মাসের শুরু থেকেই সিঙ্গাপুরে মানুষজন রেস্তোরাগুলোতে যাওয়া বন্ধ করতে শুরু করে ততদিনে বিশ্বেজুড়ে এই রোগ কতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তা পরিষ্কার হতে শুরু করে। দেশে দেশে জনসাধারনকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় পড়ে যায়।সিঙ্গাপুরের অনেক নাগরিক যারা অন্যান্য দেশে ছিলেন তারা ভয়ে হাজারে হাজারে দেশে ফিরতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে শ পাঁচেকেরও বেশি মানুষ শরীরে বয়ে নিয়ে আসেন করেনাভাইরাস। তখনই বিদেশ ফেরতদের জন্য ১৫ দিন ঘরে কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামুলক করা হয়। কিন্তু পরিবারের অন্যদের ওপর কোনো বিধিনিষেধ জারি করা হয়নি। বাড়তে থাকে সংক্রমণের মাত্রা। মার্চের মাঝামাঝিতে নতুন সংক্রমণ হতে থাকে প্রতিদিন কয়েক ডজন করে। অধিকাংশই বিদেশ ফেরত অথবা তাদের সাথে সম্পর্কিত। তখনই প্রথম সংক্রমণের ওপর নজরদারী করা কঠিন হয়ে পড়তে শুরু করে। অধ্যাপক টিও বলেন এমন সমালোচনা করা সহজ যে বিদেশ ফেরত নাগরিকদের মেলামেশার ওপর যথেষ্টা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি, “কিন্তু এটা সত্য যে এখন আমরা এই রোগ সম্পর্কে যতটা জানতে পারছি, মার্চ মাসে সেই তথ্য ততটা ছিলনা।“ “এখন আমরা জানি যে উপসর্গ না থাকলেও কোনো ব্যাক্তি এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এবং সম্ভবত এ কারণেই রোগটি এতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে,“ বলেন প্রফেসর টিও। ঐ বিশেষজ্ঞ সাবধান করেন, এখন পর্যন্ত যে সব তথ্য মানুষের কাছে আছে তার ওপর একশ ভাগ নির্ভর করা ঠিক হবেনা। যেমন, তিনি বলেন, যাদের একবার কোভিড-১৯ হয়েছে তাদের আর কখনো হবেনা - এই ধারণা সত্যি নাও হতে পারে। সিঙ্গাপুরের বাস স্টপে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা। সিঙ্গাপুরে কোথায় কোথায় ভাইরাস ছড়িয়েছে? বিদেশ থেকে ভাইরাস শরীরে বয়ে এনে ছড়ানো ঠেকাতে, বিদেশ ফেরত সমস্ত লোকজনকে এখন পরিবারে না রেখে সরকারি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে। এখন অবশ্য খুব কম মানুষই সিঙ্গাপুরে ঢুকছে, ফলে সরাসরি তাদের মাধ্যমে সংক্রমণের সংখ্যাও এখন দ্রুত পড়ে গেছে। মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে নতুন একটি আইন জারি করা হয়েছে যার অর্থ, মুখে না বললেও, দেশব্যাপী আংশিক লকডাউন। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে গেলে ১০,০০০ সিঙ্গাপুর ডলার পর্যন্ত জরিমানা বা ছয় মাসের জেল হতে পারে। অধ্যাপক টিও এই ব্যবস্থাকে সমর্থন করেন, এবং বলেন তারপরও সামনের দিনগুলোতে হয়ত সংক্রমণের সংখ্যা বেশি হতে পারে, কিন্তু এটা কাজে দেবে। কিন্তু গত সপ্তাহে যে হারে সংক্রমণ সিঙ্গাপুরে বেড়েছে তার সিংহভাগ শিকার হয়েছে সেখান অভিবাসী শ্রমিকরা। লাখ লাখ এসব শ্রমিক সেখানকার নির্মাণ শিল্প, শিপিং এবং রক্ষনাবেক্ষণে কাজ করে। অর্থনীতি সচল রাখতে সিঙ্গাপুরকে এদের ওপর নির্ভর করতেই হবে। কিন্তু যেসব জায়গায় এই অভিবাসী শ্রমিকরা কাজ করে বা থাকে, তাদের পক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব।আইন অনুয়ায়ী এই শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট কিছু হস্টেল বা ডরমিটরিতে থাকতে হয়। বেসরকারিভাবে পরিচালিত এসব অনেক ডরমিটরিতে এক ঘরে ১২ জন পর্যন্ত শ্রমিক থাকে। এরা বাথরুম, রান্নাঘর এবং আরো অনেক কিছু শেয়ার করে। ফলে, এসব শ্রমিক ডরমিটরি যে করেনাভাইরাসের ক্লাস্টারে পরিণত হবে, তা বলাই বাহুল্য, এবং হয়েছেও তাই।প্রায় পাঁচশ কোভিড-১৯ কেস পাওয়া গেছে এরকম কয়েকটি শ্রমিক ডরমিটরিতে। সিঙ্গাপুরে এখন পর্যন্ত যত রোগী শনাক্ত হয়েছে তার ১৫ শতাংশই এসেছে এরকম একটি মাত্র ডরমিটরি থেকে।অনেক শ্রমিক উপসর্গ নিয়েও কাজ করতে গেছে।আর এ কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামি সপ্তাহে বা তারপর সিঙ্গাপুরে সংক্রমণের সংখ্যা অনেক বাড়বে, অনেক নতুন রোগী তৈরি হবে। অন্যান্য দেশের জন্য শিক্ষা প্রফেসর টিও বলেন, “সিঙ্গাপুরে শ্রমিক ডরমিটরিতে যা হয়েছে, সেটা অন্যান্য অনেক দেশেও ঘটতে পারে।, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত বা মধ্যমাপের অর্থনীতির দেশগুলোতে। “দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এমন সব জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা ডরমিটরির জীবনের মতো গাদাগাদি করে বসবাস করে।“ তিনি বলেন, গাদাগাদি করে বসবাস করার কারণে নিয়ন্ত্রণহীন সংক্রমণ ঠেকাতে কী করা যেতে পারে সে ব্যাপারে সরকারগুলোকে দ্রুত স্বচ্ছতার সাথে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রফেসর টিও‘র সহকর্মী প্রফেসর লি ওয়াং সু বলেন, সিঙ্গাপুরের ঘটনা সামজিক এবং শ্রেনী বৈষম্যের বাস্তবতাকে নগ্ন করে দিয়েছে যেটা সরকারগুলোর জন্য আরেকটি শিক্ষা হতে পারে। “এই ভাইরাস আমাদের সমাজের দুর্বল দিকগুলো খুব পরিষ্কার করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে - অভিবাসী শ্রমিকদের পরিস্থিতি তারই একটি জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ।“ প্রফেসর সু বলেন, সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করেই এইসব ডরমিটরি তৈরি করেছে, কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি প্রমাণ করেছে সেসব মান যথেষ্ট নয়। সিঙ্গাপুরের শ্রমশক্তি বিষয়ক মন্ত্রী জোসেফিন টিও এসব শ্রমিক ডরমিটরির মান বাড়ানোর অঙ্গিকার করেছেন। তিনি বলেন, “এটি করা সঠিক।“ সিঙ্গাপুর কি প্রমাণ করছে যে এই ভাইরাস আটকানো সম্ভব নয়? যদিও এখন সমালোচনা হচ্ছে যে সিঙ্গাপুর এমনকী আংশিক লকডাউন জারি করতেও সময় নিয়েছে, কিন্তু প্রফেসর ফিশার বলছেন, অন্য দেশগুলোর তুলনায় সিঙ্গাপুর অনেক আগেই ব্যবস্থা নিয়েছে। যখন প্রতিদিন নতুন সংক্রমণের সংখ্যা একশরও নীচে, তখনই তারা আংশিক লকডাউনের পথে গেছে। কিন্তু ঐ বিশেষজ্ঞ বলেন, লকডাউন কার্যকরি করতে হলে তিনটি বিষয় ঘটতে হবে - প্রথমত, সংক্রমণ বন্ধ করতে সব মানুষকে ঘরে থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত: স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সচল রাখতে তাদেরকে সময় দিতে হবে, নতুন রোগীদের জন্য বেড প্রস্তুত করতে এবং ডাক্তার-নার্সদের বিশ্রাম নেওয়ার সময় দিতে হবে। এবং তৃতীয়ত সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে হবে - আইসোলেশনের স্থান, আইন, সংক্রমিত লোকদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া। “আপনি যদি একটি বা দুটি কাজ নিশ্চিত করেন আর অন্যটি অবজ্ঞা করেন, দুর্যোগ নতুন করে ফরে আসবে।“ তবে ব্রিটেন বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সিঙ্গাপুরের পরিস্থিতি অনেক ভালো। তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রোগীর চাপে ভেঙ্গে পড়ছে না। সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ নেই, মিডিয়ারও চাপ নেই। কিন্তু প্রফেসর ডেল বলেন, যদিও সেখানে সরকারের ওপর মানুষের আস্থা রয়েছে এবং সরকার যথেষ্ট তথ্য মানুষকে দিচ্ছে, তারপরও “সাধারণ জনগণের সবাই তাদের নিজস্ব ভূমিকা এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে সমানভাবে সচেতন নয়।“ “তারা হয়ত ভাবছে - হ্যাঁ সিঙ্গাপুরের এটা করা উচিৎ, কিন্তু আমি আমার মাকে দেখতে যাবো।“ একারণে লকডাউন জারির পর প্রথম দুই দিনেই সিঙ্গাপুরে নির্দেশ লঙ্ঘনের জন্য ১০ হাজার মানুষকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের মত এত ছোট, স্থিতিশীল এবং উন্নত দেশের পরিস্থিতিও যেখানে এমন, সেখানে বড় এবং অনেক জটিল দেশগুলোর পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অনেক কঠিণ হবে। ফল পেতে তাদের কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। অনেক দেশই আশাবাদী হওয়ার লক্ষণ দেখছে. কিন্তু সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা পরিষ্কার বলে দিচ্ছে - আত্মপ্রসাদের বিন্দুমাত্র জায়গা এখনও নেই। বরঞ্চ করোনাভাইরাসের দ্বিতীয়, তৃতীয়, এমনকী চতুর্থ দফার সংক্রমনের জন্য প্রতিটি দেশের প্রস্তুত থাকা উচিৎ।
কোভিড-১৯ মহামারি ঠেকানোর যুদ্ধে সবচেয়ে প্রশংসিত দেশগুলোর একটি সিঙ্গাপুর।
দিল্লির দাঙ্গার পুড়েছিল মিস্টার মুনাজিরের দোতলা বাড়িও, যেটি তিনি কিনেছিলেন সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে। শুরুতে, লাখ লাখ অন্য দরিদ্র অভিবাসীর মতোই ভারতের বর্ধনশীল রাজধানীর এক কোনায় তারপুলিনে ঘেরা এক ছোট ঘরে থাকতেন মুনাজির। একটি পুস্তক বাঁধাইয়ের দোকানে কাজ নিয়ে তিনি চলে যান খাজুরি খাস এলাকায়। এলাকাটি দিল্লির উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। এখানকার শিক্ষাদীক্ষার হার ভারতের জাতীয় গড়েরর তুলনায় অনেক কম। বই বাঁধাইয়ের দোকান যখন বন্ধ হয়ে গেল, মিস্টার মুনাজির তখন নিজেই কিছু করার কথা চিন্তা করলেন। ছোট একটি গাড়ি কিনলেন, সাথে কিনলেন চাল আর মুরগি। শুরু করলেন বাড়িতে বানানো বিরিয়ানি বিক্রির ব্যবসা। তার ব্যবসা টিকেও গেল-"আমি নায়ক হয়ে গেলাম, সবাই আমার বিরিয়ানি পছন্দ করতো"। মুনাজির প্রায় ১৫ কেজি বিরিয়ানি রান্না করতেন যা বিক্রি করে দিনপ্রতি অন্তত ৯০০ রুপি লাভ হতো। সবকিছুই ভাল যাচ্ছিল। প্রায় তিন বছর আগে, নিজের ও ভাইয়ের সঞ্চয় মিলিয়ে ২৪ লাখ রুপি দিয়ে একটি বাড়ি কেনেন মুনাজির। তার ভাই একজন গাড়িচালক। সরু এক গলিতে ম্যাড়মেড়ে এক দোতলা বাড়ি। বাড়ির প্রতি তলায় দুটি করে কামরা। জানালার বালাই নেই। একটি করে ছোট রান্নাঘর আর একটি করে বাথরুম। দুটি পরিবারের জন্য খুবই ছোট, কিন্তু বাড়িতো! দিল্লির গুমোট গ্রীষ্মের হাত থেকে বাঁচতে তারা শীতাতপ যন্ত্রও লাগিয়েছিলেন বাড়িটিতে। মুনাজির বলেন, "এটা ছিল একটি নীড়, যেটি আমি আমার স্ত্রী আর ছয় সন্তানের জন্য সারা জীবনের কষ্টের সঞ্চয় দিয়ে কিনেছিলাম।" "সারাজীবন শুধু এই একটি মাত্র জিনিস চেয়েছি এবং এই একটি স্বপ্নই আমার বাস্তব হয়েছিল।" কিন্তু গত সপ্তাহের মঙ্গলবারের এক রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে তার সেই স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। নিজের পুড়ে যাওয়া বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ মুনাজির আর তার ছেলে। মিস্টার মুনাজিরের বাড়ি লুট করে আগুন দিয়েছিল একদল মুখোশ আর হেলমেট পরা মানুষ। যাদের হাতে ছিল লাঠি, হকিস্টিক, পাথর আর পেট্রোল ভর্তি বোতল। কণ্ঠে ছিলো শ্লোগান ছিল, "জয় শ্রী রাম"। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে শুরু হওয়া দিল্লিতে কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহতম প্রাণঘাতী ধর্মীয় দাঙ্গায় খাজুরি খাস ছিন্ন ভিন্ন জনপদে পরিণত হয়েছে। সেখানে কাউকে হত্যা করা হয়নি। কিন্তু তিন দিন ধরা জ্বলা আগুন আর নৃশংসতায় দিল্লির উত্তর-পূর্বের ওই এলাকায় ৪০টি প্রাণ নিঃশেষ হয়েছে, শত শত মানুষ আহত হয়েছেন এবং অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ নষ্ট হয়েছে। আর প্রমাণ মিলছে যে, পরিকল্পিতভাবে মুসলিমদের টার্গেট করা হয়েছিল এই দাঙ্গায়। নথিবদ্ধ প্রমাণাদি বলছে যে, সেখানে কিছু পুলিশ দাঙ্গাকারীদের সহায়তা করছিল বা বিষয়টিকে পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে। খাজুরি খাস এলাকায় প্রায় ২০০টির মতো বাড়ি ও দোকান ছিল, যার এক পঞ্চমাংশের মালিক ছিল মুসলমানেরা। যারা জানেন না, তাদের পক্ষে দেখে বোঝা কঠিন ছিলো, গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকা ছোট ঘরগুলোর কোনটি মুসলমানের আর কোনটি তাদের হিন্দু প্রতিবেশীর। কোথাও কোথাও দুই ধর্মের দুই প্রতিবেশীর বাড়ির ছিলো একই দেয়াল। কোথাও কোথাও জোড়া লাগানো টানা ছাদ। তারপরও খুব সহজেই শুধুমাত্র মুসলিমদের বাড়ি আর দোকানগুলোতেই হামলা করেছিল দুষ্কৃতিকারীরা। এখন অক্ষত দাঁড়িয়ে থাকা রং করা তকতকে হিন্দুদের বাড়ির পাশেই চোখে পড়ে মুসলমানদের কালি-ঝুলি মাখা, ভাঙাচোরা বাড়ি। মুসলমানদের মুরগি, মুদি পণ্য, মোবাইল ফোন আর মানি ট্রান্সফারের দোকান, কোচিং সেন্টার আর একটি সোডা কারাখানা আগুন দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়েছে। আর এগুলোর পাশে থাকা হিন্দুদের দোকানগুলোতে এখন ঝাঁপ খুলতে শুরু করেছে। খাজুরি খাস এলাকায় বড় ধরণের ক্ষতি করা হয়েছিল দাঙ্গার সময়। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে এখন একমাত্র মিলটি হচ্ছে, তারা একই রাস্তায় যাতায়াত করে যার উপর ছড়ানো ছিটানো সহিংসতার ছাপ: ভাঙা কাঁচের টুকরো, পুড়ে যাওয়া গাড়ি, ছিঁড়ে ফেলা স্কুলের বই আর নষ্ট হয়ে যাওয়া রুটি। ধ্বংস্তুপের মধ্যে দাঁড়িয়ে ডাকতে থাকা কয়েকটি ছাগলই সেখানে একমাত্র প্রাণের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। "আমি জানি না যে দাঙ্গাকারীরা ভেতরের নাকি বাইরের। আমরা তাদের মুখ দেখিনি। কিন্তু স্থানীয় কারো সহায়তা ছাড়া তারা আমাদের বন্ধ ঘর দেখেও কিভাবে শনাক্ত করলো?" প্রশ্ন মুনাজিরের। রাতারাতিই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পাহাড় সমান অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। মিস্টার মুনাজিরের পুড়ে যাওয়া বাড়ির ঠিক উল্টোদিকের দোতলা বাড়িটির মালিক এখজন হিন্দু। তার পেশা পান বিক্রি করা। তার সাথে থাকা দুই ছেলে সরকারি পরিবহন কোম্পানিতে চাকরি করেন। মিস্টার মুনাজির বলেন, বছরের পর বছর ধরে শান্তিতেই পাশাপাশি বাস করে আসছিলেন তারা। "এমনকি আমি তার বাড়িতে ভাড়া থেকেছি। তিনি বেরিয়ে এসে দাঙ্গাকারীদের সাথে কথা বলে বোঝাতে পারতেন," মিস্টার মুনাজির বলেন। "হয়তো আমার বাড়িটা বেঁচে যেতো।" সেই দুর্ভাগ্যের সকালে ভয়ের ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গিয়েছিলো মিস্টার মুনাজিরের শিরদাঁড়া বেয়ে। তিনি পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়েছিলেন। স্থানীয় এক হিন্দু স্কুল শিক্ষক অস্ত্রধারীদের শান্ত করে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছিলেন। "চিন্তা করবেন না, কিছু হবে না। বাড়ি যান," উদ্বিগ্ন মুসলিমদের তিনি একথা বলছিলেন। এক হিন্দু যুবক দাঙ্গাকারীদের অন্য আরেকটি লেনে প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু দাঙ্গাকারীরা তার কথা শোনেনি আর এর পরপরই তারা ভাঙচুর শুরু করে। আর তখন মিস্টার মুনাজির তার বাড়ি যান এবং প্রধান ফটক দরজা বন্ধ করে দেন। অনেকে এলাকায় শুধু মুসলিমদের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। দাঙ্গাকারীরা তার দরজা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছিল আর তখনই তাদের নজরে আসে কয়েক বাড়ির পরে থাকা মসজিদ। তাই তারা আপাতত দরজা ভাঙা বাদ দিয়ে মসজিদ লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা ছুড়তে থাকে। মিস্টার মুনাজির বলেন, ছয় ঘণ্টা পর পুলিশ আসে। তারা মুসলিম বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছিল দাঙ্গাকারীদের চোখের সামনে দিয়েই, আর দাঙ্গাকারীরা তাদের চর-থাপ্পড় ও পাথর মারছিল। পুলিশের সাথে সদ্যই ধর্মীয় সহিংসতার জেরে শরণার্থীতে পরিণত হওয়া মুসলমানেরা বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দাঙ্গাকারীরা তাদের বাড়িতে ঢুকে লুটপাট শুরু করে এবং লুটপাট শেষে আগুন দিতে থাকে। "তুমি ভাগ্যবান যে তুমি বেঁচে গেছো," মিস্টার মুনাজিরকে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছিল। "তুমি যেখানে চাও, আমরা তোমাকে সেখানেই নিয়ে যাবো।" আরো পড়তে পারেন: দাঙ্গা কবলিত এলাকা থেকে ৪০ জন উদ্ধার করেছিলেন মুস্তারি খাতুন। রাস্তার শেষের দিকে মুসলিম অধ্যুষিত এক এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি যেতে চান তিনি। সেখানে পৌঁছে দেখেন এরই মধ্যে শরণার্থীতে ভরে উঠেছে বাড়িটি। ছোট তিনটি কক্ষে আশেপাশের ১১টি পরিবারের ৭০ জন নারী, পুরুষ আর শিশু আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে এক যুবতী মা ছিলেন যিনি তার ছয় দিন বয়সী শিশুকে কোমরে বেঁধে প্রাণ বাঁচাতে তিন তলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েছেন। তাদের সবার বাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে কয়েক জনকে পুলিশ সেখানে নিয়ে এসেছে, আর কমপক্ষে ৪০ জনকে উদ্ধার করেছে ওই ভবনের মুসলিম নারীরা যা অসাধারণ সাহসের প্রতীক। "আমি এখনো ভাবি যে পুলিশ কেন ওই এলাকায় গিয়ে আমাদের বাড়িগুলো রক্ষা করলো না। তারা কেন আরো বাহিনীর সাহায্য চাইলো না? এটা কি ইচ্ছাকৃত ছিল নাকি তাদের আর কোন বাহিনী ছিল না?" এমন প্রশ্ন করছিলেন দিল্লিতে চাকরীর খোঁজে আসা বিক্ষিপ্ত এক যুবক প্রকৌশলী। তিনটি ছোট ঘরে বাস করছে ৭০ জনেরও বেশি শরণার্থী। আর এজন্যই খাজুরি খাসের ৭০ জন বাসিন্দা তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য মুস্তারি খাতুনের কাছে কৃতজ্ঞ। যিনি ভোর বেলা সাহস করে প্রধান রাস্তা পার হয়ে, দাঙ্গা কবলিত এলাকায় গিয়ে মুসলিম নারী আর শিশুদের উদ্ধার করে নিয়ে এসে আশ্রয় দিয়েছেন। উত্তেজিত দাঙ্গাকারীদের তোয়াক্কা না করে "চার-পাঁচবার" তিনি ওই এলাকায় গিয়েছেন এবং তাদের উদ্ধার করে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে থাকা নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় দিয়েছেন। নারী আর শিশুরা বের হওয়ার জন্য নিরাপদ জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে লাফিয়ে লাফিয়ে পার করেছে। পুলিশের চেয়েও বেশি জীবন বাঁচিয়েছেন মিসেস খাতুন। "এখন থেকে আমাদের নিজেরাই নিজেদেরকে বাঁচাতে হবে। দিল্লি আর আমাদের রক্ষা করবে না," তিনি বলেন। তার কণ্ঠে দমে যাওয়া নয় বরং প্রতিরোধের স্বর। দিল্লি সহিংসতা: 'পুলিশকে আগুন দিতে দেখেছি: বিবিসিকে ভুরা খান
ছয় দশক আগে বিহারের দারিদ্রের কষাঘাত থেকে পালিয়ে দিল্লি এসেছিলেন মোহাম্মদ মুনাজির। তার ভূমিহীন বাবা সেখানে অন্যের খামারে মজুরী খাটতো।
কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিস্তারের পর আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রায় একদশক আগের চলচ্চিত্র কনটেজিয়ন ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র কনটেজিয়নকে কোনভাবেই ব্লকবাস্টার বা ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র বলা যাবে না। যদিও বেশ কয়েক জন তারকাকে নিয়ে চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়েছিল, যাদের মধ্যে রয়েছেন ম্যাট ডেমন, গিনেথ প্যালট্রো, জুডি ল, কেট উইনস্লেট এবং মাইকেল ডগলাস, তারপরেও সেটি ওই বছরের ব্যবসায়ের দিক থেকে ৬১তম হয়েছিল। কিন্তু নয় বছর পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফিরে এসেছে 'কনটেজিয়ন'। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপল আইটিউন স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া ছবির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চলচ্চিত্রটি। সেই সঙ্গে গুগল সার্চের তালিকায় শীর্ষে চলচ্চিত্রটির নাম খোঁজার প্রবণতাও বাড়ছে। কনটেজিয়ন চলচ্চিত্র তৈরি করেছে ওয়ার্নার ব্রাদারস। তারা বলেছে, চীনে যখন প্রথম করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন বিশ্বের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের তালিকায় এটির অবস্থান ছিল ২৭০তম। তিন মাস পরে, কনটেজিয়নের জায়গা হয়েছে নবম অবস্থানে। তার সামনে রয়েছে শুধুমাত্র হ্যারি পটার সিরিজের আটটি চলচ্চিত্র। এর একমাত্র কারণ হলো করোনাভাইরাস। প্রায় এক দশক আগে তৈরি চলচ্চিত্রটির কাহিনীর সঙ্গে বর্তমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের অনেক মিল রয়েছে। আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস গাইড: আপনার প্রশ্নের উত্তর করোনাভাইরাস যেভাবে কেড়ে নিল এক বাংলাদেশির প্রাণ করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিতে কত দিন লাগে? কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রে গিনেথ প্যালট্রোর চরিত্রটি ছিল 'পেশেন্ট জিরো' জীবনের অনুকরণে শিল্প চলচ্চিত্রটিতে একজন নারী ব্যবসায়ী (গিনেথ প্যালট্রো অভিনয় করেছেন) একটি রহস্যময় এবং মারাত্মক ভাইরাসে মারা যান। চীনে একটি সফরের সময় তিনি ওই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় পর্যন্ত ওই ভাইরাসের ব্যাপারে কোন সতর্কতা জারি করা হয়নি। কনটেজিয়নের দর্শকরা বলছেন, বর্তমান বাস্তব জীবনের ভাইরাস সংক্রমণ যেমন চীন থেকে শুরু হয়েছিল, তেমনি চলচ্চিত্রটির এরকম কাহিনীর মিলের কারণেই সেটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। সেই আগ্রহ আরও বেড়েছে গিনেথ প্যালট্রোর একটি ইন্সটাগ্রাম পোস্টের কারণে। গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়ার সময় বিমানে বসে তিনি মুখে মাস্ক পরা এটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ''আমি এই চলচ্চিত্রটিতে আছি। নিরাপদ থাকবেন। করমর্দন করবেন না। নিয়মিত হাত ধোবেন।'' সাদৃশ্য কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রটির সঙ্গে বাস্তব ঘটনাবলীর অবিশ্বাস্য মিল রয়েছে। প্যালট্রো অভিনীত চরিত্রটি এমইভি-ওয়ান নামের একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় হংকংয়ের একজন বাবুর্চির সঙ্গে করমর্দনের মাধ্যমে, যিনি একটি শুকর জবাই করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই শুকরটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল বাদুরের মাধ্যমে। এরপর দেশে ফিরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, কিছুদিন পরে মারা যান। এরপরে তার ছেলেরও একই রোগে মৃত্যু হয়। কিন্তু তার স্বামী, ম্যাট ডেমনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভাইরাসটি আক্রমণ করতে পারেনি। কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রের মতো চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মতে, মানব শরীরে কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার হয়েছে পশু থেকে বাস্তবে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন যে, গত ডিসেম্বর মাস নাগাদ চীনের উহান শহরে পশু থেকে মানব শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি ছড়াতে শুরু করে। এটাও ধারণা করা হয় যে, করোনাভাইরাস বাদুরের মাধ্যমে বিস্তার ঘটেছে, যেমনটা ঘটেছিল সার্স মহামারির ক্ষেত্রে ২০০২-২০০৩ সালে। বাদুর থেকে সেটা অন্য একটি প্রাণী হয়ে মানব শরীরে আসে। অন্য কোন প্রাণী থেকে করোনাভাইরাস এসেছে, সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে চীনের কর্তৃপক্ষ উহান শহরের একটি পশুপাখির বাজারকে ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল বলে শনাক্ত করেছে। যেভাবে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে, চলচ্চিত্রের কল্পিত ভাইরাসটিও একে অপরকে স্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বাস্তব জীবনের অনুপ্রেরণা কল্পিত এবং বাস্তব ভাইরাস, উভয়ের ক্ষেত্রেই ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটে। তবে চলচ্চিত্রের কল্পিত এমইভি-ওয়ান ভাইরাসের ধারণাটি এসেছিল বাস্তবের আরেকটি ভাইরাস নিপাহ থেকে, যা অবশ্য করোনাভাইরাস গোত্রের নয়। কল্পিত ভাইরাসের চেয়ে অবশ্য বাস্তব ভাইরাস কম প্রাণঘাতী। চলচ্চিত্রে মৃত্যুহার বলা হয় ২৫%, তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ৩.৪%। কল্পিত ভাইরাস ও বাস্তবের ভাইরাসের মধ্যে একটি মিল হলো, উভয়ের বিস্তারই বাদুর থেকে ঘটেছে কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রে এমইভি-ওয়ানে আক্রান্ত হয়ে একমাসের মধ্যেই বিশ্বে দুই কোটি ষাট লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। তবে চীনে তিন মাস আগে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটনার পর এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা চার হাজার হয়নি। ওই চলচ্চিত্রের সঙ্গে শুধুমাত্র তুলনা করা যায় ১৯১৮-১৯২০ সাল নাগাদ বিস্তার হওয়া স্প্যানিশ ফ্লুর সঙ্গে- যাতে পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আইসোলেশন চলচ্চিত্রে যখন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, তখন এপিডেমিক ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (যা বাস্তবের একটি প্রতিষ্ঠান) কর্মীরা সংক্রমিতদের সনাক্ত এবং আইসোলেশন করতে শুরু করেন। ওই চলচ্চিত্রে যুক্তরাষ্ট্রের শহর শিকাগো কোয়ারেন্টিন করা হয়, যার সঙ্গে চীনের এলাকাকে অবরুদ্ধ করে ফেলার তুলনা করা যেতে পারে। ১৯১৮-১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লুতে পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল কোভিড-১৯ বিস্তার ঠেকাতে দেশের উত্তরাঞ্চলে অনেকটা একই ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে ইতালি। ভীতি কনটেজিয়নের এই ফিরে আসার ব্যাপারটি অবাক করেছে চিত্রনাট্যকার স্কট যি বার্নসকে। তবে ফরচুন ম্যাগাজিনকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রের মূল আইডিয়াটি ছিল এটাই তুলে ধরা যে, এ ধরণের প্রাদুর্ভাবের জন্য আধুনিক সমাজ কতটা নাজুক। বার্নস বলেছেন, ''কনটেজিয়ন এবং করোনাভাইরাসের মধ্যে যে মিলগুলো দেখা যাচ্ছে, সেটা কাকতালীয়, আসলে এটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।'' ''যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, এর ফলে সমাজে কি ঘটছে, ভয় কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তার ফলে কী ঘটছে সেটা।'' স্কট জি বার্নস, কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার তিনি হয়তো চলচ্চিত্রের বিশেষ একটি চরিত্রের কথা বোঝাতে চেয়েছেন, যিনি ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খুঁজে বেড়ান। জুডি ল অভিনীত ওই চরিত্রটি ভাইরাস নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়ে বেড়ান এবং ভাইরাসের একটি জাল ঔষধের প্রচারণা চালান। বাস্তবেও তার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। অনলাইন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা দশ লাখের বেশি পণ্যের বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ এসব পণ্যের বিক্রেতার দাবি করেছিলেন যে, সেগুলো কোভিড-১৯ সারাতে সহায়তা করে। সুপরিচিত আমেরিকান টেলিভিশন তারকা জিম বাক্কের নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছেন, কারণ এক সপ্তাহ আগে তিনি একটি টনিকের প্রচারণায় বলেছিলেন যে, সেটা ভাইরাস থেকে আরোগ্য হতে সাহায্য করে। বর্তমান প্রাদুর্ভাবে এই গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে যে, ভাইরাসটি আসলে একটি রাসায়নিক অস্ত্র হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল। এমনকি চিত্রনাট্যকার বার্নসের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কোন কোন ব্যক্তি সামাজিক মাধ্যমে এসে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, তিনি গোপন সংস্থার সদস্য, যারা বিশ্বের ব্যাপার-স্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। ''আমি মনে করি, সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হলো এসব ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়া, যা ভাইরাসের মতোই বিপদজনক।'' নিপাহ ভাইরাস থেকে কনটেজিয়ন চলচ্চিত্রের ধারণা নেয়া হয় বৈজ্ঞানিক বিশ্বাসযোগ্যতা কনটেজিয়নের জনপ্রিয়তার পেছনে আরও একটি কারণ থাকতে পারে যে, বার্নস এটিকে বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। চিত্রনাট্য লেখার সময় তিনি ভাইরোলজিস্ট এবং এপিডেমিওলজিস্টদের সঙ্গে পরামর্শ করেছিলেন, যাদের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরাও রয়েছেন। তারা তাকে চমৎকার কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন। ''তারা আমাকে বলেছিলেন, একটি প্রাদুর্ভাব সত্যিই হবে কিনা, সেটা প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হলো, কোন সময়ে হবে।''
চীন থেকে একটি ভয়াবহ এবং রহস্যময় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, এরকম গল্প নিয়ে ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটি মোটামুটি সফলতা পেয়েছিল, কিন্তু ২০২০ সালে এসে সেটি 'হিট' হয়ে ওঠে। চলচ্চিত্রটির গল্প আর বাস্তবতার সঙ্গে অবিশ্বাস্য মিল দেখা গেছে।
ডন পত্রিকাটি বলছে, ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে তাদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে। পাকিস্তানের অবস্থা এখন অনেকটা সেরকমই। গত কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানি বহু নাগরিক এরকম বোধ করছেন, কারণ দেশটির সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক ডন তাদের বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেছে। আর এই অবস্থা তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। আগামী ২৫শে জুলাই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা । তার আগে টেলিভিশন চ্যানেল থেকে শুরু করে সংবাদপত্র, এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উপরেও কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দেশটির সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগ একজোট হয়ে সংবাদ মাধ্যম এবং কিছু কিছু রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই অভিযোগ সাংবাদিকদের দিক থেকে যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকেও। পাকিস্তানের সাবেক সরকারি দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ এবং এই দলের নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ - দুর্নীতির মামলায় যাকে গত বছর ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে - তিনিও এই অভিযোগ করেছেন। মি. শরীফকে আজীবনের জন্যে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করেছে আদালত। এসব অভিযোগ অবশ্য সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে। তবে, ইংরেজি দৈনিক ডন এবং এস্টাবলিশমেন্টের (সরকারি কর্তৃপক্ষ) মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে যে লড়াই চলছে সেটাই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই পত্রিকাটি পাকিস্তানের ব্যবসায়ী, কূটনীতিক এমনকি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও মধ্যে জনপ্রিয়। এর সম্পাদকীয় প্রভাবও উল্লেখ করার মতো। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সমাজে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি তৈরিতে এই পত্রিকাটির রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। এছাড়াও পাকিস্তানে মানুষের মধ্যে এই পত্রিকাটির প্রতি একটা বিশেষ শ্রদ্ধা রয়েছে - কারণ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারত ও পাকিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়ার (দেশবিভাগ) আগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই পত্রিকাটি প্রকাশের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ ভারতের ঔপনিবেশিক শক্তির সাথে মুসলমানদের একটি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা। তখন থেকেই এই পত্রিকাটিকে পাকিস্তানের প্রভাবশালী মহল বা এস্টাবলিশমেন্টের কাগজ বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। পাকিস্তানে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কাজ করতে হয়। আরো পড়তে পারেন: গুহার ভেতর কী করে টিকে থাকবে কিশোর ফুটবলাররা? শিশুকে কীভাবে 'বুকের দুধ খাওয়ালেন' বাবা নাটকের অভিযোগের জবাবে যা বললেন নেইমার অভিযোগ উঠেছে যে ডন সংবাদ মাধ্যমটিকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে এর সংবাদ কর্মীদের, হকাররা যাতে এই পত্রিকাটি বিলি করতে না পারে সেজন্যে প্রত্যেক শহরের সেনানিবাসগুলোতে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ডন টিভি যাতে বাড়িতে বাড়িতে দেখা না যায় সেজন্যে কেবল অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও এই পত্রিকায় ও টেলিভিশনে যেসব প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দেয় তাদেরকে বলা হয়েছে সেখানে পণ্যের প্রচারণা না চালাতে। এর ফলে ডনের আয়-উপার্জনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। ডন ছাড়াও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের লোকজনকে অপহরণ করারও অভিযোগ উঠেছে। রহস্যময় কিছু লোক নিজেদের নাম পরিচয় গোপন রেখে সাংবাদিকদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে শারীরিকভাবেও। কারা এসব করছে সেগুলো প্রকাশ করতে কোন সংবাদ মাধ্যমও সাহস করছে না। কিন্তু সাংবাদিক আহমেদ রশিদ বলছেন, সংবাদ জগতের মোটামুটি সবাই জানে যে সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর লোকেরাই এসবের সাথে জড়িত। এবিষয়ে এতোদিন মুখ খোলেনি ডন। তারা নিরব থেকেছে। কিন্তু পত্রিকাটি খুব সম্প্রতি একটি খোলামেলা ও শক্তিশালী সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। সম্পাদকীয়তে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে নওয়াজ শরীফ সরকারের শাসনামলে পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে বড় রকমের ফাটল তৈরি হয়েছিল। এসব বিষয়ে খবর প্রকাশ করা হয়েছিল পত্রিকাটিতে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় সামরিক বাহিনী। কিন্তু চাপের মুখেও ডন পত্রিকাটি তাদের খবরের উৎস বা সোর্সের নাম প্রকাশ করেনি। ডন পত্রিকার সম্পাদকয়ীতে লেখা হয়েছে, "ডন পত্রিকা এবং তার সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা তথ্য, ঘৃণা, সম্মানহানির প্রচারণা এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানো হয়েছে, তাতে কিছু বিষয় বলা দরকার। রাষ্ট্রের ভেতরের একটি অংশ সংবিধানে দেওয়া স্বাধীনতাকে ধরে রাখছে না।" ডন পত্রিকাটি বলছে, ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে তাদের উপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। তবে এই আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে গত মে মাস থেকে। সংবাদ মাধ্যমে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করেছে সামরিক বাহিনী। সাংবাদিক আহমেদ রশীদ লিখছেন, গত বছর এই একই ধরনের ভয়ভীতি ও আর্থিক চাপের মুখে পড়েছিল জনপ্রিয় উর্দু পত্রিকা জং এবং তাদেরই সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল জিও। তাদের অবস্থা এমন হয়েছিল যে তিন মাস তারা তাদের সাংবাদিক এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন দিতে পারেনি। কিন্তু তারা তাদের অবস্থানে ডনের মতো অনড় থাকেনি। তাদের উর্ধতন সম্পাদকরা সামরিক বাহিনীর সাথে এক ধরনের আপোস সমঝোতা করে ফেলতে সক্ষম হন। তিনি আরো লিখেছেন, সংবাদপত্র ও টেলিভিশন ছাড়াও আরো বেশি আক্রমণের শিকার হচ্ছেন ব্লগাররা যারা সোশাল মিডিয়ায় সোচ্চার। সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে এসব ব্লগাররা রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু সামরিক বাহিনী সংবাদ মাধ্যমের উপর তাদের হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা বলছে, পাকিস্তানে একটি মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে তারা বদ্ধপরিকর। তবে সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে যে তারা সোশাল মিডিয়ার উপর নজর রাখছে। সামরিক বাহিনীর সমালোচক গুল বুখারি। সাংবাদিক আহমেদ রশীদ লিখেছেন, পাকিস্তানে বিভিন্ন চরমপন্থী গ্রুপকে কেন এস্টাবলিশমেন্ট থেকে বিশেষ সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে এবং কেন তাদেরকে রাজনীতিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে সেসব বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো কিছু বলতে ভয় পায়। "কিন্তু একই সাথে সুপরিচিত নারী ব্লগার গুল বুখারিকে লাহোরের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যিনি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমালোচনায় সোচ্চার ছিলেন।" তিনি বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বলা যায় ডন পত্রিকাটি কবে থেকে আবার মানুষের বাসাবাড়িতে প্রত্যেকদিন সকালে নাস্তার টেবিলে দেখা যাবে সেটা বলা খুব কঠিন। "তবে পাঠকের হাতে এই পত্রিকাটি পৌঁছাতে এবং সাংবাদিকদের আর ভয়ভীতি দেখানো হবে না, শারীরিকভাবে হয়রানি করা হবে না- দেশটিতে এরকম পরিস্থিতি ফিরে আসতে আরো বহু সময় লাগবে।"
পাকিস্তানের লাহোর থেকে সাংবাদিক আহমেদ রশিদ বিবিসি ওয়েবসাইটে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখা যায় নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাটি নেই, সংবাদপত্র বিক্রির সব স্টল বন্ধ এবং হকাররা পত্রিকা বিলি করতে পারছে না, তাহলে কেমন হতে পারে সেটা একবার কল্পনা করে দেখুন।
মইন ইউ আহমেদের লেখা এই বইটি প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে। আজ দশ বছর পূর্ণ হলো সেই দিনটির। সেদিন বিকেলে বঙ্গভবনের ভেতরে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টা প্রয়াত প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহমেদের সাথে কী হয়েছিল, তা বিভিন্ন জনের বয়ানে খণ্ড খণ্ড ভাবে এসেছে বিভিন্ন সময়ে। কিছু চিত্র পাওয়া যায়, সেদিনকার ঘটনাপ্রবাহের প্রধান কুশীলব সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের লেখা একটি বই থেকে। ২০০৯ সালে প্রকাশিত 'শান্তির স্বপ্নে' নামক স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থে সেসময়কার জেনারেল আহমেদ লিখেছেন, তিনি-সহ সশস্ত্র বাহিনীর অন্যান্য প্রধান ও ডিজিএফআইয়ের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্তা সেদিন প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন। তারা আড়াইটার সময় বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। ভেতরে গিয়ে শোনেন, প্রেসিডেন্ট মধ্যাহ্নভোজ করছেন। তাদের একটি কামরায় অপেক্ষা করিয়ে রাখা হয়। ঘণ্টা দেড়েক অপেক্ষা করবার পর প্রেসিডেন্টের দেখা মেলে। প্রেসিডেন্টকে তারা 'মহা-সংকটময় পরিস্থিতি' থেকে দেশকে উদ্ধার করার অনুরোধ জানান। প্রেসিডেন্ট বিষয়টি ভেবে দেখার সময় নেন। জেনারেল আহমেদ তার বইতে লিখেছেন, "আমি জানতাম ইতোপূর্বে উপদেষ্টা পরিষদের অনেক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত অজানা কোন কারণে ও প্রভাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে। যার কারণে আমরা কোনো দুষ্টচক্রকে আবার নতুন কোনো খেলা শুরু করার সুযোগ দিতে চাচ্ছিলাম না। কক্ষে নেমে এলো সুনসান নীরবতা ...... আমার মনে হলো আমাদের চোখ দিয়ে পুরো দেশ যেন তাকিয়ে আছে প্রেসিডেন্টের দিকে"। দীর্ঘ নীরবতার পর প্রেসিডেন্ট জরুরী অবস্থা জারীর পক্ষে মত দেন। সেই সাথে তিনি নিজে প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙে দেবেন বলে জানান। বইতে ছ'টার সময় বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসার কথা লিখেছেন জেনারেল আহমেদ, অর্থাৎ দু'ঘণ্টার মত তারা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। ২০০৬ সালের ২৯শে অক্টোবর প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের জন্য শপথ নেন প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। এই দু'ঘণ্টায় ঠিক কিভাবে তারা বুঝিয়েছিলেন প্রেসিডেন্টকে, কোন প্রেক্ষাপটে গিয়ে প্রেসিডেন্ট জরুরী অবস্থা জারী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দিতে রাজী হলেন, তার খুব স্পষ্ট একটা ধারণা জেনারেল আহমেদের এই লেখায় পাওয়া যায় না। তবে বঙ্গভবনে যাওয়ার প্রেক্ষাপট কেন তৈরি হল, তা তিনি তার বইতে সবিস্তার লিখেছেন। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি: ওইদিন বঙ্গভবন থেকে আর জীবিত ফিরে নাও আসতে পারেন বলে ধারণা করেছিলেন জেনারেল আহমেদ। মইন ইউ আহমেদ লিখেছেন, তিনি এমন কিছু প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছিলেন, যার কারণে তৎক্ষণাৎ রাষ্ট্রপতি তাদের বরখাস্ত করতে পারেন, গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারেন, এমনকি হত্যার নির্দেশও দিতে পারেন। বঙ্গভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্ভেদ্য উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, "...তারা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য হলেও তাদের কর্মপদ্ধতি ভিন্ন। বঙ্গভবনে তাদের কাছে প্রেসিডেন্টই একমাত্র ভিভিআইপি যাকে রক্ষা করতে তারা নিয়োজিত"। "এমনকি প্রেসিডেন্টের জীবনের উপর হুমকি মনে করলে তারা যে কাউকে হত্যা করতে পারে। পিজিআর কিংবা এসএসএফ, সেনাবাহিনী কিংবা অন্য কোনো বাহিনীর চেইন অব কমান্ডের আওতাধীন নয়। এমন নিরাপত্তা বলয়ে আমরা কজন যাচ্ছি সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায়"। "আমি জানতাম হতে পারে এ যাত্রাই সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে আমার শেষ যাত্রা কিংবা কে জানে হয়তো জীবনের শেষ যাত্রা"। বঙ্গভবনে রওয়ানা হওয়ার আগে মেজর জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়াকে তিনি বলেছিলেন, "আমি না ফিরলে পরবর্তী পরিস্থিতি সিজিএস হিসেবে প্রাথমিকভাবে তাকেই সামাল দিতে হবে"। জেনারেল মইন ইউ আহমেদকে এক-এগারোর প্রধান কুশীলব বলে মনে করা হয়। তার বই 'শান্তির স্বপ্নে''তে তিনি নিজেও সেরকমটিই ইঙ্গিত দিয়েছেন। যে কারণে ১/১১: রাজনীতিতে কোনোভাবেই সেনাবাহিনীকে জড়াতে চাননি, একথা বারবার 'শান্তির স্বপ্নে' বইতে লিখেছেন জেনারেল মইন ইউ আহমেদ। এমনকি তিনি যখন ডিভিশন কমান্ডারদেরকে দেশের অবস্থা বর্ণনা করতেন এবং তাদের মতামত শুনতে চাইতেন তখন তারাও দ্রুত কিছু করার তাগিদ দিতেন। এক্ষেত্রে সাভারের জিওসি মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর কথা বইতে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন জেনারেল আহমেদ। "আমি তাদের বুঝাতাম রাষ্ট্র পরিচালনায় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই"। তাহলে কেন জড়ালেন? এক-এগারো পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সেনাবাহিনী সরাসরি না থাকলেও সবখানেই যে তাদের প্রচ্ছন্ন হস্তক্ষেপ ছিল একথা সর্বজনবিদিত, যে কারণে দেশে-বিদেশে ওই সরকার 'সেনা সমর্থিত সরকার' বলেই পরিচিত। জেনারেল আহমেদ বলছেন, জাতিসংঘের একটি প্রচ্ছন্ন হুমকির কথা, যেখানে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছিল। তিনি লিখছেন, "সেনাবাহিনীর সীমিত আয়ের চাকরিতে সৈনিকদের একমাত্র অবলম্বন জাতিসংঘ মিশন। তাদের সামনে থেকে যদি সেই সুযোগ কেড়ে নেয়া হয় তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়বে"। এক এগারো পূর্ব বাংলাদেশে রাজনৈতিক যে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, জেনারেল আহমেদ তার বইতে সেই সময়ে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি বলে বর্ণনা করছেনে। এই ছবিটি এক-এগারোর দুদিন আগের। প্রধান উপদেষ্টার সন্ধানে: বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের মূল কাজ হয় প্রধান উপদেষ্টা হতে রাজী এমন একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি খুঁজে বের করা। জেনারেল আহমেদ লিখেছেন, বঙ্গভবনেই প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন তাদের দুটো নাম প্রস্তাব করেছিলেন, একজন শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস, অপরজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমেদ। প্রফেসর ইউনুসকে প্রথম ফোনটি করেন জেনারেল আহমেদ। প্রফেসর ইউনুস অস্বীকৃতি জানান। "তিনি বললেন, বাংলাদেশকে তিনি যেমন দেখতে চান সেরকম বাংলাদেশ গড়তে খণ্ডকালীন সময় যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশকে আরো দীর্ঘ সময় ধরে সেবা দিতে আগ্রহী। সেই মুহূর্তে ড. ইউনুসের কথার মর্মার্থ বুঝিনি........পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি তিনি একটি রাজনৈতিক দল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন যদিও পরিস্থিতির কারণে তাকে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছিল"। ড. ফখরুদ্দীন আহমেদকে ফোন করে ঘুম থেকে জাগানো হয় গভীর রাতে। প্রধান উপদেষ্টা হবার আমন্ত্রণ পেয়ে স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য সময় চান তিনি। আধ ঘণ্টা পর ফিরতি ফোনে সম্মতি জানান। ওই দিনটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনাবহুল দিন নাইন-ইলেভেনের মত করে এক-এগারো হিসেবে অভিহিত করার সিদ্ধান্তও তারাই নিয়েছিলেন বলে বইতে লিখেছেন মইন ইউ আহমেদ। প্রধান উপদেষ্টার পদ ছাড়ার পর সেই যে বাংলাদেশ ছেড়েছেন ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ, আজও ফেরেননি। সেনাবাহিনীর ওই দিনের এই উদ্যোগ সেসময়ে বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যদিও সেনা সমর্থিত ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরবর্তী দুবছরের কর্মকাণ্ড পরে বেশ বিতর্কই সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে 'মাইনাস-টু' ফর্মুলা বলে পরিচিত প্রধান দুই দলের দুই নেত্রীকে অপসারণের একটি চেষ্টা নিয়ে আজো বাংলাদেশে সমালোচনা চলে। এখন কে কোথায়? ২০০৮ সালের শেষাংশে ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসার পরবর্তীতে ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এরপর আর দেশে ফিরেছেন বলে শোনা যায়নি। ওয়াশিংটনে তিনি থাকেন বলে বাংলাদেশের কোন কোন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, যদিও জনসমক্ষে তিনি আসেন না বলেই প্রকাশ। জেনারেল মইন ইউ আহমেদও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হয়েছেন অবসর গ্রহণের পর। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের বরাতে জানা যাচ্ছে, তিনি নিউইয়র্কের জ্যামাইকার বাসিন্দা। ক্যান্সারে ভুগছেন তিনি। তিনিও জনসমক্ষে আসেন না। মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী নতুন রাজনৈতিক সরকারের অধীনে বিদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও পালন করেন। পরে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং তিনি এখন দেশেই বসবাস করছেন। আরও পড়ুন: 'বাংলাদেশে এক-এগারো আরও শক্তিশালী করেছে হাসিনা ও খালেদাকে'
২০০৭ সালের এগারোই জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে বিরাট পট পরিবর্তন হয়েছিল তা সবারই জানা।
এটা অস্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়। কিরঘিজস্তানে প্রতি আটজনের মধ্যে একজন দেশের বাইরে থাকেন কাজের সুবাদে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর জিডিপির (বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির) এক তৃতীয়াংশই আসে এইসব অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিটান্স থেকে। এ হিসেব দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। ধারণা করা হচ্ছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে অর্থের এই প্রবাহ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। আইএমএফ-এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ সালে রেমিটান্সের পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। কিন্তু অভিবাসীদের উপার্জনের এই বিশাল অঙ্কের একটা চড়া মাশুল দিচ্ছে শিশুরা। একটা গোটা প্রজন্মের শিশুরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বড় হয়ে উঠছে আত্মীয়দের তত্ত্বাবধানে এবং প্রায়শই অবহেলা, বঞ্চনা এবং অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হয়ে। ''একমাত্র পথ'' কানিবেক আর নুরসুলু মস্কোতে পরিচ্ছন্নকর্মীর কাজ নিয়েছিলেন। তারা একটা ভাড়া বাসায় থাকতেন যেখানে খাট গুটিয়ে রাখতে হতো এত ছোট ছিল সেই বাসা। আয়ের যেটুকু তারা বাঁচাতে পারতেন তা দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে ঘটে গেল একটা দুর্ঘটনা। তাদের আট বছরের মেয়ে মেদিনা পড়ে গিয়ে মারা গেল। এবং সন্তানের শেষকৃত্যের জন্য ওই দম্পতিকে দেশ ফিরে যেতে হল। তারা এর জন্য দাদীকে দায়ী করেননি। তবে তারা কাছে থাকলে হয়ত আরও দ্রুত মেয়ের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারতেন। তারা নিজেদের এই বলে সান্ত্বনা দিলেন যে দুর্ঘটনা যে কারো জীবনে যে কোন সময়ে ঘটতে পারে। মেয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে তারা ফিরে গেলেন মস্কোয়। মায়ের মন ভেঙে গেল। কিন্তু তাদের আর অন্য কোন উপায় ছিল না। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: 'সৌদি আরবে নারী শ্রমিকের পরিবেশের পরিবর্তন হচ্ছে' মধ্যপ্রাচ্যের পথে নেপালে গ্রেফতার ৩৮ বাংলাদেশি সৌদিতে নারী শ্রমিক নির্যাতনের কেন সুরাহা নেই? মেদিনার মৃত্যু গত বছর কিরঘিজস্তানে এধরনের যত ঘটনা ঘটেছে তার একটি। পরপর বেশ অনেকগুলো এরকম ঘটনা ঘটেছে সেখানে। যেমন দেশের উত্তরে দুবছরেরএক শিশুকে তার চাচী পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল কারণ সে প্রস্রাব করে নিজেকে ভিজিয়ে ফেলত। নারিন নামে দেশের মধ্যাঞ্চলে এক এলাকায় চার বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। একইসঙ্গে খুন করা হয়েছিল তার সাত বছরের ভাই এবং তাদের দাদীকে। একথা সত্যি যে নির্যাতন, সহিংসতা আর দুর্ঘটনার শিকার শুধু অভিবাসী পরিবারের সদস্যরাই হয় না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাবামার অনুপস্থিতি শিশুদের অবস্থা অনেক বেশি নাজুক করে তোলে। সমাজবিজ্ঞানী গুলনারা ইব্রাইভা বলছেন কাজের সন্ধানে বিদেশ যাওয়াটা যে পরিবারের জন্য একটা নেতিবাচক বিষয় এমনটা নয়। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে অভিবাসী কর্মী হয়ে যারা বিদেশে কাজ করতে যান, সেইসব দেশ অভিবাসীরা ছেলেপুলে সঙ্গে নিয়ে যাক সেটা চায় না। ''এমনকী বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় স্বামী ও স্ত্রীকে আলাদা থাকতে হচ্ছে। অন্যান্য অভিবাসী শ্রমিকদের সাথে, কর্মস্থলের কাছাকাছি। ফলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যেও দেখা-সাক্ষাতের সুযোগও খুবই কম থাকে,'' বলছেন ইব্রাইভা। ''উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন" ঝাযগুল মাদাগাজিমোভের বয়স এখন ২৯। তার মা কাজ করতে রাশিয়া চলে যান যখন তার বয়স ১৩। কিরঘিজস্তানের অভিবাসী কর্মীদের প্রায় ৪৫ শাতংশই নারী। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওম বলছে নারী অভিবাসী কর্মীরা নির্যাতন সহিংসতার শিকার হন বেশি এবং সামাজিকভাবে তাদের একঘরে হয়ে পড়ার প্রবণতা পুরুষ কর্মীদের তুলনায় বেশি। এটা যে শুধু তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে ঘটে তাই নয়, তাদের পরিবার ও সন্তানদের ক্ষেত্রেও এটা বেশি ঘটে থাকে। মা চলে যাবার পর ঝাযগুলের ওপর ঘরের সব কাজকর্মের দায়িত্ব এসে পড়ে। তিন বছর পর, তার বাবাও চলে যায় দেশের বাইরে। এর বছর দশেক পর তারা ফিরে আসেন। তারা বিদেশে যে রোজগার করেছিলেন তা দিয়ে তারা ঋন শোধ করেন, তাদের বাড়ি তৈরি করেন এবং ওই অর্থ দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করান। তাদের গল্পটা সাফল্যের হলেও তারা সন্তানদের বেড়ে ওঠার মুহূর্তগুলো হারিয়েছেন যা আর ফিরে পাওয়া যায় না। ঝাযগুল তার বাপমাকে দোষারোপ করেন না। সে জানে তাদের আর কোন উপায় ছিল না। ওটাই ছিল বেঁচে থাকার একমাত্র পথ। ''সব অভিবাসীই 'উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন' দেখে- তারা স্বপ্ন দেখে নিজেদের বাড়ি হবে, গাড়ি হবে, বিয়ে হবে, সন্তান হবে। ধূমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে, সন্তানদের ভাল স্কুলে পড়াবে,'' বলছেন তিনি। ''কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হতে বেশিরভাগ সময়ই গড়িয়ে যায় বছরের পর বছর, যখন লক্ষ্য অর্জন হয় তখন তারা দেখে সন্তানরা শৈশব, কৈশোর পার হয়ে প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছে গেছে। হারিয়ে যায় জীবনের অমূল্য বছরগুলো।''
গত বছর বসন্তকালে কানিবেক এবং তার স্ত্রী নুরসুলু উত্তর কিরঘিজস্তানে তাদের গ্রাম গ্রিগোরিয়েফকা ছেড়ে রাশিয়া গিয়েছিলেন কাজের খোঁজে। তাদের পরিকল্পনাটা ছিল সাদামাটা: সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করা এবং গ্রামে তাদের বাড়ির নির্মাণকাজটা শেষ করা। তাদের চার সন্তানের বয়স ছিল চার, পাঁচ, আট এবং এগারো। বাচ্চাদের তারা রেখে যান তাদের ৫৪ বছর বয়সী দাদীর কাছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করে চমক সৃষ্টি করে টুইটার সাম্প্রতিককালে অনেকেই হয়তো বন্ধু বা পরিচিতজনদের এমন কথা বলেছেন, বা অন্যদের বলতে শুনেছেন। এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই। কারণ আজকাল রাজনীতিই হোক, বা সামাজিক-সাংস্কৃতিক কোন প্রসঙ্গ বা ঘটনাই হোক, তা নিয়ে মানুষজনের মধ্যে যে আলোচনা-বিতর্ক হয় - যাকে বলে 'পাবলিক ডিসকাশন' - তার অনেকখানিই হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোয়। একটা সময় ছিল, যখন এই পাবলিক ডিসকাশন হতো বাড়ির বৈঠকখানায়, চায়ের দোকানে, সভা-সমিতিতে, টিভিতে বা সংবাদপত্রের পাতায়। কিন্তু এখন সামাজিক মাধ্যমগুলোই যেন হয়ে উঠেছে খবর বিনিময়ের প্রধান জায়গা, আলোচনা-বিতর্ক-মতবিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম । যা প্রকাশ্যে বলা যায় না, পত্রিকায় লেখা যায় না, অনেকে তাও বলছেন-লিখছেন এই সামাজিক মাধ্যমে - প্রায় অবাধে। ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রাম-স্ন্যাপচ্যাট-ইউটিউব-গুগল-আমাজনের মত টেক জায়ান্টদের জন্য এই দুনিয়াজোড়া জনপ্রিয়তা বয়ে এনেছে বিপুল অর্থ - আর ক্ষমতা। সেই ক্ষমতার একটা প্রদর্শনী হয়ে গেল সম্প্রতি, যখন ফেসবুক, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট ও ইনস্টাগ্রাম নিষিদ্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে- যাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। গত ৬ই জানুয়ারি ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল হিলে হামলায় উস্কানি দেবার পর এসব নিষেধাজ্ঞা ট্রাম্পের সমালোচকদের উল্লসিত করেছে। অনেকে বলেছেন - যাক, যেসব সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এতদিন ভুয়া খবর আর উগ্র-ডানপন্থী প্রচারণা ঠেকাতে প্রায় কিছুই করেনি, এতদিনে তারা কিছু একটা করে দেখিয়েছে। ট্রাম্পের সমর্থকরা এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন, বলাই বাহুল্য। কিন্তু অন্য অনেককে ব্যাপারটা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তারা প্রশ্ন করছেন, সামাজিক মাধ্যম যদি এভাবে নিয়ন্ত্রকের ভুমিকা নিতে শুরু করে - তাহলে এর শেষ কোথায়? ফেসবুক কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে, হোয়াটস্অ্যাপ ব্যবহারকারীদের কিছু তথ্য শেয়ার করতে হবে। 'প্রবলেম্যাটিক' বিশেষ করে ইউরোপের নেতারা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমগুলো যেভাবে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করেছে তা সমস্যাজনক (প্রব্লেম্যাটিক)। এদের মধ্যে জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মার্কেলও আছেন - যার সাথে মি. ট্রাম্পের সম্পর্ক খুবই শীতল। কিন্তু এ বিষয়ে তার উক্তি সবার নজর কেড়েছে। চ্যান্সেলর এ্যাঙ্গেলা মার্কেলের মুখপাত্র বলেছেন, "মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার । এতে হস্তক্ষেপ করতে হলে তা করতে হবে আইনপ্রণেতাদের তৈরি আইন ও কাঠামোর ভেতর দিয়ে, কোন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত দিয়ে নয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করাটা সমস্যাজনক।" ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কমিশনার থিয়েরি ব্রেতঁ ক্যাপিটল হিলের ঘটনাকে 'সামাজিক মাধ্যমের জন্য ৯/১১র মুহূর্ত' বলে বর্ণনা করে বলেছেন, "একজন সিইও যদি কোন রকমের যাচাই-বাছাই ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের লাউডস্পিকার বন্ধ করে দিতে পারে - তাহলে এটা হতবুদ্ধি হবার মতো ব্যাপারই বটে।" যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমগুলো এখন "সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে" এবং "কে কথা বলতে পারবে, আর কে পারবেনা - সেটা ঠিক করে দিচ্ছে।" রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক এবং বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ আলেক্সেই নাভালনি টুইটারের মি. ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করাকে রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপের সাথে তুলনা করেছেন। এক টুইটে তিনি বলেন, "এটা ঠিক যে টুইটার একটি প্রাইভেট কোম্পানি, কিন্তু আমরা তো রাশিয়া আর চীনে দেখছি - কিভাবে এইসব প্রাইভেট কোম্পানিগুলো সেন্সরশিপের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে।" বন্ধ হবার পর ট্রাম্পের টুইটার পাতা দি ইকনোমিস্ট সাময়িকী 'বিগ টেক অ্যান্ড সেন্সরশিপ' নামে এক নিবন্ধে মন্তব্য করেছে, সিলিকন ভ্যালির অনির্বাচিত কিছু নির্বাহীর হাতে বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকা উচিৎ নয়। টুইটারের প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডর্সি নিজে অবশ্য বলেছেন, ট্রাম্পকে ব্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি উল্লাস বা গর্ব বোধ করেননি। তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে ইন্টারনেটকে মুক্ত ও স্বাধীন রাখার ওপর এ পদক্ষেপ একটা "বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত" হয়ে দাঁড়াতে পারে। কত ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছে এই 'বিগ টেক'-রা এটা বোঝানোর জন্য একটি ঘটনাই যথেষ্ট। পার্লার নামে একটি অ্যাপ যা সম্প্রতি টুইটার থেকে বহিষ্কৃত হওয়া ডানপন্থীদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় বিকল্প হয়ে উঠছিল, তাকে কীভাবে এক মুহূর্তে নেই করে দেয় আমাজন - সেই ঘটনাটির কথাই বলছি। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিল টুইটার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে হঠাৎ তুরস্কের 'বিপ' অ্যাপ ডাউনলোডের হিড়িক পার্লার এ্যাপটি উগ্র দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম ওয়েবসাইট হোস্টিং প্রোভাইডার হচ্ছে আমাজনের ওয়েব সার্ভিস বা এডব্লিউএস। এটিই ব্যবহার করতো এই পার্লার। তাদের বিরুদ্ধে সহিংস কন্টেন্ট প্রকাশ করার অভিযোগ আনে আমাজন , নোটিশ দিয়ে দেয় যে আমাজন আর তাদের হোস্ট করবে না এবং ১১ই জানুয়ারি সোমবার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সময় বেলা ১১টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে তাদের নতুন একজন হোস্ট খুঁজে নিতে হবে। ওই সময়সীমা পার হবার ১০ মিনিটের মধ্যেই সারা পৃথিবীব্যাপি ইন্টারনেট থেকে উধাও হয়ে যায় পার্লার। এটা ছিল সামাজিক মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে 'উৎখাৎ' করার জন্য মার্কিন টেক জায়ান্টগুলোর প্রয়াসের একটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। গুগল ও অ্যাপলও তাদের অ্যাপ স্টোর থেকে পার্লারকে বাদ দিয়ে দেয়। প্রযুক্তি ও নৈতিকতা সংক্রান্ত গবেষক স্টেফানি হেয়ার বলছেন, একই ধরণের কারণে বড় মার্কিন টেক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোন ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেবার ঘটনা অবশ্য এটাই প্রথম নয়। ২০১৭ সালে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ওয়েবসাইট দি ডেইলি স্টর্মার এবং ২০১৯ সালে এইট-চ্যানকেও এভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। গ্যাব নামে একটি উগ্র ডানপন্থী অ্যাপকেও এর আগে অ্যাপ স্টোরগুলো নিষিদ্ধ করেছিল। আর সম্প্রতি টেক জায়ান্টগুলোর এধরণের পদক্ষেপ নেবার অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২০-এ 'ভোট চুরি হয়েছে' এমন প্রমাণবিহীন দাবি করে যত কন্টেন্ট ছড়িয়েছে - তার সবই মুছে দিয়েছে ফেসবুক। টুইটার সম্প্রতি কিউএ্যানন নামে একটি ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব গোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৭০ হাজার এ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করেছে। ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করেছে টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ও টুইচ। ইউটিউব ট্রাম্পের কিছু ভিডিও মুছে দিয়ে বলেছে, তারা মি. ট্রাম্পের চ্যানেলটিকে 'কার্যত শেষ সুযোগ দিচ্ছে'। টেক কোম্পানিগুলো কি জো বাইডেনকে খুশি করতে চাইছে? কেউ কেউ এ প্রশ্ন তুলেছেন, বড় বড় সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলো এটা করছে কী উদ্দেশ্যে? বিবিসির উত্তর আমেরিকা প্রযুক্তি সংবাদদাতা জেমস ক্লেটন বলছেন, সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলো খুব ভালোভাবেই জানে যে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বাস করেন বৃহৎ টেক কোম্পানিগুলো তাদের প্ল্যাটফর্মে ভুয়া খবর ও ঘৃণাসূচক বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি - যদিও এমন কথা বলাটা একটু সন্দেহবাদীর মত শোনাতে পারে। আরো পড়তে পারেন: সোশ্যাল মিডিয়া কি বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছে? ট্রাম্পকে রাজনীতি থেকে চিরতরে নিষিদ্ধ করা আদৌ কতটা সম্ভব? ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডব এবং 'ব্র্যাণ্ড আমেরিকার' সর্বনাশ ট্রাম্প সমর্থক ও ডানপন্থীরা 'সশস্ত্র বিক্ষোভের' পরিকল্পনা করছে ৬ই জানুয়ারি কিউএ্যানন সহ ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর ক্যাপিটল ভবনে হামলার পেছনে ট্রাম্পের উস্কানিকে দায়ী করা হয় ৩রা নভেম্বরের নির্বাচনের আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বেশ কিছু বিশ্লেষক বলেছিলেন, বড় বড় টেক কোম্পানিগুলো যদিও ট্রাম্পের সময় বিপুল মুনাফা করেছে - কিন্তু তারা সাধারণভাবে বাইডেনের বিজয়কে স্বাগত জানাবে। এর পেছনে বহুরকম কারণ ও হিসেব-নিকেশ তুলে ধরেছিলেন বিশ্লেষকরা। তবে মি. বাইডেন সামাজিক মাধ্যমগুলোয় অবাধে ভুয়া তথ্য ও ঘৃণা ছড়ানোর কড়া সমালোচক। তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ২৩০ ধারা নামে একটি আইন তিনি বিলোপ করতে চান - যাতে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টের জন্য দায়ী হতে হয়। জেমস ক্লেটন বলছেন, টেক কোম্পানিগুলো হয়তো এখন দেখাতে চাইছে যে তারা নিজেরাই তাদের প্ল্যাটফর্মে পাহারা বসানোর ক্ষমতা রাখে - এজন্য কোন কঠোর আইনী সংস্কার করার দরকার নেই। তিনি বলছেন, এটা দেখানোর জন্য মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর দায়ে ব্যবস্থা নেবার চাইতে ভালো পদক্ষেপ আর কী-ই বা হতে পারে? কীভাবে এর সূচনা হয়েছিল? বিবিসির সাইবার সংবাদদাতা জো টাইডি লিখেছেন, সামাজিক নেটওয়ার্কগুলো আসলে প্রাইভেট কোম্পানি এবং এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। "প্রাইভেট ক্লাব যেমন তার সদস্যদের জন্য নিজেদের মত নিয়মকানুন বানাতে পারে, ঠিক তেমনি ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ বা টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডর্সিরও সে ক্ষমতা আছে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া খবর ব্যাপকভাবে প্রচার হতে থাকে এখন পর্যন্ত তারা যে গুরুত্বপূর্ণ নিয়মটি করেছে তা হলো রাজনীতিবিদদের কনটেন্ট - যা সাধারণ মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ - তা বিবেচনায় নেয়া। এ ক্ষেত্রে তারা প্রথমদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের খানিকটা সুবিধা দিচ্ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর ইন্টারনেটে এ নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়াতে থাকায় পরিস্থিতিটা বদলে গেল। মার্চ মাসে কোভিড-১৯ নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জন্য ফেসবুক ও টুইটার - ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো এবং ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পোস্ট মুছে দেয়। মে মাসে 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' বিক্ষোভের সময় থেকে টুইটার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্যর সাথে সতর্কতামূলক বার্তা জুড়ে দিতে থাকে। এ ছাড়া, অতি সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করার পর গত সোমবারই ফেসবুক ঘোষণা করেছে যে তাো উগান্ডার সরকারের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট কিছু অ্যাকাউন্ট মুছে দিয়েছে - কারণ এগুলোর দেশটির নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। এখন কি সারা বিশ্বেই টেক জায়ান্টদের এরকম পদক্ষেপ দেখা যাবে? কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, সাম্প্রতিক এ ঘটনাগুলো হয়তো বৈশ্বিক 'টার্নিং পয়েন্ট' হয়ে উঠতে পারে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সংক্রান্ত আইনজীবী এবং প্রযুক্তিবিদ হুইটনি মেরিল বলছেন, বৃহৎ টেক কোম্পানিগুলো যে তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ বা 'মডারেশনের' ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনছে - তারই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের মতে ট্রাম্পের শাসনকালে ইন্টারনেটে বিরামহীন ভুয়া খবর ও ডানপন্থী ঘৃণা ছড়ানোর ফলেই ৬ই জানুয়ারির ঘটনা ঘটতে পেরেছে টুইটারে নিষিদ্ধ হবার আগের কয়েক ঘন্টায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাকস্বাধীনতা "নিষিদ্ধ" করার জন্য ২৩০ ধারা নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আইনকে দোষারোপ করেন। এই আইনে সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোকে তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের পোস্টের জন্য দায়ী হওয়া থেকে কার্যত অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মি. ট্রাম্প এই আইনটি বিলোপ করার হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু অন্য অনেকে বলেন, সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোর এই সুরক্ষা তুলে দিলে বরং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষতি হবে। কারণ, তাহলে টেক কোম্পানিগুলো এখনকার চাইতেও বেশি কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য হবে। তবে, টেক কোম্পানিগুলোর ট্রাম্প-বিরোধী অবস্থানে যার খুশি হবারই কথা - সেই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিন্তু বলেছেন, তিনি এই আইনটি বিলোপ করতেই চান। কারণ তাহলে তার মতে সামাজিক মাধ্যমে কনটেন্টের মডারেশন বাড়বে এবং ফেইক নিউজ বা ভুয়া খবর ছড়ানো কমবে। তবে এমন বিশ্লেষকও আছেন যারা মনে করেন, মি. বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়ে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করবেন এমন ধারণা ভুলও হতে পারে। ফেক নিউজ: ট্রলিং যেভাবে কাজ করে
"ও, আপনি বুঝি ব্যাপারটা জানেন না? এটা নিয়ে তো ক'দিন ধরেই ফেসবুকে খুব কথাবার্তা হচ্ছে, দেখেননি?"
