Source
stringclasses
15 values
Headlines
stringlengths
10
177
Category
stringclasses
5 values
Article
stringlengths
337
11.8k
Aspect
stringclasses
4 values
Sentiment
stringclasses
3 values
প্রথম আলো
তুর্কমেনরা তারাবি পড়ে ফজর পর্যন্ত
ইসলাম ধর্ম
তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাত। রমজানকে বরণ করে নিতে তুর্কমেনদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। ‘আল মিসরিল ইয়াওমি’ পত্রিকায় বলা হয়েছে, তাঁদের বড় আয়োজন হলো রমজানের জন্য বিশেষ বাজারসদাই। রমজানের আগে মসজিদ ও বাসাবাড়ি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করা হয়। রমজানে সব আত্মীয়স্বজন একত্র হয়। তুর্কমেনদের ঐতিহ্য পরিবারের সবাই একসঙ্গে রোজা রাখা এবং একসঙ্গে ইফতার করা। তুর্কমেনি নারীরা সাজতে খুব পছন্দ করেন। রমজান আসার আগে নিজেদের বাসা, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদে শোভা বাড়াতে তাঁরা নতুন কার্পেট কেনেন। কারুকাজখচিত কাপড় বুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রমজানের জোহরের নামাজের পরই মসজিদগুলোতে নানা অনুষ্ঠান শুরু হয়। সেখানে কোরআন–হাদিসের মজলিসের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতারও আয়োজন থাকে। প্রতিযোগিতার বিষয় হয় ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তাতে অংশ নেয় তুর্কমেনি শিশু–কিশোরেরা। রমজান এলে পরস্পর দান–সদকারও প্রতিযোগিতা করে। তুর্কমেনিস্তানে ইফতারির টেবিল সেজে ওঠে প্রকার বাহারি সব খাবার দিয়ে। এর মধ্যে আছে দাগরামা সমুচা ও তুর্কমেন পানীয়। সঙ্গে খেজুর ও বিভিন্ন শাকসবজি। ইফতার ও সাহ্‌রিতে উট বা ভেড়ার গোশতের তৈরি বিভিন্ন খাবার থাকে। তাতে নানা মসলার ব্যবহার থাকে। তাদের ইফতারির টেবিলের আবশ্যিক অনুষঙ্গ উটের দুধের চা। শীতপ্রধান দেশ হওয়ায় চায়ের কদর রয়েছে বারো মাস। তুর্কমেনিস্তানে পুরো রমজানে তারাবিহর নামাজ আদায় করা হয়। তুর্কমেনরা এশার নামাজ দেরি করে পড়ে ফজর পর্যন্ত তারাবিহর নামাজ দীর্ঘ করে। এটা তুর্কমেনদের বিশেষ কৃষ্টি। অন্য কোনো দেশে এ রকমটা দেখা যায় না। শবে কদরকে কেন্দ্র করে তুর্কমেনরা বিশেষ ইবাদতের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
অহেতুক ও অবান্তর প্রশ্ন ত্যাগ করাই সদ্গুণ
ইসলাম ধর্ম
প্রশ্নকে বলা হয়ে থাকে অজ্ঞতার চিকিৎসা। প্রশ্নকে বলা হয়ে থাকে জ্ঞান বা ইলমের অর্ধেক। এটা তো তখনই বলা হয়, যখন প্রশ্ন করে কোনো ইলম হাসিল করা উদ্দেশ্য হয় প্রশ্নকারীর। প্রশ্নটি যদি অর্থবোধক ও ইতিবাচক হয় তাহলে আহলে ইলম ও প্রাজ্ঞজনদের উত্তরে জ্ঞানের নতুন সুন্দর ভুবন উন্মোচিত হয় প্রশ্নকারীর সামনে। কিন্তু প্রশ্ন যদি অর্থহীন, অহেতুক কিংবা বিভ্রান্তিকর হয়, তবে কি সে প্রশ্ন কোনো সুফল বয়ে আনে? ফালতু ও বিরক্তিকর প্রশ্ন করা কি সমীচীন? কল্পিত কোনো বিষয় নিয়ে, তাৎপর্য ও উদ্দেশ্যহীন কোনো কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন সব বিবেচনা থেকেই নিরুৎসাহযোগ্য একটি প্রবণতা। এ প্রবণতা পরিত্যাগ করতে পারাই হচ্ছে সফলতা। রাসূলে আকরাম (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী মনীষীগণের বাণী ও আমল থেকে এ বার্তাই পাওয়া যায়। হযরত মুআবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নবী (সা.) বিভ্রান্তিকর ও জটিলতা সৃষ্টিকারী প্রশ্ন করতে নিষেধ করেছেন। হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) প্রমুখ থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম (সা.) কিছু প্রশ্নকে অপছন্দ করেছেন এবং সেগুলোকে মন্দরূপে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এটা কেন, ওটা কীভাবে (এমনতর জিজ্ঞাসা) এবং অধিক প্রশ্ন করাকে অপছন্দনীয় করেছেন। হযরত আমীর ইবনে সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্ক্সা (রা.) তার পিতাকে বলতে শুনেছেন যে, রাসূলে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুসলমানদের ওপর সেই ব্যক্তি সবচেয়ে বড় নিপীড়নকারী যে মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ নয় এমন বিষয়ে প্রশ্ন করার ফলে বিষয়টি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তাউস থেকে বর্ণিত, হযরত উমর ইবনুল খাত্তার (রা.) মিম্বরে অবস্থান করা কালে বলেন, ‘ওইসব ব্যক্তির ব্যাপারে আমি আল্লাহর নামে সতর্ক করছি, যারা ভিত্তিহীন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা অস্তিত্ব আছে এমন সব বিষয়ই সুস্পষ্ট বর্ণনা করেছেন।’ তাউস বর্ণিত হযরত উমর (রা.)-এর আরো একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত উমর বলেন, কোনো মানুষের জন্য বৈধ নয় এমন বিষয়ে প্রশ্ন করা, যা আসলে কিছুই নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা যে বিষয়ের ভিত্তি রয়েছে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেছেন। হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে লোক সকল! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন করো না, যার কোনো ভিত্তি নেই। নিশ্চয়ই হযরত উমর (রা.) ভিত্তিহীন বিষয়ে প্রশ্নকর্তাকে অভিশাপ দিয়েছেন। আওযায়ী বলেন, যখন আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দাকে ইলমের বরকত থেকে মাহরূম করতে ইচ্ছা করেন তখন তার মুখে অহেতুক ও বিভ্রান্তিকর কথা নিক্ষেপ করেন। হযরত হাসান বসরী (রাহ.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মাঝে মন্দ লোক তারা, যারা মন্দ প্রশ্ন করে এবং সেসব প্রশ্ন দ্বারা আল্লাহর বান্দাদের ফিৎনায় ফেলে দেয়। ইয়াহইয়া ইবনে আইয়ুব বলেন, আমার কাছে এ তথ্য পৌঁছেছে যে, প্রাজ্ঞজনেরা বলতেন, যখন আল্লাহ ইচ্ছা করেন তাঁর বান্দাকে ভালো কিছু শেখাবেন না তখন তাকে বিভ্রান্তিকর কথাবার্তায় নিমগ্ন করে দেন। অহেতুক ও অবান্তর প্রশ্নে কোনো উপকার নেই। কিন্তু এ ধরনের প্রশ্নের কোনো সীমানাও নেই। দ্বীনী ইলমের পোশাক পরিয়েই এসব প্রশ্ন নিয়ে এক শ্রেণির মানুষকে ব্যাকুল হয়ে যেতে দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে অবান্তর, অহেতুক ও বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন। অধিকাংশ সময়ই মেধার চাতুর্য ও মনের বিলাস প্রবণতা থেকে এ ধরনের প্রশ্নের উদ্ভব হয়। প্রশ্নকারীর নিজের কোনো ফায়দা যেমন এসবে জড়িত নেই তেমনি এসবের উত্তরের সঙ্গে বিশ্বাসগত, আমলগত কিংবা শরীয়ত প্রবর্তকের পক্ষ থেকে নির্দেশ ও নিষেধাজ্ঞাগত কোনো বিধানেরও সম্পর্ক নেই। এ ধরনের প্রশ্ন তো সাধারণভাবে উত্তরযোগ্য নয়ই, তবে তিরস্কার, তাচ্ছিল্য ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ ধরনের প্রশ্ন করা হলে নিঃসন্দেহে তা নিষিদ্ধ ও অবৈধ। প্রশ্ন যদি জানার জন্য, বাস্তব ভিত্তিক ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে হয় তাহলে উত্তরদাতা প্রশ্নকারীর চাহিদা পূরণ করতে পেরে তৃপ্তি বোধ করেন, শান্তি পান। সর্বোপরি তার ওপর অর্পিত ইলমী দায়িত্ব সম্পন্ন করতে পারার আনন্দ লাভ করেন। তাই আহলে ইলম ও প্রাজ্ঞজনকে দ্বীনের যে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে সে প্রশ্নের বাস্তবতা, উপকারিতা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতনতা বজায় রাখা সবারই প্রয়োজন।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
শাওয়ালের ইবাদতের অপরিসীম ফজিলত
ইসলাম ধর্ম
মাহে রমজানের শিক্ষাকে বছরজুড়ে ধরে রাখার শিক্ষা দেয় শাওয়ালের ছয় রোজা। শাওয়াল আরবি শব্দ। এর অর্থ উঁচু করা, পূর্ণতা, ফলবতী, পাল্লা ভারী হওয়া, গৌরব করা, বিজয়ী হওয়া, প্রার্থনায় হাত উত্তোলন করা বা ভিক্ষায় হাত প্রসারিত করা। সুতরাং এ মাসের আমলের দ্বারা বান্দার উন্নতি হয়, নেকির পাল্লা ভারী হয়, গৌরব অর্জন ও সাফল্য আসে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং নিজে শাওয়ালের রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। মানব জাতিকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদতের জন্য। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানব জাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ সুরা জারিয়াত, আয়াত ৫৬। রমজানে আমরা এতটুকু শিখতে পেরেছি যে তাকওয়া অর্জন করে, পরিপূর্ণভাবে হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি-হানাহানি পরিত্যাগ করে আমরা মুমিনরা ভাই ভাই হয়ে গেছি। রমজান আমাদের শিখিয়েছে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে হবে এবং আগামী ১১ মাস আল্লাহর আদেশ-নিষেধ যথাযথ মেনে চলতে হবে। এক মাস রোজা রেখেই যেন বান্দা রোজাকে ভুলে না যায় সে জন্য প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখের রোজা, আশুরার রোজা, ৯ জিলহজ আরাফার দিনের রোজাসহ অন্যান্য নফল রোজার বিধান রেখেছে ইসলাম। ফরজ নামাজের কমতিগুলো পোষাতে যেমন নফল নামাজ রয়েছে, তেমনি ফরজ রোজার পরও শাওয়ালের সুন্নত রোজা রয়েছে। এ নফলগুলো ফরজের ত্রুটিগুলোর ক্ষতিপূরণের জন্য। রোজাদার যদি অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে না পারে তাহলে তার রোজার পুণ্য কমে যায়। আর কমতি পুণ্যকে পূর্ণ করতেই শাওয়ালের ছয়টি রোজা। শাওয়ালের ছয়টি রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজার শুকরিয়া আদায় করা হয়। যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহতায়ালা কবুল করেন তখন তাকে অন্য নেক আমলের তৌফিক দেন। আমাদের পূর্বসূরিদের অনেকে রমজানের পর ছয় মাস আল্লাহর দরবারে এ জন্য কাঁদতেন, যেন রমজানে কৃত ইবাদত কবুল হয়। ইবাদত কবুল হওয়ার আলামত হলো আগের অবস্থার উন্নতি হওয়া। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘মৃত্যু পর্যন্ত তোমার রবের ইবাদত কর।’ সুরা আল হিজর, আয়াত ৯৯। রসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও শাওয়ালের রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কিরামদের রাখার নির্দেশ দিতেন। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, এরপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ মুসলিম। রমজানের ৩০ রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোজা যুক্ত হলে মোট রোজার সংখ্যা হয় ৩৬। আর প্রতিটি পুণ্যের জন্য ১০ গুণ পুরস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে কোরআনুল কারিমে। তাহলে ৩৬ রোজার ১০ গুণ হলে ৩৬০ রোজার সমান (এটি পুরস্কারের দিক থেকে)। অর্থাৎ সারা বছর রোজার সমান সওয়াব হবে। হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা।’ নাসায়ি। শাওয়ালের ছয়টি রোজা নারী-পুরুষ সবার জন্যই সুন্নত। মাসের শুরু-শেষ কিংবা মাঝামাঝি- সব সময়ই রাখা যায় এ রোজাগুলো। একনাগাড়ে অথবা মাঝে ফাঁক রেখে পৃথকভাবেও রাখা যায়। শাওয়ালে শুরু করে শাওয়ালে শেষ করলেই হলো। তবে ঈদুল ফিতরের পর শাওয়ালের প্রথম দিকে একসঙ্গে ছয়টি রোজা রাখাই উত্তম। হজরত উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রসুল! আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তিনি বললেন, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখ এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখ, তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে।’ তিরমিজি। শাওয়ালের ছয় রোজা নারী-পুরুষ সবার জন্যই সুন্নত। প্রত্যেক সুস্থ সবল ব্যক্তির উচিত ফজিলতপূর্ণ এ ছয়টি রোজা রেখে পূর্ণ এক বছর রোজা রাখার সমান সওয়াব হাসিল করা।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
যুগান্তর
আজও প্রবহমান তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমানের (রা.) কূপ
ইসলাম ধর্ম
তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমানের (রা.) কূপ এখনও বিদ্যমান। কূপের স্বচ্ছ পানিও প্রবহমান। আরবের একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার বিশেষজ্ঞ টিম মদিনায় অবস্থিত ওই কূপ পরীক্ষা করে দেখেছে হযরত ওসমানের (রা.) কূপের পানি এখনও প্রবহমান। মহানবীর (সা.) সময়ে ওসমান (রা.) এক ইহুদির কাছ থেকে ওই কূপটি ক্রয় করে সর্বসাধারণের জন্য ওয়াকফ করে দেন। সৌদি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ওই কূপের চারপাশে গড়ে ওঠা খেজুরবাগানে আজও কূপের পানি দিয়েই সেচকার্য সমাধা করা হয়। প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকা হযরত ওসমানের (রা.) এই কূপের আসল নাম ‘বিরেরুমা’ বা রুমা কূপ। কূপটির মালিক রুমা নামক এক ব্যক্তির নামানুসারে এটাকে রুমা কূপ বলা হতো। ওসমান (রা.) ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে কূপটি ক্রয় করে রাসূলকে (সা.) বলেন, আমি কূপটি কিনে নিয়েছি এবং আজ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত এই কূপের পানি সমস্ত মুসলমানের জন্য উন্মুক্ত করে দিলাম। আল্লাহও তার এ দানকে চিরদিনের জন্য কবুল করে নিয়েছেন।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
লাইলাতুল মিরাজে নবীজী যা দেখেছিলেন
ইসলাম ধর্ম
নবী করিম (সা.) মিরাজের রাতে জান্নাত ও জাহান্নামসহ বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির অনেক কিছুই প্রত্যক্ষ করেছেন। (আহমাদ : ৫/৩৮৭)। এছাড়াও এদিন আরও অনেক কিছু দেখেছিলেন। যেমন : ১। এ রাতে নবীজী জাহান্নাম পরিদর্শনে গেলে মালেক নামক জাহান্নামের প্রধান রক্ষী নবীজীকে সালাম ও অভ্যর্থনা জানান। (মুসলিম : ১৬৫)। ২। তিনি দাজ্জালকেও দেখেছিলেন। (মুসলিম : ১৬৫)। ৩। এমন এক দল লোকের পাশ দিয়ে নবীজী গমন করেছিলেন, যাদের নখ ছিল তামার। এই নখ দ্বারা তারা স্বীয় মুখম-ল ও বক্ষ আঁচড়াচ্ছিল। এদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জিবরাইল নবীজীকে জানালেন, এরা সেই লোক, যারা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করত। অর্থাৎ একে অপরের গীবত ও মানহানি করত। অন্য এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, বরং দুনিয়াতে গীবতকারী এসব লোকদেরকে মৃত ভক্ষণ করতে দেখেছিলেন নবীজী। (আহমাদ : ৩/২২৪)। ৪। এই মহান রাতে নবীজী এমন কিছু লোককে দেখতে পেয়েছিলেন, যাদের ঠোঁট কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল, ঠোঁট কাটা মাত্র তা পুনরায় জোড়া লেগে পূর্ববৎ হয়ে যেত। এদের স¤পর্কে প্রশ্ন করলে জিবরাইল নবীজীকে উত্তর দিলেন, এরা এমন বিষয়ে বক্তৃতা ও ওয়ায করত, যা তারা নিজেরা আমল করত না। (আহমাদ : ৩/১৮১)। ৫। শবে মেরাজে নবীজী এমন লোকদের দেখলেন, যাদের পেট ছিল এক একটি গৃহের মতো। পেটের ভেতরটা ভর্তি ছিল সর্পে, যা বাইরে থেকেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। প্রশ্ন করা হলে জিবরাইল জানালেন, এরা সুদখোর। (আহমাদ : ২/৩৫৩)। ৬। মহানবী (সা.) জান্নাত দেখার সৌভাগ্যও লাভ করেছিলেন। (তিরমিযী : ৩১৪৭)। ৭। মোতি জমরদের প্রাসাদে ঘেরা একটি নহর দেখতে পেলেন, যার পানি ছিল মেশক-এর চেয়ে বেশি সুগন্ধিময়। এটা কী- নবীজী জানতে চাইলে জিবরাইল (আ.) বললেন, এর নাম ‘কাওসার’, যা আপনার প্রতিপালক একমাত্র আপনার জন্যই সুরক্ষিত করে রেখেছেন। ৮। মহানবী চারটি নদীও দেখেছিলেন। এর মধ্যে দু’টি জাহেরী আর দু’টি বাতেনী। বাতেনী দু’টি জান্নাতে প্রবাহিত আর জাহেরী দু’টি হচ্ছে নীল ও ফোরাত। ৯। নবীজী জান্নাতে প্রবেশ করে একপাশে একটি হালকা আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কিসের আওয়াজ? জিবরাইল বললেন, মুয়াযযিন বেলালের কণ্ঠ। মিরাজ থেকে ফিরে নবীজী সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে বললেন, বেলাল সাফল্য অর্জন করেছে, আমি তার জন্য এমন সব মর্তবা দেখেছি। (আহমাদ : ১/২৫৭)। ১০। বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, নবী করীম (সা.) বায়তুল মাকদিসে যাওয়া বা আসার পথে মক্কার কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলাও দেখতে পেয়েছিলেন। (মুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা : ৩২৩৫৭)। শবে মিরাজের সকাল বেলা। নবীজী হাতীমে কাবায় চিন্তিত মন নিয়ে একান্তে বসে আছেন। মনে মনে ভাবছেন, রাত্রে সংঘটিত মিরাজ ও ইসরার কথা প্রকাশ করলে মানুষ আমাকে মিথ্যুক ঠাওরাবে না তো? ইতোমধ্যে কাছ দিয়ে যাচ্ছিল আবু জাহল। নবীজীর কাছে বসে বিদ্রƒপের ছলে বলল, কোনো ব্যাপার আছে নাকি? নবীজী বললেন, হাঁ। সে বলল কী? তিনি জবাব দিলেন, আজ রাতে আমার মিরাজ হয়েছে। সে বিস্ময়ের সাথে সুধাল, কতদূর পর্যন্ত যাওয়া হয়েছিল? নবীজী বললেন, বায়তুল মাকদিস পর্যন্ত। সে আরও ঠাট্টা করে বলে উঠল, চমৎকার তো! এরপর সকালেই তুমি আমাদের কাছে এসে গেলে? তিনি দৃঢ়তার সাথে বললেন, হাঁ। এরপর আবু জাহল কথা না বাড়িয়ে তাঁকে বলল, আচ্ছা! আমি যদি পুরো কওমকে ডেকে নিয়ে আসি তাহলেও কি তুমি একই কথা বলতে পারবে? নবীজী আরও সুদৃঢ় হয়ে বললেন, অবশ্যই। আবু জাহল লুয়াই ইবনে কা’ব গোত্রের নাম ধরে ডাকতে লাগল। আর তারাও দলে দলে খানায়ে কাবায় সমবেত হতে লাগল। সকলে এসে উপস্থিত হলে আবু জাহল বলল, আমাকে যা কিছু তুমি শুনিয়েছিলে, পারলে তা এদের কাছেও ব্যক্ত করো। নবীজী পুনরায় একই ঘটনা তাদের সম্মুখে ব্যক্ত করলে কিছু লোক বিস্ময়ে হাতের ওপর হাত রাখল। আবার অনেকেই হতবাক হয়ে মাথায় হাত দিল। তারা বলল, তাহলে তুমি কি আমাদের কাছে বায়তুল মাকদিসের অবস্থা বর্ণনা করতে পারবে? উল্লেখ্য, উপস্থিত অনেকেই বায়তুল মাকদিস সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিল। (তিরমিযী : ৩৪৬২)। নবীজী বলেন, আমি তাদের কাছে বায়তুল মাকদিসের অবস্থা বর্ণনা করতে লাগলাম। কিছু বিষয় আমার কাছে অস্পষ্ট মনে হচ্ছিল। মনে মনে আমি খুব চিন্তিত হচ্ছিলাম। আমি তখনও কাবার হাতীমে পুরো কওমের সামনে দ-ায়মান, ইতোমধ্যেই পুরো বায়তুল মাকদিস আমার চোখের সামনে উদ্ভাসিত করা হলো। আকীলের ঘরের উপর উদ্ভাসিত বায়তুল মাকদিস আমি স্বচক্ষে দেখে দেখে সব কিছু নিসংকোচে বলতে লাগলাম। শুনে উপস্থিত লোকেরা মন্তব্য করল, মানচিত্র ও অবস্থা তো সঠিকই বর্ণিত হয়েছে। মক্কার কোনো পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন হযরত আবু বকর (রা.)। মক্কার কাফেররা তাকে এ বিস্ময়ের কথা বলে সুধাল, তবুও কি তুমি তাকে বিশ্বাস করবে? হযরত আবু বকরের হৃদয়ে ঈমানের বহ্নিশিখা জ্বলে উঠল। তিনি এক আকাশ আস্থা নিয়ে সুদৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন, আমি তো এর চেয়েও আরো দূরের অনেক জটিল বিষয়েও তাঁকে বিশ্বাস করি। তাঁর কাছে আসা আসমানী বার্তাসমূহের ওপর রয়েছে আমার অটল বিশ্বাস ও সুদৃঢ় ঈমান। (মুসতাদরাক : ২/৩৬১)।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলাম ধর্ম
সম্প্রতি ট্রান্সজেন্ডার নামে এক অদ্ভুত মতবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্নভাবে এ মতবাদ লালনকারীরা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে এবং ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর মিডিয়াপাড়াও খুব পজিটিভলি জাতির সামনে এদের উপস্থাপন করছে। ট্রান্সজেন্ডার মতবাদ কী : ট্রান্সজেন্ডার বলতে মূলত বোঝায়, যাদের এমন একটি নিজস্ব যৌন পরিচয় বা যৌন অভিব্যক্তি রয়েছে, যা তাদের জন্মগত যৌনতা থেকে ভিন্ন। যার প্রবক্তারা পৃথিবীবাসীকে এমন এক পথের দিকে আহ্বান করছে , যেখানে শরীর নয়, মনই ব্যক্তির আসল লিঙ্গ-পরিচয়। অর্থাৎ একজন পুরুষের যদি মনে হয় সে নারী, তাহলে সে নারী। আবার একজন নারীর যদি মনে হয় সে পুরুষ, তাহলে সে পুরুষ।তাদের দাবী হলো ; তাদের বাহ্যিক লিঙ্গ আর বিকৃত চিন্তাগত লিঙ্গ দুটো ভিন্ন ভিন্ন। এরা আরও দাবি করে ;ডাক্তারের সাহায্যে তাদের মনের রূপকে বাস্তবেই রূপান্তর করা সম্ভব। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে; তথাকথিত লিঙ্গ পরিবর্তন তথা সার্জারির মাধ্যমে কেউ আসলে পুরুষ থেকে নারী বা নারী থেকে পুরুষ হয় না। মূলত এগুলো এক ধরনের কসমেটিক সার্জারি। এ ধরণের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেবল বাহ্যিকভাবে কিছু পরিবর্তন আনা যায়, সৃষ্টিগত লিঙ্গের কোনো পরিবর্তন করা যায় না। ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে ইসলাম যা বলে : আল্লাহ তাআলা আমাদের শ্রেষ্ঠ উম্মত বানিয়েছেন এবং সুন্দর অবয়বে আমাদের সৃষ্টি করেছেন।এ সুন্দর অবয়ব আল্লাহ প্রদত্ত আমানত ও নেয়ামত। এতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা কিংবা শরয়ি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে এ স্বাভাবিক অবয়বে কৃত্রিম উপায়ে বিকৃতি সাধন করা শয়তানি ফাঁদ এবং চরম ঘৃণ্য কাজ। শয়তানের এই জঘন্য ফাঁদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আগেই আমাদের সতর্ক করেছেন। এবং আল্লাহর আদেশ মানার পরিবর্তে যে শয়তানি মিশন বাস্তবায়ন করবে, সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে মর্মে সাবধান করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অভিসম্পাত করেছেন এবং সে (শয়তান) বলেছে, আমি তোমার দাসদের এক নির্দিষ্ট অংশকে (নিজের দলে) গ্রহণ করবই। এবং তাদের পথভ্রষ্ট করবই; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই, আমি তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই এবং তাদের নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। আর যে আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, নিশ্চয় সে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৮-১১৯)। হাদিসেও এ ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করা হয়েছে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটায় তাদের অভিসম্পাত করা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) এমন সব নারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা অঙ্গে উল্কি আঁকে ও অন্যকে দিয়ে উল্কি আঁকায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়ে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে (তিরমিজি : ২৭৮২)। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ পুরুষদের মধ্যে নারীর বেশ ধারণকারীদের এবং নারীদের মধ্যে পুরুষের বেশ ধারণকারিণীদের অভিশাপ দিয়েছেন। ( মিশকাত: হাদীস নং ৪৪২৯)। ট্রান্সজেন্ডার সামাজিকীকরণে হবে ভয়াবহ বিপর্যয় : ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে অনেকের কাছে মনে হতে পারে, এতে সমস্যা কী, সবাই তো আর এক রকম হয় না। ওদের সংখ্যাই বা আর কত। তারা তো আমাদের কোনো সমস্যা করছে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই মতাদর্শ পলিসি বাস্তবায়নের ফলে বিভিন্ন সামাজিক, স্বাস্থ্য এবং আইনগত সমস্যা গত কয়েক বছরে অনুধাবন করা যাচ্ছে। এটি হাজার হাজার বছরের প্রতিষ্ঠিত লিঙ্গভিত্তিক সিস্টেমকে ওলোট-পালট করে দিচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নানা বিতর্ক। এ মতবাদ সমাজের ভারসাম্যতা ও স্বাভাবিক রীতিকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছে। উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক সামাজিক বিশৃঙ্খলা। সাথে সাথে জেনা- ব্যভিচারের রাস্তাও আরও সুগম আরও সহজ হয়ে যাবে। কারণ ট্র্যান্সজেন্ডার মেয়েদের যদি মহিলা বিশেষায়িত স্থান তথা মহিলা হোষ্টেল ইত্যাদিতে প্রবেশের অবাধ অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে তা হবে সুকৌশলে ব্যভিচারের পথকে আরো সহজ করে দেওয়া । কারণ আমরা আগেও উল্লেখ করছি, অস্ত্রোপচার বা অন্য কোনো মাধ্যমে শরীরের কিছু পরিবর্তন আসলেও তাদের সৃষ্টিগত লিঙ্গের কোনো পরিবর্তন হয় না। সুতরাং এভাবে একজন ট্র্যান্সজেন্ডার মেয়েকে(যে কিনা বাস্তবে একজন পুরুষ) মহিলা বিশেষায়িত স্থানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া তার জন্য ধর্ষণের পথ খুলে দেওয়া নয়কি? গবেষণায় দেখা গেছে ট্রান্সজেন্ডার স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ হিসেবে নিজেদের মনে করলেও বা সমাজে উপস্থাপন করলেও তারা অনেক মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণ মানুষের তুলনায় ১৪ গুণ বেশি আত্মহত্যা চিন্তা এবং ২২ গুণ আত্মহত্যা প্রচেষ্টা নেয়। তাছাড়া মাঝে মাদকাসাক্ত, নিজে নিজের ক্ষতি করা (ংবষভ-যধৎস), ডিপ্রেশন, উদ্বিগ্নতা ইত্যাদির প্রবণতাও অনেক বেশি। সামাজিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রাখতে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলো এলজিবিটির বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। এমনকি উগান্ডা পশ্চিমা ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বের ব্যাংকের ঋণ স্থগিত করার মতো অর্থনৈতিক ব্যাপারকেও উপেক্ষা করেছে। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোও ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শে বিরুদ্ধে অবস্থা নিয়েছে। জেন্ডার আইডেন্টিটি ইস্যুতে ইতালির সরকার পরিবর্তন হয়। সম্প্রতি হ্যাংগেরি ট্রান্সজেন্ডাদের লিগালাইজেশন বন্ধ ঘোষণা করেছে। সব ধরনের সমস্যাকে সামনে রেখে রাষ্ট্রের উচিত, এ ধরনের মতবাদ যারা লালন করে, এ মতবাদ বিস্তারে যারা সক্রিয় ভুমিকায় আছে তাদের চিহ্নিত করা, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া। নতুবা অদূর ভবিষ্যতে এমনসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে যার সমাধান বের করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই ঘৃণ্য কাজ থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
নামাজে সুরা ফাতিহা পড়তে হয় কেন
ইসলাম ধর্ম
ফিকহ গবেষকরা এ বিষয়ে একমত যে নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক। হানাফি মাজহাব অনুসারে নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব। অন্য মাজহাবে তা পাঠ করা ফরজ। প্রশ্ন হলো নামাজে সুরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক কেন? উত্তরে ধর্মতাত্ত্বিক আলেমরা বলেন, ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও শিক্ষা, পবিত্র কোরআনের মূলভাষ্য ও নামাজের মূল উদ্দেশ্য সুরা ফাতিহাতে বিবৃত হয়েছে। এ ছাড়া সুরা ফাতিহায় বান্দার কাছে আল্লাহর এবং আল্লাহর কাছে বান্দার প্রত্যাশাগুলো ফুটে উঠেছে। বান্দার সর্বোত্তম প্রার্থনা : সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) সুরা ফাতিহার তাৎপর্য বর্ণনা করে বলেন, ‘সুরা ফাতিহা নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন! সুরাটি কোরআনের অলৌকিকত্বের উত্তম দৃষ্টান্ত। যদি পুরো পৃথিবীর সব মেধা, সকল জাতি-গোষ্ঠীর সৃষ্টিশীল কবি-সাহিত্যিক, মনোবিদ, নৈতিকতার শিক্ষক ও ধর্মীয় গুরু একত্র হয় এবং তারা এমন একটি বক্তব্য তৈরি করতে চায়, যা বিভিন্ন বর্ণ, শ্রেণি ও স্তরের মানুষের প্রার্থনা হিসেবে যথেষ্ট হবে—যদিও তাদের প্রয়োজন ও প্রত্যাশাগুলো পরস্পর থেকে ভিন্ন এবং যে বক্তব্যের মাধ্যমে তারা নিজেদের ইবাদতে মনের ভাব পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারবে, তবে তারা সুরা ফাতিহার চেয়ে উত্তম কোনো ভাষ্য তৈরি করতে পারবে না। কেননা সুরা ফাতিহা সর্বশ্রেণির মানুষের আত্মিক প্রশান্তির জন্য যথেষ্ট।’ (আরকানে আরবাআ, পৃষ্ঠা ৪৭) সুরা ফাতিহাই নামাজ : আল্লাহর স্মরণ, ভাব, ভাষ্য ও প্রার্থনার বিচারে সুরা ফাতিহা নামাজেরই সমার্থক। এ জন্য হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ সুরা ফাতিহাকে ‘নামাজ’ শব্দে ব্যক্ত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, আমার ও আমার বান্দার মধ্যে আমি নামাজকে (সুরা ফাতিহা) অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করে নিয়েছি এবং আমার বান্দার জন্য আছে সে যা চায়। বান্দা যখন বলে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য, আল্লাহ তখন বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। সে যখন বলে, তিনি অতিশয় দয়ালু এবং করুণাময়); আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার প্রশংসা করেছে, গুণগান করেছে। সে যখন বলে, তিনি বিচার দিনের মালিক; তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণ বর্ণনা করেছে। আল্লাহ আরো বলেন, বান্দা তার সব কাজ আমার ওপর সমর্পণ করেছে। সে যখন বলে, আমরা কেবল তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যকার ব্যাপার। আমার বান্দার জন্য আছে সে যা চায়। যখন সে বলে, আমাদের সরল-সঠিক পথে পরিচালনা করুন। যেসব লোকদের আপনি নেয়ামত দান করেছেন, তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি আপনার শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ বলেন, এসবই আমার বান্দার জন্য এবং আমার বান্দার জন্য আছে সে যা চায়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৬৪)
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
কালের কন্ঠ
শরীর নিষ্ক্রিয়, এক আঙুলে লিখলেন পাঁচ বই
ইসলাম ধর্ম
কঠিন বিপদের মধ্যেও প্রবল মানসিক শক্তি নিয়ে টিকে থাকেন অনেকে। শারীরিকভাবে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হলেও বুদ্ধিদীপ্ত কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে তারা স্থান করে নেন অনেক সুস্থ মানুষের ওপর। হাজারো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মেধা ও সৃজনশীল কাজে তারাই সবার অনুপ্রেরণার উৎস। এমনি ধৈর্যশক্তি ও অধ্যবসায়ের বাস্তব দৃষ্টান্ত হলেন নায়েফ বিন আইয়াদ আল-হারবি।তিনি সৌদি আরবের আল-কাসিম প্রদেশের আল-রাস এলাকার বাসিন্দা। দুই দশক আগে দুর্ঘটনায় এ তরুণের পুরো শরীর একদম নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কিন্তু দেহ নিষ্ক্রিয় হলেও তাঁর মেধা ও বুদ্ধিমত্তা খুবই সক্রিয়। দীর্ঘ এ সময় হাতের মাত্র একটি আঙুলের সাহায্যে ল্যাপটপে লিখেছেন পাঁচটি গ্রন্থ।সৌদি সংবাদ মাধ্যম আল-আরাবিয়া সূত্রে জানা যায়, নতুন চিন্তা ও সৃজনশীল ভাবনার জন্য নায়েফ আল-হারবি সবার কাছে সুপ্রিয়। পুরো হাত নিষ্ক্রিয় হওয়ায় তিনি ল্যাপটপের কি-বোর্ড দিয়ে লিখতে পারেন না; বরং স্ক্রিনে আলাদা কি-বোর্ডে হাতের একটি আঙুলের সাহায্যে কাজ করেন তিনি। নিয়মিত কাজ করার পাশাপাশি নিজের আবেগ ও অনুভূতি লিখে প্রকাশ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি স্থানীয় প্রতিবন্ধী সেবা সংস্থা কুদরা অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কেয়ার অব পারসন উইথ ডিসেবেলিটিজের তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন।তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রতিযোগিতার প্রগ্রাম প্রস্তুত করেন। তা ছাড়া ফটোশপ, পাওয়ারপয়েন্ট ও ওয়ার্ড ডিজাইনে তার রয়েছে অসাধারণ দক্ষতা। তার বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও অতিথিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একটি বড় ডিসপ্লে স্ক্রিন রয়েছে। তাঁর লেখা গ্রন্থের মধ্যে ‘মিনাল আমাক ইলাল আফাক’ উল্লেখযোগ্য। সদ্য মারা যাওয়া স্ত্রীকে লিখেছেন ‘আইনা আল-মারদিয়্যাহ’।বাবা ও মায়ের উদ্দেশে লিখেছেন ‘ওয়া জান্না আন্নাহুল ফিরাক’। প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা বিষয়ে লিখেছেন ‘আল-মুসাবাকাত’। এ ছাড়া ‘কিতমানুল মিসক’ গ্রন্থে তিনি নিজের বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে লিখেছেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
দৈনিক খবরপত্র
সাংবাদিক মানিক লাল দত্ত ও তার দুই সন্তানসহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ
ইসলাম ধর্ম
মানব জাতির শ্রেষ্ঠ ধর্ম হলো ইসলাম। ইসলাম ধর্মের মূল শিক্ষা হল, এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ পৃথিবীতে নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূল। ইসলাম” শব্দের অর্থ হচ্ছে আত্মসমর্পণ করা। আর সেই ইসলাম ধর্মে মুখরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেলেন নীলফামারী জলঢাকার কলম সৈনিক সাংবাদিক মানিক লাল দত্ত সহ পুরো পরিবার। এবিষয়ে মানিক লাল দত্তর সাথে কথা বলে জানা যায়। আমার পরিবারে দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। সন্তান সহ আমরা মোট তিনজন পবিত্র ইসলাম ধর্মের আচার অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় বিধি বিধান এবং নিয়ম কানুন ভালো লাগায় ও পবিত্র ইসলাম ধর্মে আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। ৪২ বছর বয়সী মানিক লাল দত্ত ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য বুধবার (১৬ মার্চ) ‘বিজ্ঞ নোটারি পাবলিক কার্যালয়’ নীলফামারী মাধ্যমে ‘এফিডেভিট’ সম্পন্ন করেন। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বিকেলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। জানা গেছে, মানিক লাল দত্ত ধর্মান্তরিত হয়ে নতুন নাম রেখেছেন মো. মাহাদী হাসান (মানিক)। এ ছাড়া তার দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে ১৫ বছর বয়সী অর্ণব দত্ত থেকে নতুন নাম মো. মাহমুদ হাসান (অর্ণব) ও সাত বছর বয়সী সূর্য দত্ত থেকে মোঃ মাহতাব হোসেন (সূর্য)। ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে মানিক ও তার দুই ছেলে অর্ণব ও সূর্য স্বাক্ষর করেছেন। নবমুসলিম মাহাদী হাসান মানিক বলেন, ‘আমার বাবা বাবুল দত্ত ও মা রাধা রানী দত্ত শৈশবে মারা যান এবং স্ত্রী মুন্নী রানী দত্ত প্রায় তিন বছর আগে মারা যান। আমার বেড়ে ওঠা মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে। যার কারণে মুসলিম আচার-আচরণ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান দেখে ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি এবং স্ব-পরিবারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তিনি বলেন, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে স্থানীয় মসজিদের ইমাম আবু রায়হান আমাদের ‘কালেমা’ পড়ান। নবমুসলিম মো. মাহাদী হাসান মানিক রংপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক যুগের আলো পত্রিকার জলঢাকা উপজেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক জলকথার বার্তা সম্পাদক হিসেবে বর্তমানে কাজ করছেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
নয়াদিগন্ত
মুসলিমদের বিরুদ্ধে গো-হত্যার মিথ্যা মামলা, উত্তর প্রদেশে হিন্দু মহাসভা চক্রান্ত
হিন্দু ধর্ম
ভারতের উত্তর প্রদেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গরু হত্যার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার একটি অভিযোগ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভার সদস্যরা কট্টর হিন্দুত্ববাদী শাসকদের অধীনে থাকা উত্তর প্রদেশে মুসলিমদের জীবন আরো অতীষ্ট করতে চাচ্ছে। জানা গেছে, গত মাসে মুসলিম ধর্মাবলম্বী চারজনের বিরুদ্ধে গোহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এনিয়ে পুলিশ তদন্তে নামে। তারপর পুলিশ জানতে পারে, আসলে ওই মুসলিম ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছিল। কারণ তাদের একজনের সাথে এক হিন্দু সংগঠনের নেতার ব্যক্তিগত শত্রুতা ছিল। আর তার জেরেই তাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। এরপরই পুলিশ ওই মিথ্যা অভিযোগকারীদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে। আরো সাতজনকে পুলিশ খুঁজছে। উত্তরপ্রদেশের আগ্রার ঘটনা। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে পুলিশের এই নিরপেক্ষতার ঘটনাকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবে আলোচনা চলছে পুরোদমে। আগ্রার অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিশ আর কে সিং জানিয়েছেন, গত ৬ এপ্রিল আগ্রা পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করেছিল। তার মধ্যে ইমরান কুরেশি ওরফে ঠাকুর আর শানু ওরফে ইল্লি। তারা এভাবে নিরীহ লোকেদের ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল। আরো সাতজনের কথা জানা গেছে, যারা এই ঘটনার সাথে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ। তাদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে। এদিকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভার চারজন সদস্যও এই চক্রান্তের শরিক বলে জানা গিয়েছে। তাদেরও খোঁজ করছে পুলিশ। মহাসভার জাতীয় মুখপাত্র সঞ্জয় জাট এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত। জানিয়েছে পুলিশ। এসিপি জানিয়েছেন, চারজনের বিরুদ্ধে ওদের কোনো ব্যক্তিগত রাগ ছিল। সেকারণেই তারা মিথ্যে অভিযোগ এনেছিল।পরে মহাসভার পক্ষ থেকে থানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয় নাকিমের গ্রেফতারের দাবিতে। তবে পুলিশ তদন্তে নেমে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানতে পারে যে ঘটনার সময় এফআইআরে নাম থাকা কেউ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। পুলিশ জানিয়েছে, চারজন মুসলিম ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