আলজেরিয়ার স্বাধীনতার নেতা বেল বেল্লাকে গ্রেপ্তার করছে ফরাসী সৈন্যরা, আলজিয়ার্স, ১৯৫৬সাল। রাবাত থেকে তিউনিস যাওয়ার পথে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে একটি যাত্রী বিমান জোর করে নামিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের কজন নেতাকে আটক করতে ফ্রান্স যুদ্ধ বিমান পাঠিয়ে জোর করে একটি যাত্রী বিমানকে অবতরণ করিয়েছিল। ১৯৫৬ সালে ২২শে অক্টোবর আলজেরিয়ার স্বাধীনতাকামী এফএলএন-এর পাঁচজন নেতা - যাদের মধ্যে স্বাধীন আলজেরিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট নেতা আহমেদ বেন বেল্লাও ছিলেন - আঞ্চলিক একটি সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি একটি যাত্রী বিমানে চড়ে মরক্কোর রাজধানী রাবাত থেকে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে যাচ্ছিলেন । ফরাসী গোয়েন্দা বিভাগ খবরটি জেনে গিয়েছিল। যুদ্ধ বিমান পাঠিয়ে মাঝ আকাশে মরক্কোর বিমানটিকে জোর করে আলজেরিয়ার একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে নামানো হয়। আলজেরিয়া তখন ফরাসী উপনিবেশ। আলজেরীয় রাজনীতিকদের ধরতে বিমান অপহরণের এই ঘটনায় প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল মরক্কো এবং তিউনিসিয়া। ফ্রান্সের কোনো শাস্তি তাতে হয়নি। লেবানিজ বিমান ইসরায়েলে অবতরণ যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে জোর করে একটি যাত্রী বিমানকে অবতরণ করার দ্বিতীয় বড় ঘটনাটির হোতা ছিল ইসরায়েল। ১৯৭৩ সালের ১১ই অগাস্ট লেবাননের বইরুত বিমান বন্দর থেকে ইরাকি এয়ারলাইন্সের ভাড়া একটি লেবানিজ বিমান ৮১ জন যাত্রী নিয়ে ওড়ার কিছুক্ষণ পরই ইসরায়েলের দুটো যুদ্ধ বিমান লেবাননের আকাশ সীমায় বিমানটিকে জোর করে ইসরায়েলি শহর হাইফার কাছে একটি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করায়। আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনি গেরিলা নেতা জর্জ হাবাশ। তাকে ধরার জন্য ইসরায়েল ১৯৭৩ সালে একটি লেবানিজ যাত্রী বিমানকে জোর করে অবতরণ করিয়েছিল ইসরায়েল খোলাখুলি বলেছিল ফিলিস্তিনি গেরিলা নেতা জর্জ হাবাশকে ধরার জন্য তারা এটি করেছে। তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে দায়ান বলেন, সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী পপুলার ফ্রন্ট ফর দি লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএফপি) নেতা জর্জ হাবাশকে ধরতে বইরুত থেকে বাগদাদ-গামী বিমানটিকে হাইফাতে নামানো হয়েছিল। তবে জর্জ হাবাশকে ইসরায়েল পায়নি, কারণ ঐ বিমানে তার বাগদাদ যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি এবং তার ডেপুটি সালাহ সালাহ শেষ মুহূর্তে যাত্রা বাতিল করেছিলেন যে খবর ইসরায়েলিরা তখনও পায়নি। ইরাকি এয়ারওয়েজের মূল বিমানটি বৈরুতে পৌঁছুতে দেরি হওয়ায় লেবানিজ বিমানটি ভাড়া করা হয় - যে ঘটনায় মি হাবাশ হয়তো সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন। বিমানের লেবানিজ ক্যাপ্টেন জর্জ মাত্তা ইসরায়েলিদের নির্দেশ মেনে বিমানটি হাইফার বিমান ঘাঁটিতে নামান। অবতরণের পর বন্দুকের মুখে বিমানের ৭৪ জন যাত্রী এবং সাতজন ক্রুকে নামিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দু ঘণ্টা পর বিমান ও সেটির যাত্রীদের আবারো ওড়ার অনুমতি দেয় ইসরায়েল। পরে যাত্রীরা সাংবাদিকদের জানান, বিমানের ভেতর তল্লাশির সময় ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের কাছে কিছু নামের তালিকা এবং ছবি ছিল। যাত্রীদের ভেতরে ছিলেন ইরাকি পরিকল্পনা মন্ত্রী জাওয়াদ হাশেম। তিনি পরে বলেন, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা জানতে চাইছিল যাত্রীদের মধ্যে কোনো ফিলিস্তিনি রয়েছে কিনা। “তারা আমাকেও জিজ্ঞেস করেছিল আমি কোনো গেরিলা কিনা।“ ঐ বিমানে যাত্রীদের সিংহভাগই ছিলেন লেবানিজ এবং ইরাকি। ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিল বিশেষ করে লেবানন। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তারা ‘বিমান দস্যুতার‘ অভিযোগ আনে। ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপর দাবি জানায়। লেবাননের তখনকার তথ্যমন্ত্রী ফাহমি শাহিন তখন বলেছিলেন নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের সাথে এর প্রতিকার নিয়ে তারা কথা বলছেন। ঘটনার পরদিনই বৈরুতে সমস্ত বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশ্যে লেবানন সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদ লিপি পাঠানো হয়েছিল যেখানে বলা হয়, “গতরাতে যেভাবে একটি যাত্রী-বিমান ইসরায়েল জোর করে অবতরণ করিয়েছে সেটি “কোনা রাষ্ট্রের আচরণ নয়, বরঞ্চ গুন্ডাগিরি।“ ইসরায়েলকে বয়কট করার জন্য আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশনের কাছে আবেদন করে লেবানন। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সরকার ইরাকি এয়ারলাইন্সের ভাড়া করা লেবানিজ বিমানটিকে জোর করে অবতরণের কঠোর নিন্দা করেছিল তখন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছিলেন বিমানটিকে জোর করে নামিয়ে লেবাননের সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। অস্ট্রিয়ার বিমানবন্দরে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট এভো মোরালেসকে বহনকারী বিমান, ২০১৩ সাল। বলিভিয়া অভিযোগ করে এডওয়ার্ড স্নোডেনকে আটক করতে আমেরিকার নির্দেশে মস্কো থেকে ফেরার পথে বিমানটিকে অস্ট্রিয়ায় নামতে বাধ্য করা হয়েছিল হয়েছিল বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের ফ্লাইট ‘অপহরণ‘ লেবানিজ বিমান জবরদস্তি করে অবতরণ করানোর ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সে সময় ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের নিন্দা করলেও ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টকে বহনকারী একটি বিমান অন্য দেশে অবতরণে বাধ্য করা এবং তার ভেতর তল্লাশির অভিযোগ ওঠে। ২০১৩ সালের দোশরা জুলাই বলিভিয়ার সরকার জাতিসংঘের কাছে অভিযোগ করে যে তাদের প্রেসিডেন্ট এভো মোরালেসকে ‘অপহরণ‘ করতে তাকে বহনকারী বিমানটিকে জোর করে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অবতরণ করা হয়েছে। প্রচণ্ড হৈচৈ হয়েছিল প্রায় আট বছর আগের বিরল ঐ ঘটনা নিয়ে। বারাক ওবামা তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এবং তার প্রশাসনকেই এর জন্য দায়ী করে বলিভিয়া এবং তার প্রতিবেশীরা। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট দেশে ফিরছিলেন মস্কোতে জ্বালানি গ্যাস রপ্তানিকারকদের এক সম্মেলন শেষ করে দেশে ফিরছিলেন। আগের দিন পহেলা জুলাই (২০১৩ সাল) তিনি রুশ টিভি চ্যানেল আরটিতে একটি সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দেন শিয়ায় আশ্রয় নেয়া আমেরিকান সাংবাদিক এডওয়ার্ড স্নেডেনকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে তার দেশ প্রস্তুত। পরের দিন যখন প্রেসিডেন্ট মোরালেসের ডাসল্ট ফ্যালকন ৯০০ বিমান রাশিয়ার নুকোভা বিমানবন্দর থেকে উড়ে পোল্যান্ড এবং চেক রিপাবলিকের ওপর দিয়ে উড়ে যখন অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জরুরী অবতরণ করে তখন তা নিয়ে বিস্ময় তৈরি হয়। বলিভিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে তখন বলা হয় যে ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল এবং ইটালি তাদের আকাশ-সীমায় তাদের প্রেসিডেন্টের বিমানটিকে ঢুকতে দিতে অস্বীকার করায় বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন পাইলট।বিমানটির গতিপথ বার বার বদলাতে গিয়ে জ্বালানি তেলের স্বল্পতা তৈরি হয়। পরে বিমানটিকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার বিমানবন্দরে নামে। বলিভিয়া পরে অভিযোগ করে, পরিকল্পনা করেই বিমানটিকে ভিয়েনায় নামতে বাধ্য করা হয়েছিল। অস্ট্রিয়ার তৎকালীন ডেপুটি চ্যান্সেলর মাইকেল স্পিনডেলেগার তখন বলেছিলেন বলিভিয়ার বিমানটির ভেতরে ঢুকে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছিল। খুবই স্পষ্ট ছিল যে অস্ট্রিয়ার পুলিশ সেদিন মি স্নোনেডেনের খোঁজ করেছিল। ফ্রান্স, স্পেন এবং ইটালি সেদিন তাৎক্ষণিক-ভাবে বলিভিয়ার বিমানটিকে তাদের আকাশ সীমায় ঢুকতে না দেয়ার কারণ হিসাবে ‘কারিগরি“ সমস্যার যুক্তি দিয়েছিল। কিন্তু বলিভিয়া সবসময় বলেছে ওগুলো ছিল ষড়যন্ত্রের অংশ। পরে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে গার্সিয়া মারগারো স্বীকার করেছিলেন তাদেরকে বলা হয়েছিল বলিভিয়ার বিমানে এডওয়ার্ড স্নেডেন রয়েছেন, কিন্তু তাদেরকে এই তথ্য দিয়েছিল তা তিনি প্রকাশ করেননি। বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্ট মোরালেসের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন সে সময়কার অস্ট্রিয়ান প্রেসিডেন্ট হেইঞ্জ ফিশার। বিমানটির ভেতরে বসে তারা একসাথে নাস্তা করেছিলেন। এডওয়ার্ড স্নেডেন বিমানে নেই তা নিশ্চিত করার পর বিমানটিকে যাত্রা শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়। ভিয়েনার বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট এভো মোরালেস, ২০১৩ সাল, জুলাই ৩। মস্কো থেকে ফেরার পথে ইউরোপের কয়েকটি দেশ বিমানটিকে তাদের আকাশপথে ঢুকতে না দেয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে বিমানটি অস্ট্রিয়ার রাজধানীতে জরুরী অবতরণ করে। গোপন তথ্য ফাঁস করে রাশিয়ায় আশ্রয় নেওয়া মার্কিন সাংবাদিক এডওয়ার্ড স্নোডেনের খোঁজে বিমানে তল্লাশি চালানো হয়েছিল বলিভিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার আরো ছটি দেশ - আর্জেন্টিনা, কিউবা, একুয়েডর, নিকারাগুয়া, উরুগুয়ে এবং ভেনিজুয়েলা- জাতিসংঘের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায়। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “একজন রাষ্ট্রপ্রধান এবং তার বিমান নিয়ে এমন আচরণ আইন বিরুদ্ধ।“ঘটনার পরপরই ফ্রান্স দুঃখ প্রকাশ করে। কয়েক সপ্তাহ পর বলিভিয়ায় স্পেনের রাষ্ট্রদূত দুঃখ প্রকাশ করেন। ইটালি এবং পর্তুগাল ঘটনার ব্যাপারে তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছিল বলিভিয়ার সরকারের কাছে। যুক্তরাষ্ট্র কলকাঠি নেড়েছে? যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ বা অনুরোধেই যে প্রেসিডেন্ট মোরালেসের বিমানটিতে অবতরণে কার্যত বাধ্য করা হয়েছিল তা নিয়ে তেমন সন্দেহ কারোরই তখন ছিলনা। নাটকীয় এই ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ৩রা জুলাই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তৎকালীন মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, মি স্নোডেনের খবর জানার জন্য তারা বিশ্বের অনেক দেশের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। ঘটনার দিনই বলিভিয়া অস্ট্রিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের প্রেসিডেন্টকে “অপহরণের“ অভিযোগ এনেছিল। জাতিসংঘে বলিভিয়ার রাষ্ট্রদূত সাচা লরেন্টি সোলিজ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “ একজন প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় সফর থেকে ফেরার পথে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই হোয়াইট হাউজের নির্দেশেই এটা হয়েছে।“
মাঝ আকাশে ভিন্ন একটি দেশের যাত্রী বিমানের সাথে দস্যুর মত আচরণ প্রথম করেছিল ফ্রান্স ১৯৫৬ সালে।
মানুষে মানুষে মতবিরোধ করা কোন সমস্যা নয়। জমকাল পাবলিক বক্তৃতা বা গণ-আলোচনা দিন দিন কলহপূর্ণ, বিদ্রূপাত্মক হয়ে উঠছে। যেখানে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব দেখা যায়। আমরা মানুষের সাথে এখন আর আইডিয়া নিয়ে লড়াই করছি না বরং প্রায়শই একে অপরকে অপমানের খেলায় মেতে উঠছি। তবে আমরা কীভাবে এই খেলাকে আরও উন্নত করতে পারি? ডগলাস আলেকজান্ডার তার লেখা 'আ গাইড টু ডিজঅ্যাগ্রি বেটার' (আরও ভালভাবে মতবিরোধের নিয়ম) বইটিতে এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, জ্ঞান, শতভাগ সততা, প্রচণ্ড ঘনিষ্ঠতা এবং খোলামেলা হওয়া প্রয়োজন। সুতরাং, কথায় যাচ্ছে-তাই বলা কমিয়ে দিন, মানুষকে অপমান করার ওপর লাগাম টানুন এবং কীভাবে বিবাদমান না হয়েই দ্বিমত পোষণ করবেন সে সম্পর্কে কিছু টিপস জেনে নিন। আমরা যদি সবাই একইরকম ভাবি তাহলে এই পৃথিবীটা কি একঘেয়ে হয়ে উঠবে না? ১. আপনার একমত হতে হবে না "প্রথম ধাপ হল, একমত না হওয়া", এমনটাই বলেছেন হার্ভার্ডের অধ্যাপক আর্থার ব্রুকস। তিনি তার লেখা, "লাভ ইওর এনিমিজ" (আপনার শত্রুদের ভালবাসুন) বইতে এটাই লিখেছেন। "এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা সব বিষয়ে একমত হই না এবং যদি সব সময় ওই বিষয়ে আমাদের দ্বিমত থাকে, সেটাও পুরোপুরি ঠিক আছে।" আর্থার বলেন। "আমরা যদি চিন্তা-ভাবনার স্বাধীনতাকে ভালবাসি তাহলে আমাদের এমন মানুষদের দরকার যারা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। আমরা যদি সবাই একইরকম ভাবি তাহলে এই পৃথিবীটা কি একঘেয়ে হয়ে উঠবে না? তাই মনে রাখতে হবে যে, নিজের মধ্যে মতবিরোধ করা কোন সমস্যা নয়, আমরা এটি এভাবেই করি।" ২. মাঝামাঝি কোন মতে পৌঁছানোর লক্ষ্য রাখবেন না কোন ঝগড়াঝাঁটি ছাড়া দ্বিমত পোষণ করার জন্য যে সমঝোতাই করতে হবে, বিষয়টা এমন নয়। কখনও মাঝামাঝি কোন মতে পৌঁছানোর লক্ষ্য রাখবেন না- যখন আপনি কোন বিষয়ে মৌলিকভাবে একমত হতে পারছেন না তখন মতপার্থক্যকে আলাদা করা কোন সমাধান নয়। বরং, একটি সাধারণ অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয় - তাই পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও অভিজ্ঞতা, আবেগ বা প্রত্যাশা ভাগ করে নেওয়াই ভাল। আমরা মাঝে মাঝে এমনভাবে কথা বলি যে আরেকজনের মতামতকে উপেক্ষা করে চলি। ৩. আপনি কি বলছেন, তার চেয়ে জরুরি আপনি কীভাবে বলছেন: এস্থার পেরেল আমেরিকার অন্যতম প্রধান কাপল কাউন্সিলর বা যুগল পরামর্শদাতা। তিনি এমন অসংখ্য নারী ও পুরুষের কথা জানেন যারা খুব খারাপভাবে দ্বিমত পোষণ করে। "আপনি কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন তার চাইতে অনেক বেশি জরুরি আপনি সেই বিষয়টি নিয়ে কীভাবে কথা বলছেন"," এস্থার বলেন। "যদি আমরা এমনভাবে কথা বলি যার মাধ্যমে একজন আরেকজনকে সবসময় বাদ দিয়ে দিচ্ছি, ছোট করে ফেলছি তাহলে সেটা, টাকা পয়সা, বাচ্চাকাচ্চা, যৌনতা বা বৈশ্বিক পরিস্থিতি যে বিষয়েই কথা হোক না কেন, সেটা বিষয় না। কথা বলার এই বিষয়গুলো অপ্রাসঙ্গিক। এর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হল এই কথাগুলো প্রকাশের জন্য আমরা কতোটা প্রগতিশীল"। আরো পড়তে পারেন: কেন রোগীকে সারারাত জেগে থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা মানসিক রোগীকে কীভাবে সাহায্য করতে পারেন 'আমার বান্ধবী চায়না আমি তাকে নগ্ন অবস্থায় দেখি' এস্থার পেরেল, আমেরিকার একজন অন্যতম প্রধান কাপল কাউন্সিলর বা যুগল পরামর্শদাতা। ৪. সত্য কথা বলুন ঘনিষ্ঠতা অর্জনের জন্য, অর্থপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করুন। যার সাথে আপনার মতের মিল নেই তার সাথেও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকুন। সম্পূর্ণ সৎ থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। ফিওনা হলেন ডেরির বাসিন্দা, ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তার ভাইকে গুলি করে হত্যা করেছিল। অথচ তিনি সততার সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে এক প্রাক্তন সৈনিকের সাথে দৃঢ় বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পেরেছিলেন, অনেক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও। ওই সৈনিক তার ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনার সময়ে দায়িত্বে ছিলেন। "সৎ ও খোলামেলা কথোপকথন কখনও কখনও অনেক নির্মম ও অস্বস্তিকর হলেও এটা করতে হবে, "অন্যথায়, আপনি কেবল একটা জায়গায় আটকে থাকবেন। " ফিয়োনা বলেন। " ডগলাস এ ব্যাপারে একমত পোষণ করে বলেছেন; মতবিরোধ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে: "যে সমাজ ন্যায়বিচার এবং সততার উপরে সভ্যতা, ভদ্রতা বা সৌজন্যতাকে মূল্য দেয়, তাহলে সেটা একটি স্থবির সমাজের উদাহরণ হতে পারে।" সত্য কথা বলুন। সভ্যতা, সৌজন্যতা বা শিষ্টাচার ভাল, তবে প্রচণ্ড সততা এর চাইতে শক্তিশালী ভিত্তি। দ্বন্দ্ব এড়াতে সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন। ৫. মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং সহানুভূতিশীল হওয়ার চেষ্টা করুন সৎ কথোপকথন মানে সত্য কথা বলা এবং অপরজন কি বলছে সেটা আন্তরিকভাবে শোনা। যুগলদের থেরাপিস্ট এস্থার বলেছেন, "অপরজন যা বলছে তা গ্রহণ করার ইচ্ছাই আসলে সব" তিনি একে "ভয়ানক ঘনিষ্ঠতা" হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এর বিপরীতে রয়েছে কেবল যুদ্ধ, তিনি বলেন। আপনি নিজেকে অন্য ব্যক্তির উপরে রাখতে চান - এবং তারা যা কিছু বলেছে তার সাথে এক সেকেন্ডের জন্য নিজেকে মেলানোর চেষ্টা করবেন না। অন্যের মতের সাথে নিজেকে এই মেলানোর বিষয়টি আমাদেরকে সহানুভূতির দিকে ঠেলে দেয়। কোনও অচলাবস্থায় পৌঁছানো রোধ করতে, কেবল মনোযোগ দিয়ে কথা শোনাই জরুরি না। আমাদের কৌতূহলী হতে হবে, খোলামেলা হতে হবে এবং সহানুভূতিশীল হওয়ার চেষ্টা করতে হবে, বলেন এস্থার। আপনি আপনার প্রতিপক্ষের জুতোয় নিজেকে দাঁড় করাতে পারেন এবং তার মতো করে বিষয়গুলো দেখতে পারেন। খেলার মাঠে বিরোধ একটি সাধারণ ঘটনা। ৬. বাকবিতণ্ডা কমিয়ে দিন এবং অপমানে লাগাম টানুন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো মানুষকে তাৎক্ষণিক অপমান করা খুব সহজ করে দিয়েছে। এবং এই হিংসাত্মক ভাষাগুলো বাস্তব দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে। এস্থার বলেন, "একে অপরের প্রতি ঘৃণা থেকে এই বাদানুবাদ হচ্ছে। এটি কেবলমাত্র অন্য ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত হওয়ার ব্যাপার নয়, বরং এই মানুষগুলো তাদের মতের বিরুদ্ধে বলা মানুষগুলোকে খাটো করে দেখছে।" ঘৃণা দেখানোর ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি তার প্রতিপক্ষের ধারণার চাইতে তার পরিচয়ের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়, এটি দ্বিমত পোষণ করার সবচেয়ে ক্ষতিকর উপায়। এটি কেবল অপ্রীতিকরই নয়, এটি গভীরভাবে অকার্যকরও বটে। অধ্যাপক আর্থার ব্রুকস বলেছেন, "ইতিহাসে কোন চুক্তি হওয়ার সময় কাউকেই অবমাননা করা হয়নি। এটি কেবল অন্য ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে আপনার বিরোধিতাকে আরও কঠোর করে। এর সমাধান চাইছেন? আর্থার বলেন, "এর সমাধান হল, আমাদের সবাইকে বাকবিতণ্ডায় জড়ানো কমিয়ে ফেলতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং রাজনীতিবিদদের টিটকারির মুখে পড়ে আমরা এমন মানুষ হয়ে উঠছি যা আমরা হতে চাই না। এমন হওয়া বন্ধ করুন। এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়ান।" অন্যের মতামত ভিন্ন হলেও তার প্রতি সম্মান দেখানো জরুরি। ৭. সত্য এবং মতামতের মধ্যে পার্থক্য বুঝুন আমাদের মতামত হল যার যার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি যা প্রমাণের বিরুদ্ধে পরীক্ষা করা হয় - এই মতামত কেবল আমাদের বিরোধীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তাক করা নয়। পালক মা ক্যাথিকে এলোমেলোভাবে সিটিজেনস অ্যাসেম্বলির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল যা আয়ারল্যান্ডের কঠোর গর্ভপাত আইন পরিবর্তন করার বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। সেখানে, তিনি তার চাইতে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষের সাথে এবং এসব বিষয়ে তথ্য দিতে পারদর্শী, এমন একাধিক বিশেষজ্ঞের সাথে সাক্ষাত করেন। ক্যাথি বলেন, "আমার জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা হল, আমার মতামত কেবল আমার মতামত, যদি না আপনি এটিকে একটি জ্ঞাত মতামত করার জন্য সময় এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে না যান, তবে এটি কেবল আপনার মতামত হয়ে থাকবে এবং একে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না।" কোথাও মতামত দেয়ার আগে সব সময় বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শের সন্ধান করুন। ৮. যান, ঝামেলা খুঁজে বের করুন আর্থার বলে, "যেকোন ক্ষেত্রে পারদর্শী হতে, মতবিরোধের সন্ধান করুন। আপনি যদি দ্বিমত প্রকাশের ক্ষেত্রে পটু না হন, তাহলে হয়তো আপনার বন্ধুচক্র এতোটা বিস্তৃত এবং বৈচিত্রময় নয়। যান, কাউকে খুঁজে বের করুন। তার কথা সমবেদনা সহকারে শুনুন, আপনার দৃষ্টিভঙ্গি তার সঙ্গে শেয়ার করুন এবং ভালবাসা প্রকাশ করুন"।
মতভেদ থাকা ভাল। কেননা, আমরা যদি সবাই একই মতের হই তবে পৃথিবীটা অনেক নিস্তেজ হয়ে পড়বে। কিন্তু এটাও ঠিক যে আমরা এখন নানা বিষয়ে গভীরভাবে বিভক্ত, এবং সেই বিভাজন দিন দিন অনেক কুৎসিত হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশে বাড্ডায় শিশু তানহাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর আবার আলোচনায় শিশু ধর্ষণ প্রসঙ্গ। সাম্প্রতিক সময়ে মেয়ে শিশু ধর্ষণের ঘটনা যেমন বেড়েছে, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে ছেলে শিশুরাও। পুলিশের ধারণা শিশুরা একশ্রেণীর মানুষের যৌন বিকৃতির টার্গেটে পরিণত হয়েছে। কেন বাড়ছে শিশু ধর্ষণের ঘটনা.. শিশু ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছেই ঘটনা ১ আট বছরের শিশু সামিয়াকে (প্রকৃত নাম ব্যবহার করা হচ্ছে না) ঘরে রেখে এলাকার পানির কল থেকে পানি আনতে গিয়েছিলেন তার মা। ঘিঞ্জি এলাকার খুপরি ঘরগুলো একটির সাথে আরেকটি লাগোয়া। মনের মাঝে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও শিশুকন্যাটিকে একাই রেখে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু ফিরে এসে মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তার মা। "তিন মাস আগে রাত নটার দিকে আমি পানি আনতে গেলাম। মেয়ে বলল সে একাই ঘরে থাকতে পারবে। এরপরে আমি পানি নিয়ে এসে দেখি আমার বাচ্চা ঘরে নাই। তখন ভাবলাম পাশের বাড়িতে যে পুরুষলোকটি বসা ছিল, সে কোথায় গেল? তখন আমি পাশের বাড়ির দরজা ধাক্কাই, কিন্তু কেউ খোলে না"। শিশুটির মা কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারেন তার মাত্র আট বছরের শিশুটিকে প্রতিবেশী বৃদ্ধ ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণের শিকার আট বছরের একটি শিশুর মা বলছিলেন তারা এখন সামাজিক হেনস্থার মধ্যে রয়েছেন। "কি হয়েছে বাচ্চাটা পুরোপুরি খুলে বলতে পারছে না। বলে মা দাদা আমার পাজামা খুলে দিয়েছে। নিজের কাপড় খুলেছে। আমি খেলতেছিলাম। মুখ চেপে ধরে নিয়ে গেছে। প্রতিবেশী তো । তাই দাদা ডাকতো"। জানান শিশুটির মা। 'জানুয়ারি থেকে জুলাই: ২৮০ শিশু ধর্ষণের শিকার' আড়াইশোর বেশি মানবাধিকার সংগঠনের জোট শিশু অধিকার ফোরামে বলছ, গত ৭ মাসে বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৮০ টি। শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুছ সহীদ মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন,গতবছর এই সংখ্যা ছিল ১৯৯টি। আর ২০১৩ সালে ১৭০টি এবং ২০১২ সালে ছিল ৮৬টি। এই সংখ্যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এর বাইরেও থাকতে পারে। ঘটনা ২ কিছুদিন আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার একটি আবাসিক মাদ্রাসার ছাত্রটি তার নিজের শিক্ষকের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠায় পুলিশ ওই শিক্ষককে আটক করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক মাদ্রাসা শিক্ষক নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তবে এই বিষয়টিতে ধর্ষণের শিকার ছেলেটির পরিবারের সদস্যরা প্রথমে উদ্যোগ নিলেও পরে আর মামলা করতে এগিয়ে আসেন নি বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন। পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনও লাভ হয়নি। বেশিরভাগ শিশু ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের ঘটনা এভাবেই আড়ালে থেকে যায় বলে উল্লেখ করছেন শিশু অধিকার ফোরামের আব্দুছ সহীদ মাহমুদ। তিনি জানান, মেয়ে শিশুদের পাশাপাশি ছেলে শিশু ধর্ষণের সংখ্যাও বাড়ছে। সেইসাথে ছেলে শিশুদের ধর্ষণের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্র এখন আরও বেড়েছে। "ছেলে এবং মেয়ের আনুপাতিক হিসাবে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের যৌন নির্যাতনের সংখ্যা বেশি। কিন্তু ছেলেদের ধর্ষণের ঘটনা আগে সীমিত ছিল। বোর্ডিং স্কুল বা মাদ্রাসায় হত। এখন সেই ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়েছে। লঞ্চ-ঘাটে, বাস টার্মিনালে কিংবা বিপণি বিতানে যেসব শ্রমজীবী শিশু থাকে কিংবা যারা পথশিুশ তারাও ধর্ষণের স্বীকার হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের দ্বারাও ধর্ষণের ঘটনা হচ্ছে। তবে সেগুলো চার দেয়ালের বাইরে আসে না"। এ ধরনের ঘটনা যে হালে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে তেমনটি বলতে রাজি নন অনেকেই। সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন বলছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ ধরনের ঘটনা বাড়ার পেছনে কাজ করছে। ঘটনা ৩ বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সদ্য স্নাতক শেষ করা রেজাউর রহমান (ছদ্মনাম)। খুব ছোটবেলায় কাছের একজন আত্মীয়ের দ্বারাই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। তিনি জানান, "তখন আমি ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ি। তো আমি আমার এক বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে বোনের দেবরের সাথে আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয়া হয়। তো রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়ার পর হঠাৎ খেয়াল করলাম সে তার পুরুষাঙ্গ দিয়ে আমার পশ্চাদ্দেশে গুঁতো দিচ্ছে। আমি উঠে কি হয়েছে জানতে চাইলে সে বলে তার হাত লেগেছে। এরপর আমি আবারও ঘুমিয়ে পড়লে সে একই কাজ আবার করে। এবং প্রায় সারারাতই সে এই কাজটি করে"। এরপরও আর দুয়েকবার এ ধরনের নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। রেজাউরের শিশুমনে বিষয়টি তৈরি করেছিল ভয় আর আতঙ্কের এক প্রতিক্রিয়া। সেই অনুভূতি তাকে আজও তাড়া করে। বিষয়টি এই প্রতিবেদক ছাড়া আর কারও কাছেই শেয়ার করতে পারেননি তিনি। সংখ্যা বাড়ছে নাকি খবর প্রকাশ হচ্ছে? নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্পের অধীনে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের সেবায় গঠিত সরকারের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে ২০০০ সাল থেকে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে প্রকল্পটির পরিচালক আবুল হোসেন বলছেন, নির্যাতনের ঘটনাগুলো আগের মতই ঘটে চলেছে। তবে তা প্রকাশ পাচ্ছে আগের তুলনায় বেশি। তিনি বলেন, আমাদের হিসেব মতে, সংখ্যা আসলে বাড়েনি, বরং মানুষের প্রকাশ বেড়েছে। সাম্প্রতিক কারণে মিডিয়ার কারণে খবরগুলো আসছে। বিষয়গুলো ঘটার সাথে সাথে মানুষ কমিউনিটিতে সেটা জানাচ্ছে"। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান শিশুদের ওপর নির্যাতন বাড়া কিংবা শিশু ধর্ষণ বাড়ার কারণ হিসেবে অনেকই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হচ্ছে, শিশুদের ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে । পুলিশ সদরদপ্তরের গণমাধ্যম বিভাগের এআইজি মোঃ নজরুল ইসলাম বলছেন, শিশুরা এখন একশ্রেণীর লোকের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, "এটা ঠিক শিশু ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। তারা শিশুদের নিয়ে পর্নোগ্রাফী তৈরি করছে। একশ্রেণীর মানুষ শিশুদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখছে। এতে অনেক ক্ষেত্রে পণোর্গ্রাফির প্রভাব রয়েছে। শিশুদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। নানা শ্রেণীর এবং বয়সের ব্যক্তিরা এটি করছে"। শিশুদের ওপর বল খাটানো বা প্রভাবিত করা, ভয় দেখানো সহজ হয়। ফলে সেই সুযোগটি নিচ্ছে অপরাধীরা। বিচারহীনতার সংস্কৃতি শিশুদের ওপর নির্যাতনের বিভিন্ন দিক নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন। তিনি বলছেন, মূলত দরিদ্র শ্রেণীর শিশুরা বাবা শ্রমজীবী বাবা-মায়েদের এবং তাদের অনুপস্থিতিতে এইসব শিশুদের দেখার কেউ থাকে না। আরেকটি গ্রুপ যারা নিজেরাই কর্মজীবী তারা, এবং গৃহকর্মীরা ধর্ষণের ঝুঁকিতে থাকছে বেশি। বাংলাদেশে পথবাসী, শ্রমজীবি এবং দরিদ্র শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে প্রায়ই, বলছেন গবেষকরা। তিনি বলছেন, অনেকে অজ্ঞতার কারণে আর বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অনেকেই আদালত বা পুলিশের দোড়গোড়ায়া পৌঁছাচ্ছেন না। ফলে এসব অপরাধ ঘটছেই। " অনেকে শিশু বা অভিভাবকই জানে না কোথায় অভিযোগ জানাতে হয়। আর অনেকে দেখছেন অনেক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে কিন্তু বিচার তো হচ্ছে না। বাইরে মিটমাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি শক্তিশালী হয়ে উঠছে। অনেক দেশে কিন্তু দ্রুত বিচার আইনে সাজা হয় এবং মানুষ তা দেখে সচেতন হয়"। অধ্যাপক নাসরীন বলছেন, শিশু মনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে। " ভবিষ্যৎ জীবনে তারও এ ধরনের অপরাধ কর্মে জড়ানোর আশংকা থাকে। এইসব শিশুরা স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন না । সেও অন্যের প্রতি এমন আচরণ করে"। বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা ধর্ষণের মামলা চলাকালীন বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতি এবং বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা আইনের আশ্রয় নিতে অনীহা তৈরি করে, বলছেন শিশু অধিকার কর্মীরা। ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে এসব প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে কি ভাবছে রাষ্ট্র? মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ তুলছেন, জামিন অযোগ্য অপরাধ হওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রে জামিন পেয়ে যাচ্ছে অভিযুক্তরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, অপরাধ করে সহজে জামিন পাওয়া গেলে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যায়। "অপরাধ করে সহজে জামিন পাওয়া গেলে হয়তো অপরাধের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তবে অপরাধী জামিন পাবে না -আইনজীবী হিসেবে তো সেটা বলা যায় না। সুতরাং শিশু ধর্ষণের ব্যাপারে যদি আলাদা সেল করা হয় , মামলার গতি তদারকি করা হয়, তাহলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটা কমতে পারে" । অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মনে করেন, এ ধরনের মামলার বিচারের দীর্ঘসুত্রতা দূর করতে উদ্যোগ নেয়া দরকার। ধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্য আইনের সাহায্য নিতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণের সন্নিবেশ ঘটাতে গিয়ে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়। বিষয়টি আরও সহজ করার যায় কি-না? অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে আইন সংশোধন করা যেতে পারে, যেখানে শিশু ভিকটিমকে আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিতে হবে না। " আইন সংশোধন করা যেতে পারে এভাবে যে, এক্সপার্টদের কাছে ভিকটিমকে নেয়া হবে। এরপর তারা রিপোর্ট দেবে। এরপর আর কোনও প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে না। ওই চিকিৎসকদের রিপোর্টের ভিত্তিতে চার্জশিট দেবে পুলিশ। চিকিৎসকদের সাথে মানবাধিকার কর্মীও থাকতে পারেন"। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। কিন্তু এমন অনেক নজির আছে যে বছরের পর বছর ধরে মামলা চলছে। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন শিশু অধিকার কর্মীরা। তবে এ বিষয়ে অ্যটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিচারক স্বল্পতা এখানে একটি সংকট হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া মামলা ঝুলিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ডিফেন্স ল ইয়ারের মানসিকতারও পরিবর্তন আনতে হবে। সামাজিক হেনস্থা শেষ করার আগে আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চাই মিরপুরের আট বছরের শিশুটির কথা। চলে আসবার আগে তার মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম শিশুটি এখন কেমন আছে? উত্তরে তিনি জানালেন, এই ঘটনার পর থেকে শিশুটি পুরুষ মানুষ দেখলেই আতঙ্কিত হয় পড়ছে। তার নিজের পিতাকেও সে সহ্য করতে পারছিল না। ধর্ষণকারী বর্তমানে কারাগারে আটক থাকলেও তার পরিবার বিষয়টি আপোষে মিটিয়ে ফেলতে চাপ দিচ্ছে। নির্যাতিত শিশুর পরিবারটি আপোষে রাজি নয় মোটেই। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পেলে আবার কোনও ক্ষতির মুখে পড়তে হয় কি-না সেই আশংকায় রয়েছে এই পরিবারটি। দেখা যাচ্ছে নির্যাতনের শিকার হয়েও সামাজিক হেনস্থার ভয়ে কোণঠাসা থাকছে নির্যাতিত শিশুটির পরিবারটিই ।
( এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটির জন্যে ইউনিসেফের মীনা পুরস্কার পেয়েছেন বিবিসি বাংলার শায়লা রুখসানা। রেডিও বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছে এই প্রতিবেদনটি। শিশুদের অধিকার বিষয়ক রিপোর্টিং-এর জন্যে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদনটি আবার প্রকাশ করা হলো। )
আপনি কি রঙ দেখতে পাচ্ছেন? মনে হতে পারে খুব সহজ একটা প্রশ্ন- টেনিস বল তো অবশ্যই হলুদ। কিন্তু কেউ কেউ আছেন যারা বলবেন এগুলো অবশ্যই সবুজ। এখানেই শেষ নয়। এমন লোকও আছে যারা বলবেন, এটা আসলে হলুদ এবং সবুজ- দুটোই। তাহলে প্রশ্ন হলো- টেনিস বল আসলেই কোন রঙের? সৌভাগ্য যে বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকা এই প্রশ্নের একটি উত্তর দিয়েছেন। সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সুইস টেনিস খেলোয়াড় রজার ফেদেরার বলছেন, টেনিস বল হলুদ। এক ব্যক্তি তাকে মোবাইল ফোনে টেনিস বলের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছিলেন প্রশ্নটি। কারণ তিনি একটু বিভ্রান্ত ছিলেন। তার প্রশ্ন ছিলো, "রজার, এই টেনিস বল কি রঙের?" রজার ফেদেরার তখন জবাব দিলেন, "হলুদ, তাই না?" তখন একদল মানুষ সেখানে চিৎকার করে উঠলো। বোঝাই যাচ্ছে, বলটির রঙ নিয়ে সেখানে তারা একমত হতে পারছিলেন না। কিন্তু লোকটি তখন বললেন, "দেখুন আমার কাছে মনে হয় সবুজ, কিন্তু আমার ছেলে মনে করে হলুদ।" এই ভিডিওটি ইতোমধ্যে দেখেছে কয়েক লাখ মানুষ। টেনিস তারকা রজার ফেদেরার সামাজিক মাধ্যমে কারো কারো কাছে ফেদেরারের এই উত্তরই শেষ কথা। যেমন একজন বললেন, "রজার যদি বলে এগুলো হলুদ, তাহলে হলুদ।" আরেকজন লিখছেন, "আমি সবসময় ভেবেছি যে টেনিস বল সবুজ কিন্তু রজার ফেদেরার যদি বলেন হলুদ তাহলে আমি তর্ক করার কে?" আরেকজন লিখেছেন, "উইম্বলডনের ঘাস যেহেতু সবুজ, টেনিস বল কখনো সবুজ হতে পারে না।" আরেকজন ব্যক্তি এর সাথে একমত হতে পারলেন না। তিনি বললেন, "রজার ভুল বলছেন। এগুলো এক ধরনের ফ্লুরেসেন্ট হলুদ যা সবুজ বলেও মনে হতে পারে।" আরো পড়ুন: উন্নয়নশীল দেশ হওয়া কেন উদযাপন করছে সরকার? ফেসবুকে ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখবেন কীভাবে এর আগে ২০১৫ সালে এরকম আরো একটি জিনিসের রঙ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিলো। মেয়েদের একটি জামার রঙ নিয়ে ছিলো সেই বিতর্ক। সারা দুনিয়াতে সোশাল মিডিয়ায় লোকজন এই রঙ বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলো। একদল বলেছিলো জামাটি কালো ও নীল। আরেক দলের জবাব ছিলো সাদা ও সোনালী। এখন প্রশ্ন হলো একই জিনিসের রঙ মানুষের চোখে ভিন্ন ভিন্ন হয় কেন? এর জবাব হলো কোন জিনিসের রঙ কোন ব্যক্তির চোখে কি রঙের দেখাবে সেটা নির্ভর করে অনেক কিছুর উপর। যেমন: আলো, কম্পিউটার কিম্বা ফোনের স্ক্রিন, ওই জিনিসটাকে কারো মস্তিষ্ক কিভাবে গ্রহণ করছে, দর্শকের দৃষ্টিশক্তি ইত্যাদি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলোর ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের কারণে একেক মানুষের মস্তিষ্ক একেক জিনিসের প্রতি একেকভাবে সাড়া দিয়ে থাকে। অর্থাৎ আলোটা কিভাবে কার চোখে এসে পড়ছে, কোন ধরনের আলো ইত্যাদি। জামার রঙ বিতর্ক এছাড়াও আমাদের চোখের ভেতরে যেসব রড ও কোন আছে সেগুলোর গঠন একেক জনের চোখে একেক রকমের। একারণেও রঙের ভিন্নতা তৈরি হয়। মনে রাখতে হবে জিনিসটি কোন রঙের- এ ব্যাপারে আমাদের মস্তিষ্কই কিন্তু নেয় শেষ সিদ্ধান্ত। যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে রঙের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক অধ্যাপক স্টিভেন ওয়েস্টল্যান্ড বলেছেন, একটি রঙকে ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ভিন্ন ভিন্নভাবে দেখে। "আমরা সবসময় কোন একটি রঙকে ঠিক একইভাবে দেখি না। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এরকমটা সবসময় ঘটে না।" "এটাও সম্ভব যে মানুষ হয়তো ভিন্ন রঙটাই দেখছে কিন্তু তার মাথায় আসলে কি সেটা বোঝা অসম্ভব।" আরো পড়ুন: নাম পরিবর্তনে ইসির কড়াকড়ি: হিন্দুদের আপত্তি নিজের থানায় ডায়েরি করে আলোচনায় ওসি ভারতে ঘণ্টায় কেন একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছে?
এই টেনিস বলগুলো হলুদ নাকি সবুজ?