ভোরের কাগজ
এবার 'ধর্মগুরুর' আশ্রম থেকে উদ্ধার হল অপ্রাপ্ত বয়স্ক ৪৮ মেয়ে
হিন্দু ধর্ম
ধর্মগুরু' রাম রহিমের পর এবার বিরেন্দ্র দেব দিক্ষিত নামে আরেক গুরুর সন্ধান মিলেছে ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে। সম্প্রতি তার আশ্রম থেকে কমপক্ষে ৪৮ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা যায়, নগরীর আধ্যাত্নিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আশ্রমে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আশ্রমটি যেন এক দুর্ভেদ্য দুর্গ। কাঁটাতার ও একাধিক তালা দেওয়া ফটক ডিঙিয়ে আমরা তাদেরকে উদ্ধার করেছি। এদিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আশ্রমের সুনাম ক্ষুন্ন করতেই এ ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে। নারী ভক্ত ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর, এ ধরনের কোনো কাজ এখানে করা হয় না। তারা আরও জানিয়েছে, তাদের গুরু হিন্দু দেবতাদের অবতার; তিনি বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে মেল বন্ধনে পৃথিবীতে এসেছেন। প্রসঙ্গত, পরিবারের সদস্যরা উধাও হয়ে যাচ্ছেন- এ বিষয়ে দিল্লি হাই কোর্টে তিনটি পরিববার মামলা দায়ের করলে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। আদালতে ৩২ বয়স্ক একজন নারী জানান, ২০০০ সালে ওই আশ্রমে থাকা অবস্থায় দিক্ষিত কর্তৃক তিনি ধর্ষণের শিকার হন। তিন বছর পর তার পরিবার ছোট বোনটিকেও ওই আশ্রমে দিয়ে দিতে ‘বাধ্য’ হয়। এ ব্যাপারে দিল্লি রাজ্য সরকারের নারী বিষয়ক সংস্থার প্রধান স্বাতী মালিওয়াল বলেন, "আশ্রমে অবৈধ কার্যকলাপ চালানো হয়। ওখানে ঘর ভর্তি ওষুধ পাওয়া গেছে-যার বেশির ভাগের গায়েই কোনো নাম লেখা ছিল না। নারীদেরকে তাদের দেহ দিক্ষিতের কাছে ‘সমর্পণ’ করা বিষয়ক ধর্মীয় বাণী সম্বলিত বইও পাওয়া গেছে।" এছাড়া আদালতে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, আশ্রমে নারীরা পশুর মতো জীবন যাপন করে। এখনও ১৬৮ জন নারী ও ২৫ জন পুরুষ সেখানে বসবাস করছেন। তাদের সকলেই ভগ্ন স্বাস্থ্যের ও মাদকাসক্ত। এদিকে দিক্ষিত সম্পর্কে খুব কম তথ্যই এ পর্যন্ত জানা গেছে। এমনকি এ গুরু এখন কোথায় আছে, তাও জানে না পুলিশ।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
কালের কন্ঠ
মক্কা-মদিনার ঐতিহাসিক স্থাপনা সংস্কার করবে সৌদি আরব
ইসলাম ধর্ম
মক্কা ও মদিনার শতাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা উচ্চমানের করতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আরো সমৃদ্ধ করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর মক্কার হিরা কালচারাল সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান দেশটির হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়াহ।তাওফিক আল-রাবিয়াহ বলেন, ‘দুয়ুফুর রহমান অর্থাৎ আল্লাহর অতিথিদের মক্কা ও মদিনার ভ্রমণকে আরো সমৃদ্ধ ও অবিস্মরণীয় করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের সহযোগিতায় কাজ চলছে।পবিত্র এ দুই শহরের বিশাল ইতিহাস রয়েছে। এ নিয়ে মুসলিমদের অনেক বেশি আগ্রহও রয়েছে। তাই এসব স্থাপনার ইতিহাস সবার কাছে তুলে ধরতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, হেরা গুহাসহ মক্কার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থানগুলো পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।এরই মধ্যে টিকিট বুক করার জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফরমও চালু করা হয়েছে।সৌদি আরবের শতাধিক ঐতিহাসিক ১৩০টি মসজিদ সংস্কারের ঘোষণা দেন সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। গত বছর উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে মক্কা ও মদিনার বিভিন্ন স্থাপনার কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে রয়েছে পবিত্র কুবা মসজিদ।পরিকল্পনা অনুসারে তা ৫০ হাজার বর্গমিটার সম্প্রসারণ করা হবে, যেখানে একসঙ্গে ৬৬ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন। বর্তমানে এর পরিধি মাত্র পাঁচ হাজার ৩৫ বর্গমিটার। তা ছাড়া মদিনায় মহানবী (সা.)-এর জীবনীসংশ্লিষ্ট শতাধিক স্থাপনার সংস্কারকাজও শুরু হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এসব স্থাপনার উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। পাশাপাশি মক্কা অঞ্চলের ঐতিহাসিক পাঁচ মসজিদ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
আলোকিত বাংলাদেশ
নেদারল্যান্ডসে ‘পুড়িও না, পড়’ কর্মসূচিতে কুরআন বিতরণ
ইসলাম ধর্ম
নেদারল্যান্ডসের আর্নহেম শহরে ‘ডোন্ট বার্ন, রিড’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি ডাচ অতি-ডানপন্থী নেতা এডউইন ওয়াগেনসভেল্ডের কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি জ্যান্সপ্লেইন স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় ছয়টি মসজিদের ইমামসহ অন্যান্যরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে পথচারীদের মধ্যে বিনামূল্যে ডাচ ভাষায় অনুদিত কুরআনের কপি এবং ইসলামের ব্যাখ্যামূলক বই ও ব্রোশিয়ার বিতরণ করা হয়। ডাচ দিয়ানেট ফাউন্ডেশনের সাথে সংযুক্ত আর্নহেম তুর্কিয়েম মসজিদ ফাউন্ডেশনের সভাপতি গালিপ আয়দেমির বলেন, ‘তাদের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণকে বোঝানো, কেন ইসলাম ও কুরআন মুসলমানদের জন্য পবিত্র।’ তিনি আর্নহেমের জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সংহতির আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে বলেন, ‘কুরআন ও অন্য পবিত্র গ্রন্থগুলো পুড়িয়ে না ফেলে পড়ুন।’ ইভেন্টে অংশ নিয়ে কুরআনের একটি কপি সংগ্রহ করেছেন জন মেটার্স নামের একজন ডাচ নাগরিক। তিনি শান্তিপূর্ণ এই ইভেন্টের প্রশংসা করেছেন এবং ওয়াগেনসভেল্ডের গত মাসের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত মাসে যে উসকানিমূলক কাজটি করা হলো, এর মাধ্যমে কেবল মানুষে মানুষে শত্রুতাই সৃষ্টি হয়। এটি বোঝার জন্য কাউকে ধার্মিক হতে হবে বলে আমি মনে করি না।’
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
ডলারের দাম বাড়ায় হজের ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি : ধর্মমন্ত্রী
ইসলাম ধর্ম
ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় রিয়ালের মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই সরকারের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজের ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা সজলের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি এ কথা জানান। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম হজে প্রেরণকারী দেশ। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বিগত বছর সমূহের ন্যায় ২০২৪ সালেও যাতে পূর্ণ কোটায় হজযাত্রী হজে যেতে পারে সেজন্য ২০২৩ সালের হজের চেয়ে ৯২ হাজার ৪৫০ টাকা কময়ে ২০২৪ সালে হজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা মূল্যের সাধারন হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ হজে গমন করতে পারে। মন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে মক্কা ও মদিনায় অনেক এলাকায় বাড়ি ও হোটেল ভেঙে ফেলায় বাড়ি ভাড়া ব্যয় এ বছর অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক নানা কারণে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় রিয়ালের মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া মিনায় মিনা আরাফায় তাবু ভাড়াসহ মেয়াল্লেম ফি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সকল কারণে সরকারের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হজের ব্যয় আর কমানো সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, অধিক সুযোগ-সুবিধা আশা করেন এই রকম হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের জন্য বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি মাধ্যমের বিশেষ প্যাকেজের মূল্য ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
বাংলাদেশ প্রতিদিন
জেনেশুনে আমল করাই সর্বোত্তম
ইসলাম ধর্ম
আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন- আমার ভয় এটা নয় যে, তোমরা দরিদ্রতার কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে, বরং আমার ভয় তাদের জন্য, যারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েও নিজেকে গরিব-দরিদ্র মনে করবে। কারণ তার সম্মুখে যখন আরেকজনের অধিক অর্থসম্পদ দেখবে তখন তার অর্থসম্পদকে নেহায়েত অল্প মনে হবে। সম্পদের আরও লোভ তার মনে বাসা বাঁধবে। এ ধরনের মানুষের অর্থলোভ কখনো শেষ হবে না। হাদিস শরিফে এসেছে, যে মাসআলা তুমি জান, যদি সে অনুযায়ী আমল না কর তাহলে মনে রেখ হাশরের ময়দানে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে। এর মধ্যে সর্বশেষ প্রশ্ন হলো- যা তোমার জানা ছিল, সেই মোতাবেক তুমি আমল করেছ কি না? যদি জানা না থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে একটা জবাব দিতে পারবে। কিন্তু জানা থাকা সত্ত্বেও যদি আমল না কর তাহলে এর কী উত্তর দেবে? একবার এক লোক আমাকে বলল যে, হুজুর! না জানলেই ভালো? তাই আপনি আর আমাদের কোনো কিছু জানাবেন না। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, কেয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে তুমি আমার বিধিবিধান জানতে? যদি বলে হ্যাঁ, জানতাম। তাহলে বলা হবে ভিতরে যাও। তুমি ওইদিকে আমার লোক। আর যদি বলে- না, জানি না। তাহলে বলা হবে, যাও। তুমি জান না। এই হলো বিপদ। যদি এমন হতো যে, প্রথম গেটে না জেনে প্রবেশ করা যেত তাহলে কোনো অসুবিধা ছিল না। আগে পরিচয় দিতে হবে। আল্লাহপাক জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা আমাকে চেন? যদি বলে না, তাহলে আল্লাহপাক বলবেন, তোমরা অন্য মানুষ, তোমরা বাইরে চলে যাও। না জানলে উপায় নেই। তাই জেনে আমল করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, আমল করার ক্ষেত্রে যেন চেষ্টায় কোনো ত্রুটি না হয়। তারপরও যদি কোনো ত্রুটি হয়ে যায়, তাহলে এর সমাধান হাদিসে এসেছে। এক সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি বিশুদ্ধভাবে কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করতে চেষ্টা করি, কিন্তু জিহ্বা মোটা হয়ে যাওয়ার কারণে বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে পারি না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি চেষ্টা কর? সে বলল জি, আমি চেষ্টা করি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি উম্মতকে শুনিয়ে দাও যে ব্যক্তি কোরআন শিক্ষার চেষ্টা করে, তার প্রতিটি আমলে ডাবল সওয়াব দান করা হয়। বুঝে আমি কেন শিখব না। তাই আমাকে আমার সাধ্যানুযায়ী শিখতেই হবে, শিখে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। যদি আমি আমল করতে ব্যর্থ হয়ে যাই, তাহলে আমার চেষ্টার কারণে আল্লাহ আমাকে মাফ করে দেবেন। যাই হোক বলছিলাম যে, প্রথমে ইলম শিক্ষা করতে হবে, দ্বিতীয় নম্বরে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। আমার যাবতীয় আমল যেন আমার ইলম মোতাবেক হয়। আমি জানি, আমার নামাজ পড়তে হবে; অবহেলায় যেন নষ্ট না হয়। আমি জানি আমার জবানের হেফাজত করতে হবে; আমার জবান থেকে যেন কারও গিবত বের না হয়। গিবত তথা অন্যের দোষ চর্চা করা মহাপাপ। গালিগালাজ করা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা, মিথ্যা বলা মহাপাপ। এ জাতীয় গুনাহ মাফ করা হয় না, যতক্ষণ না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে গিয়ে মাফ চাওয়া হয়। তাই আমাকে আমার জবানের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। পর্দার হুকুম সম্পর্কে আমার জানা আছে, তাই আমাকে পর্দার হুকুম পালন করতে হবে। সর্বোপরি সব গুনাহ সম্পর্কে আমার জ্ঞান আছে, তাই সব গুনাহ আমাকে বর্জন করতে হবে। আমাকে সব নেক কাজ করতে হবে। সুতরাং যে বিষয়গুলো আমার জানা আছে, সে অনুযায়ী যদি আমি আমল করি এবং নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করি তাহলেই আমার নাজাতের জন্য তা যথেষ্ট হবে। আল্লামা মুহাম্মাদ বিন ফুজাইল বুখারি বলখি (রহ.) বলেছেন, দুর্ভাগা সেই ব্যক্তি, যে জানার পরও আমল করে না। জানে তাহাজ্জুদ পড়লে বিরাট সওয়াব হয়, সূর্য ওঠার পর দুই রাকাত এশরাকের নামাজ পড়লে বিরাট সওয়াব হয়। মানুষের উপকার করলে মহা লাভ হয় ইত্যাদি সবকিছুই জানে, কিন্তু তারপরও আমল করে না, তাহলে তার চেয়ে হতভাগা দুনিয়া ও আখেরাতে আর কেউ নেই। আমল মাকবুল থেকে দুটি শর্ত : শুধু আমল থাকলেই হবে না; আমলের মধ্যে আরও দুটি বিষয় থাকতে হবে। এক. আমলের আত্মা তথা এখলাস থাকতে হবে। অর্থাৎ আমার আমল হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। নামাজ পড়ি আল্লাহর জন্য, দান-খয়রাত করি আল্লাহর জন্য। মোটকথা আমি যা কিছু করি তা কেবল আল্লাহর জন্য। এটাকে বলা হয়- এখলাস। শরীরের জন্য আত্মা যেমন, আমলের জন্য এখলাসও ঠিক তেমন। দুই. আমলটা সুন্নত মোতাবেক হতে হবে। যেভাবে মন চায় সেভাবে আমল করলে হবে না, বরং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে আমল করেছেন সেভাবে আমল করতে হবে। তিনি যেভাবে নামাজ পড়েছেন সেভাবে নামাজ পড়তে হবে। তিনি যেভাবে হজ করেছেন সেভাবে হজ করতে হবে। তাঁর পোশাক যেমন ছিল তেমন পোশাক পরতে হবে। তিনি যেভাবে খানা খেতেন সেভাবে খেতে হবে। তিনি যেভাবে ঘুমাতেন সেভাবে ঘুমাতে হবে। মোটকথা আমার যাবতীয় কাজকর্ম রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত মোতাবেক হতে হবে। এই হলো মোট চারটি বিষয়- এক. ইলম, দুই. আমল। আমলের জন্য আবার দুটি বিষয় প্রয়োজন। এক. এখলাস, দুই. সুন্নতের অনুসরণ। আল্লাহপাক সবাইকে বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন!
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
আল্লাহর যেসব হক আদায় করা মুমিনের কর্তব্য
ইসলাম ধর্ম
‘হক’ শব্দের অর্থ অধিকার, অংশ ও প্রাপ্য। হক দুই প্রকার। ১. হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক ২. হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক। ১. আল্লাহর হক : হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক হলো যা মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার কাছে প্রাপ্য। আর এটি শুধু তাঁর সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন—একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। ২. বান্দার হক : আল্লাহ ছাড়া আল্লাহর অন্য সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত হককে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক বলা হয়। যেমন—মা-বাবার হক, স্বামী-স্ত্রীর হক ইত্যাদি। এখানে আমরা আল্লাহর হক সম্পর্কে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ তাঁর হক সম্পর্কে বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬) মুআজ (রা.) বলেন, উফায়র নামক একটি গাধার পিঠে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পেছনে আরোহী ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে মুআজ! তুমি কি জানো বান্দার ওপর আল্লাহর হক কী এবং আল্লাহর ওপর বান্দার হক কী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন। তখন তিনি বলেন, নিশ্চয়ই বান্দার ওপর আল্লাহর হক হলো বান্দা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। আর আল্লাহর ওপর বান্দার হক হলো তাঁর ইবাদতে কাউকে শরিক না করলে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন না। (বুখারি, হাদিস : ২৮৫৬) উক্ত হাদিসে আল্লাহর দুটি হক প্রমাণিত হয়। ১. একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, ২. শিরক না করা। বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর প্রধান হক হলো বান্দা একমাত্র তাঁর ইবাদত করবে। ইবাদত শব্দের অর্থ আনুগত্য করা, নত হওয়া ও বিনম্র হওয়া। আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকাই ইবাদত। আল্লাহর ইবাদত করা এমন গুরুত্বপূর্ণ হক, যে জন্য আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬) মহান আল্লাহর দ্বিতীয় হক হলো তাঁর ইবাদতে কাউকে শরিক না করা। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার করা। শিরকের মাধ্যমে আল্লাহর নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়। এ কারণেই শিরক জঘন্যতম অপরাধ। আল্লাহর হক সম্পর্কিত আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে উল্লেখ করা হলো— আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা : বান্দার প্রতি আল্লাহর অন্যতম হক হলো তাঁর প্রতি ঈমান আনা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা (পূর্ণরূপে) বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর ওপর, তাঁর রাসুলের ওপর এবং ওই কিতাবের ওপর, যা তিনি নাজিল করেছেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৩৬) ঈমানের ওপর দৃঢ় থাকা : মুমিনের প্রতি আল্লাহর হক হলো ঈমানের ওপরে দৃঢ় থাকা। কোনো অবস্থায় ঈমান ত্যাগ না করা, ঈমান বিধ্বংসী কাজ না করা ইত্যাদি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। অতঃপর তার ওপর দৃঢ় থাকে, তাদের ওপর ফেরেশতামণ্ডলী নাজিল হয় এবং বলে যে, তোমরা ভয় পেয়ো না ও চিন্তান্বিত হয়ো না। আর তোমরা জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেওয়া হয়েছিল।’ (সুরা : হা-মিম-সাজদাহ, আয়াত : ৩০) ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করা : বান্দার কাছে আল্লাহর অন্যতম হক হলো শুধু তাঁরই জন্য ইবাদত করা। সুরা ফাতিহায় প্রতি রাকাতে আমরা বলি, ‘আমরা কেবলমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য চাই।’ (সুরা : ফাতিহা, আয়াত : ৪) আল্লাহকে ভয় করা : আল্লাহ তাআলার হক হলো একমাত্র তাঁকেই ভয় করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা শুধু আমাকেই ভয় করো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৪০) সালাত আদায় করা : ঈমানের পর সালাতের স্থান। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘বলো, আমার সালাত ও আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ, সব কিছু জগৎসমূহের রব আল্লাহর জন্য।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬২) জাকাত প্রদান করা : ইসলামে সালাতের পর জাকাতের স্থান। এটি মহান আল্লাহর অন্যতম হক। সিয়াম পালন করা : সিয়াম পালন করাও আল্লাহর হক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ‘সিয়াম আমার জন্যই, আমিই এর প্রতিদান দেব। সে আমার সন্তোষ অর্জনের জন্যই তার প্রবৃত্তি ও পানাহার ত্যাগ করেছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৪৯২) হজ পালন করা : সম্পদশালী মুসলিমের ওপর আল্লাহর জন্য তাঁর ঘর জিয়ারত করা আল্লাহর অন্যতম হক। আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ ফরজ করা হলো ওই লোকদের ওপর, যাদের এখানে আসার সামর্থ্য আছে। আর যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করে (সে জেনে রাখুক যে) আল্লাহ জগদ্বাসী থেকে অমুখাপেক্ষী।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭) আল্লাহর বিচার মেনে নেওয়া : আল্লাহর বিচার ফয়সালা মেনে নেওয়া তাঁর অন্যতম অধিকার। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আদেশ দানের ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া কারো নেই।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৪০) অবিলম্বে তাওবা করা : প্রত্যেক প্রাণীই মরণশীল। তাই প্রত্যেক মানুষের উচিত অনতিবিলম্বে তাওবা করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো বিশুদ্ধ তাওবা।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৮) শুকরিয়া আদায় করা : মহান আল্লাহ মানুষকে বহু নিয়ামত দিয়েছেন। মানুষ তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না। তাই মানুষের প্রতি আল্লাহর অন্যতম হক হলো আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫২) তাওয়াক্কুল করা : আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা আল্লাহর অন্যতম হক। তিনি বলেন, ‘একান্তভাবে আল্লাহর ওপর ভরসা করো, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২৩) আল্লাহকে স্মরণ করা : আল্লাহকে স্মরণ করা আল্লাহর অন্যতম নির্দেশ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাদের স্মরণ করব।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫২) আল্লাহকে ভালোবাসা : নিরঙ্কুশ ভালোবাসা পাওয়ার একমাত্র অধিকারী হলেন আল্লাহ তাআলা। নবী করিম (সা.) বলেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে—১. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে বেশি প্রিয় হওয়া; ২. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা; ৩. কুফরিতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা। (বুখারি, হাদিস : ১৬) মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর হকগুলো আদায় করার তাওফিক দান করুন।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
প্রথম আলো
রাসুল (সা.)–এর কাছে রহস্যময় অতিথি
ইসলাম ধর্ম
উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, একবার আমরা নবীজি (সা.)–এর মজলিশে ছিলাম। এমন সময় এক লোক মজলিশে এসে হাজির। তার কাপড়-চোপড় ধবধবে সাদা, চুল কালো। দেখে মনে হলো না যে তিনি দূরের কোনো দেশ থেকে এসেছেন। তার মধ্যে সফরের কোনো চিহ্নও দেখা যাচ্ছিল না। কাছাকাছি এলাকার হলে আমরা তাকে চিনে নিতাম; কিন্তু আমাদের কেউই তাকে চিনল না। অবশেষে তিনি নবীজি (সা.)–এর সামনে বসে তাঁর দুই হাঁটু নবীজি (সা.)–র হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন। বললেন, মুহাম্মাদ (সা.) বলুন তো ইসলাম কী? নবীজি (সা.) বললেন, ইসলাম হচ্ছে এই যে তুমি সাক্ষ্য দেবে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল, নামাজ কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে, রমজানের রোজা পালন করবে এবং বায়তুল্লাহতে যাওয়ার সক্ষমতা থাকলে হজ করবে। তিনি বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন। উমর (রা.) বলেছেন, আমরা তাঁর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। কেননা, তিনি (অজ্ঞের মতো) প্রশ্ন করে (বিজ্ঞের মতো) সমর্থন করছেন। তিনি বললেন, আমাকে ইমান সম্পর্কে বলুন। নবীজি (সা.) বললেন, ইমান এই যে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর প্রেরিত নবীগণ ও শেষ দিনের ওপর ইমান রাখতে হবে এবং তাকদির এবং এর ভালো ও মন্দের প্রতিও বিশ্বাস রাখতে হবে। তিনি বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন। নবীজি (সা.) বললেন, ইহসান এই যে তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তাকে দেখছ। যদি তাকে না দেখো তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন বলে অনুভব করবে। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে বলুন। এর কিছু নিদর্শন বলুন। তিনি বললেন, কিয়ামত কখন হবে, তার সঠিক সময় কেবল জানেন আল্লাহ। দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে এবং নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, দরিদ্র, সহায়-সম্বলহীন বকরির রাখালদের বড় দালান-কোঠা নির্মাণের প্রতিযোগিতায় গর্ব-অহংকারে মত্ত দেখতে পাবে। উমর (রা.) বলেছেন, এরপর লোকটি চলে গেল। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর নবীজি (সা.) আমাকে বললেন, হে উমর, তুমি কি জানো এই প্রশ্নকর্তা কে? আমি বললাম, আল্লাহ আর তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। নবীজি (সা.) বললেন, তিনি জিবরাইল (আ.)। তোমাদের কাছে তিনি দীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন। (মুসলিম, হাদিস: ১)
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
প্রথম আলো
আল্লাহর অস্তিত্ব এবং আমাদের চিন্তা করার সামর্থ্য
ইসলাম ধর্ম
এই বিশ্ব এবং এই মহাকাশ, এ সবকিছু কোত্থেকে এল? এর আগেই–বা কী ছিল? মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, প্রথমে ছিলেন আল্লাহ, আর কিছুই ছিল না। না কোনো পানি, আরশ, আকাশ কোনো কিছুই ছিল না। সুনানে তিরিমিজিতে এসেছে, এক সাহাবি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে প্রশ্ন করলেন, ‘আল্লাহ শুরুতে কোথায় ছিলেন?’ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জবাব দিলেন, ‘তিনি সব সময়ই ছিলেন, তাঁর ওপর এবং নিচে কিছুই ছিল না, এমনকি বাতাসও না।’ আমরা যখন আল্লাহকে চিন্তা করি, তখন আমরা আমাদের মানব মস্তিষ্ক দিয়ে ভাবি। যেমন এক হাদিসে আছে, আল্লাহ রাতের শেষ অংশে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নেমে আসেন। অনেকে এটা শুনে ভাবতে পারেন, আল্লাহ হয়তো বাস্তবেই নিচে নেমে আসছেন। এভাবেই আমরা আল্লাহকে মানুষের চিন্তা দিয়ে মাপতে থাকি। আবার অনেক সময় আরাফার ময়দানে দোয়া করার মুহূর্তে প্রশ্ন আসতে পারে, আল্লাহ কি এত মানুষের ভিড়ে আমার কথা শুনতে পাবেন? এগুলো সবই আমাদের মানবিক চিন্তা। এভাবেই আমরা আল্লাহকে মানুষের চিন্তা দিয়ে মাপতে থাকি। এ বিষয়ে ইসলামের বিজ্ঞজনেরা একটি নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন, ‘যখনই তুমি আল্লাহর কথা ভাববে এবং তখন তোমার মনে যা কিছুই আসুক, যেকোনো ছবি কিংবা কোনো অবয়ব, তুমি ধরে নেবে, যা ভাবছ আল্লাহ তার চেয়ে ভিন্ন।’ আল্লাহর আকৃতি নিয়ে চিন্তা করার সামর্থ্য আমাদের মস্তিষ্কের নেই। আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সুন্দর একটি দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, ‘ও আল্লাহ, আপনিই হলেন প্রথম, আপনার আগে কিছু ছিল না। আপনিই সর্বশেষ, আপনার পর আর কিছু নেই। আপনিই প্রকাশ্য, এর চেয়ে প্রকাশ্য আর কিছু নেই। আবার আপনিই লুকায়িত, আপনার চেয়ে গোপন কিছু নেই।’ সুরা হাদিদের আয়াতটিও একই কথা বলছে, ‘তিনি শুরু ও শেষ, তিনিই প্রকাশিত এবং তিনিই লুকায়িত। তিনি সব বিষয়ে জ্ঞান রাখেন।’ বিজ্ঞজনেরা বলেন, আল্লাহ একই সঙ্গে গোপন ও প্রকাশ্য হলেও তিনি কিন্তু তাঁর সৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন নন। যেমন দুনিয়ার রাজা-বাদশারা শাসন করেন ঠিকই, কিন্ত তাঁরা প্রজাদের বিষয়ে কমই অবগত থাকেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন, ‘আকাশ ও পৃথিবীর কোনো কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। তিনি সব বিষয়ে পরিপূর্ণ অবগত।’ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘আল্লাহকে তোমরা তাঁর সেরা নাম তথা ইসমে আজম দিয়ে ডাকো।’ তিনি বলেছেন, এ নামটি সুরা বাকারা, সুরা আল-ইমরান এবং সুরা ত্বহাতে রয়েছে। অনেকে মনে করেন এই নামটি হলো ‘আল হাইইউ ওয়াল কাইয়ুম’ অর্থ—চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। এ নামটি এতটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হিসেবে পণ্ডিতেরা বলেন, এই নাম অনুযায়ী, তিনি সব সময় ছিলেন এবং থাকবেন। ‘কাইয়ুম’ অর্থ—যিনি নিজেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিজেই নিজের সব প্রয়োজন পূরণ করেন। উল্লেখ্য, তিনটি সুরাতেই এই নাম পাওয়া যায়।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
যেসব আমলে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হওয়া যায়
ইসলাম ধর্ম
কিছু আমল এমন আছে, যেগুলোর পুরস্কারস্বরূপ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সদ্যোভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ করে দেন। নিম্নে হাদিসের আলোকে সে রকম কিছু আমল তুলে ধরা হলো— ১. যথাযথভাবে পবিত্র হজ পালন : ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ, যা শুধু সামর্থ্যবান মানুষের ওপর ফরজ। সঠিকভাবে হজ পালন করলে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সদ্যোভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ করে দেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এ ঘরের (বাইতুল্লাহর) হজ আদায় করল, অশ্লীলতায় জড়িত হলো না এবং আল্লাহর অবাধ্যতা করল না, সে মায়ের পেট থেকে সদ্যঃপ্রসূত শিশুর ন্যায় (হজ থেকে) প্রত্যাবর্তন করল। (বুখারি, হাদিস : ১৮২০) ২. রোগশয্যায় ধৈর্যধারণ : সুস্থ-সবল মানুষ থেকে হঠাৎ রোগশয্যায় পড়ে যাওয়া অনেক কষ্টের। যারা সেই কঠিন সময়েও মহান আল্লাহর ওপর আস্থা রাখে, আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকে এবং তাঁর সাহায্য কামনা করে, মহান আল্লাহ তাদের সদ্যোভূমিষ্ঠ শিশুর মতো গুনাহমুক্ত করে দেন। শাদ্দাদ ইবন আওস ও সুনাবিহী (রা.) রোগীকে বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ বলেন, আমি আমার বান্দাদের মধ্যে কোনো মুমিন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করি। রোগগ্রস্ত করা সত্ত্বেও যে আমার শুকরিয়া আদায় করবে, সে রোগশয্যা থেকে সদ্যঃপ্রসূত শিশুর মতো সব গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে উঠবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের বলেন, আমি আমার বান্দাকে রোগ দিয়ে বন্দি করে রেখেছি। তাই তোমরা তার সুস্থ অবস্থায় তার জন্য যা লিখতে তা-ই লিখো। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৭১১৮) ৩. রমজানের ইবাদত : হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাস সম্পর্কে বলেন, এটি এমন একটি মাস, যখন আল্লাহ তোমাদের ওপর তাঁর সাওম ফরজ করেছেন এবং আমি তোমাদের ওপর এর দণ্ডায়মান হওয়া (রাত জেগে ইবাদত করা) সুন্নত করেছি। অতএব, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় এ মাসে সাওম রাখে ও (রাতে ইবাদতে) দণ্ডায়মান হয়, সে তার জন্মদিনের মতো পাপমুক্ত হয়ে যায়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩২৮) ৪. অজু ও নামাজে বিশেষ গুরুত্ব : হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, কাফফারাত দ্বারা মানুষকে তার জন্মলগ্নের মতো নিষ্পাপ করে দেওয়া হয়। ‘কাফফারাত’ অর্থ নামাজের পর মসজিদে বসে থাকা, নামাজের জামাতে উপস্থিতির জন্য হেঁটে যাওয়া এবং কষ্টকর সময়েও সুষ্ঠুভাবে অজু করা। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে লোক এসব কাজ করবে সে কল্যাণের মধ্যে বেঁচে থাকবে, কল্যাণের সঙ্গে মরবে এবং তার জন্মদিনের মতো গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যাবে।...(তিরমিজি, হাদিস ৩২৩৩) ৫. উত্তমরূপে অজু করে নামাজ পড়া : মুসলিম শরিফের দীর্ঘ একটি হাদিসের একাংশে আছে, আমর ইবনে আবাসাহ আস সুলামি (রা.) মদিনায় নবীজি (সা.)-কে কিছু দ্বিনি বিষয়ে প্রশ্ন করেন, তার মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল, হে আল্লাহর নবী! অজু সম্পর্কে আমাকে বলুন। তিনি বলেন, তোমাদের যেকোনো ব্যক্তির কাছে অজুর পানি পেশ করা হলে সে যেন কুলি করে, নাকে পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করে, এতে তার মুখমণ্ডলের ও নাক গহ্বরের সমস্ত পাপ ঝরে যায়। অতঃপর যখন সে আল্লাহর নির্দেশমতো মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন পানির সঙ্গে তার মুখমণ্ডল থেকে, এমনকি দাড়ির আশপাশের সমস্ত পাপ ঝরে যায়। অতঃপর তার দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার আঙুলসমূহ থেকে পানির সঙ্গে গুনাহগুলো ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার পদদ্বয় ধৌত করে তখন তার আঙুলগুলো দিয়ে তার পাপসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যদি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করে, তাঁর যথাযোগ্য মর্যাদা বর্ণনা করে এবং আল্লাহর জন্য নিজের অন্তরকে পৃথক করে নেয়, তাহলে সে তার জন্মদিনের মতো গুনাহমুক্ত হয়ে যায়।... (মুসলিম, হাদিস : ১৮১৫)
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
সৌদি আরবের সঙ্গে নতুন বছরের হজ চুক্তি সই
ইসলাম ধর্ম
২০২৪ সালের জন্য হজ পালনে সৌদি সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। আজ সোমবার সৌদি আরবের জেদ্দায় স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় এ চুক্তি হয়। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার ও সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আব্দুল ফাত্তাহ বিন সুলাইমান মাশাত চুক্তিতে সই করেন। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মঞ্জুরুল হক সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী এ বছরও ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশি হজ পালনের সুযোগ পাবেন। চুক্তির সময় ধর্ম সচিব হজ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয় এবং হজযাত্রীদের সুযোগ বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে এরই মধ্যে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর হজের নিবন্ধন শুরু হয়। প্রথম দফায় ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বেধে দেওয়া হয়েছিল। পরে সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু নিবন্ধনে সাড়া না মেলায় নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
দৈনিক ইনকিলাব
দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে কুরআনের পথনির্দেশ
ইসলাম ধর্ম
বিশ্বমানবতার মুক্তির সনদ ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, যদি কোন নারী স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে পরস্পর কোন মীমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন গোনাহ নাই। মীমাংসা উত্তম। মনের সামনে লোভ বিদ্যমান আছে। যদি তোমরা উত্তম কাজ কর এবং খোদাভীরু হও, তবে, আল্লাহ তোমাদের সব কাজের খবর রাখেন। (সূরা আন-নিসা : ১২৮)। বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে দাম্পত্যজীবন ও পারিবারিক জীবনের সূচনা হয়। ইসলামী শরীয়তে এই সম্পর্ক কায়েম করতে হলে যেমন সুনির্ধারিত কিছু বিধান রয়েছে তেমনি প্রয়োজনে এই সম্পর্ক ছিন্ন করতে হলেও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। কুরআন-হাদীসে সেগুলো অনুসরণ করারও জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের দাম্পত্য জীবনের এমন একটি জটিল দিক সম্পর্কে পথনির্দেশ করেছেন, সুদীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন সময়ের প্রত্যেকটি দম্পতিকেই যার সম্মুখীন হতে হয়। তা হলো স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক মনোমালিন্য ও মন কষাকষি। আর এটি এমন একটি জটিল সমস্যা, যার সুষ্ঠু সমাধান যথাসময়ে না হলে শুধু স্বামী-স্ত্রীর জীবনই দুর্বিসহ হয় না, বরং অনেক ক্ষেত্রে এহেন পারিবারিক মনোমালিন্যই গোত্র ও বংশগত কলহ-বিবাদ তথা হানাহানি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। কুরআনুল কারীম নরনারীর যাবতীয় অনুভূতি ও প্রেরণার প্রতি লক্ষ্য রেখে উভয় শ্রেণীকে এমন এক সার্থক জীবন ব্যবস্হা বাতলে দেয়ার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে, যার ফলে মানুষের পারিবারিক জীবন সুখময় হওয়া অবশ্যম্ভাবী। এর অনুসরণে পারস্পরিক তিক্ততা ও মর্মপীড়া, ভসলবাসা ও প্রশান্তিতে রুপান্তরিত হয়ে যায়। আর যদি অনিবার্য কারণে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হয়, তবে তা করা হবে সম্মানজনক ও সৌজন্যমুলক পন্হায় যেন, তার পেছনে শত্রুতা, বিদ্বেষ বা উৎপীড়নের মনোভাব না থাকে। সূরা-নিসা- এর ১২৮ তম আয়াতটি এমনি সমস্যা সম্পর্কিত, যাতে অনিচ্ছাকৃতভাবে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হয়। নিজ নিজ হিসাবে উভয়ে নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও পারস্পরিক মনের মিল না হওয়ার কারণে উভয়ে নিজ নিজ ন্যায্য অধিকার হতে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করে। যেমন, একজন সুদর্শন সুঠামদেহী স্বামীর স্ত্রী স্বাস্থ্যহীনা, অধিক বয়স্কা অথবা সুশ্রী না হওয়ার কারণে তার প্রতি স্বামীর মন আকৃষ্ট হচ্ছে না। আর এর প্রতিকার করাও স্ত্রীর সাধ্যাতীত। এমতাবস্থায় স্ত্রীকেও দোষারোপ করা যায় না, অন্যদিকে স্বামীকেও নিরপরাধ সাব্যস্ত করা যায়। এহেন পরিস্থিতিতে কুরআনের সাধারণ নীতি- অর্থাৎ, উক্ত স্ত্রীকে বহাল রাখতে চাইলে তার যাবতীয় ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পুরণ করে রাখতে হবে। আর তা যদি সম্ভব না হয়, তবে কল্যাণকর ও সৌজন্যমুলক পন্থায় তাকে বিদায় করবে এমতাবস্থায় স্ত্রীও যদি বিবাহ বিচ্ছেদে সম্মত হয়, তবে ভদ্রতা ও শালীনতার সাথেই বিচ্ছেদ সম্পন্ন হবে। পক্ষান্তরে স্ত্রী যদি তার সন্তানের খাতিরে অথবা নিজের অন্য কোন আশ্রয় না থাকার কারণে, বিবাহ বিচ্ছেদে অসম্মত হয়, তবে তার জন্য সঠিক পন্থা এই যে, নিজের প্রাপ্য মোহর বা খোর-পোষের ন্যায্য দাবী আংশিক বা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে স্বামীকে বিবাহ বন্ধন অটুট রাখার জন্য সম্মত করাবে। দায়দায়িত্ব ও ব্যয় ভার লাঘব হওয়ার কারণে স্বামীও হয়তো এসমস্ত অধিকার থেকে মুক্ত হতে পেরে এপ্রস্তাব অনুমোদন করবে। এভাবে সমঝোতা হয়ে যেতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া-কলহ বা সন্ধি সমঝোতার মধ্যে অহেতুক কোন তৃতীয় ব্যক্তি নাক গলাবে না। বরং তাদের নিজেদেরকে সমঝোতায় উপনীত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। কারণ, তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতির ফলে স্বামী-স্ত্রীর দোষ-ত্রুটি অন্য লোকের গোচরীভূত হয়, যা তাদের উভয়ের জন্যই লজ্জাজনক ও স্বার্থের পরিপন্থী। তদুপরি তৃতীয় পক্ষের কারণে সন্ধি-সমঝোতা দুষ্কর হয়ে পড়াও বিচিত্র নয়। আলোচ্য আয়াতের শেষের অংশে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমরা কল্যাণ সাধন কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন।’ এখানে বুঝানো হয়েছে যে, অনিবার্য করণ বশত: স্বামীর অন্তরে যদি স্ত্রীর প্রতি কোন আকর্ষণ না থাকে এবং তার ন্যায্য অধিকার পুরণ করা অসম্ভব মনে করে তাকে বিদায় করতে চায়, তবে আইনের দৃষ্টিতে স্বামীকে সে অধিকার দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় স্ত্রীর পক্ষ থেকে কিছুটা স্বার্থ পরিত্যাগ করে সমঝোতা করাও জাযেয। কিন্তু এতদসত্তেও স্বামী যদি সংযম ও খোদাভীতির পরিচয় দেয়, স্ত্রীর সাথে সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহার করে, মনের মিল না হওয়া সত্তেও তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ না করে বরং তার যাবতীয় অধিকার ও প্রয়োজন পুরণ করে, তবে তার এই ত্যাগ ও উদারতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ওয়াকিফহাল রয়েছেন। অতএব, তিনি এহেন ধৈর্য, উদারতা, সহনশীলতা ও মহানুভবতার এমন প্রদিদান দেবেন, যা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। এখানে ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন’ বলেই ক্ষান্ত করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিদান কি দেবেন, তা উল্লেখ করা হয়নি। কারণ, এর প্রতিদান হবে কল্পনার ঊর্ধ্বে, ধারণার অতীত। মোটকথা, কুরআনুল কারীম উভয়পক্ষকে একদিকে স্বীয় অভাব-অভিযোগ দুর করা ও ন্যায্য অধিকার লাভ করার আইনতঃ অধিকার দিয়েছে। অপর দিকে ত্যাগ, ধৈর্য, সংযম ও উন্নত চরিত্র আয়ত্ব করার উপদেশ দিয়েছে। এখানে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, বিবাহবিচ্ছেদ হতে যথাসাধ্য বিরত থাকা কর্তব্য। বরং উভয়ের পক্ষেই কিছু কিছু ত্যাগ স্বীকার করে সমঝোতায় আসা বাঞ্ছনীয়।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
আল্লাহপাকের জিকির থেকে গাফেল না হই
ইসলাম ধর্ম
এই দুনিয়াতে আল্লাহপাকের কুদরতের বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। তাঁর প্রশংসা করেও কেউ শেষ করতে পারবে না। তিনি এতই বড়, এতই মহান। আল্লাহপাক স্বয়ং কোরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন : পৃথিবীতে যত গাছ আছে তার সব যদি কলম হয়ে যায়, আর পৃথিবীর সব সাগর-মহাসাগর এবং তার সঙ্গে আরও সাত সমুদ্র যোগ করে তার সবই যদি কালি হয় আর আল্লাহপাকের কথা লেখা হতে থাকে, তাহলে সে কলম ও কালি ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু আল্লাহপাকের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। (সূরা লুকমান : ২৭)। এরপর আল্লাহপাক বলেন : তোমাদের সকলকে সৃষ্টি করা ও পুনর্জীবিত করা (আল্লাহর পক্ষে) একজন মানুষকে (সৃষ্টি করা ও পুনর্জীবিত করা)-এর মতোই। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছু দেখেন। (সূরা লুকমান : ২৭)। এ আয়াতেও আল্লাহপাকের কুদরত ও ক্ষমতার বিবরণ দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর সবাই মিলে চেষ্টা করলেও, সকল সামর্থ্য ব্যয় করলেও একজন মানুষ কেউ সৃষ্টি করতে পারবে না। আল্লাহপাক বলেন, তোমাদের সবাইকে সৃষ্টি করা এবং মৃত্যুর পর আবারও সৃষ্টি করা আমার কাছে একজনকে সৃষ্টি করা ও পুনরায় জীবিত করার মতোই। আল্লাহর কাছে বিষয়টি একেবারেই সহজ। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন কোরআনে কারীমে এভাবে তাঁর কুদরতের বিবরণ দিয়েছেন। মানুষ যেন তাঁর প্রতি ইমান আনে। তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করে। তাঁর হুকুম-আহকাম মেনে চলে। আমাদের দুনিয়ার এ জীবনই তো শেষ নয়। সামনে আমাদের জন্য আখেরাতের অনন্তকালের জীবন অপেক্ষা করছে। আখেরাতের তুলনায় এ দুনিয়ার জীবন কিছুই নয়। আখেরাতের জীবনের শুরু আছে, শেষ নেই। মাটি থেকে নিয়ে আসমান পর্যন্ত সমগ্র পৃথিবী যদি সরিষা দানা দিয়ে পূর্ণ করে ফেলা হয় আর এখান থেকে বছরে একটি করে সরিষা দানা সরানো হয়, তাহলে একদিন এ পৃথিবী ভর্তি সরিষা দানা শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আখেরাতের জীবন কখনো শেষ হবে না। অতএব সে অনন্ত জীবনের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য দুনিয়ার জীবনেই নেক কাজ করে যেতে হবে। যারা নেক কাজ করবে না, আল্লাহর নাফরমানি করে জীবন কাটাবে, তারা মৃত্যুর সময় বড় আফসোস করবে। বলবে, আল্লাহ আমাদেরকে আর কিছুদিন সময় দিন, আমরা পূর্ণ নেককার হয়ে যাব। কোরআনে কারীমে বিষয়টি আল্লাহপাক এভাবে তুলে ধরেছেন : আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে তোমরা (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করতে থাকো, সেদিন আসার পূর্বে যেদিন তোমাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হবে আর সে বলবে, হে আমার রব, আমাকে যদি একটু সুযোগ দিতেন। তাহলে আমি দান-সদকা করব এবং নেককার বান্দা হয়ে যাব। কারও নির্দিষ্ট সময় হয়ে গেলে তাকে আর সুযোগ দেয়া হবে না। আর তোমরা যা কিছু করো আল্লাহপাক তা জানেন। (সূরা মুনাফিকুন : ১০, ১১)। সুতরাং আমাদেরকে হায়াত থাকতে থাকতে আখেরাতের পুঁজি সংগ্রহ করতে হবে। নেক আমল করতে হবে। দুনিয়া যেন আমাদেরকে আল্লাহ থেকে, আখেরাত থেকে গাফেল করে না রাখে। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বান্দাদের সতর্ক করে দিয়ে ইরশাদ করেছেন : হে ঈমানদাররা, তোমাদেরকে যেন তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে না রাখে। এমনটা যারা করবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মুনাফিকুন : ০৯)। দুনিয়া আমাদেরকে আল্লাহর জিকির থেকে গাফেল করে দেয়। সম্পদের পেছনে মানুষ জীবন শেষ করে দেয়। সন্তানদের জন্যও অনেক সময় মানুষ দ্বীন থেকে দূরে সরে যায়। এ বিষয়ে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। কোনোভাবেই যেন সময় নষ্ট না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে কিছু জিকির করতে হবে। আল্লাহপাকের নামের জিকিরের অনেক ফায়েদা। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন : যারা ঈমান আনে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তর শান্তি পায়। (সূরা রা’দ : ২৮)। দিলের শান্তি ও প্রশান্তির মাধ্যম হলো আল্লাহপাকের জিকির। আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে যার কলব প্রশান্ত থাকবে তার মৃত্যুর সময় আল্লাহপাক তাকে সম্বোধন করে বলবেন : হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমার রবের কাছে ফিরে চলো এমতাবস্থায় যে, তুমিও তার প্রতি সন্তুষ্ট আর তিনি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
ভোরের কাগজ
সৌদির শীর্ষ ধর্মপ্রচারক ড. আবদুল আজিজ আল ফাওজানকে গ্রেপ্তার
ইসলাম ধর্ম
সৌদি আরবের শীর্ষ ধর্মপ্রচারক ড. আবদুল আজিজ আল ফাওজানকে গ্রেপ্তার করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। দেশজুড়ে শেখ এবং ধর্মপ্রচারকদের দমন-পীড়নের বিষয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করে এক টুইট প্রকাশ করেন আল ফাওজান। সামাজিক মাধ্যমের কর্মীরা জানিয়েছেন, ওই টুইটকে কেন্দ্র করেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগেও সৌদি কর্তৃপক্ষ আল ফাওজানকে হেনস্তা করেছে। আল ইমাম মোহাম্মদ ইবনে সৌদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল ফাওয়াজ এর আগে এক টুইটে উল্লেখ করেছিলেন যে, তাকে আসন্ন গ্রেপ্তারের জন্য সতর্ক করা হয়েছে। দু'সপ্তাহ আগে তার ওপর ভ্রমণ এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আনা হয়। সম্প্রতি এক টুইট বার্তায় আল ফাওজান বলেন, আমার প্রিয় মানুষেরা। যে যেখানে আছেন, আপনাদের প্রার্থনায় আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবেন। সৌদিতে বহু সংখ্যক আলেমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন বিজ্ঞ ব্যক্তি ও ধর্মপ্রচারককে গ্রেপ্তার করেছে সৌদির নিরাপত্তা বিভাগ।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
প্রথম আলো
যেভাবে নির্মিত হলো মসজিদে নববি
ইসলাম ধর্ম
হিজরতের বছর ৬২২ সালে শুরু হয় মসজিদে নববির নির্মাণকাজ। ৬২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় সাত মাস সময় লাগে এর কাজ শেষ হতে। মদিনায় প্রবেশের পর রাসুল (সা.)-এর উট কাসওয়া যে জায়গাটিতে বসে পড়েছিল, সেখানেই তৈরি করা হয় ঐতিহাসিক মসজিদে নববি। মদিনার দুই এতিম বালক সাহল ও সোহাইলের কাছ থেকে ১০ দিনারের বিনিময়ে জায়গাটি কিনে নেওয়া হয়। টাকা পরিশোধ করেন হজরত আবু বকর (রা.)। জমির ছোট এক অংশে রাসুল (স.)-এর জন্য বাসস্থান এবং বাকি অংশজুড়ে তৈরি করা হয় মসজিদ। হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) হিজরত করে মদিনায় এসে বনি আমর ইবনে আওফ গোত্রের এলাকার উঁচুভূমিতে পৌঁছে চৌদ্দ রাত অবস্থান করলেন। বনি নাজ্জারের লোকজন তাঁকে ঘিরে ছিল। সবার মনে একটাই আকুতি, নবীজি (সা.) যেন তাদের মেহমান হন। আল্লাহর কুদরতি ফায়সালাকারী উট আবু আইয়ুব আনসারি (রা.)–র বাড়িতে এল। সেখানেই নবীজি (সা.) অবস্থান করলেন। সাহাবি আনাস (রা.) বলেছেন, যেখানে নবীজির (সা.) উট থেমেছিল, তার চৌহদ্দি বা সীমানায় ছিল একটি বাগান। বাগানটিতে ছিল খেজুরগাছ, কিছু কবর আর কিছু ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপ। নামাজের সময় হলেই নবীজি (সা.) নামাজ আদায় করতেন। নবীজি (সা.) মসজিদ নির্মাণের ব্যাপারে নির্দেশ পেলে বনি নাজ্জার গোত্রের নেতাদের ডেকে পাঠালেন। তারা এলে তিনি তাদের বললেন, বনি নাজ্জার, তোমাদের এই বাগানটি অর্থের বিনিময়ে আমার কাছে বিক্রি করবে? তারা বলল, না, আল্লাহর শপথ, আমরা অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করব না। তবে আমরা আল্লাহর কাছেই এর প্রতিদানের প্রত্যাশা রাখব। বাগান মালিকদের অনুমতি পেয়ে নবীজি (সা.) নির্দেশ দিলেন, খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলো, কবরগুলো খুঁড়ে ফেলো এবং ধ্বংসাবশেষগুলো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দাও। নামাজের স্থানটুকু পবিত্র হলে ভূপৃষ্ঠের যেকোনো জায়গায় নামাজ পড়তে কোনো বাধা নেই। তারা খেজুরগাছের গুঁড়িগুলো কিবলার দিকে সারি করে রেখে দরজার দু পাশে পাথর স্থাপন করল। আনাস (রা.) বলেন, এসব কাজ করার সময় তারা এক সুরে কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। তাদের সঙ্গে নবীজিও এক স্থানে কবিতা আবৃত্তি করছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণই প্রকৃত কল্যাণ। তুমি আনসার ও মুহাজিরদের সাহায্য করো।’ (মুসলিম, হাদিস: ৫২৪)
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
কালের কন্ঠ
অর্থব্যয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বনে স্বস্তিদায়ক জীবন
ইসলাম ধর্ম
ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ সর্বজনীন জীবনবিধান। মধ্যপন্থা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই ইসলাম কৃপণতাকে যেমন নিরুৎসাহ করে, তেমনি অপচয় ও অপব্যয়েরও নিন্দা করা হয়েছে। বিশেষত সংকটকালে অপচয় আরো বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। তখন অপচয় রোধ করে এবং মধ্যপন্থী হয়ে সংকট মোকাবেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। বর্তমানে সারা বিশ্বেই জ্বালানিসংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের অপচয় রোধ ও তার সংযত ব্যবহারের আহ্বান জানানো হয়েছে, যা অবশ্যই একটি প্রশংসনীয় কাজ। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপচয়ও করে না আবার কার্পণ্যও করে না। বরং উভয়ের মাঝামাঝি অবস্থান করে। ’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৭) ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ থেকে রাষ্ট্র— সব জায়গায় মিতব্যয়ী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খাওয়াদাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ, বিয়েশাদিসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অপব্যয় থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কোরআনে অপব্যয়কারীকে শয়তানের ভাই আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমরা অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬) অপচয়কারী দুনিয়ায় যেমন অপমানিত হবে তেমনি আখিরাতেও লজ্জিত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি তোমার হাত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখো না (অর্থাৎ কৃপণ হয়ো না) এবং তাকে একেবারে খুলেও দিয়ো না (অর্থাৎ অপচয় করো না), তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৯) মহানবী (সা.) জীবনের সর্বক্ষেত্রে অপব্যয় করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা পানাহার করো। দান-সদকা করো। পোশাক পরিধান করো। তবে অহংকার ও অপচয় করে নয়। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৬৯৫) অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, বিয়েশাদি ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে আমরা সীমাহীন অপচয় ও অপব্যয় করি। সাজসজ্জা ও খাবার গ্রহণে অনেক বেশি অপচয় করি। এ জন্য কিয়ামতের দিন কঠিন জবাবদিহি করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর সেদিন তোমাদেরকে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সুরা : তাকাসুর, আয়াত : ৮) সর্বোপরি আল্লাহর কাছে আত্মসংযমের দোয়া করতে হবে। কোরআনে ইরাশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের পাপ ক্ষমা করুন, সব ক্ষেত্রে অপচয় থেকে রক্ষা করুন এবং অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের ওপর আমাদের বিজয় দান করুন। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৭)
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
শেরপুরে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান যুব ঐক্য পরিষদের গণঅনশন
হিন্দু ধর্ম
শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান যুব ঐক্য পরিষদ শেরপুর জেলা শাখার আয়োজনে ৭ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি চলছে। শহরের নয়ানীবাজারস্থ মা ভবতারা মন্দির প্রাঙ্গনে সকাল-সন্ধ্যার এ গণঅনশন কর্মসূচি চলছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চিরতরে বন্ধসহ সরকারি দলের গত নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে এ গণঅনশন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে বলে জেলা শাখার সভাপতি দেবাশিষ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন। এ গণঅনশন কর্মসূচিতে সংগঠনটির জেলা নেতৃবৃন্দ ছাড়াও পাঁচ উপজেলা থেকে আগত নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ সদস্যরা অংশগ্রহণ করছেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
ভোরের কাগজ
পাকিস্তানকে ‘ধর্মবিদ্বেষী রাষ্ট্র’ ঘোষণার দাবি যুক্তরাষ্ট্রে
অন্যান্য
পাকিস্তানকে ‘ধর্মবিদ্বেষী রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি তুলল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট রেক্স টিলারসনের কাছে এই বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন একাধিক সেনেটর। শুধু সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রই নয়, ধর্ম বিদ্বেষের ঘোরতর অভিযোগ থাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে এমন ঘোষণা করার দাবি তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, বব মেনেনডেজ,মার্কো রুবিও, ক্রিস কুনস, টোড ইয়ং, জেফ মার্কলে ও জেমস ল্যাংকফোর্ড নামে ছয় মার্কিন সেনেটর এই চিঠি দিয়েছেন। আগামী ১৩ নভেম্বরের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয়কে। মূলত কোনও দেশ যদি ধর্ম সংক্রান্ত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে, তাহলে ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম অ্যাক্টের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র সেই দেশকে এই ‘ধর্মবিদ্বেষী রাষ্ট্র’ তকমা দিয়ে থাকে। সাধারণত ধর্মের জন্য যদি মানুষের উপর নৃশংস অত্যাচারের ঘটনা ঘটে, তবেই সেই দেশকে এমন তকমা দেওয়া হয়। মার্কিন সেনেটরদের দেওয়া সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের সরকার প্রতিনিয়ত ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে চলেছে। এমনকি ধর্মের জন্য বহু মানুষকে জেলবন্দি করার বা হত্যা করার মত ঘটনাও ঘটছে। ধর্মীয় আইন লঙ্ঘন করার জন্য বর্তমানে ৪০ জনকে ফাঁসির কিংবা যাবজ্জীবনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানে। হিন্দু, ক্রিশ্চানের মত সংখ্যালঘুরা মার খাচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
দৈনিক ইনকিলাব
নওয়াজ আবার লন্ডনে পালিয়ে যেতে পারেন : ইমরান খান
ইসলাম ধর্ম
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-এন) প্রধান নওয়াজ শরিফের নাম নির্বাচন পর্যন্ত বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ তালিকায় (ইসিএল) রাখার পরামর্শ দিয়েছেন, বলেছেন যে, ৮ ফেব্রæয়ারি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর নওয়াজ আবার লন্ডনে পালিয়ে যেতে পারেন। পিটিআই-এর ‘প্ল্যান সি’-এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ৮ ফেব্রæয়ারি ‘ভিন্ন দৃশ্য’ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিনটি বিরোধীদের জন্য হতবাক হবে। ‘প্ল্যান সি’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি জোর দিয়েছিলেন যে এটি প্রকাশ করা যাবে না অন্যথায় তার সমর্থকদের তুলে নেয়া হবে। তিনি ‘সফ্টওয়্যার আপডেট’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন যাদের কর্তৃপক্ষের দ্বারা বাছাই করা হয়েছিল এবং পরে পিটিআইয়ের সাথে তাদের পথ আলাদা করার জন্য সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। ‘ব্যক্তিদের বাছাই করা হচ্ছে, এবং পরে জানা যায় যে তাদের সফ্টওয়্যার আপডেট করা হয়েছে,’ তিনি বলেছিলেন। নির্বাচনে দলটি যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন যে, পিটিআইয়ের পুরো নেতৃত্বকে বেছে নেয়া হয়েছে। এমনকি দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘ব্যাট’ কেড়ে নিয়ে পিটিআই প্রার্থীদের দেয়া হয়েছে অবাঞ্ছিত প্রতীক। ইমরান সুপ্রিম কোর্টকে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারণার সময় পিটিআই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার নথিভুক্তির তদন্ত করার আহŸান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীরা কখন কোথায় নির্বাচনী প্রচারণায় বের হবেন?’ তিনি বলেছিলেন যে, জাতিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দাস থাকবে নাকি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঁচবে। ‘এ যুদ্ধ স্বাধীনতার যুদ্ধ। আমাদের কি সব সময় ক্ষমতাবানদের দাস হয়ে থাকতে হবে? আমি দাসত্ব গ্রহণ করব না,’ তিনি বলেন, ‘নওয়াজ শরীফ নীরব কারণ তিনি দাসত্ব মেনে নিয়েছেন।’ তিনি তার আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে কঠোর জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন না হওয়া পর্যন্ত দেশ এগোবে না। তিনি ‘পিটিআই সদস্যদের গ্রেপ্তারের’ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের মনোযোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং মরিয়ম নওয়াজ এবং আসিফ আলি জারদারির মতো ব্যক্তিদের দ্বারা কথিত অসদাচরণ সম্পর্কে অনুসন্ধান করার জন্য আহŸান জানান। সূত্র : ট্রিবিউন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
কালের কন্ঠ
মদিনার পথে লঙ্কা দ্বীপের প্রতিনিধি
ইসলাম ধর্ম
ভারতবর্ষ ইসলামের ইতিহাসে অতীব গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই উপমহাদেশ কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র গুরুত্ব ও মর্যাদার দাবিদার। সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় প্রথম মানব ও প্রথম নবী আদি পিতা আদম (আ.)-কে হিন্দুস্তানের অন্তর্ভুক্ত একটি দ্বীপাঞ্চলে (সরণ দ্বীপ; বর্তমানে শ্রীলঙ্কা) পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তিনি পবিত্র ভূমি মক্কার দিকে রওনা হয়েছিলেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় প্রথম মানব আদম (আ.)-কে হিন্দুস্তানের মাটিতে পাঠিয়েছিলেন। [মুস্তাদরকে হাকেম, হাদিস : ৩৯৯৪ (সহিহ)] তাফসিরকারক সুদ্দি (রহ.) বর্ণনা করেন, আদম (আ.) সর্বপ্রথম হিন্দুস্তানের মাটিতে অবতরণ করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে হাজরে আসওয়াদ পাথরটিও ছিল। সঙ্গে জান্নাতের কিছু পাতাও ছিল, তা তিনি হিন্দুস্তানের মাটিতে ছিটিয়ে দিলেন, এতে অনেক সুগন্ধি গাছ উৎপন্ন হয়। (আখবারু মক্কা, টীকা : ২৩) বর্ণনাটির সূত্র হাসান। আরবদেশ ও ভারতবর্ষের পারস্পরিক সুসম্পর্ক প্রখ্যাত ইতিহাস গবেষক সাইয়েদ সুলায়মান নদবি (রহ.) লেখেন : ‘ভারত উপমহাদেশ ও আরববিশ্ব এমন দুটি অঞ্চল যাকে এক হিসাবে প্রতিবেশীও বলা যায়। এ দুটির মধ্যে শুধু বাধা হলো ভারত মহাসাগর। দুটি অঞ্চল একই সাগরের দুই বিপরীত স্থলভাগে অবস্থিত। সাগরের বিশাল জলরাশির এক হাত আরবদের পবিত্র ভূমির পাদদেশ স্পর্শ করলে অন্য হাত হিন্দুস্তানকে স্পর্শ করে। নদীতীরবর্তী দেশগুলো স্বভাবত বাণিজ্যিক হয়। এটিই প্রথম সম্পর্ক যা এই দুই জাতিকে একত্র করেছে। হাজার বছর ধরে আরব ব্যবসায়ীরা ভারতের উপকূলে আসত এবং এখান থেকে উৎপাদিত পণ্য মিসর ও সিরিয়া হয়ে ইউরোপে নিয়ে যেত। আবার ইউরোপীয় পণ্যসামগ্রী হিন্দুস্তান, ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং বঙ্গোপসাগর হয়ে জাপান ও চীন নিয়ে আসত। ’ (আরব ও হিন্দ কে তাআল্লুকাত পৃষ্ঠা ৫) এই সূত্র ধরে আদি যুগ থেকেই ভারতবর্ষের মানুষের সঙ্গে আরবদের সম্পর্ক ছিল। পরবর্তী সময়ে দ্বিনে ইসলাম ও মুসলিমদের মাধ্যমে তা আরো ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয়। মদিনার পথে শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি প্রসিদ্ধ পর্যটক ও নাবিক বুজুর্গ ইবনে শাহরিয়ার (মৃত্যু : ৩০০ হি.) স্বীয় গ্রন্থ ‘আজায়েবুল হিন্দ’-এ উল্লেখ করেন : ভারত উপমহাদেশের অন্তর্ভুক্ত দ্বীপ এলাকা সরণদ্বীপ (বা সিলন, যা বর্তমানে শ্রীলঙ্কা নামে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত) অঞ্চলের অধিবাসীরা সাধারণত বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী ছিল। যখন তারা আরবদেশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাব ও দাওয়াতের খবর পেলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে তারা একজন জ্ঞানী সাধু-সন্ন্যাসী প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল, যেন তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দ্বিন ও দাওয়াতের ব্যাপারে প্রত্যক্ষ ও সরাসরি খবর নিতে পারেন। ওই সফরে তাঁর সঙ্গে তাঁর একজন ভৃত্যও ছিল। মদিনার দিকে গমনকারী প্রতিনিধির অথৈ সমুদ্র ও দুর্গম পথ পাড়ি দিতে দীর্ঘ কয়েক বছর সময় লেগে যায়। ইত্যবসরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়ে যায় এবং তারপর আবু বকর (রা.)-এরও ইন্তেকাল হয়ে যায়। ওই প্রতিনিধি মদিনা শরিফে যখন পৌঁছেন, তখন ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর শাসনামল চলছিল। লঙ্কান প্রতিনিধি খলিফা ওমর (রা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দ্বিন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। খলিফা ওমর (রা.) তাঁকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দ্বিন সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিলেন। মদিনার পথে লঙ্কা দ্বীপের প্রতিনিধি অতঃপর লঙ্কান প্রতিনিধি সব খবারখবর নিয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ফিরতি পথে তিনি ‘মাকরান’ তথা বর্তমান পাকিস্তানের অন্তর্গত বেলুচিস্তানের একটি পাহাড়ি এলাকায় এসে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তাঁর সফরসঙ্গী ভৃত্য সরণদ্বীপে এসে পৌঁছে। ওই ভৃত্য এসে সরণদ্বীপবাসীকে সব খবরাখবর বিশেষত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর খলিফা আবু বকর (রা.)-এর ব্যাপারে বিস্তারিত জানায়। আর তাঁরা খলিফা ওমর (রা.)-এর বিনয় ও উত্তম চরিত্র যা দেখেছিল সে ব্যাপারেও জানায় এবং এটিও বলে যে খলিফা ওমর (রা.) বিশাল রাজ্যের শাসনকর্তা হওয়া সত্ত্বেও নিজে তালিযুক্ত জামা পরেন এবং মসজিদে একাকী রাত্রিযাপন করেন। তার এসব বিবরণ শুনে সরণদ্বীপবাসী যারপরনাই মুগ্ধ ও আনন্দিত হন। দীর্ঘদিন ধরে তাদের এই বিমুগ্ধতার প্রভাব থেকে যায়। যার ফলে সরণদ্বীপবাসীর অনেক লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নেয়। এমনকি যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি তারাও মুসলিমদের প্রতি ছিল শ্রদ্ধাশীল। (আজায়েবুল হিন্দ পৃষ্ঠা ১৫৭, খেলাফতে রাশেদা আওর হিন্দুস্তান—কাজি আতহার মোবারকপুরি পৃষ্ঠা ২১৯-২২১-এর বরাতে)
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
শাবানের ধ্বনিতে রমজানের আগমন বার্তা
ইসলাম ধর্ম
ইবাদতের বসন্ত মাস পবিত্র মাহে রমজানের আগমনী বার্তা জানিয়ে উপস্থিত হয়েছে শাবান মাস। বসন্ত আগমনের আগেই যেমন প্রকৃতি নতুন সাজে সজ্জিত হতে থাকে, তেমনি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যেও শাবান মাসে শুরু হয় মাহে রমজানের ক্ষণগণনা। যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে ইবাদত, তারাবি-তাহাজ্জুদের নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, তওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি আমলের ও আমল কবুলের ভরা মৌসুম। কারণ এ মাসে আসমান থেকে বর্ষিত হতে থাকে রহমত, বরকত ও নাজাতের বারিধারা। সব মিলিয়ে শাবান মাস বিশ্বমুসলিমদের মন-মানসে নতুন করে জেগে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে আসে। আরবিতে এ মাসের পূর্ণ নাম হচ্ছে ‘আশ-শাবানুল মুয়াজ্জাম’ অর্থাৎ সুমহান মর্যাদাবান শাবান মাস। এ মাসকে ‘শাবান’ শব্দ দ্বারা নামকরণ প্রসঙ্গে বিখ্যাত হাদিস বিশারদ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘আরবের লোকেরা এ মাসে পানি সংগ্রহের জন্য বসতি ছেড়ে বেরিয়ে যেত, তাই এ মাসকে শাবান শব্দে নামকরণ করা হয়েছে, যাতে রয়েছে বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ। অথবা এ শব্দে নামকরণের এই কারণ হতে পারে যে, রজব মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ হওয়ার দরুন সবাই নিজের এলাকায় অবস্থান করত। যখনই রজব মাস গিয়ে শাবান মাস শুরু হতো সবাই যুদ্ধের জন্য এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ত।’ (ফাতহুল বারি : ৪/২১৩) শাবান মাসে পবিত্র রমজান মাসের আগমনী বার্তা সম্পর্কে হজরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, একবার শাবান মাসের শেষদিন রাসুল (সা.) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ প্রদান করেন। তিনি বললেন, হে মানবম-লী! তোমাদের ওপর এমন একটি মহান ও বরকতপূর্ণ মাস ছায়া বিস্তার করেছে, যাতে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম একটি মহিমান্বিত রজনী রয়েছে। এ মাসে মহান আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য রোজাকে ফরজ এবং রাতে নামাজ আদায় করাকে নফল করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় একটি নফল কাজ করবে, সে ওই ব্যক্তির সমান সওয়াব পাবে, যে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করেছে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে, সে ওই ব্যক্তির সমান সওয়াব পাবে, যে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করেছে। সুতরাং রমজান মাস ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো একমাত্র জান্নাত। এটা পারস্পরিক সহানুভূতির মাস। এটা এমন এক বরকতপূর্ণ মাস, যাতে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। আর এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে শুধু এক চুমুক দুধ অথবা একটি খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করাবে, এটা তার জন্য গুনাহ মাফের মাধ্যম হবে এবং নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। আর তাকে রোজাদার ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব প্রদান করা হবে। এতে রোজাদারের সওয়াব থেকে কোনো অংশ কম করা হবে না। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তির সঙ্গে ইফতার করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে আমার হাউসে কাউসার থেকে পানি পান করিয়ে পরিতৃপ্ত করাবেন। যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না। আর এটা এমন মাস যার প্রথমভাগ রহমত, মধ্যভাগ ক্ষমা এবং শেষভাগে আছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। আর যে ব্যক্তি এ মাসে তার অধীনে চাকর-বাকরের কাজের ভার হালকা করে দেবে, আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তিদান করবেন। (মিশকাত : ১৮৬৮) শাবান মাসের বিশেষ গুরুত্বের কারণে আল্লাহর রাসুল (সা.) এ মাসকে ‘শাহরুর রাসুল’ তথা নিজের মাস বলে অভিহিত করেছেন। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শাবান হলো আমার মাস। যে ব্যক্তি শাবান মাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল সে আমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল। আর যে আমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, কেয়ামতের দিন আমি হব তার অগ্রবর্তী এবং নেকির ভান্ডার। আর রমজান মাস হলো আমার উম্মতের মাস।’ (শুয়াবুল ইমান : ৩৫৩২)। পবিত্র মাহে রমজানের আগের দুই মাস থেকেই তিনি মহান প্রভুর দরবারে মিনতি ভরে দোয়া করতেন—‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রামাজান’, অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের জীবন প্রলম্বিত করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২৩৪৭) এ মাসেই মহান আল্লাহর কাছে বান্দার আমলনামা পেশ করা হয়। বান্দার ভালো-মন্দ কর্মের বিবরণ প্রকাশিত হয়। হজরত উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) একবার নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনাকে শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত বেশি ইবাদত করতে দেখি না। এর প্রকৃত কারণ কী? নবীজি (সা.) উত্তরে বললেন, এটা রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস, যে মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে বান্দার আমলগুলো পেশ করা হয়। অথচ এ মাসে মানুষ উদাসীন হয়ে যায়। কিন্তু আমি চাই আমি রোজা পালনকারী অবস্থায় আমার আমলগুলো মহান আল্লাহর কাছে পেশ করা হোক।’ (নাসায়ি : ২৩৫৭) রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের অনেক ফজিলত এবং বেশ কিছু করণীয়ও রয়েছে। প্রথমত শাবানের চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই দিন গণনায় গুরুত্ব দেওয়া। যেন রমজানের রোজা সঠিক সময় আদায় করা সহজ হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা রমজান ঠিক রাখার জন্য শাবানের চাঁদ গণনা করো।’ (তিরমিজি : ৬৮৭)। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) শাবান মাসের তারিখ এতটাই মনে রাখতেন যতটা অন্য মাসের তারিখ মনে রাখতেন না। শাবানের ২৯ তারিখ চাঁদ দেখা গেলে পরের দিন রমজানের রোজা রাখতেন। আর সেই দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে শাবান ৩০ দিন পূর্ণ করে রমজানের রোজা শুরু করতেন।’ (আবু দাউদ : ২৩২৭) শাবান মাসে যেসব আমল করতে হয় : শাবান মাসের অন্যতম একটি আমল হলো, নফল রোজা রেখে আগত রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, একদা মহানবীকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, কোন রোজার ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের সম্মানার্থে শাবান মাসে কৃত রোজার ফজিলত বেশি। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন দানের ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, রমজান মাসে কৃত দানের ফজিলত বেশি।’ (বায়হাকি : ৮৭৮)। অন্য এক বর্ণনায় আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুলকে (সা.) বছরের অন্য কোনো মাসে শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা রাখতে দেখিনি। শাবান মাসে তিনি প্রায় সারা মাসই রোজা রাখতেন। খুব সামান্য কয়েক দিন বাদ যেত।’ (তিরমিজি : ৭৩৬)। অর্থাৎ রোজা রাখার ক্ষেত্রে শাবানের ২৭ তারিখের পরে না যাওয়া। কেননা, এর পরের দিনগুলো সন্দেহপূর্ণ। হাদিসে এ দিনগুলোতে রোজা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। হজরত কাতাদাহ (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজান মাস ও শাবান মাসের মাঝে এক বা দুদিনের ব্যবধান বজায় রাখো (রোজা রাখা বর্জন করে)।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ৭৩১৬)। শাবান মাসের ফজিলতের আরেকটি কারণ হলো, এ মাসের ১৪ তারিখের বরকতময় রাত। যা মহিমান্বিত শবেবরাত নামে মুসলমানদের মাঝে প্রসিদ্ধ। এ রাতে ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য অর্জন করা যায়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আল্লাহতায়ালা অর্ধশাবানের রাতে তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের ওপর অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ইমান : ৩৮৩৫) এ মাসে সংঘটিত হয়েছে ইসলামের ইতিহাসের আরেক যুগান্তকারী ঘটনা। হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এ মাসেই মুসলমানদের কিবলা পরিবর্তন হয়। আগে মুসলমানদের কেবলা ছিল ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস, এ মাসে তার পরিবর্তে মক্কার কাবা গৃহকে কেবলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ প্রসঙ্গেই অবতীর্ণ হয়—‘বারবার আপনার আকাশের দিকে চেহারা ঘোরানোর বিষয়টি আমি দেখেছি। সুতরাং আপনার কেবলার দিক পরিবর্তন করে দেব, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন। অতএব আপনি মসজিদুল হারামের (কাবা শরিফ) দিকে চেহারা ঘোরান। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, ওই (কাবা) দিকেই মুখ ফেরাও।’ (সুরা বাকারা : ১৪৪) মোটকথা, শাবান মাস রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার মাস। আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার ক্ষমা অর্জনের মাস। তাই বেশি বেশি নেক আমল ও পাপকাজ বর্জনের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে। রমজানে রোজা রেখে সাধারণত ভারী কাজ করা মুশকিল। তাই বড় ধরনের ঝামেলা এখনই চুকিয়ে ফেলতে হবে। সর্বোপরি এ মাসে নামাজ, রোজা, জিকির, তেলাওয়াতসহ বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। যেন মাহেন রমজানের আমল স্বাচ্ছন্দ্য ও গতিশীলতার সঙ্গে হয়। মহান আল্লাহ সবাইকে তওফিক দিন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