ফরাসী স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গে ফুটবলের রাজা পেলে। চার দশকেরও বেশি সময় আগে ১৯৭৭ সালে অবসর নেওয়ার পরেও সাবেক এই খেলোয়াড় সারা দুনিয়ায় এখনও সবচেয়ে পরিচিত ও সম্মানিত ব্যক্তিদের একজন। মূলত তিন তিনবার বিশ্বকাপ জয় করার জন্য পেলে বিখ্যাত হয়েছেন। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড়- নারী কিম্বা পুরুষ- যিনি এতবার বিশ্বকাপ জয় করেছেন। এছাড়াও তিনি তার ক্লাব ও দেশের হয়ে ১,৩৬৩টি ম্যাচ খেলে মোট ১,২৮১টি গোল করেছেন যা বিশ্ব রেকর্ড। ফুটবল খেলায় পেলে যে দক্ষতা ও পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন সেটা মানুষের কল্পনার সীমাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তার গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল খেলাধুলার বাইরের জগতেও। ইতিহাসের বিখ্যাত এই ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কিছু গল্প আছে যা অনেকেই হয়তো এখনও শোনে নি। এখানে এরকম ১০টি গল্প ঘটনা তুলে ধরা হলো: ১. মাঠ থেকে বহিষ্কার রেফারি ভেলাকোয়েজ (ডানে) পেলেকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন ফাউল করার কারণে। ১৯৬৮ সালের ১৮ই জুন। কলাম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় খেলা হচ্ছিল পেলের ক্লাব সান্তোস এফসির সাথে কলাম্বিয়ান অলিম্পিক স্কোয়াডের। ওটা প্রীতি ম্যাচ ছিল। দর্শকে উপচে পড়ছিল স্টেডিয়াম। হঠাৎ করেই গ্যালারি থেকে দর্শকদের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ ভেসে আসে যখন রেফারি গুইলেরমো ভেলাসকোয়েজ পেলেকে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তখনও লাল কার্ডের প্রচলন ঘটেনি, সেটা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। কলাম্বিয়ার একজন ডিফেন্ডারকে ফাউল করা এবং রেফারির মতে ওই ফুটবলারকে অপমান করার কারণে পেলেকে মাঠ থেকে চলে যেতে বলা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তে মাঠের ভেতরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। সান্তোসের ফুটবলাররা উত্তেজিত হয়ে রেফারিকে ঘিরে ধরেন। ওই খেলার যেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায় রেফারি ভেলাসকোয়েজের চোখ কালো হয়ে আছে। সেসময় দর্শকরাও রেফারির ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিল। রেফারি ভেলাসকোয়েজ পরে ২০১০ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে সেসময় তাকে মাঠ থেকে বিদায় নিয়ে বাঁশিটা লাইন্সম্যানকে দিতে বলা হয়েছিল। এর পরপরই পেলে আবার খেলায় ফিরে আসেন। ২. পেলে কি যুদ্ধ থামিয়েছিলেন নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। পেলের সান্তোস এফসি ফুটবল ক্লাব ছিল ষাটের দশকে বিশ্বের জনপ্রিয় ক্লাবগুলোর একটি। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে এই ক্লাবটি প্রীতি ম্যাচে অংশ নিতো। এই খ্যাতির কারণে তারা বাড়তি কিছু সুবিধাও পেয়েছিল। এরকম একটি প্রীতি ম্যাচ ছিল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত নাইজেরিয়ায়, ১৯৬৯ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি। বেনিন সিটিতে অনুষ্ঠিত ওই খেলায় সান্তোস ২-১ গোলে স্থানীয় একাদশকে পরাজিত করে। নাইজেরিয়াতে তখন রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ চলছিল। দেশ থেকে বায়াফ্রা রাজ্যটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে এই যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। ফুটবল ক্লাব সান্তোস এফসির ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন এমন একজন গবেষক গুইলহের্ম গুয়াশের মতে, এরকম একটি পরিস্থিতিতে নাইজেরিয়াতে খেলোয়াড়দের পাঠানোর ব্যাপারে ব্রাজিলের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেক দুশ্চিন্তা ছিল। সেকারণে বিবদমান পক্ষগুলো তখন যুদ্ধবিরতিতে যেতে সম্মত হয়। তবে এই গল্পটির সত্যতা নিয়ে সম্প্রতি অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এবং মজার ব্যাপার হলো ১৯৭৭ সালে পেলের যে আত্মজীবনী প্রকাশিত হয় সেখানে এই ঘটনার কোন উল্লেখ ছিল না। তবে পেলের আরেকটি আত্মজীবনী, যা কীনা আরো ৩০ বছর পর প্রকাশিত হয়, সেখানে কিন্তু তিনি ওই "যুদ্ধবিরতির" কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন: "এই প্রদর্শনী ম্যাচের জন্য গৃহযুদ্ধ থামানো হবে বলে" খেলোয়াড়দেরকে জানানো হয়েছিল। "আমি জানি না এই ঘটনা পুরোপুরি সত্য কীনা, তবে নাইজেরিয়ানরা আমাদের নিশ্চিতভাবে জানিয়েছিলেন যে আমরা যখন ওখানে খেলতে যাবো তখন বায়াফ্রানরা সেখানে আক্রমণ করবে না," পেলে লিখেছেন। ৩. পেলের সঙ্গে দেখা করতে বিটলসের ব্যর্থ চেষ্টা বিটলসের ড্রামার রিঙ্গো স্টার। তারা সবাই মিলে পেলেকে দেখতে গিয়েছিলেন। পেলে নিউ ইয়র্ক কসমস ক্লাবের হয়ে খেলার জন্য ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে চলে যান। সেখানে ভাষা শেখার একটি স্কুলে তিনি ইংরেজি শিখতেন। কোন একদিন ক্লাসের ফাঁকে সংগীত গোষ্ঠী বিটলসের জন লেননের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। "লেনন ওই স্কুলে যেত জাপানি ভাষা শিখতে," পেলে এই স্মৃতিকথা লিখেছেন ২০০৭ সালে। পেলে বলেছেন, জন লেনন তাকে বলেছেন ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ চলার সময় লেনন এবং বিটলসের অন্য শিল্পীরা হোটেলে গিয়ে ব্রাজিলের টিমের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। সেবার বিশ্বকাপ হয়েছিল ইংল্যান্ডে। পেলে লিখেছেন, সংগীত শিল্পীরা সেসময় তার ও দলের অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা করতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু ব্রাজিলের ফুটবল এসোসিয়েশনের পরিচালকরা তার অনুমতি দেয়নি। ৪. কেন ইউরোপীয় ক্লাবে খেলেন নি ব্রাজিলে ১৮ বছর খেলার পর পেলে নিউ ইয়র্ক কসমস ক্লাবে খেলেছেন তিনটি মওসুম। আরো পড়তে পারেন: সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসি ঝড় - আলোচনা, গুঞ্জন আর মজার সব খবর জনপ্রিয় খেলা ফুটবল কী পাল্টে যাচ্ছে চিরতরে? হবিগঞ্জের হামজা যেভাবে ইংল্যান্ডে ফুটবল তারকা পেলের সমালোচকরা বলেন, কখনো ইউরোপীয় কোন ক্লাবের হয়ে না খেলার কারণে ব্রাজিলের এই ফুটবল তারকার জীবন অনেক সহজ হয়ে উঠেছিল। ব্রাজিলের অন্যান্য অখ্যাত ও বিখ্যাত ফুটবলাররা বিদেশি ক্লাবে খেললেও, পেলের ক্যারিয়ারের সোনালী সময়ে তাকে বাইরে খেলতে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। পেলেকে নেওয়ার জন্য সান্তোস এফসিকে প্রস্তাব দিয়েছিল রেয়াল মাদ্রিদ থেকে শুরু করে এসি মিলানের মতো ক্লাবও। সেসময় ফুটবলাররা কোন ক্লাবে খেলবেন সেবিষয়ে তাদের কথা বলার সুযোগ ছিল খুব কম। পেলেকে ব্রাজিলে রেখে দেওয়ার জন্য চাপ ছিল সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও: ১৯৬১ সালের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জানিও কোয়াদ্রস পেলেকে "জাতীয় সম্পদ" হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তাকে "রপ্তানি করা যাবে না" বলে একটি ডিক্রি জারি করেছিলেন। ব্রাজিলের এই ফুটবলার পরে অবশ্য একটি বিদেশি ক্লাবের হয়ে খেলেছিলেন। শুধুমাত্র ১৯৭৫ সালে। সেসময় তিনি যোগ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফুটবল ক্লাব নিউ ইয়র্ক কসমসে। ৫. ব্রাজিলের অধিনায়ক হয়েছিলেন ৫০ বছর বয়সে একবারই অধিনায়ক হয়েছিলেন পেলে এবং ৫০ বছর বয়সে। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন। পেলে তার পুরো ফুটবল ক্যারিয়ারে তার হাতে মাত্র একবারই অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরেছিলেন। ক্লাব ও দেশের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করার জন্য তাকে যখনই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সেটা তিনি সবসময় প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু এই ঘটনার ব্যতিক্রম হয় পেলের ৫০ বছর বয়সে। সেটা ছিল ১৯৯০ সালের ঘটনা, জাতীয় ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার ১৯ বছর পরে। সেবছর ব্রাজিলের সাথে বাকি বিশ্বের একটি প্রীতি ম্যাচ হয়েছিল মিলানে। তাতে অংশ নিয়েছিলেন পেলে। তার ৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই ম্যাচের আয়োজন করা হয়। প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিট তিনি মাঠে ছিলেন। ওই ম্যাচে ব্রাজিল ২-১ গোলে হেরে যায়। কিন্তু এই ম্যাচটি আরো একটি কারণে ব্রাজিলে আলোচিত হয়েছিল: ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের স্ট্রাইকার রিনাল্ডো পেলেকে একটি গোল উপহার দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেসময় পেলে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু রিনাল্ডো বল পেলেকে পাস না দিয়ে নিজেই পোস্টের বাইরে মেরেছিলেন। রিনাল্ডো পরে ২০১০ সালে ব্রাজিলের একটি ওয়েবসাইট গ্লোবো এসপোর্তেকে বলেছিলেন, "এতে তিনি আমার ওপর খানিকটা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।" ৬. পেলেকে যখন "অপহরণ" করা হয় ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারানোর পর পেলেকে কাঁধে নিয়ে সমর্থকদের উল্লাস। সান্তোস এফসি ক্লাবের ফুটবলাররা ১৯৭২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোতে খেলার ব্যাপারে খুশি ছিলেন না। "সেসময় সেখানে বড় ধরনের অশান্তি চলছিল এবং আমরা রাস্তায় ট্যাঙ্ক চলতে দেখেছি," ২০১০ সালের ব্রাজিলের একটি পত্রিকা জিরো হোরাকে একথা বলেছেন ডিফেন্ডার ওবেরদান। "খেলা শেষ করে সাথে সাথেই আমরা প্লেনে উঠে পড়বো এমন আশ্বাস পাওয়ার পরেই আমরা ওই ম্যাচ খেলতে রাজি হয়েছিলাম।" কিন্তু খেলার ৪৩ মাথায় গোল করে বসেন পেলে। তখনই সবকিছু বদলে যায়। খেলা শেষে পোর্ট অফ স্পেন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে থাকা সমর্থকরা দৌড়ে মাঠের ভেতরে চলে আসে এবং পেলেকে কাঁধে নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে যায়। সেখান থেকে পেলেকে উদ্ধার করে আনতে বেশ কিছু সময় লেগেছিল। ৭. সিলভেস্টার স্ট্যালোনের সঙ্গে ছবিতে অভিনয় সিলভেস্টার স্ট্যালোনের সঙ্গে পেলে। ১৯৮০ সালে যখন 'এসকেপ টু ভিক্টরি' ছবির শুটিং শুরু হয় তখন চলচ্চিত্রাঙ্গনে খ্যাতির তুঙ্গে ছিলেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন। এই ছবিতে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ের নাৎসি একাদশ ও বন্দীদের মধ্যে একটি কাল্পনিক ফুটবল ম্যাচের গল্প তুলে ধরা হয়। ছবিটিতে পেলেও অভিনয় করেছেন। তার সাথে ছিলেন ববি মুরের মতো আরো কয়েকজন পেশাদার ও সাবেক ফুটবলারও। ওই খেলায় গোলরক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন। ছবির একটি দৃশ্যে পেলে অ্যাক্রোবেটিক বাইসাইকেল কিক নিয়েছিলেন। এবং জানা যায় যে প্রথম শটেই তিনি এই কিকটি নিতে সফল হয়েছিলেন। সম্প্রতি পেলে ব্রাজিলের একটি ওয়েবসাইট ইউওএলকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যেখানে তিনি বলেছেন যে ওই সিনেমাতে স্ট্যালোনের একটি গোল দেওয়ার কথা ছিল। "সিনেমার আসল যে স্ক্রিপ্ট, সেখানে স্ট্যালোন ছিলেন স্ট্রাইকার আর আমার গোলি হওয়ার কথা ছিল," বলেন পেলে। হাসতে হাসতে পেলে জানান, "কিন্তু সিলভেস্টার স্ট্যালোন তো জীবনে একবারও বলে কিক করেন নি।" ৮. পেলে কিন্তু ভাল গোলরক্ষক গোলরক্ষকও হিসেবেও খেলেছেন পেলে। পেলে যদি 'এসকেপ টু ভিক্টরি' ছবিতে গোলরক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করতেন তিনি কিন্তু দর্শকদের মোটেও হতাশ করতেন না। বাস্তব জীবনেও তিনি ক্লাব ও দেশের বিকল্প গোলরক্ষক ছিলেন। আসল গোলকিপার আহত হলে তার জায়গায় তিনি নামতেন গোল ঠেকাতে। পুরো ক্যারিয়ারে পেলে সান্তোস এফসি ক্লাবের হয়ে চারবার গোলরক্ষকের গ্লাভস পরেছিলেন। ১৯৬৪ সালে ব্রাজিলিয়ান কাপের সেমিফাইনালেও তাকে গোলকিপার হতে হয়েছিল। তার টিম সবকটি খেলায় জয়লাভ করেছিল এবং পেলে একটি গোলও খাননি। ৯. মাত্র একজনই পেলে... গানার বিখ্যাত ফুটবলার আবেদি পেলে। ভক্তরা আনন্দের সঙ্গে গান ধরতে পারে "আছে মাত্র একজনই পেলে!" কিন্তু আসলে এটি আক্ষরিকভাবে পুরোপুরি সত্য নয়। তার জনপ্রিয়তার কারণে সারা বিশ্বে মাঠে ও মাঠের বাইরে এই নামের আরো অনেককেই পাওয়া যায়। আফ্রিকার বিখ্যাত ফুটবলারদের একজন আবেদি এইও-র নাম হয়েছিল আবেদি পেলে। তিনি গানা ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। কেপ ভার্দের ডিফেন্ডার পেদ্রো মন্টেইরো যিনি ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে যোগ দিয়েছিলেন, তিনিও পেলে নামে পরিচিত ছিলেন। এই ডাকনামটি তিনি পেয়েছিলেন তার শৈশবে। কিন্তু ফুটবলার পেলের কী প্রভাব পড়েছিল ব্রাজিলের সমাজে সেটা বোঝা যায় পেলের আসল নাম এডসন থেকে। ব্রাজিলের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ভূগোল ও পরিসংখ্যান ইন্সটিটিউটের হিসেবে প্রচুর শিশুর নাম রাখা হয়েছে এডসন। তারা বলছে, গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে ব্রাজিলে ৪৩ হাজার ৫শ ১১ জনের নাম ছিল এডসন। কিন্তু এর দুই দশক পর, পেলে যখন এক হাজারেরও বেশি গোল করেন এবং তিনটি বিশ্বকাপ জয় করেন, তখন এই নামের মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১১ হাজারেরও বেশি। ১০. ফুটবলের রাজা কি প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন? ব্রাজিলের ক্রীড়া মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন পেলে। পেলে ১৯৯০ সালে সাংবাদিকদের কাছে ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ব্রাজিলে ১৯৯৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। কিন্তু সেটা আর হয়নি। তবে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন ঠিকই। ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই তিন বছর তিনি ব্রাজিলের ক্রীড়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। সেসময় তার নেতৃত্বে কিছু আইন তৈরি হয়েছিল যাতে পেশাদার ফুটবলারদেরকে ক্লাবের সঙ্গে দর কষাকষির ব্যাপারে কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল যা তার নিজের প্রজন্মের ফুটবলারদের ছিল না।
ব্রাজিলের কিংবদন্তী ফুটবলার এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো, সারা বিশ্বে যিনি পেলে নামে বিখ্যাত, ২৩শে অক্টোবর তার ৮০তম জন্ম বার্ষিকী।
করোনাভাইরাসের কার্যকর এবং নিরাপদ একটি টিকার অপেক্ষায় পুরো বিশ্ব করোনাভাইরাসের কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন এখনো আসেনি কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়েই অগ্রীম কোটি কোটি ডোজ কিনে রাখছে ধনী দেশগুলো। দাতব্য সংস্থা অক্সফামের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ধনী দেশগুলো সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের উৎপাদন সক্ষমতার ৫১ শতাংশই কিনে ফেলেছে। কিন্তু ওই দেশগুলোতে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষের বসবাস। ধনী দেশের এই কাড়াকাড়ির কারণে আবিস্কারে এগিয়ে থাকা ৫টি ভ্যাকসিনও যদি সফল হয় তবু ২০২২ সালের আগে বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ বা ৬১ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে পারবে না বলে সতর্ক করেছে অক্সফাম। ধনী দেশগুলো অগ্রিম বুকিং দিয়েছে রেখেছে ভ্যাকসিন আবিস্কারে এগিয়ে থাকা ৫টি ভ্যাকসিনও যদি নিরাপদ প্রমাণিত এবং সফল হয় তারপরেও এ অবস্থা সৃষ্টি হবে বলে সতর্ক করে অক্সফাম। চলমান জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের শুরুতে দেয়া বক্তব্যে ভ্যাকসিনের আলাদা চুক্তিকে ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ উল্লেখ করে একে অন্যায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন মহাসচিব। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, সকলে নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত করোনাভাইরাস থেকে কেউ নিরাপদ নয়। বিশ্বে এই মুহূর্তে ল্যাবে শত শত ভ্যাকসিন গবেষণা হচ্ছে তবে ৪০টি ভ্যাকসিন আছে হিউম্যান ট্রায়াল পর্যায়ে। ১০টি ভ্যাকসিন তৃতীয় ধাপে বড় জনগোষ্ঠীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে যার মধ্যে চীন ও রাশিয়া ৫টি ভ্যাকসিন সীমিত আকারে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। আইসিডিডিআরবি'র এমিরেটাস বিজ্ঞানী এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন বিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. ফেরদৌসী কাদরী এক সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে বলেছেন, "ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য কিন্তু অনেক প্রতিযোগিতা হবে। গ্যাভি, সেপি, ডব্লিউএইচও এই প্রতিযোগিতার আশঙ্কা করেই কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি তৈরি করেছে"। "আমরা যদি চিন্তা করি এইচওয়ান এনওয়ান যেটা হয়েছিল প্যানডেমিক দশ বছর আগে। সেখানে কিন্তু আমরা ভ্যাকসিন পাই নাই। কারণ সেখানে যেটা তৈরি হয়েছিল ভ্যাকসিন উন্নত দেশে চলে গিয়েছিল। আমরা অনেক পরে কিছু ডোজ পেয়েছিলাম তখন আর দরকার ছিল না।" "তার জন্য আমি মনে করি যে, যদিও অনেক চেষ্টা হচ্ছে বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতার মধ্যেই থাকবে। কারণ ভ্যাকসিনের উৎপাদনতো শতভাগ হবে না।" বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: টিকার ট্রায়াল স্থগিত হলেও ভারতের সাথে চুক্তি থাকছে বেক্সিমকোর করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে কেন ছড়াচ্ছে এত গুজব আর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিশ্বের সাতশ কোটি মানুষের কাছে কীভাবে করোনার টিকা পৌঁছন হবে? শিগগিরই বাংলাদেশে চীনের একটি টিকার ট্রায়াল শুরু হবার কথা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির দিকে তাদিকে আছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে প্রচেষ্টা চলছে ২০২১ সালের মধ্যে দুই বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার। এর মধ্যে এক বিলিয়ন ডোজ বরাদ্দ থাকবে ৯২টি নিম্ন আয়ের দেশের মানুষের জন্য। এ দেশগুলোয় পৃথীবির মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বসবাস। বাংলাদেশও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির অধীনে প্রতিটা দেশের ঝুকিপূর্ণ ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা দেয়ার পরিকল্পনা আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে শেষ পর্যন্ত ১৫৬টি দেশ কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটিতে ভ্যাকসিন সহযোগিতায় অংশীদার হয়েছে। কিন্তু এ কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি কতটা সফল হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। বাংলাদেশ চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সমীর কুমার সাহা বলেন, এখানে কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। "চ্যালেঞ্জটা হলো এখানে সমতা আনাটা খুব কঠিন হবে। কারণ চীন জয়েন করেনি, আমেরিকাও কিন্তু জয়েন করেনি। যদি চীন এবং আমেরিকা জয়েন করতো যেহেতু তারা গ্রেটেস্ট ইকোনমি, বড় দুটি দেশ, অর্থ তাদের আছে এবং তার থেকে বড় এই দুটি দেশেই কিন্তু বেশিরভাগ ভ্যাকসিন উৎপাদন হচ্ছে।" "তো সেইখানেও কিন্তু আমরা আরেকটা বিপদের মধ্যে পড়ছি। নিম্ন আয়ের দেশগুলো কীভাবে এটাকে ম্যানেজ করবে সেটার একটা চিন্তা এবং এর বিতরণটা কিন্তু নিম্ন আয়ের দেশের জন্য আরো জটিল হয়ে যাবে বলে আমার কাছে মনে হয়।" বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচার-এর রিপোর্টে দেখা যায় তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে থাকা একাধিক ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের কাছ থেকে ব্রিটেন নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য মাথাপিছু ৫ ডোজ ভ্যাকসিন অগ্রিম বুকিং দিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন জাপান অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ সম্ভাবনাময়ী ভ্যাকসিন মাথাপিছু একের অধিক ডোজ নিশ্চিত করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। নুন্যতম এক ডোজ নিশ্চিত করতে উদ্যোগী ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশও। করোনাভাইরাস প্রতিরোধী নিরাপদ এবং কার্যকর কোনো ভ্যাকসিন এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি ভ্যাকসিন পেতে কী করছে বাংলাদেশ? করোনাভাইরাস মহামারি মোকবেলায় কার্যকর এবং নিরাপদ ভ্যাকসিনকেই শেষ ভরসা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ অবস্থায় ভ্যাকসিন পেতে বাংলাদেশ কী করছে এমন জিজ্ঞাসা অনেকের। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে একাধিক ভ্যাকসিন পেতে বাংলাদেশ তৎপর রয়েছে। এর জন্য অর্থ বরাদ্দও রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেন, "এখানে ট্রায়াল হবে। আরো ট্রায়ালের জন্য যোগাযোগ করেছে। তিনচারটি আছে পাইপলাইনে। সরকার অনুমোদন দিলে হবে। সরকার বসে নেই। উই আর ট্রাইং আওয়ার বেস্ট।" যদিও বাংলাদেশ প্রস্তুতির কথা বলছে, অনেক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কিন্তু ভ্যাকসিন ট্রায়াল নিয়ে দৃশ্যত অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। অনেক দেশই দ্রুত নিজদেশে ভ্যাকসিন ট্রায়াল শুরু করেছে। বাংলাদেশে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করায় চীনের ভ্যাকসিন যথাসময়ে ট্রায়াল শুরু করতে পারেনি। তাই যেকোন ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ওপর তার ট্রায়াল করা জরুরি বলে মনে করছেন ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞরা। আর এতদ্রুত আর কোন ভ্যাকসিন পৃথিবীতে এর আগে আসেনি। কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বিএসএমএমইউ এর সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবেও মনে করেন যেকোন ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে বাংলাদেশের মানুষের ওপর এর ট্রায়াল হওয়া দরকার। অন্যদিকে ভ্যাকসিন ট্রায়ালে যুক্ত হলেও টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার থাকে। আইসিডিডিআরবি চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় থাকা অন্য আর কোনো ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের কোন চেষ্টা আছে কিনা জানতে চাইলে আইসিডিডিআরবি'র এমিরেটাস বিজ্ঞানী ও ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ ফেরদৌসী কাদরী জানিয়েছেন, সারা পৃথিবীতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ট্রায়ালের ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে গেছে। "আমরা চাইলে যে কোনো ভ্যাকসিন আমরা ট্রায়াল করতে পারি।" "আমাদের ক্ষমতা আছে, আমাদের লোকবল আাছে, আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে, অভিজ্ঞতা আছে সবটাই আছে আমরা সবটাই করতে পারবো। অক্সফোর্ডেরটাও করা উচিৎ। কিন্তু আমরা একা চাইলেতো হবে না। এটা যারা গবেষণা করছে তাদেরও আগ্রহ থাকতে হবে।" ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌসী কাদরীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবুল কালাম আজাদ ফেরদৌসী কাদরী বলেন, "কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের একটু পার্থক্য হচ্ছে এটা সবজায়গায় ছড়িয়ে গেছে। এটা শুধু এরকম ঝুঁকি না যে বাংলাদেশে আছে, যেমন রোটা ভাইরাস, কলেরা, টাইফয়েডেরও অনেক বেশি ঝুঁকি আছে যেটা অন্যান্য দেশে নাই।" "তার জন্য একটা ভ্যাকসিন যখন তৈরি হয় তখন তারা আমাদের দেশে করতে চায়, আমাদের মতো দেশে করতে চায়। কিন্তু এখনতো ফিল্ড অনেক বেশি আছে।" তিনি বলছেন, "এখন ব্রাজিলে চলে যেতে পারছে, সাউথ আফ্রিকায় চলে যেতে পারছে। তো আমাদের কিন্তু প্রতিযোগিতা অনেক বেশি।" ভ্যাকসিনের এ প্রতিযোগিতার কারণে বাংলাদেশ সরকারকে ভ্যাকসিন বুকিং দেয়ার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে কমিটি সরকারকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে এক ধরনের প্রতিযোগিতার কথা জানিয়েছে। গ্যাভির ভ্যাকসিন পেতে বেশ দেরী হওয়ার আশংকা থেকে বাংলাদেশেরও ভ্যাকসিন বুকিং করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছে কারিগরি পরামর্শক কমিটি। বর্জ্য পানিতে করোনাভাইরাস যেভাবে পূর্বাভাস দিতে পারে কাদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে আর কাদের জন্য জরুরি নয় করোনাভাইরাস: শুধু বয়স্ক নয়, তরুণরাও মারাত্মক আক্রান্ত হতে পারে চা, কফি বা গরম পানি খেয়ে কি ভাইরাস দূর করা যায়? করোনাভাইরাস : কীভাবে বানাবেন আপনার নিজের ফেসমাস্ক আপনার কি দ্বিতীয়বার কোভিড ১৯ সংক্রমণ হতে পারে? টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কি?
করোনাভাইরাস মহামারি থেকে মুক্তি পেতে ভ্যাকসিনের দিকেই তাকিয়ে আছে সারাবিশ্ব। এখন পর্যন্ত কোন টিকা অনুমোদন না পেলেও ধনী দেশগুলোর মাঝে অগ্রীম টিকা কেনার প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে। এ অসম প্রতিযোগিতা দরিদ্র এবং মধ্যম আয়ের দেশের সব মানুষের টিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
সিউইড বা সামুদ্রিক শিকড় চাষ করে অর্থনৈতিক মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছেন জাঞ্জিবারের নারীরা। ব্যাপক চাহিদার কারণে তানজানিয়ার আধা স্বায়ত্ব শাসিত দ্বীপদেশ জাঞ্জিবারে এই সিউইড একটি বড় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এবং এটি চাষাবাদে প্রধান ভূমিকা রাখছেন নারীরা। ভোর হতে না হতেই একদল নারী মাথার উপর দড়ি ও লাঠি নিয়ে সমুদ্র সৈকতের দিকে হেঁটে যান এবং যে অংশে জোয়ারের পানি কম আসে সেখানে এই সিউইড বুনে দেয়। তারা প্রথমে হাটু সমান পানিতে নেমে সৈকতের বালুর মধ্যে লাঠিগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে গেঁথে দেন। তারপর সিউইডের ছোট ছোট টুকরোগুলোকে পাশাপাশি দড়ি দিয়ে বেধে ওই মালাটি একেকটি লাঠির সঙ্গে বরাবর টান টান করে মেলে দেন। মাত্র ছয় সপ্তাহে এই ছোট চারাগুলো দশগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায় এবং তখনই ফসল তোলার জন্য এগুলো প্রস্তুত হয়। এরমধ্যে কিছু খাওয়া হয় তবে বেশিরভাগই শুকিয়ে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয়। এই সিউইডের চাষাবাদ এই নারীদের শুধু কাজের জায়গা নয় বরং বাস্তবতা থেকে একটু পালাবার ফুরসত দেয়। এটাই তাদের, কৌতুক বলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ার জায়গা। যেখানে ইচ্ছামতো গালগল্পও করা যায়। সৈকতে হাঁটু সমান পানিতে নেমে বালুর মধ্যে লাঠিগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে গেঁথে দেন, তাতে জড়িয়ে দেন সিউইডের মালা। নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে যখন সৈকতে এই সিউইডের চাষাবাদ শুরু হয়, তখন পুরুষরা মনে করতেন যে এই কাজ করে কোন লাভ নেই। তারা মাছ ধরা বা পর্যটন সংশ্লিষ্ট কাজ করতেই পছন্দ করতেন। কেউ কেউ এটাও চান না যে তাদের স্ত্রী এমন কাজ করুক। এর কারণ হিসেবে পূর্ব উপকূলীয় পাজে গ্রামের এক কমিউনিটি নেতা মোহাম্মদ জালে বলেন, "আমি মনে করি এই সিউইডের ব্যবসা পরিবার পরিকল্পনায় উৎসাহিত করে। কারণ সমুদ্র সৈকতে ঘন্টা পর ঘণ্টা থাকা এরপর বাড়ির কাজ করার পর নারীরা খুব ক্লান্ত হয়ে যায়। তখন তারা সন্তান নেয়ার সময় করতে পারেনা"। এসব ভেবে মিস্টার জালে শুরুতে তার প্রথম স্ত্রীকে অন্যদের সাথে যেতে অনুমতি দেননি। পরে তার স্ত্রী অনেক দুঃখ পেয়ে কান্নাকাটি করলে তিনি রাজি হন। এই মুসলমান অধ্যুষিত দ্বীপে সিউইডের চাষ নারীমুক্তির একটি বড় শক্তি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কেননা এর আগ পর্যন্ত গ্রামের বেশিরভাগ নারী শুধুমাত্র অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কিংবা অসুস্থ আত্মীয়ে সঙ্গে দেখা করার জন্য বাড়ি বাইরে যেতে পারতো। বাড়ির স্থাপনাতেও নারীদের সেই বিচ্ছিন্নতার প্রতিফলন ছিল স্পষ্ট। অনেক বাড়িতে বাইরের দেয়াল ঘেষে একটি বেঞ্চ রাখা হয়। যেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা সেখানে অতিথিদের বসাতে পারে। যেন বাড়ির ভেতরে ওই নারী সদস্যদের গোপনীয়তা রক্ষা হয়। সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ফ্লাওয়ার সুয়া জানান, "এই সিউইড চাষ করার জন্য নারীরা বাইরে বের হওয়ায় শুরুতে অনেক স্বামী তাদের স্ত্রীদের তালাক দেয়ার হুমকি দিতো। কিন্তু যখন তারা দেখলো এই ব্যবসা থেকে বাড়িতে পয়সা আসছে। তখন তারা ধীরে ধীরে সেটা মেনে নেয়।" সিউইডের ব্যবসা করে অনেকেই পাকা ঘর তুলেছেন। এখন সেখানকার নারীরা বাড়ির বাজার করার দায়িত্ব স্বামীর ওপর চাপিয়ে নিজেদের পণ্য বাজারে বিক্রি করতে যান। অনেকে আবার বাসে করে রাজধানীতেও আসেন। তাদের শ্রমের কারণে খুব দ্রুত এই পরিবারগুলো সন্তানদের জন্য স্কুলের বই, ইউনিফর্ম, আসবাবপত্র, ভাল খাবার কেনা থেকে শুরু করে বাড়ির ছাদে ছনের পরিবর্তে ঢেউটিন বসাতে সক্ষম হয়েছেন। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল উপকূলীয় বুয়েলেও গ্রামের সিউইড কৃষক সাফিয়া মোহাম্মদ, এই কাজের মাধ্যমে নিজের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে পেরেছেন। তার একটি দোকান আছে যেখানে তিনি সিউইডের সাবান, জ্যাম এবং চাটনি বিক্রি করেন। সম্প্রতি নিজের উপার্জন দিয়ে তিনি তার ছেলেদের একটি মাছ ধরার নৌকা এবং একটি স্কুটার কিনে দিয়েছেন। পরিবারের জন্য তৈরি করেছেন একটি বড় বাড়ি। এখন তার মেঝেতে চকচকে টাইলস বা ছাদে কারুকার্যময় কার্নিশ। তবে তার গর্বের জায়গা জুড়ে তার সন্তানেরা। তিনি বলেন, "আমার মোট চার সন্তান। আমি সেই ১৯৮৫ সালে বিয়ে করেছি। এবং আমি আমার স্বামীর একমাত্র স্ত্রী।" সাফিয়া বলেন, একদিন হয়তো তাকেও স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রীকে গ্রহণ করতে হতে পারে। তবে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এক্ষেত্রে নতুন স্ত্রীকে অন্য কোথাও ঘুমাতে হবে- তার বাড়িতে নয়। পাজে গ্রামের এই শান্ত পরিবেশে এমন অনেক ধরণের ঘরোয়া নাটকগুলো উন্মোচিত হতে থাকে। যার অনেকগুলো দিয়ে ধারাবাহিক নাটক বানানো সম্ভব। বহুবিবাহের মতো এখানে তালাকও যেন অনেক সাধারণ ব্যাপার। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ভোটে অংশ নেয়ার জন্য সেইসঙ্গে যে রাজনীতিবিদকে ভোট দিতে স্বামীরা মানা করেছিলেন তাদের পক্ষে ভোট দেয়ার কারণে দ্বীপটির প্রায় ৫০জন নারীকে তালাক দিয়েছিলেন তাদের স্বামী। সিউইডের ব্যবসা করে ছেলেকে স্কুটার কিনে দিয়েছেন সাফিয়া মোহাম্মদ। এখন দ্বীপটির অনেক নারী তাদের আর্থিক স্বাধীনতা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী সাফিয়ার মত ওয়ানাইশা মাকামেও সিউইড চাষ থেকে তার উপার্জিত অর্থ বাড়ি বানানোর পেছনে বিনিয়োগ করেন। তার নির্মানাধীন বাড়িটি দেখে অনেকেই মনে করেন যে এটা হয়তো তিনি তার ছেলেমেয়েদের জন্য বানিয়েছেন। তবে মিসেস মাকামের মতে, এটি তিনি বানিয়েছেন শুধুমাত্র নিজের জন্য। যদি স্বামী তাকে তালাক দেয়, তাহলে তিনি এই বাড়িতে থাকবেন। এটা তাদের জন্য অনেকটা বীমা নীতির মতো। যেখানে পুরুষরা বিবাহ বিচ্ছেদের পর নারীদের কোন ভরনপোষণ দিতে চান না। মিসেস মাকামে বলেন, "জাঞ্জিবারে বিয়ে টিকে থাকার কোন নিশ্চয়তা নেই। যদি আমাদের স্বামীরা অন্য নারীর প্রেমে পড়ে যান তাহলে তারা পাগল হয়ে যান। তারা হুট করে আমাদের বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে।" এ ছাড়াও এই গ্রামের নারীদের প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে। জাঞ্জিবার দ্বীপপুঞ্জের বেশিরভাগ সিউইড জন্মায় পেমবা দ্বীপে। বিশেষ করে যেখানে সমতল প্রশস্ত সৈকতের পরিবর্তে পাথুরে খাড়ি রয়েছে। এ কারণে জলীয় তাপমাত্রা বাড়তে থাকলেও সিউইডগুলো তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়না। তবে ২০১১ সালের পর থেকে টানা তিন বছর এই পাজে গ্রামে সিউইড জন্মানো বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে আবার সেগুলো জন্মানো শুরু হয়। সিউইডে চাষের উপকরণ তৈরি করছেন ওয়ানাইশা মাকামে। তবে সেগুলো ছিল শুধুমাত্র নিম্নমানের স্পিনোসাম প্রজাতির সিউইড। যাতে সামান্য পরিমানে কারাজিনান উপাদান থাকে যেটা শুধুমাত্র খাবার, প্রসাধনী এবং ওষুধ ঘন করার উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা যায়। এ কারণে বর্তমানে এই ব্যবসাটি আগের মতো আর লাভজনক নেই। আরেকটি খারাপ দিক হল, গরমকালে যখন সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বেড়ে যায় তখন সেখানে নীল-সবুজ রঙা কিছু শেওলা জন্মায়। এ অবস্থায় নারীরা পানিতে কাজ করায় ওই শেওলার সংস্পর্শে তাদের চামড়ায় ব্যাথাযুক্ত র‍্যাশ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি হয়। এ কারণে এখন পাজে গ্রামের অনেক নারী এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। ২০ বছর আগে যেখানে ৪৫০জন সিউইড কৃষক ছিলেন, এখন সেটা কমে দেড়শ জনে দাঁড়িয়েছে। মিসেস মাকামের প্রতিবেশী রেজিকি। সাত সন্তানের বিশাল পরিবারের জন্য তার ভীষণ সাহায্যের প্রয়োজন। কিন্তু তিনি সিউইডের ব্যবসা ছেড়ে সমুচা বিক্রির কাজ শুরু করেছেন। অন্য যে নারীরা সৈকতে সিউইড চাষ করতেন এখন তারা হস্তশিল্পের কাজে যুক্ত হয়েছেন। সেগুলো তারা সৈকতে রৌদ্যস্নান করতে আসা পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেন। তবে এটা তারা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, ওই সিউইড ব্যবসাই তাদের ঘরের বাইরে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। সিউইড ব্যবসা আগের মতো লাভজনক না হলেও এটি এই নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছে। সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন সিউইডকে আরও লাভজনক করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল কটনি চাষ করা- এটি গভীর শীতল পানিতে জন্মানো মূল্যবান জাতের শেকড় যাতে বেশি পরিমানে কারাজিনান উপাদানটি রয়েছে। তবে এখানেও একটা সমস্যা আছে। আর তা হল, এই কাজের জন্য নৌকার প্রয়োজন- আর এই নারীরা জানেন না কিভাবে সাঁতার কাটতে হয়। তবে সেই বাঁধা কাটিয়ে উঠতে পাশের মুঙ্গনি গ্রামের অনেকেই লাইফ জ্যাকেট পরে সাতার শিখতে সমুদ্রের বিশাল ঢেউয়ের মধ্যে নামছেন। প্রথম প্রথম অনেকেই ভয়ে কুকড়ে যান। তবে তাদের ভাষ্য হল, একজন পুরুষ যদি সাতার দিতে পারে, আমরা কেন পারব না? আরো পড়তে পারেন: 'এখন আর বংশালের লোকজন অদ্ভুত চোখে তাকায় না' হাল না ছাড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাফল্যের কাহিনী বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হওয়ার পথে বাধাগুলো কী?
সিউইড বা সামুদ্রিক শেকড় সম্প্রতি নতুন সুপারফুড হিসাবে বেশ নাম কুড়িয়েছে। টুথপেস্ট, ঔষধ এবং শ্যাম্পুতে এই সিউইডের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
আপনার ফোনের গোপন তথ্য আর গোপন থাকছে না? এটি কি কখনো আপনার মনে আসে যে আপনার পকেটের ভেতরেই আসলে লুকিয়ে আছে এক গুপ্তচর? বহু দূর থেকেই হ্যাকাররা আপনার মোবাইল ফোনে স্পাইওয়্যার বা গুপ্তচর-প্রযুক্তি ঢুকিয়ে দিয়ে আপনার ফোনে থাকা সব তথ্য পেয়ে যেতে পারে। এরকম একটি অবস্থা কল্পনা করুন - যেখানে এই স্পাইওয়্যার দিয়ে কেউ আপনার ফোনের মাইক্রোফোন থেকে শুরু করে ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত নিয়ে নিচ্ছে। মনে হতে পারে একটি বেশ কষ্টকল্পিত ব্যাপার, কিন্তু আসলে তা নয়। এরকম সফ্টওয়্যার এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। এই সফ্টওয়্যার এখন ব্যবহার করা হচ্ছে সাংবাদিক, সরকার বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী বা আইনজীবীদের গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য। কিন্তু কারা এ কাজ করছে এবং কেন? আমাদের পকেটে থাকা মোবাইল ফোন যে গুপ্তচরে পরিণত না হয়, তা ঠেকানোর জন্য আমরা কী করতে পারি? সফটওয়্যার যখন অস্ত্র মাইক মারে একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। কাজ করেন স্যান ফ্র্যান্সিসকোর 'লুকআউট' নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। মোবাইল ফোন এবং এতে সংরক্ষিত তথ্য কিভাবে নিরাপদ রাখা যায় সে বিষয়ে তারা পরামর্শ দেয় বিভিন্ন দেশের সরকার থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পর্যায়ের ভোক্তাদের। ফোনের ক্যামেরা মানুষের চোখের মতই, সামনে যা আছে সবই দেখতে পায়। বিশ্বের সর্বাধুনিক এই গুপ্তচর প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করছিলেন তিনি। তার মতে, এই প্রযুক্তি এতটাই শক্তিশালী এবং মারাত্মক যে একে একটি 'অস্ত্র' হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। "যারা এই সফটওয়্যার তৈরি করেছে তারা আপনার ফোনের জিপিএসের মাধ্যমে আপনাকে সব জায়গায় অনুসরণ করতে পারে", বলছেন মাইক মারে। "ওরা যে কোন সময় আপনার ফোনের মাইক্রোফোন বা ক্যামেরা অন করতে পারে এবং আপনার চারপাশে যা ঘটছে তার সবকিছু রেকর্ড করতে পারে। আপনার ফোনে যত রকমের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ আছে, সবগুলোতে তারা ঢুকে পড়তে পারে। ওরা আপনার সব ছবি, কনট্যাক্ট, আপনার ক্যালেন্ডারের সব তথ্য, আপনার সব ইমেইল, যত রকমের ডকুমেন্ট - সব চুরি করতে পারে।" "এটি কার্যত আপনার ফোনকে একটি আড়িপাতা যন্ত্রে পরিণত করে। যেটি দিয়ে তারা আপনার প্রতি মূহুর্তের গতিবিধির ওপর নজরদারি চালায়। আপনার ফোনের সব তথ্য চুরি করে।" স্পাইওয়্যারের ব্যবহার নতুন কোন জিনিস নয়। বহু বছর ধরেই নানা রকমের স্পাইওয়্যার চালু আছে। কিন্তু এই সর্বশেষ স্পাইওয়্যার এতটাই মারাত্মক যে এটি আসলে সাইবার নিরাপত্তার জন্য খুবই ভিন্ন ধরণের এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। কঠোর গোপনীয়তার পরও শেষরক্ষা হয়নি, এল চ্যাপো ধরা পড়েছেন। এই স্পাইওয়্যারের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি কারও মোবাইল ফোনের তথ্য আদান-প্রদানের সময় নয়, বরং ফোনে থাকা অবস্থাতেই চুরি করে। এটি মোবাইল ফোনের যত রকমের কাজ, সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আর এই প্রযুক্তি এতটাই অত্যাধুনিক যে এটিকে সনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। মেক্সিকোর মাদক সম্রাটকে যেভাবে ধরা হয় মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক সম্রাট এল চ্যাপো। তার ছিল কয়েকশো কোটি ডলারের মাদক ব্যবসা। একবার জেল থেকে পালানোর পর ছয় মাস ধরে পালিয়ে ছিলেন এল চ্যাপো। মাদক ব্যবসার জন্য তার যে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, সেটি তাকে পালিয়ে থাকতে সাহায্য করে। এল চ্যাপো তখন কেবল একটি এনক্রিপ্টেড ফোন দিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। এই মোবাইল ফোন হ্যাক করা অসম্ভব বলেই মনে করা হতো। কিন্তু মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষ নাকি খুবই অত্যাধুনিক গুপ্তচর প্রযুক্তি কিনেছিল এল চ্যাপোকে ধরার জন্য। এল চ্যাপোর ঘনিষ্ঠ মহলের লোকজনের ফোনে তারা এই স্পাইওয়্যার ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এর মাধ্যমে তারা এল চ্যাপোর গোপন আস্তানার সন্ধান পায়। এল চ্যাপোকে এভাবে ধরার পর এই স্পাইওয়্যার যে কতটা শক্তিশালী, তার প্রমাণ পাওয়া গেল। সন্ত্রাসবাদী এবং সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে এধরণের স্পাইওয়্যার এক মূল্যবান অস্ত্রে পরিণত হলো। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এ ধরণের স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে এনক্রিপ্টেড ফোন এবং অ্যাপসে ঢোকার মাধ্যমে হয়তো অনেক চরমপন্থীকে ধরতে পেরেছে, অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। কোন ইমেলের পেছনে কে, কীভাবে জানা সম্ভব? কিন্তু এই একই অস্ত্র যদি যে কেউ কিনতে পারে এবং যে কারও বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে, তখন কী হবে? যারা তাদের কাজকর্মের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষুব্ধ করেছে, তারা কি এখন এরকম অস্ত্রের মাধ্যমে সরকারের দিক থেকে হ্যাকিং এর ঝুঁকিতে আছে? যে ব্রিটিশ ব্লগারকে টার্গেট করা হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক একটি ক্যাম্পেইন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে একটি ওয়েবসাইট চালাতে রোরি ডোনাগি নামে এক ব্লগার। সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেসব মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটে, তিনি সেসব বিষয় নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। অভিবাসী শ্রমিক থেকে শুরু করে পর্যটক, যারাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে এরকম ঘটনার শিকার হতেন, তাদের ঘটনা তিনি তুলে ধরতেন। আরও পড়ুন 'ইসরায়েলি' প্রযুক্তি দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিং: নিরাপদ থাকতে কি করবেন? সাইবার হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিকল? তার ওয়েবসাইটের পাঠক ছিলেন মাত্র কয়েকশ। প্রতিদিনের সংবাদে যে ধরণের ঘটনা আমরা দেখি, তার শিরোণামগুলো তার চেয়ে মারাত্মক কিছু ছিল না। রোগি ডোনাগি যখন 'মিডলইস্ট আই' নামে একটি নিউজ ওয়েবসাইটে কাজ করা শুরু করলেন, তখন তার কাছে কিছু অদ্ভূত ইমেইল আসতে শুরু করলো। অপরিচিত লোকজনের কাছ থেকে আসা এসব ইমেইলে কিছু লিংকও থাকতো। রোরি এরকম একটি সন্দেহজনক ইমেইল 'সিটিজেন ল্যাব' নামে একটি গবেষণা দলের কাছে ফরোয়ার্ড করলেন। ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোর এই গবেষক দল তখন সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে কিভাবে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি চলছে, তা নিয়ে কাজ করছিল। এই গবেষক দল রোরিকে জানালেন, যে লিংক তাকে পাঠানো হচ্ছে অপরিচিত ইমেইল থেকে, সেটি আসলে একটি 'ম্যালওয়্যার' ডাউনলোড করার লিংক। এই ম্যালওয়্যার এতটাই অত্যাধুনিক যে, এটি ইনস্টল হওয়ার পরও টের পাওয়া যাবে না যে ফোনের ভেতর এটি ঢুকে পড়েছে। ফোনের স্ক্রীনে কোন কিছু খোলার আগে দুবার ভাবুন। পরে অনুসন্ধানে দেখা গেল, রোরিকে যারা এই ম্যালওয়্যার পাঠাচ্ছিল, তারা আসলে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের পক্ষে কাজ করা একটি সাইবার গুপ্তচর প্রতিষ্ঠান। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার যাদেরকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে গণ্য করে, তাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানকে। ব্রিটিশ ব্লগার রোরির প্রতিটি কাজ কর্ম এবং তার পরিবারের সব সদস্যের ওপরেও তারা নজরদারি চালাচ্ছিল। নাগরিক অধিকার কর্মীকে টার্গেট সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার আহমেদ মনসুর নামের এক নাগরিক অধিকার কর্মীকেও টার্গেট করে। ২০১৬ সালে তিনি একটি সন্দেহজনক টেক্সট মেসেজ পান। তিনিও তার এই টেক্সট মেসেজটি পাঠিয়ে দেন ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোর সিটিজেন ল্যাবের কাছে। একটি আইফোন থেকে এই লিংকটি ক্লিক করেন সিটিজেন ল্যাবের গবেষকরা। এরপর তারা যা দেখলেন, তা অবাক করলো তাদের। মোবাইল ফোনটি দূর থেকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে এবং এটি থেকে সব তথ্য বেরিয়ে যাচ্ছে। আইফোনকে এই মূহুর্তে বাজারে চালু ফোনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ বলে মনে করা হয়। কিন্তু এই স্পাইওয়্যার আইফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাতেও একটা দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছে। এ ঘটনার পর অ্যাপল তাদের সব আইফোনের জন্য একটি সিকিউরিটি আপডেট ছাড়তে বাধ্য হয়। কেউ যদি আপনার ফোনে আড়ি পেতে সব কথা শোনে, তার পরিণতি হতে পারে ভয়ংকর আহমেদ মনসুরের স্মার্টফোন থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার কী তথ্য পেয়েছিল, তা পরিস্কার নয়। কিন্তু আহমেদ মনসুরকে সরকার গ্রেফতার করে দশ বছরের সাজা দেয়া হয়। তাকে এখন নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। লন্ডনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দূতাবাস বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় আইন মেনে কাজ করে। তবে বিশ্বের আর সব দেশের মতোই তারা গুপ্তচর সংস্থার কাজ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করে না। সাংবাদিক যখন টার্গেট ২০১৮ সালের অক্টোবরে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগজি ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে ঢোকেন। এরপর তাকে আর বেরিয়ে আসতে দেখা যায়নি। সেখানে তাকে হত্যা করে সৌদি সরকারের এজেন্টরা। জামাল খাশোগজির একজন বন্ধু ওমর আবদুল আজিজ দেখেছেন, তার ফোনটি সৌদি সরকার হ্যাক করেছিল। ওমর মনে করেন, জামাল খাশোগজিকে হত্যার ক্ষেত্রে তার ফোন হ্যাকিং এর ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জামাল খাশোগজির সঙ্গে ওমর নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং রাজনীতি নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক আলাপ হতো। তাদের দুজন যৌথভাবে কিছু কাজও করছিলেন। 'জিরো ক্লিক প্রযুক্তি'র পরিণতি হতে পারে ভয়ংকর সৌদি সরকার কিন্তু এই দুজনের মধ্যে এসব আলোচনার পুরোটাই জানতে পারছিল।। তাদের দুজনের মধ্যে যেসব ডকুমেন্ট আদান-প্রদান হচ্ছিল, সেগুলোও তারা পাচ্ছিল। এ ব্যাপারে সৌদি সরকারের ভাষ্য হচ্ছে, মোবাইল ফোন হ্যাক করার মতো অনেক সফটওয়্যার বাজারে আছে। কিন্তু এমন প্রমাণ নেই যে সৌদি সরকারই এর পেছনে আছে। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারে হ্যাকিং ২০১৯ সালের মে মাসে হোয়াটঅ্যাপ মেসেঞ্জারের নিরাপত্তায় একটা বড় ধরণের ফাঁক তৈরি হয়। বিশ্ব জুড়ে বহু মানুষ প্রতিদিন তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জার ব্যবহার করেন। এই হ্যাকিং এর ফলে কেউ কেবল আপনার ফোন কলেই শুধু আড়ি পাততে পারবেন, এটা যদি ভেবে থাকেন, তাহলে ভুল করবেন। এটি আসলে ফোনের সফটওয়্যারে ঢোকার রাস্তা তৈরি করলো মাত্র। একবার এই পথ তৈরি হওয়ার পর হ্যাকাররা সেই ফোনে তাদের ইচ্ছেমত যত খুশি স্পাইওয়্যার ঢুকিয়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে যাকে টার্গেট করা হয়েছে, তাকে হয়তো কোন লিংকে ক্লিকও করতে হবে না। একটি ফোন কল করেই তার ফোন হ্যাক করা হয়েছে। ফোন করে কলটি কেটে দেয়া হয়েছে। একে বলা হয় 'জিরো ক্লিক' টেকনোলজি। হোয়াটসঅ্যাপ অবশ্য খুব দ্রুতই এর মোকাবেলায় আপডেট ছাড়ে। কিন্তু এখনো কেউ জানে না, এই হ্যাকিং প্রযুক্তির পেছনে কে ছিল। হোয়াটসঅ্যাপের পর এবার টার্গেট কোন অ্যাপ? ফোন হ্যাকিং এর জন্য সফটওয়্যার ডেভেলপারদের কি দায়ী করা যাবে? হ্যাকিং এর বিরুদ্ধে লড়াই এ ধরণের স্পাইওয়্যার যারা তৈরি করে, তারা চাইলেই যে কোন দেশে তা বিক্রি করতে পারে না। এর জন্য একধরণের 'এক্সপোর্ট লাইসেন্সের' দরকার হয়, যেমন লাগে অস্ত্র বিক্রির জন্য। কেবলমাত্র গুরুত্বপূর্ণ অপরাধীদের থামাতেই এধরণের স্পাইওয়্যার কাজে লাগানোর কথা। তবে সিটিজেন ল্যাব এ নিয়ে যে ফাইলটি তৈরি করেছে তাতে তারা বলছে, এই প্রযুক্তি যেসব সরকার কিনেছে, তারা এটির অপব্যবহার করছে। এই সফটওয়্যার যারা তৈরি করেছে, তাদেরকে কি এজন্যে দায়ী করা যাবে? এরকম স্পাইওয়্যার তৈরির ক্ষেত্রে সবচেযে বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে একটি ইসরায়েলি কোম্পানি- এনএসও গ্রুপ। এরা গত এক দশক ধরে এই ব্যবসায় আছে এবং এই ব্যবসা থেকে তারা শত শত কোটি ডলার মুনাফা করছে। আবদুলআজিজের আইনজীবী এই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার মক্কেলের ফোন হ্যাক করার অভিযোগে। এই মামলার ফল কী দাঁড়ায় তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর তৈরি সফটওয়্যার কি কাজে ব্যবহৃত হয়, সেটির দায় কোম্পানির ওপর বর্তায় কীনা, সেই প্রশ্নের মীমাংসা হতে পারে এই মামলার মাধ্যমে। অপরিচিত লোকের কাছ থেকে আসা ইমেইল বা টেক্সট মেসেজ খোলার আগে ভাবুন। ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও এ বিষয়ে বিবিসিকে কোন সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গুরুতর অপরাধ প্রতিরোধ এবং তদন্তের জন্য যে ধরণের প্রযুক্তি দরকার, তারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেরকম প্রযুক্তি সরবরাহ করে। তাদের প্রযুক্তি বহু মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। কিন্তু যে আইনজীবী এই মামলা লড়ছেন, তার ফোনে কিন্তু এরই মধ্যে রহস্যজনক হোয়াটসঅ্যাপ ফোনকল আসতে শুরু করেছে। যে স্পাইওয়্যার ডিলিট করা যাবে না এরকম একটি স্পাইওয়্যার তৈরি করারই স্বপ্ন দেখে এই ইন্ডাস্ট্রিতে যারা কাজ করে তারা। যে স্পাইওয়্যার কেউ ধরতেই পারবে না, কেউ ডিলিট করতে পারবে না—এটি তাদের চরম আরাধ্য। যদি তারা এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারে, তাহলে যার ফোন হ্যাক হয়েছে, সে কোনদিন অভিযোগই করবে না, কারণ সে জানতেই পারবে না তার ফোন হ্যাক হয়েছে। ব্যাপারটা হয়তো জেমস বন্ড ছবির কাহিনীর মতো মনে হতে পারে, কিন্তু এর মারাত্মক পরিণতি আছে বিশ্বের জন্য। আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার জন্য এরকম চরম হুমকি সত্যিই আছে এবং ভবিষ্যতের জন্য আমাদের এই কথাটা মনে রাখা দরকার।
বহু মানুষের কাছেই মোবাইল ফোন হচ্ছে এমন এক জানালা - যা দিয়ে তারা বিশ্ব দেখেন। কিন্তু এই মোবাইল ফোনই যদি হয়ে ওঠে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি দেয়ার জন্য 'অন্য কারো' জানালা, তখন কী হবে?
কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ অফিস ছুটির পর মতিঝিলের একটি রেস্তরায় বসে কথা হচ্ছিল সামিনা জাবিনের সাথে। এটা তার ছদ্ম নাম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় তিন বছর হল কাজ করছেন। চোখে মুখে ইতিমধ্যে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। কারণ তার অফিসে বেতন এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে তিনি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে মনে করছেন। তিনি বলছিলেন " আমি আড়াই বছর ধরে কাজ করি আমার বেতন ১৩ হাজার টাকা, কিন্তু একটা ছেলে যার পড়াশোনা শেষ হয়নি, সে জয়েন করলো, তার বেতন ১৬হাজার টাকা। আমি যখন চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে চাই এবং কর্মকর্তাদের বলি তখন তারা বলে এটা তুমি পারবে না, তারা ছেলে কলিগদের দিয়ে করায়, বছর শেষে পদোন্নতি তারা পেয়ে যায়। কাজের জায়গায় যৌন হয়রানি মালিবাগে সোহানা সাবরিনের বাসায়। ছোট বাসাটি নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়েছেন। বাসার এক কোনে লেখালেখি করার টেবিল আর চেয়ার,কাগজ-পত্রে ঠাসা। ছয়মাস হল চাকরি ছেড়েছেন। এখন ফ্রি-ল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন বিভিন্ন জায়গায়। তিনি বলছিলেন "আমার বসের দাড়ায় আমি হয়রানির শিকার হয়েছি, তিনি প্রায়ই আমাকে কম্পিউটারে কাজ দেখানোর কথা বলে মাউস সহ হাত ধরতো, শরীরে টাচ করে সাথে সাথে সরি বলতো। যখন পরিস্থীতি অসহনীয় হয়ে গেল তখন আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানালাম কিন্তু তারা কিছু করলো না বরং আমি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হলাম"। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানালে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলছেন একজন নারী এটা হওয়ার পিছনে কারণ হিসেবে তিনি বলছিলেন "আমি ছিলাম ডিভোর্সী, এটা অফিসে জানার পরেই সমস্যগুলো তৈরি হতে থাকে। আমার মনে হয় সমাজে একটা ধারণা আছে ডিভোসী মেয়েরা একা, অসহায়। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে, সেই সুবিধাটা নেয়ার চেষ্টা করে অনেকে"। চ্যালেঞ্জিং কাজে মেয়েরা কি পিছিয়ে? মেয়েরা এখন কাজ করছে সরকারি, বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে। যেসব কাজে পুরুষদের একাধিপত্য ছিল বলে এক সময় মনে করা হত সেসব জায়গাতেও এখন মেয়েরা কাজ করছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের সমতার জায়গা কি তৈরি হয়েছে? একটি বেসরকারি সংস্থাতে কাজ করছেন তাবাস্সুম। তিনি বলছিলেন একটা বড় কাজের সুযোগ থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয় শুধু তিনি বিবাহিত এই কারণ দেখিয়ে। তাবাস্সুম বলছিলেন "আমাকে বলা হল আপনি বিবাহিত এখন তো বেশি সময় দিতে পারবেন না। তাই কাজটি আমরা অমুককে( ছেলে) দিয়েছি। আমি মনে করি সেই কাজটা করার সম্পূর্ণ যোগ্যতা আমার ছিল" । নানা সময়ে প্রতিবাদ হয়েছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ৮০% পুরুষ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা এক জরিপে দেখা যাচ্ছে শিল্প কারখানাগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় মেয়েরা ২০.০৩%, সরকারি-বেসরকারি চাকরীতে রয়েছেন ১২.০৮%। 'লেবার ফোর্স সার্ভে বাংলাদেশ ২০১৩' নামের ঐ জরিপে দেখা যাচ্ছে প্রধান নির্বাহী, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও আইনপ্রনেতা হিসেবে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে মাত্র ১২.৯% মেয়ে । অর্থাৎ সহজ কথায়- প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গায় প্রায় ৮০% রয়েছে পুরুষ। কর্মজীবী নারীদের নিয়ে গড়া একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান রোকেয়া রফিক বলছিলেন " নারীর সেই পরিবেশ নেই কাজ করার, তারপরে তার কাজকে স্বীকৃতি দিতে চাননা তার নিজের প্রতিষ্ঠান বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। তার সফলতা আনার জন্য, কর্মক্ষম করার জন্য যে সুযোগ সৃষ্টি বা চেষ্টা নেয়া দরকার সেটা নেয়া হয় না"। মেয়েরা কেন কম পরিমাণে সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গায় রয়েছে সেটা নিয়ে যখন কথা হচ্ছে তখন কর্মপরিবেশে আরো বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা জানা গেলো। পোষাক-আশাক নিয়ে আপত্তি কামরুনা নাহারকে স্কুলের চাকরি ছাড়তে হয়েছিল শুধু তার পোষাক-আশাক নিয়ে কর্তৃপক্ষের আপত্তি এবং ব্যক্তি জীবন সমালোচনার জন্য। "আমাকে বলা হল আপনি পর্দা করে আসবেন। আমি সালোয়ার-কামিজ পরি। তার পরেও চাকরি বাঁচাতে হিজাব পরলাম, এরপর আমার ব্যক্তি জীবন নিয়ে তারা আমার পিছনে কথা বলা শুরু করলো। বিষয়টা এতটাই মানসিক পীড়নের কারণ হল যে আমি কর্মস্থল পরিবর্তন করলাম"। অভিযোগের আঙ্গুল পুরুষদের দিকে কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়া, বেতন পদোন্নতিতে বৈষম্য, যৌন হয়রানি আর নিত্যন্তই কিছু না হলে পিছনে সমালোচনা করার অভিযোগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শোনা যায়। কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের স্বস্তি দায়ক পরিবেশ না করার জন্য তাই পুরুষদের দিকেই অভিযোগের আঙ্গুলটা যায়। বিষয়টাকে তারা কিভাবে দেখেন। একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন আরিফ নুর। তিনি বলছিলেন "ছোট বেলা থেকে একটা মেয়ে কেমন হবে সেই চিত্র পরিবার আর সমাজ থেকে শিখেয়ে দেয় আমাকে। পরে কর্মক্ষেত্রে এসে দেখি একটি মেয়ে আমার সমান অথবা আমার চেয়ে বেশি যোগ্যতা নিয়ে কাজ করছে। তখনই ধাক্কাটা লাগে। আমার অবচেতন মন আমাকে ঈর্ষান্বিত করে, আমি তাকে সমকক্ষ ভাবতে পারি না। সমস্যার শুরু এখান থেকেই"। তবে কিছু কিছু ব্যতিক্রম ঘটনার কথা জানা যায় যেখানে মেয়েরা কর্মপরিবেশে স্বস্তি নিয়ে কাজ করছেন। তবে একটি ব্যতিক্রম ঘটনা যেমন উদাহরণ হতে পারে না তেমনি কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অসমতার বিষয়টা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে জরিপ, গবেষণা আর কর্মজীবী মেয়েদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই।
বেতন ও পদোন্নতিতে বৈষম্য
বিমানবন্দরে ল্যাপটপ স্ক্যান করছেন এক মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট বলেছে, চরমপন্থীরা উড়ন্ত জেট বিমান উড়িয়ে দেয়ার জন্য আরও নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। ল্যাপটপ, ট্যাব, ক্যামেরা, ডিভিডি প্লেয়ার বা ইলেকট্রনিক গেমস কনসোলের মধ্যে বোমা লুকিয়ে রাখা সম্ভব। সে কারণেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে মোবাইল ফোনকে এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের নয়টি দেশের দশটি বিমানবন্দর থেকে যেসব ফ্লাইট যুক্তরাষ্ট্রে যায়, সেগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। কেবিন লাগেজে বা যাত্রীর সঙ্গে এ ধরণের ইলেকট্রনিক যন্ত্র রাখা না গেলেও 'চেক ইন' করা বড় লাগেজে তা নেয়া যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব এয়ারলাইন্সকে ৯৬ ঘন্টা সময় দেয়া হয়েছে এধরণের যন্ত্র ফ্লাইটে নিষিদ্ধ করার জন্য। কতদিনের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো তা উল্লেখ করা হয়নি। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট তাদের এক বিবৃতিতে বলেছে, সন্ত্রাসবাদীরা যেভাবে বাণিজ্যিক বিমান পরিবহনকে টার্গেট করে হামলার চেষ্টা করছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার উদ্বিগ্ন। দশটি বিমানবন্দর এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছে যে নয়টি এয়ারলাইন্স এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে: যেসব বিমানবন্দর এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে:
দশটি মুসলিম দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী যাত্রীরা বিমানের কেবিনে তাদের সাথে এখন আর ল্যাপটপ, ট্যাব, ক্যামেরা বা এরকম বড় ইলেকট্রনিক যন্ত্র বহন করতে পারবেন না। এ ধরণের ইলেকট্রনিক যন্ত্র সাথে বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৭ সালের ২৫শে অগাস্ট একদিনেই বাংলাদেশে চলে এসেছিল লাখখানেক রোহিঙ্গা। ১৯৯২ সালে পরিবারের সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল মেয়েটি। এরপর রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই তার বড় হয়ে ওঠা। পড়াশোনায় ভালো এই মেয়েটি প্রথমে ক্যাম্পের স্কুলে, পড়ে কক্সবাজারের স্থানীয় একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। সেই সঙ্গে কিছু সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এ সময় তার রোহিঙ্গা পরিচয় শুধু ঘনিষ্ঠ কয়েকজনই জানতো। স্কুল-কলেজের লেখাপড়া শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হওয়ার পর একদিন জানা যায়, মেয়েটি রোহিঙ্গা। আর সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের স্কুল কলেজে পড়াশোনা করতে না দেয়ারও একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখির পর মেয়েটিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের আসল মর্যাদা কি? তারা কি শরণার্থী, নাকি শুধুই আশ্রয়প্রত্যাশী? তাদের অধিকার আসলে কতটা আছে? পলিথিনে ছাওয়া একেবারে ছোট আকারের কুঁড়েঘরেই মাথা গুঁজতে হয় কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে। শরণার্থী মর্যাদা শরণার্থীদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে ১৯৫১ সালে জাতিসংঘ একটি কনভেনশন গ্রহণ করে, যা ১৯৬৭ সালের প্রটোকল হিসাবে সংশোধিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ওই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। ফলে বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের জন্য যেসব অধিকার বা সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়, সেগুলো করার জন্য বাংলাদেশের সরকারের ওপর বাধ্যবাধকতা নেই। আরো পড়ুন: রোহিঙ্গারা চিন্তিত বর্তমান নিয়ে, স্থানীয়রা ভবিষ্যত নিয়ে মিয়ানমারে সরকারি স্থাপনা তৈরির জন্য রোহিঙ্গা গ্রাম ধ্বংস রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ কতটা? রোহিঙ্গা ক্যাম্প: রাতের আঁধারে নিয়ন্ত্রণ করে কারা তবে ওই কনভেনশনে স্বাক্ষর না করলেও বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ - এবং সে কারণে দেশটি আশ্রয় প্রত্যাশীদের অনেকগুলো অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্য, বলছেন শরণার্থী ও অভিবাসী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর। ''শরণার্থী কনভেনশনে একটা আন্তর্জাতিক দায়দায়িত্ব থাকে, সেখানে সরকারের বেশ কিছু অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্যবাধকতা থাকে। কেউ আশ্রয়প্রার্থী হলে পুরোপুরি শরণার্থী বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তার দায়িত্ব নিতেও সরকার বাধ্য থাকে। কিন্তু শরণার্থী মর্যাদা দেয়া না হলে সরকার এসব দায়িত্ব পালন এড়িয়ে যেতে পারে'' - তিনি বলছেন। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশে এক্ষেত্রে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুসারে। বাংলাদেশে শরণার্থীদের ব্যাপারে কোন আইন নেই। শরণার্থীদের ব্যাপারে নির্দিষ্ট আইন ও বিধিবিধান জারির আবেদন জানিয়ে ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বর মাসে হাইকোর্টে নিদের্শনা চেয়ে রিট পিটিশন করেছিলেন একজন আইনজীবী। তবে সেই রিটের এখনো রায় হয়নি। কর্মকর্তারা বলছেন, বিহারী জনগোষ্ঠী আর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঘটনা ছাড়া বাংলাদেশে শরণার্থী হিসাবে আবেদনের খুব একটা নজীর নেই। জাতিসংঘের সহায়তায় একসময় আটকে পড়া পাকিস্তানীদের ক্ষেত্রে শরণার্থী মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে অবশ্য তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়। রোহিঙ্গারা কী শরণার্থী? তবে সনদে স্বাক্ষর না করলেও ১৯৯২ সালে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছিলেন, প্রথম দফার তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে শরণার্থী মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। এই কার্যক্রমে সহায়তা করে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা। এদেরকে কক্সবাজারের দু'টি ক্যাম্পে রাখা হয়। তবে এর কিছুদিন পরেই আরো দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন - কিন্তু তাদেরকে আর শরণার্থী মর্যাদা দেয়া হয়নি। সরকারি দু'টি ক্যাম্পের বাইরে আশেপাশে ঘর বানিয়ে তারা বসবাস করতে শুরু করেন। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: 'বালিশ দুর্নীতি দিনে-দুপুরে ডাকাতি': কৃষিমন্ত্রী নাইন-ইলেভেন: আগাম হুঁশিয়ারি পাত্তা দেননি বুশ মিয়ানমারে সরকারি স্থাপনা তৈরির জন্য রোহিঙ্গা গ্রাম ধ্বংস যে পাঁচ কারণে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের এই দুর্দশা বিশ্লেষকরা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর সরাসরি চাপ না দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা উচিত। ২০১৭ সালের অগাস্টের পর যে প্রায় আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদেরকে 'বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক' বলে বর্ণনা করছে সরকার। তাদের শরণার্থী মর্যাদা দেয়া হয়নি। তবে গণমাধ্যম ও দেশি বিদেশি বেসরকারি সংস্থাগুলো এদের শরণার্থী বলেই বর্ণনা করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পাকিস্তানকে সমর্থনকারী যে বিহারি জনগোষ্ঠীর সদস্যদের একসময় 'শরণার্থী' হিসাবে বিবেচনা করা হলেও, পরবর্তীতে তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। শরণার্থী মর্যাদা থাকা কতটা জরুরি আসিফ মুনীর বলছেন, ''শরণার্থী মর্যাদার ব্যাপারটা আসলে একটা স্বীকৃতি দেয়া যে, তুমি তোমার দেশে বিপদে আছো, সেখানে যেতো পারছো না, তাই তোমাকে এখানে থাকতে দেয়া হলো। যখন আপনি কাউকে থাকতে দেবেন, তখন তো তার দরকারি চাহিদাগুলো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন ইত্যাদি সুবিধাও আপনাকে দিতে হবে।'' কিন্তু বাংলাদেশের সরকার চায় না যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে থেকে যাক। এ কারণেই এই ইস্যুতে সরকার শরণার্থী মর্যাদা দিতে চায় না বলে তিনি মনে করেন। ''যে টার্ম সরকার ব্যবহার করছে, 'বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিক' - এটি ব্যবহারের ফলে তাদের ফেরত পাঠানোর একটি চাপ থাকবে। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিলেও তাদের স্থায়ীভাবে থাকার পরিবেশ তৈরিতে আগ্রহী নয়।'' বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় সোয়া দুই লাখের বেশি শিশু-কিশোর রয়েছে বলে বলছে জাতিসংঘ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলছেন, বাংলাদেশের সংবিধান কিন্তু বিদেশী নাগরিকদের দায়িত্ব নেয়ার কথা বলে না। ''আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই দশ লাখের বেশি মানুষকে আমরা দেশের মেইনস্ট্রিমে মিশিয়ে নিতে চাই কিনা, নাকি তাদের মিয়ানমারে, তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে চাই। এখন যদি তাদের এখানে পড়াশোনার সব ব্যবস্থা করে দেয়া হয়, নাগরিকদের মতো সব সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তারা আর নিজেদের দেশে ফেরত যেতে চাইবেন না।'' ''কিন্তু সেই সঙ্গে তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ব্যাপারটিও নিশ্চিত করা দরকার। সেজন্য ক্যাম্পের ভেতরেই তাদের উপযুক্ত ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে'' - বলছেন লাইলুফার ইয়াসমিন। শরণার্থী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলছেন, ''সমস্যা হলো, এই সংকট অনেক দিন ধরে চললেও আমাদের কোন দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল নেই। যেহেতু খুব তাড়াতাড়ি সবাইকে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, ক্যাম্পেও অনেক শিশুকিশোর বড় হচ্ছে। তাদের একেবারে অশিক্ষিত করে রাখাও ঠিক হবে না।'' তাই তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে এখনই একটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশে বর্তমানে এগারো লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে শরণার্থী হলে কী সুবিধা পাওয়া যাবে? আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলছেন, মালয়েশিয়ায় যে রোহিঙ্গারা শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছেন, তাদের একটা কার্ড ইস্যু করা হয়। সেটি দেখিয়ে তারা সেখানে কাজ করতে পারেন, পড়াশোনা করতে পারেন, যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের তুলনায় কিছুটা পার্থক্য থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে বিষয়টা তেমন নয়। ''বাংলাদেশের সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা সেখানকার স্কুলে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারে। এর বেশি পড়ার অনুমতি তাদের নেই। আবার ক্যাম্পের বাইরে চাকরি বা কাজের সুযোগ নেই। যাতায়াতের ক্ষেত্রেও সবসময় পাস বা অনুমতির দরকার হয়।'' জেনেভা ক্যাম্পে যেসব আটকে পড়া পাকিস্তানি ছিলেন, তাদের জাতিসংঘের সহায়তায় অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হতো। পরবর্তীতে অবশ্য তারা স্থানীয় চাকরি ও ব্যবসায় জড়িত হয়ে যান। যে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকশোজন তৃতীয় দেশে বসবাসের সুযোগ পান। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ: মিজানুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''দুই ধরণের রোহিঙ্গা এখানে রয়েছেন। কিছু রোহিঙ্গার শরণার্থী মর্যাদা আছে, বাকিদের নেই। যদিও সবাই হয়তো তাদের শরণার্থী বলছেন, কিন্তু কনভেনশনের হিসাবে সবাই শরণার্থী নন। তবে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সেটা আর আলাদা বলার সুযোগ নেই। '' তিনি বলেন, ''শরণার্থী হিসাবে যে অধিকারগুলো পাওয়ার কথা, সেটা এখন সবাই সমানভাবে পাচ্ছেন। সুতরাং তাদের মধ্যে আমরা সুযোগ-সুবিধার খুব একটা পার্থক্য দেখতে পাই না।'' সরকারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় সহায়তা কার্যক্রম চালাচ্ছে অনেক বেসরকারি সংস্থা শরণার্থী থাকা-না-থাকার পার্থক্য খাবার: সরকার ও বেসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের পরিবার প্রতি খাবার, পানি ও পারিবারিক দরকারি সব সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে শরণার্থী মর্যাদা থাকা-না-থাকার কোন পার্থক্য করা হয়না। আবাসন: শরণার্থী হিসাবে তালিকাভুক্ত ৩০ হাজার রোহিঙ্গা রেজিস্টার্ড দু'টি ক্যাম্পে বসবাস করেন। তবে এর বাইরে অসংখ্য ক্যাম্পে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছেন। এসব ক্যাম্পও সরকারিভাবে পরিচালনা করা হয়। শিক্ষা: কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে যে বিষয়গুলো জানা গেল, একটা সময়ে রোহিঙ্গারা স্থানীয় স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করতে পারতেন। কিন্তু সম্প্রতি এক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তবে স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের অনেক স্কুল-কলেজে রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করছে। তাদের অনেকে রোহিঙ্গা পরিচয় ব্যবহার করছেন, কিন্তু বেশিরভাগই মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে পড়াশোনা করছেন। আরআরআরসির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে দু'টি রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়তে পারেন। অন্য ক্যাম্পগুলোয় প্রচলিত স্কুল না থাকলেও কিছু লার্নিং সেন্টার রয়েছে, যেগুলো বেসরকারি সংস্থাগুলো পরিচালনা করে। এর বাইরে কয়েকটি মাদ্রাসা রয়েছে। সরকারের তরফ থেকে কিছুদিন আগে কক্সবাজারের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ক্যাম্পের বাইরের কোন স্কুলে যেন রোহিঙ্গা শিশু বা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা না হয়। আগে যাদের ভর্তি করা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রোহিঙ্গা ছাত্রীর এরকম পড়াশোনার খবর প্রকাশ হওয়ার পর তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জীবন অন্য দেশে বসবাস: শরণার্থী হিসাবে তালিকাভুক্ত কয়েকশো ব্যক্তিকে তৃতীয় কয়েকটি দেশ গ্রহণ করেছে। যদিও অনেক বছর ধরে সেই কার্যক্রম বন্ধ আছে। বিয়ে: বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক দফায় প্রজ্ঞাপন জারি করে করে বলা হয় যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কোন সদস্যকে বাংলাদেশি কেউ বিয়ে করতে পারবেন না। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর এরকম প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বিশেষ করে কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির কাজী অফিসগুলোতে নির্দেশনা জারি করা হয়, যেন তারা এরকম বিয়ে না করান। এরকম বিয়ের কারণে বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়। চিকিৎসা: যদিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ক্যাম্পের ভেতরেই সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থা রয়েছে। তবে জরুরি ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আরআরআরসির কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। ক্যাম্প থেকে পালাতে গিয়ে কক্সবাজারে আটক রোহিঙ্গাদের একাংশ যাতায়াত: শরণার্থী মর্যাদা থাকুক আর নাই থাকুক, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যেতে হলে পাস বা অনুমতি নেয়ার বিধান রয়েছে। তবে এই বিষয়টি এখনো খুব কড়াকড়িভাবে নজরদারি করা হয় না বলে কর্মকর্তারা বলছেন। কাজের সুবিধা: বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে কাজ করার অনুমতি নেই। যদিও অনেকেই গোপনে এমনটা করছেন বলে জানা যায়।
ধরা যাক, মেয়েটির নাম নুর বেগম।
দিল্লি সফরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সস্ত্রীক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। জানুয়ারি, ১৯৮০ জিয়াউর রহমানের আমলে ঢাকায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন যিনি, সেই মুচকুন্দ দুবে বিবিসিকে এ কথাও বলেছেন যে ১৯৮০তে তার দিল্লি সফরের পর বাংলাদেশ ভারতকে প্রাকৃতিক গ্যাস বেচতেও রাজি হয়ে গিয়েছিল - শুধু বাকি ছিল দাম নিয়ে রফা। তার আগে ১৯৭৭য়ে জিয়াউর রহমানের ভারত সফরের ঠিক আগেই স্বাক্ষরিত হয়েছিল ফারাক্কা নিয়ে অন্তর্বর্তী একটি সমঝোতা, যা পরে গঙ্গা চুক্তির ভিত গড়ে দেয়। দিল্লিতে মোরারাজি দেশাই ও ইন্দিরা গান্ধীর আমলে তাঁর সেই দুটো সফরের দিকেই ফিরে তাকানো হয়েছে এই প্রতিবেদনে। বস্তুত, বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী রাজনীতির জন্য দীর্ঘদিন পরিচিত ছিল যে রাজনৈতিক দল, সেই বিএনপির প্রতিষ্ঠা জিয়াউর রহমানের হাতেই। অথচ দিল্লিতে সাবেক কূটনীতিবিদদের বিশ্বাস, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি কিন্তু শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়, বরং একটা বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েই চলতেন। মোরারজি দেশাই সাতাত্তরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমান যখন ৭৭-র ডিসেম্বরে প্রথমবার দিল্লিতে পা রাখেন, তখন ভারতে প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের সরকার ক্ষমতায়। প্রোটোকল ভেঙে প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই ও রাষ্ট্রপতি নীলম সঞ্জীব রেড্ডি দুজনেই তাকে স্বাগত জানাতে দিল্লির বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তখন বাংলাদেশ বিভাগের দায়িত্বে তরুণ কর্মকর্তা মুচকুন্দ দুবে। মি. দুবে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "বাস্তববাদী জিয়াউর রহমানকে ভারতও কিন্তু বিশ্বাস করত।" "পরের দিকে ভারত সরকার মনে করতো তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছিলেন। কিন্তু জিয়া কোনওদিন তা করেননি বলেই ভারতের ধারণা ছিল।" "স্বল্পবাক, সামরিক শৃঙ্খলায় মোড়া মানুষটি ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে সব সময় উচিত ব্যবহার করেছেন - এবং তার সময়ে কাজ হত।" "পাশাপাশি তিনি যে একটি সার্বভৌম দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন সফরে সেটা সব সময় খেয়াল রাখতেন, নিজের ও নিজ দেশের আত্মমর্যাদা নিয়েও ছিলেন অত্যন্ত সচেতন।" আরও পড়তে পারেন: ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মুচকুন্দ দুবে সাতাত্তরের সেই সফরের প্রাক্কালেই সই হয়েছিল ফারাক্কা নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সমঝোতা - যার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই জিয়াউর রহমান গঙ্গার জলের ন্যায্য ভাগ নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সরব হতে শুরু করেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ জয়ন্ত কুমার রায় ফারাক্কা চুক্তি নিয়ে তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, সাতাত্তরের এপ্রিল মাসে তদানীন্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম ঢাকায় গিয়ে জিয়াউর রহমানকে ব্যক্তিগতভাবে আশ্বাস দিয়ে আসার ফলেই তখন ওই চুক্তি করা সম্ভব হয়েছিল। অধ্যাপক রায়ের কথায়, "ভারতের বিশেষজ্ঞ ও আমলাদের সঙ্গে কোনও পরামর্শ না করেই জগজীবন রাম সে দিন কথা দিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের দাবির প্রায় পুরোটাই মেনে নেওয়া হবে।" আসলে সাতাত্তরে স্বাধীন ভারতে জনতা পার্টির নেতৃত্বে প্রথম অকংগ্রেসি সরকার ক্ষমতায় আসার পরই ফারাক্কা নিয়ে জিয়াউর রহমানের দাবি মেটার পথ প্রশস্ত হয়েছিল, বিবিসিকে বলছিলেন দিল্লির একটি নামী স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্কের বাংলাদেশ গবেষক স্ম্রুতি পট্টনায়ক। ড: পট্টনায়কের কথায়, "ফারাক্কা চুক্তিকে জিয়াউর রহমানের জন্য একটি অতি উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলেই ধরা হয়।" "দিল্লিতে আসার আগে কলম্বোর নির্জোট শীর্ষ সম্মেলনে ও জাতিসংঘে - দু'জায়গাতেই তিনি ফারাক্কার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। জাতিসংঘে বিষয়টা তোলার পর ভারত বলেছিল ঠিক আছে, বিষয়টা আমরা দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে মিটিয়ে নেব।" ফারাক্কা বাঁধের জন্যই পদ্মা শুকিয়ে যাচ্ছে, জিয়াউর রহমান এ অভিযোগ তুলেছিলেন জাতিসংঘেও "পাশাপাশি মোরারাজি দেশাই ভারতে ক্ষমতায় আসার পর জিয়াউর রহমান সেটাকে একটা নন-আওয়ামী লীগ সরকারের নন-কংগ্রেসি সরকারের সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ হিসেবেই দেখেছিলেন।'' "কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় কংগ্রেস আর আওয়ামী লীগ তো একসঙ্গেই পথ হেঁটেছিল ... এই বিষয়টাও ছিল।" 'ইন্ডিয়া টুডে' ম্যাগাজিনের হয়ে ওই সফর কভার করতে গিয়ে দিল্লিতে সাংবাদিক মম্দিরা পুরী আবার লিখেছেন, বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের বিষয়টিও মোরারজি দেশাই সফররত প্রেসিডেন্টের কাছে তুলেছিলেন। তার সেই রিপোর্ট বলছে, ''বাংলাদেশে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীরা, সে দেশের ভারতপন্থী নাগরিকরা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা যে চরম অত্যাচারিত হচ্ছেন সে খবরও দিল্লিতে আসছিল।'' এরপর যখন আশি সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট জিয়া আবার সংক্ষিপ্ত সফরে সস্ত্রীক দিল্লিতে এলেন, তখন ভারতে সদ্য ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে - আবারও দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ইন্দিরা গান্ধী। সেই সফরেও অভিন্ন জলসম্পদের উপযুক্ত বন্টন নিয়ে দুদেশের কথা হয়েছিল - শুরু হয়েছিল একটি সহযোগিতামূলক ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো তৈরির কাজও। অতিথি জিয়াউর রহমানের সম্মানে ভারতের রাষ্ট্রপতির দেওয়া ভাষণের টেক্সট। জানুয়ারি, ১৯৮০ একুশে জানুয়ারি, ১৯৮০-তে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রেসিডেন্ট জিয়ার সম্মানে দেওয়া ব্যাঙ্কোয়েটে ভারতের রাষ্ট্রপতি সঞ্জীব রেড্ডি বলেছিলেন, "ভারত ও বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর দেশের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার হল জলসম্পদের উপযুক্ত সদ্ব্যবহার।" জলবন্টনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও তখনই কিন্তু কার্যত হিমঘরে চলে গিয়েছিল ইন্দিরা ও শেখ মুজিবের মধ্যে বাহাত্তরে সই হওয়া 'মৈত্রী চুক্তি'। স্ম্রুতি পট্টনায়কের কথায়, "মুজিব-ইন্দিরার স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিতে খুব পরিষ্কারভাবে 'মিউচুয়াল সিকিওরিটি' বা পারস্পরিক নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছিল।" "অর্থাৎ চুক্তিতেই বলা ছিল বাংলাদেশের যে কোনও বিপদে ভারতের সেনা এগিয়ে যাবে, আবার ভারতের বিপদেও বাংলাদেশ পাশে দাঁড়াবে।" "মিলিটারি ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা জিয়াউর রহমান কিন্তু চুক্তির এই ধারাটাকে খুব ভালভাবে নিতে পারেননি।" "তাঁর মনে হয়েছিল, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ভারত পেছনে ঠেলে দিতে চাইছে। ফলে ওই চুক্তি নিয়ে তিনি বিশেষ এগোতে চাননি।" ইন্দিরা ও মুজিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত মৈত্রী চুক্তিকে হিমঘরে পাঠিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া, বলছেন পর্যবেক্ষকরা দেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকা গৌণ হয়ে যাবে এটা জিয়াউর রহমান মেনে নিতে না-পারলেও ভারতকে প্রাকৃতিক গ্যাস বেচার প্রস্তাবে জিয়াউর রহমান কিন্তু সায় দিয়েছিলেন আশির সেই সফরেই। ততদিনে মুচকুন্দ দুবে ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনারের পদে। মি. দুবে বলছিলেন, "গ্যাস বিক্রির সব কথাবার্তা কিন্তু পাকা হয়ে গিয়েছিল, শুধু দামটা ছাড়া।" "একাশিতে জিয়াকে যখন হত্যা করা হয়, তখন ওই দাম নিয়েই আলোচনা চলছিল। কিন্তু তাঁর হত্যার পর সব ভেস্তে যায়।" "তার আগে কী পরিমাণ গ্যাস রপ্তানি হবে, কোথায় কারা পাইপলাইন বসাবে সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল।" "তখন তো আজকের মতো মুক্ত বাজার ছিল না, জিয়া চাইছিলেন বাজারদরে গ্যাস বেচতে, যেটা নিরূপণ করা কঠিন ছিল - আর আমরা বলছিলাম কস্ট প্লাস ফর্মুলায় দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে গ্যাসের দাম ঠিক হোক।" প্রেসিডেন্ট জিয়া এক সাংবাদিক সম্মেলনে। ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮ এর মধ্যেই ১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন জিয়াউর রহমান। ঠিক তার আগে বঙ্গোপসাগরে নতুন জেগে ওঠা 'দক্ষিণ তালপট্টি' নামের একটি দ্বীপকে ঘিরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিরোধ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। আটই জুন, ১৯৮১ দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে তাদের প্রতিবেদক উইলিয়াম বর্ডার্স এক রিপোর্টে লেখেন, দক্ষিণ তালপট্টিতে ভারতীয় নৌবাহিনীর দুটি রণতরী ভিড়েছে এবং সেখানে ভারতীয় পতাকা পুঁতে একটি রেডিও স্টেশনও স্থাপন করা হয়েছে - বাংলাদেশ এটা আবিষ্কার করার পর দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। জিয়াউর রহমানের জীবনের শেষ পর্বে এই দক্ষিণ তালপট্টিকে কেন্দ্র করে দিল্লির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছিল। তবে তাঁর মৃত্যুর দিনদশেক পরে লেখা ওই রিপোর্টে আরও মন্তব্য করা হয়েছিল, "যদিও প্রেসিডেন্ট জিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব সহজ ছিল না - তারপরও তিনি নিহত পর বাংলাদেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে এই আশঙ্কা দিল্লিকে ঘিরে ধরেছে।" বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর:
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিয়াউর রহমান ভারতে দুটি রাষ্ট্রীয় সফর করেছিলেন, আর দুটোতেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন দিল্লিতে পর্যবেক্ষক ও সাবেক কূটনীতিবিদরা।
সারাবিশ্বে পুরুষদের শরীরে শুক্রাণুর সংখ্যা বা স্পার্ম রেট কমে যাচ্ছে গত কয়েকবছরে তার অন্ডকোষে চার দফা অপারেশন হয়েছে। "আমার বয়স যখন ১৫, তখন থেকেই আমি অনুভব করতাম যে আমার বাঁদিকের অন্ডকোষে কিছু একটা সমস্যা রয়েছে। কিন্তু যেহেতু আমার তেমন কোন অসুবিধা হচ্ছিল না তাই ব্যাপারটা উপেক্ষা করেছিলাম। সমস্যাটা ছিল ভারিকোসিল - অন্ডকোষে শিরা জমাট বেঁধে যাওয়া। " পরে ক্রিস হিউজ এর চিকিৎসা করান। কিন্তু তার ডান দিকের অন্ডকোষে দেখা দেয় নতুন সমস্যা - যাকে বলে হাইড্রোসিল বা পানি জমে যাওয়া। সেজন্য তাকে অপারেশন করাতে হয়। পরে ২০১৮ সালে টিভিতে সকালের অনুষ্ঠানে লাইভ ক্যামেরার সামনে অন্ডকোষ পরীক্ষার এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। যেহেতু এ নিয়ে তিনি অনেক দিন ধরে সমস্যায় ভুগছেন - তাই টিভির ওই অনুষ্ঠান তার কাছে তেমন কিছুই মনে হয়নি। কিন্তু ক্রিস যা ভাবতে পারেননি তা হলো - ওই অনুষ্ঠানটি তারই ভাই বেন হিউজের জীবনে কি প্রভাব ফেলবে। টিভিতে ভাইয়ের অনুষ্ঠান দেখে বেন নিজে তার অন্ডকোষ পরীক্ষা করলেন, এবং দেখতে পেলেন সেখানে একটা টিউমারের মতো কিছু হয়েছে। ডাক্তারের সাথে কথা বলছেন ক্রিস (মাঝখানে) আর বেন হিউজ ডাক্তারি পরীক্ষার পর টিউমারটাতে ক্যান্সার ধরা পড়লো, ২০১৯এর জানুয়ারিতে তার অপারেশন করা হলো। এর মধ্যে দিয়েই বেরিয়ে এলো আরেক সমস্যা। অপারেশনের আগে বেন ঠিক করেছিলেন - তিনি একটি স্পার্ম ব্যাংকে নিজের শুক্রাণু জমা রাখবেন, যাতে পরে সমস্যা হলেও তিনি সন্তানের পিতা হতে পারেন। তাতে দেখা গেল, বেনের দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোন এতই কম যে- তা শুক্রাণু তৈরির জন্য যথেষ্ট নয়। তখন শুরু হলো আরেক চিকিৎসা। আর এরই পাশাপাশি ক্রিস আর বেন ঠিক করলেন, তারা পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করবেন, তাদের উদ্বুদ্ধ করবেন যেন পুরুষরা নিজেদের উর্বরতার ব্যাপারটি সম্পর্কে সচেতন হন - যা নিয়ে তারা হয়তো আগে কখনোই ভাবেননি। পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব কী? সহজ কথায়, পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের মূল কারণ: বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ কম হওয়া। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান এনএইচএসের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, যে দম্পতিদের সন্তান হয়না, তাদের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এর কারণ হচ্ছে - স্বামীর শুক্রাণুর মান নিম্ন ও সংখ্যা কম হওয়া। চিকিৎসকদের মতে, প্রতি মিলিলিটারে শুক্রাণুর সংখ্যা ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটির কম হলেই প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে। এক বছর চেষ্টার পরও গর্ভসঞ্চার না হলেই দম্পতিদের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলা হয় সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী প্রতি মিলিলিটারে ১৫মিলিয়নের বেশি শুক্রাণু থাকলেই তাকে স্বাভাবিক বলা হয়। যে দম্পতিরা সন্তান চাইছেন তাদের এক বছর চেষ্টার পরও গর্ভসঞ্চার না হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলা হয়। কী কী কারণে শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যেতে পারে? বিজ্ঞানীরা এর একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছেন । তবে, এটাও মনে রাখতে হবে যে অনেক রোগীর ক্ষেত্রে শুক্রাণুর সংখ্যা কম হবার কারণ স্পষ্ট বোঝা যায় না। ক্রিস হিউজ পুরুষের বন্ধ্যাত্বের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে একটি প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করেছেন। এতে তিনি একটি পানশালায় বসে তারই বন্ধুদের প্রশ্ন করেছেন যে তাদের মতে কী কী শুক্রাণুর সংখ্যা ও স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বন্ধুরা জবাবে উল্লেখ করেছেন বেশ কিছু কারণ - যেমন তাপমাত্রা, মাদক সেবন এবং অতিরিক্ত চাপা অন্তর্বাস পরার কথা। এর কোনটাই ভুল নয়। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: পুরুষের শুক্রাণু কমে যাচ্ছে, ‘বিলুপ্ত হতে পারে মানুষ’ আকর্ষণীয় হতে গিয়ে 'সন্তান জন্মানোর ক্ষমতা হারান পুরুষেরা' মেয়ে শিশুর চেয়ে ছেলে শিশু বেশি জন্মায় কেন? 'আমি ৮০০ সন্তানের পিতা' জমিয়ে রাখা শুক্রাণু থেকে যমজ শিশুর জন্ম ভারতে বায়ুদূষণ থেকে শুরু করে জীবনযাপন পদ্ধতি পর্যন্ত অনেক কিছুই শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বায়ুদূষণ থেকে শুরু করে জীবনযাপন পদ্ধতি পর্যন্ত অনেক কিছুই শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীরা সাধারণভাবে যে কারণগুলোর কথা উল্লেখ করেন এর মধ্যে প্রধান ক'টি এখানে উল্লেখ করা হলো। . পুরুষের দেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বা কম হরমোন উৎপাদন। . ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম নামে এক ধরণের জেনেটিক সমস্যা। . কোন কোন শিশুর জন্মের সময় অন্ডকোষ দেহের ভেতরেই রয়ে যায়। এটিও শুক্রাণুর সমস্যা ঘটাতে পারে। . দেহের যে নালীগুলো অন্ডকোষ থেকে শুক্রাণু বহন করে নিয়ে যায় তা জন্ম থেকে অনুপস্থিত থাকা, বা কোন রোগ বা আঘাতজনিত কারণে নালীগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া। . যৌনাঙ্গের কোন সংক্রমণ যেমন ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া, বা প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের প্রদাহ। . অন্ডকোষের শিরা বড় হয়ে যাওয়া বা ভ্যারিকোসিলস। . অন্ডকোষে কোন অস্ত্রোপচার বা হার্নিয়ার অপারেশন। . অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান, গাঁজা এবং কোকেনের মত মাদক সেবন। . অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া বা স্থূলতা। . কিছু কিছু ওষুধ, যেমন টেস্টোস্টেরন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, দীর্ঘকাল ধরে এ্যানাবোলিক স্টেরয়েড ব্যবহার, কেমোথেরাপির মত ক্যান্সারের ওষুধ, কিছু কিছু এ্যান্টিবায়োটিক বা বিষণ্ণতা কাটানোর ওষুধও শুক্রাণুর মান ও সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে। শুক্রাণুর সংখ্যা ও স্বাস্থ্য বাড়াতে আপনি কী করতে পারেন? বিজ্ঞানীরা বলেন, আপনার জীবনযাপনে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেও আপনি শুক্রাণুর সংখ্যা ও স্বাস্থ্য বাড়াতে পারেন - যাতে সন্তানের পিতা হবার সম্ভাবনা বাড়বে। পুরুষদের অন্ডকোষ দেহের বাইরে ঝুলে থাকে, কারণ তাতে দেহের ভেতরের তাপমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম উষ্ণ অবস্থায় সবচেয়ে ভালো মানের শুক্রাণু তৈরি হতে পারে। বেন তার বন্ধুদের সাথে শুক্রাণুর স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেছেন সেকারণে একজন পুরুষ যদি দীর্ঘ সময় ধরে খুব গরম পরিবেশে কাজ করেন, তাহলে তার উচিত হবে নিয়মিত স্বল্প সময়ের বিরতি নেয়া। তাকে যদি দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকতে হয়, তাহলে তার নিয়মিত উঠে দাঁড়ানো এবং একটু হেঁটে আসা দরকার। অতিরিক্ত টাইট অন্তর্বাস পরার ফলে অন্ডকোষের তাপমাত্রা অন্তত ১ ডিগ্রি বেড়ে যায় বলে মনে করা হয়। অবশ্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে চাপা অন্তর্বাসের কারণে শুক্রাণুর মানের ওপর তেমন কোন প্রভাব পড়ে না। তবে সন্তান নেবার পরিকল্পনা থাকলে আপনি অপেক্ষাকৃত ঢিলা আন্ডারওয়্যার পরতে পারেন। সুষম খাদ্য খান, মদ ও সিগারেট ত্যাগ করুন সন্তানের পিতা হবার চেষ্টা করছেন, এমন পুরুষদের ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, গাঁজা, কোকেন বা স্টেরয়েড গ্রহণ এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এগুলো পুরুষের শুক্রাণুর মান ও উর্বরতা কমিয়ে দেয়। সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের বেশি মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। খাদ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণে ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খাওয়া - যা শুক্রাণুর স্বাস্থ্য ভালো রাখবে। প্রতিদিন ভাত, আলু বা রুটির সাথে অন্তত পাঁচ রকম ফল ও সবজি, শিম, ডাল এবং দই খান। সাথে আরো খাবেন মাছ, ডিম ও মাংসের মত প্রোটিনজাতীয় খাদ্য। পুরুষদের ওজন বেশি হলে তা শুক্রাণুর সংখ্যা ও মান কমিয়ে দিতে পারে। তাই নিজের বডি ম্যাস ইনডেক্স বা বিএমআই হিসাব করুন এবং তা ২৫-এর নিচে রাখুন। বিএমআই হিসেব করা খুবই সহজ । আপনার ওজনকে (কিলোগ্রামে) আপনার উচ্চতার (মিটারে) বর্গ দিয়ে ভাগ করলে যে সংখ্যাটা পাবেন - তাই হলো আপনার বিএমআই। এটা ২৫ এর বেশি হলেই আপনাকে ওজন কমানোর জন্য শরীরচর্চা এবং খাবারদাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সবশেষে মানসিক চাপমুক্ত থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপের কারণে যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে, কমে যেতে পারে শুক্রাণু উৎপাদন। পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব কত ব্যাপক? বিশেষ করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোতে - এটা এক বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে - গত ৪০ বছর ধরেই পশ্চিমা দেশগুলোয় পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাচ্ছে। পুরুষদের পেশী বৃদ্ধির সহায়ক স্টেরয়েড শুক্রাণুর সংখ্যা কময়ে দিতে পারে ১৯৭৩ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সময়কালের উপাত্ত নিয়ে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের পুরুষদের ওপর করা হয়েছিল এ গবেষণা। বিশ্বজুড়ে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের ওপর চালানো ২০১৫ সালের এক জরিপে দেখা যায়, পৃথিবীতে দম্পতিদের প্রায় ১৫ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন । এর মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তান না হবার জন্য শুধু পুরুষই দায়ী, আর সার্বিকভাবে বন্ধ্যাত্বের পেছনে পুরুষের ভুমিকা আছে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে । এই জরিপে দেখা যায়, ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশে পুরুষদের কারণে বন্ধ্যাত্বের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ এবং এশিয়া মহাদেশে এর পরিমাণ ৩৭ শতাংশ । কিন্তু গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের ব্যাপারে নির্ভুল পরিসংখ্যানের অভাব রয়েছে। এর কারণ, নারীদের বন্ধ্যাত্ব নিযে যতটা আলোচনা হয়, নানা সামাজিক কারণে অনেক দেশেই পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব নিয়ে ততটা আলোচনা হয় না। পুরুষদের ওপর সামাজিক চাপ ফিরে আসি দুই ভাই ক্রিস আর বেন হিউজের কথায়। ডাক্তারি পরীক্ষায় ক্রিসের শুক্রাণুর সংখ্যা স্বাভাবিক পাওয়া গেছে, কিন্তু বেন এখন টেস্টোস্টেরন ওষুধ নিচ্ছেন - যাতে তার শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ে। দুই ভাইই একমত যে এটা এমন এক বিষয় যা নিয়ে পুরুষদের মধ্যে আরো বেশি কথাবার্তা হওয়া উচিত। "আমরা যখন পাবে গিয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বললাম, তখন দেখলাম আমরা সবাই আসলে পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে খুবই কম জানি" - বললেন ক্রিস। দম্পতির সন্তান না হবার পেছনে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই কারণ পুরুষ, গবেষকরা বলেন দুই ভাই মনে করেন, শুধু যে এ ব্যাপারে জ্ঞানের অভাব আছে তাই নয়, পুরুষরা এ নিয়ে কথা বলতে লজ্জাবোধ করে। কারণ পুরুষত্ব সম্পর্কে সমাজে যেসব ধারণা প্রচলিত আছে তা ছেলেদের ওপর নানা রকম সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে। "আমরা যৌন শিক্ষা পেয়েছি, কিন্তু উর্বরতা নিয়ে কথা বলতে গেলে পুরুষরা অস্বস্তি বোধ করতে পারে, কারণ এর সাথে পুরুষত্বের একটা সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়।" "একজন পুরুষ যদি নারীকে গর্ভবতী করতে না পারে তাহলে সে অপরাধবোধে ভুগতে পারে, কিন্তু ব্যাপারটা আসলে দু'জনেরই" - বেন বলছিলেন, "আমি এবং ক্রিস যখন তরুণ বয়েসে বান্ধবীদের সাথে ঘুরে বেড়াতাম, তখন আমরা তো তাদেরকে গর্ভবতী করতে চাইছিলাম না। কিন্তু তা চাইলেও পারবো কিনা তা আমরা জানতাম না। " বেনের মতে, এটা শুনতে অদ্ভুত শোনাতে পারে কিন্তু তরুণ -যুবকদের উচিৎ তাদের উর্বরতা পরীক্ষা করা এবং তিনি তার বন্ধুদের এ পরামর্শ দিচ্ছেন। ক্রিস বলছেন, গুগলে ফার্টিলিটি বিষয়ে সার্চ করতে গেলে মেয়েদের সম্পর্কে যত তথ্য আসে, পুরুষদের ব্যাপারে তথ্য আসে অনেক কম। তিনি মজা করে বলছেন, "এমন কি ইন্টারনেটও পুরুষদের উর্বরতার প্রশ্নটিকে খারাপ চোখে দেখছে।" বেন বলছেন, "পুরুষরা এ বিষয়টা চেপে যায়, কারণ সমাজের ধারণাটা এমন যেন পুরুষদের কোন সমস্যা থাকতে পারবেনা, তাদের হতে হবে শক্তিমান। কিন্তু এটা আসলে মোটেও ঠিক নয়।" "আমি শুধু বলবো, পুরুষরা - আপনারা এ নিয়ে কথা বলুন।"
পাশ্চাত্যে জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান লাভ আইল্যান্ডে একবার প্রতিযোগী হয়েছিলেন ক্রিস হিউজ।
একের পর এক গবেষণা বলছে, জ্বর-কাশির চেয়ে স্বাদ-গন্ধ হারানোই কোভিড রোগের প্রধান উপসর্গ হয়ে দেখা দিচ্ছে কিন্তু যখন পাউরুটির সাথে টম্যাটো সসে সেদ্ধ শিমের বিচি খাওয়ার সময় তিনি কোনো গন্ধ পেলেন না, তখন ২৩ বছরের এই যুবক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। “আমি ধরেই নিলাম, অন্য কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছে। ঢক ঢক করে পুরো এক গ্লাস অরেঞ্জ স্কোয়াশ খেলাম, কিন্তু এবারও কোনো গন্ধই পেলাম না।“ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ ঢুকলো তার মনে। জরুরী স্বাস্থ্য হেল্পলাইন ১১১-এ ফোন করলেন তিনি, কিন্তু "গায়ে জ্বর বা কাশি নেই" শুনে তারা বললো, কোনো চিন্তা নেই। “তারা বললো তুমি কাজে যেতে পারো, সমস্যা নেই। কিন্তু হঠাৎ করে স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া নিয়ে আমি একেবারেই স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। আমার মনে হচ্ছিল, এটা কাকতালীয় হতে পারে না।“ স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে ড্যান বাড়িতে আইসোলেশনে চলে যান। বাড়িতে মা এবং বোন। মা বয়স্কদের পায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন, আর বোন একটি শিশু হাসপাতালের আইসিইউ নার্স। তার উদ্বেগের কথা শুনে ড্যানের ম্যানেজার তার করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করলেন। কিছুদিন পর ফলাফলে দেখা গেল তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ। দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অনেকে জ্বর বা কাশি শুরুর আগেই স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলছেন “আমি যদি সরকারের কথা শুনে কাজে যাওয়া অব্যাহত রাখতাম, রোগীদের নিয়ে কাজ করতাম, তাহলে হয়তো অনেকের দেহে আমার কাছ থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তো।“ এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বা এনএইচএস শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা এবং ঘন-ঘন কাশিকেই কোভিডের অন্যতম প্রধান দুই উপসর্গ হিসাবে বিবেচনা করছে। কিন্তু একের পর এক গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে জ্বর বা কাশি শুরুর আগেই তারা স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলছেন। ব্রিটিশ রিনোলজিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট এবং শীর্ষ নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ক্লেয়ার হপকিন্স বলছেন, জ্বর বা কাশির চেয়েও হঠাৎ স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া কোভিডের আরো ‘বিশ্বাসযোগ্য‘ উপসর্গ হতে পারে। কেন সরকার এখনও এই উপসর্গকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, তা নিয়ে তিনি এবং তার অনেক সহকর্মী হতাশ। গত প্রায় দুই মাস ধরে প্রফেসর হপকিন্স বলে চলেছেন যে স্বাদ-গন্ধ কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখলেই মানুষকে দ্রুত আইসোলেশনে যাওয়ার পর পরামর্শ দেওয়া উচিৎ। গত ১৯শে মার্চ ব্রিটেনের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞদের সমিতির পক্ষ থেকে প্রথম একটি প্রেস-বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে বলা হয়, কোভিড রোগীরা স্বাদ-গন্ধ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়ার পর কোভিডের পরীক্ষা করাতে এসেছেন একজন ব্রিটিশ প্রফেসর হপকিন্স বলছেন, “দুই মাস আগে আমরা শুধু সন্দেহ করছিলাম, কিন্তু এখন এই সন্দেহ প্রমাণ হিসাবে বিবেচনার দাবি রাখে।“ স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়ার একমাত্র উপসর্গ প্রফেসর ক্লেয়ার হপকিন্স বলছেন, কোভিডে আক্রান্ত হলে হঠাৎ করেই রোগীর স্বাদ-গন্ধ চলে যেতে পারে। সর্দিতে নাক বন্ধ না হলেও এটা ঘটতে পারে। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম শুরুতেই এই উপসর্গ হাজির হতে পারে, অথবা অন্য উপসর্গের সাথে সমান্তরালভাবেও এটি দেখা দিতে পারে। তিনি বলছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বাদ-গন্ধ নষ্ট হওয়াটাই একমাত্র উপসর্গ হিসাবে দেখা দিচ্ছে। রোগীরা খেতে পারছেন না। প্রফেসর ক্লেয়ার বলছেন, ৪০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিভাগ এখনও খতিয়ে দেখছে যে স্বাদ-গন্ধ হারানোকে করোনাভাইরাসের উপসর্গের তালিকায় ঢোকানো উচিৎ কি-না। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রর (সিডিসি) সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ফ্রান্স এরই মধ্যে হঠাৎ স্বাদ-গন্ধ নষ্ট হওয়াকে কোভিডের উপসর্গের তালিকায় জায়গা দিয়েছে। প্রমাণ মিলছে একের পর এক গবেষণায় একের পর এক গবেষণাও বলছে, কোভিডে আক্রান্তদের সিংহভাগই স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়ার কথা বলছে। লন্ডনের কিংস কলেজের তৈরি একটি করোনাভাইরাস ট্র্যাকার অ্যাপের মাধ্যমে পাওয়া ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এই অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে যারা কোভিড রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ৫৯ শতাংশই বলেছেন তারা হঠাৎ করেই নাকে গন্ধ পাচ্ছেন না, জিভে স্বাদ পাচ্ছেন না। কিংস কলেজ ও ইংল্যান্ডের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে যে প্রায় সাত হাজার লোক পরীক্ষায় কোভিড পজিটিভ হয়েছেন, তাদের ৬৫ শতাংশই বলছেন তাদের স্বাদ-গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা চলে গিয়েছিলো। স্বাদ-গন্ধের ক্ষমতা ফিরে আসছে কিনা তা বুঝতে ড্যান এখন প্রতিদিনই লবণ-ভিনেগার মেশানো আলুর চিপস খাচ্ছেন ওই গবেষকরা বলছেন, জ্বরের চেয়ে স্বাদ-গন্ধ হারানো কোভিডের আরো নিশ্চিত একটি উপসর্গ হিসাবে বিবেচিত হওয়া উচিৎ। গন্ধ ফিরে পেতে লাগতে পারে দেড় বছর ব্রিটেনের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ক্লেয়ার হপকিন্স বলছেন, আক্রান্ত হওয়ার সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি ফিরে আসছে। কিন্তু ১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগছে। তিনি বলছেন, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা চিরতরে চলে যেতে পারে। কখনো কখনো তা ফিরে পেতে দেড় বছর লেগে যেতে পারে। এ নিয়ে ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন এবং বেলজিয়ামের কয়েকজন ডাক্তারের সাথে কাজ করছেন প্রফেসর হপকিন্স । তারা সবাই একমত হয়েছেন যে, মাথায় আঘাত না পেয়েও বা সর্দিতে নাক বন্ধ না হলেও কেউ যদি হঠাৎ স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলেন, তাহলে তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। “গবেষণায় আমরা দেখেছি অন্য কোনো উপসর্গ ছাড়াই যারা স্বাদ-গন্ধ হারাচ্ছেন, তাদের কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশেরও বেশি।“ প্রফেসর হপকিন্স বলছেন, জ্বরই বরং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার খুব নির্ভরযোগ্য উপসর্গ নয়, কারণ নানা কারণে মানুষের জ্বর হতে পারে, এবং কোভিডে আক্রান্তদের মধ্যে বড়জোর ৪০ শতাংশের জ্বর হচ্ছে। উপসর্গ নিয়ে আরো একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পের সাথে জড়িত ছিলেন প্রফেসর হপকিন্স। চার হাজারেরও বেশি কোভিড রোগীর ওপর চালানো ওই গবেষণায় দেখা গেছে, রোগীদের গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা ৮০ শতাংশ কমে গেছে। স্বাদ নেয়ার ক্ষমতা কমে গেছে ৬৯ শতাংশ। স্বাদ-গন্ধহীনতা কি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ? নিজেকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন করোনাভাইরাস থেকে নতুন করোনাভাইরাস কত দ্রুত ছড়ায়? কতটা উদ্বেগের? করোনাভাইরাস ঠেকাতে যে সাতটি বিষয় মনে রাখবেন কোথায় কতোক্ষণ বেঁচে থাকে কোভিড-১৯ এর জীবাণু, নির্মূলের উপায় করোনাভাইরাস নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন প্রফেসর হপকিন্স মনে করেন, স্বাদ-গন্ধ কমে যাওয়ার পরও জরুরী সেবায় নিয়োজিত যেসব লোকজন কাজ করে গেছেন, তারা হয়ত ভাইরাস ছড়ানোর পেছনে ভূমিকা রাখছেন। “এমন অনেক কর্মী আমাদের বলেছেন, যেহেতু স্বাদ-গন্ধ কমে যাওয়ার উপসর্গকে সরকার বিবেচনা করছে না, সুতরাং তাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে, তাদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে না।“ তবে ব্রিটেনে সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছেন যেসব বিশেষজ্ঞ, তারা এখনও ঐক্যমত্যে পৌঁছুতে পারছেন না যে স্বাদ-গন্ধ হারানোর উপসর্গকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। ওদিকে তার স্বাদ-গন্ধের ক্ষমতা ফিরে আসছে কিনা, তা বুঝতে ড্যান এখন প্রতিদিনই লবন-ভিনিগার মেশানো আলুর চিপস খাচ্ছেন। তিনি বলছেন, স্বাদ কিছুটা ফিরলেও, গন্ধ এখনও ঠিকমতো পাচ্ছেন না। “রান্নার সময় আমি যখন রসুন দিচ্ছি, অন্যরা বলছে তারা কড়া গন্ধ পাচ্ছে, কিন্তু আমার নাকে গন্ধ আসছে খুবই কম।“ বিবিসি বাংলায় আরো খবর: করোনাভাইরাস চিকিৎসায় কীভাবে কাজ করবে প্লাজমা থেরাপি? বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু তিনশো ছাড়াল বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা তিন লাখ ছাড়াল জীবাণুনাশক টানেলে 'উল্টো বিপদের' আশঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের
ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস হাসপাতালের ফিজিওথেরাপিষ্ট ড্যানের নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হতে শুরু করলে, তিনি ধরেই নিয়েছিলেন যে তার হে-ফিভার অর্থাৎ ফুলের রেণু থেকে অ্যালার্জি হয়েছে।
লাদাখে ভারতীয় সেনাবাহিনীর টহল। এই অঞ্চলে ভারতের অবকাঠামো তৈরি নিয়ে চীন উদ্বিগ্ন কারণ চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপাত্র দি গ্লোবাল টাইমসেও গত কয়েকদিনে ভারতকে লক্ষ্য করে একই ধরণের আক্রমণাত্মক লেখালেখি হচ্ছে। চীন এবং ভারতের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ নতুন কোনো বিষয় নয়, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখন হঠাৎ করে এই করোনাভাইরাস প্যানডেমিকের ভেতর এই সঙ্কট শুরু হলো কেন? পশ্চিমা এবং ভারতীয় অনেক বিশ্লেষক লিখছেন, বিশ্বে নিজেদের প্রভাব বলয় বিস্তারের চেষ্টা চীন বেশ কিছুদিন ধরে করে চলেছে, এবং করোনাভাইরাস প্যানডেমিকে সারা বিশ্ব যখন ব্যতিব্যস্ত, তখন বেইজিং এটাকে একটা লক্ষ্য হাসিলের সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করছে। শুধু সীমান্তে চাপ তৈরি নয়, হংকংয়ে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে চীন। এসব পর্যবেক্ষক বলছেন, ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পরও সঙ্কটে পড়া দেশগুলোকে ঋণ-সাহায্য দিয়ে অনেকটা একইভাবে বেইজিং তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। লাদাখে অবকোঠামো নিয়ে উদ্বিগ্ন চীন তবে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, লাদাখ সীমান্তের গালোয়ান উপত্যকায় গত কয়েকবছর ধরে ভারত যেভাবে রাস্তাঘাট সহ অবকাঠামো তৈরি করছে তাতে চীন সত্যিই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে, এবং ভারতের এই কর্মকাণ্ড তারা আর মেনে নিতে রাজি নয়। কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, চীন ও ভারতের সীমান্ত রেখা নিয়ে অস্পষ্টতা এবং বিরোধ ঐতিহাসিক, “কিন্তু গত দশ-বারো বছরে সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় ভবিষ্যতে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসাবে ভারত যেভাবে ব্যাপক হারে অবকাঠামো নির্মাণ করে চলেছে তাতে চীন বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বিগ্ন।“ তিনি বলেন, ভারতে কট্টর জাতীয়তাবাদী একটি সরকারের ক্ষমতা-গ্রহণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সামরিক এবং রাজনৈতিক নৈকট্যে বেইজিংয়ের উদ্বেগ দিন দিন আরো বাড়ছে। হংকং ভিত্তিক এশিয়া টাইমসে তার এক লেখায় সুইডিশ বিশ্লেষক বার্টিল লিনটার বলছেন, লাদাখে ভারতের সড়ক নির্মাণকে চীন একটি হুমকি হিসাবে দেখতে শুরু করেছে। তিনি বলছেন, বিশেষ করে পশ্চিম জিনজিয়াং প্রদেশের কাসগর শহর থেকে তিব্বতের রাজধানী লাশা পর্যন্ত সামরিক কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে মহাসড়ক চীন তৈরি করেছে তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীনের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: লাদাখে চীন ও ভারতের সৈন্যরা মুখোমুখি, তীব্র উত্তেজনা ‘ভারতের সীমানায় ঢুকে দেখুক চীন, বুঝবে কী হয়’ চীন-ভারত সংকটে সমাধানের পথ কী? লাদাখে চীন-ভারত সীমান্তে পানগং লেক। এই এলাকায় দুই দেশই সৈন্য সমাবেশ করেছে এমনিতেই এই দুটো প্রত্যন্ত প্রদেশ এবং সেখানকার বাসিন্দাদের আনুগত্য নিয়ে চীন সবসময়েই উদ্বেগে। উপরন্তু এই মহাসড়কটি আকসাই চীন নামে যে এলাকার মধ্য দিয়ে গেছে সেটিকে ভারত তাদের এলাকা বলে বিবেচনা করে। এলাকাটি ভারতীয় মানচিত্রের অংশ। সুতরাং, মি. লিনটার বলছেন, সেই অঞ্চলের কাছে ভারতের অবকাঠামো নির্মাণের তৎপরতা চীন মেনে নিতে পারছে না। ‘ভারতের সেনাবাহিনীকে চরম মূল্য দিতে হবে‘ চীনের গ্লোবাল টাইমসে গত কয়েকদিনে বেশ কিছু সম্পাদকীয় এবং উপ-সম্পাদকীয়তে ভারতের বিরুদ্ধে এমন সব কড়া কড়া ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে যা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। ১৯শে মে প্রকাশিত সংখ্যায় তারা লাদাখের গালোয়ান উপত্যকায় ‘অবৈধ প্রতিরক্ষা স্থাপনা‘ তৈরির জন্য ভারতকে সরাসরি অভিযুক্ত করেছে। লেখা হয়েছে, “ভারত যদি উসকানি অব্যাহত রাখে তাহলে তাদের সেনাবাহিনীকে চরম মূল্য দিতে হবে।“ ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের প্রসঙ্গ টানছে গ্লোবাল টাইমস। ২৫মে মে এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে - “যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের সম্পর্কে উত্তেজনা চলছে, তারপরও ১৯৬২ সালের যুদ্ধের সময়কার তুলনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীনের অবস্থান এখন অনেক সুদৃঢ়। চীনের অর্থনীতি এখন ভারতের চেয়ে পাঁচগুণ বড়।“ চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপাত্রে এ ধরণের কথাবার্তাকে অনেক বিশ্লেষক বিরল হুমকি হিসাবে ব্যাখ্যা করছেন। চীন-বিরোধী অক্ষশক্তির অগ্রভাগে ভারত? চীন ও ভারতের মধ্যে তাদের ৩৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ে বিরোধ নতুন কিছু নয়। আকসাই চীন অঞ্চলের ১৫০০০ বর্গমাইল এলাকাকে ভারত তাদের এলাকা বলে দাবি করে। অন্যদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য অরুণাচলকে চীন তাদের এলাকা বলে মনে করে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং সম্প্রতি চীনা সেনাবাহিনীকে “সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকার“ নির্দেশ দেন ১৯৬২ সালে সীমান্ত নিয়ে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ পর্যন্ত হয়েছে। ২০১৭ সালে ভুটানের সীমান্তে দোকলাম নামক একটি এলাকায় চীনের রাস্তা তৈরি নিয়ে চীন ও ভারতের সৈন্যরা ৭২দিন ধরে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল। যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, লাদাখে ভারতের রাস্তা নির্মাণ ছাড়াও ভারত চীনের জন্য অন্য মাথাব্যথারও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জোট বেধে চীনকে কোণঠাসা করার যে চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র শুরু করেছে, ভারতকে সেই জোটের অংশ হিসাবে দেখছে চীন। ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী, যিনি ভারত-চীন বৈরিতা নিয়ে গবেষণা-ধর্মী একটি বই লিখেছেন, বিবিসিকে বলেন, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রতিপত্তিকে বাগে আনার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র গত এক দশকে যে একটি “অক্ষশক্তি“ তৈরি করেছে, ভারত তার অগ্রভাগে।“ আমেরিকা মনে করে চীনকে শায়েস্তা করার ক্ষেত্রে যে দেশটি তাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে সেটি হলো ভারত।এজন্য গত দশ বছরের তারা ভারতের কাছে ২০০ কোটি ডলারের মত অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র বিক্রি করেছে।“ গ্লোবাল টাইমস সম্প্রতি তাদের বিভিন্ন লেখায় এমন কিছু মন্তব্য এবং তুলনা টেনেছে যাতে বোঝা যায় যে ভারতকে চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চীন বিরোধী একটি অক্ষের অংশ হিসাবে মনে করছে। ২৫মে মে চীনা একজন বিশ্লেষক লং শিং চুং এক উপ-সম্পাদকীয়তে লেখেন, “ভারত সরকার যেন তাদের দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কামানোর গোলা হিসাবে ব্যবহৃত না হতে দেন।“ “যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপার দুই দেশকেই সতর্ক থাকবে হবে, কারণ যে কোনো সুযোগেই শান্তি এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট করা যুক্তরাষ্ট্রের স্বভাব।“ ভেঙ্গে পড়ছে সম্পর্কের স্থিতি ১৯৮৮তে চীন এবং ভারতের মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়া হয় যে তারা সীমান্ত নিয়ে কোনো বিরোধে জড়াবে না, যাতে দুটো দেশই অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করতে পারে। কিন্তু গত ৩২ বছরে পরিস্থিতি আমূল বদলে গেছে। ১৯৬২র যুদ্ধের পর ৪৪ বছর বন্ধ থাকার পর ২০০৬ সালে নাথুলা সীমান্ত পথ ব্যবসার জন্য খুলে দেয়া হলেও মাত্র দুবছরের মধ্যেই বাণিজ্যের উৎসাহে ব্যাপকভাবে ভাঁটা পড়ে। ১৯৮৮ তে ভারত ও চীনের অর্থনীতি ছিল প্রায় একই মাপের। একই পরিমাণ অর্থ তারা প্রতিরক্ষায় খরচ করতো। কিন্তু এখন চীনের অর্থনীতি ভারতের পাঁচগুণ বড়। প্রতিরক্ষায় ভারতের চেয়ে চারগুণ বেশি খরচ করছে চীন। “সম্পর্কের হিসাব বদলে গেছে, “যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা এবং কূটনীতি বিষয়ক সাময়িকী ফরেন পলিসিতে লিখেছেন সুমিত ব্যানার্জি । চীন ভারতের প্রধাণ বাণিজ্যিক সহযোগী, যদিও চীনের রপ্তানির চেয়ে অনেক বেশি আমদানি করে ভারত। গতবছর বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৩০০ কোটি ডলার। বাণিজ্য কী সংঘাত ঠেকাতে সাহায্য করবে? ড. মাহমুদ আলী মনে করেন, বিশাল এই ঘাটতির কারণেই ভারতের মধ্যে এখন চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়েও আর তেমন আগ্রহ নেই। “বরঞ্চ ভারত এখন খোলাখুলি বলছে, চীন থেকে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এলে ভারত সবরকম সাহায্য দেবে।“ ড. আলী মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে যে বৃহত্তর কৌশলগত বিরোধ - যেটাকে নতুন এক শীতল যুদ্ধের সাথে তুলনা করা হচ্ছে - চলছে তার ভেতর ভারত ঢুকে পড়েছে। যেটা, তার মতে,পারমাণবিক অস্ত্রধর দুই প্রতিবেশির মধ্যে সীমান্ত সঙ্কট মোকাবেলার পথকে দিনকে দিন কঠিন এবং বিপদসংকুল করে ফেলছে। ।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং যখন গত সপ্তাহে চীনা সেনাবাহিনীকে “সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকার“ পরামর্শ দেন তাকে অধিকাংশ পর্যবেক্ষক ব্যাখ্যা করেছেন সীমান্তে নতুন করে শুরু হওয়া সঙ্কটে ভারতের প্রতি চীনের প্রচ্ছন্ন একটি হুমকি হিসাবে।
তিনি তখন মনে করেন যে এজন্যে তাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। মাত্র দুই হাজার টাকা দিয়ে তিনি শিশুদের কাপড় বানানোর ব্যবসা শুরু করেন। এক বছরের মাথায় তার মাসিক আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার টাকা। সীমান্তবর্তী শহর কুষ্টিয়াতে বসে সারা দেশে তিনি তার এই ব্যবসা পরিচালনা করেন। ত্রিশোর্ধ নারীদের জীবন সংগ্রাম নিয়ে বিবিসি বাংলার ধারাবাহিক 'তিরিশে ফিনিশ'-এর এই গল্পটি তসলিমা আক্তার লিমার জীবন সংগ্রামের। #তিরিশেফিনিশ
গৃহিণী তসলিমা আক্তার লিমা তার দুই সন্তানের চাহিদা মেটাতে গিয়েই একজন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পোস্টার। সালমান খান, ক্যাটরিনা কাইফ থাকলেও বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোনো ক্রিকেটারকে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম বড় একটা লক্ষ্য ক্রিকেটের মানোন্নয়ন, অর্থাৎ ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্রিকেটারদের একটা মঞ্চে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের সাথে খেলিয়ে তাদের অভ্যস্ত করে তোলা। বাংলাদেশের ক্রিকেটের যারা ভক্ত তাদেরও এই আসর থেকে চাওয়া-পাওয়া থাকে। যেহেতু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এবং এর প্রাথমিক যেসব চাহিদা ছিল তার মধ্যে একটি কম সময়ে দর্শকদের বেশি ক্রিকেটীয় বিনোদন দেয়া। বলিউড তারকা এনে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন হলেও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মানোন্নয়নে গত ছয়টি আসরে কতটা ভূমিকা রাখতে পেরেছে বিপিএল? বাংলাদেশের একটি ক্রিকেট সমর্থক গোষ্ঠী 'দৌড়া বাঘ আইলো'-র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবস্থাপক তানভীর আহমেদ প্রান্ত বিপিএল নিয়ে বেশ কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "আমি যদি নিরপেক্ষ সমর্থক হতাম এবং আমার সামনে বিগ ব্যাশ, আইপিএল ও বিপিএল দেখার অপশন থাকতো একই সাথে। আমি অবশ্যই বিপিএলকে সবার শেষে রাখতাম।" "একই মাঠ, একই উইকেটে দিনের পর দিন খেলা হচ্ছে। যেখানে কখনো কখনো রান হচ্ছে আবার হচ্ছে না। যে ডেথ ওভার বোলিং ও স্লগ ওভার হিটিং আমরা দেখতে চাই সেটা আমরা পাইনা।" টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম বিনোদনের উৎস মারকাটারি ব্যাটিং ও সেটাকে রুখতে বোলারদের প্রচেষ্টা। অনেক সময়ই একটা ভালো বোলিং লাইন আপ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ম্যাচের নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তানভীর আহমেদ প্রান্ত'র মতে বোলিং বা ব্যাটিং কোনো দিক থেকেই বিপিএল উপভোগ্য কোনো আসর নয়। বলিউড তারকা সালমান খান ও ক্যাটরিনা কাইফের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রিকেট নিয়ে কিছু খবর: নিজের বয়স নিয়ে যা বললেন আফগান বোলার রশিদ খান আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগের নেপথ্যে ক্রিকেট বিনোদনের খোরাক মেটাতে ব্যর্থ বিপিএল? একই ভেন্যুতে ২৮টি ম্যাচ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সপ্তম আসরে খেলা হবে মোট ৪৬টি। যেখানে ২৮টি ম্যাচ হবে একই ভেন্যুতে, সেটা ঢাকার মিরপুরে শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। যদিও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট প্রাথমিকভাবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএলের অনুকরণে বাণিজ্যিক একটা ভিত্তিতে শুরু করা হয়। কিন্তু ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের যে ক্রিকেট কাঠামো সেটার কোনো লক্ষণ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দেখা যায়নি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলে মোট আটটি দল, যারা হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে একে অপরের বিপক্ষে রাউন্ড রবিন লিগে প্রাথমিক পর্ব খেলে। যার ফলে প্রতিটি ভেন্যুতে উল্লেখযোগ্য দর্শক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটের আরো একটি বড় লক্ষ্য ছিল লিগ পদ্ধতির এই খেলার বিকেন্দ্রীকরণ। অর্থাৎ ঢাকা কেন্দ্রিক যে ক্রিকেট কাঠামোতে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এবং সীমিত ওভারের টুর্নামেন্টগুলো যেভাবে ঢাকার মাঠেই সীমাবদ্ধ ছিল সেটায় পরিবর্তন আনা। কিন্তু সাতটি মৌসুম শেষ হওয়ার পরেও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার আন্তর্জাতিক ভেন্যুগুলো এখনো অব্যবহৃত হয়ে আছে। যেমন খুলনার শেখ আবু নাসের ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও বগুড়ার শহীদ চান্দু ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ হয়না। যদিও সেখানে ঘরোয়া চারদিনের ম্যাচ আয়োজিত হয়, কিন্তু যথাযথ সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সুযোগ সুবিধার যে প্রক্রিয়া তা চালু না করায় সেসব মাঠে বিপিএলের মতো আসর আয়োজন সম্ভব হয়নি। যদিও এসব মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজিত হয়েছে। এই যেমন ২০১৫ সালেও খুলনার শেখ আবু নাসের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একটি টেস্ট ম্যাচ খেলে। ২০১৩ সালের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খুলনার এই স্টেডিয়ামে তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপরে চট্টগ্রাম নিয়মিত ম্যাচ আয়োজন করা হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের, সম্প্রতি সিলেটও যোগ হয়েছে এই ভেন্যুর তালিকায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান জানান, মাঠ বাংলাদেশে পর্যাপ্তই আছে, কিন্তু মূল সমস্যা টেলিভিশন সম্প্রচারের জন্য যেসব সুবিধা প্রয়োজন সেগুলো সব মাঠে নেই। "দেখেন আমাদের কক্সবাজারে একটা দারুণ স্টেডিয়াম আছে, খুলনায় আছে। সেসব জায়গায় নিরাপত্তাও বেশ ভালোই। কিন্তু টেলিভিশন রাইটস নিয়ে সমস্যাটা হয়, এটাও ধীরে ধীরে আমরা কাটিয়ে উঠবো, এটা একটা কমফোর্টেবল জায়গায় আসলে বাংলাদেশেও হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে খেলা সম্ভব।" মি. খান আরো বলেন, "আগে এমন ছিল একটা জায়গায় খেলতাম এরপর একটা এসেছে, এরপর দুইটা এরপর তিনটা। ভারতের অবকাঠামো অনেক ভালো এবং পুরাতন, রাজ্যভিত্তিক আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে।" ঢাকায় প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিপিএলের দলগুলো অঞ্চলভিত্তিক ক্রিকেটার নেয়া হয়নি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট যখন শুরু হয় সেটা ২০১২ সালে। সেবার বিপিএলের যে ছয়জন আইকন ক্রিকেটার ছিলেন তারা প্রত্যেকেই নিজেদের এলাকার প্রতিনিধিত্ব করতেন। যেমন ঢাকার মোহাম্মদ আশরাফুল খেলতেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসে, বগুড়ার মুশফিকুর রহিম খেলেন একই বিভাগের দুরন্ত রাজশাহীতে, বরিশালের শাহরিয়ার নাফিস খেলেন বরিশাল বার্নার্সে, মাগুরার সাকিব আল হাসান খেলেন একই বিভাগের খুলনার খুলনা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সে এবং অলক কাপালি যিনি সিলেটের ক্রিকেটার তিনি খেলেছেন সিলেট রয়্যালসে। কিন্তু বিপিএল যখন বিরতি দিয়ে ফের আসে তখন আর ক্রিকেটারদের আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি আর দেখা যায়নি। ফলে বিপিএলের প্রাথমিক একটা লক্ষ্য 'অঞ্চলভিত্তিক' ফ্র্যাঞ্চাইজ এবং যেসব জেলা ও বিভাগের ভক্তরা নিজ নিজ বিভাগ বা জেলার দলকে সমর্থন দিবে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। মাঠে যেসব দর্শকরা এসেছেন তারা নির্দিষ্ট তারকা ক্রিকেটার বা তারকা খেলোয়াড়দের দেখতেই মাঠে আসেন, নির্দিষ্ট দলের সমর্থন আর ওভাবে দেয়া হয়নি। উমাইয়া জান্নাত বাংলাদেশের ক্রিকেটের একজন নিয়মিত দর্শক, তিনি মূলত বিপিএল দেখেন কেন সেই প্রশ্ন রেখেছিলাম, "অনেক দেশের ক্রিকেটারদের সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা খেলেন এটা দেখতে ভালো লাগে, তাই বিপিএল দেখতে আসি।" কিন্তু তিনি বলেন মানের দিক থেকে বিপিএল তার প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সপ্তম আসরে একটি দলের দায়িত্বে আছেন আকরাম খান। তিনি এবার রংপুর রাইডার্সের পরিচালক। দলে আঞ্চলিক খেলোয়াড়ের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি বলেন, "এখন এটা ফ্রাঞ্চাইজিদের ওপর ছিল। এই যে ড্রাফট সিস্টেম সেখানে আসলে চাইলেই ইচ্ছামতো ক্রিকেটার পায় না। তাই ক্রিকেটারের এলাকার চেয়ে মানের দিকে লক্ষ্য রাখা হয় ও দলের প্রয়োজন কোনটা সেটা দেখা হয়।" ক্রিকেটের উন্নয়ন কি হয়েছে? বাংলাদেশের ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ইতিবাচক প্রভাব খুব একটা দেখা যায়নি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এই টুর্নামেন্ট মোট ছয়বার এর আগে আয়োজিত হয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থান এখন নয় নম্বরে, বাংলাদেশের ওপরে আছে আফগানিস্তানের মতো দল যারা ক্রিকেট খেলছে খুব বেশিদিন হয়নি। আফগানিস্তানেরও ঘরোয়া প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট হয় নিরপেক্ষ কোন ভেন্যুতে। সেখানেও বিদেশি ক্রিকেটাররা খেলে। এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের দুজন বোলার বিশ্ব টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের এক ও দুই নম্বরে আছেন- রশিদ খান ও মুজিব উর রহমান। আবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বর্তমান সেরা অলরাউন্ডারও মোহাম্মদ নবী আফগানিস্তানের ক্রিকেটার। ওদিকে পাকিস্তানের যে ফ্র্যাঞ্চাইজ টি-টোয়েন্টি লিগ পাকিস্তান সুপার লিগ, সেখান থেকেও ভালো ক্রিকেটার উঠে আসছে নিয়মিত। পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড যদিও নিরাপত্তা ইস্যুতে ঘরের মাটিতে খুব বেশি ম্যাচ খেলাতে পারেনি তবুও পাকিস্তান এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর টি-টোয়েন্টি দল। নতুন বিপিএলের লোগো উন্মোচনের সময় আয়োজকরা মানসম্মত খেলোয়াড়ের অভাব বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে, বিদেশি ক্রিকেটারদের যে ভূমিকা সেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ থাকে। কিন্তু ক্রিস গেইল, শহীদ আফ্রিদিরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে ফ্রিল্যান্সার ঘরানা সেখানে আসলেও তারাও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তেমন অংশগ্রহন দেখা যায়না। এর আগেও ক্রিস গেইল, অল্প কিছু ম্যাচ প্রতি আসরে খেলেছেন। এছাড়া আরো যারা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার আছেন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারাও একই সময়ে নানা দেশে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকেন। আরেকটা ব্যাপার হয় যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের যে সময় সেই সময়টাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও চলে বিশ্বজুড়ে। যেমন এই সময় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রা নিজ দেশের হয়ে খেলছেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মিডিয়া বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস বলছেন আলাদা উইন্ডোর কথা। "আইপিএলের আলাদা উইন্ডো আছে শুধু, অন্য কোনো ঘরোয়া লিগের এমন উইন্ডো নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সাথে এখন বোর্ডগুলো আলোচনা করছে, যে প্রাইম যেসব টি-টোয়েন্টি লিগ সেগুলোর জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিলে আরো বেশি খেলোয়াড় পাওয়া যেত এসব আসরে।" আরো খবর: দুর্নীতির টাকার বেশিরভাগ বিনিয়োগ ফ্ল্যাটে আর জমিতে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন যে তরুণী রোহিঙ্গা গণহত্যার জবাব দিতে হেগের পথে সু চি রোহিঙ্গা শিবিরে সহিংসতার মূলে ইয়াবার টাকার ভাগ যে দশটি বই জীবনে একবার হলেও পড়া উচিত