কালের কন্ঠ
পরিবার যেসব কারণে গুরুত্বপূর্ণ
ইসলাম ধর্ম
পৃথিবীর আদি পিতা আদম (আ.) ও আদি মাতা হাওয়া (আ.)-কে কেন্দ্র করে মানবজাতির প্রথম পরিবার গড়ে উঠেছিল জান্নাতে। এই পরিবারের সদস্য স্বামী ও স্ত্রীকে উদ্দেশ করে মহান আল্লাহ বলেছিলেন, ‘হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান করো এবং সেখান থেকে যা চাও খুশিমনে খাও। কিন্তু তোমরা দুজন এই গাছটির কাছেও যেয়ো না। তাহলে তোমরা সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩৫) এই প্রথম পরিবার থেকে মানবজাতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো। যিনি তোমাদের একজন মানুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর ওই দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামে তোমরা একে অন্যের কাছে যাচ্ঞা (সাহায্য কামনা) করে থাকো এবং আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে সতর্ক হও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর সদা সতর্ক তত্ত্বাবধায়ক। ’ (সুরা: নিসা, আয়াত : ১) পরিবার একটি সর্বজনীন পদ্ধতি এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না। সারা বিশ্বে পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ভিত্তি হিসেবে গণ্য হয়। পরিবার একজন মানুষের সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ। পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও স্নেহ-মায়া-মমতার বন্ধনে আবদ্ধ একেকটি পরিবার বহু হৃদয়ের সমষ্টি, যেখানে আছে জীবনের প্রবাহ, আছে মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা, মিলেমিশে থাকার প্রবল বাসনা; আছে নিরাপত্তা, সহনশীলতা এবং পরস্পরকে গ্রহণ করার মানসিকতা। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে পারিবারিক বন্ধনের প্রভাব বিস্তৃত। পরিবার মানুষের জন্য যেমন নিরাপদ আশ্রয়স্থল, তেমনি মানসিক প্রশান্তি লাভের স্থান। মানবজীবনে পরিবার তাই এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কিন্তু পরিবার না থাকলে মানুষকে নানা ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। তন্মধ্যে কয়েকটি দিক নিম্নে উল্লেখ করা হলো— নিরাপত্তাহীন হওয়া : পরিবার মানুষের জন্য এক সুন্দর আশ্রয়। পার্থিব জীবনে সংঘটিত বিভিন্ন বিপদাপদ, অসুখ-বিসুখ, ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-যাতনা ইত্যাদির শিকার হয়ে মানুষ অনেক সময় দিশাহারা হয়ে যায়। এ সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। অসুখে সেবা করে, বিপদে সাহায্য করে, দুঃখ-কষ্টে সান্ত্বনা দেয় এবং শোকে সমব্যথী হয়। কিন্তু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো মানুষের জন্য এসব পাওয়ার উপায় থাকে না। ফলে সে হয়ে পড়ে উদভ্রান্ত। তার জীবনের নিরাপত্তা থাকে না। সে কোথাও মরে পড়ে থাকলে তার খোঁজখবর নেওয়ার বা তাকে কাফন-দাফন করার মতো লোকও থাকে না। সহযোগিতা না পাওয়া : অর্থ মানবজীবনের এক আবশ্যিক বিষয়। রক্ত ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, অর্থ ছাড়া তেমনি জীবন চলে না। তাই বিভিন্ন সময়ে মানুষের অর্থের প্রয়োজন হয়। পরিবারের লোকেরাই সেই প্রয়োজন পূরণে এগিয়ে আসে। তা ছাড়া জীবনের সর্বক্ষেত্রে মানুষ কর্মক্ষম থাকে না। জীবনের সূচনাকালে যেমন সে অক্ষম ও পরনির্ভরশীল থাকে, তেমনি জীবনের শেষ বেলায় সে আবার অক্ষম ও পরনির্ভরশীল হয়ে যায়। এ সময়ে পরিবারভুক্ত মানুষ পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য পায়। তার সার্বিক প্রয়োজন পূরণে তারা এগিয়ে আসে। অথচ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো মানুষের সাহায্যে তেমন কেউ এগিয়ে আসে না। বন্ধনহীন হওয়া : একেকটি পরিবার মূলত কতগুলো হৃদয়ের সমষ্টি, যেখানে আছে জীবনের প্রবাহ, মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা, যত্ন-আত্তি, সেবা-পরিচর্যা, নিরাপত্তা, মিলেমিশে থাকার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো মানুষ এসব সুযোগ-সুবিধা পায় না। নৈতিক অবক্ষয় : বর্তমান সমাজের অবক্ষয় ও সামাজিক ব্যাধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে পরিবারকে কেন্দ্র করে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ঘরে ঘরে দাউ দাউ করে জ্বলছে অশান্তির আগুন। পরিবারগুলোর অশান্তির প্রভাব পড়ছে সমাজে। ডিশ, সিডি, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, সাইবার ক্যাফে ইত্যাদির মাধ্যমে পর্নো ছবি দেখা, ব্ল্যাকমেইলিং, ইভ টিজিং বাড়ছে মহামারির মতো। অশালীন পোশাক, রূপচর্চা, ফ্যাশন, অবাধ মেলামেশা, যত্রতত্র আড্ডা, প্রেমালাপ, মাদক, পরকীয়া প্রেম, অবৈধ যৌনাচার ও সন্ত্রাস চলছে সমাজের সর্বত্র। এসব কাজে যে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, তা জোগাড় করতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা, মনোমালিন্য, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি, কিডন্যাপ ও খুন-খারাবি কিছুই বাদ যাচ্ছে না। এর নেতিবাচক পরিণতি হিসেবে পারিবারিক সহিংসতার বিস্তৃতি ঘটছে। সংসারবিরাগী হওয়া : সংসারবিরাগী হওয়া বা বৈরাগ্য জীবন যাপন করার অনুমতি ইসলামে নেই। আল্লাহ বলেন, ‘আর বৈরাগ্যবাদ—তা তারা নিজেরাই নতুনভাবে চালু করেছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। আমি (আল্লাহ) তাদের ওপর এ বিধান অপরিহার্য করিনি। ’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২৭) হাদিসে এসেছে, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ওসমান ইবনে মাজউন (রা.)-কে নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের অনুমতি দেননি। তাকে অনুমতি দিলে আমরা নির্বীর্য হয়ে যেতাম। (বুখারি, হাদিস : ৫০৭৩) উদ্দেশ্যহীন জীবন : পরিবার মানুষকে একটি স্থানে ও একটি লক্ষ্যে চলতে সাহায্য করে। কখনো সে লক্ষ্যচ্যুত হলে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে সঠিক পথে চলতে ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ফিরিয়ে আনতে তৎপর হয়। কিন্তু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন মানুষের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকে না। সে যা ইচ্ছা তা-ই করে, যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে চলে যায়। পারিবারিক বন্ধনহীন এই জীবন যেন হালবিহীন নৌকার মতো। সুতরাং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া কোনো বিবেকবান মানুষের জন্য সমীচীন নয়।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
টঙ্গীর ময়দানেই হবে বিশ্ব ইজতেমা
ইসলাম ধর্ম
রাজধানীর সন্নিকটে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরেই অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। স্থান সংকুলান না হওয়ায় টঙ্গী ময়দানের পাশাপাশি উত্তরা দিয়াবাড়ি বউবাজার এলাকায়ও প্রস্তুত হচ্ছিলো ইজতেমা ময়দান। প্রশাসনিক অনুমতি না পাওয়ায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই দিয়াবাড়ি ময়দানের সকল কার্যক্রম স্থগিত করেন প্রথম পর্বের আয়োজক কমিটি। তাবলিগ জামাতের বিবদমান বিরোধের কারণে এবারও আলাদাভাবে প্রথম পর্বে জোবায়ের অনুসারী দ্বিতীয় পর্বে সাদ পন্থী’রা ইজতেমার আয়োজন করবেন। প্রথম পর্বের আয়োজক কমিটি প্রশাসনিক কোন অনুমতি না নিয়ে উত্তরা দিয়াবাড়ি বউবাজার এলাকায় খুটি গাথা, সামিয়ারা টানানো, অস্থায়ী শেীচাগার, গোসল ও অজুখানা নির্মাণ করে। পরে মৌখিক অনুমতি চাইলে প্রশাসন এতে রাজি নন। দিয়াবাড়ি ময়দানের জিম্মাদার মো: ফরিদ বলেন,মুুরব্বিরা নিষেধ করেছেন, কাজ করতে। আজ সকাল থেকে সকল কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কাকরাইল মসজিদে মুরব্বিদের আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, টঙ্গী তুরাগ নদের তীরেই অনুষ্ঠিত হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিয়াবাড়ী এলাকায় একটা মঞ্চ করবেন না বলেছিলেন, কিন্তু আপনারা মঞ্চ করে ফেলেছেন। এটা অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমরা চাই, আপনারা ভবিষ্যতে যৌথভাবে কাজ করবেন। জোবায়ের ও সাদ পন্থীদের মিলেমিশে ইজতেমা করার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বিশ্ব তাবলীগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন এর ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমাকে সামনে রেখে তুরাগ নদের তীরবর্তী ১৬০ একর জমি বিস্তৃত ময়দানে এগিয়ে চলছে বিশ্ব ইজমেতার প্রস্তুতি। বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা জেলাওয়ারী খিত্তায় অবস্থান নিবেন। ২ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৪ফেব্রুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব-ইজতেমার প্রথম পর্ব। এরপর ৪ দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে। দ্বিতীয় পর্ব ১১ই ফেব্রুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উভয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Neutral
দৈনিক ইনকিলাব
সালাম ইসলাম ধর্মের ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের প্রতীক
ইসলাম ধর্ম
সালামের প্রচলন কীভাবে ঘটানো যায় তার একটি রূপরেখাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন : তোমাদের কেউ যখন তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তখন যেন সে সালাম দেয়। এরপর কোনো গাছ কিংবা কোনো পাথর বা দেয়ালের আড়াল থেকে এসে যখন আবার তার সঙ্গে দেখা হয় তখনো যেন তাকে সালাম দেয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫২০০)। শুধু পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতিই নয়, সালামের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয় আমাদের আমলনামাও। হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা.-এর বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে এসে এক ব্যক্তি ‘আস্সালামু আলাইকুম’ বলে সালাম দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন। লোকটি তখন মজলিসে বসে পড়ল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দশ (অর্থাৎ তুমি দশ নেকি পেলে)। এরপর আরেকজন এসে ‘আস্সাালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন। লোকটি তখন মজলিসে বসে পড়ল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বিশ (অর্থাৎ তুমি বিশ নেকি পেলে)। এরপর তৃতীয় আরেকজন এসে ‘আস্সালামু আলাইকুুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ বলে সালাম দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন। লোকটি তখন মজলিসে বসে পড়ল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ত্রিশ (অর্থাৎ তুমি ত্রিশ নেকি পেলে)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫১৯৫)। সালামের আরেক সুফল সালাম মানুষকে অহংকার থেকে মুক্ত রাখে। তবে এজন্যে শর্ত হল আগে সালাম দেয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন :‘যে আগে সালাম দেয় সে অহংকার থকে মুক্ত’। (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৮৪০৭)। মানুষ যখন বড় হয়, তা বয়সের বিবেচনায়ই হোক, কিংবা যশ-খ্যাতি সম্মান বা অর্থসম্পদের দিক দিয়েই হোক, আর পদমর্যাদা ও ক্ষমতা দিয়েই হোক, সে চায় তার অধীনস্তরা কিংবা তার চেয়ে ছোট যারা তারা তাকে সম্মান করুক। অন্যদের সম্মানে সে তৃপ্তি পায়। তাই কেউ বড় হয়ে গেলে ছোটদের নিয়ে এ মানসিকতা থাকা স্বাভাবিক আমি কেন তাকে সালাম দেব, বরং সে আমাকে সালাম দেবে! এ মানসিকতা থেকেই অহংকারের সূচনা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মানসিকতাকেই শেকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলেছেন। তাঁর বাণী ও শিক্ষা অনস্বীকার্য যে যত বড়ই হোক, সামাজিকভাবে যত উচ্চ মর্যাদার অধিকারীই হোক, আগে বেড়ে সে যখন অন্য কাউকে সালাম দেবে তখন তার মন থেকে অহংকার বিদায় নিতে বাধ্য। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ছিলেন মদীনা মুনাওয়ারার বিদ্বান সাহাবীদের অন্যতম। তাকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে ওঠে হাদীস চর্চার পাঠশালা। অথচ তিনি হাদীসের মজলিস রেখে মাঝে মাঝেই বাজারে ঘুরে বেড়াতেন। উদ্দেশ্য- অধিক সংখ্যক মানুষকে সালাম দেয়া। তাঁর শিষ্য হযরত তুফায়েল ইবনে উবাই ইবনে কাবের বক্তব্য শুনুন ‘আমি একদিন আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর নিকট এলাম। তিনি তখন আমাকে নিয়ে বাজারের দিকে রওনা করলেন। আমি তাকে বললাম, বাজারে গিয়ে আপনি কী করবেন? আপনি তো কোনোকিছু কেনাবেচা করেন না, কোনো পণ্য সম্পর্কে কিছু জানতেও চান না, কোনোকিছু নিয়ে দামাদামিও করেন না, কারও সঙ্গে কোনো বৈঠকেও শরিক হন না, তবুও কেন আপনি বাজারে যাবেন? আপনি এখানে বসুন, আমরা হাদীস শুনব। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. তখন বললেন, আরে শোনো, আমরা তো কেবল সালাম দেয়ার জন্যেই বাজারে যাই। যার সঙ্গে দেখা হয় তাকেই আমরা সালাম দিয়ে থাকি।’ (মুয়াত্তা মালেক, হাদীস ১৭২৬)। সালামকে যদি আমরা এভাবে আমাদের সমাজে ছড়িয়ে দিতে পারি, এবং যদি সালামের মর্ম আমরা আমাদের জীবনে ধারণ করতে পারি, তাহলে একদিকে যেমন আমাদের পরকালীন পুঁজি বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সমাজে বয়ে যাবে আন্তরিকতা আর সম্প্রীতির স্নিগ্ধ হাওয়া। আমাদের পার্থিব জীবনও হয়ে ওঠবে শান্তি ও কল্যাণময়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক আমল করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
হজ বিশ্বজনীন ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বলিষ্ঠ প্রকাশ
ইসলাম ধর্ম
সর্বপ্রথম কথা, মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীর ভাষায়, একথা সত্য যে, ঔপনিবেশিক শাসন ও বৃহৎ শক্তিবর্গের ক‚টনৈতিক শঠতার ফলে ইসলামী উম্মাহ আজ বিভিন্ন বর্ণের জাতীয়তাবাদের অভিশাপের শিকার হয়ে পড়েছে। হজ হচ্ছে সেই খÐিত, কৃত্রিম ও অভিশপ্ত জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজনীন মহান ইসলামী জাতীয়তাবাদের বিজয়উৎসব। এখানে এসে একাকার হয়ে যায় বিশ্বের শত কোটি তাওহিদবাদী মুসলমান। মুছে যায় ভাষা ও বর্ণের সব ব্যবধান। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় মানুষের হাতে গড়া ভৌগোলিক সীমারেখার বিভেদ-প্রাচীর। স্ব স্ব জাতীয় পোশাক ও পরিচয়, এত দিন যা ছিল তাদের একান্ত গর্বের, একান্ত আপনার, ত্যাগ করে তারা অঙ্গে ধারণ করে ইহরাম নামের শ্বেতশুভ্র একক ইসলামী জাতীয় পোশাক। চোখের পানিতে, আবেগের উচ্ছ¡াসে ও হৃদয়ের ভাষায় যে কোনো তফাৎ নেই তার বাস্তব প্রমাণ মেলে তালবিয়ায়। একই ভাষায়, একই সুরে, একই তালে লক্ষ লক্ষ হাজির কণ্ঠে ধ্বনিত হজ-সংগীতের মিষ্টি মধুর সুরমূর্ছনায়-‘হে প্রভু! আমি হাজির। আমি হাজির, তোমার কোনো শরীক নেই। আমি হাজির। তোমারই সকল প্রশংসা ও নিয়ামত। তোমারই বাদশাহী। তোমার কোনো শরীক নেই। এখানে আমীর-গরীব ও বান্দা-মনিবের, ছোট-বড়র কোনো ভেদাভেদ নেই, নেই শাসিতের হীনম্মন্যতা ও শাসকের প্রভুত্বসুলভ অহঙ্কার। ইহরামের শ্বেতশুভ্র পোশাকে ও লক্ষ কণ্ঠের ভাবগম্ভীর লাব্বাইকা ধ্বনিতে সবকিছু ছাপিয়ে ভেসে উঠে সর্বজনীন ইসলামী বিশ্ব-ভ্রাতৃত্বের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। হজের প্রতিটি আহকামে, প্রতিটি গতি-বিধিতে সেই একই দৃশ্য জুড়িয়ে দেবে আপনার হৃদয়-প্রাণ। ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেবে ভাষা, বর্ণ ও রক্ত-কৌলিন্যের মিথ্যা অভিমান। এখানে এসে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছে দূর-নিকটের, সাদা-কালো মুসলমান, বুকে বুক মিলিয়েছে আরব-আজমের আদমসন্তান। একসাথে তারা দৌড়াচ্ছে সাফা-মারওয়ার মাঝে, চলেছে মিনা-আরাফার পথে। অশ্রুসিক্ত চোখে, কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে দু’হাত তুলে মোনাজাত করছে জাবালে রহমতের পাদদেশে। মুযদালিফার খোলা আকাশের নিচে, নরম বালুর বিছানায় একসাথে কাটছে সবার রাত। বিশ্ব-মানবতার ঐক্যের সে কী অপূর্ব প্রকাশ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : যখন তোমরা দলে দলে আরাফা থেকে ফিরবে তখন মাশআরে হারামের নিকট আল্লাহর জিকির করবে এবং তাঁর প্রদর্শিত পথে তাঁর জিকির করবে। এর পূর্বে নিশ্চয়ই তোমরা অজ্ঞ ছিলে। (সূরা বাকারা : ১৯৮)। অভিন্ন সবার গতি ও অবস্থান, একসাথে চলা, একসাথে থামা এবং একসাথে মক্কায় ফিরে আসা। ‘হ্যাঁ, তোমরা ঠিক ততদূর গিয়ে ফিরে আসবে যতদূর অন্যরা যায় এবং আল্লাহর কাছে তোমরা মাগফিরাত কামনা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়’। পৃথিবীতে হজ ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। কোনো জাতীয়তাবাদী আহŸান ও অনৈসলামী সেøাগানই হাজারো ত্রæটি ও দুর্বলতা সত্তে¡ও ইসলামী উম্মাহকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করতে পারবে না কিছুতেই। স্বদেশপ্রেম তাদের যত গভীর হোক, জন্মভ‚মির আলো-বাতাস যত প্রিয়ই হোক, পৃথিবীর কোনো শক্তিরই সাধ্য নেই তাদের কাবাকেন্দ্রিক জীবনের এই পরিক্রমাকে ভিন্ন কোনো কেন্দ্রবিন্দুতে আবর্তিত করার। কিয়ামত পর্যন্ত বাইতুল্লাই থাকবে ইসলামী উম্মাহর প্রাণপ্রিয় কিবলা। কিবলামুখী হয়েই প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে পৃথিবীর শত কোটি তাওহিদবাদী মুসলমান। হজ-মৌসুমে এখানেই তারা ছুটে আসবে প্রেমদগ্ধ হৃদয়ের জ্বালা মেটাতে। ইরশাদ হয়েছে : আর (সে সময়ের কথা স্মরণ করুন)-যখন পবিত্র কাবাঘরকে আমি মানুষের জন্য আশ্রয় ও নিরাপত্তার কেন্দ্র নির্ধারণ করেছি। আর মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে নির্বাচন করে নাও। (সূরা বাকারা : ১২৫)।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
বাইতুল্লাহ বা কাবাগৃহ কল্যাণময় ও বরকতের আধার
ইসলাম ধর্ম
বাইতুল্লাহ বা কাবাগৃহ কল্যাণময় ও বরকতের আধার, যা চিরভাস্কর এবং চির অভিনন্দিত। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য সর্বপ্রথম এবাদতের নির্ধারিত ঘর এটাই যা বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত এবং সারা বিশ্বের মানুষের জন্য সুপথ প্রদর্শক ও রবকতময়। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত-৯৬)। এই আয়াতেকারীমায় কাবাগৃহকে ‘মুবারক’ বা কল্যাণময় ও বরকতের আধার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আরবি ‘মুবারক’ শব্দটি ‘বারাকাতুন’ শব্দ হতে উদ্ভূত। বারকাতুন শব্দের অর্থ বর্ধিত হওয়া, বৃদ্ধি পাওয়া, পরিমাণে শ্রী বৃদ্ধি ঘটা। স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে কোনো বস্তু দু’ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যথা: (১) প্রকাশ্যে বস্তুটির পরিমাণ বৃদ্ধি লাভ করা এবং (২) এর দ্বার এতবেশি কাজ আঞ্জাম পাওয়া যা তার চেয়ে বেশি বস্তু দ্বারা ও সম্ভব হয়ে উঠে না। কাবা গৃহের দ্বারা এই উভয় প্রকার কল্যাণ ও বরকতের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। তাছাড়া এর বরকত ও কল্যাণের বৃদ্ধি পাওয়াকে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় দিক থেকেই নিরীক্ষণ করা যায়। কাবাগৃহের বাহ্যিক বরকত এই যে, পবিত্র মক্কা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ শুষ্ক বালুকাময়, অনুর্বর মরুভূমি। ফল ও ফসলের উৎপাদন এই উষর মরুভূমিতে মোটেই সম্ভব নয়। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বছরের সকল ঋতুতে ফলমূল, তরী-তরকারী, ভোগ্যপণ্য, উট, দুম্বা, ছাগল ইত্যাদির বিপুল মওজুদ মক্কায় লেগেই থাকে। কখনোও সেখানে কোনো জিনিসের অভাব দেখা দেয় না। আকাল বলতে সেখানে কিছুই নেই। মক্কার জনসংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তদুপরি হজ, ওমরা এবং বিভিন্ন এবাদত বন্দেগির উদ্দেশ্যে বহিরাগতদের হুজ্জুম সেথায় লেগেই থাকে। এত কিছুর পরও মক্কায় অভাব অনটনের নাম গন্ধ ও নেই। সেখানকার জনগণের যাবতীয় প্রয়োজন মহান আল্লাহপাকের দয়া ও অনুগ্রহে পরিপূরণ হয়ে যাচ্ছে। জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে কোনরকম অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে না। এমন কি কুরবানির পশু ও সেখানে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এ যাবৎ কাল পর্যন্ত কুরবানির পশুর অভাব কোথাও দেখা যায়নি। তাছাড়া কাবাগৃহের অভ্যন্তরীণ আধ্যাত্মিক ও রূহানী বরকত কি পরিমাণ তা নিরূপন করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কতিপয় বিশেষ বিশেষ এবাদত কাবা গৃহেই আদায় করা হয়। এ সকল এবাদতের সওয়াব ও বিনিময় খুবই বিশাল এবং বিরাট। এই অগনিত সওয়াব ও পূন্য মূলত কাবাগৃহের কারণেই সাধিত হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা.) বলেছেন, বাসগৃহে নামাজ আদায় করলে এক নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু মহল্লাহর মসজিদে আদায় করলে পঁচিশ নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। আর জামে মসজিদে পড়লে পাঁচশ নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। মসজিদে আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাসে পড়লে এক হাজার নামাজের সওয়াব পাওয়া যায। আর আমার মসজিদে (মদিনার মসজিদে নবুবীতে) পড়লে পঞ্চাশ হাজার নামাজের সওয়াব এবং মসজিদে হারামে পড়লে এক লক্ষ নামাজের সওয়াব পাওয়া যায়। (সুনানে ইববে মাজাহ; তাবারি)। আল কুরআন গভীর অভিনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, মহান আল্লাহপাক আরবি মুবারক শব্দটি তিনটি রূপে আল কুরআনে ১২ বার ব্যবহার করেছেন। যথা : ১. ‘মুবারাকুন’ রূপে ৪ বার। যেমন, সূরা আনয়ামের ৯২ নং আয়াতে ও ১৫৫ নং আয়াতে, সূরা আম্বিয়া এর ৫০ নং আয়াতে। এবং সূরা সোয়াদ এর ২৯ নং আয়াতে। ২.‘মুবারাকান রূপে ৪ বার। যেমন, সূরা আলে ইমরানের ৯৬ নং আয়াতে, সূরা মারইয়ামের ৩১ নং আয়াতে সূরা আল মুমেনুনের ২৯ নং আয়াতে, এবং সূরা কাফ-এর ৯ নং আয়াতে। ৩. আর ‘মুবারাকাতিন’ রূপে ৪ বার। যেমন সূরা নূর-এর ৩৫ নং আয়াতে এবং ৬১ নং আয়াতে। সূরা কাসাস-এর ৩০ নং আয়াতে এবং সূরা দুখান এর ৩ নং আয়াতে। উল্লিখিত ১২টি আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মুবারক বা অধিক বরকতের দ্বারা আল্ কুরআনে সুষমা ম-িত করেছে। একই সাথে কাবাগৃহ বা বাইতুল্লাহকে বরকতের শামিয়ানার দ্বারা আচ্ছাদিত করেছেন এবং হযরত ঈসা (আ.) ও হযরত নূহ (আ.)-এর প্রতি অজস্র বরকত নাজিল করেছেন। তাছাড়া হযরত মূসা (আ.)-এর ঘটনায় বিবৃত বরকতময় ভূমির ওপরও আল্লাহপাকের অশেষ বরকত বর্ধিত হয়েছে।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
ওমরাহ ভিসার নিয়ম পরিবর্তন করল সৌদি আরব
ইসলাম ধর্ম
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের জারি করা একটি নতুন নিয়ম অনুসারে, এখন থেকে ওমরাহ ভিসা ইস্যু করার তারিখ থেকে তিন মাস স্থায়ী হবে। পরিবর্তনটি বার্ষিক হজ মৌসুমের প্রস্তুতিকে প্রবাহিত করতে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টার অংশ। দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগে ওমরাহ ভিসার ৯০ দিন মেয়াদ গণনা শুরু হতো সৌদিতে প্রবেশের পর। কিন্তু এখন থেকে এই নিয়মের পরিবর্তে ভিসা ইস্যুর দিন থেকে ৯০ দিন সৌদিতে অবস্থানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ওমরাহ ভিসার মেয়াদ ১৫ জ্বিলকদ উত্তীর্ণ হবে। এর আগে ওমরাহ ভিসার মেয়াদ থাকতো ২৯ জ্বিলকদ পর্যন্ত। মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে বলেছে, ওমরাহ ভিসা ইস্যু হওয়ার তারিখ থেকে তিন মাস মেয়াদ থাকবে এবং তা ১৫ জ্বিলকদের মধ্যেই শেষ হতে হবে। পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনায় হজ যাত্রীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
Dhaka Tribune
ভারতে মন্দিরে মুসলিম যুগলের বিয়ে
ইসলাম ধর্ম
ভারতে হিন্দু মন্দির প্রাঙ্গণে ইসলামিক রীতি অনুযায়ী বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন এক নবদম্পতি। হিমাচল প্রদেশের সিমলা জেলার রামপুর এলাকায় ওই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। প্রতিবেদনে বলা হয়, রামপুরের সত্যনারায়ণ মন্দিরটিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের জেলা কার্যালয় রয়েছে। সেখানেই রবিবার মৌলবী, পুরোহিত, আইনজীবী ও দুই পরিবারের উপস্থিতিতে মুসলিম যুগলের চার হাত এক করে দেওয়া হয়। এ সময় মুসলিম যুগলের বিবাহ অনুষ্ঠান দেখতে দু-পক্ষের পরিবার, আত্মীয়দের পাশাপাশি দর্শক হিসাবে মন্দির চত্বরে উপস্থিত ছিলেন এলাকার হিন্দু বাসিন্দারাও। মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির গড়তেই মন্দির চত্বরে মুসলিম যুগলের বিয়ে হল বলে জানিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। রামপুরের ঠাকুর সত্যনারায়ণ মন্দির ট্রাস্টের জেনারেল সেক্রেটারি বিনয় শর্মা বলেন, “এই মন্দিরটি বিশ্ব হিন্দু পরিষদ পরিচালনা করছে এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের জেলা অফিস।” বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও এটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এই দুই সংগঠন মুসলিম-বিরোধী। কিন্তু এই মন্দির চত্বরেই এক মুসলিম যুগলের বিয়ে হল। সনাতন ধর্ম যে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে, এটা তার নজির।”
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
কালের কন্ঠ
সুস্থতা আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত
ইসলাম ধর্ম
সুস্থতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় নিয়ামত। এই নিয়ামতের কদর অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত অনুধাবন করা যায় না। কোনো রোগ এমন আছে, যেগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মানুষ সারা জীবনের অর্জিত সব সম্পত্তি দিয়ে দিতে রাজি, কিন্তু পৃথিবীর সব কিছু দিয়েও তারা এক চিলতে সুখ কিনে নিতে পারে না। কখনো কখনো সাধারণ রোগব্যাধিও এতটা যন্ত্রণাদায়ক হয়, রোগীর কাছে মনে হতে থাকে এই মুহূর্তে এই রোগটা থেকে মুক্ত হওয়া তার কাছে বিশ্বজয়ের চেয়ে বড় হবে।এ জন্যই প্রিয় নবীজি (সা.) সুস্থতার নিয়ামতের মূল্যায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে দুটিতে বেশির ভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১২) খুশুখুজুর সঙ্গে ইবাদত করার জন্যও সুস্থতা প্রয়োজন। একজন অসুস্থ ব্যক্তি কিংবা একজন ব্যস্ত ব্যক্তি চাইলে শতভাগ মনোযোগ দিয়ে ইবাদত করতে পারে না। তাই অসুস্থতা আসার আগে মানুষের উচিত, সুস্থতার মূল্যায়ন করা এবং সঠিকভাবে ইবাদত ও হালাল উপার্জনের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ অর্জন করা। বিশ্বনবী (সা.) রোগাক্রান্ত হওয়ার আগে সুস্থতা বিরাট সম্পদ হিসেবে গণ্য করার নসিহত করেছেন। আমর ইবনে মায়মুন আল আওদি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে নসিহতস্বরূপ বলেন—‘পাঁচটি জিনিস আসার আগে পাঁচটি কাজকে বিরাট সম্পদ মনে করো।১. তোমার বার্ধক্যের আগে যৌবন, ২. রোগগ্রস্ত হওয়ার আগে সুস্বাস্থ্য, ৩. দরিদ্রতার আগে অভাবমুক্ত থাকা, ৪. ব্যস্ততার আগে অবসর সময় এবং ৫. মৃত্যুর আগে জীবন।’ (শুআবুল ঈমান) পৃথিবীতে যে ঈমানদার সুস্থ আছে, তার পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদে দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা আছে, বলা যায়, সে দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ লাভ করেছে। এটা বিশ্বনবী (সা.)-এর ভাষ্য। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে লোক পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয়, সুস্থ শরীরে দিনাতিপাত করে এবং তার কাছে সারা দিনের খোরাকি থাকে, তাহলে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়াটাই একত্রিত করা হলো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৬)নবী (সা.)-এর এই হাদিস পড়ার পর ফিলিস্তিনবাসীর কথা মনে পড়ে যায়।তাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই, পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানি নেই, ঘরবাড়ি মাটিতে মিশে গেছে, আত্মীয়-স্বজন হারিয়ে গেছে।উল্লিখিত হাদিসে যে বিষয়গুলোকে বিরাট নিয়ামত হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, সেগুলো যে বাস্তবেই কত বড় নিয়ামত তা ফিলিস্তিনবাসী হয়তো ভালোভাবে টের পাচ্ছে না। এই পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর রহমত ছাড়া বড় অসহায়। বড়ই দুর্বল। কখন মানুষকে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে, তা তারা নিজেরাও জানে না। তাই মানুষের উচিত, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা, আল্লাহর বিধানগুলো মেনে চলা। আল্লাহর দেওয়া জান-মাল ও সুস্থতার মূল্যায়ন করা।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
প্রথম আলো
হজরত শোয়াইব (আ.)–কে খতিবুল আম্বিয়া বলা হয়
ইসলাম ধর্ম
হজরত শোয়াইব (আ.)-এর কওম যেখানে বসবাস করত, সেটা ছিল একটি পাহাড়ি উপত্যকা। চারদিকে পাহাড়-পর্বত। মাঝখানে সমতল ভূমি। চারদিকে প্রাচীরবেষ্টিত ছিল তারা। তাতে ছিল বিশালকায় প্রবেশদ্বার। এখনো সে স্থানে কওমে শোয়েবের ঘরবাড়ির কিছু বিশেষ নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে। তবে তারা ঘর নির্মাণ করত পাথুরে পাহাড়ের গা খোদাই করে। একটির পর একটি আলাদা আলাদা ঘর। একটি ঘরের ভেতর চারটি বা পাঁচটি ছোট খোপ থাকত। আর সামনে একটি বড় অলিন্দ। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাওয়ার জন্য ছিল বড় সুড়ঙ্গ বা গর্তের মতো সরু পথ। সবখানে সহজে বাতাস চলাচলের সুবিধার্থে পাথর কেটে ফোকর বা জানালার ব্যবস্থা করে রাখত তারা। আর তারা মানুষকে কবর দিত সারিবদ্ধভাবে পরিখার মতো খুদে পরিসরে। একেকটি পরিখায় একেকজন মানুষ শুতে পারত। বাড়ির সামনের দেয়ালে তারা কিছু নকশা ও কারুকাজের চিহ্নও দিয়ে রাখত শিল্পিত হাতে। আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে সেসব চিত্রকর্ম।হজরত শোয়াইব (আ.)–কে তাঁর চমৎকার বাগ্মিতার কারণে ‘খতিবুল আম্বিয়া’ বলা হয়। এ ছাড়াও তিনি তাদের নানান সংযম, সহনশীলতা ও মমতার সঙ্গে সব বুঝিয়েছেন। কিন্তু বিনিময়ে কেবল উপহাস-পরিহাসই পেয়েছেন। অবশেষে তারা যখন সীমা লঙ্ঘন করল, তখন আল্লাহ–তাআলার গজব এসে গেল। তাফসিরকারকেরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে তাদের ওপর তিন ধরনের আজাব হয়েছিল। এক. ঘন মেঘমালা থেকে অগ্নিবৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল। দুই. এর পর প্রচণ্ড শব্দ শোনা যায়। তিন. সবশেষে ভূমিকম্প হয়। এ ব্যাপারে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত শোয়াইব (আ.)-এর জাতির ওপর এমন গজব চাপিয়ে দেওয়া হয়, যেন জাহান্নামের দরজা তাদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক দিন তাদের অঞ্চলে প্রচণ্ড গরম পড়ল। একদিন দুপুরে গরমে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হতে থাকে। তখন ছায়া ও পানি কোথাও তাদের স্বস্তি ছিল না। অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ হয়ে তাদের কেউ নিজেদের ভূগর্ভস্থ কক্ষে, কেউ জঙ্গলে আশ্রয় নিল। কিন্তু দেখতে পেল সেখানে আরও গরম। কাছের একটা ময়দানের ওপর গাঢ় মেঘমালা দেখা দিল। তারা ছটফট করতে করতে সেই ময়দানের দিকে ছুটে চলল। দেখল, সেখানে মেঘের ছায়া, আর নিচে শীতল বাতাস বইছে। সবাই গরমে অস্থির হয়ে মেঘের নিচে এসে আশ্রয় নিল। কিন্তু সেটি যে বিধ্বংসী মেঘ ছিল, তারা তা জানত না। তারা বলতে লাগল, এই মেঘ থেকে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। কিন্তু আল্লাহর আদেশ এল এবং সীমালঙ্ঘনকারীদের মহাগর্জন আঘাত করল। সঙ্গে ঘন কালো মেঘ আগুনে রূপান্তরিত হয়ে তাদের ওপর বর্ষিত হলো। আর নিচের দিকে শুরু হলো প্রচণ্ড ভূমিকম্প।ওরা নিজেদের ঘরে-জঙ্গলে যে যেখানে ছিল, সেখানেই এমনভাবে উপুড় হয়ে শেষ হয়ে গেল, যেন তারা সেখানে কখনো বসবাস করেনি। কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহে শোয়াইব (আ.) এবং তাঁর কথায় যাঁরা ইমান এনেছিলেন, তাঁরা বেঁচে গেলেন। বরং এই ধ্বংসের সময় শোয়েব (আ.) তাঁর নিজগৃহেই অবস্থান করছিলেন। তিনি যখন তাঁর সম্প্রদায়ের এ পরিণতি লক্ষ করলেন, তখন তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরপর তিনি ওই এলাকা থেকে এ কথা বলে চলে গেলেন যে, হে আমার কওম, আমি তোমাদের কাছে আমার রবের বাণী পৌঁছে দিয়েছি। তোমাদের মঙ্গল কামনার হকও আদায় করেছি। এখন যে কাওম সত্য কবুল করতেই অস্বীকার করে, তার জন্য আমি কী করে আফসোস করি? (সুরা আরাফ, আয়াত: ৯৪) হেজাজ থেকে তাবুকে বা সিরিয়া যাওয়ার পথে হাজারমাওতে একটি সমাধি রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই সেটি সর্বসাধারণের দর্শনীয় স্থান। স্থানীয় অধিবাসীদের মতে সেটাই শোয়াইব (আ.)-এর কবর। তাঁদের মতে, আইকাবাসীরা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে হজরত শোয়াইব (আ.) এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন। এখানেই তিনি তিরোহিত হন। এর বর্তমানে সঠিক স্থান হিসেবে বলা হয়, হাজারামাওতের বিখ্যাত শহর শাইউনের পশ্চিম দিকে শাবান নামে যে জায়গাটি রয়েছে, সেখান থেকে ‘ওয়াদিয়ে ইবনে আলী’ অবস্থিত, তার থেকে উত্তর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওয়াদি পা হলেই সমাধিটি পাওয়া যাবে। আশপাশে এখন আর কোনো বসতি চোখে পড়ে না। তবে স্থানটি দর্শনার্থীদের আগমনে সব সময়ই গুলজার থাকে।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
বিশ্ব মুসলিম অশান্তির দাবানলে
ইসলাম ধর্ম
আজকের বিশ্ব-পরিস্থিতির দিকে তাকালে আমরা যে চিত্র দেখতে পাই তা সত্যিই হতাশাজনক। বিশ্ব শান্তি আজ হুমকির মুখে। সামাজিক ন্যায়বিচার এখানে সুদুর পরাহত। জাহেলী যুগের মত ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এই নীতিই যেন সারা বিশ্বে বিরাজমান। ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, আন্তজাতিক অঙ্গন-সকল ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের অনেক অভাব। অনেক মারাত্মক অপরাধী ক্ষমতার বলে শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। আবার দুর্বল হওয়ার কারণে লঘু অপরাধে অনেকে গুরুতর শাস্তি ভোগ করছে। এমনকি অনেক নিরাপরাধ ব্যক্তিকেও দেয়া হচ্ছে মারাত্মক শাস্তি। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডনে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রের ওপর অন্যায় হস্তক্ষেপ করছে। তাদের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করছে। সহজে তা মেনে না নিলে শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এমনকি কখনো কখনো অন্যায়ভাবে তাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। মিথ্যা অজুহাতে গোটা দেশ ধক্ষংস করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মুসলিমদের ও মুসলিম দেশগুলোর অবস্থা আরো ভয়ানক। সারা পৃথিবীতে আজ তারা নানা জুলুম-নির্যাতনের স্বীকার। অশান্তি ও বিশৃঙ্খলায় তারা জর্জরিত। ইসলাম বিদ্বেষী সম্প্রদায় মুসলিম ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ওপর নানামূখী নির্যাতন চালাচ্ছে। কোথাও তারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে, কোথাও আবার পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে। কোথাও আবার প্ররোচনা দিয়ে মুসলিমদের বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত করছে। এর মধ্যে কোন এক দলকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে অন্য দলের ওপর লেলিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য মুসলিম সম্প্রদায়ও এক্ষেত্রে কম দোষী নয়। তারা আজ ইসলামের শিক্ষা থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে। সঠিক ইসলাম থেকে তারা বিচ্যুত। তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত। আল-কুরআনের এই শিক্ষা তারা নিজেদের সমাজে বাস্তবায়ন করতে পারছে না। আল্লাহ বলেছেন-যদি মুমিনদের দুটি দল মারামারি করে তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিও। অতঃপর যদি তাদের এক দল অন্য দলের উপর বাড়াবাড়ি করে তাহলে যে দল বাড়াবাড়ি করবে তোমরা তার বিরুদ্ধে লড়বে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে তোমরা উভয়ের মাঝে ন্যায়ের সাথে মীমাংসা করে দিবে এবং সুবিচার করবে। আল্লাহ তো সুবিচারকারীদেরকেই ভালবাসেন। এ কারণে বর্তমানে বিশ্বে দেখা যায়, বেশিরভাগ অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সংঘটিত হচ্ছে হয় সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর, না হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম শাসিত এলাকায়। আমরা যদি মিয়ানমারের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায় সংখালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতিগত গুদ্ধি অভিযানের নামে গত পঞ্চাশ বছর ধরে অমানবিক জুলুম-নির্যাতন পরিচালনা করছে। মুসলিমদের ব্যাপারে তারা যেন গৌতম বুদ্ধের বাণী ‘প্রাণী হত্যা মহা পাপ’ এবং জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’ ভুলে গেছে। তারা সেখানে মুসলিম নারী, পুরুষ, শিশু, যুবক, বৃদ্ধসহ সকল মুসলিমদের নির্বিচারে হত্যা করছে। ধ্বংস করছে তাদের ঘর-বাড়ী। অন্যায়ভাবে তাদের সম্পদ দখল করে নিচ্ছে। সামাজিক ন্যায়বিচার বলতে তেমন কিছু যেন অবশিষ্ট নেই। ক্ষমতা থাকলে সবকিছু করা বৈধ মনে করা হচ্ছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্ব-নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠীসমূহ সেখানে কার্যকর ভূমিকা রাখাতে ব্যর্থ হচ্ছে। জোর করে সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উৎখাত করা হচ্ছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষনা “ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব আর্থার জেম্স্ বেলফোর তাঁর দেশের ইহুদী নেতা ব্যারন রথচাইন্ডকে নিখিত এক পত্রের মাধ্যমে প্যালেস্টাইনের আরব ভূমিতে একটি ইহুদী রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রিুতি দেন। যাকে ঐতিহাসিক বেলফোর ঘোষণা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।” অনুযায়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী ইঙ্গ-মার্কিন অন্যয়ভাবে অসহায় ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূখন্ড থেকে উৎখাত করে সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরবদের পরাজিত হওয়ার পর ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। ইসরাইল কর্তৃক একের পর এক ফিলিস্তিনি ভূখন্ড জোরপূর্বক দখলের মাধ্যমে বহু ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। এরপর প্রায় সাত দশক পেরিয়ে গেলেও উদ্ধাস্তু ফিলিস্তিনিরা আজো তাদের নিজ আবাসে ফিরতে পারেনি। বরং ইসরাইলের নির্যাতনে প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ, শিশু নিহত হচ্ছে। নির্বিচারে বর্ষিত বোমার আঘাতে তাদের ঘর-বাড়ি চূর্ণ-বিচূর্ণ হচ্ছে। ইসরাইলী দখলদার বাহিনী নানা অজুহাতে ফিলিস্তিনিদের তাদের আবাস থেকে উচ্ছেদ করছে। তাদের জায়গা-জমি দখল করছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয়সহ বহু পশ্চিমা দেশ নীরবে তাদের এসব অন্যায় কর্মকান্ডের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার মিথ্যা অজুহাতে ইরাককে ধ্বংস হয়েছে। সেখানে নির্বিচারে হাজার হাজার নিবীহ ও নিরপরাধ নারী-পুরুষ, শিশু, যুবক ও বৃদ্ধকে হত্যা করা হয়েছে। আফগানিস্তানও একই পরিণতি ভোগ করেছে। একজন ব্যাক্তিকে শাস্তি দিয়ে গিয়ে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা হরা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে বহু জনপদ। বন্দী করা হয়েছে বহু মানুষকে। শুধু বন্দী করেই ক্ষান্ত দেয়া হয়নি। বন্দীদের উপর চালানো হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। গুয়াতানামো কারাগারের কথা আমরা জানি। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার, যা বন্দীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত। এই কারাগারে বন্দীদের বিনাবিচারে আটক রাখা হয় এবং তথ্য আদায়ের লক্ষ্যে ওয়াটার বোর্ডিংসহ বিবিধ আইন বহির্ভূত উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের প্রকার ও মাত্রা এতই বেশি যে এই কারাগারকে মর্ত্যের নরক বলে করা হয়েছে। ইরাক, আগগানিস্তান, ফিলিস্তিন ও লিবিয়ার ন্যায় সিরিয়া, মিসর ও ইয়ামেনেও যুদ্ধ-বিগ্রহ চলছে। অন্যায়-অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতনে সেখানের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। সেখানে অমুসলিমদের চেয়ে মুসলিমদের দ্বারাই অন্য মুসলিম নির্যাতিত হচ্ছে। কিন্তু পৃথিবীর মুসলিমরা এ সব বন্ধে সেখানে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তারা পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিগুলো দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে। মুসলিম নামধারী কিছু অত্যাচারী শাসক দ্বারা তারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে সাহায্যে-সহযোগিতা করছে অমুসলিমরা। এছাড়া বর্তমানে সারা বিশ্বের অমুসলিম সমাজেও চরম অশান্তি বিরাজমান। বর্তমানের পরিবর্তিত ও কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষের বানানো বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ মানুষের সামগ্রিক জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের সঠিক সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ তাওহীদ ও আখিরাত বিমুখ কোন জড়বাদী নীতি কখনো সমাজে সার্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করতে পারে না। পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার ইনসাফপূর্ণ কোন কর্মসূচী নেই। এ কারণে আমরা দেখতে পাই, পাশ্চাত্যের পারিবারিক জীবনে আজ হুমকির মুখে। সেখানে পিতা তার সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করছে না। একইভাবে সন্তানও পিতা-মাতার প্রতি যথাযথ কর্তব্য পালন করছে না। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের হক আদায় করছে না। ফলে সেখানে এক আশান্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। এছাড়া পাশ্চাত্যের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো নানাভাবে বিশ্বের দূর্বল রাষ্ট্রগুলোর ওপর তাদের অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। যে কারণে বিশ্বশান্তি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ স.-এ দাওয়াতী জীবনের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল, আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে এমন এক ইনসাফপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণ করা, যেখানে প্রত্যেক নিজ নিজ অধিকার ভোগ করবে সাথে সাথে অপরের অধিকার আদায়ে অগ্রগামী হবে। কোন রকম জুলুম-নির্যাতনের আশ্রয় নেবে না। আর এ কাজে তিনি মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি যেমন প্রদ্ধাশীল ছিলেন, তেমনি সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্যও সংগ্রাম করেছেন। আর এটা সম্ভব করেছিলেন সমাজের বিভিন্ন শেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এক সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে। তিনি শরীয়তের বিধান পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেছিলেন এবং এ ক্ষেত্রে কোন রকম পক্ষপাতিত্ব করেননি। আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, সম্পদের সুষম বন্টনব্যবস্থা, জীবন সম্পদ ও সম্মানের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সকলের স্বাভাবিক স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তিনি সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা আনয়ন করেন। সর্বোপরি তিনি সকলকে পরকালীন চেতনায় জাগ্রত করেন। আখিরাতের কঠিন আযাবের ব্যাপারে সতর্ক করেন এবং চিরস্থায়ী জান্নাতের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেন। বিশ্বে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য সকলকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ স.-এর শিক্ষা সমাজের প্রতিটি স্তরে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
কালের কন্ঠ
যেভাবে তৈরি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন মসজিদ
ইসলাম ধর্ম
অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিমদের যাতায়াত ষষ্ঠদশ শতাব্দী থেকে হলেও বিংশ শতাব্দী থেকে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে এখানে ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জ থেকে ম্যাকাসান সম্প্রদায়ের মুসলিম দর্শনার্থীরা এখানে এসেছিলেন। ১৮৬০ সালের দিকে অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে কাজের জন্য আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ভারত উপমহাদেশ বিশেষত আফগানিস্তানের অনেক উটচালকের আগমন ঘটে। তাদের মধ্যে অনেক ধার্মিক মুসলিমও ছিল। ১৯৫৪ সালের পর থেকে ব্যাপকভাবে মুসলিমদের অভিবাসন শুরু হয়। মূলত আধুনিক অস্ট্রেলিয়া গঠনে তাদের ব্যাপক ভূমিকা আছে। সরকারি পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে মুসলিমদের সংখ্যা আট লাখ ১৩ হাজার ৩৯২ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৩.২০ ভাগ। খ্রিস্টধর্মের পর ইসলামই দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হিসেবে মনে করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও সিডনিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলিমের বসবাস রয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে সাড়ে তিন শর বেশি মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার মারি মসজিদকে সবচেয়ে পুরনো বা প্রথম মসজিদ হিসেবে মনে করা হয়। আফগানদের তৈরি প্রথম মসজিদ : অ্যাডিলেড শহর থেকে ছয় শ কিলোমিটার দূরে মারি অঞ্চলে বসবাসরত তৎকালীন আফগান সম্প্রদায় মারি মসজিদটি নির্মাণ করে। ১৮৮২ সালের দিকে কাঠের কাঠামোতে মাটি, শুকনো ঘাস ও পাতার ছাউনি দিয়ে তৈরি হয় ছোট এই মসজিদ। স্থানীয় উট চালক ও ওয়াঙ্গামান্না স্টেশনের মালিক আবদুল কাদিরের তত্ত্বাবধানে তৈরি হওয়া মসজিদের প্রথম ইমাম ছিলেন মোল্লা আসিম খান, যিনি নিজেও উট চরাতেন। ১৯৫৬ সাল থেকে প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল মসজিদটি পরিত্যক্ত থাকে। ২০০৩ সালে মসজিদ প্রতিষ্ঠাকারীর বংশধররা পুরনো কাঠামো বজায় রেখে মূল মসজিদের মতো আরেকটি মসজিদ তৈরি করে। অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন ও ঐতিহাসিক এই মসজিদ দেখতে আসেন অনেকে। পর্যটক ও স্থানীয়রা এখানে নিয়মিত নামাজ পড়ছেন। প্রাচীন মসজিদ নির্মাণ : অস্ট্রেলিয়ার খনিজসমৃদ্ধ শহর ব্রোকেন হিলে অবস্থিত মসজিদ মিউজিয়াম। স্থানটি ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হলেও সর্বসাধারণের কাছে তা অজ্ঞাত। ১৮৮৭ সালে আফগান উট চালকদের তৈরি করা মসজিদটি অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন মসজিদগুলোর অন্যতম। বর্তমানে মসজিদটি দেখাশোনা করেন ৮১ বছর বয়সী আমিনুল্লাহ ববি শামরোজ। এই অঞ্চলের উট চালকদের বংশধর সম্পর্কে বর্তমানে তিনি সবচেয়ে অবহিত রয়েছেন। তাঁর বাবা শামরোজ খান ও দাদা জায়দুল্লাহ ফয়জুল্লাহ এই মসজিদেই নামাজ পড়েছেন। মোটকথা ধারাবাহিক তিন প্রজন্ম একই মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। দীর্ঘ তিন দশক ধরে উট চালকদের গবেষণা থাকায় ববি শামরোজ এখন সর্বত্র পরিচিত মুখ। তাঁর মাধ্যমেই অস্ট্রেলিয়ার ইসলামের ইতিহাসের নানা দিক উন্মোচিত হয়। দেশটিতে আসা উট চালকদের অধিকাংশ সুন্নি মুসলিমের তৈরি মসজিদগুলোর তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
ধর্মীয় শিক্ষা
Neutral
Dhaka Tribune
৫০১ দেব-দেবীর প্রতিমা নিয়ে বাগেরহাটের শিকদার বাড়ি দুর্গোৎসব
হিন্দু ধর্ম
দরজায় কড়া নাড়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজা। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে এ উৎসব। কোভিড মহামারির কারণে বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে গত তিন বছর উৎসব বন্ধ ছিল। বিখ্যাত মণ্ডপটি এবার ৫০১টি প্রতিমা নিয়ে আগের রূপে ফিরছে। গ্রামের শিল্পপতি লিটন শিকদার সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে বাড়িতে দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন। যদিও মহামারির সময় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে সমুন্নত রাখার জন্য ছোট পরিসরে পূজার আয়োজন করা হয়েছিল। এ বছর আগের মতোই জাঁকজমকপূর্ণ পূজা উদযাপন করতে যাচ্ছে শিকদার বাড়ি। নানা পৌরাণিক ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে ভাস্কর্যে/ইউএনবি শিকদার বাড়ি পূজামণ্ডপে মোট ৫০১টি দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। একাদশ প্রহরে মণ্ডপে প্রতিমা সাজানোর কাজ চলছে। দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করতে প্রতিমাগুলোতে নানা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এদিকে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে মহামায়া দেবী দুর্গার সঙ্গী হিসেবে সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের দেব-দেবীরা পূজামণ্ডপ জুড়ে বিস্তৃত। কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়া আর তুলির আঁচড়ে সেখানে দেব-দেবীর প্রতিমা এমনভাবে সাজানো হয়েছে দেখলে মনে হবে জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তিন বছর পর শিকদার বাড়ির দুর্গোৎসব বড় পরিসরে আয়োজনের খবরে দর্শনার্থী আর ভক্তকুলের মধ্যে উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছে পূজামণ্ডপে। দেব-দেবীর প্রতিমা এমনভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেখলে মনে হবে যেন স্বর্গরাজ্য। দেব-দেবীরা মা দুর্গার সঙ্গী হয়ে ধরাধামে এসেছেন একসঙ্গে। মহিষাসুরকে যেভাবে বধ করেছিলেন দেবী দুর্গা, তা দেখানো হয়েছে প্রতিমার মাধ্যমে। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তুলে ধরা হয়েছে প্রতিমায়। কারিগররা (ভাস্কর) তাদের হাতের নিপুণ ছোঁয়া আর রং তুলিতে অপরূপ সাজে প্রতিমা সাজিয়েছেন। ৫০১টি প্রতিমা বলে অনেক গল্প/ইউএনবি বিশাল পূজামণ্ডপটি ঘুরে দেখা গেছে, ঘোড়ায় চড়ে দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমন ও গমন, বিভিন্ন দেব-দেবীর সৃষ্টির রহস্য, নারায়ণের অনন্ত শয্যা, সমুদ্র মন্থন, সীতা হরণ, শ্রীকৃষের অষ্টসখী, ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের কুম্ভকর্ণের প্রতিমূর্তি। জানা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামে শিকদার বাড়ির পারিবারিক এই পূজামণ্ডপে ২০১১ সালে ২৫১টি প্রতিমা সাজিয়ে প্রথম দুর্গোৎসব শুরু হয়। এরপর প্রতি বছর বেড়েছে প্রতিমার সংখ্যা। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ৮০১টি দেব-দেবীর প্রতিমা সাজিয়ে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজক পরিবারের সদস্য শিশির শিকদার জানান, কোভিডের জন্য গত তিন বছর শুধু ধর্মীয় রীতি রক্ষায় পূজা করলেও দুর্গোৎসব করতে পারিনি। এ বছর আগের মতো ধুমধাম করে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সানাতন ধর্ম সম্পর্কে মানুষকে উজ্জীবিত করতে তার স্বর্গীয় বাবা ডা. দুলাল কৃষ্ণ শিকদার বৃহত্তর পরিসরে দুর্গোৎসব শুরু করে গেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও বড় পরিসরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। শিশির শিকদার জানান, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেচ্ছাসেবক বাহিনী দিয়ে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। তল্লাশির মধ্য দিয়ে দর্শনার্থীদের পূজামণ্ডপে প্রবেশ করতে হবে। বাগেরহাট জেলা পূজা উযদাপন পরিষদের সভাপতি নিলয় কুমার ভদ্র দাবি করেন, পারিবারিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গোৎসব শিকাদার বাড়ি পূজামণ্ডপ। দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ ভক্ত ও দর্শর্ণার্থী এই দুর্গোৎসবে আসেন। প্রতিমার কারিগর (ভাস্কর) বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় জানান, পাঁচ মাস ধরে ১৫ জন মিলে শিকদার বাড়ির এই পূজামণ্ডপে বিভিন্ন ৫০১টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। দেশি-বিদেশি নানা রঙ আর অলংকার দিয়ে প্রতিমা সাজানো হয়েছে। প্রতিমায় সোনালি রঙ করা হয়েছে। ৯ ফুট থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার প্রতিমায় রেডিএস কালার ব্যবহার করা হয়েছে। বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান জানান, শিকদার বাড়ি দুর্গোৎসবে পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। সাদা পোশাকেও পুলিশ সেখানে মোতায়েন থাকবে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন জানান, দুর্গাপূজা উৎসবমুখর এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাগেরহাট সদর, কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা, রামপাল, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও চিতলমারী উপজেলা মিলে জেলার ৯টি উপজেলায় এ বছর ৬৫২টি পূজা মণ্ডপে দুর্গা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
ধর্মীয় উৎসব
Positive
কালের কন্ঠ
বদরুজ্জামানের কণ্ঠে আসছে ‘হাবিবি মুহাম্মদ’
ইসলাম ধর্ম
ইসলামী সংগীতশিল্পী মুহাম্মদ বদরুজ্জামানের কণ্ঠে আসছে ‘হাবিবি মুহাম্মাদ’ নামে নতুন নাতে রাসুল। আগামী রবিবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কলরব ও হলি টিউনের ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তা রিলিজ হচ্ছে। কক্সবাজারে ধারণ করা সংগীতটির ভিডিওতে আরো দেখা যাবে কলরবের শিল্পী হুসাইন আদনান, তাওহিদ জামিল, আহনাফ খালিদ ও ফজলে এলাহী সাকিবকে।মুহাম্মদ (সা.)-এর ভালবাসায় লেখা সংগীতটির গীতিকার হুসাইন আল-হাফিজ।এতে যৌথভাবে সুর করেছেন সাইফুল্লাহ নুর ও মুহাম্মদ বদরুজ্জামান। মিউজিক ডিরেকশনে ছিলেন তানজিম রেজা। অডিও মিক্স এবং মাস্টার করেছেন খিজির মুহাম্মদ। ভিডিও বানিয়েছেন তরুণ নির্মাতা এইচ আল হাদী।‘হাবিবি মুহাম্মদ’ সম্পর্কে মুহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, ‘এটি একটি নাতে রাসুল (সা.)। আমার বিশ্বাস, শ্রুতিমধুর সুরে গাওয়া সংগীতটি সবার ভালো লাগবে। আকর্ষণীয় চিত্র সমৃদ্ধ ‘হাবিবি মুহাম্মদ’ সংগীতটি আগামী ২৫ জুন বিকেলে জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল হলি টিউনে রিলিজ হবে ইনশাআল্লাহ।’উল্লেখ্য, একটা সময় ইসলামী সংগীতের শ্রোতা ছিল খুবই সীমিত।কালক্রমে আধুনিক প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের সুবিধায় এখন তা সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। এখন সব শ্রেণীর মানুষ ইসলামী সংগীত শুনেন। এর পেছনে যারা নিরলসভাবে কাজ করছেন, মুহাম্মদ বদরুজ্জামান তাদের অন্যতম। তিনি জনপ্রিয় সংগীত সংগঠন কলরবের নির্বাহী পরিচালক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হলি টিউনের প্রধান নির্বাহী।তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংগীত হলো, হাসবি রাব্বি জাল্লাল্লাহ, জিকরুল্লাহ, মালিকরে ভুলিয়া, মইরা গেলে ফিইরা আসেনা, সেদিনও এমন করে, ইশকে নাবি জিন্দাবাদ, আজব টাকা ও আল্লাহ বলো মুখে মুখে ইত্যাদি।ইসলামি সংগীতশিল্পী সাঈদ আহমাদ, আবু রায়হান ও আহমদ আব্দুল্লাহসহ কলরব শিল্পীদের সঙ্গে বেশকিছু যৌথ সংগীত গেয়েছেন তিনি। তা ছাড়া প্রায় দুই শ সংগীতের সুর করেছেন তিনি।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Neutral
দৈনিক ইনকিলাব
নিজে জানাজা পড়িয়ে ছেলেকে চিরনিদ্রায় শায়িত করলেন তারিক জামিল
ইসলাম ধর্ম
নিজে জানাজার নামাজ পড়িযে ছেলেকে চিরনিদ্রায় শায়িত করেছেন পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা তারিক জামিল। জানাজা নামাজ শেষে নিজের পৈতৃক শহর তালামবাতে সোমবার (৩০ অক্টোবর) তারিক জামিলের ছেলে আসিম জামিলকে সমাহিত করা হয়। দীর্ঘদিন মানসিক রোগে ভোগা আসিম জামিল গত রোববার পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ছেলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জানাজার নামাজে তারিক জামিল বলেন, ‘তরুণ ছেলেকে হারানোর বেদনা শুধুমাত্র কাছের লোকেরাই বুঝতে পারে। এই ক্ষত দ্রুত সারবে না।’ এক বিবৃতিতে মুলতানের আঞ্চলিক পুলিশ অফিসার (আরপিও) ক্যাপ্টেন (অব:) সোহেল চৌধুরী বলেন, বিভাগীয় পুলিশ কর্মকর্তা একটি সিসিটিভির ফুটেজ দেখেছেন। এতে দেখা গেছে, আসিম জামিল আত্মহত্যা করছেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, আসিম মানসিক রোগে ভুগছিলেন এবং কয়েক বছর ধরে ওষুধ গ্রহণ করছিলেন এবং তিনি একটি ৩০-বোর পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেন। মাওলানা তারিক জামিলের বড় ছেলে, ইউসুফ জামিল, পরবর্তীতে জানান তার ছোট ভাই মানসিক রোগের জন্য ইলেকট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ইসিটি) নিচ্ছিলেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, আসিম জামিল ছোটবেলা থেকেই অনেক হতাশায় ভুগতেন। গত ছয় মাসে যা বৃদ্ধি পায়। ইউসুফ জামিল জানিয়েছেন, মৃত্যুর সময় আসিম বাড়িতে একা ছিলেন এবং একজন নিরাপত্তারক্ষীর অস্ত্র দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। কারণ আসিম ‘কষ্ট ও দঃখ আর সইতে পারছিল না।’
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
যুগান্তর
ঈদের হাসি ফোটে সাদাকায়ে ফিতরে
ইসলাম ধর্ম
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সাদাকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন, অনর্থক অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার জোগানোর জন্য। (আবু দাউদ)। ফিতরা আদায়ের পদ্ধতি ঈদের নামাজ পড়ার আগেই ফিতরা আদায় করার নির্দেশনা রয়েছে-হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন ‘গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, ছোট, বড় সব মুসলিমের ওপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ‘সা’ খেজুর, অথবা অর্ধ ‘সা’ গম জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং (ঈদের) নামাজের আগে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী ২ পরিমাপে ৫ জিনিস দিয়ে ফিতরা আদায় করা যায়। আর তা হলো যব, কিশমিশ, খেজুর, পনির ও গম। এসবের মধ্যে গমের পরিমাপ হলো অর্ধ ‘সা’ আর বাকিগুলোর পরিমাপ এক ‘সা’। সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনো একটি দিয়ে এ ফিতরা আদায় করতে পারবেন। (এক ‘সা’ সমান ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম, অর্ধ ‘সা’ সমান ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম) ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ঘোষিত এবারের নির্ধারিত ফিতরার পরিমাণ হচ্ছে-জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা। ফিতরা যারা দেবেন সামর্থ্যবান মুমিন নারী-পুরুষের ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্যবানদের অধীনস্থ পরিবারের সব সদস্যের ফিতরাও দায়িত্বশীল ব্যক্তি আদায় করবেন। এক কথায় সামর্থ্যবান নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সব স্বাধীন, পরাধীন এমনকি হিজড়া সম্প্রদায়ের ওপরই ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। বালেগ সন্তান যদি পাগল হয় তবে পিতার পক্ষ থেকে তা আদায় করা ওয়াজিব। ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত ঈদুল ফিতরের দিন কোনো স্বাধীন মুসলমানের কাছে জাকাতের হিসাব তথা সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা অথবা তার সমূল্যের নগদ অর্থ কারও কাছে থাকলেই ওই ব্যক্তির জন্য ফিতরা ওয়াজিব। এ সম্পদ ঋণ এবং মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। তবে ব্যতিক্রম হলো-জাকাতের জন্য এ সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকতে হবে, আর ফিতরার ক্ষেত্রে এক বছর থাকা শর্ত নয়।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইবাদতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক মাহে রমজান
ইসলাম ধর্ম
রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে যেন কাজে লাগানো যায়, ঈমানদারের মধ্যে সেই প্রচেষ্টা থাকা উচিত। কেননা এ মাস আমলের মাস, ইবাদতের মাস। এটি ইবাদতের বসন্তকাল। এখানে রমজানের বিশেষ কিছু আমল উল্লেখ করা হলো— রোজা রাখা : ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি হলো রোজা। আর রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এই মাসে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে রোজা পালন করে।’ (সুরা : বাকারা : আয়াত : ১৮৫) সাহরি খাওয়া : হাদিসে এসেছে, ‘সাহরি হলো বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরি খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরি খেয়ে নাও। কেননা সাহরির খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১১১০১) ইফতার করা : সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা ফজিলতপূর্ণ আমল। এতে কোনো বিলম্ব করা যাবে না। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রোজা পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৭) তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা : রমজানে কিয়ামুল লাইল করার কথা আছে। কিয়ামুল লাইল শব্দের অর্থ রাতের নামাজ। তারাবি যেমন কিয়ামুল লাইলের মধ্যে পড়ে, তেমনি শেষরাতে তাহাজ্জুদও সালাতুল লাইলের অন্তর্ভুক্ত। সালাতুত তারাবি পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবি পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে কিয়ামু রমাদান (সালাতুত তারাবি) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২০০৯) সাহাবায়ে কিরাম জামাতের সঙ্গে তারাবি শেষ না করে বাড়ি ফিরতেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তারাবি শেষ করা পর্যন্ত ইমামের সঙ্গে থাকল, সে সারা রাত ইবাদতের নেকি পেল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৬) দান-সদকার পরিমাণ বাড়ানো : প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মহানবী (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমজানে তাঁর বদান্যতা আরো বেড়ে যেত।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩২০৮) ইতিকাফ : ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মহানবী (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৭১) রোজাদারদের ইফতার করানো : রোজাদারকে ইফতার করালে রোজাদারের মতো রোজার সওয়াব পাওয়া যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজা পালনকারীকে (রোজাদারকে) ইফতার করাবে, সে রোজা পালনকারীর অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে। এতে রোজা পালনকারীর সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৩০২) তাওবা ও ইস্তিগফার করা : সর্বদা তাওবা করা ওয়াজিব, বিশেষ করে রমজান মাসে তাওবা করা উচিত। এ মাসে তাওবার অনুকূল অবস্থা বিরাজ করে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নাম থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া হয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি, তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক।’ (জামেউল উসুল, হাদিস : ১৪১০) বেশি বেশি নেক আমল করা : রমজান মাসে অধিক হারে নেক আমলের চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য একান্ত আবশ্যক, বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক এসে যেত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন রাত জাগরণ করতেন, পরিবারবর্গকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে দিতেন, লুঙ্গি শক্ত ও ভালো করে বেঁধে (প্রস্তুতি গ্রহণ) নিতেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৭৪) বেশি বেশি জিকির করা : আল্লাহ তাআলার জিকির এমন এক মজবুত রজ্জু, যা সৃষ্টিকে স্রষ্টার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে। তাঁর সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। মানুষকে উত্তম আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠা করে। সরল ও সঠিক পথের ওপর অবিচল রাখে। এ কারণে আল্লাহ তাআলা মুসলিম ব্যক্তিকে দিবা-রাত্রি গোপনে-প্রকাশ্যে জিকির করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল-বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪১-৪২) একে অন্যকে কোরআন শোনানো : রমজান মাসে একজন অন্যজনকে কোরআন শোনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, জিবরাঈল (আ.) রমজানে প্রতি রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসুল (সা.) তাঁকে কোরআন শোনাতেন। (বুখারি, হাদিস : ১৯০২) কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা : এ মাসে একটি ভালো কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সে জন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘এ মাসের প্রতি রাতে একজন ঘোষণাকারী এই বলে আহ্বান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী, তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ করো। (তুমি কি জানো?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮৪) লাইলাতুল কদর তালাশ করা : রমজান মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল-কোরআনের ঘোষণা, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ৪) রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদত করবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৫) তাকওয়া অর্জন করা : তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমজান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কোরআনে এসেছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩) বিবাদ ও বেহায়াপনা থেকে বিরত থাকা : মাহে রমজানে মুমিনকে যাবতীয় ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, অশ্লীল কথা ও বেহায়াপনা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে অশ্লীল গান-বাজনা এবং রেডিও, টিভি ও মোবাইলের অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকতে হবে। তবেই সিয়ামের সওয়াব ও উচ্চ মর্যাদা লাভ করা যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের কেউ সিয়াম পালন করবে, তখন সে কোনো মন্দ কথা বলবে না এবং বাজে বকবে না। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা লড়াই করতে আসে তখন সে যেন বলে, আমি ‘সায়েম—রোজাদার’। (বুখারি, হাদিস : ১৯০৪) দোয়া করা : রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। তাই প্রত্যেক সায়েমের উচিত আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করে বেশি বেশি দোয়া করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না—১. রোজাদার—যতক্ষণ না সে ইফতার করে, ২. ন্যায়নিষ্ঠ নেতা এবং ৩. মজলুম।’ (সহিহ ইবনু হিব্বান, হাদিস : ৩৪২৮)
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
ভোরের কাগজ
কুমিল্লায় মণ্ডপের নিরাপত্তায় সক্রিয় আওয়ামী লীগ
হিন্দু ধর্ম
এবারের দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় কুমিল্লাতে নিয়োজিত আছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গেল বছরের নাশকতার পর এবারের দুর্গোৎসবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। উদ্‌যাপন নিয়ে শঙ্কা কাটাতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। জানা গেছে, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে এবার সহিংসতার শঙ্কা নেই বললেই চলে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকা ও জেলার ১৭টি উপজেলায় ৭৯৪টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উৎসবের আমেজ ফিরে এসেছে প্রতিটি মণ্ডপে।কুমিল্লার পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নেতারা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্ট বলে জানান। তারা বলছেন, এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের বাড়তি তৎপরতা দেখছেন তারা। এতে অনেকটা ‘স্বস্তিতেই’ পূজা উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন। শনিবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে সারা দেশের মতো কুমিল্লায় শুরু হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৫ দিনের সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নগরীর ঋষি পট্রি কালিবাড়ি মণ্ডপের নিরাপত্তায় রয়েছেন কুমিল্লা নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে সামাদ সাগর ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কুমিল্লা মহানগর এর সাধারণ সম্পাদক যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন মিঠু কর্মীদের নিয়ে পালা করে মণ্ডপের নিরাপত্তা দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে এ কে সামাদ সাগর বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সব ধর্মাবলম্বীরা নির্বিঘ্নে তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করবে, সম্প্রীতি বজায় থাকুক তাই আমরা মণ্ডপগুলোতে অবস্থান করছি। নাশকতা এড়াতে আমরা মন্দির পাহারা দিচ্ছি। পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় এমপি বাহারের নির্দেশনায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্যদের দিয়ে প্রতিটি মণ্ডপের পাহারায় কমিটি করে দিয়েছেন। তিনি এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন এ বছর নানুয়ার দিঘির পাড়ের ওই মণ্ডপসহ প্রতিটি স্থানে সর্বোচ্চ সতর্কতায় পূজা উদ্‌যাপন করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি বাহার বলেন, এ বছর আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। নানুয়ার দিঘির পাড়ে এবার অবশ্যই জাঁকজমক ভাবে পূজা হবে। এবার যদি কেউ কোনো পূজা মণ্ডপে নাশকতা করার চেষ্টা করে, সে পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। এবার কোনো ষড়যন্ত্র হলে ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে কুমিল্লা নগরীর প্রতিটি পূজামণ্ডপ এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
কালের কন্ঠ
কোরআনে প্রকৃত মুমিনের পরিচয়
ইসলাম ধর্ম