বাংলাদেশের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের নতুন এক আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোনো ক্রিকেটারের উপস্থিতি ছিল না। এবারের আসরে নতুন আঙ্গিকে, নতুন নামে সাতটি দল খেলছে কিন্তু কোনো দলেরই পরিচিতি পর্ব বা কোনো ধরণের ক্রিকেটারের অংশগ্রহন ছিল না বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের এই আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা ধরনের ভুয়া পরামর্শ। করোনাভাইরাস ঠেকাতে নানা ধরনের স্বাস্থ্য পরামর্শ দেখা যাচ্ছে - যেগুলো প্রায়ই হয় অপ্রয়োজনীয় নয়তো বিপজ্জনক। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। শুধু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় নয়, করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রুপ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেও ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে মহামারির এসময়ে ভুয়া খবর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর চড়াও হয়েছে সরকার। ভুয়া স্বাস্থ্য পরামর্শ সম্প্রতি ফেসবুকে এমন অসংখ্য পোস্ট দেখা গেছে যেখানে লেখা: রসুন খেয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে "যদিও রসুন একটা স্বাস্থ্যকর খাবার এবং এটাতে এন্টিমাইক্রোবিয়াল আছে" কিন্তু এমন কোন তথ্য প্রমাণ নেই যে রসুন নতুন করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট সংবাদপত্রে খবর বের হয়েছে যে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে একজন নারী দেড় কেজি কাঁচা রসুন খেয়ে মরণাপন্ন হয়েছে। ঢাকার বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক শারমিন ইয়াসমিন বলেন, এ ধরণের ভিত্তিহীন পরামর্শের কারণে মানুষ অনেক সময় মূল স্বাস্থ্যবিধি বাদ দিয়ে অন্যদিকে ঝুঁকে যেতে পারে। "মহামারির সময় মানুষের মন দুর্বল থাকে। তখন যে বিষয়টা প্রতিকার দেবে বলে মনে হয়, মানুষ তখন সেটা গ্রহণ করতে চায়। এর একটা ভয়াবহ দিক হচ্ছে রোগ প্রতিরোধের জন্য বৈজ্ঞানিক পন্থা থেকে মানুষ সরে আসতে চায়।" করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক নিয়ে নানা ভুয়া খবর ছড়িয়েছে অজ্ঞতা ও গুজব পৃথিবীজুড়ে সর্বশেষ মহামারি এসেছিল ১০০ বছর আগে যেটি ছিল স্প্যানিশ ফ্লু। তবে ডিজিটাল যুগে এটাই প্রথম মহামারি, যেটি পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে মানুষের হাতে কাছে এখন প্রচুর তথ্য। এর মধ্যে কোনটি গুজব আর কোনটি সত্য - এটি নির্ণয় করা মানুষের জন্য বেশ কঠিন। মার্চ মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় গুজব ছড়িয়েছিল যে থানকুনি পাতা খেলে করোনাভাইরাস আক্রমণ করতে পারবে না। একজন পীরের বরাত দিয়ে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে এই গুজব। এছাড়া টেলিফোনের মাধ্যমেও একজন থেকে আরেকজনের কাছে এই বার্তা পৌঁছে যায়। ফলে হাজার-হাজার মানুষ থানকুনি পাতা সংগ্রহ করতে নেমে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্তী নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণ করেন। তার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে - বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু মহামারির সাথে পরিচিত নয়, সেজন্য নানা রকম ভয় এবং উদ্বেগ থেকেই এমন তথ্য ছড়িয়েছে। "যখন এ রকম একটা ভয়াবহ রোগ, যার কোন ঔষধ নাই, মানুষ তখন অনেক কিছু ট্রাই করে। থানকুনি পাতার ঔষধি গুণ আছে,এটা পরীক্ষিত। কিন্তু এটার সাথে করোনার কোন সম্পর্ক নাই।" সুস্মিতা চক্রবর্তী, অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তিনি বলেন, মহামারির সময় মানুষ চিকিৎসা নিয়ে আশা খুঁজতে চায়। চিকিৎসকরা বলছেন, যে কোন মহামারির সময় মানুষ উদ্বেগ এবং আতঙ্ক থেকে নানা ধরণের প্রতিকারের উপায় খুঁজতে থাকে। এক্ষেত্রে যেসব তথ্য তাদের চিন্তাধারার সাথে মিলে যায়, সেগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকুক না থাকুক - তখন মানুষ সেগুলো গ্রহণ করে। ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক কাজি সাইফুদ্দিন বেন্নুর বলেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক যেসব ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে তার বেশিরভাগই অজ্ঞতা থেকে হয়েছে। "মহামারির সময় মানুষের মন দুর্বল থাকে। দুর্বল মনের মানুষ খড়কুটো দেখলেও আঁকড়ে ধরতে চায়। অনেক সময় সেখান থেকেও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন তথ্য পেলেও মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে," বলেন মি: বেন্নুর। ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি - চিকিৎসা থেকে ধর্ম বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব বিষয় ভাইরাল হয় সেগুলো আদৌ সত্য কি না তা যাচাই করে দেখে বিডি ফ্যাক্ট চেক এবং বুম বাংলাদেশ নামে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগে থেকেই গত আড়াই মাসে ৯০ টি ভাইরাল খবর যাচাই করে তারা দেখেছেন যে সেগুলো সত্য নয়। ভারতের সুপরিচিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠির বরাত দিয়ে কিছু স্বাস্থ্য পরামর্শ সম্প্রতি ফেসবুকে বেশ ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেবী শেঠিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে কাশি এবং জ্বর হলেই করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই। বুম বাংলাদেশ-এর কদরুদ্দীন শিশির বলেন, তারা যাচাই করে দেখেছেন, মি: শেঠি এ ধরণের কোন পরামর্শই দেননি। করোনাভাইরাসের সময় স্বাস্থ্য বিষয়ক ভুয়া খবর যেমন ছড়িয়েছে, তেমনি অন্য এমন কিছু বিষয় ছড়িয়েছে যেগুলোর রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় মাত্রা রয়েছে। এসব ভুয়া খবর ছড়ানোর সাথে ধর্মীয় গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও তাদের অনুসারীরা জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকেই এমন খবর ছড়িয়েছে যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চীনের প্রেসিডেন্ট দেশটির বিভিন্ন মসজিদে যাচ্ছেন এবং অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। করোনাভাইরাসের সময় ইন্টারনেটে যেসব গুজব ছড়িয়েছে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করেছে বেসরকারি সংস্থা সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া এন্ড ডেভেলপমেন্ট। আফিয়া সুলতানা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা আফিয়া সুলতানা বলেন, বাংলাদেশে যারা ওয়াজ-মাহফিল করেন তাদের মধ্যে অনেকে ইউটিউবের মাধ্যমে নানা ভিত্তিহীন কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। "মুসলমানদের করোনা হবে না, করোনা হচ্ছে আল্লাহর সৈনিক। চীনকে শাস্তি দেয়ার জন্য এবং বিধর্মীদের শাস্তি দেয়ার জন্য এটা আল্লাহ পাঠিয়েছে - এ রকম বহু কথা ইউটিউবে এবং ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছে," বলেন আফিয়া সুলতানা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিধি-নিষেধ গুজবের বিষয়টিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নতুন বিধি নিষেধ আরোপ করতে দেখা যাচ্ছে যার অংশ হিসেবে লেখক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী এবং কার্টুনিস্টসহ চারজনকে আটক করেছে এবং ১১ জনের বিরুদ্ধে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গুজবকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সরকারি অব্যবস্থাপনাকে ঢাকার চেষ্টাও করা হয়েছে। আক্রান্ত কিংবা মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বহু মর্মস্পর্শী বর্ণনা ফেসবুকের মাধ্যমে উঠে এসেছে। চিকিৎসা ব্যবস্থার দুরবস্থা নিয়ে ডাক্তার এবং নার্সরা নানা সমস্যা এবং হতাশার কথা ফেসবুকের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে একের পর এক বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। যেসব ডাক্তার এবং নার্স ফেসবুকে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ডাক্তার এবং নার্সরা যাতে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে না পারেন সেজন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে অনেকে ফেসবুকে তাদের ক্ষোভ এবং হতাশার কথা তুলে ধরেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্তী, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হবার পর থেকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা দেখে তিনি আতঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। "মানুষ হসপিটালে হসপিটালে দৌড়চ্ছে তার ভাই নিয়ে, মা নিয়ে, বাবা নিয়ে। কোন হসপিটাল তাদের রাখছে না। হসপিটালে ডাক্তারদের সরঞ্জাম নেই, ডাক্তাররা মারা যাচ্ছেন। এটা তো মেনে নেয়াও কঠিন।" "সমালোচনা করার অধিকার আমার আছে। আমি এদেশের একজন নাগরিক। কিন্তু গুজবটাকে এখন ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন যারা আধিপত্যশীল তারাই," বলছিলেন সুম্মিতা চক্রবর্তী। বাংলাদেশে ভুয়া খবর কিংবা গুজবের বিরুদ্ধে সাধারণত নজরদারি করে পুলিশ, র‍্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এসব সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তিরা সবসময় দাবি করেন, ভুয়া খবর নিশ্চিত হবার পরেই তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। কয়েকদিন আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেন, এপ্রিল মাসের শুরুতে তার মায়ের মৃত্যুর পর জানাজায় লোক সমাগম নিয়ে তিনি নিজেও ফেসবুকে অবমাননার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, অন্য এক ব্যক্তির জানাজার ছবি তার মায়ের জানাজার ছবি হিসেবে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে ছড়িয়েছে ঠিক একইভাবে এই ভাইরাসকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের ভুল খবর এবং মিথ্যা তথ্যও ছড়িয়েছে সমানতালে।
নিরাপত্তা হেফাজতে ভাইয়ের উপর নির্যাতনের বিষয়ে কথা বলছিলেন এই নারী। দু'হাজার ষোল সালের এক মধ্যরাত। আব্দুল আলীমের (ছদ্মনাম) বাসায় প্রবেশ করে সাদা পোষাকে পুলিশের বেশ কিছু সদস্য। কোন ওয়ারেন্ট ছাড়াই আব্দুল আলীমকে নিয়ে আসা হয় থানায়। তখনো মি. আলীম জানেন না তার অপরাধ কী? সকাল হতেই শুরু হয় তার ওপর নির্যাতন। মি. আলীম বলছিলেন, "থানার ভেতরে একটি রুমে ওরা আমাকে প্রথমে রশিতে ঝুলায়। এরপর আমার শরীর ঘোরাতে থাকে আর কয়েকজন পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। ঘণ্টা দুয়েক থেমে থেমে চলে এই নির্যাতন।" মি. আলীম বলছিলেন, এভাবে টানা আট দিন তাকে মারধর করা হয়। প্রতিদিন অন্তত: দুই ঘণ্টা। কিন্তু কোন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। মারধরের আওয়াজ মোবাইল ফোনে তার বাড়ির সদস্যদের শুনিয়ে টাকা চাওয়া হয়েছিলো। বলা হয়েছিলো, টাকা দিলে ছেড়ে দেবে। আব্দুল আলীম জানাচ্ছেন, তারা টাকা দিতে পারেননি। পরে ভাংচুরের একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে চারদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। আবারো চলে নির্যাতন। মি. আলীম প্রায় দশ মাস কারাভোগের পর জামিন পান। তবে তিনি পরে থানা হেফাজতে নির্যাতন বিষয়ে টুঁ শব্দটিও করেন নি। কোন মামলাও করেন নি। "আমি বা আমার পরিবার আসলে মামলা করার কথা ভাবিই নি। ছাড়া পেয়েছি এটাই ছিলো বড় কথা। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে কি নিজের জীবনকেই হুমকির মধ্যে ফেলবো?" মি. আলীমের পাল্টা প্রশ্ন। রিমান্ডে নির্যাতনের বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না অনেক ভূক্তভোগী। থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় এবং রিমান্ডে মি. আলীম তার উপর নির্যাতনের যে অভিযোগ করছেন, বাংলাদেশে এমন অভিযোগ নতুন নয়। এমনকি নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনাও আছে। এরকমই একটি মৃত্যুর ঘটনা আমাকে বলছিলেন পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী। ধরা যাক, তার নাম মানুসরা খাতুন। মানসুরা খাতুন জানাচ্ছিলেন, ২০১২ সালে পুলিশের হাতে তার বড় ভাই আটক হওয়ার একদিন পরই তার লাশ পাওয়া যায় হাসপাতালের মর্গে। "পুলিশের সোর্স আমার ভাইয়ের কাছে টাকা চাইছিলো। সে দেয় নাই। পরে একদিন পুলিশের এক এসআই কয়েকজন পুলিশ নিয়া আইসা আমার ভাইরে এলাকা থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। রাতে আমরা দেখা করতে যাই। প্রথমে দেখা করতে পারি নাই। কিছুক্ষণ পরে থানার বাইরে থেকেই ভাইয়ের কান্না আর চিৎকার শুনতে পাইতেছিলাম। ওরা আমার ভাইরে মারতেছিলো।" মানসুরা বলছেন, সেই রাত্রেই পরে থানায় ভাইয়ের সঙ্গে তারা দেখা করতে পেরেছিলেন। তখন তার ভাইয়ের শরীর ছিলো রক্তাক্ত। তার ভাই তখন জানিয়েছিলেন, ৫০,০০০ টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলবে। "পরদিন দুপুরে আমি থানা থিক্যা ফোন পাই। বলে আমার ভাই অসুস্থ্য। হাসপাতালে আছে। আমি আর আমার বোন দৌড়ায়া হাসপাতালে যাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাইরে খুইজ্যা পাই মর্গে। ভাইয়ের দুই পা নীল হয়া আছিলো। এমন মারছে যে, আমার ভাই যদি বাঁইচাও থাকতো, ওর পা দুইটা মনে হয় কাইটা ফেলতে হইতো।" মানসুরা বলছেন, তার ভাইয়ের একমাত্র কন্যাকে এখন তারাই দেখাশোনা করছেন। এ ঘটনায় পরে তিনি পুলিশের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে একটা মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় পুলিশের এক এসআই জেলহাজতে আছেন। গত পাঁচ বছরে নিরাপত্তা হেফাজতে মারা গেছেন তিন শতাধিক ব্যক্তি। আরো পড়তে পারেন: মুসলিম-প্রধান কাশ্মীরের চরিত্র বদলানোই মূল লক্ষ্য? ডেঙ্গু: কখন রোগকে মহামারী ঘোষণা করা হয়? বাংলাদেশে আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক অবস্থায় কিংবা রিমান্ডে নির্যাতনের এরকম ঘটনা আরো অনেক আছে। কিন্তু এসব বিষয়ে অবশ্য ভূক্তভোগীরা প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না। মামলাও করতে চান না। এ ধরণের ঘটনার তথ্য অনেক সময় মানবাধিকার সংগঠনগুলোই জনসমক্ষে নিয়ে আসে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার গত পাঁচ বছরে এরকম ১৩১টি নির্যাতনের সংখ্যা উল্লেখ করছে। এছাড়া পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় গত পাঁচ বছরে ৩০৭ জন নির্যাতনে মৃত্যুর শিকার হয়েছে বলে তথ্য দিচ্ছে সংস্থাটি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলছেন, নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন অহরহই ঘটছে। অথচ এটা বেআইনী। তিনি বলছেন, "আপনি কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই কারো বিরুদ্ধে কোন মতেই নির্যাতন করতে পারবেন না। এখানে নির্যাতনের পক্ষে কোন অজুহাতের সুযোগ নেই। এমনকি দেশে যদি যুদ্ধাবস্থাও থাকে এবং আটক ব্যক্তি যদি সন্ত্রাসীও হয়, তাহলেও তাকে নির্যাতন করা যাবে না। আমাদের সংবিধানে কিন্তু এরকমটাই বলা আছে।" বাংলাদেশে ২০১৩ সালে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন বন্ধে একটি আইন পাস করা হয়। যেখানে সব ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শাস্তি দেয়া এমনকি ভয়-ভীতি দেখানোও অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই আইনে যেমন কারো শাস্তি পাওয়ার নজীর নেই তেমনি আইন প্রতিপালনেও ঘাটতি আছে। সারা হোসেন বলছিলেন, "এখানে জবাবদিহিতার ব্যাপারটা আসলে নেই। কারণ যে সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, তারা নিজে কিন্তু জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করছে না। যেই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ বাহিনী তাদের কয় জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে? নির্যাতন বিষয়ে কী করা হয়েছে সে বিষয়ে সংসদেই বা কয়বার কথা হয়েছে?" বাংলাদেশে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন এবং এর যথাযথ আইনী প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ অবশ্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও করে থাকে। জেনেভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কিন্তু এসব অভিযোগের বিষয়ে সরকার কী করছে? গেলো সপ্তাহে জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটির আয়োজনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বাংলাদেশের আইন মন্ত্রী দাবি করেছেন, নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ পেলে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয় সরকার। এ বিষয়ে গেলো সপ্তাহে জেনেভা থেকে টেলিফোনে বিবিসি'র সঙ্গে কথা বলেন আইনমন্ত্রী। তিনি অবশ্য নির্যাতনের অভিযোগগুলোকে অনেক ক্ষেত্রেই অসত্য বলছেন। আনিসুল হক বিবিসিকে বলছিলেন, "দুই চারটা এরকম ইনসিডেন্ট যেগুলো হয়েছে, সেসবের দায়িত্বভার বর্তায় যাদের উপরে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। শুধু ডিপার্টমেন্টাল পদক্ষেপ না, আমরা ফৌজদারি পদক্ষেপও নিয়েছি।" "কিন্তু আমরা জাতিসংঘেও এটা বলেছি যে, অনেক ক্ষেত্রেই অনেক ব্যাপারে বাইরে থেকে যেসব তথ্য তারা (জাতিসংঘ) পান সেই তথ্যগুলো বস্তুনিষ্ঠও নয়, সত্যও নয়।" তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো যে তথ্য দিচ্ছে, তাতে করে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের বিপরীত চিত্রই পাওয়া যায়। কিন্তু এসব ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভূক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় যেমন নেন না তেমনি আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনী থেকেও নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ঘটনা খতিয়ে দেখার প্রবণতা দেখা যায় না।
বাংলাদেশে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ বিষয়ে গেলো সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির সভায় একটি পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। সভায় বিভিন্ন বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনের আলোকে বাংলাদেশের নির্যাতন পরিস্থিতি নিয়ে কমিটির সদস্যরা যেসব অভিযোগ তুলে ধরেছেন, তার বিপরীতে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী দাবি করেছেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতনের তথ্য অনেকক্ষেত্রেই অসত্য। এছাড়া এ ধরণের নির্যাতন প্রতিরোধে আইনী কাঠামোর উন্নতির কথাও তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী। কিন্তু বাংলাদেশে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র আসলে কী রকম?
ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ৮ থেকে ১৩ শতাংশ নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাই গর্ভে সন্তান আগে থেকেই ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতা যেন তৈরি না হয় সেজন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা প্রয়োজন। গর্ভধারণের ক্ষেত্রে নারীরা মূলত দুই ধরণের ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতার মধ্যে পড়তে পারেন। যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিস (টাইপ-১ বা টাইপ২) থাকে এবং যারা গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিস (জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস) আক্রান্ত হন। লক্ষণ: গর্ভধারণের আগে থেকেই যেসব নারীরা টাইপ-১ বা টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত থাকেন তাদের গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বেশকিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস হলে তা নানাভাবে সন্তানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে যেভাবে সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে: সন্তান গর্ভে থাকার সময় মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে নানাভাবে সন্তানের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা করণীয়: বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব হেলথ সায়েন্সের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডাক্তার হাজেরা মাহতাব বলেন টাইপ-১ বা টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিকে গর্ভধারণের অন্তত তিনমাস আগে থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। অধ্যাপক মাহতাব বলেন, "ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীর গর্ভধারণের পরিকল্পনার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে তার ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।" স্বাভাবিক অবস্থায় ডায়াবেটিসের জন্য যেসব ওষুধ গ্রহণ করতে হতো, গর্ভকালীন অবস্থায় ওষুধ গ্রহণের মাত্রা এবং ওষুধের ধরণ পরিবর্তিত হয় বলে জানান ডাক্তার মাহাতাব। "টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগী গর্ভধারণ করলে সাধারণভাবে খাওয়া যায় এমন হাইপোগ্লাইসেমিক এজেন্ট (রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ানোর ওষুধ) বন্ধ করতে হবে এবং উচ্চ রক্তচাপের ওষুধও পরিবর্তন করতে হবে।" অধ্যাপক মাহাতাবের মতে, গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। "গর্ভকালীন অবস্থায় খালি পেটে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৪.৫ মিলিমোল/লিটার থেকে ৫ বা সর্বোচ্চ ৫.৫ মিলিমোল/লিটার হতে পারে। আর খাওয়ার দু ঘন্টা পরে ঐ মাত্রা ৫ থেকে ৬ মিলিমোল/লিটার হতে পারে।" এছাড়া যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক সরকারি ওয়েবসাইট এনএইচএস-এর তথ্য অনুযায়ী ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের গর্ভধারণের চেষ্টার সময় থেকে গর্ভধারণের পর ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৫ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া উচিত। এর ফলে জন্মগ্রহণের সময় শিশুর বিভিন্ন রকম জটিলতা তৈরি হয় না। শরীরের অগ্ন্যাশয়ে তৈরি হয় ইনসুলিন জেস্টেশনাল বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস অনেকসময় গর্ভধারণের আগে ডায়াবেটিস না থাকলেও গর্ভধারণের পর নারীদের অনেকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হতে পারে। অনেকসময় গর্ভাবস্থায় রক্তে শর্করার হার বেড়ে যায় এবং সন্তান প্রসবের পর তা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে, এটিকেই গর্ভকালীন বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলে। গর্ভাবস্থায় শরীর অতিরিক্ত চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত ইনসুলিন - যে উপাদান রক্তে শর্করার হার নিয়ন্ত্রণ করে - তৈরি করত না পারায় এই লক্ষণ দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় যে কোনো সময়ে এটি দেখা গেলেও গর্ভধারণ করার প্রথম তিনমাস অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে এই ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অধিকাংশ সময়ই সন্তান প্রসবের পর এই ধরণের ডায়াবেটিসের লক্ষণ থাকে না। ওয়ার্ল্ড ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ৮ থেকে ১৩ শতাংশ নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ডায়াবেটিস থাকলে গর্ভাবস্থায় তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা জরুরি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের লক্ষণ জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ নেই। কিছু নারীর রক্তে শর্করার হার অতিরিক্ত বেড়ে গেলে কয়েকটি লক্ষণ দেখা যেতে পারে: তবে গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেও এরকম লক্ষণ দেখা যেতে পারে। কাজেই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আছে কিনা সে সম্পর্কে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অনেকসময় গর্ভধারণের আগে ডায়াবেটিস না থাকলেও গর্ভধারণের সময় নারীদের অনেকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হতে পারে কারা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে থাকেন: গর্ভাবস্থায় কিছু নারীর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে: যেভাবে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস গর্ভাবস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে যা করণীয় অধ্যাপক হাজেরা মাহাতাবের মতে পরিবারের সদস্যদের কেউ যদি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে এই জাতীয় ডায়াবেটিস সম্পর্কে আগে থেকে সচেতন হওয়া জরুরি। "গর্ভধারণের আগে থেকেই জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এটি যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে তাহলে দুশ্চিন্তা না করলেও চলবে।" তবে এই ধরণের ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে যদি গর্ভাবস্থায় সমস্যা তৈরি হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণ এবং নিয়মমাফিক হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা উচিত বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক মাহতাব। চিনি কেন বিশ্বজুড়ে বড় একটি সমস্যা? আবরার হত্যার বিচার হবে দ্রুতবিচার ট্রাইবুনালে ওয়াজে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য: তিন জন মাওলানা নিষিদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে চুপচাপ মুমিনুল, কোহলি আত্মবিশ্বাসী
নারীদের গর্ভধারণের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের বিভিন্ন ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। টাইপ-১ বা টাইপ২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীরা গর্ভধারণের সময় এবং গর্ভধারণের পর যেমন বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন, তেমনি যেসব নারীর ডায়াবেটিস নেই তারাও গর্ভাবস্থায় বিশেষ ধরণের ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার পর বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন।
আপনার আসনের ওপর ক্লিক করুন অথবা সার্চ বারে আপনার আসনের নাম লিখুন। (বাংলা বা ইংরেজি উভয় ভাষায় লিখতে পারেন) বিবিসি নিউজ বাংলার ইন্টারঅ্যাকটিভ এই পাতায় ১৯৯১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত পাঁচটি নির্বাচনে আপনার আসনের সকল প্রার্থীর ফলাফল, তাদের দল এবং ভোটসংখ্যার তালিকা। ২০১৮ এবং ২০১৪ সালের শুধুমাত্র সংসদ সদস্যদের তালিকা রয়েছে। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন ঐক্য ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ তরুণদের নিয়ে কি আছে নির্বাচনী ইশতেহারে? বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ কেন? ২০০১ এর ইশতেহার কতটা বাস্তবায়ন করেছিল বিএনপি? আওয়ামী লীগ নির্বাচনী অঙ্গীকার কতটা পূরণ করেছে
বাংলাদেশে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। দেখে নিন ফলাফল কেমন হচ্ছে: ২০১৮ নির্বাচন এবং পূর্ববর্তী সংসদ নির্বাচনের ফলাফল: ১৯৯১-২০১৪
হাসপাতালে জায়গা পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে দিল্লিতে ফলে গুরুতর অসুস্থ কোভিড রোগীদের বাড়িতেই যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন স্বজনরা। প্রাণ বাঁচানোর জন্য বহু মানুষকে কালো বাজারের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। সেখানে জরুরী ওষুধ এবং অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম এখন আকাশচুম্বী। কোভিড চিকিৎসার নামে এমন সব ওষুধ গোপনে বিক্রি হচ্ছে, যেগুলো আসল না নকল এবং আদৌ সেগুলো ব্যবহার করা উচিৎ কিনা - তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অংশু প্রিয়া তার কোভিড আক্রান্ত শ্বশুরের চিকিৎসার জন্য দিল্লি বা শহরতলী নয়ডার কোনো হাসপাতালেই জায়গা পাননি। শ্বশুরের অবস্থা ক্রমেই সঙ্গীন হয়ে পড়ছে, কিন্তু এক সিলিন্ডার অক্সিজেনের খোঁজে সারাদিন ঘুরেও ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়ে কালোবাজার থেকে ৫০ হাজার রুপি দিয়ে এক সিলিন্ডার অক্সিজেন কিনেছেন। স্বাভাবিক সময়ে এই সিলিন্ডারের দাম বড়জোর ছয় হাজার রুপি। তার শাশুড়িরও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। কিন্তু অংশু প্রিয়া জানেন যে এত দামে কালোবাজার থেকে আরেকটি সিলিন্ডার কেনা তার পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু দিল্লি বা নয়ডা নয়- লখনৌ, এলাহাবাদ, ইন্দোর বা এমন বহু শহরের এখন এই একই কাহিনি। হাসাপাতালে জায়গা না পেয়ে মানুষজন ঘরের ভেতরেই প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করছেন। অক্সিজেনের কালোবাজার কিন্তু ভারতের সিংহভাগ মানুষেরই কালোবাজার থেকে ওষুধ বা অক্সিজেন কেনার সামর্থ্য নেই। অনেক খবর এবং ছবি বেরিয়েছে যে কালোবাজার থেকে ওষুধ বা অক্সিজেন কিনতে না পেরে অনেক রোগী হাসপাতালের গেটে বা সিঁড়িতে প্রাণ হারিয়েছেন। দিল্লির একটি হাসপাতালের গেটে অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ার নোটিস বিবিসি বেশ কজন অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রেতার কাছে ফোন করলে তারা স্বাভাবিক দামের চেয়ে এমনকি দশগুণ পর্যন্ত দাম হাঁকে। বিশেষ করে দিল্লির পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। শহরে একটি হাসপাতালেও কোনা আইসিইউ বেড খালি নেই। অনেক সম্পন্ন পরিবার বহু টাকা দিয়ে বাড়িতে নার্স রেখে এবং ডাক্তার দিয়ে প্রিয়জনের শ্বাস-প্রশ্বাস অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে। রক্ত পরীক্ষা, এক্সরে বা সিটি স্ক্যান করা এখন অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়েছে। ল্যাবগুলোর ওপর অস্বাভাবিক চাপ, ফলে রিপোর্ট পেতে কয়েক দিন লাগছে। সিটি স্ক্যান করার সময় পেতেই কয়েকদিন লাগছে। ফলে ডাক্তারদের পক্ষেও রোগীর হাল বোঝা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। ডাক্তাররা বলছেন - বিভিন্ন জরুরী পরীক্ষার এই দেরিতে রোগীর জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। কোভিডের টেস্ট করতেও (আরটি-পিসিআর) কয়েকদিন লাগছে। আমি এমন কয়েকজন কোভিড রোগীর কথা জানি যাদের কাছে কোভিড পজিটিভ পরীক্ষার রিপোর্ট নেই বলে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেননি। দিল্লির বাসিন্দা অনুজ তিওয়ারি জানালেন, তার ভাইকে কোনো হাসপাতাল ভর্তি করতে রাজী না হওয়ার পর বাড়িতে একজন নার্স জোগাড় করেছেন তিনি। অনেক হাসপাতাল বলে দিচ্ছে তাদের কোনো খালি বেড নেই। আবার অনেক হাসপাতাল রোগী নিচ্ছেনা কারণ অক্সিজেন নেই বা ফুরিয়ে আসছে। শুধু অক্সিজেনের অভাবে দিল্লিতে বেশ কজন কোভিড রোগী গত কদিনে মারা গেছেন। অনেক হাসপাতাল প্রতিদিন অক্সিজেনের জন্য এসওএস নোটিস পাঠাচ্ছে। এমন বার্তার পর সরকারের পক্ষ থেকে অক্সিজেন ট্যাংকার হয়ত পাঠানো হচ্ছে, কিন্তু একদিনের ভেতরেই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। দিল্লির একজন ডাক্তার বলছেন হাসপাতালগুলো এভাবেই এখন চলছে, এবং “সত্যিকারের আশঙ্কা রয়েছে যে কোনো সময় বড় কোনো ট্রাজেডি ঘটতে পারে।“ লড়াই এখন বাড়িতে বাড়িতে হাসপাতালগুলোর এই পরিস্থিতি দেখে অনুজ তিওয়ারি ভাইকে বাঁচাতে অনেক টাকা দিয়ে একটি কনসেনট্রেটর কিনেছেন - যা দিয়ে বাতাস থেকে অক্সিজেন শুষে নেওয়া যায়। ডাক্তার তাকে রেমডিসিভির ওষুধ জোগাড় করতে বলেছেন। দোকানে না পেয়ে কালোবাজারের দ্বারস্থ হতে হয়েছে মি. তিওয়ারিকে। বিবিসি বাংলায় আরো পড়তে পারেন: যে শহরে শ্বাস নিতে পারাই এখন বিলাসিতা মোদীর ভাষায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ 'ভারতীয়দের দু:খ সইবার পরীক্ষা' যে দুটো জিনিসের জন্য চরম হাহাকার ভারতের সেকেন্ড ওয়েভে অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে ভারতের হাসপাতালে ২২ রোগীর মৃত্যু ভারতের হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেনের তীব্র সংকট “হাসপাতালে কোনো বেড খালি নেই। আমি কি করবো? অন্য কোনো শহরেও ভাইকে নেওয়ার ক্ষমতা এখন আমার আর নেই। এরই মধ্যে বহু টাকা খরচ হয়ে গেছে, হাতে বাকি আর তেমন কিছুই নেই,“- বিবিসিকে বলেন তিনি। তিনি বলেন, “কোভিড রোগীদের বাঁচানোর লড়াই এখন হাসপাতাল থেকে বাড়িতে স্থানান্তর হয়েছে।“ কিন্তু ওষুধ এবং অক্সিজেনের অভাবে বাড়িতে বসে সেই লড়াই জেতা কঠিন হয়ে পড়ছে।ও ষুধের দোকানে রেমডিসিভির এখন নেই বললেই চলে। ফলে ভরসা একমাত্র কালো বাজার। কালোবাজারে ওষুধ সরবরাহ করেন এমন ক'জনের সাথে বিবিসি যোগাযোগ করলে তারা বলেন, সরবরাহ পরিস্থিতি নাজুক ফলে দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ভারতে যে সাতটি কোম্পানি রেমডিসিভির তৈরি করে তাদেরকে দ্রুত উৎপাদন বাড়াতে বলা হয়েছে। ‘মানুষকে তার ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে‘ ওষুধ সরবরাহ বাড়ানো হবে বলে সরকার বারবার যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বাস্তবে তার কোনো দেখা নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড ললিত কান্ত বলছেন জরুরী ওষুধের উৎপাদন বাড়ানোর সরকারি নির্দেশ এসেছে খুব দেরিতে। তিনি বলেন, ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য সরকারের অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ ছিল। “কিন্তু একইসাথে কালোবাজারে ওষুধ মিলছে। তার মানে সরবরাহ প্রক্রিয়ায় গলদ দেখা দিয়েছে যেটা সরকার সামাল দিতে পারছে না।“ তিনি বলেন, “আমরা প্রথম দফার সংক্রমণ থেকে কিছুই শিক্ষা নেয়নি।“ টিসিলিজুমাব নামে আরেকটি ওষুধের খুব চাহিদা তৈরি হয়েছে। এটি সাধারণত বাতের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, কিন্তু গবেষণায় দেখা গুরুতর কোভিড রোগীর ওপর এটি প্রয়োগ করলে তাকে হয়ত ভেন্টিলেটরে নেওয়া লাগেনা। ভারতে এখন সংক্রমণের এক ভয়াবহ 'দ্বিতীয় ঢেউ' চলছে খুবই গুরুতর কোভিড রোগীদের জন্য এই ওষুধের পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা। কিন্তু বাজার থেকে ওষুধটি এখন হাওয়া। স্বাভাবিক সময়ে ৪৪০ মিলিগ্রামের একটি ভায়ালের দাম পড়ে ৩২,৪৮০ রুপি। কিন্তু কমল কুমারকে তার বাবার জন্য এটি কিনতে হয়েছে আড়াই লক্ষ রুপি দিয়ে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আনন্দ ভান বলছেন, সরকারের উচিৎ ছিল প্রচুর পরিমাণে এই ওষুধটি মজুত করা, কারণ এত দামে কালোবাজার থেকে তা কেনার ক্ষমতা খুব কম মানুষেরই রয়েছে। “এটি প্রমাণ করে যে সরকারের ভেতর কোনো পরিকল্পনাই ছিলনা। সংক্রমণের নতুন একটি ঢেউ যে আসছে তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার,“ - তিনি বলেন। “মানুষকে তার ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।“ প্রতারণা বাজারে এখন নকল রেমডিসিভির বিক্রি হচ্ছে বিবিসিও এমন রেমডিসিভির দেখেছে যার লেবেলে উৎপাদক হিসাবে যে কোম্পানির নাম রয়েছে সেটি ভারতে অনুমোদিত কোম্পানির তালিকায় নেই। বিক্রেতাকে চ্যালেঞ্জ করা হলে তিনি জবাব দেন, “এই ওষুধ শতভাগ খাঁটি।“ প্যাকেজিংয়ের গায়ে লেখা নির্দেশাবলীতেও প্রচুর বানান ভুল। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়েও পাওয়া যায়নি। কিন্তু মানুষজন এতটাই মরিয়া যে নকল ওষুধ সন্দেহ হলেও সেগুলো তারা কিনছেন। প্রতারণার শিকারও হচ্ছেন অনেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইটি কর্মী বলেন টুইটারে নাম এবং ফোন নম্বর দেখে তিনি রেমডিসিভির এবং অক্সিজেন কেনার জন্য ফোন করার পর অগ্রিম হিসাবে ১০ হাজার রুপি চাওয়া হয়। “যখনই আমি টাকাটা পাঠালাম, পর পরই ঐ লোকটি আমার ফোন নম্বর ব্লক করে দেয়,“ তিনি বলেন। মানুষ এতটাই মরিয়া যে সেই সুযোগে কালোবাজার গজিয়ে উঠছে। রেমডিসিভিরের কালোবাজারি বন্ধ করতে অনেক রাজ্যে কিছু হয়েছে, পুলিশি অভিযান চলছে, কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে সামান্যই। মি .তিওয়ারি বলেন, তার মত মানুষদের সামনে কালোবাজার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। “অবস্থা এমন যে হাসপাতালে আপনার চিকিৎসা নেই, কিন্তু বাড়িতে বসেও প্রিয়জনদের বাঁচানো যাচ্ছেনা।“ বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: দোকানপাট খোলা রেখেই বাংলাদেশে লকডাউন বাড়ানো হচ্ছে আবারো বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে ফেরা মানুষদের মনিটরিং এর কী ব্যবস্থা কীভাবে ১৯৪৭ সালে দু'ভাগ হয়েছিল কাশ্মীর মহামারিতে কাবু ভারত, আইপিএল থেকে সরতে শুরু করেছেন ক্রিকেটাররা হেফাজতে ইসলামের নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে যারা আছেন
ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং আরো বহু শহরে হাসপাতালে কোনো শয্যা আর খালি নেই। খালি থাকলেও বহু হাসপাতাল রোগী নিচ্ছে না অক্সিজেনের অভাবের কারণে।
সব কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তবে বলেছেন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেবে তার সরকার। ইতোমধ্যেই আন্দোলনকারী প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছে। যদিও আন্দোলনকারীদের দাবি ছিলো বিদ্যমান কোটা কমিয়ে দশ শতাংশে নিয়ে আসা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একেবারেই বাতিলের ঘোষণা দিলে তার পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক জমে উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে বিবিসি বাংলার ফেসবুকের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছেন অনেকেই। বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতা থেকে নেয়া তেমন কিছু মন্তব্য নিচে দেয়া হলো-- ফাইজা খান লিখেছেন একদল বলবেন কোটা বাতিল হোক, আর একদল বলবেন কোটা সংস্কার করা হোক,আর একদল বলবেন কোটা বাতিল হবে না **** এই মর্মে আমি বলতে চাই তাহলে প্রধানমন্ত্রীর এখন কি সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ??? যদি বিষয় টা এমনই বহুমুখী হয় তাহলে সেটা বারবার আলোচনা করে একটা সমঝোতায় আসা উচিত ছিলো... !!! রায়হান সি রানা: কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করলে তা সংবিধানের ২৮(৪), ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। ফলে সুপ্রিমকোর্ট এ রিটে বর্তমান কোটা ব্যবস্থা ফিরে আসবে। আমরা ১০% কোটা রাখার পক্ষে। পরেরদিনই হাইকোর্টে রিট হবে। হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেবেন। এরপর আর আন্দোলন করার কিছু থাকবে না। আদালতের ওপর তো কথা বলা যায় না। শফিকুর রহমান: ৮ আনা চাইতে ১৬ আনা দিচ্ছেন। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। বিশাল খটকার গন্ধ পাচ্ছি। আরো পড়ুন: কোটা পদ্ধতি বাতিল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেজেট না হওয়া পর্যন্ত কোটা আন্দোলন স্থগিত ছবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন সৈকত এ রহমান: মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথায় কি পরিষ্কার হইতে পারছেন যে, কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হইলো!!! উনার পুরো বক্তব্য শুনে আমি এই মেসেজ পাইলাম না... উনি আন্দোলনকারীদের বদনাম করলেন এবং রাগ হয়ে বললেন সংস্কার কি তাহলে কোটাই থাকবেনা। যারা আন্দোলনের নামে ভিসির বাসায় আক্রমণ চালিয়েছে তাদেরকে ছাড়া হবেনা। অর্থাৎ তিনি হামলার জন্য আন্দোলনকারীদের দোষারোপ করলেন। এই উছিলা তুলে ছাত্রদেরকে হুমকি দিলেন। তিনি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ভিসি সংহতি জানিয়েছেন সেইসব শিক্ষকদের কঠিন ভাষায় সমালোচনা করলেন!! নারীরা আন্দোলনে শরীক হওয়ায় বললেন, তাদের কোটাও বাতিল করে দিবো! কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করলে তা সংবিধানের ২৮(৪), ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। ফলে সুপ্রিমকোর্ট এ রিটে বর্তমান কোটা ব্যবস্থা ফিরে আসবে। পরেরদিনই হাইকোর্টে রিট হবে। হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেবেন। এরপর আর আন্দোলন করার কিছু থাকবে না। আদালতের ওপর তো কথা বলা যায় না। সুতরাং আমরা কোটা সংস্কার চাই,কোটা বাতিল নয়। বিলোপ নয়,সংস্কার চাই! গুজব নয়,গেজেট চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাদ্দাম হোসেন: আমরা কোটা পদ্ধতি বাতিল হোক এটা চাইনি, চেয়েছি সংস্কার। যেখানে ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০শতাংশের মধ্যে আনতে হবে। কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে নতুন খেলা শুরু করলো সরকার। তাছাড়া কোটা পদ্ধতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত সরাসরি সংবিধান পরিপন্থী, এবং এর ফলে প্রতিবন্ধীরা রাষ্ট্রের কাছে বঞ্চিত হয়ে থাকবে। তাই কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়া হোক। সোলায়মান মজুমদার: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সরকার আর্থিক সহযোগিতা করতে পারে । কোটা দিয়ে নয় । যেমন সরকার তাদের লেখাপড়ার খরচ বহন করে,উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিয়ে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে । তারাও যেন মেধার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে ।সংসদ থেকেও নারী কোটা বিলুপ্ত করতে হবে । কারণ সংরক্ষিত কোটার সদস্যরা সংসদের সম্মান নষ্ট করছে তারা দেখে দেখেও বাংলায় কথা বলতে পারেনা । নুন্যতম সংসদ সদস্যরা যেন মাষ্টার ডিগ্রি পাশ হয় । মো: সাহাদাত: : ভাল করে যদি ভাষণটা শুনেন, বুঝবেন উনি আন্দোলন কারীদের দোষারোপ করেছেন, .. পুলিশের গুলিতে শত শত আহত ছাত্রদের প্রতি বিন্দুমাত্র অনুশোচনা করেনি, 😰প্রযুক্তিগুলো নাকি ওনাদের সৃষ্টি(ওনার ইঙ্গিত) What a joke মাহমুদুল হাসান: নিছক ভাঁওতাবাজি। সত্যিকারের আন্তরিকতা থাকলে এতক্ষণে দশ শতাংশ কোটা রেখে প্রজ্ঞাপন জারি হয়ে যেত। মাত্র কিছুদিন আগে অর্থনীতির মহা গুরুত্বপূর্ণ সিআরআর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পরিবর্তন করে নির্দেশ জারি করা হয়েছে, এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামত পর্যন্ত নেয়া হয়নাই। কাজেই সদিচ্ছা যদি থাকতই তাইলে এমন হুদাই ভাওতাভাজি করা হতনা। যা হইছে তাতে আসলে খারাপই হইছে। আতাউল্লাহ সম্রাট: যারা যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে তাদের কে আমরা জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। কিন্তু তাদের সন্তানদের সেই শ্রদ্ধার জায়গা নিজ যোগ্যতায় অর্জন করতে হবে। ৪৭ বছর পর তাদের দয়া করুণার মাধ্যমে কোটা পদ্ধতি তে সুবিধা নেওয়ার কোন মানে হয় না। একটু দেরিতে হলেও রাষ্ট্র বাধ্য হয়েছে এই কোটা সিস্টেম বাতিলের জন্য। মো. আমিনুর রহমান: আমি মনে করি এটা একটা নতুন কৌশল। আর সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার করে বলেননি। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের কোটা হার মোহাম্মদ আজমল হোসেন: ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত সিদ্ধান্তের জন্য। কিন্তু আমার অনুরোধ হলো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দশ শতাংশ কোটা রাখা হোক। কিন্তু আপনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এম আজিম উদ্দিন: : কোটা পদ্ধতি শিক্ষার্থীরা সংস্কার চেয়েছে বাতিল নয়! কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করলে তা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। যার ফলে সুপ্রিমকোর্টে একটি রিটের মাধ্যমে আবার কোটা ব্যবস্থা ফিরে আসবে। এরপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে আন্দোলনও করতে পারবে না আর কোটা পদ্ধতি বাতিলও হবে না। ডালমে কুচ কালা হে। আনোয়ারুল ইসলাম লিটন: আমি মনে করি যারা প্রকৃত ভাবে তখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো, তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ভালবাসা শত ভাগ রয়েছে। এখন স্বাধীনতার এতোটি বছর পর পর্যন্ত তাদের সন্তানদের পড়ালেখা করিয়ে সু-নাগরিক বানানোর যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিলো, তাই এই মহত্বে তাদেরকে সরকারী ভাতা প্রদান করার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ রাখা হউক, অনেক বিষয় বিবেচনা করে সরকারী চাকুরীতে কোটা সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। আব্দুল্লাহ আল মামুন: আগামী প্রজন্মের উচিত সরকারের ভর্তুকি ছাড়া নিজের বাপের টাকায় পড়া লেখা করা। অপরের টাকায় পড়লে সম্মানহানি হতে পারে.....আর এই উদ্বৃত্ত টাকা সরকার প্রতিবন্ধী, উপজাতি ও অন্যান্য অগ্রসরমানদের কাজে ব্যাবহার করতে পারে, যাতে তারা কিছুটা অগ্রসর হয়। ইকবাল হোসেন: এইটা আন্দোলন কে স্তিমিত বা দমানোর জন্য এক ধরনের কৌশলী বক্তব্য। আন্দোলনকারীরা কিন্তু কোটা বাতিল চায় নাই। বরং সংস্কার চেয়েছে।। উনি হুট করে ক্ষোভ এর বশবর্তী হয়ে এই ধরনের কথা বলে দিলেন।। আর আমরা খুব সহজে মেনে নিব সেটা কিন্তু খুব সহজে আন্দোলনকারীরা মানবেনা.. রাগ বা মেজাজ গরম এর মাথায় তালাক দিলে যে হয় না সেটা বুঝেন তো...?? মেহেদি হাসান: সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত। বাতিল চাই, সংস্কার না। সাইফুল সোহাগ: কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের পরিবর্তে সম্পূর্ণ বাতিল করা একটা রাজনৈতিক চাল ছাড়া আর কিছুই নয়। এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক বিধায়, অচিরেই বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপ অবধারিত। রিট হবে, স্টে হবে। অতঃপর বাতিল হবে। পুনরায় আগের অবস্থায় ফেরত যাবে। চালাক রাজনীতিকরা বলবেন, "আদালতের রায়/আদেশ সবার শিরোধার্য।" শামীম আহমেদ : আমরা সংস্কার চেয়েছিলাম। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অনগ্রসরদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করবেন, আর কোটা উঠিয়ে দিবেন। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তার কথা মেনে নেওয়া উচিত আমাদের। কারণ, আলাদা কোনো ব্যবস্থা যদি সংস্কারের উদ্দেশ্য পূরণ করে তাহলে কোটা বাতিল মেনে নেওয়া যায়। মজিবুল ইসলাম: এই খানে কোটা সংস্কার চাওয়া হয়েছে বাতিল না! কোটা সংস্কারের দাবিগুলো কী ছিল? কোটা সংস্কারে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। 'বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদ'এর ব্যানারে যে পাঁচটি বিষয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে সেগুলো হল - আরো পড়ুন: কোটা সংস্কার: আন্দোলনের নেপথ্যে কী ঘটছে এক নজরে কোটা সংস্কার আন্দোলন
বাংলাদেশে বেশ কয়েকদিনের ছাত্র বিক্ষোভের মুখে সব ধরণের কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আইএস শিশুদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন এক নারী আর এইসব শিশুদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন এমন এক নারী যার নিজের জীবনে তছনছ করে দিয়েছে এই জঙ্গি গোষ্ঠী। আইএস যোদ্ধারা সুকাইনা মুহাম্মাদ আলী ইউনুস-এর জীবন ওলট পালট করে দিয়েছে, কিন্তু আইএস যোদ্ধাদের সন্তানরা যারা যুদ্ধে অনাথ হয়েছে তাদের নির্ভরতার আশ্রয় হয়ে উঠেছেন সুকাইনা নিজে। আরো পড়ুন: মসুলের যুদ্ধ চূড়ান্ত পর্যায়ে, আইএসের 'মরণ কামড়' সিরিয়ায় হামলা: যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে? ফিরে দেখা: সিরিয়া যুদ্ধের সাত বছর পশ্চিমা ক্ষেপনাস্ত্র হামলার পর আসাদ এখন কোথায়? "আইএস আমার জীবনের সমস্ত কিছু তছনছ করে দিয়েছে। আর এখন আমি তাদের সন্তানদের সাহায্য করছি। " ইসলামিক স্টেট যোদ্ধাদের হামলার পর মসুলে তার বাড়ি ছেড়ে পালান সুকাইনা। এরপর সেখানে নিজেদের দপ্তর বানায় আইএস। সুকাইনা দেখাচ্ছিলেন তার নিজের বাড়ির দরোজায় আইএস যোদ্ধারা লিখে রেখেছে ''আইএস এর সম্পত্তি, ২০১৪"। সেই বাড়ির ভেতর বসে তারা বোমা তৈরি করতো এবং দরজার বাইরে উঠোনে তারা কবর খুঁড়েছিল। এইসব শিশুদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো সরাসরি আইএস যোদ্ধাদের সন্তান। এখানেই রয়েছে দুই বছর বয়সী জানাত, হাজার-খানেক বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে এমন একটি ক্যাম্পে তাকে পাওয়া যায়। পরিবারের আর কারো খোঁজ ছিলনা। "সে কে, তার কি পরিচয়, কেউ জানতো না। তার চুল ছিল অনেক লম্বা এবং উকুনে ভরা। ফলে তার চুল আমরা কেটে দিতে বাধ্য হয়েছি। তার বাবা-মা হয়তো বিদেশী ছিল, হয়তো তুর্কমেন বা ইয়াজিদি, ঠিক জানিনা। তার চেহারা দেখে মনে হয়না যে সে ইরাকি," বলেন সুকাইনা। জানাতের মতো এইসব শিশুর ভবিষ্যৎ কি হবে -তা কেউ জানেনা। "আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যদি কেউ তার খোঁজ-খবর নিতে আসে তো ভালো কথা। কিন্তু তার বাবা মা যদি মারা গিয়ে থাকেন তাহলে কেউ হয়তো আসবে না তার খোঁজে। " সুকাইনা যেসব শিশুকে লালন পালন করছেন তাদের বাবা মাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা হিসেবে সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করছেন। কিন্তু সুকাইনার এই কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেকেই খুশি নয়। "অনেক লোক আমাকে ফোন করে এবং বলে তারা আই-এস এর সন্তান, তাদের ছবি আপনি কেন পোস্ট করছেন? তারা আরও বলে, আইএস আমাদের বাচ্চাদের মেরে ফেলেছে। তুমি এদের কেন লালন-পালন করছো! তুমি তাদের এতিমখানায় ছেড়ে আসো এবং তারপর তাদের পরিবার বুঝুক।" এমনকি যারা আইএস এর ওপর প্রতিশোধ নিতে চায় তাদের কাছ থেকে হুমকিও পাচ্ছেন সুকাইনা। আবার এখনো অনেকে আছে তারা আইএস এর মতাদর্শে বিশ্বাসী। "ফেসবুকে আমাকে মেসেজ পাঠিয়ে সরকারের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ করা হয়েছে। তারা বলছে শিগগিরই আমার দিন ফুরিয়ে আসছে।" এই নারী অবশ্য অত সহজেই ভয় পাচ্ছেন না। তিনি মনে করছেন, তার নিজের এবং এই শিশুদের নিরাপত্তা জরুরি। এখনো পর্যন্ত তার মূল লক্ষ্য এই শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাস খুঁজে বের করা। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: ছবিতে মসুলের আইএস যোদ্ধাদের অজানা জীবন ফেসবুকে গুজব রটনাকারীদের খুঁজছে পুলিশ সৌদিতে এবার নারী সাইক্লিং রেইস প্রাণঘাতী হৃদরোগের জন্য দায়ী 'জিন' সনাক্ত
ইরাকের সরকারি বাহিনী মসুল শহরের নিয়ন্ত্রণ ইসলামিক স্টেট যোদ্ধাদের হাত থেকে উদ্ধার করে বিজয় ঘোষণার পর আটমাস কেটে গেছে। এখনো হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও কর্তৃপক্ষের হাতে উদ্ধার হচ্ছে এমন সব শিশুরা যারা যুদ্ধের ডামাডোলে হয় পিতামাতা হারিয়েছে, নাহলে পরিত্যক্ত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ভোট জালিয়াতির প্রধান পাঁচটি অভিযোগ খতিয়ে দেখেছে বিবিসির রিয়েলিটি চেক টিম। কোন তথ্যপ্রমাণ না দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বক্তৃতা-বিবৃতিতে এরকম বেশ কয়েকটি পোস্টের কথা উল্লেখ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রচারণা শিবির। এরকম প্রধান পাঁচটি অভিযোগ খতিয়ে দেখেছে বিবিসির রিয়েলিটি চেক টিম। মিশিগানে কি মৃত ব্যক্তিদের নামে ভোট দেয়া হয়েছিল? টুইটারে ভাইরাল হওয়া বার্তায় দাবি করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের অন্যতম প্রধান একটি অঙ্গরাজ্য মিশিগানে মৃত ব্যক্তিদের নামে ভোট দেয়া হয়েছে। এসব দাবিকে 'ভুল তথ্য' জানিয়ে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে মিশিগানের কর্তৃপক্ষ। তারা আরও জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তিদের নামে কোন ভোট আসলে সেটা বাতিল করে দেয়া হয়। ভাইরাল টুইটগুলোয় এরকম কয়েকজন ব্যক্তির উল্লেখ করা হয় যাদের নামে অ্যাবসেন্টি ব্যালট (ডাক যোগে দেয়ার জন্য ভোট) পাঠানো হয়, যাদের জন্ম হয়েছিল শতবর্ষ আগে এবং তাদের মৃত্যু হয়েছে। টুইটারে ভাইরাল হওয়া বার্তায় দাবি করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের অন্যতম প্রধান একটি অঙ্গরাজ্য মিশিগানে মৃত ব্যক্তিদের নামে ভোট দেয়া হয়েছে। এসব দাবিকে 'ভুল তথ্য' জানিয়ে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে মিশিগানের কর্তৃপক্ষ। এরকম একটি টুইট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যার নাম সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, তার পিতার নামের সঙ্গে তাকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। পলিটিফ্যাক্ট ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তার পিতার মৃত্যু হয়েছে। যদিও তাদের নাম এবং ঠিকানা এক। মিশিগানের কর্মকর্তারা ওই সাইটটিকে জানিয়েছেন, ছেলের ব্যালট ভুল ভাবে পিতার নামে ভোটিং সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। মৃত ব্যক্তিদের নামে ভোট দেয়ার আরও কয়েকটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে বিবিসি দেখতে পেয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাবার এবং ছেলের নাম এক থাকায় এরকম বিভ্রান্তির তৈরি হয়েছে। আবার প্রযুক্তিগত ক্রুটির কারণেও এমন ঘটেছে। যেমন অনেক সময় ভোটারদের একটি সাজানো জন্ম তারিখ দিতে বলা হয়েছিল, কারণ প্রাথমিকভাবে অনলাইনে তারা ভোটার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র (যিনি নিজেও বাবার নাম শেয়ার করেন) এবং ব্রেক্সিট পার্টি নেতা নাইজেল ফারাজের একাউন্ট থেকেও এসব গুজব অনেকবার শেয়ার করা হয়েছে। মিশিগানে কম্পিউটার সফটওয়্যারে ভুল ছিল না অনলাইনে একটি পোস্ট অসংখ্যবার শেয়ার করা হয়েছে যে, মিশিগানে কম্পিউটারের একটি সফটওয়্যারের ভুলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে জমা পড়া ভোট জো বাইডেনের নামে গণনা করা হয়েছে। রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজের একটি টুইট, যা ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় টুইট করেছিলেন-সেটার কারণে এটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে বলা হয়, রাজ্যজুড়ে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে সমস্যা থাকতে পারে। আরো পড়তে পারেন: ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার না করলে কী হতে পারে? প্রেসিডেন্ট হবার পর সবার আগে যেসব পদক্ষেপ নেবেন জো বাইডেন মার্কিন কংগ্রেসে কিছু ব্যতিক্রমী এবং ঐতিহাসিক বিজয় যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ২০২০: ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি কী ও কীভাবে কাজ করে অনলাইনে একটি পোস্ট অসংখ্যবার শেয়ার করা হয়েছে যে, মিশিগানে কম্পিউটারের একটি সফটওয়্যারের ভুলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে জমা পড়া ভোট জো বাইডেনের নামে গণনা করা হয়েছে। তবে মিশিগানের সেক্রেটারি অব স্টেট জোসেলিন বেনসন জানিয়েছেন, খুব দ্রুত সেটা ধরা পড়ে এবং সংশোধন করা হয়। শুধুমাত্র একটি কাউন্টিতে (অঙ্গরাজ্যের একেকটি ছোট এলাকা) প্রাথমিকভাবে এরকম একটি সমস্যা হয়েছিল, যেখানে ভোট ভুল ক্রমে মি. বাইডেনের নামে জমা পড়েছিল। তবে মিশিগানের সেক্রেটারি অব স্টেট জোসেলিন বেনসন জানিয়েছেন, খুব দ্রুত সেটা ধরা পড়ে এবং সংশোধন করা হয়। তিনি জানিয়েছেন, প্রাথমিক এই ভুলটি মানুষের ভুল, কোন সফটওয়্যারের ভুল নয়। ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছে, মিশিগানের অন্য ৪৭টি কাউন্টিতে একই ধরণের সমস্যার তৈরি হতে পারে, যেখানে একই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। মিসেস বেনসন বলেছেন, রাজ্যজুড়ে একই ভুল হয়েছে, এরকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। 'শার্পি' কালির ভোট বাতিল হয়নি আরেকটি ব্যাটেলগ্রাউন্ড অ্যারিজোনায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া গুজব ছিল, রিপাবলিকান ভোটারদের ভোট দেয়ার সময় শার্পি কলম (পার্মানেন্ট মার্কারের একটি ব্রান্ড)দেয়া হয়েছিল। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে একজন নারী ব্যাখ্যা করেন যে, কীভাবে এই ধরণের কালিতে দেয়া ভোট মেশিনগুলো পড়তে পারে না। ক্যামেরার পেছনে থাকা একজন ব্যক্তি বলেন, এসব ভোট গণনা করা হচ্ছে না এবং ভোট নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই মানুষজনকে শার্পি পেন ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টে দাবি করা হয়, ভোটে জালিয়াতি করা হয়েছে এবং ট্রাম্প ভোটারদের অনেক ভোট এভাবে বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু এই দাবি মিথ্যা। মারিকোপা কাউন্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শার্পি কলম ব্যবহারের কারণে কোন ভোট বাতিল হয় না। মারিকোপা কাউন্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শার্পি কলম ব্যবহারের কারণে কোন ভোট বাতিল হয় না। অ্যারিজোনার সেক্রেটারি অব স্টেট কাটি হোবস টুইটারে নিশ্চিত করেছেন যে, আপনি যদি সশরীরে ভোট দিয়ে থাকেন, আপনার ভোট গণনা করা হবে। কি ধরণের কলম আপনি ব্যবহার করেছেন (শার্পি হলেও), সেটা কোন ব্যাপার না। পরে তিনি সিএনএনকে বলেছেন, যদি কোন কারণে যন্ত্র কোন ভোট গণনা করতে না পারে, তারপরেও আমাদের সেগুলো গণনার পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলোও গণনা করা হবে। রিপাবলিকানদের ভোট বাতিল করার উদ্দেশ্যে এরকম ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, এরকম দাবির পেছনে আসলে কোন ভিত্তি নেই। মিশিগানের ভুল ভোট মানচিত্র নির্বাচনের রাতে ছড়িয়ে পড়া মিশিগানের একটি ভোট মানচিত্র- যেখানে দেখা যায় যে, হঠাৎ করে জো বাইডেনের জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার ভোট বেড়ে গেছে, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য কোন ভোট বাড়েনি- সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিটি নিজেও শেয়ার করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যার ফলে ভোট জালিয়াতির আলোচনা আরও বেড়ে যায়। এটা আসলে খুব সাধারণ যে, ভোট গণনার হিসাবে রাজ্য কর্মকর্তা গণনা হওয়া ভোটের বড় একেকটি অংশ একেকবারে যোগ করে থাকেন। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রশ্ন হলো, এই আপডেটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে কোন ভোট জমা হয়নি কেন। এর উত্তর হলো: এটা ছিল তথ্য অন্তর্ভুক্তির একটি ভুল, যা পরে সংশোধন করা হয়। ম্যাট ম্যাকোউইক, যার পোস্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় টুইটারে শেয়ার করেছিলেন, তিনি নিজেই পোস্টটি মুছে ফেলে ক্ষমা চেয়েছেন-যদিও ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়ার কারণে ছবিটি ইন্টারনেট দুনিয়ায় রয়ে গে ম্যাপটি যারা তৈরি করেছিল, সেই নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ওয়েবসাইট ডিসিশন ডেস্ক জানিয়েছে, ''এটা ছিল রাজ্যের তৈরি করা ফাইলের সাধারণ একটি ভুল- যা ম্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। রাজ্য যখন ভুলটি শনাক্ত করে, তখন তারা আরেকটি আপডেটেড হিসাব পাঠিয়ে দেয়।'' ''নির্বাচনী রাতে এ ধরণের ভুল ঘটতে পারে এবং আমাদের ধারণা, মিশিগানের অন্য যারা ভোটের হিসাব রেখেছেন, তারাও একই ভুল করেছেন এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মতো তারাও সংশোধন করেছেন।'' সংস্থাটি বলছে। এনিয়ে যারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, তাদের পোস্টের সঙ্গে টুইটার একটি করে লেবেল সেটে দিয়েছে যে, 'এই টুইটে আংশিক বা পুরো তথ্য নিয়ে বিতর্ক আছে এবং তা নির্বাচন বা নাগরিক প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। ম্যাট ম্যাকোউইক, যার পোস্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় টুইটারে শেয়ার করেছিলেন, তিনি নিজেই পোস্টটি মুছে ফেলে ক্ষমা চেয়েছেন-যদিও ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়ার কারণে ছবিটি ইন্টারনেট দুনিয়ায় রয়ে গেছে। এ বিষয়ে মিশিগানের ব্যুরো অব ইলেকশন বলেছেন, তথ্য গরমিল নিয়ে তারা কোন মন্তব্য করবে না। তবে জানিয়েছে, নির্বাচনের ফলাফল এখনো অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে রয়েছে এবং চূড়ান্ত গণনা সম্পন্ন হয়নি। তালিকাভুক্ত ভোটারদের চেয়ে উইসকনসিনে বেশি ভোটার নেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি মিথ্যা দাবি হলো যে, উইসকনসিনে মোট যতজন ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছেন, তাদের চেয়ে বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন। একজন টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ''ব্রেকিং: উইসকনসিনে তালিকাভুক্ত ভোটারের চেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। তালিকাভুক্ত ভোটার-৩১,২৯,০০০ অথচ ভোট পড়েছে ৩২,৩৯,৯২০টি। এটা জালিয়াতির সরাসরি প্রমাণ।'' কিন্তু ভোটার সংখ্যার তার তথ্যটি পুরনো। পহেলা নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, উইসকনসিন রাজ্যে ভোটারের সংখ্যা ৩৬,৮৪,৭২৬ জন। টুইটটি এখন মুছে ফেলা হয়েছে। তবে সেটার একটা ছবি এখনো শেয়ার করে চলেছেন ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহারকারীরা। ওই টুইটটি এখন মুছে ফেলা হয়েছে। তবে সেটার একটা ছবি এখনো শেয়ার করে চলেছেন ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহারকারীরা। গত কয়েক বছরের তুলনায় উইসকনসিনে ভোট পড়ার হার এই বছর বেশ বেশি। এই অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের দিনেও একজন নিজেকে ভোটার হিসাবে তালিকাভুক্ত করতে পারেন। এর মানে হলো তালিকাভুক্ত ভোটারের সর্বশেষ যে সংখ্যাটি পাওয়া যাচ্ছে, নির্বাচনের দিন সেই সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর: মানসিক হাসপাতালে পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগ চীনের কোভিড ভ্যাকসিনের পরীক্ষা স্থগিত করেছে ব্রাজিল আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানকে নিয়ে রাশিয়ার শান্তি চুক্তি নূর হোসেনের মৃত্যু এরশাদ সরকারে কতটা প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে অব্যাহতভাবে অভিযোগ করে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকেই ভোট সম্পর্কে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর নানা পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেছে।
গত ২৫শে অগাস্ট দিনের শুরুতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ত্রিশটি তল্লাশি চৌকিতে যে হামলা হয়েছিল, তার পাল্টা জবাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আক্রমণ শুরু করে। সেনাবাহিনীর পাল্টা অভিযানের মুখে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র হামলার জন্য মিয়ানমার সরকার 'আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি' বা আরসা নামের সংগঠনকে দায়ী করেছে। এই সশস্ত্র সংগঠনটিও বলেছে যে তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের অধিকার আদায়ে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কথা আগে শোনা গেলেও এই সংগঠনটির নাম আগে শোনা যায়নি। বুঝা যাচ্ছে, আরসা নামের এই ছায়া সংগঠনটি রাখাইনে বিদ্রোহীদের একটি ভিত্তি তৈরি করতে চাইছে। ইতোমধ্যেই মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা-কে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে এবং বলছে রাখাইনে সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য 'রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী'রা দায়ী। কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাসহ আরসা সম্পর্কে জানে এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে যা বুঝা গেল, আরসা নামের এই সংগঠনটির কৌশল বেশ দুর্বল এবং বেশিরভাগ রোহিঙ্গা এদের সমর্থন করে না। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২৫শে অগাস্টের হামলাগুলো সাধারণ ছিল, কয়েকজনের একটি দল ছিল যাদের হাতে ম্যাচ ও বাঁশের লাঠি ছিল, তারা আত্মঘাতী হামলার চেষ্টা চালিয়েছিল। তবে মংডুর আলেল থান কিয়াউ-য়ের পুলিশ পোস্টে সবচেয়ে বড় হামলা হয়েছিল। ওই এলাকা পরিদর্শনের সময় পুলিশ কর্মকর্তা অং কিয়াই মো সাংবাদিকদের বলেন,হামলা যে হবে এমন তথ্য তাদের কাছে ছিলো এবং আগের রাতেই স্থানীয় কর্মকর্তাদের ব্যারাকে সরিয়ে নেয়া হয়। তিনি জানান, ভোর চারটার দিকে সমুদ্রের তীর ধরে দুটি গ্রুপ আসে, প্রত্যেক গ্রুপে ৫০০ করে লোক ছিল। তারাই হামলা শুরু করে। সমুদ্রের পাড়েই ছিল এক অভিবাসন কর্মকর্তার বাড়ি, তাকে প্রথমেই হত্যা করে তারা। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা গোলাগুলি শুরু করলে তারা পিছু হটে যায়, ১৭ জন নিহত হয়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এক রোহিঙ্গা শরণার্থীর মুখেও একই বিবরণ শুনি আমি। রাখাইন থেকে কিভাবে তিনি পালিয়ে এলেন এ বর্ণনা দেবার সময় তিনি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন , ২৫শে অগাস্টের সেনা অভিযানের পাল্টা জবাব দিতে যেভাবে তারা গ্রামবাসীকে উদ্বুদ্ধ করছিল তা ঠিক ছিল তারা ম্যাচ ছুরি দিয়ে কিছু তরুণকে উৎসাহ দিচ্ছিল, কাছের পুলিশ স্টেশনে যেন তারা হামলা চালায়। আরসার কাছে অস্ত্র আছে অনেক। গ্রামবাসীদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন লোক আরসার কথা অনুযায়ী কাজ করে। এর মধ্যে কয়েকজর মারাও যায়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ২০ বছর বয়সী এক যুবকের সাথে আমার কথা হয় যে চার বছর আগে আরসায় যোগ দিয়েছিল। ওই যুবক জানান, আরসার নেতা আতাউল্লাহ ২০১৩ সাল তাদের গ্রামে এসে বলেছিলেন রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করার এখনই সময়। তিনি বলেছিলেন, প্রতিটি গ্রাম থেকে পাঁচ থেকে দশজন করে সদস্য চান তিনি। পরে তাদের গ্রাম থেকে কয়েজনকে ধরে নিয়ে পাহাড়ে গিয়ে বোমা প্রশিক্ষণ দেয়ও তারা। আরসার নেতার কথায় ওই যুবকের গ্রামের প্রায় সব বাসিন্দাই উৎসাহিত হয়ে পড়েছিল। যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল তাদের খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতো তারা। তাদের হাতে থাকতো ধারালো বাঁশের লাঠি, সবাই যেন মসজিদে যায় সেটিও লক্ষ্য করা হতো। ওই সময়েই এই যুবক আরসার সঙ্গে যোগ দেয়। তবে তাদের হাতে কখনো বন্দুক দেখেননি তিনি। 'বিশ্বের নজর কাড়ার চেষ্টা' ২৫শে অগাস্টের ঘটনা সম্পর্কে ওই তরুণ জানান, ওই দিন তিনি গুলির শব্দ শোনেন। কিছুদূরে আগুনও জ্বলতে দেখেন। স্থানীয় আরসা কমান্ডার (যাদের তারা 'আমির' বলেন) তাদের গ্রামে এসে বলেন সেনারা আক্রমণ করতে আসছে, তোমরা মরতে যাচ্ছো, শহীদের মতো জীবন দাও। এ কথা শুনে ছোট-বড় সব বয়সী মানুষ ছুরি ও ধারালো বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে সেনাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। তখন অনেকে আহত হয়। অনেকে মারাও যায়। এরপর অনেকে পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করে। পালিয়ে আসার সময় রাখাইনের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষেরাও তাদের হয়রানি করে বলে জানান ওই যুবক। কারা এই রোহিঙ্গা মুসলিম? তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন এমন ব্যর্থ হামলার চেষ্টা করলো তারা? জবাবে ওই যুবক জানান, "আমরা বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে চাইছিলাম। অনেকদিন ধরে কষ্ট করেছি। আমরা যদি মারাও যাই, তাহলেও কারো কাছে এটা কোনো বিষয় হবে না"। আন্তর্জাতিক কোনো জিহাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে কিনা এমন কথা নাকচ করে তিনি বলেন যে রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য তারা লড়ছেন। আরসার সদস্যদের সঙ্গে ওই যুবক ও গ্রামের আরো অনেকে শেষ মুহুর্তের হামলায় যোগ দেন। পাকিস্তান বংশোদ্ভুত রোহিঙ্গা আতাউল্লাহ, ২০১২ সালে রাখাইনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার পর আরসা'র কার্যক্রম চালু করেন। একটি ভিডিও তিনি প্রকাশ করেন যেখানে তাঁর সাথে দেখা যায় সশস্ত্র যোদ্ধা যারা মুখ ঢেকে আছে। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে হামলা চালানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তিনি আন্তর্জাতিক সাহায্য চান, আরাকান (রাখাইন রাজ্যের আরেক নাম) যে রোহিঙ্গাদের ভূমি এটাও দাবি করেন তিনি। রাখাইনে অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে আরসার কোনো বিবাদ নেই সেটিও এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করেন আরসার এই নেতা। আরসার প্রধান দাবি হচ্ছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব এবং সমান মর্যাদা দিতে হবে। তাঁর বক্তব্য বা ভিডিওতে কোথাও এমন বক্তব্য নেই যে তিনি জিহাদ করছেন , তিনি রোহিঙ্গাদের অধিকারের কথাই বারবার বলছেন। মিয়ানমারের সরকার ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাকে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে। আরসার নেতা আতাউল্লাহর আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা আছে এমন সন্দেহও করা হচ্ছে। তবে ব্যাংককভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যান্থনি ডেভিস বলছেন-"আতাউল্লাহও তা তার মুখপাত্রগণ এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে তারা গোষ্ঠীভিত্তিতিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন করছেন। তাদের কিন্তু আন্তর্জাতিক জিহাদি গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, এখনো তেমনটা দেখিনি আমরা। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে লড়ছেন। বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জিহাদী কোনোটাই তারা নন"। গত ২৫শে অগাস্টের পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে জনসংখ্যায় ভারসাম্য আনা? রাখাইনে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বৌদ্ধরা বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। দু পক্ষের মিলিশিয়াই হামলায় যুক্ত হয়েছে, হতাহত হয়েছে বহু। আর সহিংসতা থেকে বাঁচতে রাখাইনে ছেড়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বড় সংখ্যক রোহিঙ্গাই এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সংখ্যালঘুদের মিয়ানমারে বর্ণনা করা হয় 'বাঙালি' বলে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী, রোহিঙ্গারা হচ্ছে 'বিদেশি' - বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী - যাদের ভাষা ও সংস্কৃতি আলাদা। মিয়ানমারের বেশিরভাগ বার্মিজ মনে করে রোহিঙ্গা মুসলিম নয়, সেখানে তাদের ওপরেই হুমকি আছে। আর ২৫শে অগাস্টের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে অভিযান চালিয়েছে তাকে 'জাতিগত নিধনযজ্ঞে'র অন্যতম উদাহরণ বলা যায়। এমন পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে দেশটিতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংখ্যার সংখ্যা সেখানকার অমুসলিমদের সংখ্যার একটা ভারসাম্য চলে আসছে। ফলে প্রশ্ন জাগে রাখাইনে আরসা কিভাবে তার কার্যক্রম চালাবে? সীমান্তে হামলা চালানো অনেক কষ্টকর হবে এবং এমনটা বাংলাদেশও সহজভাবে নেবে না বা এমন পরিস্থিতি হোক সেটাও তারা চায় না। ইতোমধ্যেই লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে সংকটের মধ্যে আছে বাংলাদেশ, আর কোনো ধরনের সংঘাতেও জড়াতে চায় না দেশটি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে আরসার যে নেতা আছে এবং আরসা'র 'আমিরের' সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে ওই যুবকের। যদিও আতাউল্লাহর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই তার। ওই যুবক বলছে আরসা'র পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই তার। আশ্রয়কেন্দ্রে যত মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের সবাই আরসার অবস্থান সম্পর্কে জানে এবং সংগঠনটি নিয়ে কথা বলার সময় কিছুটা ভয়েই কথা বলছিল তারা। অগাস্টে হামলার পর আরসার সদস্যরা অনেককে হত্যা করেছে এমন খবর রয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা একটা বিষয়ে একমত যে ১৯৫০ সালের পর এই প্রথম মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে লড়াই করছে এই সংগঠনটি এবং এজন্যতারা অনেকের সমর্থনও পাচ্ছে। কেন বেশিরভাগ বার্মিজ নিজেদেের ওপর হুমকি আছে বলে মনে করে?
মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার ঘটনার প্রেক্ষিতে যারা প্রতিনিয়ত মুসলিম রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করছেন, তারা হয়তো এ বিষয়ে একমত হবেন যে তাদের দুর্দশা আজ বা কাল যেকোনো সময় রাজ্যটির বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রেই কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি কিন্তু যে ভাইরাসটি বিশ্ব মহামারির জন্য দায়ী, সেটি হয়তো আমাদের সঙ্গে ছিল আরও আগে থেকে। নতুন এক গবেষণায় সেরকম ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এই গবেষণা প্রকাশ করেছে 'ক্লিনিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজ' নামের একটি জার্নালে। সরকারি হিসেবে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হয়েছিল গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর, যখন চীনের উহান নগরীর স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায় এমন এক ভাইরাসের ব্যাপারে সতর্কবার্তা জারি করে। ধারাবাহিকভাবে বহু মানুষ তখন এই রহস্যজনক সংক্রমণের শিকার হচ্ছিল। কিন্তু এখন ১১ মাস পরে এসে গবেষকরা দেখছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি রাজ্যের ৩৯ জন মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল চীনে এই ভাইরাসে কথা জানা যাওয়ারও দুই সপ্তাহ আগে। যুক্তরাষ্ট্রে সার্স-কোভিড-টু ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ এবছরের ২১শে জানুয়ারির আগে ধরা পড়েনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থান থেকে রেডক্রসের সংগ্রহ করা ৭ হাজার মানুষের রক্তের নমুনা গবেষকরা পরীক্ষা করেছেন কিন্তু সিডিসির এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের ১৩ই ডিসেম্বর হতে এবছরের ১৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত ব্লাড ব্যাংকে নিয়মিত রক্ত দিয়েছেন এমন ৭ হাজার ৩৮৯ জনের রক্তের মধ্যে ১০৬ জনের নমুনায় করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি রয়েছে। কোন ব্যক্তির রক্তে অ্যান্টিবডি থাকার মানে হচ্ছে তিনি একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং সেই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা চেষ্টা করেছিল। এই ১০৬টি নমুনার মধ্যে আবার এমন ৩৯ জনের রক্তের নমুনা আছে, যাদের রক্ত নেয়া হয়েছিল গত বছরের ১৩ হতে ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন এবং ওয়াশিংটন রাজ্যে এসব মানুষ রক্ত দেন। তাদের সবার রক্তের নমুনায় পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি। এই গবেষণায় আরও দেখা যাচ্ছে, কানেক্টিকাট, আইওয়া, ম্যাসাচুসেটস, মিশিগান, রোড আইল্যান্ড এবং উইসকন্সিন রাজ্য থেকে জানুয়ারির প্রথম দিকে সংগ্রহ করা ৬৭ জনের রক্তের নমুনাতেও আছে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি। এটা এসব রাজ্যে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আগের কথা। যারা এরকম আগে-ভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই পুরুষ এবং তাদের গড় বয়স ৫২। গবেষণাটি যারা চালিয়েছেন, তাদের বিশ্বাস এর মধ্যে কিছু অ্যান্টিবডি হয়তো বিশ্বে অন্যধরণের যেসব করোনাভাইরাস আগে থেকে ছিল, তার মোকাবেলা করতে গিয়ে তৈরি হয়েছে। কিন্তু তারা একই সঙ্গে একথাও বলছেন, অ্যান্টিবডি পাওয়া মানুষের সংখ্যাটা যেহেতু বেশ বড়, তাই এদের কেউ কেউ সেসময় কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে গবেষকরা এখনো মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষভাগের আগে শুরু হয়নি। কিন্তু এই গবেষণায় যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তার ফলে এই মহামারির শুরু সম্পর্কে এতদিন আমরা যা জানতাম, তাতে কি পরিবর্তন আনবে? আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন করোনাভাইরাস যেভাবে শরীরের ক্ষতি করে 'হার্ড ইমিউনিটি' সম্পর্কে যেসব তথ্য জেনে রাখতে পারেন কখন করোনাভাইরাস প্রথম এসেছে? উহানের এক বন্যপ্রাণীর বাজারের সঙ্গে প্রথম সার্স-কোভিড-টু সংক্রমণের সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ করা হয়। ঠিক কোন মুহূর্তে প্রথম সার্স-কোভিড-টু ভাইরাস এসেছে, সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আমরা কোনদিনই জানতে পারবো না। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কথা প্রকাশ পাওয়ার কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাস আগে থেকে এই ভাইরাসটি ছড়াচ্ছিল বলে কয়েকটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে সিডিসির গবেষকরা বলছেন, তাদের গবেষণার একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, লোকজন তাদের নিজদেশেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে নাকি তারা ভ্রমণের সময় এর শিকার হয়েছে সেটি তারা নির্ধারণ করতে পারছেন না। এই গবেষণার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিল রেডক্রস। তারা বলছে, যে রক্তদাতাদের রক্ত তারা সংগ্রহ করেছে, তাদের মধ্যে মাত্র তিন শতাংশ বলেছিল, রক্ত দেয়ার আগের মাসে তারা বিদেশে ভ্রমণে গিয়েছিল। আর যারা বিদেশে গিয়েছিল, তাদের মাত্র পাঁচ শতাংশ বলেছিল তারা এশিয়ায় ভ্রমণ করেছে। অন্য কিছু জায়গায় একই ধরণের গবেষণায় দেখা গেছে, চীনে সরকারিভাবে এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্কতা জারির আগেই সেখানে ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যেমন মে মাসে ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, কিছু নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে ২৭শে ডিসেম্বর প্যারিসের কাছে সন্দেহজনক নিউমোনিয়ার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল এমন এক ব্যক্তির আসলে করোনাভাইরাস হয়েছিল। কয়েকটি দেশের গবেষকরা সেখানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সরকারি ঘোষণার আগের মাসগুলোতে সংগ্রহ করা পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার বর্জ্য পানির নমুনা পরীক্ষা করেছেন। সেখানে তারা করোনাভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন। জুন মাসে ইতালির বিজ্ঞানীরা বলেন, ১৮ই ডিসেম্বরেই মিলান এবং তুরিনে নর্দমার পানিতে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ দেখা যাচ্ছে। অথচ ইতালিতে প্রথম করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে এর অনেক পরে। এদিকে স্পেনেও একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বার্সেলোনায় জানুয়ারির মধ্যভাগে যে বর্জ্য পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়, সেখানে করোনাভাইরাস আছে। অথচ বার্সেলোনায় করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছে আরও ৪০ দিন পর। স্পেন এবং ব্রাজিলের গবেষকরা পয়নিষ্কাশন প্রণালীর বর্জ্য পানিতে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। ব্রাজিলেও আসলে করোনাভাইরাস কখন পৌঁছেছিল সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ২৬শে ফেব্রুয়ারি সেখানে প্রথম সংক্রমণের ঘটনা পরীক্ষায় ধরা পড়ে। ইতালিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন ৬১ বছর বয়স্ক এমন এক ব্যক্তি সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। ইতালি ততদিনে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব সান্তা ক্যাটারিনার (ইউএফএসসি) একদল গবেষক সেখানে ২৭শে নভেম্বরেই বর্জ্য পানিতে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন। অসওয়াল্ড ক্রুজ ফাউন্ডেশনের আরেকটি গবেষণাতেও দেখা গেছে, ব্রাজিলে সরকারিভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঘোষণার এক মাস আগে অন্তত একটি সংক্রমণের কথা জানা যাচ্ছে। ১৯ হতে ২৫শে জানুয়ারির মধ্যে এই সংক্রমণ ঘটেছে। তবে এই সংক্রমণের সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণের সম্পর্ক ছিল কিনা, সেটি জানা যায়নি। করোনাভাইরাস প্রথম যখন ব্রাজিলে ধরা পড়ে বলে বলা হয় তারও এক মাস আগে থেকে এট সেখানে ছিল বলে প্রমান আছে তবে যেটা এখনো পরিষ্কার নয় কখন কীভাবে এবং কখন সার্স-কোভিড-টু ভাইরাস লোকজনকে সংক্রমিত করতে শুরু করে। আর এই ভাইরাস প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে কখন ঢুকেছিল, সেটাও পরিষ্কার নয়। এ পর্যন্ত সবার মনোযোগ কেবল চীনের উহান নগরীর একটি বাজারের দিকেই নিবদ্ধ ছিল, যেখানে মৃত এবং জীবিত বন্য প্রাণী বিক্রি করা হতো। শুরুর দিকের অনেক করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সঙ্গে এই বাজারের সম্পর্ক ছিল বলে দেখা গেছে। কিন্তু গবেষকরা নিশ্চিত নন, ভাইরাসটি সেখান থেকেই এসেছে নাকি সেখানে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে এবং একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে সংক্রমিত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব হংকং এর মাইক্রোবায়োলজিস্ট ইউয়েন কোক ইয়াং বলেন, "যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কোনটির সম্ভাবনা বেশি, আমি বলবো ভাইরাস সেখান থেকেই আসে যেখানে বন্য প্রাণী বিক্রি করা হয়।" চীন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার যে সময়টির কথা প্রথমে বলেছিল, সেটি পরে তারা আরও পিছিয়ে দিয়েছে। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোভিড-১৯ এর মতো দ্রুত ছড়াতে থাকা একটি ভাইরাসের বিষয়ে তদন্তে এরকম হতেই পারে। উহানের ডাক্তারদের পরিচালিত এর আগের এক গবেষণা এ বছরের শুরুর দিকে প্রকাশ করা হয় মেডিক্যাল জার্নাল ল্যান্সেটে। এতে বলা হয়েছিল, প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয় ডিসেম্বরের ১ তারিখে, এবং তার সঙ্গে কোন বাজারের কোন সম্পর্ক ছিল বলে মনে হচ্ছিল না। কিছু বিশেষজ্ঞ যুক্তি দিচ্ছেন যে, একটি ভাইরাস, যা থেকে একটি বিশ্ব মহামারি শুরু হতে পারে, সেটি কয়েক মাস ধরে শনাক্ত না হয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কঠিন। তবে এটি কয়েক সপ্তাহ ধরে সবার অগোচরে বিস্তার লাভ করছিল- এমনটাই তাদের কাছে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। বিশেষ করে, বিশ্বের উত্তর গোলার্ধে শীতের সময়।
বিজ্ঞানীরা প্রথম নতুন সার্স-কোভিড-টু করোনাভাইরাসের কথা শুনেছিলেন প্রায় এক বছর আগে চীনে এটি ধরা পড়ার পর।
মার্চ মাসের শেষে লকডাউন শুরুর পর থেকে ওই গাড়িটি ভাড়ায় না চালিয়ে বিভিন্ন রোগীদের বিনামূল্যে পরিবহন সেবা দিচ্ছে রাশেদ। তার এই গাড়ীর নাম রেখেছেন "রাশেদের মানবতার বাহন"। তবে এর পিছনে রয়েছে অনুশোচনা। সে অনুশোচনা থেকে এখন পর্যন্ত আড়াইশ'র বেশি অসহায় রোগীকে সেবা দিয়েছেন তিনি। কী সে অনুশোচনা, কেনই বা এটি তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মোহাম্মদ রাশেদ উদ্দিন সে কথা বলেছেন বিবিসির শাহনেওয়াজ রকিকে।
চট্টগ্রামের নোয়াপাড়া এলাকায় নিজের একটি দোকান আছে রাশেদের আর নিজের একটি গাড়ি ভাড়ায় চালাতেন।
প্রাদেশিক রাজধানী গজনীতে গত ১০ই অগাস্ট তালেবান জঙ্গিরা প্রবেশ করে। এর কারণ, আফগানিস্তানে মার্কিন সমর্থিত সামরিক বাহিনী অবস্থান নেয়ায় টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছে তালেবান ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো। বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের দাউদ আজমী ব্যাখ্যা করেছেন যে, দৃশ্যত এই যুদ্ধের কোন শেষ নেই। কেননা এটি ক্রমাগত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে। সহিংসতা কি আরও খারাপ রূপ নিয়েছে? ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত আফগানিস্তান কখনোই এতোটা অনিরাপদ ছিল না। যেমনটা এখন হয়েছে। ১৭ বছর আগে তালেবান শাসনের অবসানের আগ পর্যন্ত আফগানিস্তানের বেশিরভাগ স্থান তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের যুদ্ধ ইতোমধ্যে মার্কিন ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। তালেবান অধূষ্যিত অঞ্চলে রাস্তায় কোন নারীকে দেখা যায়না। সময়ের সাথে সাথে এই সংঘাত শুধু তীব্র থেকে তীব্রতর হয়নি- সেইসঙ্গে আরও জটিল হয়ে পড়েছে। এখনকার হামলাগুলো যেমন বড়, তেমনই বিস্তৃত এবং মারাত্মক। তালেবান এবং মার্কিন / ন্যাটো সমর্থিত আফগান সরকার দু'পক্ষই এখন নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। কাবুলের দক্ষিণে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক রাজধানী গজনীতে গত ১০ই অগাস্ট, তালেবান জঙ্গিরা প্রবেশ করে। মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী বিমান হামলার মাধ্যমে জঙ্গিদের পিছু হটানোর আগেই তালেবান শহরটি দখলে নেয়। এর আগে ১৫ মে তালেবানরা ইরানি সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় ফারাহ প্রদেশের রাজধানীতে প্রবেশ করেছিল। সে সময় তাদের হটাতে পাল্টা অবস্থান নেয় মার্কিনপন্থী বাহিনী। এতে বহু তালেবান যোদ্ধা হতাহত হন। কিন্তু তালেবান গোষ্ঠীর জন্য এই ধরনের হামলাগুলোর বড় ধরণের প্রোপাগান্ডার মতো। এসব হামলা তাদের প্রচারণা বাড়ায় যা তাদের মনোবল শক্তিশালী করার পাশাপাশি সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে দল ভারী করতে সাহায্য করে। জুন মাসে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির সময় তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন এক আফগান সেনা কর্মকর্তা। তালেবানদের কোন স্থান থেকে সরিয়ে দেয়া হলে তারা যাওয়ার সময় নিজেদের অস্ত্র ও যানবাহন নিয়ে যায়। হেলমান্দ এবং কান্দাহারের মত প্রদেশগুলোর বেশ বড় অংশ বর্তমানে তালেবান নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে অনেক শহর ও গ্রাম। একসময় হেলমান্দ এবং কান্দাহারে যুদ্ধ চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের সেনারা নিহত হয়েছিল। এখন ওই অঞ্চলে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের হিসাব মতে, ২০১৭ সালে ১০ হাজার জনেরও বেশি বেসামরিক মানুষ মারা গিয়েছে বা আহত হয়েছে এবং ২০১৮ সালে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্রাম্পের কৌশল কি কোন পার্থক্য আনতে পেরেছে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, আফগানিস্তানের জন্য যে নতুন কৌশল উন্মোচন করেছেন, তার এক বছর পেরিয়ে গেছে। তালেবান যোদ্ধা। সেখানে তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র "জয়ের জন্য লড়বে"। এই অচলাবস্থার অবসানে, তালেবানদের শান্তির পথে ফেরাতে সর্বোপরি তাদেরকে আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে ট্রাম্প প্রশাসন তালেবানের ওপর চারটি উপায়ে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে। সেগুলো হল: ১. সর্বাধিক সামরিক চাপ: তীব্র বিমান হামলা এবং বিশেষ বাহিনীকে দিয়ে অভিযান চালানোর মাধ্যমে সামরিক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। মোতায়েন করা হয়েছিল প্রায় ১৪ হাজার মার্কিন সেনা। গত অক্টোবরে মার্কিন বাহিনীর তৎকালীন কমান্ডার জন নিকলসন বলেছিলেন, তালেবানকে নিশ্চিহ্ন করার অভিযান শুরু করতে "বিমান বাহিনীর ক্ষমতা" প্রকাশ করা হয়েছিল । ২. তালেবানদের আর্থিক উৎসগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা: এরমধ্যে রয়েছে আফগানিস্তানের আফিম উৎপাদনের জমিগুলোয় বোমা হামলা। যেগুলো কিনা তালেবানরা পরিচালনা করে এবং বিদেশ থেকে তাদের কাছে আসা নগদ অর্থের প্রবাহ বন্ধ করে দেয়া। ৩. প্রশ্ন তোলা: তালেবানের যুদ্ধের বৈধতা নিয়ে জনসমক্ষে বিশেষ করে ধর্মীয় দলগুলোর কাছে প্রশ্ন তোলা। ৪. পাকিস্তানের ওপর চাপ: পাকিস্তানের ভূখণ্ডে থাকা আফগান তালেবানদের ধরতে ও তাদের বহিষ্কার করতে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এই প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়েছে তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রয়াসগুলো ব্যর্থ হয়েছে। এর কারণ: ১. নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে তালেবান: তীব্র সামরিক চাপ তালেবানদের আঞ্চলিক সম্প্রসারণের গতি কমিয়ে দিয়েছে। কেননা গত বছর অনেক তালেবান যোদ্ধা (কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডারসহ) হামলায় নিহত হয়েছেন। তীব্র সামরিক চাপের মুখেও এখনও অনেক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে আছে তালেবান। কিন্তু তারপরেও নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে তালেবান। সেইসঙ্গে দেশজুড়ে প্রাণঘাতী হামলা বা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে তালেবানদের লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলায় বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ২. অর্থ সরবরাহ বেড়েছে: তালেবানের মাদকের আখড়ায় বোমা হামলা সত্ত্বেও, তারা আর্থিক সংকটের মুখে পড়েনি। বরং তথ্যপ্রমাণ থেকে জানা গেছে যে তাদের সম্পদ আরও বেড়েছে। ৩. আলোচনায় অস্বীকৃতি: সৌদি আরব ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ইসলামী চিন্তাবিদরা বিভিন্ন সভার আয়োজন করেছেন। মূলত যখন আফগানিস্তানে সহিংসতার ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছিল তখন তালেবানকে আহবান জানানো হয় যেন তারা আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা যোগ দেয়। তবে তালেবানরা সাফ অস্বীকৃতি জানায়। তাদের মতে এটি ওয়াশিংটনের যুদ্ধকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণের জন্য "আমেরিকান প্রক্রিয়ার" একটি অংশ। ৪. পাকিস্তানের আফগান কৌশল: ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি ত্রাণ ও নিরাপত্তা সহায়তা স্থগিত করে দিয়েছে। তবে তালেবানকে সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসলামাবাদ। তারা জানায় আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য তারা সাহায্য করতে প্রস্তুত আছে। তবে পাকিস্তানের আফগান কৌশল নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আভাস দেখা দিয়েছে। যুদ্ধ কিভাবে চলছে? আফগানিস্তানের সংঘাতের তীব্র আকার ধারণ করার পেছনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ দায়ী করা হয়েছে: ১. একপেশে আচরণ: উভয় পক্ষই নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের অবরোধ প্রত্যাহারের চেষ্টা করছে। প্রত্যেকটি পক্ষই চাইছে তাদের প্রভাব বাড়িয়ে আরও এলাকা দখলে নিতে। ২. মার্কিন যুদ্ধনীতি: ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযান শুরুর পর তাদের কৌশলের কার্যকারিতা এবং যুদ্ধনীতির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার তালেবান যোদ্ধা নিহত, আহত না হয় আটক হয়েছেন। কিন্তু তাদের অভিযানে সেই দুর্বলতার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। হেলমান্দ প্রদেশের একটি বড় অংশ এখনও রয়েছে তালেবানদের দখলে। এক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকার ধারণা করেছিলেন যে আফগানিস্তানে প্রায় ১৫ হাজার জঙ্গি রয়েছে। বর্তমানে, জঙ্গির সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৩. ইসলামিক স্টেট আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ইসলামিক স্টেটের খোরসান শাখার উত্থান, গোষ্ঠীটির সহিংসতা ও নৃশংসতার মাত্রা অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। নতুন গ্রুপটি কয়েকটি মারাত্মক হামলা চালানোর দাবি করেছে। যেসব হামলার বেশিরভাগ লক্ষ্যবস্তু ছিল শহরের বেসামরিক মানুষ। ৪. শান্তি আলোচনা: শান্তি আলোচনার ধারণাটি গতি পাওয়ার পর তালেবানরা তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে আলোচনার টেবিলে শক্তিশালী অবস্থান থেকে কথা বলতে চায়। ৫. তালেবানকে সমর্থনের অভিযোগ: মার্কিন ও আফগান কর্মকর্তারা পাকিস্তান, রাশিয়া ও ইরান, এই তিনটি দেশের বিরুদ্ধে তালেবানকে সমর্থনের অভিযোগ এনেছে। যদিও ওই তিন দেশ তা অস্বীকার করে। ওই তিন দেশের ওপর অভিযোগের বাড়তি চাপের কারণে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আফগানিস্তানের সৈন্যরা কি সামাল দিতে পারবে? তালিবান সহিংসতা উচ্চমাত্রায় চলে যাওয়ায় আফগান নিরাপত্তা বাহিনী এখন চাপের মধ্যে আছে, অনেক ক্ষেত্রে, ভীত-সন্ত্রস্তও। আফগানিস্তানে তালেবানের সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে। তালেবানদের বিস্তার রোধে আফগান বাহিনী কঠোর সংগ্রাম করছে। কিন্তু এ কারণে তাদের হতাহতের হার বিপজ্জনক হারে বেড়েই যাচ্ছে। সামনে তা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আফগান বাহিনীতে দৃঢ় এবং অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্বের অভাব, সময়মতো রসদ সরবরাহ এবং দুর্নীতি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। আরও পড়তে পারেন: জালালুদ্দিন হাক্কানির মৃত্যু: কত বড় এই নেটওয়ার্ক? অস্ত্র ছাড়াই কাবুলে ঢুকলো তালেবান যোদ্ধারা পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কেন চিড় ধরছে তালেবান নেতার বৃক্ষ প্রেম এছাড়া কাবুলের রাজনৈতিক ও সরকারী নেতাদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব, সরকার পরিচালনা সেইসঙ্গে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর দুই বিরোধী দল মিলে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) গঠন করলেও তারা প্রকৃতপক্ষে একতাবদ্ধ নয়। চার বছর ক্ষমতায় থাকার পরও, কাবুল সরকার বিভিন্ন বিষয়ে অভ্যন্তরীণ-ভাবে দ্বিধাবিভক্ত রয়ে গেছে। নির্বাচন কি অনুষ্ঠিত হতে পারে? তিন বছরের বেশি সময় ধরে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির যে বিলম্ব হয়েছিল সেটা অনুষ্ঠানের তারিখ ২০ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে। সহিংসতা বাড়তে থাকায় নির্বাচন সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে কি না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাপক জালিয়াতি এবং ভোট পূর্ববর্তী ম্যানিপুলেশন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগের। তালেবানদের খোলাবাজারে বিক্রি হয় একে ৪৭ এর মতো ভারী অস্ত্রের বুলেটসহ নানা বিস্ফোরক। সহিংসতা ও ভয় দেখানোর কারণে দেশটির বেশ কয়েকটি স্থানে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয় তাহলে পরের পার্লামেন্টে কারা কিভাবে প্রতিনিধিত্ব করবে তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। ২০১৯ সালের এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। উভয় নির্বাচনই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তি পরীক্ষা করবে এবং সেটা হবে আফগানিস্তানে সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শান্তি আলোচনার ব্যাপারে কি হবে? সব পক্ষ এখন মনে করে যে আফগানিস্তান যুদ্ধ কেবলমাত্র সামরিক উপায়ে সমাধান করা যাবে না। এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু করার জন্য ধীরে ধীরে সব দলের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। দলগুলো বলছে যে তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায়। জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে তিন দিনব্যাপী যুদ্ধবিরতির পর সুযোগের একটি জানালা খুলে যায়। এরপর জুলাই মাসে কাতারে মার্কিন কর্মকর্তা এবং তালেবান প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়। গত সাত বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো দুই পক্ষ আলোচনার টেবিলে মুখোমুখি হয়েছিল। তারা শিগগিরই আবার বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। যুদ্ধবিরতির সময় তালেবানের সাথে সাধারণ লোকের কোলাকুলি। তবে এটি স্বীকার করতেই হয় যে মার্কিন সামরিক বাহিনীর কঠোর অভিযান সত্ত্বেও, কোন পক্ষই যুদ্ধ জয়ী হতে পারেনি। কিন্তু শান্তি আলোচনা জন্য দল এবং কাঠামোর বিন্যাস নিয়ে এখনও ব্যাপক মতানৈক্য আছে। অর্থপূর্ণ অগ্রগতির জন্য এবং বিশ্বাসের ভিত্তি নির্মাণের জন্য সবপক্ষেরই আপোষ করার মতো নমনীয় মনোভাব রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া অন্য চ্যালেঞ্জটি হল আঞ্চলিক পক্ষগুলোর মধ্যে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা। আফগানিস্তান এবং বৃহত্তর অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা তখনই সম্ভব হবে যখন বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সমাধান খোঁজা হবে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি থাকবে পাকিস্তান, রাশিয়া, ইরান, চীন, ভারত, সৌদি আরব। তবে শেষ পর্যন্ত এই সংলাপ আফগানিস্তানের দুই পক্ষের মধ্যেই হবে। এবং সেটাই নির্ধারণ করবে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।
আফগানিস্তানে একসময় হতাহতের ঘটনা সংবাদের শিরোনামে উঠে এলেও এখন সেগুলো খুব স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের একটি বড় দাবি ছিল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা যাবে না, সেজন্য তারা এ শব্দটি ব্যবহার করেন নি। কিন্তু সেটা কোন ধরণের সরকার হবে? এটা কি নির্দলীয় নাকি সর্বদলীয় সরকার হবে? এমন প্রশ্নে মি: রহমান বলেন, "দুই রকমই হতে পারে। সেটা স্পেসিফাই করিনি আমরা। সর্বদলীয় হতে পারে, নির্দলীয়ও হতে পারে।" নির্বাচনকালীন সরকারের বিধান তৈরির পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্ট তাদের ইশতেহারে নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্না ঐক্যফ্রন্ট বলেছে দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না। এছাড়াও তাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে সংসদে উচ্চকক্ষ তৈরি করা, সংসদে বিরোধী দলকে গুরুত্ব দেয়া এবং সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা। তারা বলেছে ক্ষমতায় গেলে মহিলাদের মনোনয়ন ২০ শতাংশ করার জন্য তারা বিধান তৈরি করবে। জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট যে ইশতেহার দিয়েছে সেখানে সামাজিক-অর্থনৈতিক খাতে নানা প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে। বেকার ভাতা দেয়া যায় কি না সেটি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে এ ইশতেহারে। এছাড়া বলা হয়েছে চাকরিতে প্রবেশের কোন বয়সসীমা থাকবে না। একশো মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর মূল্য আগামী পাঁচ বছরে বাড়বে না । ইত্যাদি নানা প্রতিশ্রুতি রয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনে জিতলে এ ইশতেহার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবে? রেজা কিবরিয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে যে ইশতেহার প্রণয়ন করে তার অধিকাংশই অধরা থেকে যায় । অতীতে সেটিই দেখা গেছে। অনুষ্ঠান শেষে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিলাম গণফোরাম নেতা ড. রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, "অনেক কঠিন লক্ষ্য রাখতে হয়। একশোটার মধ্যে আমরা হয়তো সবগুলি পারবো না, কিন্তু আমরা যদি মাত্র পাঁচটা লক্ষ্য দিই তাহলে তো ইটস নট অ্যা গুড থিং (এটা ভালো জিনিস না)। আমাদের লক্ষ্য অনেক উঁচু। আমরা চেষ্টা করবো এ লক্ষ্যে পৌঁছতে।" মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই ইশতেহারের মাধ্যমে তারা একটি মানবিক এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং গণ ফোরামসহ কয়েকটি ছোট দল নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছে, তারা নির্বাচন-কালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু ইশতেহারে 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার' কিংবা 'নির্দলীয় সরকার' - এসব শব্দ ব্যবহার করা হয়নি।
ইয়েমেনে ইউএই সমর্থিত একজন মিলিশিয়া। পাশের দেয়ালে আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শেখ জায়েদ আল নাহিয়ানের ছবি। এ বছর মঙ্গল গ্রহে রকেট পাঠিয়েছে তারা। বিতর্কের তোয়াক্কা না করে আরবদের চিরশত্রু ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছে। যেভাবে করোনাভাইরাস সামলেছে, তা নিয়েও প্রশংসিত হচ্ছে দেশটি। শুধু যে সংক্রমণ দ্রুত আটকেছে তা-ই নয়, কারখানায় রাতারাতি উপযুক্ত যন্ত্র বসিয়ে সংক্রমণ নিরোধক পোশাক (পিপিই) তৈরি করে বিমান ভরে ভরে তা অন্য দেশে পাঠিয়েছে। সেই সাথে, ইয়েমেনে ইরানের প্রভাব এবং সোমালিয়া ও লিবিয়ায় তুরস্কের প্রভাব খর্ব করতে ওই দেশগুলোর গৃহযুদ্ধে সম্পৃক্ত হতে পেছপা হয়নি ইউএই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈদেশিক নীতি যে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গবেষক এবং বিশ্লেষকদের বিশেষ দৃষ্টি কাড়ছে, তাতে সন্দেহ নেই। ইসরায়েলের সাথে চুক্তিকে ট্রাম্প বললেন 'নতুন মধ্যপ্রাচ্যের ভোর' ইসরায়েলের সাথে শান্তিচুক্তি: আমিরাত ও বাহরাইনের পর কি সৌদি আরব? মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ড. নায়েল শামা সম্প্রতি রয়টারস বার্তা সংস্থায় তার এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, কয়েক বছর আগে পর্যন্তও ক্ষুদ্র জনসংখ্যার ছোট যে উপসাগরীয় দেশটির বিশ্ব পরিসরে বলার মত তেমন কোনো ভূমিকাই ছিল না, সেই দেশটির ‘বিশাল উচ্চাভিলাষ‘ নিয়ে গভীর আগ্রহ তৈরি হয়েছে। লক্ষ্য কী তাদের? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কেন তাদের এই উচ্চাভিলাষ? এ প্রসঙ্গে বিবিসি'র প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাঙ্ক গার্ডনার তার এক রিপোর্টে ২১ বছর আগের কসোভো যুদ্ধ চলার সময় তার এক অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেছেন। ‘১৯৯৯ সালের মে মাস তখন। কসোভোর যুদ্ধ এক বছর গড়িয়েছে। আলবেনিয়া-কসোভো সীমান্তে একটি অস্থায়ী শরণার্থী শিবির স্থাপন করেছে আমিরাত রেড ক্রিসেন্ট। ওই শিবিরে তারাই দুবাই-আবুধাবি থেকে রান্নার লোক, হালাল মাংসের জন্য কসাই, টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার, এমনকি একজন ইমামও উড়িয়ে নিয়ে এসেছে। আমিরাতের সৈন্যরাই ভারী অস্ত্র, সাঁজোয়া যান নিয়ে শিবির টহল দিচ্ছে।‘ আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানা থেকে আগের দিন যে হেলিকপ্টারে করে বিবিসির ওই সংবাদদাতা সীমান্তের শিবিরটিতে আসেন, তার চালক ছিলেন আমিরাতের বিমান বাহিনীর এক পাইলট। “শিবিরের বাথরুমে পাশের বেসিনে লম্বা, দাড়িওয়ালা যিনি দাঁত ব্রাশ করছিলেন, তাকে সাথে সাথেই চিনতে পারলাম। তিনি শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ (দেশটির বর্তমান যুবরাজ)। ব্রিটিশ রয়াল মিলিটারি একাডেমীর স্নাতক। তখন থেকে তিনিই তার দেশের সামরিক ভূমিকা বাড়ানোর পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন।“ খুব ইচ্ছা না থাকলেও বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন শেখ মোহাম্মদ। তিনি জানিয়েছিলেন, ফ্রান্সের সাথে তারা একটি সামরিক কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী, ৪০০ ফরাসী ট্যাংক কিনবে ইউএই। বদলে, ফরাসীরা আমিরাত সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফরাসী সৈন্যদের সাথে কসোভোতে মোতায়েন করবে।। “যে দেশটির তখনও স্বাধীনতার ৩০ বছর হয়নি, তাদের এমন উদ্যোগ সত্যিই সাহসী ছিল,“ বলছেন ফ্রাঙ্ক গার্ডনার। ইউএই বিমান বাহিনীর মিরেজ-২০০০ যুদ্ধবিমান আবুধাবি থেকে কসোভোর দূরত্ব ২,০০০ মাইল। এত দূরে ছোট একটি উপসাগরীয় রাজতন্ত্রের এই সামরিক উচ্চাভিলাষে বিস্মিত হয়েছিলেন অনেকেই। কসোভোর পরই আফগানিস্তান ইউএই ছিল প্রথম কোনো আরব দেশে যারা নেটো বাহিনীর সমর্থনে ইউরোপে সেনা মোতায়েন করেছিল। এরপর আসে আফগানিস্তান। তালেবানের পতনের পরপরই আমিরাতি সৈন্যরা যে নেটো বাহিনীর সঙ্গী হয়, তা অনেকদিন পর্যন্ত বাকি বিশ্ব তেমন জানতোই না। আমিরাতিরা তখন আফগানিস্তানে স্কুল করে দিয়েছে, মসজিদ বানিয়েছে, খাবার পানির জন্য কুয়ো খুঁড়ে দিয়েছে। “আফগানিস্তানে আমিরাতের তেমন বড় কোনা সামরিক ভূমিকা ছিল না। কিন্তু তারা টাকা-পয়সা এবং ধর্মকে কাজে লাগিয়ে নেটো সৈন্যদের প্রতি স্থানীয় মানুষজনের ক্রোধ-সন্দেহ অনেকটাই প্রশমিত করতে সাহায্য করেছে,“ বলছেন ফ্রাঙ্ক গার্ডনার। ‘ক্ষুদ্র, কিন্তু নির্ভীক‘ মাত্র এক কোটি মানুষের ছোট একটি দেশের মধ্যে এই সামরিক অভিলাষ দেখে সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস মাতিস ইউএইর নাম দিয়েছিলেন ‘লিটল স্পার্টা‘ বা ক্ষুদ্র, কিন্তু নির্ভীক। তারপর গত ২০ বছরে, বিশেষ করে গত এক দশকে, ইউএই'র রাজনৈতিক এবং সামরিক অভিলাষের ডানা অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক একটি ব্যবসা কেন্দ্র হয়ে ওঠার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় সামরিক শক্তি হয়ে উঠেছে ইউএই। আরব বসন্তের টালমাটাল অবস্থার পরপরই ইউএই মধ্যপ্রাচ্যের নানা জায়গায় প্রকাশ্যে মাথা গলাতে শুরু করে। এখন লোহিত সাগর অঞ্চল এবং পূর্ব আফ্রিকাতেও তাদের ভূমিকা স্পষ্ট হচ্ছে। ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাতের সমঝোতা: 'আমাদের পিঠে ছুরি মারা হয়েছে' ড. নায়েল শামা লিখেছেন, হর্ন অফ আফ্রিকা অঞ্চলের কয়েকটি দেশে ইউএই অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। প্রধানত আর্থিক সুযোগ সুবিধে দিয়ে তারা কিছু দেশে ‘কিংমেকার‘ হয়েছে, অর্থাৎ তাদের পছন্দমত সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে। আবার অনেক জায়গায় ‘পিসমেকারের‘ ভূমিকা নিচ্ছে তারা। সম্প্রতি ইথিওপিয়া এবং এরিত্রিয়ার মধ্যে দুই দশকের বিরোধ ঘোচানোর পেছনে ইউএই'র বড় ধরণের ভূমিকা ছিল। একই সাথে, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব এবং বাণিজ্যিক স্বার্থে লোহিত সাগর এলাকার অর্থাৎ মিশর, ইয়েমেন, সোমালিয়া ও সৌদি আরবের চারটি বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে ইউএই সরকারের দুবাই-ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। আফগানিস্তানে ইউএই স্পেশাল ফোর্স ইয়েমেন, এরিত্রিয়া এবং সোমালিল্যান্ডে ছোটোখাটো সামরিক ঘাঁটিও স্থাপন করেছে ইউএই। তাদের সামরিক এবং রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা এখন আর চেপে রাখতেও চাইছে না ইউএই। এক সাক্ষাৎকারে আমিরাতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার গারগাস বিবিসিকে বলেন, “আমরা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ হতে চাই। বিশ্বে ভূমিকা রাখতে চাই।“ তিনি বলেন, সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য "ঝুঁকি নিতে হলেও আমরা তা নেব।" অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, আরব এবং মুসলিম বিশ্বের বিরাট একটি অংশের রক্তচক্ষুকে পাত্তা না দিয়ে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পিছেনে আমিরাতের অন্যতম উদ্দেশ্য অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং গোয়েন্দা প্রযুক্তি জোগাড় করা। কেন এই আকাঙ্ক্ষা কিন্তু যেখানে তারা নিজেরাই এক ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা করছে, তারপরও ক্ষুদ্র এই রাষ্ট্রটি মধ্যপ্রাচ্য এবং তার বাইরেও তাদের আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে শুরু করেছে? অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মনে করেন, এই উচ্চাভিলাষের পিছেনে মূল তাড়না একটি - ‘রাজনৈতিক ইসলামের‘ ব্যাপারে আমিরাত শাসকদের, বিশেষ করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদের, চরম বিরাগ এবং ভীতি। ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে আরব বিশ্ব, কতটা রয়েছে ফিলিস্তিনিদের জন্য আবেগ-সমর্থন সে কারণেই ইউএই মিশরে ২০১৩ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মোরসি সরকারের বিরুদ্ধে সেনাঅভ্যুত্থানে মদত দিয়েছে। তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র সরকার মুসলিম ব্রাদারহুড-সমর্থিত সরকারকে মেনে নিলেও ইউএই তাদের সরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। লিবিয়ায় তারা জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকারকে উৎখাতে মিলিশিয়া নেতা খলিফা হাফতারকে সাহায্য করছে। কাতারের বিরুদ্ধে ইউএই‘র প্রধান অভিযোগ যে তারা মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামপন্থীদের সাহায্য করছে। আর মূলত সে কারণেই কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধে তারা সৌদি আরবের সঙ্গী হয়। ড. নায়েল শামা মনে করেন, ইসলামী জঙ্গিবাদকে ইউএই'র শাসকরা অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসাবে দেখে, এবং পূর্ব আফ্রিকায় তাদের সামরিক এবং রাজনৈতিক তৎপরতার প্রধান লক্ষ্যই হলো এই ইসলামী জঙ্গিবাদ দমন। এ বছরই মঙ্গল গ্রহে রকেট পাঠিয়েছে আরব আমিরাত পূর্ব আফ্রিকায় ইউএই'র প্রধান প্রধান টার্গেট হলো বোসাও-ভিত্তিক আল ইত্তেহাদ আল-ইসলামী, এরিত্রিয়ার ইসলামিক জিহাদ মুভমেন্ট, সুদানের তাকফির ওয়াল হিজরা এবং সোমালিয়ার আল-শাবাব। তুরস্কের সাথে টক্কর এমন কি তুরস্কের এরদোয়ান সরকারের সাথে টক্কর দিতে পিছপা হচ্ছে না ইউএই। এ মাসেই তারা গ্রীসের ক্রিট দ্বীপে গ্রীক সেনাবাহিনীর সাথে যৌথ মহড়ার জন্য যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। ভূমধ্যসাগরের জ্বালানি অনুসন্ধানের অধিকার নিয়ে গ্রীস ও তুরস্কের মধ্যে যখন তীব্র উত্তেজনা চলছে, সেই সময়ে গ্রীসের সাথে এই যৌথ সামরিক মহড়াকে তুরস্ক উস্কানি হিসাবেই দেখছে। সামলাতে পারবে ইউএই? তবে ইউএই খুব দ্রুত এগুতে চাইছে কি-না, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে। উপসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল স্টিভেন্স বিবিসিকে বলেন, “কোনো সন্দেহ নেই ইউএই এখন আরব বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকরী সামরিক শক্তি। তারা যেভাবে যত দ্রুত দেশের বাইরে সেনা মোতায়েন করতে পারে, সেটা অন্য কোনো আরব দেশ এখনও চিন্তাই করতে পারে না।“ কিন্তু, তিনি বলেন, দেশটি খুবই ছোট এবং সক্ষমতারও অনেক ঘাটতি রয়েছে। “ফলে এক সাথে অনেক সমস্যায় হাত দিলে তারা ঝুঁকিতে পড়বে, এবং দীর্ঘমেয়াদে হিতে বিপরীত হতে পারে।“ ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা: কার জন্য কী? পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য সামরিক সংঘর্ষকে ইউএই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করে। আর সে কারণেই, ইরান বিরোধী জোটে অবস্থান নিয়েও ইউএই সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্নভাবে ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ইরানের সাথে সরাসরি কোনো বিরোধে জড়াতে অনিচ্ছুক। তাদের ভৌগলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং বিদেশীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে যে সুনাম তারা প্রতিষ্ঠা করেছে, তাতে নিজের ওপর সংঘাতের যেকোন আঁচের সম্ভাবনা নিয়েও শঙ্কিত ইউএই। ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও যুদ্ধ হলে সংঘর্ষের সম্ভাব্য কেন্দ্র হবে যে এলাকা, সেই হরমুজ প্রণালীর সাথেই আমিরাতের উপকূল। ইয়েমেনে ত্রাণ বিতরণ করছে আমিরাতের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এলিজাবেথ ডিকিনসন সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকে বলেন, “তাদের এলাকায় স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়ে ইউএই'র বিরাট স্বার্থ রয়েছে। তাদের অবকাঠামোর ওপর কোনও হুমকি তাদের জন্য দুঃস্বপ্ন। অঞ্চলটির সবচেয়ে শক্ত অর্থনীতি বলে তাদের যে সুনাম, যে আস্থা, তা ধসে পড়বে।“ ইউএই'তে বাস করা মানুষের ৯০ শতাংশই বিদেশী। তারাই দেশটির সব ধরণের অবকাঠামো নির্মাণ এবং দেখাশোনা করে। অনিরাপত্তার কারণে বিদেশীরা চলে যেতে শুরু করলে ইউএই অচল হয়ে পড়বে। সে কারণেই ইরানের সরাসরি সমালোচনা থেকে বিরত থাকে ইউএই। গত বছর জুনে যখন ইউএই'র উপকূলের কাছে সৌদি একটি তেলের ট্যাংকারে বিস্ফোরণ হয়, তখনও তারা যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সাথে গলা মিলিয়ে ইরানকে দায়ী করতে রাজী হয়নি। পরে যুক্তরাষ্ট্র যখন পারস্য উপসাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠায়, ঠিক সেই সময়ে হরমুজ প্রণালীর নিরাপত্তা নিয়ে ইউএই তেহরানে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায়, যে পদক্ষেপ মার্কিনীরা পছন্দ করেনি। অব্যাহত যুদ্ধে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ার মত আরব বিশ্বের এক সময়কার বড় বড় শক্তিধর দেশগুলোর দুর্বলতায় মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণে তৎপর হয়েছে ইউএই। নিজেদের অসামান্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, ইরান নিয়ে ভীতি, জঙ্গি ইসলাম নিয়ে উদ্বেগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভূ-রাজনৈতিক নীতির কারণেও ইউএই'র মধ্যে আঞ্চলিক পরাশক্তি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা দিনকে দিন বাড়ছে। বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন: যে সাতটি দেশে এখন বাংলাদেশি কর্মীরা সবচেয়ে বেশি যায় বায়োফ্লক: নতুন যে পদ্ধতি বাংলাদেশে দ্রুত বাড়াতে পারে মাছের উৎপাদন কীভাবে একজন স্বৈরশাসককে ক্ষমতা থেকে সরানো যায়
চলতি ২০২০ সালে মধ্যপ্রাচ্যের যে দেশটি বিশ্ববাসীর সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে তা নিঃসন্দেহে সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএই। ক্ষুদ্র, কিন্তু অত্যন্ত ধনী উপসাগরীয় এই রাজতন্ত্রটির একের পর এক রাজনৈতিক এবং সামরিক উচ্চাভিলাষ বিস্ময়ের সৃষ্টি করছে।
উত্তর প্রদেশে বেশ বড় সংখ্যায় মুসলমানদের বাস, অনেকেই জড়িত নানারকম ব্যবসা-বাণিজ্যে উত্তর প্রদেশের রামপুরে একটা ল্যান্ডমার্ক রেজা লাইব্রেরি। তার ঠিক পেছনেই যে বাজার, সেখানে পাওয়া যায় না এমন জিনিস নেই বললেই চলে। মাংসের দোকানও আছে অনেকগুলো। কিন্তু এখন সবগুলোই বন্ধ। ওই মাংসের দোকানগুলোরই একটার মালিক মুহাম্মদ কুরেশী। "মুসলমানদের কাজকর্মের ওপরেই যত নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে। ওরা চাইছে মুসলমানদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিতে। কাজকর্ম-ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে মুসলমানদের হাতে যখন পয়সা থাকবে না, তখন চাকর-বাকর বানিয়ে রাখতে সুবিধা হবে," বলছিলেন মি. কুরেশী। রাজ্য সরকার বলছে অবৈধ কসাইখানা বন্ধের অভিযান কোনও বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়কে টার্গেট করে করা হয়নি। তবে ওই সরকারি বয়ানের প্রতি মুসলমান সম্প্রদায়ের বিশেষ ভরসা নেই। মি. কুরেশীর মন্তব্য, "প্রথমে গোস্ত বন্ধ করা হল, তারপর সব যন্ত্রপাতি ভেঙ্গে দিয়েছে, যেগুলো মুসলমানদেরই ছিল।" রামপুরে বিজেপি দলের কার্যালয় রামপুরের সব কসাইখানা এখন বন্ধ। তাই যারা মাংস খান, তাঁরা পড়েছেন ঝামেলায়। রেস্তোরাঁ বা কারও বাড়িতেই আর মাংস খাওয়া হচ্ছে না। একজন রেস্তোরাঁ মালিক বলছিলেন, "রামপুর মুসলমান বহুল শহর। এখানকার হিন্দু-মুসলমান উভয়ই গরুর মাংস পছন্দ করে। কিন্তু এখন সবাইকে বাধ্য হয়ে শাক-সবজি খেতে হচ্ছে।" পাঁঠা, মুরগী বা মাছের দোকানগুলোর ওপরে কোনও রকম বিধিনিষেধ নেই, কিন্তু দোকানদারেরা সেগুলোও ভয়ে বন্ধ করে রেখেছেন। এরকমও খবর পাওয়া যাচ্ছে যে কিছু পুলিশ কর্মী বাড়তি উৎসাহ নিয়ে সব ধরণের মাংসের দোকানই বন্ধ করে দিচ্ছেন। রাজ্য সরকার বার বার বলছে শুধুমাত্র অবৈধ, লাইসেন্স-বিহীন কসাইখানাগুলোই বন্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু রামপুরের কুরেশী সমাজের প্রধান জাহিদ কুরেশী বলছেন অবৈধ কসাইখানা বলে কিছু হয়ই না। তাঁর মতে, কসাইখানার ব্যাপারে বেশীরভাগ মানুষই বিশেষ কিছু জানেন না। ভারতে মুসলমানদের অনেকেই নানাভাবে মাংস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জাহিদ কুরেশীর কথায়, "দুই ধরণের কসাইখানা হয়। পৌরসভা বা পৌর কর্পোরেশন কিছু কসাইখানা চালায় যেগুলো পরম্পরা অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আর আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে যে কসাইখানাগুলো চলে, সেখানে শুধুমাত্র রপ্তানির জন্যই মাংস কাটা হয়।" তিনি আরও বলেন, "উত্তরপ্রদেশে কোনও ব্যক্তি মালিকানায় কোনও কসাইখানাই নেই। সবই চলে পৌরসভা বা কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে।" আধুনিক কসাইখানাগুলোর জন্য লাইসেন্স নিতে হয়। আর এই ব্যবসায় হিন্দু - মুসলমান দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষই যুক্ত। বিগত সমাজবাদী পার্টির সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে নতুন লাইসেন্স দেয়নি আর লাইসেন্সের নবায়নও করায় নি। তাই বর্তমান বিজেপি সরকার এই সঙ্কটের জন্য সমাজবাদী পার্টি সরকারকেই দায়ী করছে। মাংসের ব্যবসার সঙ্গে চিরাচরিতভাবে যুক্ত কুরেশী সমাজের এক যুব নেতা তারিক হুসেইন কুরেশী বলছিলেন, "এই অবস্থার জন্য সমাজবাদী পার্টিই দায়ী। ২০১৪ সালে পৌরসভা পরিচালিত কসাইখানাগুলোর লাইসেন্স আটকে দিয়েছিল সরকার। মুসলমান সম্প্রদায়, বিশেষ করে কুরেশী সমাজকে টার্গেট করেছিল সমাজবাদী পার্টির সরকার।" মুসলমানদের অভিযোগ, হাজার হাজার মানুষ মাংস ব্যবসায় জড়িত ছিলেন, তবে তাঁদের অনেকের কাছে এখন খাওয়ার পয়সাও নেই ওই বছরই সুপ্রিম কোর্ট মাংসের দোকান আর কসাইখানাগুলোর জন্য নির্দেশাবলী জারী করেছিল। আর সেটা কুরেশী সমাজ জানতই না। জাহিদ কুরেশী বলছিলেন, "বিগত সরকার ওই নির্দেশাবলীটা সম্পূর্ণ চেপে গিয়েছিল।" আদালতের নির্দেশগুলো মূলতঃ ছিল কসাইখানাগুলোকে উন্নত করার জন্য। সেইসব নির্দেশ এখনও কার্যকর করা হয়নি। এখন যোগী আদিত্যনাথের সরকার সেই নির্দেশগুলোই পালন করতে শুরু করেছে। রাজ্য সরকার কুরেশী সমাজের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও শুরু করেছে। কুরেশী সমাজের অভিযোগ লাইসেন্স প্রাপ্ত আধুনিক কসাইখানাগুলোও সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। আরও পড়ুন: 'এক দশকে বাংলাদেশে বেশি ইসলামীকরণ হয়েছে' তবে কুরেশী সমাজের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে যে বেআইনিভাবে দোকানের পিছনে লুকিয়ে-চুরিয়ে 'হালাল মাংস'ও বিক্রি করত অনেকে। বিজেপি-র একজন সিনিয়র নেতা শিববাহাদুর সাক্সেনা বলছিলেন, "এখানে তো প্রায় প্রতিটা গলিতেই কসাইখানা গড়ে উঠেছিল। রাস্তার ওপরেই পশু কাটা হত। বকরী ঈদের সময়ে গরুর গলায় মালা পড়িয়ে রাস্তায় ঘুরিয়ে জানিয়ে দেওয়া হত যে এটাকে জবাই করা হবে। তারপর এক সময়ে রাস্তাতেই বলি দেওয়া হত।" মি. সাক্সেনা এটাও মানতে চাইলেন না যে সরকার মুসলমানদের নিঃস্ব করে দিতে চায়। তাঁর কথায়, সরকার যখন আইন করে, সেটা হিন্দু - মুসলমান উভয়ের জন্যই করে। ভারতের মুসলমান সম্প্রদায় কিছু মুসলমান নেতা যেমন বলছেন মাংস নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে, আবার কোনও কোনও নেতা বলছেন মুসলমানদের কিছুদিনের জন্য হলেও মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিত। প্রাক্তন সংসদ সদস্য শফিকুর রহমানের কথায়, "আমি তো মুসলমানদের উদ্দেশে এটাই বলি যে তোমরা গোস্ত কেনা-বেচা, জবাই করা বা খাওয়া বন্ধ রাখ। যতদিন তোমাদের সমস্যার সমাধান না হচ্ছে ততদিন সম্মান নিয়ে অন্য কোনও কাজ কর। এই সমস্যা সরকারকেই সমাধান করতে হবে।" জাহিদ কুরেশী অবশ্য বলছিলেন এ ধরনের উপদেশ দেওয়াটা সোজা। তবে তাঁদের সমাজের যে হাজার হাজার মানুষ মাংস ব্যবসায় জড়িত, তাঁদের কাছে খাওয়ার পয়সাও নেই। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অবশ্য সম্প্রতি কুরেশী সমাজ আর কসাইখানার মালিকদের সঙ্গে দেখা করে আশ্বাস দিয়েছেন যে গোটা বিষয়টা নিয়ে বিচার-বিবেচনা করা হবে।
ভারতের উত্তর প্রদেশে 'অবৈধ কসাইখানার' বিরুদ্ধে যে অভিযান চালানো হচ্ছে, তার ফলে সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়েছেন সেখানকার মুসলমানরা। এদের অনেকেই কসাইখানা চালাতেন। তবে সরকারি অভিযানের ভয়ে মাংস বিক্রির সব ধরণের দোকানই বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে। পরিস্থিতি দেখার জন্য উত্তর প্রদেশে গিয়েছিলেন বিবিসি হিন্দির সংবাদদাতা জুবায়ের আহমেদ।