প্রকাশ্য ঘোষণা, আন্তরিক বিশ্বাস, ত্রুটিহীন ও পরিপূর্ণ আমলদার ব্যক্তিই প্রকৃত বা ‘কামিল মুমিন’।বিশ্বাস ও কর্মগত কারণে ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের পরিভাষা হয়। যেমন—১. মুহসিন তথা পূর্ণতা ও উৎকর্ষ অর্জনকারী, ২. মুমিন তথা বিশ্বাসী, ৩. মুসলিম তথা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী, ৪. ফাসিক তথা অধার্মিক, লঘুপাপী, দুশ্চরিত্র, ৫. ফাজির তথা পাপাচারী, অনিষ্টকারী, ৬. মুনাফিক তথা কপট, ধর্মের ধ্বজাধারী, ৭. কাফির তথা গোপনকারী, অস্বীকারকারী, প্রত্যাখ্যানকারী, ৮. মুশরিক তথা পৌত্তলিক, বহু ঈশ্বরবাদী, আল্লাহর সঙ্গে শরিককারী, ৯. জিন্দিক তথা ধর্মদ্রোহী, ১০. মুরতাদ তথা ধর্মত্যাগী, ১১. মুলহিদ তথা নাস্তিক, অবিশ্বাসী।আরবি ‘কুফর’ শব্দটি অবিশ্বাস, অস্বীকার, অকৃতজ্ঞতা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়।শব্দটির মূল অর্থ ‘আবৃত করা।’ইবনু ফারিস (রহ.) বলেন, ‘ঈমান বা বিশ্বাসের বিপরীত অবিশ্বাসকে কুফর বলা হয়; কারণ অবিশ্বাস অর্থ সত্যকে আবৃত করা।’ কুফরি দুই ধরনের এক. বড় কুফরি, এ কুফরি ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়।দুই. ছোট কুফরি, একে কর্মগত কুফরি বা আমলি কুফরিও বলা হয়।মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে কোনো বিষয়ে তাঁর সমতুল্য বা সমকক্ষ কিংবা তুলনীয় বলে বিশ্বাস করার মাধ্যমে যে কুফরি হয় তাই শিরক।একটি শিরকি কাজ ঈমান ও যাবতীয় সৎকর্ম নিষ্ফল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে রাসুল) আর তোমার কাছে আর তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে এই মর্মে ওহি নাজিল করা হয়েছে যে তুমি যদি (আল্লাহর) শরিক স্থির করো, তাহলে তোমার কর্ম অবশ্য অবশ্যই নিষ্ফল হয়ে যাবে। আর তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ৬৫)পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে শিরকের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেমন—সুরা : বাকারা, আয়াত ২২; সুরা : নিসা, আয়াত ১১৬; সুরা : মায়েদা, আয়াত ৭২; সুরা : আনআম, আয়াত : ৮৮।ইমাম রাবেগ ইস্পাহানি (রহ.) ‘মুফরাদাত’ গ্রন্থে লিখেছেন, শিরকের অর্থ দুই স্বত্বাধিকারের সংমিশ্রণ, সমকক্ষ স্থির করা ইত্যাদি।শিরক প্রধানত দুই প্রকার এক. শিরকে আকবর তথা বড় শিরক। শিরকে আকবর চার প্রকার : ক. সত্তাগত অংশীদারি, খ. গুণাবলিতে শিরক, গ. আইনগত অধিকারে কাউকে শরিক করা, ঘ. ইবাদতের মধ্যে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা।দুই. শিরকে আসগর তথা তুলনামূলক ছোট শিরক।এটি প্রকারভেদে সীমিত করা যায় না। তবে উল্লেখযোগ্য হলো : ক. কথাগত, খ. কার্যগত, গ. বস্তুগত শিরক। প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই এসব বিষয়ে বিশ্বাসী হতে হবে যে সব কিছু মহান আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। যেমন—দিবারাত্রি, ঋতুচক্রের পরিবর্তন, তাঁরই হাতে আমাদের জীবনচক্রের নিয়ন্ত্রণ, চেহারার সৌন্দর্য, পুত্র-কন্যর জন্ম, হেদায়াত ও সুস্থতা, ক্ষমতা, সম্পদ-সামর্থ্য সব কিছুর ফায়সালা মহান আল্লাহর কাছে—মানুষের হাতে নয়। পবিত্র কোরআনে আছে—‘তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের চাবি!... তিনি জানেন যা কিছু আছে স্থলে ও জলে। গাছের একটি পাতাও ঝরে না তাঁর অজ্ঞাতসারে। কোনো শস্যকণা মাটির গভীর আঁধারে অঙ্কুরিত হয় না অথবা ভেজা আর শুকনো কোনো জিনিস নেই, যার স্পষ্ট বিবরণ তাঁর লিখনীতে (কিতাব বা বিধানে) নেই।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৯)আর কোনো কিছু হয় না আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আছে কিয়ামত সম্পর্কে জ্ঞান এবং তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন আর তিনিই জানেন যা কিছু আছে মাতৃগর্ভে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মারা যাবে।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৩৪) মহান আল্লাহ আমাদের খাঁটি মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
যায়যায়দিন
উইক্রেনীয় তরুণীর ইসলাম গ্রহণের পর মৃত্যু, জানাজায় মানুষের ঢল
ইসলাম ধর্ম
এমন মৃত্যুই আশা করেছিলেন তিনি। কারণ তার সঙ্গে থাকা সহকর্মীদের তিনি বলেছিলেন মৃত্যুর আগে যেন ইসলাম গ্রহণ করতে পারেন। তার সেই ইচ্ছেই পূর্ণ হলো। মৃত্যুর সময় তিনি রোজা অবস্থায় ছিলেন। জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইউক্রেনীয় এক তরুণী ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা পর মৃত্যুবরণ করেছে। ‘জানাজাইউএই’ নামের একটি জনপ্রিয় এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওই তরুণীর মৃত্যুর খবর জানার পর তার জানাজায় শত শত মানুষের ঢল নামে। ‘জানাজাইউএই’ পরে আরো কয়েকটি ছবি প্রকাশ করে। এতে দেখা যাচ্ছে, শুক্রবার (২৯ মার্চ) আল কাসাইস কবরস্থান মসজিদে ওই নারীর জানাজা পড়তে হাজির হয়েছেন শত শত মানুষ। এর আগে বৃহস্পতিবার ওই নারীর মৃত্যু ও জানাজার সময় জানায় সংস্থাটি। এক্স বার্তায় তারা জানান, ‘জানাজার নামাজ, ১৯ রমজান ১৪৪৫ হিজরি, দুবাইয়ে জুমার নামাজের পর। জানাজা হবে ইউক্রেনের তরুণী দারিয়া কোতসারেঙ্কোর। তিনি রোজারত অবস্থায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কয়েক ঘণ্টা পর মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুক।’ সংস্থাটি আরো জানায়, দুবাইয়ে দারিয়ার কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিল না। এজন্য জানাজায় উপস্থিত হয়ে তার প্রতি সাধারণ মানুষেকে ভালোবাসা প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়। একটি ডকুমেন্ট থেকে জানা গেছে, দারিয়া জন্মসূত্রে খ্রিষ্টান ছিলেন। পরে গত ২৫ মার্চ তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, হার্টঅ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সময় তিনি রোজা রেখেছিলেন। সূত্র: খালিজ টাইমস
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
প্রথম আলো
ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কৃষ্ণের আবির্ভাব
হিন্দু ধর্ম
‘জন্মাষ্টমী’ হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব। সারা পৃথিবীর হিন্দুরা সাড়ম্বরে এ জন্মাষ্টমী উৎসব উদ্যাপন করে থাকে। আক্ষরিক অর্থে জন্মাষ্টমী বলতে বোঝায় জন্মের সঙ্গে জড়িত অষ্টমী তিথি। কার জন্ম? ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম। দ্বাপর যুগে এক ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে নিরাকার পরমব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণরূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। পরমব্রহ্মের অবতাররূপে আবির্ভূত হওয়ার কারণ হচ্ছে সাধুদের পরিত্রাণ, দুষ্টের বিনাশ এবং ধর্ম অর্থাৎ ন্যায় প্রতিষ্ঠা। এককথায় মানুষ ও জগতের কল্যাণ। কখনো কখনো দেশ অনাচারে ভরে যায়। এমনকি রাজশক্তিও রাজধর্ম ভুলে গিয়ে হয়ে ওঠে প্রজাপীড়ক ও অত্যাচারী। তখন তাদের দমন করার জন্য দরকার প্রচণ্ড শক্তির বা শক্তিমানের। পরমব্রহ্ম সর্বশক্তিমান। তাই তাঁকেই দায়িত্ব নিতে হয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, পরমব্রহ্ম বা ঈশ্বর তো সর্বশক্তিমান। তিনি ভগবান—কৃপাময়। অসীম তাঁর শক্তি ও মাহাত্ম্য। তিনি তো তাঁর অবস্থানে থেকেই অবলীলায় দুষ্টের দমন করতে পারেন। নিশ্চয়ই পারেন। তবে পরমব্রহ্ম লোকশিক্ষকও বটেন। তিনি লোকশিক্ষা দিতে চান। তাই লোকশিক্ষা দিতে তিনি বারবার নানা রূপ ধরে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। আমাদের মতোই একজন হয়ে, জীব হয়ে জন্ম নেন। দেখাতে চান, মানুষেরও শক্তি আছে। মানুষও পারে প্রচণ্ড শক্তিতে অত্যাচারীকে দমন করতে, তাকে সমুচিত শাস্তি দিতে। ত্রেতা যুগে পরমব্রহ্ম রামরূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তার পরেকার যুগ—দ্বাপর যুগে তিনি অবতীর্ণ হলেন শ্রীকৃষ্ণরূপে। দ্বাপর যুগে তখনকার ভারতবর্ষে কয়েকজন রাজা খুব অত্যাচারী হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মগধের রাজা জরাসন্ধ, চেদিরাজ শিশুপাল, মথুরার রাজা কংসসহ অনেকে। তাঁদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করার জন্য পরমব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণরূপে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মথুরার রাজা কংসের কথাই ধরা যাক। কংস নিজের পিতা উগ্র সেনকে কারাগারে বন্দী করে অধিকার করেন মথুরার রাজসিংহাসন। প্রজাদের ওপরও চালান উৎপীড়ন। কংসের কাকা দেবক। তাঁর কন্যা দেবকী। সুতরাং দেবকী সম্পর্কে কংসের কাকাতো বোন। তবে কাকাতো বোন হলেও কংস তাঁকে সহোদরার মতোই স্নেহ করতেন। শূর বংশীয় বসুদেবের সঙ্গে দেবকীর বিয়ে হয়। বসুদেবের সঙ্গে দেবকী যখন প্রথম শ্বশুরবাড়ি যাবেন, তখন কংস নিজেই রথ চালিয়ে তাঁদের পৌঁছে দিতে যান। কিন্তু পথে দৈববাণী শুনতে পান কংস। সে দৈববাণীর মর্ম হলো, দেবকীর গর্ভজাত অষ্টম পুত্রসন্তান কংসকে হত্যা করবে। ভাগনের হাতে মৃত্যু! এ ভবিতব্য সংঘটিত হতে দেওয়া যায় না। তখন কংস তরবারি কোষমুক্ত করে দেবকীকে হত্যা করতে উদ্যত হন। বসুদেব দেবকীকে রক্ষা করার জন্য কংসকে বলেন যে সন্তানের কারণেই তো ভয়! তাঁদের সন্তান হওয়ামাত্র তাঁরা সে সন্তানকে কংসের হাতে তুলে দেবেন। যুক্তিটি কংসের কাছে মন্দ লাগে না। তিনি দেবকীকে হত্যা না করলেও প্রথমে গৃহবন্দী করে রাখেন, পরে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। দেবকীর অষ্টম গর্ভজাত পুত্রসন্তানরূপে পরমব্রহ্ম আবির্ভূত হন। তাঁর নাম রাখা হয় কৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণ কংসকে হত্যা করেন। মামা বলে ক্ষমা করেন না। এ থেকে আমরা একটা শিক্ষা পাই: পাপী পাপীই। আত্মীয় বলে তাকে ক্ষমা করা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে ওঠার আদর্শ অনুসরণ করার শিক্ষা দিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসরাজকে হত্যা করে মথুরা অধিকার করেন। কিন্তু সে অধিকৃত রাজ্য তিনি উগ্রসেনকে দিয়ে দেন। এর মধ্য দিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের নিষ্কাম কর্মের শিক্ষা দিলেন। দিলেন ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করার শিক্ষা। দ্বাপর যুগে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা কুরুক্ষেত্রে কাকাতো-জেঠতুতো ভাইদের মধ্যে যুদ্ধ। সে যুদ্ধ মহাযুদ্ধে রূপ নেয়। এক পক্ষে পাণ্ডুপুত্র পঞ্চপাণ্ডব—যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব। অপরপক্ষে ধৃতরাষ্ট্রের দুর্যোধন, দুঃশাসনসহ শত পুত্র। এ যুদ্ধে ভারতবর্ষের রাজন্যবর্গ কেউ পাণ্ডবদের পক্ষে, কেউ দুর্যোধনাদি কৌরবদের পক্ষে অংশ নেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে অংশ নেন পাণ্ডবদের পক্ষে নিরস্ত্রভাবে অর্জুনের রথের সারথি হিসেবে। কারণ, তাঁরা ধর্মযুদ্ধ করছিলেন। দুর্যোধনেরা অন্যায়ভাবে রাজ্যের অধিকার নিজেদের করায়ত্ত রেখেছিলেন। যুদ্ধ শুরুর সময়ে পাণ্ডবপক্ষের অর্জুন যখন আত্মীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাইছিলেন না—তা ছাড়া যুদ্ধে প্রচুর লোকক্ষয় ঘটবে—ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তখন কর্তব্যকর্ম সাধন করার উপদেশ দিলেন অর্জুনকে। দিলেন নিষ্কাম কর্মের শিক্ষা। মহাভারতে সে উপদেশবাণী উজ্জ্বল হয়ে আছে। আর এ অংশটি ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা’ নামে পৃথক গ্রন্থের মর্যাদা পেয়েছে। এ উপদেশবাণী মানুষের চলার পথে, কর্তব্য-অকর্তব্য নির্ধারণে, অবিচল ভক্তিতে ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণের ক্ষেত্রে সহায়ক। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের পিসতুতো ভাই চেদিরাজ শিশুপালকেও হত্যা করেন। তিনিও দুর্বৃত্ত হয়ে উঠেছিলেন। মগধরাজ জরাসন্ধকেও তিনি দমন করেছিলেন। এগুলো সব দুষ্টের দমনের দৃষ্টান্ত। আবার তাঁর মধ্যে ছিল দরিদ্রের প্রতি মমত্ববোধ এবং সবার প্রতি সমদর্শিতা। তাঁর দরিদ্র জ্ঞানী সহপাঠী সুদামা দারিদ্র্যের কারণে তাঁর কাছে কিছু চাইতে গিয়েছিলেন, যাতে দারিদ্র্য দূর হয়ে যায়। কিন্তু সুদামা লজ্জায় কিছু চাইতেই পারলেন না। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সরাসরি কিছু না দিয়ে বন্ধুকে খালি হাতেই বিদায় জানিয়েছিলেন। এদিকে সুদামা ফিরে এসে দেখেন তাঁর পর্ণকুটির নেই, সেখানে এক প্রাসাদ। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেবশিল্পী বিশ্বকর্মাকে দিয়ে সেই বাড়ি নির্মাণ করিয়েছিলেন। সুদামাকে দিয়েছিলেন অঢেল ধনসম্পদ—যাতে তিনি নিশ্চিন্তে জ্ঞানের সাধনা চালিয়ে যেতে পারেন। এখানেও একটি লোকশিক্ষার পরিচয় পাওয়া যায়। তা হলো: সামনাসামনি দান করে দানের গর্ব প্রকাশ না করা। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, দাতাকে উদ্ধত অহংকারী নয়, তাঁকে বিনয়ী হতে হয়। এক রূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চক্রধারী কঠোর, আরেক রূপে তিনি কুসুম কোমল, দীনবন্ধু—করুণা সিন্ধু। শুভ জন্মাষ্টমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃপা সবার ওপর বর্ষিত হোক।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
যেসব জিনিস সাথে রাখতে পারবেন না ওমরাহকারীরা
ইসলাম ধর্ম
ওমরাহ করার ক্ষেত্রে এবার আরো বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে সৌদি আরব। দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় কিছু নির্দিষ্ট জিনিস বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে, আতশবাজিও রয়েছে নিষিদ্ধ জিনিসের তালিকায়। এছাড়া লেজার লাইট, নকল মুদ্রা এবং অনিবন্ধিত ওষুধ নিয়েও কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর অতিথিরা সৌদিতে ঢোকার আগে নিশ্চিত করবেন যে, কারো কাছে যেন এইসব জিনিস না থাকে।' এর আগে রমজানে একাধিকবার ওমরাহ করার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সৌদি আরব। জানিয়ে সম্ভাব্য ভিড় এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চলতি রমজান মাসের প্রথম ১৫ দিনে ওমরাহ পালন করেছেন ৮২ লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলিম। সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম আল আরাবিয়া। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মোট ৮২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৮০ জন মুসুল্লি চলতি মৌসুমে ওমরাহ পালন করেছেন। রমজান মাসে হাজারো মানুষ সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কাবা শরীফে ছুটে আসেন। নামাজ পড়া ও ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যেই তারা মূলত এখানে আসেন। যার ফলে এ সময়য় পবিত্র এই ভূমিতে মানুষের ভিড় অনেক বেশি থাকে। এদিকে গত সপ্তাহে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় রমজান মাসে একবারের বেশি ওমরাহ পালনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। পবিত্র মাসে ভিড় কমাতে এই উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। সবাই যাতে স্বচ্ছন্দে ওমরাহ পালন করতে পারে, তা নিশ্চিতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
কালের কন্ঠ
উমাইয়া বংশের খ্যাতিমান মুহাদ্দিস ছিলেন যে নারী
ইসলাম ধর্ম
আতিকা বিনতে ইয়াজিদ (রহ.) ছিলেন সময়ের খ্যাতিমান নারী মুহাদ্দিস ও উমাইয়া বংশের গর্ব। হাদিস গবেষকরা তাঁকে ‘তৃতীয় স্তরের মুহাদ্দিস বা হাদিস বর্ণনাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি ছিলেন মুয়াবিয়া বিন আবি সুফিয়ান (রা.)-এর নাতি, খলিফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ানের স্ত্রী এবং খলিফা ইয়াজিদ বিন আবদুল মালিকের মা। এ ছাড়া আত্মীয়তার সূত্রে উমাইয়া বংশের ১২ জন খলিফার মারহাম ছিলেন তিনি।ফলে তাদের সঙ্গে তাঁর পর্দা করতে হতো না।আতিকা বিনতে ইয়াজিদ (রহ.) একজন নারী মুহাদ্দিস হিসেবেই ইতিহাসের পাতায় অম্লান হয়ে আছেন। বিখ্যাত আইনজ্ঞ ও হাদিস বিশারদ আবু জুরআ (রহ.) বলেন, ‘শামের যেসব নারী হাদিস বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে আতিকা বিনতে ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া (রা.) অন্যতম। তাঁর থেকে আমর ইবন মুহাজির আল-আনসারি (রহ.)-এর মতো মুহাদ্দিসও হাদিস বর্ণনা করেছেন।আলেমরা তাঁকে তৃতীয় স্তরের (মুহাদ্দিস) বলে গণ্য করেন।’ প্রখর মেধা, উচ্চতর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার জন্য খলিফা আবদুল মালিক আতিকা বিনতে ইয়াজিদ (রহ.)-কে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি সব সময় তাঁকে পাশে রাখতেন, বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করতেন, চরম শত্রুর ব্যাপারেও তাঁর সুপারিশ গ্রহণ করতেন। খলিফা প্রিয়তমা স্ত্রীর বিচ্ছেদ, দুঃখ ও কষ্ট কখনো সহ্য করতে পারতেন না।বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতায় তাঁকে দাদা মুয়াবিয়া (রা.)-এর সঙ্গে তুলনা করা হতো।আতিকা বিনতে ইয়াজিদ (রহ.) ছিলেন পুণ্যবতী ও দানশীল নারী। পরিবার-পরিজনের জন্য নিঃসংকোচে ব্যয় করতেন। পিতা ও দাদার সূত্র তিনি যত সম্পদ লাভ করেছিলেন সব পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে দান ও ওয়াকফ করে দেন। যদিও স্বামী সন্তানদের প্রত্যাশা ছিল তিনি তাঁর সম্পদ দুই ছেলে ইয়াজিদ ও মারওয়ান দিয়ে যাবেন।তিনি তাঁকে এই অনুরোধও করেছিলেন। দুই ছেলে ছাড়াও উম্মে কুলসুম নামে তাঁর একটি মেয়ে ছিল।আতিকা বিনতে ইয়াজিদ (রহ.)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দামেস্কে ‘বাবে জাবিয়া’-এর বাইরের একটি অঞ্চলকে ‘আরদু আতিকা’ বলা হয়। এখানে তাঁর একটি প্রাসাদ ছিল এবং এ প্রাসাদেই তাঁর স্বামী খলিফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ান ইন্তেকাল করেন। তিনি নিজেও দামেস্কে ইন্তেকাল করেন এবং বাবে জাবিয়ার বাইরে তাঁর প্রাসাদের কাছে দাফন করা হয়। এখনো দামেস্কে তাঁর সমাধি সৌধ রয়েছে। মূলত নাতি ওয়ালিদ বিন ইয়াজিদের মৃত্যুতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং অসুস্থ হয়ে যান। ১২৬ হিজরি মোতাবেক ৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন। নাতির মৃত্যুতে তাঁর ভেঙে পড়ার কারণ হলো, এক হজের সফরে তাঁর সামনেই ওয়ালিদ বিন ইয়াজিদকে হত্যা করা হয়। খলিফা আবদুল মালিক সে বছর তাঁকে হজ না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু পবিত্র কাবা ও নবীজি (সা.)-এর রওজা জিয়ারতের আকাঙ্ক্ষা তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি।সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আতিকা (রহ.) ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিখ্যাত সাহাবি জুবায়ের ইবনুল আউয়াম (রা.)-এর ছেলে ও আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর ভাই মুসআব ইবনে জুবায়ের (রহ.)-কে শহীদ করার পর তাঁর মাথা আবদুল মালিক বিন মারওয়ান প্রথমে কুফাতে এবং এরপর মিসরে পাঠান। অতঃপর তা দামেস্কে পাঠানো হয়। মুসআব (রহ.)-এর খণ্ডিত মস্তক দামেস্কে পৌঁছানোর পর আতিকা বিনতে ইয়াজিদ (রহ.) তা নিয়ে গোসল করান এবং মর্যাদার সঙ্গে দাফন করেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, তোমরা যা করছ তাতে তোমরা খুব খুশি! যে মাথাটি শহরে শহরে ঘুরাচ্ছ। এটা খোদাদ্রোহিতা ছাড়া কিছুই না। ঐতিহাসিকরা বলেন, মুসআব ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর বিরুদ্ধে অভিযান না চালানোর অনুরোধও করেছিলেন আতিকা (রহ.)।আল্লাহ এই মহীয়সী নারীর কবরকে শীতল করুন। আমিন
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
শবেবরাতের ছুটি ছিল আশীর্বাদ
ইসলাম ধর্ম
শবেবরাতের কারণে অমর একুশে বইমেলা আরও একটি ছুটির দিন পেয়েছে গতকাল। এ দিন নতুন করে নড়েচড়ে বসেন প্রকাশকরা। বিকাল থেকে মেলার প্রবেশদ্বার বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিকিকিনিতে দম ফেলার ফুরসত পাননি বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নে কর্মরত বিক্রয়কর্মীরা। শবেবরাতের ছুটির দিনটি লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের জন্য আশীর্বাদ ছিল বলে জানান বেশির ভাগ প্রকাশক। একই কথা বলেছেন বিক্রিতে ব্যস্ত থাকা বিক্রয়কর্মীরাও। যদি দর্শনার্থী ও বইপ্রেমীদের এই ঢল অব্যাহত থাকলে এবারের বইমেলা বিগত সব বছরের সফলতার রেকর্ড ভাঙবে বলে আশা প্রকাশ করেন বেশির ভাগ প্রকাশক। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলেন রাসিক মেয়র : গাঙচিল এবং বিশ্বসাহিত্য ভবন কর্তৃক প্রকাশিত বেশ কয়েকটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। গতকাল বিকালে অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশ্বসাহিত্য ভবনের স্টলের সামনে বঙ্গবন্ধু ও জাপান এবং শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন রাসিক মেয়র। উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আরও মোড়ক উন্মোচন করা হয় দীপল কান্তি বিশ্বাসের একজন গাঙচিল দাদু ভাই, ফয়সাল হাওলাদারের মেঘ আরশী, অভিজিৎ মণ্ডলের স্মৃতির অন্তরীক্ষে, এস এ কে রেজাউল করিমের ধারা নং ৫১১১, এলমান সৈয়দের জীবনের কবিতা, এশরাত জাহান বর্ণার এক আকাশ নীল, মিজানুর রহমানের দিগন্তরেখায় গোধূলি কথন, শিউলি রহমানের অন্যরকম অনুভবে, খাদিজা রহমান ফেরদৌসী বেগমের নিঃশ্বাসের কাছাকাছি, মাহফুজা বীনার ছড়ায় ছড়ায় শিখবে কথা, খান আহমেদ ইফতেখারের স্বপ্ন ছোঁয়ায় বঙ্গবন্ধু, বেগম দিল আফরোজের জীবন ধারা, আমিনা খাতুনের ষড়ভুজ, শিউলী খানের অচৈতন্য ভাবনা, ড. এ বি এম শরীফ উদ্দীনের নিরুদ্দেশ সম্পর্ক, নাসিমা খাতুনের চির পথচারী, খান আখতার হোসেনের ডুমুরিয়ায় শ্রেণিশত্রু নিধনের অশান্ত ঢেউ, রবিদাস মণ্ডলের রক্ত আবীর প্রেম, শেখ আকমান আলীর পুষ্প সুরভি, শেখ আকমান আলীর গোপু পাগলের পাগলামি, আসমা আক্তার কাজলের হৃদয়ে একুশ, পলাশ মজুমদারের সত্যের সন্ধানে মতুয়া ও মতুয়া জাগরণী সংগীত, রেজাউল করিমের হাবুডুবু ও রানু গাজীর হিজলতলী গাঁ ইত্যাদি।
ধর্মীয় উৎসব
Positive
ইত্তেফাক
‘অন্যায়ের প্রতিবাদে’ ভারতে মুসলিম হচ্ছেন হাজারো দলিত
অন্যান্য
অবিচারের প্রতিবাদে মুসলিম হচ্ছেন হাজারো দলিত। আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি ভারতের তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরের কাছের একটি গ্রামের ৩ হাজারেরও বেশি দলিত জাতিগত বৈষম্যের অভিযোগ তুলে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশটির সংবাদ মাধ্যমে দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত রবিবার বৈঠকের পর এমন সিধান্ত নেন দলিতরা। ঘটনার সূত্রপাত, গত ২ ডিসেম্বর চেন্নাই থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে নাদুরে একটি দেয়াল প্ৰবল বৃষ্টির কারণে ভেঙে দলিতদের বাড়িতে পড়ে। এতে ১৭ জন দলিতের মৃত্যু হয় যাদের মধ্যে ১০ জন নারী ও ২ শিশু ছিল। দলিতদের অভিযোগ, ঘটনার পরে পুলিশ ওই ভেঙে পড়া দেয়ালের বাড়ির মালিক শিবসুমব্রমানিয়মকে গ্রেপ্তার করলেও পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পায়। দলিতদের আরও অভিযোগ, উচ্চবর্ণের হিন্দুদের থেকে দলিতদের পৃথকভাবে বাস করতে বাধ্য করার জন্য ওই দেয়াল তোলা হয়েছিলো। ১৫ ফুট লম্বা দেয়ালটি কোনও রকম পিলার ছাড়াই নির্মিত হয়েছিল বলেও অভিযোগ। দলিতদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইলাভেনিল বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ২০ দিনের মধ্যে জামিনে মুক্তি দিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু গণতান্ত্রিক উপায়ে ন্যায় বিচার চাওয়ায় দলিতদের সংগঠনের সভাপতি নাগাই তিরুভল্লুয়ানযে জেলে রাখা হল।’ নিউজ ১৮, হিন্দু।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
দৈনিক ইনকিলাব
রমজান : সামগ্রিক পরিশুদ্ধির মাস
ইসলাম ধর্ম
আল্লাহর রহমতের চিরন্তন সর্বজনীন উৎস কুরআন নাজিলের শুকরিয়া আদায়ের লক্ষ্যেই সিয়াম ফরজ করা হয়েছে। আর সিয়ামের মাধ্যমে তাকওয়ার গুণাবলী অর্জন এবং কুরআনের জীবন পদ্ধতির বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে তাযকিয়াহর শীর্ষে উন্নীত হওয়ার জন্যই সিয়াম ফরয করা হয়েছে। তাকওয়াকে আমরা কুরআন ও সুন্নাহর অনুবাদের ক্ষেত্রে শুধু আল্লাহভীতি, পরহেজগারী ও ভয় করা অর্থেই ব্যবহার করে থাকি। আর সিয়ামকে আমরা পানাহার যৌনচার ও পাপাচার বর্জন অর্থেই ব্যবহার করে থাকি। ইসলামী শরীয়ার পরিভাষায় রোযার সংজ্ঞা হচ্ছে, ‘সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার ও পাপাচার বর্জনের নামই রোযা। প্রকৃত পক্ষে সওম শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বিরত থাকা, বিরত করা ও বিরত রাখা। যে মুসলিম জনগোষ্ঠী সিয়ামের মাধ্যমে শুধু সুনির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত পানাহার, কামাচার হতে বিরত থাকে অথচ পরিপূর্ণ জীবন ধারায় আল্লাহ দ্রোহী জীবনধারা হতে বিরত থাকে না। আল্লাহদ্রোহী কুশিক্ষা, বর্বরতা, মাদকাসক্তি, ব্যভিচার, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, খুন-খারাবী, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতিহিংসা, অসভ্যতা, এসিড নিক্ষেপ, পাশবিকতা, মানবাধিকার হরণের ঘৃণ্য পাপাচার হতে বিরত রাখে না, তাদের সিয়াম সাধনা নিছক আনুষ্ঠনিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। যে সিয়াম দ্বারা সিয়াম পালনকারী শুধু একমাস উপবাস ও দিনের বেলায় যৌনচার হতে বিরত থাকে, অথচ সমগ্র জিন্দেগীতে পাপাচারের গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসিয়ে ভ- ও বক ধার্মিক সেজে আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলে; সালাত ও সিয়াম আদায় করে কিন্তু মিথ্যা বর্জন করে না, তাদের রাত জাগা ও উপবাস থাকা ছাড়া আল্লাহর নিকট কোন প্রতিদানই পাবে না। আল কুরআন শুধু সিয়ামই ফরজ করেনি, একই সাংবিধানিক ভাষায় লিখিতভাবে ফরজ করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং হত্যা ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কিসাসের বিধান কায়েম করা ও আল্লাহ তায়ালার পরিপূর্ণ দীন প্রতিষ্ঠা করাকেও ফরজ করা হয়েছে। কুরআনে সিয়ামকে যেমন লিপিবদ্ধভাবে ফরজ করা হয়েছে, তেমনি সালাতকে সুনির্ধারিত সময়ে লিখিতভাবে সাংবিধানিক ভাষায় ফরয করা হয়েছে। কুরআন শরীফে অসংখ্য আয়াতে মানব জাতিকে বিশ্বজনীন কল্যাণকর জীবন আচরণের নির্দেশনা ও নিন্দনীয় কার্যাবলীকে বর্জন করার বিধান দেয়া হয়েছে। এ ধরনের মুনকার ঘোষিত সকল ব্যবস্থাপনা হতে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিরত হওয়া, বিরত করা ও বিরত থাকার নামই সিয়াম সাধনা। শুধু উপহাস-ব্রত পালনের নামই সিয়াম-সাধনা নয়। মানবতার জন্য অকল্যাণকর সকল ক্রিয়াকা- ও আচরণ থেকে বিরত থাকা, বিরত করা, ও বিরত রাখার নাম সিয়াম বা রোজা। রোজা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় রোকন বা স্তম্ভ। শব্দটি আরবী শব্দ সাওম থেকে প্রথম ফার্সী ভাষায় এবং পরে ফার্সী থেকে অপরিবর্তিতভাবে বাংলা ভাষায় এসেছে। মূল আরবী শব্দ সাওমের অর্থ হচ্ছে সংযম, বিরত থাকা বা উপবাস যাপন। আর পরিভাষা হিসেবে এর অর্থ হছে, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সংসর্গ থেকে বিরত থাকা। সাওম বা রোযা শুধু মুসলমানদের উপরই নয়, পূর্ববর্তী জাতিসমূহের উপরও আল্লাহ তায়ালা রোযা ফরজ করে দিয়েছেন। সওমের তাৎপর্য : কুরআন অবতীর্ণের মাস রমজানুল মুবারকে আল কুরআনের আদেশ নিষেধ জীবনের সকল ক্ষেত্রে মেনে পানাহার, ব্যভিচার, কামাচার, পাপাচার তথা মহান আল্লাহ তায়ালার মর্জির বিপরীত সকল নিষিদ্ধ কর্ম হতে ব্যক্তি জীবনে বিরত থাকা। নিজের পরিবারের সকল সদস্যকে আল্লাহর তরফ হতে অবতীর্ণ আল কুরআন ও আল কুরআনের জীবন বিধানের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠাতা কুরআনের জীবন্ত প্রতীক রাসুল (সা.) কর্তৃক নিন্দনীয় ও বর্জনীয় সকল ক্রিয়াকা- থেকে বিরত রাখা। আর মুসলিম বৃহত্তম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত সমাজ ও রাষ্ট্রকে আল্লাহ ও রাসুল কর্তৃক অশ্লীল ও নিষিদ্ধ সকল কর্মতৎপরতা মানব রচিত আইন ও অপসংস্কৃতি হতে বিরত করার লক্ষ্যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। আর তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে পারো; কেননা তিনি তোমাদের হেদায়েত দান করেছেন, যেন তোমরা আল্লাহর শুকর আদায় করতে পারো।(সূরা বাকারা: ১৮৩ ও ১৮৫ ) লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে যে, উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সিয়াম পালনের নির্দেশ দানের সঙ্গে সঙ্গে সিয়ামের উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে তিনটি। ক. মুত্তাকি হওয়া, খ. হেদায়েত প্রদানের জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা, গ. তার শোকর আদায় করা। উদ্দেশ্য তিনটির মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে মুত্তাকি হওয়া। মুত্তাকি বলতে কি বুঝায়? মুত্তাকী শব্দিটি এসেছে আরবী তাকওয়া থেকে এবং যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি হচ্ছেন মুত্তাকী। তাকওয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে সংযম ও আল্লাহভীতি এবং মুত্তাকী শব্দের অর্থ হচ্ছ সংযমী, পুণ্যবান ও আল্লাহভীরু। সিয়াম বা রোজা পালনের দ্বারা মানুষ যদি সংযমী ও খোদাভীরু হতে পারে, তাহলেই সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। কেননা একজন সংযমী বা আল্লাহভীরু ব্যক্তির দ্বারা সমাজে কোন অন্যায় বা জুলুম হতে পারে না। যেহেতু আল্লাহভীরু ব্যক্তি সর্বদাই আল্লাহর নিকট পরকালে জওয়াব দেওয়ার ভয়ে ভীত থাকে। তার মনে সর্বদাই এ ভয় বিরাজ করবে যে, তিনি যদি অন্যায় করেন দুনিয়াতে রেহাই পেয়েও যান, পরকালে তিনি নিস্তার পাবেন না। সেখানে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। আল্লাহর কাছে এই জবাবদিহি ও পরকালে শাস্তির ভয়ই মানুষকে যাবতীয় অন্যায় থেকে বিরত রাখবে। মানুষ যদি এভাবে সংযমী হয়, কেউ কোন অন্যায় অত্যাচার না করে,কারো অধিকার হরণ না করে, কারো ইজ্জত আবরুর উপর হামলা না করে, কাউকে বে আইনিভাবে হত্যা না করে। যার যার অধিকার তাকে যথাযথভাবে প্রদান করে, তাহলেই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করে মুত্তাকী হলেই শুধু এরূপ সংযমী হওয়া সম্ভব। আবার রোজা পালন করতে হয় বছরে এক মাস এবং তা রমজান মাসে, কুরআন নাজিলের মাসে। আল কুরআন হচ্ছে, মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। এ কুরআনের মাধ্যমেই আল্লাহতায়ালা মানুষকে হেদায়েত তথা পার্থিব জীবনের জন্য সঠিক ও কল্যাণকর পথ প্রদর্শন করেছেন। কুরআনে রয়েছে মানব জীবনের সকল ক্ষেত্র যথা তার ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, বিয়ে-তালাক, উত্তরাধিকারিত্ব, উপার্জন ও ব্যয় ব্যবসা-বাণিজ্য, রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচার ও প্রশাসন, এক কথায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যত কাজ মানুষকে করতে হয় তার প্রতিটির জন্য সর্বোত্তম পথের দিশা। আল্লাহ তায়ালার প্রদর্শিত পথ সর্বোত্তম কেনো? কারণ, তিনি সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী, কুশলী ও সর্বোপেক্ষা ক্ষমতাবান। তিনি হচ্ছেন অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে সম্যক অবগত। তার নির্দেশেই এ বিশ্বজগত পরিচালিত হচ্ছে আবার তার নির্দেশেই সব একদিন ধংস হয়ে যাবে। আবার তিনিই সবাইকে পুনর্জীবিত করে হিসেব-নিকাশ সম্পন্ন করে যার যার প্রাপ্য শাস্তি বা পুরস্কার তাকে তা দিয়ে দিবেন। এ ক্ষমতা একমাত্র তারই করায়েত্তে। কাজেই তার শাস্তি এড়িয়ে পুরস্কার পেতে হলে তার নির্দেশিত পথেই মানুষকে চলতে হবে। তিনি যদি দয়া করে মানুষকে এ পথ প্রদর্শন না করতেন তাহলেও তার কোন ক্ষতি হত না। তা সত্ত্বেও তিনি মানুষকে সর্বোত্তম পথের সন্ধান দিয়েছেন। মহান রাব্বুল আলামীন আরও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর প্রদর্শিত পথ ছাড়া অন্য কোন পন্থা বা পদ্ধতি তার কাছে আদৌ গ্রহণযোগ্য হবে না। মানুষ যেন এ কথা উপলব্ধি করে যে শাস্তি ও পুরস্কার প্রদানের ক্ষমতা একমাত্র তারই আছে, অন্য কারোই নাই। এ জন্য সকলেরই উচিত তার ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে তার শোকর আদায় করা। মানুষ যদি আল্লাহ প্রদত্ত হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েও তার শোকর আদায় না করে , তাহলে সে হবে অকৃজ্ঞ। তিনি যদি মানুষকে সঠিক পথের দিশা না দিতেন, তাহলেই কেউ উত্তম পথ পেত না। দুনিয়াতে কোন মুমিন-মুসলমানের অস্তিত্বও থাকতো না। সকলেই কাফের, মুশরিক বা সংশয়বাদী হিসেবে জীবন যাপন করে পরকালে জাহান্নামের ইন্ধন হতো। শুধু পরকালেই নয়, আল্লাহ তায়ালার প্রদর্শিত পথে না চলে এ পৃথিবীতেও বহু লোক আজও ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে চরম অশান্তির অনলে দগ্ধ হচ্ছে।আর যারা তার হেদায়েত মেনে নিয়ে জীবন যাপন করেন, তারা এ পৃথিবীতেও অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করেন। পরকালের শান্তিতো তাদের জন্যই অপেক্ষা করছেই। কাজেই মহান রাব্বুল আলামীনের প্রদত্ত হেদায়েতের জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শোকরিয়া স্বরুপ তার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতির ঘোষণা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
কুরআন কারীমের হেদায়েত গ্রহণই সফলতার একমাত্র পথ
ইসলাম ধর্ম
পৃথিবীতে আরো অনেক নবী-রাসূল এসেছেন। তাঁদের প্রতি আল্লাহ তাআলা অনেক কিতাবও নাযিল করেছেন। কিন্তু সেইসব কিতাব স্বরূপে সংরক্ষিত থাকেনি। নানা ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও ফেতনার কবলে পড়ে বিকৃত হয়েছে। মানুষের মনগড়া কথাবার্তা দিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু কুরআনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো : কোনো মিথ্যা এর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। না এর সম্মুখ থেকে না পেছন থেকে। (সূরা হা মীম সাজদাহ : ৪২)। মূলত আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআন হেফাযত ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্কের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বলেছেন : তোমরা আল্লাহর রজ্জু (অর্থাৎ এই কুরআন) মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন : নিশ্চয় এই পথ বিপদসংকুল। তাতে দাঁড়িয়ে আছে শয়তান। ডাকছে, হে আল্লাহর বান্দা, এদিকে এসো। পথ এদিকে। মূলত ওরা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করতে চায়। সুতরাং তোমরা আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। নিশ্চয় আল্লাহর রজ্জু হলো তাঁর কিতাব। (তাফসীরে তাবারী : ৫/৬৪৫)। অতএব এই কুরআন যারা আঁকড়ে ধরবে, ধারণ করবে, গ্রহণ করবে তারা দুনিয়া-আখেরাতে সফল হবে এবং সকল অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকবে। যারা এই কুরআন থেকে বিমুখ হবে, তাদের জন্য থাকবে মহা সংকটময় জীবন। আল্লাহ তাআলা বলেন : যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য রয়েছে মহা সংকটময় জীবন। কিয়ামতের দিন তাকে আমি উঠাব অন্ধ করে। সে বলবে, হে আমার রব! আপনি আমাকে অন্ধ করে উঠালেন কেন? আমি তো (দুনিয়াতে) চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এভাবেই তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল। তুমি তা ভুলে থেকে ছিলে। আজ তাই এমনিভাবে তোমাকে ভুলে থাকা হবে। (সূরা ত্বহা : ১২৪-১২৬)। বিখ্যাত তাফসীরবিদ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করবে এবং কুরআনের বিধি বিধান মেনে চলবে আল্লাহ তার জন্য এই দায়িত্ব নিয়েছেন যে, সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হবে না। আখেরাতেও দুর্দশাগ্রস্ত হবে না। আরেক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন : যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করবে। কুরআনের বিধান অনুযায়ী চলবে। আল্লাহ তাআলা তাকে সকল ভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করবেন। কিয়ামতের ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে হেফাযত করবেন। তার প্রমাণ আল্লাহ তাআলার এই বাণী : যে আমার হেদায়েতের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না। দুঃখগ্রস্ত হবে না। (তাফসীরে তাবারী : ১৮/৩৮৯)। এখানে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) কুরআনের অনুসরণ প্রসঙ্গে প্রথমে বলেছেন তিলাওয়াতের কথা। এরপর বিধি-বিধান মেনে চলার কথা। কুরআন মাজীদ নিজে তিলাওয়াত করলে যেমন ফায়েদা ও সওয়াব, তেমনি অন্যের তিলাওয়াত শোনায়ও অনেক ফায়েদা ও সওয়াব। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত বিখ্যাত হাদিস, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ তিলাওয়াত করবে তার জন্য রয়েছে একটি নেকী। আর প্রতিটি নেকী দশ গুণ বৃদ্ধি পাবে। আমি বলছি না, ‘আলিফ লাম মীম’ একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ। (জামে তিরমিযী : ২৯১০)। অর্থাৎ কেউ যদি শুধু ‘আলিফ লাম মীম’ তিলাওয়াত করে তাহলেও ত্রিশ নেকী লাভ করবে। এভাবে যেকোনো সূরা তিলাওয়াত করা হবে তার প্রতি হরফে কমপক্ষে দশটি নেকী আল্লাহ তাআলা দান করবেন। কুরআনের একেকটি আয়াতে একেকটি সূরায় কতগুলো করে হরফ থাকে! সুবহানাল্লাহ। হযরত আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো। কেননা, কুরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসেবে হাযির হবে। (সহীহ মুসলিম : ৮০৪)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত নবী (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন রোযা ও কুরআন সুপারিশ করবে। তখন তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ : ৬৬২৬)। হাদিস শরীফে কুরআন তিলাওয়াতের আরও অনেক ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে কুরআনওয়ালা বানিয়ে দিন। কুরআন বুকে ধারণ করার, নিয়মিত তিলাওয়াত করার, অন্যদের তিলাওয়াত শুনে ফায়েদা অর্জন করার, আয়াতের অর্থ, ভাব ও মর্ম নিয়ে চিন্তা-ফিকির করার এবং কুরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফীক দান করুন। কুরআনকে আমাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী বানিয়ে দিন। কুরআনের মাধ্যমে আপনার নৈকট্য লাভ করা সহজ করে দিন। (-আমীন।)
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
ইত্তেফাক
‘হিন্দু হয়েও মুসলিম ধর্ম পালন করি’
ইসলাম ধর্ম
আশির দশক থেকে এখন পর্যন্ত খল চরিত্রে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছেন অভিনেত্রী শাহনাজ পারভিন দুলারী। সুমিতা দেবী, মায়া হাজারিকা কিংবা রিনা খানের পরে দুলারী হচ্ছেন একজন শক্তিমান খল অভিনেত্রী। প্রায় ৮ শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। পেয়েছেন বহু পুরষ্কার। তার এই দীর্ঘ ক্যারিয়ার মোটেই সহজ ছিলো না। সম্প্রতি চলচ্চিত্র পরিচালক মালেক আফসারীর ‘উল্টো চশমা’ নামে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তার জীবনের বহু অজানা বিষয় শেয়ার করেছেন।তিনি বলেন, ‘আমি হিন্দুর মেয়ে। আমার আগের নাম আল্পনা দুলারী দে। এখন আমার নাম শাহনাজ পারভিন দুলারী। আমি মুসলিম ধর্ম পালন করি। আমি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, কোরবানি দেই, রোজার মাসে রোজা রাখি, আমার যে ধর্ম ভালো লাগে...।’ তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই অভিনয় অনেক ভালো লাগতো। দেখতাম- রাজ্জাক ভাই, শাবানা আপা, কবরী আপাকে অভিনয় করতে। তখন থেকেই আসছে অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক। পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর একদিন স্কুল পালিয়ে ‘মালেকা বানুর’ শুটিং দেখতে গিয়েছিলাম। এরপর বাড়িতে ফেরার পর মায়ের মার খেলাম। ওই মার খাওয়ার পর থেকেই মনে জিদ চেপে গেলো আমি অভিনয়ই করবো। মূলত বান্ধবীর মামার হাত ধরেই আমার সিনেমায় আসা। কিছুদিন পর বাড়ি থেকে চম্পট! চলে আসি এফডিসিতে। সেখানে এসে পরিচালক সিরাজুল ইসলামের সাথে দেখা হয়। আমি তাকে অনুরোধ করি; আমি তো আর বাড়ি ফিরে যেতো পাবো না সুতরাং আপনি আমাকে কাজ দেন। তখন তিনিই আমাকে প্রথম কাজ দেন।’ এই অভিনেত্রী বলেন, ‘প্রথমে আমি কমেডি দিয়েই অভিনয় শুরু করি। ৫ বছরে আমার ১৩০টি কমেডি ছবি রিলিজ। এরপর আমি খল চরিত্র শুরু করি। এখনো সেটাই চলছে। তবে এর মাঝে আমি বাড়ি ফেরে গেলে আমার বাবা-মা আমাকে গ্রহণ করলেও আমার কাকারা আমাকে গ্রহণ করেনি। তাই তখন থেকেই আমি তাদের থেকে আলাদা।’ পরোপকারী ও সমাজসেবক হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। সম্প্রতি তিনি কাজ করেছেন পরিচালক কাজী হায়ত ও চিত্রনায়ক শাকিব খানের ‘বীর’ সিনেমায়।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
প্রথম আলো
আসুরিক শক্তির বিরুদ্ধে সুরের লড়াই
হিন্দু ধর্ম
দেবী দুর্গার ধর্মীয় মাহাত্ম্যের প্রথম উল্লেখ দেখা যায় শ্রীশ্রীচণ্ডীতে। সেখানে যে ধর্মীয় কাহিনি আছে, তাতে বলা আছে: রাজা সুরথ রাজ্য হারিয়ে আর সমাধি বৈশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে তাঁদের পরিবার-পরিজন কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়ে মনের দুঃখে গৃহত্যাগী হলেন। রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য কেউই কারও পূর্বপরিচিত নন। মনের দুঃখে তাঁরা দিগ্বিদিক ঘুরছিলেন। ঘুরতে ঘুরতে একসময় দুজনের দেখা হলো মেথস মুনির আশ্রমে। সেখানেই তাঁদের কথা হয়। দুজনেই তাঁদের দুঃখ ও যন্ত্রণার কথা পরস্পরকে বলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁরা দুজনেই দুঃখ-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে মা দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করলেন। সময়টা ছিল বসন্তকাল। চণ্ডীতে বলা আছে, মা দেবী দুর্গা তাঁদের আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে দেখা দিলেন এবং তাঁদের শোকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিলেন। এই হলো দেবীপূজার মাহাত্ম্য। শ্রীশ্রীচণ্ডীতে যে মেথস মুনির আশ্রমটির কথা বলা আছে, আশ্রমটির অবস্থান যেখানে থাকার কথা উল্লেখ আছে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে, সেটি এখনো আছে নবগ্রামের বোয়ালখালী থানার করলডেঙ্গা গ্রামের করলডেঙ্গা পাহাড়ে। আশ্রমটি তেমনভাবেই আছে। বিশ্বাসীদের মতে, আগে এই অঞ্চলটি বেশ দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল ছিল। এই স্থানের পর্যটনের গুরুত্ব অনেক। তাই কয়েক বছর ধরে এই স্থানের পর্যটন গুরুত্ব, ধর্মীয় গুরুত্ব উপলব্ধি করে, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের খানিকটা সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। আমি মনে করি, দেবী দুর্গার ধর্মীয় মাহাত্ম্য অনুযায়ী দেবী দুর্গার আবাহনের এই স্থানটির যথাযথ সংস্কার জরুরি। একই সঙ্গে নানা ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটন করপোরেশন স্থানটিকে দর্শনার্থী, তীর্থযাত্রীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। তাহলে বাংলাদেশ-ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে বহু দর্শনার্থী, তীর্থযাত্রী স্থানটি পরিদর্শনে আসতে পারবে। এতে বাংলাদেশ পর্যটন খাতটি আরও সমৃদ্ধ হবে। বসন্তকালে দুর্গাপূজা হবে, এমনটাই যখন বলা আছে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে, তখন এ ঘটনার ব্যতিক্রম দেখি রামায়ণে। রামায়ণে উল্লেখ আছে, রামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধারের জন্য দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেছিলেন। আর সময়টা ছিল শরৎকাল। তাই পরবর্তী সময়ে যখন শারদীয় দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রচলন হয়, তখন এই পূজাকে আমরা বলি শারদীয় দুর্গোৎসব। সেই সঙ্গে অকালবোধন পূজা। আমরা যদি শ্রীশ্রীচণ্ডীর মাহাত্ম্য বা রামচন্দ্রের অকালবোধন পূজার উদ্দেশ্যের দিকে তাকাই, দেখতে পাই দেবী দুর্গার আরাধনা, শক্তিরই আরাধনা। রাজা সুরথ আর রামের সময় আর পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও তাঁরা একই দেবীর পূজা করেন শক্তি সঞ্চয়ের জন্য। আর সেই শক্তিটি হলো শুভশক্তি। যে শক্তি আসুরিকতার বিরুদ্ধে, সব অসুরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। আদিম যুগের পরবর্তী সময়ে যখন প্রস্তর যুগের সূচনা হলো, দেখলাম মানুষ পাথর দিয়ে বিভিন্ন জিনিস সৃষ্টি করে মনের ভাব প্রকাশ করতে শুরু করল। তার পরবর্তী সভ্যতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইট ও মাটি দিয়ে তৈরি জিনিসের প্রচলন শুরু হলো। তখন যে ভক্তিবাদের উন্মেষ ঘটেছিল, সেখানে মাটি দিয়ে তৈরি দেবীরই আরাধনা করতে শুরু করল মানুষ। আমরা মিসরীয় সভ্যতা, মহেেঞ্জাদারো সভ্যতা, হরপ্পা বা ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, ভারত সভ্যতা, অথবা মধ্যপ্রাচ্যের সভ্যতার দিকে যখন তাকাই, সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে দেখতে পাই, সব সভ্যতাতেই বাসনকোসনের সঙ্গে মাটির তৈরি মূর্তিগুলোও পাওয়া গেছে। এ দেশে মা দেবী দুর্গার মাটির তৈরি প্রতিমা গড়ে পূজার প্রচলন শুরু করেন রাজশাহীর তাহিরপুরে রাজা কংস নারায়ণ। সেটাও আজ থেকে প্রায় সাত-আট শ বছর আগের কথা। এর আগে দেবী দুর্গার মাটির মৃণ্ময়ী রূপের প্রচলন হতে দেখা যায়নি। রাজা কংস নারায়ণ প্রতিমা গড়ে যে পূজা করেছিলেন, সেখানে তৎকালীন সময়ে নয় লাখ টাকা খরচ করা হয়েছিল। বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে যেসব রাজা-মহারাজা ছিলেন, তাঁদের একাংশ ছিলেন প্রজাদের প্রতি নিষ্ঠুর। আরেকাংশ প্রজাবৎসল। প্রজাবৎসল রাজারা যে শুধু প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন তা-ই নয়, প্রজাদের সঙ্গে মিলে তাঁরা দুর্গোৎসবের আয়োজনও করতেন। রাজারা এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই প্রজার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করতেন। এই উৎসবে রাজা-প্রজা, ধনী-নির্ধন—সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতেন। ফলে রাজা আর প্রজার মধ্যে নৈকট্যের জন্ম হতো। এটি ছিল ভয়ের সংস্কৃতির বিপরীতে একটি সৌহার্দ্যের সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা। আর এই ধারাটা চলে এসেছে প্রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ কাল পর্যন্ত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন রাজা-মহারাজাব্যবস্থা থাকল না, তখন দেখা গেল, সাধারণ বাঙালি একজোট হয়ে দুর্গাপূজা করছে। সেই সময় থেকেই দুর্গাপূজা সর্বজনীনতার রূপ নিল। তখন দুর্গাপূজা রাজার আঙিনা থেকে বেরিয়ে সাধারণের আঙিনায় চলে এল। বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। বাঙালির জীবন ইতিহাসে দেখা যায়, বাঙালি কখনো কারও ওপর আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেনি। চিরকাল তারা আগ্রাসিত হয়েছে। এর কারণে বাঙালির জীবনে দুঃখ এসেছে, বিপর্যয় এসেছে, হাসি-কান্না-বেদনার দিন এসেছে। পরবর্তী সময়ে এই কান্না, দুঃখ, বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য নতুন করে প্রাণোদ্যম ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছে উৎসবের মাধ্যমে। সেটা আজও অব্যাহত। বাংলার যেমন ষড়্ঋতু আছে। আছে সেই ঋতুগুলোর বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্য আর কোথাও দেখা যায় না। আর প্রতি ঋতুতেই বাঙালির উৎসব আছে। উৎসবকে কেন্দ্র করে বাঙালির বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি আছে। সংকীর্ণতা ভুলে বাঙালি পরিসরে একাকার হওয়ার চেষ্টা করে এ অঞ্চলের জনগণ। এ জন্যই আমরা বলি, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। প্রত্যেক বাঙালির যার যার ধর্ম আছে। ধর্মাচার আছে। কিন্তু সব ধর্মাবলম্বী মানুষের ধর্মাচারের পাশাপাশি ধর্মীয় উৎসব আছে। এখান থেকে আমরা উচ্চারণ করতে পারি: ধর্ম যার যার উৎসব সবার। চট্টগ্রামে যে পাড়ায় আমি থাকি, তার নাম দেওয়ানজি পুকুরপাড়। এই এলাকায় মূলত হিন্দু সংখ্যালঘুদের বাস। এই পাড়ার নিকটতম প্রতিবেশী ছিল আজকের বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানদের পরিবার। একবার সরস্বতী পূজা উপলক্ষে পাড়ায় যে কমিটি হয়েছিল, সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী। বর্তমানে তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান। আবার কলাবাগানে যে সর্বজনীন দুর্গোৎসব হচ্ছে, এই উৎসবের সূচনা ও আয়োজনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন সেই এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। তঁারাই এলাকার হিন্দুদের একত্র করে এই উৎসবের আয়োজনে উৎসাহিত করেছেন। সেই থেকেই কলাবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব হয়ে আসছে। এটা খুব বেশি দিনের কথা নয়। আমরা লক্ষ করি, শারদীয় দুর্গাপূজা হিন্দুধর্মাবলম্বীরা করে। গৌতম বুদ্ধের জন্মদিনে বুদ্ধপূর্ণিমা বা খ্রিষ্টের জন্মদিনে ক্রিসমাস ডে করে, সবই আবহমানকাল থেকে বাঙালির সংস্কৃতির একটি রূপ। আরেকটি ব্যাপার উল্লেখযোগ্য, মা দুর্গার যে কাঠামো, রাষ্ট্র ও সমাজকে প্রতিফলন করে এ কাঠামো। আসুরিক শক্তির প্রভাবে যখন স্বর্গ থেকে দেবতারা চ্যুত হয়ে গেলেন, তখন তাঁরা আসুরিক সংস্কৃতির হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য মা দুর্গার আরাধনা করলেন। দেবতাদের মিলিত আরাধনার মাধ্যমেই তো মা দুর্গার আবির্ভাব। দেবতাদের যাঁর হাতে যা ছিল, তা-ই কিন্তু মায়ের হাতে স্থান পেল। রাষ্ট্র ও সমাজেরও তেমনি আসুরিক শক্তি আছে। আসুরিক অত্যাচারে মানুষ যখন ভয়ে থাকে, যখন উৎপীড়নের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা থেকে উত্তরণের জন্য বাঙালি যুদ্ধ করে। ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে বাঙালি যখন যূথবদ্ধ হয়ে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে, এই অবয়বটি মা দুর্গার কাঠামোতে আছে। অসুরের সঙ্গে মা দুর্গার যে লড়াইটি হয়েছিল, তাতে আসুরিক শক্তির পরাজয় ঘটেছিল। দেখা যায়, যখনই আসুরিক শক্তির পরাজয় ঘটল, সেখানে যে সমাজকে দেখি, লক্ষ করি জ্ঞানের প্রতীক সরস্বতী, ধনের প্রতীক লক্ষ্মী, জনগণের প্রতীক গণেশ আর বীরের প্রতীক কার্তিক। তার মানে জনতা, জনগণ, ধ্যানজ্ঞান ও বীরের মধ্য যে রাষ্ট্রকাঠামো, এটা হলো শান্তি-সৌহার্দ্য বিনির্মাণের রাষ্ট্র ও সমাজকাঠামো। এই কাঠামো বিনির্মাণের জন্যই তো ঐক্যবদ্ধ বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ করেছে। কিন্তু এই স্বপ্নের বাংলাদেশ স্বাধীনতার চার দশক পর আজও আসেনি। আসুরিক শক্তি আজও সমাজে বর্তমান। পাশাপাশি শুভশক্তিও অবস্থান করছে। তাই আসুরিক শক্তির সঙ্গে শুভশক্তির বারবার সংঘর্ষ হচ্ছে, লড়াই হচ্ছে। তাই সময়ের বিচারে শারদীয় পূজা এখনো প্রাসঙ্গিক। ভবিষ্যতেও থাকবে। এই পূজার মাহাত্ম্য কখনো শেষ হওয়ার নয়।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
কালের কন্ঠ
কেমন আছে কেনিয়ার মুসলমানরা
ইসলাম ধর্ম
উত্তর আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার দাপ্তরিক নাম ‘রিপাবলিক অব কেনিয়া’। দেশটির উত্তর-পশ্চিমে দক্ষিণ সুদান, উত্তরে ইথিওপিয়া, পূর্বে সোমালিয়া, পশ্চিমে উগান্ডা, দক্ষিণে তানজানিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে ভারত মহাসাগর অবস্থিত। কেনিয়ার মোট আয়তন পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭ বর্গকিলোমিটার। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশটির মোট জনসংখ্যা ৪৭.৬ মিলিয়ন। এর মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ১০.৯ শতাংশ (প্রায় ৫.২ মিলিয়ন)। আয়তনে কেনিয়া বিশ্বের ৪৮তম, জনসংখ্যায় ২৭তম এবং সাব-সাহারান অঞ্চলে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আবহাওয়া ও ভূমির বৈশিষ্ট্যে কেনিয়া এক বৈচিত্র্যময় দেশ। নাইরোবি কেনিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে কেনিয়ায় আরব মুসলিমদের আগমন ঘটে। তারা সেখানে আগমন করেন ব্যাবসায়িক সূত্র ধরে। কেননা খোলাফায়ে রাশেদার যুগ থেকে পারস্য উপসাগর ও কেনিয়ার সোয়াহিলি উপকূলের শক্তিশালী বাণিজ্যিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে কেনিয়ায় পাওয়া সর্বপ্রাচীন মুসলিম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খ্রিস্টীয় দশম শতকের। কেনিয়ার মুসলিম নিদর্শনগুলোর মধ্যে মুসলিম বসতি গেদি ও মান্দা দ্বীপের মুসলিম শহর অন্যতম। কেনিয়ায় মুসলিম ব্যবসায়ীদের বিচরণ ও তৎপরতা বৃদ্ধির সঙ্গে ইসলামেরও প্রসার হতে থাকে। কেনিয়ান উপজাতিগুলোর মধ্যে সোয়াহিলি ও বানতু উপজাতির লোকেরা প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করে। আরব মুসলিমদের মাধ্যমে সেখানে আরব-আফ্রিকান সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এমনকি বানতু ভাষা আরবি বর্ণে লেখা হয়। যা থেকে আরব মুসলিমদের প্রভাব সহজেই বোঝা যায়। প্রাচীনকাল থেকেই কেনিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলেই মুসলিমদের বসবাস বেশি। তারা বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করত, তবে প্রত্যেক অঞ্চলের মুসলিমরা সংঘবদ্ধভাবে পৃথক আবাস গড়ে তুলত। মরক্কোর বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা ১৩৩১ খ্রিস্টাব্দে সোয়াহিলি উপকূল ভ্রমণ করেন। তিনি সেখানে মুসলমানদের সম্মানজনক উপস্থিতি দেখতে পান। ইবনে বতুতার বর্ণনা মোতাবেক কেনিয়ার মুসলিমরা ছিল ধার্মিক, সামাজিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। তিনি সেখানে কাঠের তৈরি একাধিক মসজিদ দেখতে পান। খ্রিস্টীয় ১৭ শতকে কেনিয়ায় পর্তুগিজ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যে মুসলমানের প্রভাব ও তাদের সম্মানজনক অবস্থান অব্যাহত ছিল। ঔপনিবেশিক শাসননীতি ও খ্রিস্টধর্ম প্রসারের প্রচেষ্টা মুসলিমদের এক সংঘাতময় সময়ের মধ্যে ফেলে দেয়। ঔপনিবেশিক শাসকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ১৯ শতকের শুরুভাগে নিকটবর্তী জানজিবার দ্বীপপুঞ্জ ওমানের শাসনাধীন হওয়ার পর কেনিয়ায় মুসলিমরা সুদিন ফিরে পেতে শুরু করে। ১৯৬৩ সালে স্বাধীনতা লাভের পর মুসলিমরা ক্রমেই ধর্মপালনের স্বাধীনতা ফিরে পেতে থাকে। দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান মুসলমানের ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়। স্বাধীন কেনিয়ায় বহু মুসলিম জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। যেমন কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ ইউসুফ হাসান আবদি, রাজনীতিক নাজিব বালালা, প্রধান বিচারপতি আবদুল মজিদ কুকরার, ক্রিকেটার ইরফান করিম, ফুটবলার রামা সেলিম, বক্সার ওপর আহমদ প্রমুখ। ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কেনিয়া মুসলিম, দ্য সুপ্রিম কাউন্সিল অব কেনিয়া মুসলিমস, দি ইসলামিক পার্টি অব কেনিয়া ইত্যাদি সংগঠন কেনিয়ায় মুসলিম অধিকার নিয়ে কাজ করছে। ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব কেনিয়া’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশটিতে প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একাধিক ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
ভোরের কাগজ
হজ ব্যবস্থাপনাকে বিশ্বের মধ্যে একটি মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে চাই
ইসলাম ধর্ম
ধর্মমন্ত্রী মোঃ ফরিদুল হক খান বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের হজ ব্যবস্থাপনাকে স্মার্ট করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট হজ এই প্রত্যয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনাকে আমরা বিশ্বের মধ্যে একটি মডেল হিসেবে দাঁড় করাতে চাই। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ ) বিকালে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে হজ এজেন্সিস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(হাব) আয়োজিত আলোচনা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে ধর্মমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ধর্মমন্ত্রী বলেন, সরকার হজযাত্রীদের কল্যাণে সম্ভাব্য সকল ধরণের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণে বদ্ধপরিকর। আল্লাহর মেহমানগণকে আমরা যথাযথ সম্মানের সঙ্গে হজব্রত পালন করানোর জন্য যাবতীয় উদ্যোগ নিতে সদাপ্রস্তুত। এক্ষেত্রে হাবের সহযোগিতা প্রয়োজন। ধর্মমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের হজ ব্যবস্থাপনায় কোন দুর্বলতা থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং এর সম্ভাব্য সমাধানের সকল পথ বের করতে হবে। কী কী পদক্ষেপ নিলে হজযাত্রীগণ আরেকটু বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন সেগুলো নিয়ে আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে। হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে মোঃ ফরিদুল হক খান বলেন, গত দেড় দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে হজ ব্যবস্থাপনায় নানা ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আশকোনা হজক্যাম্প হজযাত্রীদের জন্য উপযোগী করা হয়েছে। ই-হজ ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে। জেদ্দা হজ টার্মিনালে বাংলাদেশ প্লাজা স্থাপন করা হয়েছে। গত ১৫ বছরে রেকর্ডসংখ্যক ১৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৩৫ জন হজযাত্রী হজব্রত পালন করেছেন। হজ ব্যবস্থাপনায় হাবের ভূমিকা তুলে ধরে ধর্মমন্ত্রী বলেন, এদেশের হজ ব্যবস্থাপনায় হাব একটি বড় অংশীদার। সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে হাবের ইতিবাচক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে হজযাত্রায় উদ্বুদ্ধকরণ, হজযাত্রী সংগ্রহ ও হজ বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি প্রভৃতিক্ষেত্রে হাবের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আগামীদিনে হজযাত্রীদের কল্যাণে হাবের ভূমিকাকে আরো বেশি ফলপ্রসূ ও কল্যাণমূখী করার জন্য মন্ত্রী হাবের প্রতি অনুরোধ জানান। হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মতিউল ইসলাম, হাবের মহাসচিব ফারুক আহমেদ সরদার, সিনিয়র সহসভাপতি মওলানা ইয়াকুব শরাফতীসহ হাবের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
ভোরের কাগজ
ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত ডাকসুর
অন্যান্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) কার্যনির্বাহী সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ডাকসুর কার্যনির্বাহী সভা শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ও চেতনার জায়গা, সুতরাং এখানে কোনো ধর্মেরই ধর্মভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চার সুযোগ নেই। তাদের কোনো ধরনের তৎপরতা ঐতিহ্যগতভাবে এখানে নেই। সেটি যেন কোনো ক্রমেই এদের অনুপ্রবেশ বা কর্মকাণ্ড পরিচালিত না হয় সেবিষয়ে যেন সকলে যত্নশীল থাকে সেজন্য ডাকসুর তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোরামে সেগুলো নিষিদ্ধ করে যেন আইনে পরিণত করা হয় সেই দাবিও জানানো হয়েছে বলেও জানান উপাচার্য। এর আগে বিকাল পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী চলা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা যায়। ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ডাকসুর প্রস্তাব অনুযায়ী ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। নির্বাহী সভার এ্যাজেন্ডা অনুযায়ী প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছেন ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন। একই সাথে ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এ সম্পর্কিত ধারা সংযোজন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-কানুনে এটি সন্নিবেশ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে সাধারণ সম্পাদকের পদ হারানো ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী সভায় উপস্থিত ছিলেন না। গোলাম রাব্বানীর উপস্থিত না হওয়ার বিষয়ে সাদ্দাম বলেন, ব্যক্তিগত কারণে তিনি আজকের সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। এছাড়াও সভায় অন্যান্য এজেন্ডা হিসেবে সান্ধ্যকালীন কোর্স, লাইব্রেরীর আসন সংকট, হলের আবাসন সমস্যা, ক্যাম্পাসের পরিবহন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান সাদ্দাম।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
কালের কন্ঠ
ভ্রমণ সম্পর্কে মহানবী (সা.) যা বলেছেন
ইসলাম ধর্ম
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিরহস্যের নানা উপকরণ। প্রতি মুহূর্তে মানুষকে তা হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মন প্রফুল্ল রাখতে ও শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখতে এবং জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে ভ্রমণের বিকল্প নেই। তাইতো প্রতিনিয়ত মানুষ বিশাল এ ধরিত্রীর নানা অংশে ছুটে যায় সৃষ্টির বিশালতা আর প্রকৃতির রূপকে আপন করে দেখতে। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ভ্রমণের মাধ্যমে তাঁর অসীম ক্ষমতা ও সৃষ্টির বিশালতা অবলোকন করে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবীজুড়ে বিশ্বাসীদের জন্য আছে অসংখ্য নিদর্শন। ’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২০) বিনোদন ছাড়াও জীবনের নানা প্রয়োজনে আমাদের আবাসস্থল ছেড়ে দূর-দূরান্তে যেতে হয়। অন্য সব বিষয়ের মতো ভ্রমণ সম্পর্কেও ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে— ► সফরের ক্ষেত্রে একেবারে প্রথম কাজটি হোক ইস্তিখারা। আপনার জন্য এ সফর কল্যাণকর হবে কি না—জেনে ফেলুন ইস্তিখারার নামাজের মাধ্যমে। (ঘুমের আগে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নির্দিষ্ট দোয়া পড়ে ইস্তিখারা করা হয়)। জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সব ব্যাপারে ইস্তিখারা করতে শিখিয়েছেন, যেভাবে কোরআনের সুরা গুরুত্বের সঙ্গে শিখিয়েছেন। (ইবনু হিব্বান, হাদিস : ৮৮৭) ► সফরকালে নানা রকম বিপদাপদের আশঙ্কা থাকে। সে জন্য যানবাহন, আসবাবপত্র ও যাত্রাপথ সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব ভালো করে খোঁজখবর নিন। ► সফরের সিদ্ধান্ত হলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সফরকারী তার পরিবারের জন্য দুই রাকাত নামাজের চেয়ে ভালো কিছু রেখে যায় না। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা, হাদিস : ৪৯১২) ► যতটা সম্ভব একাকী সফর পরিহার করুন। একাকী সফর নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। সুতরাং ভালো কাউকে সফরসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করুন। মহানবী (সা.) বলেছেন, সঙ্গীহীনতায় কত কী সমস্যা! আমি যেমন জানি, তোমরাও জানলে রাতে একাকী কখনো সফর করার সাহস পেতে না। (বুখারি, হাদিস: ২৯৯৮) ► অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে গ্রুপ লিডার নির্বাচন করুন। যিনি পরামর্শের ভিত্তিতে সফরের দায়িত্বগুলো সম্পন্ন করবেন। অন্যদের কাজ হবে তার নির্দেশনা মেনে চলা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সফরে তোমরা যদি তিনজন হও, একজনকে আমির নিযুক্ত করো। (আবু দাউদ, হাদিস, ২৬০৯) ► সাতসকালে যাত্রা করুন। সাহাবি সাখর আল গামিদি ব্যবসায়ী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, ‘ভোরবেলাকে আমার উম্মতের জন্য বরকতে পূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। ’ এর পর থেকে সাখর গামিদি (রা.) সকাল সকাল ব্যবসায় নেমে পড়তেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। (ইবনু হিব্বান, হাদিস : ৪৭৫৪) ► পরিচিত ও প্রিয়জনদের থেকে সুন্দরভাবে বিদায় নিন। বিদায় দানকারী বলবেন, আল্লাহ তোমাকে তাকওয়া-পরহেজগারি দান করুন, তোমার গুনাহ ক্ষমা করুন আর যেখানেই থাকো তোমাকে তিনি কল্যাণ দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৪৪) আর সফরকারী বলবেন, আল্লাহর নিরাপত্তায় তোমাকে অর্পণ করছি, তিনি অনন্য আস্থাভাজন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৯২১৯) ► সফরের জিকির এবং দোয়াগুলো পড়ুন। গাড়িতে উঠে পড়বেন, ‘সুবহানাল্লাজি সাখখরা লানা হাজা ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনিন। ’ অর্থাৎ ‘পবিত্র ওই সত্তা, যিনি এটিকে আমাদের আয়ত্তাধীন করেছেন, অথচ আমরা একে নিজেরা আয়ত্তাধীন করতে পারতাম না। ’ আর সফর শেষে পড়বেন, ‘আ-ইবুনা, তা-ইবুনা, আবিদুনা, লি রাব্বিনা হামিদুন। ’ অর্থাৎ ‘আমরা ফিরে এসেছি, পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে, আনুগত্যের প্রত্যয় নিয়ে এবং আল্লাহর প্রশংসায় মুখর হয়ে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৪২) ► সফর শেষে প্রথমে নিজ এলাকার মসজিদে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। (বুখারি, হাদিস : ২৬০৪) বাড়িতে হঠাৎ করে যাবেন না। আগে জানান, তারপর যান। (মুসলিম, হাদিস : ১৮০১) আশা করা যায়, উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করলে সফরের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত বলে গণ্য হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টিরহস্য অবলোকনের মাধ্যমে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে প্রকৃতবোধ জাগ্রত হবে।
ধর্মীয় শিক্ষা
Neutral
দৈনিক ইনকিলাব
কাবা থেকে তিন কিলোমিটার দূর গেলো নামাজের কাতার
ইসলাম ধর্ম
চলতি বছরের পবিত্র রমজান মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার ছিল গতকাল। এদিন পবিত্র কাবা শরীফে তারাবির নামাজ আদায়ের জন্য জড়ো হয়েছিলেন লাখ লাখ মানুষ। মুসল্লিদের ভিড় এতই বেশি ছিল যে কাবার গ্র্যান্ড মসজিদ পেরিয়ে নামাজের কাতার পৌঁছে গিয়েছিল তিন কিলোমিটারেরও বেশি দূরের মাআলা এলাকায়। শনিবার (২৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে। মাআলা এলাকায় মানুষের নামাজ পড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ড্রোন থেকে তোলা এ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নিচে হাজার হাজার মানুষ গিজ গিজ করছেন। তবে কাবায় নামাজ পড়তে যাওয়া ব্যক্তিরা যেন কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়েন সেটি নিশ্চিতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন ভিড় সামলানোর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। আল মাআলা মক্কার একটি প্রসিদ্ধ এলাকা। সেখানে অনেক আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। এই এলাকায় রয়েছে আল মাআলা কবরস্থান। যা মক্কার অন্যতম পুরোনো একটি কবরস্থান। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সা:-এর অনেক সাহাবী এই কবরে শুয়ে আছেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
জুমাতুল বিদা আজ
ইসলাম ধর্ম
রমজানের শেষ শুক্রবার আজ। মুসলিম উম্মাহর কাছে দিনটি জুমাতুল বিদা নামেও পরিচিত। এটি রমজান মাসকে এক বছরের জন্য বিদায়ের ইঙ্গিত দেয়। মুসলমানদের কাছে এমনিতেই সপ্তাহের অন্য দিনের চেয়ে শুক্রবারের মর্যাদা বেশি। আর রমজান মাসের শুক্রবারগুলোর মর্যাদা আরও অধিকতর। রমজানকে বিদায়ের ইঙ্গিত দেওয়া শেষ জুমার দিনটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এ দিন মসজিদে মসজিদে জুমার খুতবায় রমজান মাসের ফজিলত ও ইবাদতের গুরুত্ব ব্যাখ্যাসহ বিশেষ দোয়া হয়ে থাকে। মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাস মুক্তির লক্ষ্যে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার সারা বিশ্বে আল কুদস দিবস হিসেবেও পালিত হয়। প্রতিবারের মতো এবারও সারাদেশে মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করবেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। জুমা শেষে মুসল্লিরা মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা ও রহমত কামনা করবেন।
ধর্মীয় উৎসব
Neutral
কালের কন্ঠ
মানত সম্পর্কে মহানবী (সা.) যা বলেছেন
ইসলাম ধর্ম
মানত হলো নিজের ওপর কোনো ভালো কাজ আবশ্যক করে নেওয়া। ইসলামপূর্ব আরব সমাজে মানতের প্রচলন ছিল। পৃথিবীর প্রায় সব প্রাচীন ধর্মে মানতের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। শরিয়ত মানতকে বৈধ বললেও তাকে নিরুৎসাহ করেছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মানত করতে নিষেধ করেছেন। কেননা তা মানুষের কোনো কল্যাণ করতে পারে না। এর মাধ্যমে কেবল কৃপণ ব্যক্তি থেকে সম্পদ বের করা হয়। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৮০১) আগের ধর্মে মানত পূর্ববর্তী আসমানি ধর্মে মানতের প্রচলন ছিল। পবিত্র কোরআনে তার দৃষ্টান্ত আছে। যেমন—ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত আপনার জন্য আমি উৎসর্গ করলাম। সুতরাং আপনি আমার থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৫) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে কাউকে যদি তুমি দেখো, তখন বোলো, আমি দয়াময়ের উদ্দেশে মৌনতা অবলম্বনের মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে বাক্যালাপ করব না। ’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ২৬) মানতের পরিচয় শরিয়তের পরিভাষায় মানত বলা হয়, ‘কোনো মুকাল্লাফ (শরিয়তের বিধান প্রযোজ্য) ব্যক্তির নিজের ওপর এমন কোনো কাজ আবশ্যক করা, যা শরিয়ত প্রণেতা আবশ্যক করেননি। ’ (আল-ফিকহু আলা মাজাহিবিল আরবায়া : ২/৭৭৯) মানতের শর্ত কোনো ব্যক্তির ওপর মানত আবশ্যক হওয়ার শর্ত হলো সাবালক হওয়া, জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া এবং এখতিয়ার বা ইচ্ছাধিকার থাকা। (আল-ফিকহু আলা মাজাহিবিল আরবায়া : ২/৭৭৯) মানত শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইসলামী আইনজ্ঞরা আরো কিছু শর্তারোপ করেন। যেমন—নেক কাজের মানত করা, বান্দার সাধ্যের ভেতর হওয়া, নিজের মালিকানাধীন হওয়া, তা পাপের কারণ বা উপলক্ষ না হওয়া ইত্যাদি। মানতের বিধান মানত করলে তা পূরণ করা আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন ঘরের। ’ (সুরা : হজ, আয়াত : ২৯) অন্য আয়াতে মুমিনের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘তারা মানত পূর্ণ করে এবং সেদিনের ভয় করে, যেদিনের বিপত্তি হবে ব্যাপক। ’ (সুরা : দাহর, আয়াত : ৭) পাপ কাজের মানত করা কোনো ব্যক্তি পাপ কাজের মানত করলে তা পূরণ করা আবশ্যক নয়। তবে হানাফি মাজহাব অনুসারে ব্যক্তির জন্য কাফফারা দেওয়া আবশ্যক হবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের মানত করে সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার মানত করে, সে যেন তাঁর অবাধ্য না হয়। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩২৮৯) মৃত ব্যক্তির মানত কোনো ব্যক্তি মানত করার পর যদি তা পূরণ করার আগেই মারা যায়, তবে তার আত্মীয়-স্বজনের দায়িত্ব হলো তা পূরণ করা। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.)-এর কাছে এক লোক এসে বলল যে, আমার বোন হজের মানত করেছিল, কিন্তু সে মারা গেছে। তখন নবী (সা.) বললেন, তার ওপর কোনো ঋণ থাকলে তবে কি তুমি তা আদায় করতে না? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কাজেই আল্লাহর হককে আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহর হক আদায় করা আরো বড় কর্তব্য। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৬৯৯) বহুদিন আগের মানত মানত করার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলে গেলেও তা পূরণ করা আবশ্যক। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ওমর (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি জাহেলি যুগে মসজিদুল হারামের ভেতর এক রাত ইতেকাফ করার মানত করেছিলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার মানত পূরণ কোরো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৩২) শরিয়তের সীমার মধ্যে থাকা মানত পূরণের জন্য ব্যক্তি কখনো শরিয়তের সীমা অতিক্রম করতে পারবে না। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি সোমবার রোজা রাখার মানত করে এবং সেদিন ঈদ হয়, তবে সে সর্বসম্মতিক্রমে রোজা রাখবে না। ’ (শরহুন নববী : ৮/১৬) নিজের ওপর কষ্ট না চাপানো মানতের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের ওপর কোনো কষ্ট চাপিয়ে নেবে না। কেননা নিজেকে কষ্ট দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে তার দুই ছেলের ওপর ভর করে হেঁটে যেতে দেখে বললেন, তার কী হয়েছে? তারা বলল, তিনি পায়ে হেঁটে হজ করার মানত করেছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, লোকটি নিজেকে কষ্ট দিক আল্লাহ তাআলার এর কোনো দরকার নেই। অতঃপর তিনি তাকে সওয়ার হয়ে চলার জন্য আদেশ করলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৬৫) বিকল্প জিনিস দ্বারা মানত পূরণ যে বিষয়ের মানত করেছে যা ব্যক্তির জন্য কষ্টসাধ্য হয়, তবে বিকল্প জিনিস দ্বারা মানত পূরণ করা বৈধ। বিশেষত বিকল্প যখন মূলের চেয়ে উত্তম হয়। যেমন— জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের দিন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর জন্য মানত করেছি যে, আল্লাহ যদি আপনাকে মক্কায় বিজয়ী করেন তবে বায়তুল মুকাদ্দাসে দুই রাকাত নামাজ আদায় করব। নবী (সা.) বলেন, তুমি এখানেই নামাজ আদায় কোরো। লোকটি তার কথার পুনরাবৃত্তি করল। তিনি বললেন, তুমি এখানে নামাজ আদায় কোরো। লোকটি আবারও তার কথার পুনরাবৃত্তি করল। নবী (সা.) বললেন, এই ব্যাপারে তোমার স্বাধীনতা আছে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৩০৫) মানতের কাফফারা মানত পূরণ না করলে ব্যক্তি কাফফারা দেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মানতের কাফফারা কসমের কাফফারার মতো। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৮৩৪) কসমের কাফফারা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর এর কাফফারা ১০ জন দরিদ্রকে মধ্যম ধরনের খাবার দান করা—যা তোমরা তোমাদের পরিবারকে খেতে দাও, অথবা তাদেরকে কাপড় দান করা কিংবা একজন দাস মুক্তি। যার সামর্থ্য নেই তার জন্য তিন দিন রোজা পালন করা। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮৯) আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