সালমান রুশদী কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খোমেনি সেদিনই ফতোয়া জারি করেছিলেন 'দি স্যাটানিক ভার্সেস' রচয়িতা ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদীকে হত্যা করার জন্য - ব্রিটেনের মুসলিমদের ওপর তার এক বিরাট ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল। যেমন এলিয়াস কিরমানির কথাই ধরুন। তার বড় হয়ে ওঠা লন্ডনের টুটিং এলাকায়, এক পাকিস্তানি পরিবারে। বাবা বাস ড্রাইভার। তার পরিবারে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু এলিয়াসের এ নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ ছিল না। "আমরা বাবা-মায়ের কথা শুনতাম, মসজিদে যেতে হবে বললে যেতাম। কিন্তু আমাদের একটা গোপন দ্বিতীয় জীবন ছিল। আমরা পার্টি করতাম, গাঁজা খেতাম, মেয়েদের সাথে বেড়াতে যেতাম এবং সম্ভব সবকিছুই করতাম।" পাকিস্তানি মুসলিম পরিচয় থেকে সরে যেতে তিনি গেলেন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে - বাড়ি থেকে অনেক দূরে । "তখন আমি বাদামি চামড়ার বন্ধু চাইতাম না। আমার সব বন্ধুই ছিল শ্বেতাঙ্গ, উদার, সমাজের মূল ধারার - সেটাই ছিল আমার জগৎ।" তার ছাত্রজীবন ছিল খুবই আনন্দের, তার সঙ্গী ছিল মিউজিক, নাচ, ক্লাব ইত্যাদি। কিন্তু ১৯৮৯ সালে এমন একটা ঘটনা ঘটলো, যা সবকিছু বদলে দিল। সালমান রুশদীর উপন্যাস স্যাটানিক ভার্সেস - যাকে মুসলিম বিশ্বে অনেকেই ধর্মদ্রোহী বলে মনে করেন - তার জন্য আয়াতোল্লাহ খোমেনি রুশদীকে হত্যা করার ফতোয়া এবং পুরস্কার ঘোষণা করলেন। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: জামায়াতে ইসলামী কি দলের নাম পরিবর্তন করছে? 'আইএস বধূ' ব্রিটিশ ছাত্রী শামিমা দেশে ফিরতে চান বাংলাদেশে নষ্ট মোবাইল ফেরতে টাকা দেবার উদ্যোগ এলিয়াস কেরমানি ১৯৯০ সালে জুন মাসে রুশদীকে হত্যা করা উচিত এমন চিন্তা এলিয়াস সমর্থন করতেন না, তবে স্যাটানিক ভার্সেস বইটা যে ঠিক আছে তা-ও তিনি মনে করতেন না। কিন্তু এলিয়াস দেখলেন - খোমেনির ফতোয়ার সাথে তার কোন সম্পর্ক না থাকলেও - তাকেই এ জন্য দোষারোপ করা হচ্ছে। "আমার মনে হলো, আমার বন্ধুরা আমাকে বুঝতে পারে, এবং তারা আমাকে মেনেও নিচ্ছে। কিন্তু এখন তাদের প্রশ্নগুলো হয়ে যাচ্ছে এই রকম: 'তোমাদের সমস্যাটা কি?''তোমরা এরকম করছো কেন?''সালমান রুশদীকে তোমরা হত্যার হুমকি দিচ্ছ কেন?' ''তুমি কার পক্ষে? আমাদের পক্ষে, না ওদের পক্ষে?' এলিয়াস মসজিদে যেতে অস্বস্তি বোধ করতেন। সেসময় ব্রিটেনের মসজিদগুলো চালাতেন দক্ষিণ এশিয়ান বয়স্ক পুরুষরা - যাদের প্রথম ভাষা ইংরেজি ছিল না। ফলে এলিয়াস অপেক্ষাকৃত তরুণ ইংরেজিভাষী মুসলিমদের কাছে দিকনির্দেশনা চাইলেন। তারা তাকে তার বাবা-মায়ের ধর্মের সাথে যুক্ত করিয়ে দিলেন ঠিকই - কিন্তু তাকে নিয়ে গেলেন একটা 'র‍্যাডিক্যাল' দিকে। সেখানে মূলত আলোকপাত করা হতো বৈশ্বিক মুসলিম পরিচয়ের দিকে - ঠিক নৈতিকতা বা আধ্যত্মিকতার দিকে নয়। "এটা ছিল একটা কাউন্টার-কালচার, যাকে বলা যায় 'পাল্টা সংস্কৃতি' - এর নিজস্ব পোশাক আছে, আছে নিজস্ব ভাষাও। আমি আমার অমুসলিম বন্ধুদের ত্যাগ করলাম এবং পুরোপুরি এই আন্দোলনে মনোনিবেশ করলাম" - বললেন এলিয়াস। এলিয়াস কেরমানি, ছ মাস পরে, ১৯৯০এর ডিসেম্বর মাসে "স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশ, এবং আমাকে দূরে ঠেলে দেয়া দিয়েই এর শুরু । সে কারণেই আমি সব সময় বলি - আমি রুশদীর সন্তানদের একজন। শ্বেতাঙ্গ উদারপন্থীদের দ্বারাই আমি উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হয়েছি।" এলিয়াস যে সালাফি মতাদর্শের অনুসারী হলেন - তারা দক্ষিণ এশীয় ইসলামের চেয়ে অনেক বেশি 'পিউরিট্যানিকাল' বা গোঁড়াপন্থী - এবং তার রাজনৈতিক ঝোঁকটাও খুবই স্পষ্ট। এলিয়াসের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বসনিয়ায় যুদ্ধ করতেও গিয়েছেন, তবে তিনি নিজে ছিলেন প্রচারক, যুদ্ধ করতে কখনো যাননি। অবশ্য এখন এলিয়াসের চিন্তাভাবনা নমনীয় হয়েছে। "আগে আমাদের চিন্তা ছিল সাদা-কালো। ভালো আর মন্দ, পক্ষে বা বিপক্ষে, হালাল বা হারাম। কিন্তু এখন আমি সাদা আর কালোর মাঝখানের ধূসরটাই পছন্দ করি।" এখন তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম - যিনি মধ্যপন্থার কথা বলেন, হাডার্সফিল্ড আর ব্রাডফোর্ড শহরে মুসলিমদের মধ্যে যৌনতা, সম্পর্ক বা মানসিক স্বাস্থ্যর মতো বিষয় নিয়ে কথা বলেন। হাইড পার্কে স্যাটানিক ভার্সেস বইটির কপি পোড়াচ্ছেন মুসলিম বিক্ষোভকারীরা ইয়াসমিন আলিভাই-ব্রাউনের কথা ১৯৮০র দশকে ইয়াসমিন আলিভাই-ব্রাউন ছিলেন নিউ স্টেটসম্যান পত্রিকার একজন সাংবাদিক। তার কাছে সালমান রুশদী ছিলেন একজন 'হিরো' - শুধু তার লেখার জন্য নয়। এ কারণেও যে রুশদী ব্রিটেনের বর্ণবাদ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতেন। সুতরাং ইয়াসমিন স্যাটানিক ভার্সেস বইটি পড়লেন। "আমি অবমাননা বোধ করিনি, আমি সে ধরণের মুসলিম নই। কিন্তু আমি ভাবলাম, সে কেন এটা করলো? আমার মনে হলো যে এটাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটা উস্কানি দেয়া হচ্ছে" - বললেন তিনি। যখন বইটি পোড়ানো শুরু হলো, তখন ইয়াসমিনের শ্বেতাঙ্গ বন্ধুরা অনেকেই ক্ষুব্ধ হলেন। "খুব দ্রুতই এটা 'ওরা এবং আমরা' এমন একটা ব্যাপারে পরিণত হলো। কোন ডিনার পার্টিতে আমি রুশদীর ব্যাপারে ভিন্নমত প্রকাশ করলে লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে যেতো। কঠিন একটা অবস্থার সৃষ্টি হলো।" ইয়াসমিন বলছিলেন, তার জন্য এটা একটা 'ঘুম ভেঙে জেগে ওঠার মত' ব্যাপার হলো। "আমি একজন মুসলিম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলাম। আমি বললাম, আমি মুসলিম, আমার মা মুসলিম, পরিবার মুসলিম। শ্বেতাঙ্গ উদারপন্থীরা - যাদের সাথে আমি কাজ করতাম - তারা অবাক হলো। তারা কখনো আমাকে এভাবে দেখেনি। তাদের জন্য এটা অস্বস্তিকর হয়ে উঠলো।" ইয়াসমিন আলিভাই-ব্রাউন এড হুসেইনের গল্প এলিয়াসের চাইতে কয়েক বছরের ছোট এড হুসেইন, তখন তিনি স্কুলে পড়েন। স্যাটানিক ভার্সেস-এর বিরুদ্ধে লন্ডনের হাইড পার্কে যে বিক্ষোভ হয়েছিল - সেখানে তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা। ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে ২০ হাজার লোক এতে যোগ দিয়েছিল। এতে রুশদীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়, প্ল্যাকার্ডগুলোতে যে বার্তা লেখা ছিল তাতে সহিংসতার হুমকি ছিল সাধারণ ব্যাপার। তবে লোকে যখন স্যাটানিক ভার্সেসে বইটার কপি পোড়াতে শুরু করলো - তখন এড-এর বাবা বললেন, এখন এখান থেকে চলে যেতে হবে। বাড়ি ফিরে তিনি বললেন, তারা 'এ ধরণের মুসলিম' নন। কিন্তু এর পর থেকেই এড হুসেইন ধর্মের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠলেন। তিনি ইস্ট লন্ডন মসজিদে যেতে শুরু করলেন। সেখানে ইংরেজি-ভাষী ইমামরা রাজনৈতিক কথা বলতে পিছপা হতেন না, আর এ কারণেই ইস্ট লন্ডন মসজিদের নাম হয়েছিল। রাজনৈতিক ইসলামের প্রতি এডের ঝোঁক শেষে এমন জায়গায় গেল যে তার বাবা বললেন, এ বাড়িতে থাকতে হলে তাকে ইসলামিস্ট রাজনীতি ছাড়তে হবে, নয়তো আলাদা থাকতে হবে। এড তখন বিশ্বের মুসলিমদের জন্য কাজ করার ঐশী ব্রত নিয়ে এতই পাগল যে তিনি বাড়ি ছাড়ার বিকল্পটিই বেছে নিলেন। তবে বেশিদিন বাইরে থাকতে হলো না। তার বাবা তাকে আবার ঘরে ফিরিয়ে আনলেন। তবে এড উগ্রপন্থা ছাড়লেন না। এড বললেন, "আমি হিজবুত তাহরির-এর মতো আরো উগ্রপন্থী সংগঠনে গেলাম - যারা বৈশ্বিক খিলাফত প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস করে।" তিনি বলছেন, তার ধর্মীয় সত্তার কেন্দ্রে ছিল আধ্যত্মিকতা নয়, বরং বিশ্বজুড়ে অবিচার আর নিপীড়নের ধারণা। এড হুসেইন "যেসব পার্কে আমরা সালমান রুশদীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলাম - তা এখন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতির প্রতিবাদে ব্যবহৃত হতে লাগলো। একজন লেখকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকে আমরা সরে গেলাম ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতার দিকে। আমরা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক হয়ে গেলাম।" কলেজে পড়ার সময় খ্রীস্টান বলে মনে করা হয় এমন একটি ছেলের ওপর একটি আক্রমণের ঘটনা নিজের চোখে দেখলেন এড হুসেইন। তিনি বলেন, এটা ছিল 'মুসলিম শ্রেষ্ঠত্ববাদী মানসিকতা'-প্রসূত। এড হুসেইন বলছিলেন, "যে লোকটি তাকে হত্যা করেছিল সে ক্যাম্পাসে এসে বলেছিল, তোমাদের কারো যদি 'কুফফার'(অমুসলিম)-দের সাথে কোন সমস্যা হয় তাহলে আমাকে বলবে। কয়েক সপ্তাহ পর আমি দেখলাম এই বাচ্চা ছেলেটিকে ছুরি মারা হয়েছে, সে রাস্তায় পড়ে আছে, ধড়ফড় করছে।" এড বললেন, তার জন্য এ ঘটনা ছিল একটা 'জাগরণী-বার্তা।' তিনি বুঝলেন, তিনি তার ধর্মের যা কিছু ভালোবাসেন তা দেখার দৃষ্টি তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি হিজবুত তাহরির থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিলেন। এর পর তিনি টোনি ব্লেয়ারের একজন উপদেষ্টা হন, এবং উগ্রপন্থা-বিরোধী সংস্থা 'কুইলিয়াম ফাউন্ডেশনের' অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন তিনি।
উনিশ উননব্বই সালের ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে পৃথিবীটা ছিল অনেক অন্যরকম।
বিজেপি সমর্থকদের উল্লাস আজ ২৩শে মে দুই প্রশ্নের উত্তরই আমাদের সামনে — আগামী পাঁচ বছর মি. মোদীর বিজেপি সরকার ভারতের ভাগ্য বিধাতা, আর মমতার দুর্গ দখল করতে না পারলেও বড় ফাটল ধরিয়েছে বিজেপির গৈরিক বাহিনী। এবারের নির্বাচনে মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গে প্রচুর জনসভা করেছেন — ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রী এই রাজ্যে, এমনকি বিধান সভা নির্বাচনের আগেও, এতো জনসভা করেননি। আর প্রত্যেকটি জনসভায় মোদী মমতাকে 'স্পিডব্রেকার দিদি' বলে কটাক্ষ করেছেন। বলেছেন, 'আপনার জামানা শেষ হয়ে আসছে।' কিন্তু সারা দেশে যখন মোদী সুনামি, পশ্চিমবঙ্গে মমতা যে ভাবেই হোক না কেন, নিজের জমি অনেকটাই ধরে রাখতে পেরেছেন। অর্ধেকের বেশি আসন তাঁর দলের দখলে। তাই সেই অর্থে উনি সত্যি 'স্পিডব্রেকার'। তবে মোদীর বিরুদ্ধে মমতা যত বড় গলা করে বলেছিলেন '৪২ এ ৪২', অর্থাৎ রাজ্যের সবকটি লোকসভা আসনে তৃণমূলের জয় হবে, তা আজকের ফলের পরে খুবই ঠুনকো লাগছে। কলকাতায় বিজেপি সমর্থক মনে হচ্ছে, খানিকটা হলেও আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলো তৃণমূল কংগ্রেস। বলা বাহুল্য, বিজেপি'র অভাবনীয় সাফল্যের গুরুত্ব পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির জন্য অপরিসীম - মূলত তিন কারণে। * বাংলা ভাগ ধর্মের ভিত্তিতে হলেও ১৯৪৭-এর পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক দলগুলো কোনদিন মাটি পায়নি। হিন্দুসভার প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী একজন বাঙালি, কিন্তু তার দল অথবা পরে ভারতীয় জনসংঘ অথবা বিজেপি, কেউই পশ্চিমবঙ্গে কিছু করতে পারেনি। প্রথমে কংগ্রেস (১৯৪৭-৭৭), তারপর সিপিএমএ'র নেতৃত্বে বামফ্রন্ট (১৯৭৭-২০১১), এরপর ২০১১ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সবাই বলিষ্ঠভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি করেছে, যার ফলে বিজেপি নেতাদের অনেকেই আজ মমতা ব্যানার্জীকে তির্যক ভাষায় 'মমতাজ বেগম' বলে থাকেন। আর তাঁর বিরুদ্ধে বারবার ওঠে মুসলিম তোষণের অভিযোগ। বিজেপি এতগুলো লোকসভা আসন জিতে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতার জন্য শুধুমাত্র জোরালো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে তাই নয়, তার চেয়েও বেশি হলো এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে আবার ধর্মীয় রাজনীতির গৈরিক পতাকার ছড়াছড়ি দেখা যাবে। এখানকার রাজনীতির ভাষায় ধর্মীয় প্রভাব দেখা যাবে - ধর্ম আর ঠাকুরঘরে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। * ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষও ভারতের রাজনৈতিক নকশায় একটা ব্যতিক্রমী রাজনীতির জন্ম দিয়েছিল। বামপন্থী আদর্শের পেছনে বাংলার একটা আলাদা রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে উঠেছিল, পশ্চিমবঙ্গ পরিচিত হয়ে উঠেছিল ভারতের 'লাল দুর্গ' হিসেবে। অনেকে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্টকে 'বেঙ্গলি কমিউনিজম' বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী আরও পড়তে পারেন: আবার মোদী সরকার: কী প্রত্যাশা হবে বাংলাদেশের? ভারতের নির্বাচন: নরেন্দ্র মোদীর বিজয় কী বার্তা দিচ্ছে তৃণমূল সেই দুর্গ গুড়িয়ে দিলেও বাংলা একটা আলাদা রাজনৈতিক পরিচয় বজায় রাখে তার আঞ্চলিকতার মধ্য দিয়ে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সেই আলাদা জায়গাটা খেয়ে দিয়েছে বিজেপি। ১৯৭৭ এর পর এই প্রথম বাংলায় কোনো জাতীয় দল এতটা জমি দখল করতে পেরেছে — আর তৃণমূল নেতা ও বর্ষীয়ান সম্পাদক চন্দন মিত্র তো আশঙ্কায় বলেই ফেললেন, "বিজেপি ইজ এ গভর্নমেন্ট ইন ওয়েটিং", অর্থাৎ বিজেপি তো মনে হচ্ছে আগামী দিনে বাংলায় সরকার গড়তে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুখরঞ্জন দাশগুপ্তের মতে, ''এটা পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটা বড় বিপর্যয়''। উনি বললেন, ''পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির দখলে যাওয়া মানে বাংলার ভাগ অবশেষে সবদিক থেকে পূর্ণ হওয়া।'' বিজেপি'র পশ্চিমবঙ্গ দখল মানে এই রাজ্য এখন ভারতের মূল স্রোতে — সব অর্থে না হলেও অনেক অর্থে। তার ভিন্ন আর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকবে না — তবে তাতে অর্থনীতির কত লাভ হবে, সমাজ জীবনে কী পরিবর্তন হবে, এখুনি বলা মুশকিল। * এবারের নির্বাচনে যেভাবে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ ঘটেছে, বুথে বুথে বোমা-বন্দুক চলেছে, যে ভাষায় মোদী আর মমতা একে অপরকে আক্রমণ করেছেন, বলাবাহুল্য তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংঘাত আরো বাড়বে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ্ বারবার বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসলে আসামের কায়দায় পশ্চিমবঙ্গেও নাগরিক পঞ্জি (ন্যাশনাল রেজিস্টার ফর সিটিজেনস বা এনআরসি) করা হবে — যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশ থেকে আসা 'অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা' এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া। আসামে এ নিয়ে নাগরিক পঞ্জির খসড়ায় (ড্রাফট এনআরসি) প্রায় ৪০ লাখ বাঙালি হিন্দু-মুসলমানের নাম বাদ পড়েছে, প্রায় ৪০ জন আত্মহত্যা করেছেন। মমতা প্রথম থেকে বলেছেন, তার রাজ্যে এনআরসি করতে দেয়া হবে না। এখন বিজেপি আর কেন্দ্রীয় সরকার তা করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার দিকে এগোবে—এমনটা অনেকেই মনে করছেন। ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি'র আসন ছিল মাত্র দুটি, এবারে দলটি রাজ্যে সাফল্য পেয়েছে তাতে রাজনৈতিক ছকও থাকবে — নাগরিক পঞ্জি থেকে 'অনুপ্রবেশকারী' বলে সংখ্যালঘুদের অনেককেই বাদ দিতে পারলে, আর তারপর কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণে নির্বাচন করলে, বিজেপির জয় নিশ্চিত বলে বিজেপি নেতাদের অনেকেরই ধারণা। অভিনেত্রী ও বিজেপি নেত্রী রূপা গাঙ্গুলী বলেন, এবার তৃণমূল মারামারি করতে না পারলে বিজেপি কম করে ৩০টি আসন পেত। বিজেপির রাহুল সিনহা বললেন, ছয় মাসের মধ্যে আমরা তৃণমূল সরকার ফেলতে পারব, ওদের অনেক নেতাকর্মী আমাদের দিকে চলে আসবে — যেমনটা এসেছেন মমতার একদা সেনাপতি বলে পরিচিত মুকুল রায়। নির্বাচন ও বাংলাদেশ এবার ভারতের নির্বাচনে বাংলাদেশ বার বার বিজেপির প্রচারে এসেছে। নেতিবাচক ভাবেই। বাংলাদেশ ভারতের বন্ধুরাষ্ট্র বলে থাকলেও এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী 'বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে হবে' এমন জিগির তুলেছেন। মমতা তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের জন্য সমস্যা তৈরি করলেও জোরালোভাবে এই অনুপ্রবেশের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, বলেছেন এটা বিজেপির ধর্মান্ধ রাজনীতির একটা সস্তা রণকৌশল। এনআরসি বা নাগরিক পঞ্জি উনি যেকোন মূল্যে রুখবেন বলে মোদীকে হুঁশিয়ার করেছেন, 'বিবাদের রাজনীতি ভারতের ক্ষতি করছে' বলেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। বিজেপির এই বাংলাদেশ বিরোধীতা সাধারণভাবে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে সমস্যা তৈরি করেছে বলে মনে করেন সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী, ফাইল ফটো তিনি বলেন, ''বাংলাদেশের আত্মসম্মানে আঘাত করেছে বিজেপি। তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদ বোঝে না, সবটাই হিন্দু-মুসলিম হিসেবে দেখে।" "এতে বাংলাদেশে ভারত বিরোধী মনোভাব বাড়বে, আর এর জন্য দায়ী হবে মোদি-অমিত শাহ আর তাদের বাঙালি চামচারা।'' ভারতের গোয়েন্দা ব্যুরোর প্রাক্তন কর্মকতা সুবীর দত্ত মনে করেন, ভারত এবং পশ্চিমবাংলায় বিজেপি বাড়লে বাংলাদেশে ইসলামপন্থী রাজনীতির ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। তাতে করে আওয়ামী লীগ - যারা ভারতের চরম বন্ধু - বেকায়দায় পড়বে। তাতে আখেরে ভারতের খুব ক্ষতি হবে। ''আর এনআরসি'র মত বিষয় নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হলে তাতে সবচেয়ে বেশি লাভ হবে চীনের,'' বললেন সুবীর দত্ত, যিনি বাংলাদেশের ঘটনাবলীর ওপর বহুকাল নজর রেখেছেন। বিজেপি ভালো করার কারণ কী এবার মূলত বামপন্থীদের ভোটের একটা বড় অংশ নিজেদের দিকে টানতে পারার জন্য বিজেপি এত ভালো ফল করেছে বলে মমতা ব্যানার্জী মনে করেন। 'কমরেডরা এবার দলে দলে পদ্মফুলে ভোট দিয়েছে,' অভিযোগ তৃণমূল নেতা পার্থ চ্যাটার্জীর। বামফ্রন্ট একটিও আসন না পাবার দিকে উনার ইঙ্গিত। বিজেপি নেতা ও কৌঁসুলি সুনীল দেওধর অবশ্য বললেন, বাম শুধু নয়, তৃণমূলেরও একটি অংশ তাদের দিকে ঝুঁকেছে মমতার 'অপশাসনের' ফলে। ''আর আমরা মমতার কাছে অছ্যুৎ হলাম কবে, উনি তো এক সময় আমাদের সাথে ছিলেন,' বললেন দেওধর। তৃণমূল ১৯৯৮ থেকে ২০০২ পর্যন্ত বিজেপির জোটসঙ্গী ছিল, অটল বিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী ছিলেন মমতা। ''আরে মমতার পিঠে চড়েই তো বিজেপি আমাদের রাজ্যে ঢুকলো, এখন আমাদের দোষ দিয়ে কী হবে,' বললেন সিপিএম প্রার্থী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য, যিনি বাম জামানায় কলকাতার মেয়র ছিলেন।
এবার ভারতের নির্বাচনে প্রধান প্রশ্ন ছিল নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি আবার ক্ষমতায় ফিরবে কিনা! আর তারপরেই যে প্রশ্ন নিয়ে ভারতের মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে, তাহলো বিজেপি কি পশ্চিম বাংলায় মমতা ব্যানার্জীর শক্ত দুর্গে ফাটল ধরাতে পারবে?
বাম থেকে- খালেদ মোশারফ, কর্নেল তাহের এবং জিয়াউর রহমান। অভ্যুত্থান- পাল্টা অভ্যুত্থানের সূচনা ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের পর এর সাথে যুক্ত মেজরদের সাথে নিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমেদ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাগ্রহণ করেন। তবে খন্দকার মোশতাক সামনে থাকলেও হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত সেনা কর্মকর্তারা ছিলেন প্রবল ক্ষমতাশালী। সেসময় বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করা হলেও শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সাথে জড়িত কয়েকজন মেজর বঙ্গভবন থেকে সেনাবাহিনীর অনেককিছুই নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। এর তিন মাস পরেই নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই যে অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থানটি হতে যাচ্ছিল তার প্রেক্ষাপটটি তৈরি হয়েছিল ক্ষমতার এই রক্তাক্ত পালাবদলের মধ্য দিয়ে। অভ্যুত্থানের কারণ নিয়ে বেশ কিছু ব্যাখ্যা থাকলে সেনাবাহিনীর তৎকালীন অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, ১৫ই অগাস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকেই সেনাবাহিনীতে যে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার একটি ফলশ্রুতি হচ্ছে নভেম্বরের অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান। ৭৫-এর পর যেভাবে বেড়েছে ভিভিআইপি নিরাপত্তা শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডে যেমনটা ছিল ভারতের প্রতিক্রিয়া যেভাবে পিতার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জেনেছিলেন হাসিনা কারাগারে নিহত চার নেতা। ঘড়ির কাঁটার ক্রমানুসারে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামান জুনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন সেনাবাহিনীর মধ্যে অনেকেই গ্রহণ করতে পারেননি'। এর বাইরে আরেকটি দ্বন্দ্বও ছিল, যার সূচনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই। সেনাবাহিনীর ভেতরে অন্তর্দ্বন্দ্ব মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিনজন অফিসার ব্যাপক পরিচিতি পান । অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যুদ্ধের পর থেকে সেনাবাহিনীর মধ্যে এই তিনজন অফিসারের তিনটি প্রভাব বলয় তৈরি হয়েছিল। ব্রিগেডিয়ার হোসেন তখন ছিলেন ঢাকায় ৪৬ ব্রিগেডের মেজর পদমর্যাদার স্টাফ অফিসার। যে তিনজন সেনা কর্মকর্তার কথা তিনি বলছেন তারা ছিলেন জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশারফ এবং কে এম শফিউল্লাহ। "এই দ্বন্দ্বটা আগেও ছিল, কিন্তু সেটা প্রকট হলো ১৫ই অগাস্টের পরে। জেনারেল শফিউল্লাহ মোটামুটি বের হয়ে গেলেন, জেনারেল জিয়া ইন হলেন। আবার জেনারেল জিয়া ইন হওয়াতে তার এবং ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফের মধ্য দ্বন্দ্বটা আরো বাড়লো"। ১৯৭৫ সালে মেজর পদে ঢাকায় ছিলেন ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। ১৫ ই অগাস্ট হত্যাকাণ্ডের দিন দশেক পর সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহকে। বিবিসির সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলছিলেন, এরপর থেকে তিনি 'সিনে ছিলেন না' এবং অনেকটা গৃহবন্দী হিসেবেই সেনাপ্রধানের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহকে খালেদ মোশারফ এবং জিয়াউর রহমানের মধ্যকার দ্বন্দ্বের একটি ফলাফল হিসেবে দেখছেন কে এম শফিউল্লাহ- "ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে করে খালেদ মোশারফ জিয়াউর রহমানকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল। তাকে সরিয়ে দিয়ে হাউজ এরেস্টও করে ফেলেছিল এবং নিজেই চিফ অফ স্টাফের র‍্যাংক পরলো।" "ঐটা শেষ পর্যন্ত সে আর থাকতে পারে নাই এবং সেই ঘটনাটাই লিংগার করে ৭ তারিখে জিয়াউর রহমান তাহেরকে সঙ্গে নিয়ে খালেদ মোশারফের ঐ গ্রুপটাকে সরিয়ে দেয়।" তিনি বলছিলেন, সিনে না থাকলেও সেনাবাহিনীর মধ্যে যে একটি উত্তেজনা রয়েছে সেটি তিনি টের পাচ্ছিলেন এবং খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানটির পটভূমিও ছিল সেখান থেকেই। অভ্যুত্থান এবং ৩রা নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ড নভেম্বরের ৩ তারিখের প্রথম কয়েকটি প্রহরে বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেয়ার মতো দুটি ঘটনা ঘটে- একটি অভ্যুত্থান এবং ঢাকা কারাগারে একটি হত্যাকাণ্ড। মধ্যরাত পার হবার পরই খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থানে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে বন্দী করা হয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বঙ্গভবন ঘেরাও করার জন্য যায় একটি ইনফ্রেন্টি ইউনিট, রেডিও স্টেশন দখল করে নেয় আরেকটি সেনাদল। ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলছিলেন, বঙ্গভবন ঘিরে তখন এত বেশি সেনা সমাবেশ হয়েছিল যে ভেতরে থাকা মেজর ডালিম এবং মেজর নুরসহ সেনা কর্মকর্তারা আর পাল্টা কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। আর এরই মধ্যে আকাশে যুদ্ধবিমানও উড়তে দেখা যায়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ (বাঁ থেকে)। "বঙ্গভবনের ওপর দিয়ে যখন দুটা কি তিনটা ফাইটার জেট উড়ে গেলো তখন তারা বুঝলো যে তাদের হাতে আর সময় নেই, তাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে হবে"। সেদিন সকাল থেকেই একটি সমঝোতার চেষ্টা চলছিল। মেজর ডালিম এবং মেজর নুর বেশ কয়েকবার ক্যান্টনমেন্টে এসে খালেদ মোশারফের সাথে দেখা করেন। দিনভর নানা দেন-দরবারের পর সন্ধ্যায় ঠিক হলো তাদেরকে দেশ থেকে চলে যেতে দেয়া হবে। সেদিনই রাতে একটি এয়ারক্রাফ্টে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সাথে জড়িত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাদের একটি বিমানে থাইল্যান্ডে চলে যেতে দেয়া হয়। এদিকে সেই রাতেই কেন্দ্রীয় কারাগারে চলে একটি হত্যাকাণ্ড। কয়েকজন সেনাসদস্যের হাতে খুন হন ১৯৭১ সালের প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, তৎকালীন সরকারের অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন জেলার আমিনুর রহমান বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, রাত একটা থেকে দেড়টার দিকে একটি পিকআপে করে কিছু সেনাসদস্য জেলগেটে উপস্থিত হন। এসময় আইজি প্রিজনের ফোন পেয়ে তিনিও সেখানে যান। এর কিছুক্ষণ পর তার কার্যালয়ের টেলিফোনটি বেজে ওঠে। "টেলিফোন ধরলেই বললো যে প্রেসিডেন্ট কথা বলবে আইজি সাহেবের সাথে। কথা শেষ করার পরই আইজি সাহেব বললেন যে প্রেসিডেন্ট ফোন করেছিলো। বললো যে আর্মি অফিসাররা যা চায় সেটা তোমরা করো"। এরপর কারা মহাপরিদর্শক আমিনুর রহমানের হাতে চারজনের নাম লেখা একটি চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বলেন এদেরকে এক জায়গায় করো। "সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন সাহেব ছিলেন এক রুমে আর অন্য দুজন ছিলেন অন্য রুমে। তো অন্য রুম খুলে আনলাম"। ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান (বাঁ থেকে)। "আমি ভাবলাম কথাবার্তা বলবে তো পরিচয় করিয়ে দিই। মনসুর আলী সাহেব ছিলেন সর্বদক্ষিণে। তাকে পরিচয় করানোর জন্য মাত্র ম.. বলা শুরু করার সাথে সাথেই গুলি করে দিলো । গুলি করেই তারা খোলা গেট দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো"। সাখাওয়াত হোসেন বলছিলেন ঐ জেলহত্যার ঘটনাটি তাৎক্ষনিকভাবে জানাজানি হয়নি। ঘটনাটি সেনা অফিসারদের কাছে পৌঁছে ৪ঠা নভেম্বর সকালের দিকে। সক্রিয় হয়ে ওঠে জাসদের গণবাহিনী ৩রা নভেম্বরের পরের কয়েকটি দিন কার্যকর দেখা যায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদের গণবাহিনীকে। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন এই গণবাহিনী পরবর্তী অভ্যুত্থানে একটি মূল ভূমিকা পালন করে। কর্নেল তাহেরের ভাই এবং গণবাহিনীর তৎকালীন ঢাকা মহানগর প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমানের থেকেই খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের খবরটি জানতে পারেন কর্নেল তাহের। তিনি বলেন, ৩রা নভেম্বর ভোররাতের দিকে জিয়াউর রহমান ফোন করেন কর্নেল তাহেরকে। "জিয়াউর রহমান বলেন, তাহের ওরা আমাকে বন্দী করেছে। আমার জীবন বিপন্ন"। অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ছিলেন গণবাহিনীর ঢাকা মহানগর প্রধান। যদিও জিয়াউর রহমানের মূল টেলিফোন লাইনটি কেটে দেয়া হয়েছিল, তবে একটি প্যারালাল লাইন সচল থাকায় তিনি টেলিফোন কলটি করতে পেরেছিলেন বলে জানান অধ্যাপক হোসেন। কর্নেল তাহের সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন ১৯৭২ সালে। এরপর থেকে তিনি সরাসরি জাসদের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।এরই মধ্যে গঠিত হয় সেনাসদস্যদের নিয়ে সৈনিক সংস্থা এবং গণবাহিনী, যদিও বিষয়গুলো তখনো প্রকাশ্য ছিল না। অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলছেন, নভেম্বরের ৩ তারিখেই কর্নেল তাহের নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন এবং এরপর থেকেই সৈনিক সংস্থার সদস্যরাসহ সেনাসদস্যরা তার সাথে দেখা করতে শুরু করেন। খালেদ মোশারফ ক্ষমতা হাতে নিলেও দ্রুতগতিতে কোন সরকার গঠন করতে পারেননি। এর মধ্যেই অনেকটা অগোচরে ঘটে যায় জেল হত্যাকাণ্ড। এসব মিলিয়ে অনেকটা 'সরকারহীন' অবস্থার মধ্যে ছিল কয়েকটি দিন। "এর মধ্যে জাসদ, গণবাহিনী এবং তাহের সৈনিকদের সাথে ক্রমাগত আলোচনা চালিয়ে যান" বলেন অধ্যাপক হোসেন। নভেম্বরের ৫ এবং ৬ তারিখে গণবাহিনী আরো সক্রিয় এবং সংগঠিত হয়ে উঠতে শুরু করে। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা চলতে থাকে। সাখাওয়াত হোসেন বলছেন, গণবাহিনী যে একটি কিছু করতে যাচ্ছে সেটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে ৬ তারিখ বিকেলে, যখন ক্যান্টনম্যান্টের ভেতরে গণবাহিনীর নামে একটি লিফলেট ছড়ানো শুরু হয়। ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলছিলেন, লিফলেটের একটি কপি তিনিও দেখেছিলেন। লিফলেটে খালেদ মোশারফ, শাফায়াত জামিল এবং কর্নেল হুদাকে 'ভারতীয় চর' বলে প্রচার করা হয়। এরই মধ্যে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে প্রেসিডেন্ট হিসেব শপথ পরানো হয়। কিন্তু প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীতে ঠিক কী হচ্ছে সেনিয়ে বেশ কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গিয়েছিলো। "একটা ক্যু-তে যে হোমওয়ার্ক হয় সেটা ছিলো না। যে যার মতো করে চলছিল। এই বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে যখন ৬ তারিখ রাতে এই লিফলেট জওয়ানদের মধ্যে ছড়ানো হলো তখনি সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলো যে গণবাহিনী নামে একটি ফোর্স ক্যান্টনমেন্টের ভেতর কাজ করছে"। এদিকে গণবাহিনীর বিদ্রোহের মূল পরিকল্পনাটি হয় ৬ তারিখ সন্ধ্যায়। "বিশাল একটি হলরুমের মধ্যে সেনাবাহিনীর প্রায় ৬০-৭০ জন সদস্য ছিলেন। সেখানে গণবাহিনীর নেতৃত্বস্থানীয়দের মধ্যে কর্নেল তাহের, তার পরের অবস্থানেই ছিল হাসানুল হক ইনু এবং আমি নিজেও ছিলাম। সেখানেই প্রত্যেকের কাজ ভাগ করে দেয়া হয়"- বলেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। তবে তিনি বলেন, দলীয়ভাবে জাসদের সিদ্ধান্ত ছিল প্রস্তুতি নিয়ে ৯ই নভেম্বর অভ্যুত্থান হবে। কিন্তু ক্যান্টনমেন্টের পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় সেই রাতেই বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৭ই নভেম্বরের পাল্টা অভ্যুত্থান ৭ই নভেম্বর দিবাগত রাতেই শুরু হয়ে যায় পাল্টা অভ্যুত্থান। যার পুরোভাগে ছিল সেনাবাহিনীর জওয়ানরা। কে এম শফিউল্লাহ বলছিলেন, সৈনিকদের মধ্যে স্লোগান উঠছিল 'সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই, জেসিও ছাড়া র‍্যাংক নাই'। "সিপাহীদের মধ্যে একটা হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল। তারা ভাবছিল অফিসাররা তাদের ব্যবহার করে উচ্চপদে উঠছে কিন্তু তাদের কথা কেউ চিন্তা করে না"। সেই রাতেই মুক্ত করা হয় জিয়াউর রহমানকে। ৭ তারিখ রাতে ক্যান্টনমেন্টে গোলাগুলির শব্দ শুরু হয়। কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে বিদ্রোহীরা। ৭ই নভেম্বরের অভ্যুথ্থানের পর দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত একটি ছবি "জিয়াউর রহমানকে গণবাহিনী বের করতে পারেনি, তাকে রাতেরবেলা বের করলো ফোর বেঙ্গল আর টু ফিল্ড রেজিমেন্ট"। সাখাওয়াত হোসেন বলছিলেন, পরদিন সকালেই তিনি গণবাহিনীর সদস্য এবং কিছু সেনাসদস্যসহ সেনানিবাসে কর্নেল তাহেরকে দেখতে পান। এরপর জিয়াউর রহমানের সাথে কথা বলার সময় একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে কিছু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়। "তাহের চাচ্ছিলো জিয়াউর রহমান রেডিওতে গিয়ে গণবাহিনীর ১৩ দফা ঘোষণা করবেন এবং বলবেন যে তিনি এসব দাবী মেনে নিয়েছেন। এরপর সিপাহী-জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে সেই দাবী মেনে নেয়ার কথা জানাবেন"। "কিন্তু তিনি যাননি। উনি তার আগেই তার ভাষণ রেকর্ড করে রেডিওতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এখানেই তাহের এবং জিয়ার বিচ্ছেদ"। ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলছেন, ৭ই নভেম্বরের অভ্যুত্থানের সময় জওয়ানদের সাথে অনেককে অস্ত্রসহ বেসামরিক পোষাকেও অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল। তবে ঐ অভ্যুত্থানে গণবাহিনী তাদের বেসামরিক সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি বলছেন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলছেন, জাসদ যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল সেটি ব্যর্থ হবার এটিও একটি কারণ। "কথা ছিল সৈনিকরা জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এলিফেন্ট রোডে নিয়ে আসবে। সেখানেই একটি বাসায় কর্নেল তাহেরসহ জাসদের নেতারা অবস্থান করছিলেন। কিন্তু তারা সেটা করতে পারেনি"। অধ্যাপক হোসেন বলছেন, গণবাহিনীর সাথে যুক্ত সৈনিকরাই জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিল। "জিয়াউর রহমান তাদেরকে বলেছিলেন যে কর্নেল তাহের তার বন্ধু এবং তাকেই যেন তারা এখানে নিয়ে আসে। এভাবে তারা কিছুটা প্রতারিতও হয়েছিল। তাদের ওপর যে সুনির্দিষ্ট যে নির্দেশ ছিল সেটা তারা করতে পারেনি"। এদিকে ৭ই নভেম্বর সকালেই কর্নেল কে এন হুদার সাথে ঢাকায় রংপুর থেকে আসা ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে হত্যা করা হয় খালেদ মোশাররফ, কর্নেল কে এন হুদা এবং ল্যাফটেনেন্ট কর্নেল এ টি এম হায়দারকে। খালেদ মোশারফকে কার নির্দেশে এবং কেন হত্যা করা হয়েছিল তার কোন সুনির্দিষ্ট তদন্ত হয়নি এবং সেই হত্যার কোন বিচারও এখনো পর্যন্ত হয়নি। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন জিয়াউর রহমান। ক্ষমতার কেন্দ্রে জিয়াউর রহমান আনোয়ার হোসেন বলছেন, জিয়াউর রহমানের রেডিও ভাষণের পর অভ্যুত্থানে গণবাহিনীর ভূমিকা চাপা পড়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ধারণা জন্মে যে, এটি পুরোপুরিই জিয়াউর রহমানের অভ্যুত্থান। ৭ই নভেম্বরের পর ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন জিয়াউর রহমান। এর কিছুদিন পর ২৪শে নভেম্বর কর্নেল তাহেরকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে সামরিক আদালতে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন: শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড: রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কী ছিল? বন্দীদশা থেকে যেভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রে এলেন জিয়া জিয়া হত্যা: 'সেনা অফিসাররা ন্যায় বিচার পাননি' শেখ মুজিব হত্যার পর জেনারেল জিয়া যে মন্তব্য করেছিলেন দীর্ঘদিন পর ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে কর্নেল তাহেরের সেই বিচারকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের মে মাসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে তাকে হত্যা করা হয়।
১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ- স্বাধীনতার মাত্র চার বছর পর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর দেশটিতে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরি হয় তারই একটি পরিণতি ছিল এই সাতটি দিনের রক্তাক্ত ঘটনাপ্রবাহ।
এ অধিকারকে আরো সীমিত করার এক খসড়া বিল সম্প্রতি ফাঁস হয়ে গেছে। এর পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন দেশটির নারীরা। তারা বলছেন, মিশরের নারীরা সন্তানের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা বা স্কুল পরিবর্তনের মত সিদ্ধান্ত নিতে গেলেও স্বামীর অনুমোদন লাগে - যা তাদের মতে অযৌক্তিক। বিবাহ বিচ্ছেদের পর স্বামী যদি সন্তানকে নিয়ে গেলেও তার মায়ের কিছু করার থাকে না। এই নারীরা বলছেন, এ অঞ্চলের অন্য দেশের চেয়ে মিশর অনেক পিছিয়ে আছে, এটা দুঃখজনক।
মিশরের আইনে একজন নারীর স্বামীকে তালাক দেবার অধিকার, সন্তান নিজের কাছে রাখার, বা সম্পত্তির অধিকার সীমিত।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এর পর মঙ্গলবার সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককোনেল নিরবতা ভেঙে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হবার জন্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যিনি এতদিন চুপ করে ছিলেন, সেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন । তবে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের পর এখনো চুপ করে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এখনো পরাজয় স্বীকার করেননি, বরং নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু এই অভিযোগে করা তার মামলাগুলো সব একের পর এক বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের আদালতে খারিজ হয়ে গেছে। তবে ট্রাম্প শিবির বলছে আইনী লড়াই চলতে থাকবে, এবং তার সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাবেন - যদিও সুপ্রিম কোর্টে এরকম কোন আপিল শোনা হবে কিনা এবং তা নির্বাচনী ফল উল্টে দিতে পারবে কিনা - তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে জো বাইডেনের পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়া নিশ্চিত হয়ে গেছে তাহলে কি মি. ট্রাম্পের রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়াই ভবিতব্য? নাকি তার হাতে আরো চার বছর হোয়াইট হাউসে থেকে যাবার কোন কৌশল এখনো রয়ে গেছে? ট্রাম্পের সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং অনুগতদের একটি দল এখনো মনে করছেন - একটি পথ আছে। সেই নাটক মঞ্চস্থ হবে ৬ই জানুয়ারি। কি ঘটতে যাচ্ছে ৬ই জানুয়ারি ? ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের যে ফল জানা গেছে সোমবার - সেটা এখনো 'আনুষ্ঠানিক' ফল নয়। এই ভোটের ফল পাঠানো হবে ফেডারেল রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এবং আগামী ৬ই জানুয়ারি ইলেকটোরাল ভোট আনুষ্ঠানিকভাবে গণনা করা হবে কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে। অধিবেশনে মার্কিন কংগ্রেস ওই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ও আইনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৬ই জানুয়ারির ঘটনাবলী হয়তো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোটের ফল উল্টে দেবার ক্ষেত্রে 'শেষ সুযোগ' এনে দিতে পারে। এরকম একটা প্রয়াস নিচ্ছেন কয়েকজন সেনেটর এবং কংগ্রেস সদস্য। তারা আরিজোনা পেনসিলভেনিয়া, নেভাডা, জর্জিয়া ও উইসকন্সিন - এই রাজ্যগুলোতে অবৈধ ভোট ও জালিয়াতির লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন - যাতে অন্তত একজন সেনেটরের স্বাক্ষর থাকবে। এর লক্ষ্য হবে ওই রাজ্যগুলোর ভোট 'ডিসকোয়ালিফাই' বা বাতিল করা। আলাবামা রাজ্যের রিপাবলিকান সেনেটর মো ব্রূকস এদের একজন। মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলছেন, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী সেদিন সুপ্রিম কোর্টসহ যেকোন আদালতের বিচারকের চেয়ে বড় ভুমিকা আছে কংগ্রেস সদস্যদের । "আমরা যা বলবো তাই হবে, সেটাই চূড়ান্ত" - বলেন তিনি। এধরণের অভিযোগ উঠলে এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ফলাফল প্রত্যয়ন করতে অস্বীকার করলে কী হবে - তা নিয়ে মার্কিন বিশ্লেষকরা নানা রকম চিত্র তুলে ধরছেন। মি. ব্রূকস বলছেন, "আমার এক নম্বর লক্ষ্য হলো আমেরিকার ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থা - যা ভোটার জালিয়াতি বা ভোট চুরিকে খুব সহজে মেনে নিচ্ছে - তা মেরামত করা।" "আর এটা থেকে একটা বোনাস মিলে যেতে পারে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইলেকটোরাল ভোটে আনুষ্ঠানিকভাবে জিতে গেলেন। কারণ আপনি যদি অবৈধ ভোটগুলো বাদ দেন, এবং যোগ্য আমেরিকান নাগরিকদের আইনসঙ্গত ভোটগুলোই শুধু গণনা করেন - তাহলে তিনিই জিতেছেন।" কিন্তু এরকম কোন প্রক্রিয়া হবে জটিল এবং দীর্ঘ। প্রতিটি অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দু'ঘন্টা করে বিতর্ক এবং ভোটাভুটি হতে হবে। কোন একটা রাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট বাতিল করতে হলে ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ এবং রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত সেনেটকে একমত হতে হবে। উনবিংশ শতাব্দীর পর কখনো এমনটা হয়নি। মাইক পেন্স: ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্বস্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট অনুমান করা যায়, ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ভোট বাতিলের চেষ্টা অনুমোদন করবে না। তা ছাড়া রিপাবলিকান কয়েকজন সেনেটরও এভাবে ভোট বাতিলের প্রয়াস জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা এ চেষ্টার বিপক্ষে ভোট দিলেই জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে। ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের ভুমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছয়ই জানুয়ারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবেন কংগ্রেসের সেই অধিবেশনে সভাপতি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। কারণ তিনিই সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে পাঠানো ইলেকটোরাল ভোটের খামগুলো খুলবেন, এবং তার যোগফল ঘোষণা করবেন। ১৯৬০ সালে রিচার্ড নিক্সন এবং ২০০০ সালে এ্যাল গোর-কে এভাবেই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে তাদের নিজেদের পরাজয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর বিজয়কে প্রত্যয়ন করতে হয়েছিল। তারা এটা করতে গিয়ে তাদের নিজেদের দলের আইনপ্রণেতাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেছিলেন। মাইক পেন্সও কি তাই করবেন? "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট যে ভুমিকা পালন করেন তার প্রতি লোকে এতদিন কোন দৃষ্টি দেয়নি, এটা নিয়ে ভাবেও নি। কিন্তু যেহেতু প্রেসিডেন্ট এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প - তাই আপনাকে সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখতে হবে" - বলছেন গ্রেগরি বি ক্রেইগ - যিনি প্রেসিডেন্ট ওবামার সময় হোয়াইট হাউসের একজন আইনজীবী ছিলেন। পেন্সের সামনে উভয়-সংকট? এতদিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মি. পেন্স একদিনে যেমন ট্রাম্পের বিশ্বস্ত ছিলেন, তেমনি তিনি আইন মেনেও চলেছেন। নির্বাচনের পর থেকে মি. পেন্স ট্রাম্পকে সাহায্য করার ব্যাপারে মিশ্র বার্তা দিয়ে চলেছেন। ট্রাম্পের সমর্থকদের অনেকেই নির্বাচনের ফলাফল বিশ্বাস করেন না প্রথম দিকে তিনি ভোট জালিয়াতির দাবিগুলো সমর্থন করার জন্য ট্রাম্প সমর্থকদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোর ভোট বাতিল করার জন্য টেক্সাসের এ্যাটর্নি জেনারেলের করা মামলার প্রশংসা করেছেন - যদি সে মামলা খারিজ হয়ে গেছে। সমস্যা হলো, মি. পেন্স নিজেই নাকি ২০২৪ সালে রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে চান। তার সামনে সংকট: তিনি কি এ নির্বাচনের ফলাফলকে মেনে নিয়ে বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে তার নিজের দলের ভোটারদের বিরাগভাজন হবার ঝুঁকি নেবেন? নাকি রিপাবলিকানদের বাধ্য করবেন ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে আমেরিকান নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একটা সংকটের মধ্যে ফেলে দিতে? যারা ৬ই জানুয়ারির দিকে তাকিয়ে আছেন - তাদের প্রশ্ন সেটাই। সম্ভাবনা 'শূন্য' ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপক এডওয়ার্ড বি. ফোলি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলছেন, যত আপত্তি, মামলা বা অভিযোগই থাকুক - তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারবে না। "৬ই জানুয়ারির কংগ্রেস অধিবেশনে তা নিশ্চিত হয়ে যাবে, এটা আমরা স্পষ্ট আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি" - বলেন অধ্যাপক ফোলি। বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন: ট্রাম্পের পরাজয় বিশ্বের দক্ষিণপন্থী ‘কঠোর নেতাদের’ জন্য কী অর্থ বহন করে? যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন যেভাবে অন্য দেশের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন ইলেক্টোরাল ভোটেও নিশ্চিত হলো বাইডেনের জয় আমেরিকায় নির্বাচন: ট্রাম্প কি এখনও ভোটের ফলাফল উল্টে দিতে পারেন বিবিসির বিশ্লেষক এ্যান্টনি যুর্কার বলছেন, "প্রতিনিধি পরিষদ নিয়ন্ত্রণ করছেন ডেমোক্র্যাটরা, ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের ফলাফল অঙ্গরাজ্যগুলো প্রত্যয়ন করে দিয়েছে, এবং ফেডারেল আইনও এখন বাইডেনের পক্ষে ।" তাই মি. ট্রাম্পের পক্ষে নির্বাচনের ফল উল্টে দেবার চেষ্টায় সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা এখন শূন্য - বলছেন এ্যান্টনি যুর্কার। ট্রাম্প কি এর পর রাজনীতি থেকে বিদায় নেবেন? এখন মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে ২০শে জানুয়ারি ডোনাল্ড্র ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হবে। কিন্তু তার সাথেই কি মার্কিন রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ থেকে মি. ট্রাম্পের প্রস্থান ঘটবে? কিছু বিশ্লেষক বলছেন, হয়তো না। মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে পিটার বেকার ও ম্যাগি হেবারম্যান লিখেছেন, হয়তো দেখা যেতে পারে যে মি. ট্রাম্পের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা - যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি । হয়তো তিনি মার্কিন রাজনীতিতে একটি জোরালো শক্তি হিসেবে রয়ে যেতে পারেন - যার মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে, বলছেন তারা। এমন ধারণার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় সাত কোটির কাছাকাছি ভোটারের ভোট পেয়েছেন - যা ২০১৬ সালে তিনি যে ভোট পেয়েছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আইন অনুযায়ী ২০ শে জানুয়ারি হোয়াইট হাউস ছাড়তে হবে পপুলার ভোটের প্রায় ৪৮ শতাংশ পেয়েছেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর অর্থ হলো চার বছর ধরে তাকে নিয়ে নানা রকম কেলেংকারি, রাজনৈতিক বিপর্যয়, অভিশংসন, করোনাভাইরাস - এই সবকিছু সত্বেও তার পক্ষে আছে আমেরিকান জনগণের প্রায় অর্ধেকের সমর্থন। নিকট অতীতে এক মেয়াদ পরই ভোটে হেরেছিলেন এমন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডেমোক্র্যাট জিমি কার্টার এবং রিপাবলিক জর্জ এইচ বুশ সিনিয়র। তাদের কারোরই ভোটের সংখ্যার বিচারে ট্রাম্পের মত ক্ষমতার ভিত্তি ছিল না। মি. ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠ মহলে নিজের একটি টিভি নেটওয়ার্ক চালু করার কথা বলেছেন, যার লক্ষ্য হচ্ছে ফক্স নিউজের সাথে পাল্লা দেয়া। তা ছাড়া ২০২৪ সালে আবার প্রার্থী হবার আভাসও দিয়েছেন মি. ট্রাম্প - যদিও তখন তার বয়স হবে ৭৮। আর নির্বাচনে তিনি যদি আবার প্রার্থী না-ও হন, তাহলেও টুইটারে তার ৮৮ মিলিয়ন ফলোয়াররা তো আছেন। ফলে এমন হতে পারে যে আমেরিকার দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে তিনি হয়ে উঠতে পারেন এক অত্যন্ত প্রভাবশালী কণ্ঠ। হয়তো এ কারণেই রিপাবলিকান মহলে পরবর্তী তারকা কে বা কারা হবেন - তা নির্ধারণে ট্রাম্পের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। হযতো এটা মাথায় রেখেই ৩রা নভেম্বরের নির্বাচনের পরপর সাবেক অ্যারিজোনা সিনেটর জেফ ফ্লেক বলেছিলেন, "নির্বাচনের ফল থেকে এটা পরিষ্কার যে মি. ট্রাম্পের বিপুল জনসমর্থন আছে এবং তার এখনই মঞ্চ ছেড়ে যাবার কোন ইচ্ছে নেই।" অবশ্য আমেরিকার রাজনীতিতে ট্রাম্পের ভুমিকা মি.বাইডেন প্রেসিডেন্ট হবার পরও থাকবে - এমন ধারণার সাথে সবাই একমত নন। সাবেক কংগ্রেস সদস্য ফ্লোরিডার কার্লোস কারবেলো বলছেন, "আমরা আর কখনোই আরেকটি ডোনাল্ড ট্রাম্প দেখতে পাবো না। তার নকল কেউ বেরুলেও তারা ব্যর্থ হবে, এবং ট্রাম্প নিজেও ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবেন।" "তবে আমেরিকার ইতিহাসে তার শাসনকাল যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে তার ক্ষতচিহ্ন হয়তো কোনদিনই মুছবে না।" এটা সত্যি যে জেরাল্ড ফোর্ড, জিমি কার্টার বা জর্জ এইচ বুশ - যারা এক মেয়াদ পরেই হোয়াইট হাউস থেকে উৎখাত হয়েছেন - তারা কেউ কেউ চেষ্টা করলেও, রাজনীতির মঞ্চে আর ফিরে আসতে পারেননি।
ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে জো বাইডেনের পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়া নিশ্চিত হয়ে গেছে। তিনি ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২টি।
আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী হালনাগাদ করার কাজ শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে আর জাতীয় নাগরিক পঞ্জী বা এন আর সি-র কারণেই আসামে বসবাসকারী বাংলাভাষী প্রায় ৯০ লক্ষ মুসলমান ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সংখ্যাটা মুসলমানদের তুলনায় অনেক কম হলেও বাঙালী হিন্দুদের একটা অংশের মধ্যেও রয়েছে আতঙ্ক। এন আর সি-র রাজ্য কোঅর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলাকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে লেখা হয়েছিল যে, প্রায় ৪৮ লক্ষ মানুষ, যারা আসামে বসবাস করছেন, তারা নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে মি. হাজেলা এই উদ্ধৃতিটি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন এবং যে সাংবাদিক ওই তথ্য মি. হাজেলার উদ্ধৃতি বলে লিখেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, অবৈধভাবে আসামে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যাটা ৫০ হাজারের কাছাকাছি হবে। এখন প্রশ্নটা হল, যেসব মানুষকে 'বিদেশী' বলে চিহ্নিত করা হবে, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী! ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে যেহেতু বিদেশী বা বাংলাদেশী বলে চিহ্নিত ব্যক্তিদের ফেরত পাঠানোর কোনও চুক্তি নেই, তাহলে যে সব মানুষ কয়েক প্রজন্ম ধরে ভারতকেই নিজেদের দেশ বলে মনে করে এসেছেন, তাঁদের নিয়ে কী করা হবে। সরকারের তরফ থেকে এই ব্যাপারে কোনও ঘোষণা নেই। আরো পড়ুন: আসামে 'অবৈধ' হতে পারেন লাখ-লাখ মুসলমান কেমন আছেন আসামের বাংলাভাষী মুসলমানেরা? 'অবৈধ বাংলাদেশি' তাড়ানোর চেষ্টায় আসামে উত্তেজনা যাঁদের বিদেশী বলে চিহ্নিত করা হবে, তাঁদের অবস্থাটা কী হতে পারে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে আসামের অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা ডিসেম্বর মাসে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে কেন নাগরিক পঞ্জী হালনাগাদ করা হচ্ছে। "আসামে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের চিহ্নিত করাই এর উদ্দেশ্য। এঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। বাংলাভাষী হিন্দুরা অসমীয়া মানুষদের সঙ্গেই থাকতে পারবেন," জানিয়েছিলেন মি. বিশ্বশর্মা। এটাই বিজেপির নীতির সঙ্গে খাপ খায়। কেন্দ্রীয় সরকারও প্রত্যেক হিন্দুকে ভারতীয় হওয়ার একটা অধিকার দেওয়ার জন্য বিল পেশ করেছিল। তবে আসামের বেশীরভাগ নাগরিক এর বিরোধিতা করছেন। যাঁদের বিদেশী বলে চিহ্নিত করা হবে, তাঁদের অবস্থাটা কী হতে পারে, তার একটা আন্দাজ আমরা পেতে পারি সেই সব মানুষের পরিস্থিতির দিকে তাকালেই, যাঁদের আসামের বিদেশী ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যেই বিদেশী বলে চিহ্নিত করেছে। বিদেশী বলে চিহ্নিত এইসব মানুষদের রাজ্যের বিভিন্ন জেলের মধ্যেই গড়ে তোলা বন্দী শিবিরে রাখা হয়েছে। বেশ কিছু মানুষ তো এমনও রয়েছেন, যারা গত এক দশক ধরে এভাবে বন্দীশিবিরে রয়েছেন। ছাড়া পাওয়ার কোনও আশা সম্ভবত তাঁরা আর দেখেন না। এইসব বন্দীশিবিরগুলোতে মানবাধিকার সংগঠন বা মানবাধিকার কর্মীদের যাওয়া নিষেধ। তাই এইসব শিবিরের মানুষদের অবস্থা কখনই সাধারণ মানুষের সামনে আসে নি। গতবছর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যখন আমাকে সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ পর্যবেক্ষকের পদে নিয়োগ করতে চায়, তখন সেটা গ্রহণ করেছিলাম আমি। এরপরে আমার প্রথম কাজই হয়েছিল আসামের এইসব বন্দীশিবিরগুলি ঘুরে দেখার আবেদন জানিয়েছিলাম। এবছরের ২২ থেকে ২৪ জানুয়ারি আমি আসামে গিয়েছিলাম। গোয়ালপাড়া আর কোকড়াঝাড়ের জেলের মধ্যেই যে বন্দীশিবির রয়েছে, সেগুলো ঘুরে দেখি। ওখানে বন্দীদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলি। মানবিক আর আইনগত - দুই দিক থেকেই এই বন্দীশিবিরগুলির এক ভয়াবহ চিত্র দেখতে পেয়েছিলাম আমি। বারে বারে মনে করিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও মানবাধিকার কমিশন, বা কেন্দ্র অথবা রাজ্য সরকারগুলি আমাকে এই তথ্যটাও জানায় নি যে বন্দী শিবিরগুলি নিয়ে আমি যে রিপোর্ট দিয়েছিলাম, তার পরিণতি কী হল! আর এর পরে যখন এন আর সি-র প্রক্রিয়া শেষ হলে যখন লাখো মানুষকে বিদেশী বলে চিহ্নিত করা হবে, তখন পরিস্থিতিটা কী হবে, সেটা আন্দাজ করতে পারছি ভাল মতোই। এই অবস্থায় আমার সামনে একটাই রাস্তা খোলা ছিল যে সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ পর্যবেক্ষকের পদ থেকে আমি সরে দাঁড়াই আর বন্দীশিবির নিয়ে আমি যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলাম, সেটা সাধারণ মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিই। এই সব বন্দীশিবিরগুলিতে আটক রয়েছেন যেসব অবৈধ বিদেশী বলে চিহ্নিত মানুষরা, তাঁদের বেশীরভাগকেই নূন্যতম আইনি সহায়তা দেওয়া হয় না। অনেকের ক্ষেত্রেই বিদেশী ট্রাইব্যুনালে এইসব মানুষ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান নি। বেশীরভাগ মানুষকেই নজরবন্দী করে রাখা হয়েছে এই কারণে যে, তাঁরা ট্রাইব্যুনাল বার বার নোটিশ পাঠিয়ে হাজিরা দিতে বললেও তাঁরা সাড়া দেন নি, ট্রাইব্যুনালে হাজির হন নি। তবে আমাকে বন্দীশিবিরের বেশীরভাগ মানুষই জানিয়েছেন যে ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দেওয়ার জন্য কোনও নোটিশই তাঁরা পান নি। প্রশ্নটা হল, যেসব মানুষকে 'বিদেশী' বলে চিহ্নিত করা হবে, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী! একটা মানবিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার কারণে আমরা ধর্ষণ বা খুনের মতো কঠিন অপরাধে অভিযুক্তদেরও আইনি সহায়তা দিয়ে থাকি, স্বপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু অবৈধ বিদেশী নাগরিক চিহ্নিতকরণের মামলায় অপরাধ না করা সত্ত্বেও বহু মানুষ বন্দীশিবিরে কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন মামলা লড়ার জন্য সাহায্য পাচ্ছেন না বলে! সাধারণ জেলের মধ্যেই একটা অংশে এইসব বন্দীশিবির তৈরি হয়েছে। অনেক কয়েদীকে তো বছরের পর বছর বন্দী থাকতে হচ্ছে। এঁদের না দেওয়া হয় কোনও কাজকর্ম, না বিনোদনের সামান্যতম সুযোগ। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করারও কোনও সুযোগ নেই এঁদের। কদাচিৎ কখনও হয়তো কারও কোনও আত্মীয় জেলে দেখা করতে আসেন। এঁদের তো বন্দীশিবির থেকে ছাড়া পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা আমার চোখে পড়ছে না। অন্যান্য জেলের কয়েদীদের অন্তত হাঁটাহাঁটি করার, বা খোলা আকাশের নীচে সময় কাটানোর সুযোগ থাকে। কিন্তু বিদেশী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে যাঁদের, তাঁদের সেই সুযোগও নেই। দিনের বেলাতেও তাঁদের ব্যারাকের মধ্যেই কাটাতে হয়। কারণ অন্য কয়েদী, অর্থাৎ ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে মেলামেশা করার অধিকার দেওয়া হয় না তাঁদের। জেলগুলোতে যখন পরিদর্শনে গেছি, তখন দেখেছি যে পুরুষ, নারী আর ছয় বছরের বেশী বয়সী শিশুদের পরিবারের থেকে আলাদা করে রাখা হয়। অনেকেই আছেন, যারা নিজের জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে অনেক বছর দেখা করতে পারেন নি। মুসলমানদের তুলনায় অনেক কম হলেও বাঙালী হিন্দুদের একটা অংশের মধ্যেও রয়েছে আতঙ্ক নিজের স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আইনি অনুমতি না থাকলেও জেলের অফিসাররা মাঝে মাঝে দয়া করে নিজেদের মোবাইল ফোন থেকে আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। আত্মীয় স্বজনের অসুখবিসুখ বা মৃত্যু হলেও প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার অনুমতি পান না এঁরা। যুক্তিটা হল, প্যারোলে কিছুদিনের জন্য মুক্তি পাওয়ার অধিকার একমাত্র সাজাপ্রাপ্ত ভারতীয় বন্দীদেরই রয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের কাছে আমার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শটা ছিল যে সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বন্দী শিবিরের বাসিন্দাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সাধারণ কয়েদীদের সঙ্গে এঁদের জেলের ভেতরে কোনও সুযোগ সুবিধা না দিয়ে বন্দী করে রাখা বা আইনি সহায়তা না দিয়ে আটক রাখা, পরিবার পরিজনের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া আর সর্বোপরি সম্মানের সঙ্গে জীবনধারণের অধিকার সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। আন্তর্জাতিক নিয়মে স্পষ্ট করে বলা আছে যে বিদেশীদের জেলে বন্দী করে রাখা যায় না। তাঁদের সঙ্গে অপরাধীদের মতো ব্যবহার করা যায় না। মানবিক আর আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কোনোভাবেই তাঁদের পরিবারের থেকে আলাদা করে রাখা যায় না। এই নিয়মের অর্থ হল, কোনও দেশে অবৈধভাবে যদি কেউ বসবাস করেন, তাঁদের খোলামেলা শিবিরে নজরবন্দী করে রাখা যেতে পারে। জেলে কখনই আটক করে রাখা যায় না। আর এইসব মানুষকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জেলে বন্দী করে রাখা ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নিয়মাবলীর সরাসরি লঙ্ঘন। আমাদের সংবিধান জীবনের যে অধিকার দিয়েছে, তা শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য নয়। যেসব মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তাঁদেরও এই অধিকার পাওয়ার কথা। বিদেশী বলে চিহ্নিত মানুষদের বিষয়ে সাংবিধানিক নিয়মনীতি আর আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ীই চলতে হবে ভারতকে। আমাদের উচিত তাদের দিকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। অথচ এইসব বন্দীশিবিরগুলিতে বসবাসরত নারী, পুরুষ বা শিশুদের অবস্থা সাধারণ কয়েদীদের থেকেও করুণ। অনির্দিষ্টকাল ধরে এঁদের বন্দী করে রাখা হচ্ছে শুধুমাত্র এই কারণে যে তাঁরা নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ যোগাড় করতে পারেন নি। অথবা তাঁদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার সুযোগই দেওয়া হয় নি। এটা যে ভারত সরকারের ভাবমূর্তির ওপরে একটা ধাক্কা, তা নয়। ভারতের নাগরিকদের জন্যও এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক পরিস্থিতি।
(বিবিসি হিন্দী সার্ভিসে এটি লিখেছেন: হর্ষ মন্দার, মানবাধিকার কর্মী ) আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী হালনাগাদ করার কাজ শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে চলা এই প্রক্রিয়া আসামে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের নাম তালিকাভুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হবে।
ভাসানচরে এই বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে ভিআইপিদের জন্য বঙ্গোপসাগরের বুকে গজিয়ে ওঠা এই দ্বীপ, যার নাম ভাসানচর, তা ওই অঞ্চলে নবগঠিত যেসব চর রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে এই চরের বয়স মাত্র ২০ বছর। রোহিঙ্গা সংকট শুরুর কয়েক মাস পর থেকেই ভাসানচর জায়গাটি আলোচনায় চলে আসে। ভাসানচর জায়গাটি কেমন? - গত দুই বছর যাবত এসব প্রশ্ন অনেকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, কারণ এই দ্বীপ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ধারণা খুবই কম। মিয়ানমারের গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে আইসিজে'র রায় নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া এক লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থীকে ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য এরই মধ্যে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেখানে বিভিন্ন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য ভাসানচরে যেসব সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো দেখানোর জন্য সরকারী একটি সংস্থা কয়েকদিন আগে ঢাকার বেশ কিছু সাংবাদিকের জন্য ভাসানচর পরিদর্শনের ব্যবস্থা করে। ভাসানচরে যাত্রা সহজ নয় চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত নৌবাহিনীর বোট ক্লাব থেকে সকাল ১০টায় ভাসানচরের উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। বড় জাহাজ ছাড়া ভাসানচরে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ নৌবাহিনীর একটি বড় জাহাজে করে এই যাত্রা শুরু হয়। কর্ণফুলী নদীর মোহনা পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরে দিকে জাহাজ যতই এগুতে থাকে, ততই দৃষ্টিসীমার আড়ালে চলে যায় লোকালয়। বঙ্গোপসাগরে ঢুকে মাঝে মধ্যে একটি দুটি মালবাহী বড় জাহাজ চোখে পড়ে। নৌবাহিনীর বড় জাহাজে করে যাত্রা করলেও সমুদ্রে বড় বড় ঢেউ বেশ টের পাওয়া যাচ্ছিল। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা চলার পর আমাদের জাহাজটি ভাসানচরে এসে পৌঁছায়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ভারতের পক্ষে বাস্তবে কতটা কী করা সম্ভব? যেভাবে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে ৪ রোহিঙ্গার মৃত্যু হলো এই যাত্রার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে, বড় নৌযান ছাড়া ভাসানচরে যাত্রা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারতো। এবং আরও মনে হয়েছে যে এই পথে নিয়মিত যাতায়াত বেশ কষ্টসাধ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ। ভাসানচর দেখতে কেমন? গত প্রায় তিন বছরে ভাসানচরের চেহারা আমূল বদলে দিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। প্রতিটি ক্লাস্টারে একটি করে পুকুর রয়েছে প্রতিটি পরিবারের রান্নার জন্য একটি করে চুলার ব্যবস্থা আছে চরে পৌঁছে দেখা গেল গেল, নৌবাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও সেখানে কিছু নির্মাণ শ্রমিক ও মহিষ চড়ানো রাখালও রয়েছেন। গত পাঁচ বছর যাবত এই চরে মহিষের রাখাল হিসেবে কাজ করছেন তাজুল হক। তিনি বলেন, "বিস্তর জায়গা এই খানে। আমরা আগে ছিলাম স্বর্ণদ্বীপ। সেখানে সেনাবাহিনী আসার পরে আমাদের বললো, আপনারা অন্য চরে চলে যান। তখন আমরা এখানে আসলাম।" রোহিঙ্গাদের নিয়ে সৌদি চাপ কি মেনে নেবে বাংলাদেশ কক্সবাজার থেকে এক লক্ষ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে এই প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকার। এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্প, আর এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে। ভাসানচর সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক কমোডর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী এই প্রকল্পের পরিচালক কমোডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী জানান যে ভাসানচরে সব ধরনের স্থাপনার নির্মাণ কাজ হয়েছে। "এখানে যে কোন সময় রোহিঙ্গাদের আনা যাবে। আমাদের তরফ থেকে সব কাজ শেষ হয়ে গেছে," বলেন কমোডোর চৌধুরী। এই চরে এক লক্ষ রোহিঙ্গার জন্য ১২০টি ক্লাস্টার বা গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১,৪৪০টি ঘর নির্মাণ করা হয়ে। প্রতিটি ঘরে রয়েছে ১৬টি কক্ষ - সামনে ৮টি এবং পেছনের দিকে আরও ৮টি। রান্নার জন্য প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি করে চুলার জায়গা বরাদ্দ করা আছে। আর প্রতি ৮টি কক্ষের জন্য তিনটি টয়লেট এবং দু'টি গোসলখানা রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে দুটো ডাবল বাঙ্কার বা দোতলা খাট রয়েছে। অর্থাৎ একটি কক্ষে চারজন থাকতে পারবেন। যদি একটি পরিবারে সদস্য সংখ্যা চারজনের বেশি হয়, তাহলে তাদের জন্য দুটো কক্ষ বরাদ্দ করা হবে। রান্নাঘর, গোসলখানা এবং টয়লেটে পানির সরবরাহ রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিটি ক্লাস্টারে একটি করে পুকুর রয়েছে। এসব পুকুরের গভীরতা ১০ ফুট। এসব পুকুরে পানি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা যাবে। প্রতিটি ক্লাস্টার একই আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। সব ঘর দেখতে একই রকম। প্রতিটি ঘরের সামনে বেশ চওড়া রাস্তা রয়েছে। এসব রাস্তার প্রশস্ততা ২০ থেকে ২৫ ফুট। বাংলাদেশের কোন গ্রামে সাধারণত এই ধরণের রাস্তা দেখা যায় না। ঘরের সামনে প্রশস্ত রাস্তা রয়েছে ঝড় - জলোচ্ছ্বাসে কী হবে? ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য যেসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো কক্সবাজারে অবস্থিত শরনার্থী ক্যাম্পগুলোর তুলনায় যে অনেক ভালো, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কক্সবাজারের ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের খুপড়ি ঘরগুলোতে বিদ্যুতের সরবরাহ না থাকলেও ভাসানচরে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু ভাসানচরে নিয়ে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে, বড় ধরণের ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের সময় এই চরের কী অবস্থা হবে? প্রকল্প পরিচালক কমোডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী জানান, গত ১৭১ বছরের ঘূর্ণিঝড় পর্যালোচনা করা হয়েছে। "এখনও পর্যন্ত কোন ঘূর্ণিঝড়ের আই (কেন্দ্র) এই এলাকার উপর দিয়ে যায়নি।" প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যাতে ব্যবহার করা যায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে ভাসানচরে পাঁচ তলা বিশিষ্ট ১২০টি শেল্টার হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। কমোডোর চৌধুরী জানান, এসব শেল্টারহোম ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসের মধ্যেও টিকে থাকবে। সমুদ্রের ঢেউ ভেঙ্গে দেবার জন্য শোর প্রোটেকশন দেয়া হয়েছে ভাসানচর ঘিরে নয় ফুট উচ্চতার বেড়িবাঁধ জোয়ার এবং জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে ভাসানচরকে রক্ষার জন্য চারপাশে নয় ফুট উচ্চতার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই বাঁধ ১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু করা হবে বলে জানালেন কর্মকর্তারা। প্রকল্প পরিচালক কমোডোর চৌধুরী বলেন, অনেক শক্তিশালী ঝড় এই চরের উপর দিয়ে গেলে অবকাঠামোর ক্ষতি হতে পারে, কিন্তু মানুষের জীবন বিপন্ন হবে না। এই চর যাতে ভাঙনের কবলে না পড়ে, সেজন্য প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে শোর প্রোটেকশন স্থাপন বা তীর রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সমুদ্রের যে পাশ থেকে ঢেউ চরে আঘাত করে, সেই পাশেই শোর প্রোটেকশন দেয়া হয়েছে। শোর প্রোটেকশন থেকে ৫০০ মিটার ভেতরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ভাসানচরে আলিশান বাড়ি ভাসানচরে ঢুকে কিছুদূর অগ্রসর হলেই একটি দৃষ্টিনন্দন বাড়ি সবার চোখে পড়বে। মনে প্রশ্ন জাগে, যে চরে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বসবাস করবে সেখানে এমন একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা কেন? নৌবাহিনীর সদস্যরা জানান, এই বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের জন্য। তারা যখন ভাসানচর পরিদর্শনে আসবেন, তখন ওই বাড়িতে বিশ্রাম নিতে পারবেন। নৌবাহিনীর এক সদস্য জানান, এই বাড়ি নির্মাণ এবং সাজসজ্জা করতে আট কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এখানে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির জন্য আলাদা কক্ষ রয়েছে বলে তিনি জানান। নৌবাহিনীর ওই সদস্য জানান, "এখানে নৌবাহিনী প্রধানের নিচে কেউ থাকতে পারবে না।" রোহিঙ্গাদের দেখা মেলেনি প্রায় চার মাস আগে সাগরে ভাসমান ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ভাসানচরে নিয়ে রাখা হয়। সেখানে তারা নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আছেন। সাংবাদিকদের এই সফরে সেসব রোহিঙ্গাদের সাথে দেখা করতে দেয়া হয়নি। এমনকি চরের কোন স্থাপনায় রোহিঙ্গাদের রাখা হয়েছে, সেটিও সাংবাদিকদের জানানো হয়নি। সম্প্রতি এসব রোহিঙ্গা ভাসানচর থেকে কক্সবাজারে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে বিক্ষোভ করেছে। পাঁচতলা বিশিষ্ট শেল্টার হোম রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে সম্প্রতি ভাসানচরে বসবাসরত কয়েকজন রোহিঙ্গার বরাত দিয়ে লন্ডন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করে যে সেখানে রোহিঙ্গা নারীদের উপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের তরফ থেকে প্রকল্প পরিচালক কমোডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয়। কমোডোর চৌধুরী এ ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন যে ভাসানচরে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে, তাদের বেশ যত্নসহকারে রাখা হয়েছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মারধর এবং নির্যাতনের অভিযোগ তবে মাঝে মধ্যেই রোহিঙ্গারা 'উচ্ছৃঙ্খল আচরণ' করে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এনজিও-রা কাজ করতে পারবে? কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফের শিবিরগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার জন্য বর্তমানে ১০০'র বেশি দেশি-বিদেশী এনজিও কাজ করছে। এসব এনজিও ভাসানচরে কাজ করতে পারবে কি-না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। কারণ এখনো পর্যন্ত ভাসানচরে এনজিওদের জন্য কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি। এনজিওরা যদি সেখানে কাজ করতে চায় তাহলে তাদের জন্য অফিস নির্মাণ কারা করবে, এ বিষয়টি এখনও পুরোপুরি অস্পষ্ট। সরকারি জমি বরাদ্দ এবং নৌবাহিনীর সহায়তা ছাড়া ভাসানচরে এনজিওদের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করা অসম্ভব। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণের পাশাপাশি জাতিসংঘ প্রতিনিধি, রেডক্রস এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনারের অফিসের জন্য একটি করে ভবন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মিয়ানমারের 'উন্মুক্ত কারাগারে বন্দী' লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ও কামান মুসলিম কক্সবাজারে কর্মরত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাস্তবতা বিবেচনা করলে ভাসানচরে গিয়ে কাজ করা অসম্ভব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, "সমুদ্রপথে ভাসানচরে যেতে সময় লাগে অন্তত তিন ঘণ্টা। বড় জাহাজ ছাড়া এই পথে যাতায়াত করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া এখানে নিয়মিত যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। তাহলে আমাদের কর্মীরা কীভাবে যাতায়াত করবে?" শুধু এনজিও কর্মীদের জন্যই নয়, সরকারী কর্মকর্তাদের জন্যও ভাসানচরে যাতায়াত বেশ কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভাসানচরে পুলিশের একটি থানা স্থাপন করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার এক পুলিশ সদস্য বিবিসি বাংলাকে বলেন, বছরের মধ্যে নয় মাস এই চরে যাতায়াত বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ প্রায়শই সমুদ্র উত্তাল থাকে। রোহিঙ্গারা না গেলে কী হবে? ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে এবং এক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান হলো যে কোন ধরণের জোর-জবরদস্তি করা হবে না। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেখানে রোহিঙ্গাদের যাওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সমুদ্র থেকে ভাসানচরের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য তৈরি করা লাইট হাউজ রোহিঙ্গাদের দৃষ্টিতে ভাসানচর একটি 'কারাগার'। চারপাশে সমুদ্র বেষ্টিত এই দ্বীপে থাকতে চায় না রোহিঙ্গারা। তাই এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে যদি রোহিঙ্গাদের সেখানে শেষ পর্যন্ত নেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে ভাসানচরে হাজার-হাজার কোটি টাকা খরচ করার অর্থ কী দাঁড়াবে। এর পরিস্কার কোন উত্তর নেই। তবে কমোডোর চৌধুরী জানালেন যে রোহিঙ্গারা যখন নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাবেন, তখন বাংলাদেশের অন্যান্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতোই এটি ব্যবহার করা হবে। রোহিঙ্গা: ভাসানচরে না যেতে ক্যাম্পে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী
বাংলাদেশের দক্ষিণে সাগরের মধ্যে একটি পানি ছুঁই ছুঁই দ্বীপে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের অনেককে আশ্রয় দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকার বড় ধরণের যে অবকাঠামো গড়ে তুলেছে, তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে দেশে-বিদেশে।
র‍্যাব বলছে ঢাকায় অন্তত ৬০ টি ক্যাসিনো গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে ফুটবলের পাশাপাশি অনেকগুলো দলেরই ক্রিকেট ও হকি দলও ছিলো যেখানে বিশ্বের নামী দামী অনেক খেলোয়াড়ও খেলে গেছেন। ফুটবলের সেই জৌলুস এখন আর নেই, এমনকি ক্রিকেট ভালো করলেও এসব দলগুলোর অনেকগুলোই আর তাতে নেই। নেই তারা হকিতেও। এমনকি যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তৈরি হয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র সেই প্রতিষ্ঠানের মূল কাজই হয়ে দাঁড়িয়েছে জুয়ার আয়োজন করা। বুধবার রাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে দেখা গেছে স্পোর্টস বাদ দিয়ে ক্লাবগুলো মজে আছে জুয়ার এমন আয়োজনে যার আধুনিক নাম ক্যাসিনো। ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রণের ভূমিকাতেও আর খেলোয়াড় কিংবা সংগঠকরা নেই, আছেন সরকারদলীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ আসছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকেই। যেসব ক্লাবের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্যাসিনোর অভিযোগ উঠছে তারা প্রায় সবাই একসময় ক্রীড়াঙ্গনে প্রবল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো ক্রীড়া থেকে জুয়া হয়ে ক্যাসিনো: ক্লাবের রংবদল কবে কীভাবে ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবগুলো থেকে খেলাধুলা বিদায় নিয়ে নিষিদ্ধ ব্যবসা চালু হলো তা নিয়ে নানা ধরণের মত পাওয়া যায়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন এসব ক্লাবে দীর্ঘকাল ধরেই জুয়ার চর্চা ছিলো, কিন্তু অনুমোদনহীন ক্যাসিনো কিভাবে হলো তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়না তেমন একটা। তবে ক্লাবগুলোর সাথে জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে জানা গেছে আবাহনী মোহামেডানসহ অন্য প্রায় সব ক্লাবেই জুয়ার প্রচলন ছিলো আশির দশক থেকেই এবং সেটি করা হতো মূলত ক্লাবের পরিচালন ব্যয় নির্বাহের জন্য। তখন ক্লাবের সংগঠকরা রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় ছিলেননা বরং ক্লাবগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা ছিলো, ফলে খেলাধুলাতেও ক্লাবগুলো বেশ ভালো করেছিলো। "তখন মূলত ওয়ান-টেন নামে একটি জুয়া হতো। যেটি হাউজি নামেও পরিচিত ছিলো। সপ্তাহে কয়েকদিন হতো। ক্লাবের বার্ষিক দাতাদের বাইরের বড় আয় আসতো এই হাউজি থেকেই," বলছিলেন ঢাকার একটি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। জানা গেছে জুয়া হিসেবে তখন ক্লাবগুলোতে হাউজি, ওয়ান-টেন ও রামিসহ কিছু খেলা চালু ছিলো আর বোর্ড বা জায়গা ভাড়া দিয়ে অর্থ আয় হতো ক্লাবের। ঢাকার ক্যাসিনোগুলোর অনেকগুলোই ঘুরে দেখেছেন ব্যবসায়ী সুমন জাহিদ। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন ঢাকায় ক্লাবে ক্যাসিনো সংস্কৃতির সূচনা হয়েছে কলাবাগান ক্লাবের হাত ধরে প্রায় ৭/৮ বছর আগে। "এরপরই স্লট মেশিন, জুয়ার আন্তর্জাতিক মানের বিশেষ বোর্ড এগুলো আসতে শুরু করে ক্লাবগুলোতে। প্রথমে সব ক্লাবই বাকারা নামে একটি খেলা দিয়ে শুরু করে। পরে যোগ হয় রুলেট নামে আরেকটি খেলা"। তবে এর ভিন্নমতও আছে। নিয়মিত ক্যাসিনোতে যান এমন একজন জানান মতিঝিলের ক্যাসিনোগুলোতে যাওয়ার আগে তিনি মালিবাগের সৈনিক ক্লাবের ক্যাসিনোতে গিয়ে খেলেছেন। ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথা বলেছে র‍্যাব রং বেরংয়ের ক্যাসিনো: নগদ টাকার মেলা বিদেশের মতো বিশাল বড় ফ্লোরে হাজার রকমের জুয়া খেলার যন্ত্রপাতির সমাহার না হলেও স্লট মেশিন কমবেশি সব ক্লাবে পৌঁছে গেছে গত ৫/৬ বছরে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক মুকুল চাকমা বিবিসি বাংলাকে বলছেন, তিনি সেগুনবাগিচা এলাকায় অবৈধ মাদক সেবনের খবর পেয়ে একটি অভিযান চালান বছর দুয়েক আগে এবং অভিযানে সেখানেই ক্যাসিনোর অস্তিত্ব পান। পরে সেটি বন্ধও হয়ে যায় বলে জানান তিনি। সেগুনবাগিচায় একটি বন্ধ হলেও পরবর্তীতে মতিঝিল, কলাবাগান, তেজগাঁও এবং এলিফ্যান্ট রোডে জমজমাট হয়ে উঠে কয়েকটি ক্যাসিনো। তবে এর আগেই নগরীতে ক্যাসিনোর ধারণা কলাবাগান থেকে শুরু হলেও এর নির্ভরযোগ্য আরেকটি জায়গা হয়ে দাড়ায় তেজগাঁওয়ের ফুওয়াং ক্লাব। মূলত তাইওয়ানিজদের একটি দল ২০০০ সালের দিকে এখানে পানশালা-কাম-রেস্তোঁরা চালু করে। পরে তাদের বিদায়ের পর বাংলাদেশী একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার হাত ধরে চালু হয় ক্যাসিনো। এরমধ্যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মতিঝিলের ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রণ যায় যুবলীগের কয়েকজন নেতার হাতে। রুলেট খেলার যন্ত্র তারাই মূলত ক্লাবগুলো থেকে খেলাধুলাকে গুরুত্বহীন করে দিয়ে সামনে নিয়ে আসেন ক্যাসিনোকে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাব - চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেও । কিন্তু অর্থের অভাবে দল গঠন করতে পারবেনা সেজন্য আগের স্তরেই থেকে যায়, অথচ সেই ক্লাবেই র‍্যাব অভিযান চালিয়ে সবচেয়ে বড় ক্যাসিনোর অস্তিত্ত্ব খুঁজে পেয়েছে বুধবার রাতে। আবার নেপাল থেকে প্রশিক্ষিত নারী ও নিরাপত্তা কর্মীও নিয়ে আসে কয়েকটি ক্যাসিনো। যদিও জুয়া খেলা বলতে স্লট মেশিন, বাকারা আর রুলেটই প্রধানত এখানে খেলা হয়। এখন র‍্যাব কর্মকর্তারা বলছেন ঢাকায় অন্তত ৬০টি ক্যাসিনো আছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। মুকুল চাকমা বলছেন অনেকদিন ধরেই এসব বিষয়ে তথ্য আসছিলো কিন্তু এখন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা আসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার জন্য ব্যবস্থা নেয়াটা সহজ হয়েছে। তিনি বলছেন এসব ক্যাসিনো হুট করে হয়নি এটি সত্যি এবং হয়তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও তথ্য ছিলো। সে কারণেই এবারে একটি সফল অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তবে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলছেন ক্যাসিনোগুলোর ধরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সমাজের সব স্তরের প্রভাবশালীরাই এসব ক্যাসিনো গড়ে তুলেছেন। "যারা খেলতে গিয়েছে তাদের কেউ কেউ ধরা পড়েছে। কিন্তু এসব ক্যাসিনোর যন্ত্রপাতি আনার অনুমতি কে দিয়েছে। কারা বছরের পর বছর জেনেশুনেও এসব চলতে দিয়েছে। সুবিধা নিয়েছে নিয়মিত। সবাই মিলেই এসব তৈরি করেছে। ব্যবস্থা নিতে হলে এদের সবার বিরুদ্ধেই নিতে হবে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে"। মতিঝিলের ক্যাসিনোগুলোতে নিয়মিত যান এমন একজন জানান, সেখানে কোটি কোটি টাকার জুয়া খেলা হয় এবং ২৪ ঘণ্টাই এগুলোতে সচল থাকে জুয়ার বোর্ড। তিনি বলেন, "এক হাজার থেকে ১ লাখ টাকার কয়েন বা চিপস কিনে বসে। অনেকে সেখানেই অ্যালকোহল পান করেন। তবে এসব ক্যাসিনোতে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। ভেতরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখেন আয়োজকরা। আর এসব আয়োজনের মধ্যেই প্রতিদিন সর্বস্বান্ত হয় অসংখ্য মানুষ"। সামনে রাখা হয় বড় নেতাদের ক্লাবগুলোর প্রায় সবগুলোতেই চেয়ারম্যান হিসেবে সামনে রাখে স্থানীয় সংসদ সদস্য বা বড় কোনো রাজনৈতিক নেতাকে। কিন্তু এসব নেতারা সেসব ক্লাবে যাওয়ারও সুযোগ পাননা তেমন একটা। একটি ক্লাবের সাথে জড়িত একজন কমকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে জানান, মূলত মতিঝিল এলাকার একজন কাউন্সিলর ও র‍্যাবের অভিযানে আটক হওয়া যুবলীগ নেতাই সবগুলো ক্লাবের নিয়ন্ত্রক। এর মধ্যে কাউন্সিলর দুটি ক্লাব সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করেন। আর বাকীগুলো ছিলো র‍্যাবের হাতে আটক যুবলীগ নেতার হাতে। আবার তাদের দুজনকেই নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগেরর একজন নেতা, যাকে নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নিজেও বক্তব্য রেখেছেন বলে ঢাকার পত্রিকায় খবর এসেছে। কিন্তু তারা ক্লাবগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মূলত ক্যাসিনো গড়ে তুললেও ক্লাব কর্মকর্তারা রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই এসব নিয়ে মুখ খুলতে পারেননি। আবার কোনো কোনো ক্লাবের কর্মকর্তারাও ব্যাপক অর্থের লোভে জড়িয়ে গেছেন এই অবৈধ ব্যবসায়। কারণ অবৈধ হলেও এসব ক্যাসিনো মালিকদের কাছ থেকে সুবিধা নিতো সব পেশার লোকজনই। ওই কর্মকর্তা বলছেন থানাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রায় সব বাহিনীর লোকজনই এসব জানতো কিন্তু কেনো এতোদিন কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সেটাই বিস্ময়ের বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা। আরো খবর: সৌদিতে আঘাত হানে ১৮টি ড্রোন আর ৭টি ক্ষেপণাস্ত্র মাটির নিচে যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি তেলের ভান্ডার ডিম কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
এক সময় ঢাকায় ফুটবল লিগের দাপুটে দল ছিলো ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাব। পরে স্বাধীনতার পর আবাহনী-মোহামেডানের দ্বৈরথের মধ্যেও বহুদিন ধরে উজ্জ্বল ছিলো আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স, এবং ব্রাদার্স ইউনিয়নের মতো দলগুলো।
একসময় নিজেও যৌনকর্মী ছিলেন, জানেন তাদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থায় খবর। তাই মহামারিকালে এগিয়ে আসেন ভাসমান যৌনকর্মীদের সাহায্য করতে। তিনি বলেন- 'ভালো মানুষজন তো যৌনকর্মীদের পাশে এসে দাঁড়াবে না, তাই আমি দাঁড়িয়েছি'। এই অবদানের কারণে রিনা আকতারের নাম এবার উঠে এসেছে 'বিবিসি ১০০ নারী' তালিকায়। মহামারির সময়ে রিনা আকতার কীভাবে এই আহার জোগাড় করেছেন তা জানতে দেখুন এই ভিডিওটি:
করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে আয় বন্ধ হয়ে যায় ভাসমান যৌনকর্মীদের। তখন টানা চার মাস দৈনিক প্রায় ২০০ জন যৌনকর্মীর খাবার ব্যবস্থা করেছেন রিনা আকতার।
নিরাপদ অবস্থানে যাওয়ার পরে চীনের দিকে তাকিয়ে অতীতের কথা ভাবছেন দেশত্যাগী দুই কোরিয়ান নারী একটু পর দেখা গেল, তারা সেই কাপড় ধরে জানালা থেকে ঝুলে নীচে নেমে আসছেন। জানালার নীচেই দাঁড়িয়ে রয়েছে তাদের উদ্ধারকারীরা। তাদের একজন বলছেন, ''তাড়াতাড়ি, আমাদের বেশি সময় নেই''। নিরাপদেই তারা দুজন নীচে নেমে এলেন। এরপর দৌড়ে একটু দূরে অপেক্ষায় থাকা উদ্ধারকারীদের গাড়িতে উঠে পড়লেন। কিন্তু তাদের বিপদ এখনো কাটেনি। মিরা এবং জিউন, দুজনেই উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা নারী, যারা মানব পাচারকারীদের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। যারা তাদের উত্তর কোরিয়া থেকে চোরাচালানের পথ ধরে পালাতে সাহায্য করেছিল, চীনের সীমান্ত অতিক্রমের পরে তারাই একটি যৌন ব্যবসা দলের কাছে তাদের হস্তান্তর করে দেয়। আরো পড়ুন: পাচার হওয়া নারী নিজেই হয়ে গেলেন পাচারকারী উত্তর কোরিয়ার সাধারণ মানুষ যেভাবে বেঁচে আছেন আটকে থাকা অবস্থায় যৌন ওয়েব সাইটে জিউন গত পাঁচ বছর ধরে মিরাকে এবং আট বছরআটকে থাকা অবস্থায় যৌন ওয়েব সাইটে মিরাধরে জিউনকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে বন্দী করে ওয়েবক্যামের সামনে যৌনকর্মী হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। অনেক সময় ওয়েবক্যামের সামনে তাদের সরাসরি যৌনকর্ম অংশ নিতে বাধ্য করা হতো। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করা বেআইনি। এখনো দেশ ছাড়তে গিয়ে অনেকে জীবন সংশয়েও পড়েন। দক্ষিণ কোরিয়ায় গেলে নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া যায়। কিন্তু উত্তর আর দক্ষিণ কোরিয়ার মাঝের ভূখণ্ডটি সামরিক এলাকা এবং অসংখ্য মাইনে ভরা। ফলে কারো পক্ষে সেখান থেকে পালানো প্রায় অসম্ভব। ফলে দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক অনেক উত্তর কোরিয়ান বরং উত্তরের দিকে যায় এবং সেখান থেকে চীনের সীমান্ত অতিক্রম করে। কিন্তু উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা লোকজনকে অবৈধ অভিবাসী বলে চীনে মনে করা হয় এবং ধরতে পারলে আবার ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। এভাবে দেশে ফিরে গেলে এই দেশত্যাগীদের 'পিতৃভূমির প্রতি বিদ্রোহের' অভিযোগে নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাগারে ঠাই হয়। ১৯৯০ সালে উত্তর কোরিয়ার চরম দুর্ভিক্ষের সময় অনেক কোরিয়ান তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন, যাকে বলা হয় আরডুয়োস মার্চ, যখন অন্তত ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে কিম জং-আন ক্ষমতায় আসার পর থেকে উত্তর কোরিয়া থেকে দেশত্যাগী মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ আর দালালদের চাহিদা বেড়ে যাওয়াকে এর কারণ হিসাবে মনে করা হয়। আটকে থাকা অবস্থায় যৌন ওয়েব সাইটে মিরা মিরা যখন দেশ ত্যাগ করেন, তখন তার বয়স ২২ বছর। দুর্ভিক্ষের শেষের দিকে তার জন্ম, যারা উত্তর কোরিয়ার নতুন প্রজন্ম হিসাবে বেড়ে উঠেছে। যারা আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেটের বদৌলতে ডিভিডি, কসমেটিকস, কাপড়চোপড় আর পাইরেটেডে বিদেশী চলচ্চিত্র দেখতে পারে। বহির্বিশ্বের এসব জিনিস তাদের দেশ ত্যাগ করতে আগ্রহী করে তোলে। পাইরেডেট যেসব চলচ্চিত্র তারা দেখতে পায়, সেখানে বহির্বিশ্বের একটি খণ্ডিত চিত্র তাদের চোখে ধরা পড়ে, যা তাদের দেশ ত্যাগ করতে উৎসাহ যোগায়। ফলে যারা উত্তর কোরিয়া ত্যাগ করে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন, মিরা তাদেরই একজন। ''আমি চীনা চলচ্চিত্রগুলো বুদ হয়ে গিয়েছিলাম এবং ভাবতে শুরু করেছিলাম যে, চীনের সব মানুষই হয়তো এরকম। আমি একজন চীনা যুবককে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম এবং উত্তর কোরিয়াতে এরকম একজনকে অনেকদিন ধরে খুঁজেছি।'' বলছেন মিরা। তারা পিতা, সাবেক সৈনিক এবং পার্টির একজন সদস্য ছিলেন খুবই কড়া একজন ব্যক্তি, যিনি পরিবারকে শক্ত হাতে পরিচালনা করতেন। কখনো কখনো তিনি মিরাকে মারধরও করতেন। যৌন ওয়েবসাইটটির একটি স্ক্রিনশট একজন চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন মিরা, কিন্তু তার পিতা তাতে বাধা দেন। ফলে সে আরো বেশি হতাশ হয়ে পড়ে এবং চীনে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ''আমার বাবা ছিলেন পার্টির একজন সদস্য এবং এটা ছিল দম বন্ধ করা একটি ব্যাপার। তিনি আমাদের বিদেশী চলচ্চিত্র দেখতে দিতেন না, আমাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হতো এবং ঘুমাতে যেতে হতো। আমার নিজস্ব কোন জীবন ছিল না।'' অনেক বছর ধরে মিরা একজন দালালকে খোঁজেন যিনি তাদের টুমেন নদী পার হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করতে সহায়তা করবেন। কিন্তু সরকারের সঙ্গে তার পরিবারের সম্পর্ক চোরাকারবারিদের নার্ভাস করে তোলে যে, মিরা হয়তো তাদের সম্পর্কে সরকারকে জানিয়ে দেবে। চার বছর ধরে চেষ্টার পরে অবশেষে তিনি এমন একজনে খুঁজে পেলেন, যিনি তাকে সীমান্ত পার হতে সহায়তা করবেন। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, পাশেই চীনের অবস্থান অন্য অনেক দেশত্যাগীর মতো পাচারকারীদের দেয়ার জন্য মিরারও পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। সুতরাং সে 'বিক্রি' হতে রাজি হয়, যার ফলে কাজ করে সে তার দেনা শোধ করবে। মিরা ভেবেছিল, তাকে কাজ করতে হবে কোন রেস্তোরায়। কিন্তু সে আসলে প্রতারণার শিকার হয়। মিরা এমন একটি পাচারকারী গ্রুপের শিকারে পরিণত হয়, যারা উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা নারীদের যৌন ব্যবসায় বাধ্য করে থাকে। টুমেন নদী পার হয়ে চীনে প্রবেশের পর মিরাকে সরাসরি ইয়ানজি শহরে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে একজন কোরিয়ান-চীনা ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই ব্যক্তিকে এরপর থেকে সে 'পরিচালক' হিসাবেই চিনবে। ইয়ানবিয়ান অঞ্চলের কেন্দ্র স্থলে ইয়ানজি শহরটি অবস্থিত। আদি কোরিয়ান অধ্যুষিত এলাকাটি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র, যেখানে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা অনেকেই লুকিয়ে থাকেন। পলাতকদের বড় একটি অংশই নারী। কিন্তু চীনে তাদের বসবাসের কোন আইনি মর্যাদা না থাকায় এই নারীরা সহজ শিকারে পরিণত হয়। অনেকে গ্রামীণ এলাকাগুলোয় কনে হিসাবে বিক্রি হয়, অনেকে যৌনকর্মী হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হয়, আর মিরার মতো অনেকে ক্যামেরার সামনে যৌনতা সংশ্লিষ্ট কাজ করতে বাধ্য হয়। টুমেন নদীর তীরে কাটাতারের বেড়া, যে নদীটি চীন ও উত্তর কোরিয়া সীমান্তে রয়েছে অ্যাপার্টমেন্টে আসার পর ওই পরিচালক মিরার কাছে অবশেষে ব্যাখ্যা করে বলেন যে, তার চাকরিটা আসলে কী? মিরার জন্য একজন প্রশিক্ষক ঠিক করে দেন তিনি, যে তার সঙ্গে একই রুমে থাকবে। মিরাকে চোখে চোখে রাখবে, শেখাবে এবং অভ্যাস করাবে। ''আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অনেক মানুষের সামনে সব পোশাক খুলে ফেলা, একজন নারী হিসাবে এটা খুবই অপমানজনক ছিল। আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমার দেশের কথা মনে পড়ছে কিনা!'' ওই যৌন ওয়েবসাইট এবং এর বেশিরভাগ গ্রাহকই দক্ষিণ কোরিয়ান। তারা প্রতি মিনিটের জন্য টাকা দিতো, সুতরাং নারীদের উৎসাহ দেয়া হতো তারা যেন যত বেশি সম্ভব গ্রাহকদের ওয়েবসাইটে ধরে রাখে। যখনি মিরা আর এই কাজ করতে চাইতো না, ওই পরিচালক তাকে উত্তর কোরিয়া ফেরত পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিতেন। ''আমার পরিবারের সব সদস্য সরকারে কাজ করে। আমি সেখানে ফিরে গেলে তাদের সবার লজ্জার কারণ হবো। তার চেয়ে আমার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বা মরে যাওয়া ভালো।'' বলছেন মিরা। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পালানোর পর নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন মিরা (বায়ে) ও জিউন (ডানে) একই সময়ে ওই অ্যাপার্টমেন্টে নয়জন পর্যন্ত নারী থাকতেন। যখন মিরার প্রথম রুমমেট আরেকটি মেয়ের সঙ্গে মিলে পালিয়ে যায়, তখন মিরাকে আরেকটি গ্রুপের সঙ্গে থাকতে দেয়া হয়। সেখানেই তার প্রথম জিউনের সঙ্গে পরিচয় হয়। ২০১০ সালে যখন উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসে, তখন জিউনের বয়স মাত্র ১৬ বছর। তার দুই বছর বয়সের সময় তার বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় এবং তাদের পরিবার চরম দারিদ্রের মধ্যে পড়ে। ১১ বছর বয়সে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, যাতে সে কাজ করতে পারে। বাড়তি কিছু অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে অবশেষে তার পরিবার চীনে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মিরার মতো সেও দালালদের খপ্পরে পড়ে। যখন সে ইয়ানজি শহরে আসে, 'পরিচালক' তাকে পুনরায় উত্তর কোরিয়া পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কারণ সে বলে, ''জিউন খুব কালো আর অসুন্দর।'' কিন্তু পরিস্থিতি যাই হোক, জিউন আর সেখানে ফিরে যেতে রাজি ছিল না। ''এটা এমন একটি কাজ, যেটা আমি সবচেয়ে অপছন্দ করি। কিন্তু চীনে আসার জন্য আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছি, সুতরাং আমি খালি হাতে ফেরত যেতে পারি না।'' বলছেন জিউন। ''আমার স্বপ্ন ছিল পৃথিবী ছাড়ার আগে আমার দাদা-দাদীকে খানিকটা ভাত খাওয়ানো, যার জন্য আমি সবকিছুই করতে পারি। আমি পরিবারের কাছে কিছু টাকা পাঠাতে চেয়েছিলাম।'' যৌন ওয়েবসাইটে যখন কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন মিরা জিউন খুব কঠোর পরিশ্রম করে। তার আশা ছিল, পরিচালক হয়তো তার কর্মনিষ্ঠার জন্য তাকে পুরস্কৃত করবে। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবে আর তাদের কাছে টাকা পাঠাতে পারবে, এই প্রতিশ্রুতিকে সে এমনভাবে কাজ করতে থাকে যার ফলে সেখানকার অন্য মেয়েদের চেয়েও সে বেশি অর্থ আনতে শুরু করে। ''আমি চেয়েছিলাম যে পরিচালক আমার গুরুত্ব বুঝতে পারুক এবং আমি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চেয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, ভালো করতে পারলে এই বাড়ি থেকে মুক্তি পাওয়া প্রথম মেয়েটি হবো আমি।'' অনেক সময় রাতে সে মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমিয়েছে, যাতে সে প্রতিদিনকার লক্ষ্য ১৭৭ ডলার আয় করতে পারে। পরিবারের জন্য অর্থ আয় করতে সে অনেকটা মরিয়া হয়ে ছিল। এ সময় জিউন মিরাকেও পরামর্শ দিয়েছিল যেন সে বিদ্রোহী হয়ে না ওঠে এবং পরিচালকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রক্ষা করে। মিরাকে সে পরামর্শ দিয়েছিল,'' প্রথমত, কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। পরিচালক যদি তোমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে না থাকে, তাহলে তার সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করতে পারো।'' জিউন বলছে, ওই বছরগুলোতে অন্য মেয়েদের চেয়ে সে অনেক বেশি অর্থ আয় করেছে। ''আমি ভেবেছিলাম পরিচালক সত্যিকারে আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু যেদিন আমার আয় কমে গেল, তার চেহারার অভিব্যক্তিও বদলে গেলো। সে হয়তো আমাদের বলতে পারতো যে, এত কষ্ট করো না।'' জিউন ওই অ্যাপার্টমেন্টটি পরিচালকের পরিবারের সদস্যরা কড়াভাবে পাহারা দিতো। তারা পিতা-মাতা সামনের কক্ষে ঘুমাতো এবং সামনের দরজাটি সবসময়েই বন্ধ থাকতো। পরিচালক নিজেই মেয়েদের খাবার পৌঁছে দিতো এবং তার ভাই প্রতিদিন সকালে এসে আবর্জনা নিয়ে যেতো। ''এটা ছিল পুরোপুরি একটি কারাগার, বরং তার চেয়েও খারাপ।'' বলছেন জিউন। প্রতি ছয়মাসে একবার বাইরে যাওয়ার সুযোগ পেতো উত্তর কোরিয়ার মেয়েরা। তবে আয় অনেক বেশি হলে মাসে একবার এই সুযোগ মিলতো। এ সময় তারা কেনাকাটা করতো অথবা চুলের পার্লারে যেতো। কিন্তু তখনো তাদের অন্য কারো সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হতো না। ''একজন প্রেমিকের মতো আমাদের পাশাপাশি হাঁটতেন পরিচালক, কারণ তিনি ভয় পেতেন যে, আমরা হয়তো পালিয়ে যাবো।'' বলছেন মিরা। '' আমি আশেপাশে হেটে দেখতে চাইতাম, কিন্তু সেটা কখনো করতে দেয়া হতো না। কারো সঙ্গে আমাদের কথা বলতে দেয়া হতো না, এমনকি পানির একটি বোতল কেনার সময়েও না। নিজেকে আমার বোকা বোকা মনে হতো। '' একজন উত্তর কোরীয় নারীকে অ্যাপার্টমেন্টে 'ব্যবস্থাপক' হিসাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন পরিচালক। যখন পরিচালক থাকতেন না, তার পক্ষে অন্য মেয়েদের ওপর তিনি নজরদারি করতেন। মিরাকে ওই পরিচালক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ভালোভাবে কাজ করলে একজন ভালো মানুষের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়ে দেবেন। জিউনকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তাকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন। উদ্ধারের সময় মিরার সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র যখন জিউন তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে, তখন তাকে বলা হয়, তার যাতায়াতের জন্য ৫৩২০০ ডলার দিতে হবে। পরে তিনি বলেন, তিনি জিউনকে মুক্তি দিতে পারছেন না, কারণ কোন দালালকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওয়েবক্যামের সামনে যৌনতার কাজ করার পর যে অর্থ উপার্জন হয়, তার কোন কিছুই কখনো পাননি মিরা বা জিউন। প্রথমে পরিচালক রাজি হয়েছিল যে, মোট আয়ের ৩০ শতাংশ তাদের দেয়া হবে। যখন তারা চলে যাবে, তখন এই অর্থ তারা পাবে। কিন্তু মিরা এবং জিউন ক্রমেই বুঝতে শুরু করেছিল যে, তারা হয়তো কোনদিনই মুক্তি পাবে না। জিউন বলছেন, ''এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণত আমরা যা ভাবি, আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। কিন্তু আমি একবার অতিরিক্ত ওষুধ খেয়েছিলাম আর আরেকবার জানালা থেকে ঝাপ দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম।'' এর মধ্যেই মিরার পাঁচটি বছর আর জিউনের সাতটি বছর চলে গেছে। মিরা এবং জিউন নিরাপদে চীনের সীমান্ত পার হয়ে গেছেন, সেই বার্তা গ্রহণ করেছন প্যাস্টর চোয়ান কিউইন এরপর তিন বছর ধরে চেনা মিরার ওয়েবক্যামের একজন গ্রাহকের তার প্রতি মায়া হয়। তিনি মিরাকে প্যাস্টর চুয়ান কিওয়ানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন, যিনি গত ২০ বছর ধরে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা মানুষজনকে সহায়তা করছেন। ওই গ্রাহক দূর থেকে মিরার কম্পিউটারে একটি বার্তা পাঠানোর অ্যাপলিকেশন স্থাপন করে দেন, যা দিয়ে মিরা প্যাস্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা মানুষজনের মধ্যে প্যাস্টর চুয়ান কিওয়ান ভালো পরিচিত। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রায়ই তাকে আক্রমণ করে 'অপহরণকারী' বলে বর্ণনা করে। ১৯৯৯ সালে ক্রিশ্চিয়ান দাতব্য প্রতিষ্ঠান ডুরিহানা প্রতিষ্ঠান পর থেকে তিনি প্রায় ১২০০ দেশত্যাগীকে নিরাপত্তায় সহায়তা করেছেন। তিনি প্রতিমাসেই দুই অথবা তিনটি উদ্ধার অভিযানের অনুরোধ পান। তবে মিরা আর জিউনের ঘটনাটি তাকে খুবই আহত করে। প্যাস্টর চুয়ান কিওয়ান বলছেন, ''আমি অনেক মেয়েকে দেখতে পেয়েছি যারা তিনবছর ধরে কারাগারে আছে। কিন্তু এতবছর ধরে এভাবে আটকে রাখার ঘটনা আর আমি দেখিনি। এটা আমার হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছিল।'' তিনি বলছেন, নারীদের পাচারকারী চক্রটি অনেক বেশি সংঘবদ্ধ এবং সীমান্তে পাহারা দেয়া কিছু উত্তর কোরীয় সেনাও এর সাথে জড়িত। প্যাস্টর চোয়ানকে আক্রমণ করে বক্তব্য রাখা হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার টেলিভিশনে চীনের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয়দের ভাষায়, নারীদের পাচারকে ''কোরিয়ান শুকরের ব্যবসা' বলে বর্ণনা করা হয়। পাচার করা নারীদের দাম ১০০ ডলার থেকে শুরু করে হাজার ডলার হতে পারে। যদিও সরকারি পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন, তবে ব্যাপক হারে উত্তর কোরিয়ার নারীদের পাচারের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানব পাচারের ওপর বাৎসরিক প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়াকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট দেশগুলোর একটি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তী কয়েক মাস ধরে মিরা এবং জিউনের সঙ্গে একজন গ্রাহক সেজে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন চোয়ান। তিনি বলছেন, '' সাধারণত আটকে রাখা নারীরা বুঝতে পারে না তারা কোথায় আছে, কারণ এসব অ্যাপার্টমেন্টে হয়তো রাতের বেলা বা চোখ বন্ধ করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। ভাগ্যক্রমে মিরা এবং জিউন জানতো যে তারা ইয়ানজিতে রয়েছে এবং তারা বাইরে একটি হোটেলের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছিল।'' গুগল ম্যাপ থেকে তাদের ঠিকানা বের করে ওই অ্যাপার্টমেন্টটি আগে থেকে ভালো মতো দেখার জন্য একজন স্বেচ্ছাসেবীকে পাঠান চোয়ান। দেশত্যাগী যেকারো জন্যই চীন থেকে বেরিয়ে যাওয়া বিপদজনক হতে পারে। যৌন ওয়েবসাইটে গ্রাহক সেজে জিউনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন প্যাস্টর চোয়ান বেশিরভাগই তৃতীয় একটি দেশে যেতে চান অথবা দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসে। যেখান থেকে তারা বিমানে করে দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে পারবেন এবং আশ্রয় চাইতে পারবেন। তবে কোন পরিচয়পত্র ছাড়া চীনের ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করাটি তাদের জন্য বিপদজনক। ''অতীতে দেশত্যাগী মানুষজন ভুয়া পরিচয়পত্র দিয়ে চলে যেতে পারতো। কিন্তু এখন কর্মকর্তারা এমন যন্ত্র ব্যবহার করেন, যা দিয়ে বোঝা যায় যে, পরিচয়পত্রটি আসল নাকি নকল।'' বলছেন চোয়ান। ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পালানোর পর জিউন এবং মিরা চীনের ভেতর দিয়ে ডুরিহানার স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে দীর্ঘ যাত্রা শুরু করেন। পরিচয়পত্র না থাকার কারণে তারা কোন হোটেলে উঠতে পারেননি। ফলে তাদের ট্রেনে ঘুমানো অথবা রেস্তোরায় জেগে বসে থেকে রাত পার করতে হয়েছে। পাঁচঘণ্টা ধরে একটি পাহাড় বেয়ে ওঠার ছাপ পড়েছে জিউনের হাতে চীনের শেষের দিনে পাঁচ ঘণ্টা ধরে একটি পাহাড় বেয়ে ওঠার পর তারা সীমান্ত অতিক্রম করে প্রতিবেশী একটি দেশে প্রবেশ করে। যে পথ ধরে তারা সেখানে গিয়েছে, তা প্রকাশে বাধা রয়েছে। অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পালানোর ১২ দিন পরে মিরা এবং জিউনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো চোয়ানের দেখা হয়। ''আমি ভেবেছিলাম, আমি তখনি নিরাপদ বোধ করবো যখন আমি দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকত্ব পাবো। কিন্তু প্যাস্টর চোয়ানের সঙ্গে দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি নিরাপদ বোধ করতে শুরু করলাম। আমি মুক্তি পাওয়ার আনন্দে কাঁদতে শুরু করলাম।'' বলছেন জিউন। পরের ২৭ ঘণ্টা ধরে তারা একটি গাড়িতে করে একসঙ্গে কাছের দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। চোয়ান বলছেন, অনেক উত্তর কোরিয়ানের জন্য যাত্রার শেষের অংশটি কঠিন হয়ে যায়, যেহেতু সেটি গাড়িতে করে যেতে হয়, যা অনেকেরই সামর্থ্যের বাইরে। ''দেশত্যাগীরা অনেক সময় গাড়ির ব্যাপারে অসুস্থ হয়ে পড়ে, বমি করেন। এটা নরকের মতো একটি রাস্তা, যা স্বর্গের দিকে নিয়ে যায়।'' বলছেন চোয়ান। কোরিয়ার দূতাবাস দূতাবাসে পৌঁছানোর খানিকক্ষণ আগ মিরা দুর্বলভাবে হাসেন এবং বলেন, তার কান্না আসছে। ''আমার মনে হচ্ছিল, আমি সব দুঃখ দুর্দশা কাটিয়ে উঠলাম। অনেক অনুভূতি আসাযাওয়া করলো। দক্ষিণ কোরিয়া গেলে আমি হয়তো কখনোই আমার পরিবারের সদস্যদের দেখতে পাবো না, সেজন্য আমার অপরাধ বোধও লাগছিল। আমার দেশত্যাগের উদ্দেশ্য এটা ছিল না।'' বলছেন জিউন। প্যাস্টর চোয়ান এবং দুই তরুণী একসঙ্গে দূতাবাসে প্রবেশ করেন। কয়েক সেকেন্ড পর চোয়ান ফিরে যান, তার কাজ শেষ হয়ে গেছে। মিরা এবং জিউনকে সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় দুইজনকে, যাতে তারা নিশ্চিত হতে পারে যে তারা গুপ্তচর নয়। এরপরে তাদের পরবর্তী তিনমাস কাটাতে হবে উত্তর কোরিয়ানদের জন্য নির্ধারিত হানাউইন পুনর্বাসন কেন্দ্রে, যেখানে তারা দক্ষিণ কোরিয়ার জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার প্রশিক্ষণ পাবেন। দেশত্যাগীরা শিখবেন কিভাবে বাজারহাট করতে হয়, কিভাবে স্মার্ট ফোন চালাতে হয়, মুক্তবাজার অর্থনীতি আর চাকরির প্রশিক্ষণ পাবেন। তাদের নিয়মিত কাউন্সেলিং দেয়া হবে। এরপরে তারা দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক হয়ে উঠবেন। ''আমি ইংরেজি অথবা চাইনিজ শিখতে চাই, যাতে আমি একজন ভ্রমণ গাইড হতে পারি'' বলছেন মিরা। ''কফি শপে কফি খেয়ে আর বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে আমি একটি স্বাভাবিক জীবন কাটাতে চাই।'' বলছেন জিউন। ''কেউ একজন আমাকে বলেছিল, একটি বৃষ্টি ঠিকই থামবে, কিন্তু আমার জন্য বর্ষাকাল একদিন ধরে চলেছে যে, আমি সূর্যের কথা ভুলেই গেছি।''
চীনের ইয়ানজি শহরের একটি আবাসিক এলাকার একটি ভবনের তৃতীয় তলার জানালার সঙ্গে বিছানার চাদর বেধে বেধে একটি দড়ির মতো তৈরি করে বেধেছেন দুইজন নারী।