ধর্মীয় শিক্ষা
Neutral
Dhaka Tribune
৫ জুন থেকে হজ ফ্লাইট শুরু করতে চায় ধর্ম মন্ত্রণালয়
ইসলাম ধর্ম
সৌদি কর্তৃপক্ষ শাহজালাল বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের যাবতীয় কাজ শেষ করতে না পারায় আগামী ৩১ মে’র পরিবর্তে ৫ জুন থেকে হজ ফ্লাইট পরিচালনার অনুরোধ জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সোমবার (২৩ মে) বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে এ চিঠি পাঠিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, সৌদি সরকারের রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভের আওতায় এবারের হজে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবগামী শতভাগ হজযাত্রীর সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ মে প্রথম হজ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতিও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়। কিন্তু সোমবার রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভের বাস্তবায়নকারী সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এসে জানান, রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভের জন্য ৪০ জন জনবলসহ সৌদি টিম ঢাকায় আগামী ২ জুনের আগে এসে পৌঁছাতে পারবে না। প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস/যন্ত্রপাতি এখনো ঢাকায় এসে পৌঁছেনি। এসব যন্ত্রপাতি উল্লেখিত সৌদি আরবের দলের সঙ্গে ঢাকায় আসবে। যন্ত্রপাতিগুলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইনস্টল করতে হবে। এতে কিছু সময় লাগবে। ফলে, আগামী ৫ জুনের আগে তাদের পক্ষে ঢাকা থেকে হজযাত্রীদের প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।’ চিঠিতে আরও বলা হয়, ৩১ মে প্রথম হজ ফ্লাইট শুরু করা হলে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের হজযাত্রীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রথম হজ ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য ডেডিকেটেড ফ্লাইট এবং ঢাকায় প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার স্বার্থে ৩১ মের পরিবর্তে আগামী ৫ জুন থেকে হজ ফ্লাইট শুরু করা প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ মের পরিবর্তে আগামী ৫ জুন থেকে প্রথম হজ ফ্লাইট শুরু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
প্রথম আলো
আহ্লান সাহ্লান মাহে রমজান
ইসলাম ধর্ম
খোশ আমদেদ মাহে রমজান। হিজরি সালের নবম মাস পবিত্র মাহে রমজান উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আল্লাহর অপার সন্তুষ্টি ও তাঁর প্রতিশ্রুত বেহেশত লাভের সওগাত। ‘রামাদান’ শব্দটি আরবি ‘রাম্দ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দহন, প্রজ্বলন, জ্বালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা। রমজান মাসে সিয়াম সাধনা তথা রোজা পালনের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজের সমুদয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে আত্মসংযম ও কৃচ্ছ্রপূর্ণ শান্তিময় জীবনযাপন করে এবং ষড়্রিপুকে দমন করে আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে। মাহে রমজান মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের আরবি নাম ‘রামাদান’। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পারো।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩) ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম হচ্ছে রোজা। নামাজের পরেই মুসলমানদের প্রতি আল্লাহ তাআলা যে ইবাদত ফরজ করেছেন তা হচ্ছে মাহে রমজানের রোজা। দ্বিতীয় হিজরি সালে উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হয়। তবে এই রোজা অন্যান্য জাতির ওপরও ফরজ ছিল। অসাধারণ ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ মাহে রমজানে সমগ্র বিশ্বে মুসলমানদের ইমানি চেতনা সুদৃঢ় হয়, তাকওয়া বা আল্লাহভীতির নিদর্শন প্রকাশ পায় এবং অত্যন্ত গভীরভাবে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি সঞ্চারিত হয়। ইসলামের অন্যান্য বহু আদেশ-নির্দেশের মতো রোজাও ক্রমিক নিয়মে ফরজ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা কেবল মাহে রমজানে রোজা নির্দিষ্ট ও এতেই সীমাবদ্ধ করে দেননি, বরং শরিয়তসম্মত কোনো অনিবার্য কারণবশত কেউ রমজান মাসে রোজা পালন করতে না পারলে এরপর অন্য যেকোনো সময় রোজার কাজা আদায় করার পথও উন্মুক্ত রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে। এবং কেউ পীড়িত থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টকর তা চান না, এ জন্য যে তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎ পথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা কীর্তন করবে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫) মুমিনের জীবনে বছরের মধ্যে রমজান মাসটিই এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয়, তাই এ পুণ্যময় মাসের গুরুত্ব এত বেশি। একদা নবী করিম (সা.) মাহে রমজানের প্রাক্কালে খোশ আমদেদ জানিয়ে বলেন, ‘রমজান মাস আগত প্রায়, এ মাস বড়ই বরকতের মাস, আল্লাহ তাআলা বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং খাস রহমত বর্ষণ করেন, গুনাহ মাফ করেন এবং দোয়া কবুল করেন।’ এ মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে, তাই মাহে রমজানের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অপরিসীম। রমজান মাসের সম্মানজনক মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যখন রমজান মাস আগত হয় তখন আকাশ বা বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, সারা রমজান মাসে তা বন্ধ করা হয় না, আর দোজখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, সারা রমজান মাসে তা খোলা হয় না, আর শয়তানকে জিঞ্জিরে বন্দী করা হয়।’ (তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজা) আত্মিক উৎকর্ষ ও পরকালীন কল্যাণ লাভের এক বেহেশতি সওগাত এই রমজান মাস। আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমত ও নিয়ামতের অফুরন্ত ভান্ডারের দরজা রমজান মাসে রোজা পালনকারীর জন্য উন্মুক্ত করে দেন। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে যে তাৎপর্যপূর্ণ ও ফজিলতময় পবিত্র মাহে রমজানে রোজা পালনকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা পুরস্কারের ভান্ডার নির্ধারণ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেছেন: আদম সন্তানের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, তবে রোজা ব্যতীত, কেননা রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব।’ (বুখারি ও মুসলিম) রমজান এমনই এক বরকতময় মাস, যার আগমনে পুলকিত হয়ে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কিরামদের মোবারকবাদ পেশ করতেন। নবী করিম (সা.) সাহাবিদের এই মর্মে সুসংবাদ প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের সামনে রমজানের পবিত্র মাস এসেছে, যে মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন।’ (মুসলিম) রাসুলুল্লাহ (সা.) আগে থেকেই রমজান মাসের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতেন এবং রজব মাসের চাঁদ দেখে মাহে রমজান প্রাপ্তির আশায় বিভোর থাকতেন। মহানবী (সা.) আবেগভরে পরম করুণাময়ের দরবারে প্রার্থনা করতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শাবানের মধ্যে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে তখন একজন আহ্বানকারী আহ্বান করেন, ‘হে কল্যাণকামী এগিয়ে যাও! হে মন্দান্বেষী স্তব্ধ হও!।’ (তিরমিজি) এ জন্য মাহে রমজানের অসীম কল্যাণ ও বরকত লাভের প্রত্যাশার জন্য আগে থেকে সবার দৈহিক ও মানসিকভাবে ইবাদতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রমজান মাস মুসলমানদের নিয়মতান্ত্রিক পানাহার, চলাফেরা, ঘুমসহ নানা ইবাদত-বন্দেগিতে আধ্যাত্মিক জীবনে নবজাগরণ সৃষ্টি করে। মুমিন বান্দাগণ এ মাসে আল্লাহর রহমত লাভের জন্য সদা তৎপর থাকেন। প্রকৃতপক্ষে মাহে রমজান মুসলমানদের জন্য একটি বার্ষিক প্রশিক্ষণ কোর্স, যার মাধ্যমে রোজাদারদের জীবন প্রভাবিত হয়। তাই মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে মাসব্যাপী ইবাদত-বন্দেগি তথা সেহ্রি, ইফতার, তারাবি, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, ইতিকাফ, তাহাজ্জুদ, দান-সাদকা, তওবা-ইস্তেগফার প্রভৃতি আদায়ের সামগ্রিক প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
ধর্মীয় উৎসব
Positive
যুগান্তর
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) আজ
ইসলাম ধর্ম
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) আজ। সমগ্র মানবজাতির শিরোমণি মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের দিন আজ। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল শেষ নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) মা আমিনার কোলে জন্ম নেন। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের এ দিনে ৬৩ বছর বয়সে তিনি ওফাত লাভ করেন। বিশ্বের মুসলমানরা দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি বা সিরাতুন্নবি (সা.) হিসাবে পালন করেন। বাংলাদেশে আজ রাষ্ট্রীয় ছুটি। পবিত্র এ দিনটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। দিনটি উপলক্ষ্যে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। জাতীয় পতাকা ও ‘কালিমা তায়্যিবা’ অঙ্কিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপ ও লাইটপোস্টে টানানো হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় আলোকসজ্জা করা হবে। দেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থাগুলোয় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করছে। দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধনিবাস ও মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে আজ উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোয় যথাযথভাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) পালন করা হবে। দিনটি উদযাপনে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) ১৪৪৪ হিজরি উদযাপন উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানবতার মুক্তিদাতা ও ত্রাণকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। মহানবি (সা.) থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করলে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি হয়ে উঠবে উন্নত, সমৃদ্ধ, শান্তি ও কল্যাণময়। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে দৃষ্টান্ত আমাদের দেশে আছে তা হতে পারে আরও সুসংহত ও সুদৃঢ়।
ধর্মীয় উৎসব
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
আমি জানতে চাই, ফরয গোসলের সময় গোসলের পূর্বে ওযুর সময় জামা খুলে ওযু করে গোসল করা যাবে কিনা? বাথরুমে একাকি পরিধেয় কাপড় খুলে গোসল করা ইসলামী শরিয়ত সম্মত হবে কিনা? জানালে উপকৃত হবো।
ইসলাম ধর্ম
যে কোনো সময়ই জামা খুলে অজু করা যায়। ফরজ গোসলের আগেও খালি গায়ে অজু করা যায়। এতে কোনো সমস্যা নেই। বাথরুমে একাকী অবস্থায়ও পরিধেয় সব কাপড় খুলে গোসল করা ঠিক না। কেননা এটি নিজের ব্যক্তিত্বের জন্য হানিকর। আল্লাহর ফেরেশতাগণ ও অদৃশ্য জ্বিন জাতি থেকেও লজ্জা করা উচিত। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালাও আমাদের লজ্জাশীলতা পছন্দ করেন। একান্ত প্রয়োজনে সব কাপড় খোলা যায়। তবে, পারতপক্ষে এমন না করাই কর্তব্য। যে কোনো উপযোগী পরিবেশেও পূর্ণ বিবস্ত্র না হওয়া, কমপক্ষে একটি চাদর, তোয়ালে বা গামছা দিয়ে আড়াল করে নেওয়া জরুরী। প্রশ্ন : জানাযার নামাযে পিছনের মুসল্লী শুনতে পেয়েছে এমন কান্নার কারনে নামায ফাসেদ হবে কি? উত্তর : জানাযার নামাজ পূর্ণাঙ্গ নামাজ নয়। এটি একটি নামাজ সদৃশ দোয়া মাত্র। এতে অনিচ্ছাকৃতভাবে শব্দ করে কাঁদলে, নিজে বা অন্যরা শুনলে নামাজের কোনো ক্ষতি হয় না। ইচ্ছাকৃতভাবে কান্না বা অন্য কোনো আচরণ জানাযার ক্ষতি করে। প্রশ্ন : আমার ৪০ দিনের একটি ছেলে সন্তান মারা গেছে । কবরে সে কি অবস্থায় থাকবে জানতে চাই। উত্তর : ৪০ দিন বয়সী শিশু মারা গেলে কবরে সে আল্লাহর নেগাহবানীতে শান্তিতেই থাকবে। তার রূহ যেহেতু আল্লাহর তত্ত্বাবধানে নিজ ঠিকানায় অবস্থান করবে, সে জন্য কবরে বাচ্চাটির দেহ নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কিছুই নেই। তাছাড়া মাটিতে তার দেহ যেমনই থাকুক, মিছালী জগতে আল্লাহ মুসলমানের সন্তান হিসাবে তাকে ষষ্ঠ আকাশে হযরত ইবরাহীম আ. এর সাহচর্যে নিয়ে রাখতে পারেন। রূহের জগতে তার রূহ থাকবে, মিছালী জগতে সশরীরে সে শিশুদের সাথে থাকবে, পার্থিব জগতে তার দেহ দুনিয়ার কবরে থাকবে। এসব আল্লাহর মহান কুদরতের অকল্পনীয় ব্যবস্থাপনা। খোলা চোখে সীমিত জ্ঞানে মানুষ এত কিছু বোঝে না বলেই পেরেশান হয়। এ বয়সী শিশু মা বাবার জন্য, বিশেষ করে মায়ের জন্য আখেরাতে মুক্তির কারণ হয়ে থাকে। চরম কষ্টের বিষয় বলেই এখানে আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকা ও ধৈর্য ধরা এত বড় সওয়াবের কাজ। যার প্রতিদান জান্নাত। প্রশ্ন : ছোট বাচ্চাদের ( বয়স ২/৩ মাস ) পেশাব কাপড়ে লাগলে নামাজ হবে কি না ? উত্তর : ২/৩ মাসের বাচ্চার পেশাবও নাপাক। ছিটে ফোঁটা বা এক সিকি পরিমাণ হলে নাপাক হয় না। এর বেশী হলে কাপড় বা শরীর নাপাক হয়ে যায়। ধুয়ে পাক করতে হবে। পাক নাপাক বিষয়ে যারা সচেতন তারা শিশুর পেশাব থেকেও জরুরী কাপড় চোপড় দূরে সরিয়ে রাখেন। নামাজের কাপড় ছাড়া ব্যবহারিক ঘরোয়া জামা-কাপড় বাচ্চার পেশাব সহই পরিধান করা যায়। শিশু প্রতিপালনের সাথে যারা যুক্ত তাদের এছাড়া উপায়ও নেই। তবে, শিশুদের পেশাব নাপাক নয় এমন ধারণা করা ঠিক না। যে কোনো সময়ই জামা খুলে অজু করা যায়। ফরজ গোসলের আগেও খালি গায়ে অজু করা যায়। এতে কোনো সমস্যা নেই। বাথরুমে একাকী অবস্থায়ও পরিধেয় সব কাপড় খুলে গোসল করা ঠিক না। কেননা এটি নিজের ব্যক্তিত্বের জন্য হানিকর। আল্লাহর ফেরেশতাগণ ও অদৃশ্য জ্বিন জাতি থেকেও লজ্জা করা উচিত। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালাও আমাদের লজ্জাশীলতা পছন্দ করেন। একান্ত প্রয়োজনে সব কাপড় খোলা যায়। তবে, পারতপক্ষে এমন না করাই কর্তব্য। যে কোনো উপযোগী পরিবেশেও পূর্ণ বিবস্ত্র না হওয়া, কমপক্ষে একটি চাদর, তোয়ালে বা গামছা দিয়ে আড়াল করে নেওয়া জরুরী। প্রশ্ন : জানাযার নামাযে পিছনের মুসল্লী শুনতে পেয়েছে এমন কান্নার কারনে নামায ফাসেদ হবে কি? উত্তর : জানাযার নামাজ পূর্ণাঙ্গ নামাজ নয়। এটি একটি নামাজ সদৃশ দোয়া মাত্র। এতে অনিচ্ছাকৃতভাবে শব্দ করে কাঁদলে, নিজে বা অন্যরা শুনলে নামাজের কোনো ক্ষতি হয় না। ইচ্ছাকৃতভাবে কান্না বা অন্য কোনো আচরণ জানাযার ক্ষতি করে। প্রশ্ন : আমার ৪০ দিনের একটি ছেলে সন্তান মারা গেছে । কবরে সে কি অবস্থায় থাকবে জানতে চাই। উত্তর : ৪০ দিন বয়সী শিশু মারা গেলে কবরে সে আল্লাহর নেগাহবানীতে শান্তিতেই থাকবে। তার রূহ যেহেতু আল্লাহর তত্ত্বাবধানে নিজ ঠিকানায় অবস্থান করবে, সে জন্য কবরে বাচ্চাটির দেহ নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কিছুই নেই। তাছাড়া মাটিতে তার দেহ যেমনই থাকুক, মিছালী জগতে আল্লাহ মুসলমানের সন্তান হিসাবে তাকে ষষ্ঠ আকাশে হযরত ইবরাহীম আ. এর সাহচর্যে নিয়ে রাখতে পারেন। রূহের জগতে তার রূহ থাকবে, মিছালী জগতে সশরীরে সে শিশুদের সাথে থাকবে, পার্থিব জগতে তার দেহ দুনিয়ার কবরে থাকবে। এসব আল্লাহর মহান কুদরতের অকল্পনীয় ব্যবস্থাপনা। খোলা চোখে সীমিত জ্ঞানে মানুষ এত কিছু বোঝে না বলেই পেরেশান হয়। এ বয়সী শিশু মা বাবার জন্য, বিশেষ করে মায়ের জন্য আখেরাতে মুক্তির কারণ হয়ে থাকে। চরম কষ্টের বিষয় বলেই এখানে আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকা ও ধৈর্য ধরা এত বড় সওয়াবের কাজ। যার প্রতিদান জান্নাত। প্রশ্ন : ছোট বাচ্চাদের ( বয়স ২/৩ মাস ) পেশাব কাপড়ে লাগলে নামাজ হবে কি না ? উত্তর : ২/৩ মাসের বাচ্চার পেশাবও নাপাক। ছিটে ফোঁটা বা এক সিকি পরিমাণ হলে নাপাক হয় না। এর বেশী হলে কাপড় বা শরীর নাপাক হয়ে যায়। ধুয়ে পাক করতে হবে। পাক নাপাক বিষয়ে যারা সচেতন তারা শিশুর পেশাব থেকেও জরুরী কাপড় চোপড় দূরে সরিয়ে রাখেন। নামাজের কাপড় ছাড়া ব্যবহারিক ঘরোয়া জামা-কাপড় বাচ্চার পেশাব সহই পরিধান করা যায়। শিশু প্রতিপালনের সাথে যারা যুক্ত তাদের এছাড়া উপায়ও নেই। তবে, শিশুদের পেশাব নাপাক নয় এমন ধারণা করা ঠিক না।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
ভোরের কাগজ
হজে থাকছে না বয়সের বাধা
ইসলাম ধর্ম
আগামী বছর বড় পরিসরে হজ হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। তিনি বলেছেন, হজে ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে না। আগামী বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ হজে যেতে পারবেন। মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে তার সঙ্গে রিলিজিয়াস রিপোর্টার্স ফোরামের (আরআরএফ) নেতারা সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। করোনাভাইরাসের স্বাস্থ্যবিধির কারণে গত বছর সীমিত পরিসরে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় জমায়েত হয়। বাংলাদেশ থেকে ৬৫ বছরের বেশি বয়সি কেউ হজে যেতে পারেননি। এবার সেই বয়স বাধা দূর হচ্ছে। এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি সরকারের সঙ্গে আমাদের যতটুকু আনঅফিসিয়াল কথা হয়েছে, সেই অনুযায়ী এবার হয়তো পূর্ণ হজই হবে। গত বছর আমাদের যেটা হয়েছিল সেটা হয়তো নাও হতে পারে, এবার হয়তো রেশিও হিসেবে আমরা যতটুকু পাওয়ার ততটুকু পাব। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বিদেশিদের হজ পালনের সুযোগ দেয়নি সৌদি সরকার। তবে ২০২২ সালে করোনার প্রকোপ কমে এলে সীমিত সংখ্যক বিদেশিদের হজ পালনে সৌদি যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। প্রতি বছর সাধারণত ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ হজ পালনের অনুমতি পান। কিন্তু গত বছর এ সুযোগ পান মাত্র ১০ লাখ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার সুযোগ পান ৫৭ হাজার মুসল্লি।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
কালের কন্ঠ
পশুর যেসব ত্রুটি থাকলে কোরবানি হয় না
ইসলাম ধর্ম
ফকিহ আলেমরা বলেন, কোরবানি জায়েজ হওয়ার জন্য মৌলিকভাবে পশু চারটি মারাত্মক ত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে। তা হলো—ক. গুরুতর অন্ধত্ব, খ. গুরুতর অসুস্থতা, গ. খোঁড়া হওয়া, ঘ. গুরুতর স্বাস্থ্যহানি ও অঙ্গহানি ঘটা। (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, কোরবানি অধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) উল্লিখিত মূলনীতির আলোকে আলেমরা বলেন, কোনো পশুর দুই চোখ বা এক চোখ অথবা এক চোখের এক-তৃতীয়াংশের বেশি নষ্ট হয়ে গেলে তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। অনুরূপ যে পশুর একটি কান বা লেজের এক-তৃতীয়াংশের বেশি কেটে গেছে তা দ্বারাও কোরবানি করা বৈধ নয়। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৮) যে পশু এমন খোঁড়া যে মাত্র তিন পায়ের ওপর ভর করে চলে, চতুর্থ পা মাটিতে লাগেই না, কিংবা মাটিতে লাগে বটে কিন্তু তার ওপর ভর করে চলতে পারে না—এমন পশু দ্বারা কোরবানি করা বৈধ নয়। তবে যদি খোঁড়া পায়ের ওপর ভর করে চলতে পারে, তবে তা দ্বারা কোরবানি করা বৈধ। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২২৮) কোনো পশুর হাড়ের মগজ বা মজ্জা শুকিয়ে গেলে তা দ্বারা কোরবানি করা বৈধ নয়। দাঁত ওঠেনি এমন পশু দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ নয়। তবে যদি বেশির ভাগ দাঁত অবশিষ্ট থাকে তবে তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। শিং ওঠেনি এমন পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। অনুরূপ শিঙের অগ্রভাগ ভেঙে গেলেও তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। কিন্তু শিং মূল থেকে ভেঙে গিয়ে থাকলে তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নেই। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২২৭-৮; ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৭) যে পশুর গায়ে বা কাঁধে দাদ বা খুজলি হয়েছে তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। কিন্তু ঘা যদি গোশত পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং তার কারণে পশুর স্বাস্থ্যহানি ঘটে তবে এরূপ পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নেই। (হেদায়া : ৪/৪৩২) গর্ভবতী পশু কোরবানি করা : গর্ভবতী পশুও কোরবানি করা জায়েজ। তবে বাচ্চা জন্ম নেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে এমন পশু কোরবানি করা মাকরুহ। এই পশুর পরিবর্তে অন্য পশু কোরবানি করাও জায়েজ আছে। জবাই করার পর পেটে বাচ্চা পেলে তা সদকা করে দেওয়া বা জবাই করে গোশত খাওয়া উভয়টি বৈধ। তবে মৃত বাচ্চা পেলে তার গোশত খাওয়া বৈধ হবে না। (হেদায়া : ৪/৪৩২; ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২২৭)
ধর্মীয় শিক্ষা
Neutral
কালের কন্ঠ
ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম
ইসলাম ধর্ম
পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা ও অন্যের প্রয়োজনে এগিয়ে আসা ইসলামী সমাজব্যবস্থার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। সাহায্য-সহযোগিতার নানা ধরন ও উপায়ের মধ্যে অভাবগ্রস্তকে বিনা সুদে ঋণ প্রদান অন্যতম সাদকা হিসেবে বিবেচিত। বিনিময়হীন ঋণ প্রদানের মাধ্যমে অন্যকে সহযোগিতা করা হয়, অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়ানো হয়। অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত ব্যক্তিকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাকে বিশেষ সহায়তা করা হয়। তবে ঋণ প্রদান করা ভালো হলেও ঋণ গ্রহণ করা ভালো কিছু নয়। ইসলামে ঋণ প্রদানে উৎসাহ দিলেও ঋণী হতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তার পরও প্রয়োজনে ঋণের আদান-প্রদান হয়। সে ক্ষেত্রে ঋণদাতা ও গ্রহীতার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। ঋণ সুদমুক্ত হওয়া : ঋণের বিনিময়ে মূলধনের অতিরিক্ত কোনোরূপ শর্তারোপ করা যাবে না। এটিই সুদ, যা সম্পূর্ণ হারাম। সাধারণ সুদ ও চক্রবৃদ্ধি সুদ সব একই। আল্লাহ বলেন, ‘যারা সুদ খায় (কিয়ামতের দিন) তারা সেই ব্যক্তির মতো উঠবে, শয়তান যাকে স্পর্শ দ্বারা মোহাবিষ্ট করে দেয়। এটা এ জন্য হবে যে তারা বলেছিল, বিক্রিও তো সুদেরই মতো হয়ে থাকে। অথচ আল্লাহ বিক্রিকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৫) ঋণ লিপিবদ্ধ করা : ঋণদাতা ও গ্রহীতা পরস্পরের চাওয়া-পাওয়ায় একমত হয়ে লিপিবদ্ধ করে রাখা উচিত। এরপর যথাসাধ্য তা মেনে চলতে হবে। সব ধরনের চুক্তি ও লেনদেনের ক্ষেত্রেই লিখিত থাকাটা উত্তম। আল্লাহ বলেন, ‘তা ছোট হোক বা বড় হোক, মেয়াদসহ লিখতে তোমরা কোনোরূপ বিরক্ত হইয়ো না। আল্লাহর কাছে তা নায্যতর ও প্রমাণের জন্য দূঢ়তর এবং তোমাদের মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক না হওয়ার নিকটতর। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮২) অতি দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ না হওয়া : মানুষের জীবন স্বল্পমেয়াদি। যেকোনো সময় মৃত্যু এসে যেতে পারে। আগামীকাল পর্যন্ত জীবিত থাকার যেখানে নিশ্চয়তা নেই, সেখানে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে পারার নিশ্চয়তা কোথায়? মানুষের জীবনের বাস্তবতা হাদিসে এভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা উসামা ইবন জায়েদ এক শ দিনার দিয়ে একটি হালাল প্রাণীর মাদি বাচ্চা কিনলেন এই আশায় যে এক মাস পর তা খাওয়ার যোগ্য হবে। রাসুলুল্লাহহ (সা.) শুনে বললেন, ‘এক মাস মেয়াদে খরিদকারী উসামাকে দেখে তোমরা কি অবাক হচ্ছো না? উসামা তো দীর্ঘ আশা পোষণকারী। যার হাতে আমার জীবন সেই আল্লাহর কসম! আমি চোখ মেলে তাকানোর পর ভাবি, হয়তো চোখের পাতা মিলিত হওয়ার আগেই আল্লাহ আমার প্রাণ কেড়ে নেবেন। একটা পেয়ালা মুখে তুলে পান করার পর ভাবি, হয়তো পেয়ালাটা নামানোর আগেই আমি মারা যাব। এক লোকমা খাবার মুখে নেওয়ার পর ভাবি, হয়তো ওটা গিলে খাওয়ার আগেই আমার মৃত্যু হয়ে যাবে। মহান আল্লাহর কসম! তোমাদের যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে (কৃতকর্মের ফল লাভ ও হিসাব-নিকাশ) তা অবশ্যই পূর্ণ করা হবে। তোমরা কোনো ভাবেই তা প্রতিহত বা বন্ধ করতে পারবে না। ’ (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস: ১০০৮০) ঋণ পরিশোধে আন্তরিক হওয়া : বিশেষ প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করলে যতদ্রুত সম্ভব তা পরিশোধ করতে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর কাছে ঋণ পরিশোধের সামর্থ কামনা করতে হবে। ঋণ পরিশোধ করার সদিচ্ছা থাকলে এবং এ ব্যাপারে আন্তরিক হলে আল্লাহ তায়ালা তা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মানুষের সম্পদ পরিশোধের নিয়তে (ঋণ) নেয়, আল্লাহ তার পক্ষ থেকে পরিশোধ করে দেন। আর যে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে (ঋণ) নেয়, আল্লাহ তা ধ্বংস করে দেন। ’ (বুখারি, হাদিস: ২২৫৭) ঋণ পরিশোধ করতে গড়িমসি না করা : সামর্থ্য থাকার পরও ঋণ পরিশোধ না করা বড় অন্যায়। সামর্থ্য থাকার পরও ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করাকে নবী (সা.) জুলুম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সামর্থ্যবানদের পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম। ’ (বুখারি, হাদিস: ২১৬৬; মুসলিম, হাদিস: ৪০৮৫) ঋণদাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ : ঋণ প্রদান করার জন্য ঋণদাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তার জন্য দোয়া করা সুন্নত। এতে সে খুশি হয় এবং ঋণদানে উৎসাহ বোধ করে। আবদুল্লাহ ইবনে আবি রাবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, হুনাইন যুদ্ধের সময় নবী (সা.) আমার কাছ থেকে ৩০ বা ৪০ হাজার (দিরহাম) ঋণ নিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তিনি তা পরিশোধ করেন এবং বলেন, ‘বারকাল্লাহু লাকা ফি আহলিকা ওয়া মালিকা’। (আল্লাহ তোমার পরিবারে ও সম্পদে বরকত দান করুন) ঋণের বিনিময় হলো, পরিশোধ ও কৃতজ্ঞতা। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৬৪১০; নাসায়ি, হাদিস: ৪৬৮৩) ঋণগ্রহীতার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া : ঋণগ্রহীতা বাস্তবিকই অসচ্ছল ও অভাবী হলে ঋণ দাতার উচিত ঋণগ্রহীতার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি অভাবগ্রস্ত হয় তাহলে সচ্ছলতা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দেওয়া বিধেয়। আর যদি তোমরা ছেড়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮০) হাদিসে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অভাবী ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দেয় অথবা ক্ষমা করে দেয়, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের নিচে আশ্রয় দেবেন যে দিন তাঁর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩০৬) ঋণগ্রহীতাকে কষ্ট না দেওয়া : খোঁটা বা অন্য কোনোভাবে ঋণগ্রহীতাকে কষ্ট দিলে ঋণ প্রদানের সাওয়াব নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঋণ দেওয়া অপেক্ষা ঋণপ্রার্থীর সঙ্গে সুন্দর কথা বলা ও দোয়া করাই উত্তম। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের সদাকাকে সেই ব্যক্তির মতো নষ্ট কোরো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এ রকম—যেমন এক মসৃণ পাথরের ওপর মাটি জমে আছে, অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং সেটিকে (পুনরায়) মসৃণ পাথর বানিয়ে দেয়। এরূপ লোক যা উপার্জন করে তার কিছুই তাদের হস্তগত হয় না। আর আল্লাহ কাফেরদের হিদায়াতে উপনীত করেন না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬৪) নম্রতার সঙ্গে পাওনা চাওয়া : ঋণ পরিশোধের সময় হলে বা প্রয়োজনে আগেও পাওনা চাওয়া যায়। তবে সর্বাবস্থায় নম্রতার সঙ্গে চাওয়া উচিত। কঠোরতা, গালাগাল, ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকা উচিত। উত্তম চরিত্র মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। লেনদেন করতে উত্তম চরিত্রের প্রকাশ একান্ত কাম্য। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করেন যে নম্রতার সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় করে ও পাওনা ফিরিয়ে চায়। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৯৭০) পরিশেষে বলা যায়, মানুষের একার পক্ষে সব সময় সব প্রয়োজন পূরণ সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে পরস্পরকে সাহায্য করতে হয়। প্রয়োজনে ঋণের আদান-প্রদান হয়। বিশেষ প্রয়োজনে কেউ ঋণ চাইলে সামর্থ্য থাকলে এবং সমীচীন মনে হলে ঋণ দেওয়া উচিত। আবার ঋণগ্রহীতারও ঋণ পরিশোধে আন্তরিক হওয়া উচিত।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
Dhaka Tribune
১৫ নভেম্বর থেকে শুরু হজের নিবন্ধন
ইসলাম ধর্ম
২০২৪ সালের হজে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের নিবন্ধন শুরু হবে আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে। নিবন্ধন চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) ২০২৪ সালের হজের নিবন্ধন বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ১৬ জুন (১৪৪৫ হিজরি সনের ৯ জিলহজ) হজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি মাধ্যমের কোটায় ১০ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি এজেন্সির কোটায় এক লাখ ১৭ হাজার জন হজ পালন করতে পারবেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। সরকারিভাবে আগামী বছর হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। বিশেষ হজ প্যাকেজের মধ্যমে হজ পালনে খরচ হবে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। সরকারি হজ প্যাকেজের সঙ্গে সমন্বয় করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবে। প্রাক-নিবন্ধনের সময় নেওয়া ২৯ হাজার টাকা বাদে প্যাকেজের বাকি টাকা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, নিবন্ধনের জন্য হজযাত্রীদের পাসপোর্টের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে হবে। হজযাত্রীরা নিবন্ধনের আগে হজ প্যাকেজ সম্পর্কে অবহিত হয়ে নিবন্ধন করবেন, নিবন্ধনের পর প্যাকেজ পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না। নিবন্ধনের পর হজে যেতে অসমর্থ্য হলে এরই মধ্যে ব্যয় করা অর্থ কর্তনের পর অবশিষ্ট অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। হজযাত্রীর সুযোগ-সুবিধা উল্লেখ করে হজ এজেন্সি হজযাত্রীর সঙ্গে লিখিত চুক্তি সম্পাদন করবে। এজেন্সি তার নিবন্ধিত হজযাত্রীর সর্বোচ্চ ৫% প্রতিস্থাপন করতে পারবে বলে নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
স্নিগ্ধ ফজরের অনন্য উপকারিতা
ইসলাম ধর্ম
ইসলাম যে পাঁচটি স্তম্ভের ওপর সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে সালাত বা নামাজ তার অন্যতম। ইমানের পর সালাতের গুরুত্ব সর্বাগ্রে। সালাত জীবনে সফলতা বয়ে আনে। পবিত্র ও আলোকিত জীবনবোধে উদ্বুদ্ধ করে। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাত হিসাব হবে। যদি নামাজ ঠিক হয়, তবে তার সব আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি নামাজ বিনষ্ট হয় তবে তার সব আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। তাবরানি : ১৯২৯। নামাজ এমন এক ইবাদত যা সারা বছর দৈনিক পাঁচবার আদায় করতে হয়। মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অবস্থাতেই নামাজ মাফ হয় না। এমনকি মৃত্যুশয্যায় স্বাভাবিক জ্ঞান থাকা অবস্থায় নামাজ থেকে বিরত থাকার কোনো বিধান নেই। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজের গুরুত্ব আরও বেশি। আজকে আমরা ফজরের নামাজ আদায়ের বিশেষ কয়েকটি উপকারী দিক নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এক. ফজরের নামাজে দাঁড়ানো, সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার সমান। হাদিসে হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত জেগে নামাজ পড়ল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন পুরো রাত জেগে নামাজ পড়ল। সহিহ মুসলিম : ১০৯৬। দুই. ওই দিনের পুরোটা আল্লাহর জিম্মায় থাকার সৌভাগ্য হয়। ফজরের নামাজ পড়লেই শুধু এ ঈর্ষণীয় সৌভাগ্য লাভ করা সম্ভব। সাহাবি হজরত জুনদব ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সুফিয়ান আল বাজালি (রা.) বলেন, হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করল, সে আল্লাহর জিম্মায় চলে গেল। অতএব আল্লাহ যেন তার জিম্মার বিষয়ে তোমাদের কোনোরূপ অভিযুক্ত না করেন। সুনানে তিরমিজি : ২১৮৪। তিন. ফজরের নামাজ কিয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দেবে। হজরত বুরাইদা আল আসলামি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যারা আঁধারে (ফজর নামাজে) মসজিদের দিকে হেঁটে যায় তাদের কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূর প্রাপ্তির সুসংবাদ দাও। সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৪। চার. জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত প্রাপ্তির সুসংবাদ। হজরত আবু জুহাইর উমারা ইবনে রুয়াইবা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে (ফজর ও আসরের নামাজ) আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। সহিহ মুসলিম : ৬৩৪। পাঁচ. মুনাফেকি থেকে মুক্তি পাবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুনাফেকদের ওপর ফজর ও এশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। যদি তারা এর ফজিলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হতো। সহিহ বোখারি : ৬৫৭। ছয়. সরাসরি আল্লাহর দরবারে নিজের নাম আলোচিত হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কাছে পালাক্রমে দিনে ও রাতে ফেরেশতারা আসে। তারা আসর ও ফজরের সময় একত্রিত হয়। যারা রাতের কর্তব্যে ছিল তারা ওপরে উঠে যায়। আল্লাহ তো সব জানেন, তবুও ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, আমার বান্দাদের কেমন রেখে এলে? ফেরেশতারা বলে, আমরা তাদের নামাজরত রেখে এসেছি। যখন গিয়েছিলাম তখনো তারা নামাজরত ছিল। সহিহ বোখারি : ৫৪০। সাত. দুনিয়া ও আখেরাতের সেরা বস্তু অর্জিত হয়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ফজরের দুই রাকাত দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, সবকিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। সহিহ মুসলিম : ১২৪০। আট. পরিপূর্ণ এক হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে, যদি সে সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হরজত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায়ান্তে বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থেকে সূর্য উদয় হওয়ার পর দুই রাকাত নফল নামাজ (ইশরাক) আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ এক হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে। ‘পরিপূর্ণ’ এ শব্দটি তিনি (নবী করিম সা.) তিনবার বলেছেন। সুনানে তিরমিজি : ৫৮৬। ৯. তুলনাহীন গণিমত লাভ করবে। খলিফা হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) নাজদের দিকে এক অভিযানে একটি সেনাদল পাঠান। তারা প্রচুর গণিমতের সম্পদ অর্জন করে এবং তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। তাদের সঙ্গে যায়নি এমন এক লোক বলল, অল্প সময়ের মধ্যে এত পরিমাণে উত্তম গণিমত নিয়ে এদের চেয়ে তাড়াতাড়ি আর কোনো সেনাদলকে আমরা ফিরে আসতে দেখিনি। তখন হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদের এমন এক দলের কথা বলব না, যারা এদের চেয়ে তাড়াতাড়ি উত্তম গণিমত নিয়ে ফিরে আসে? যারা ফজরের নামাজের জামাতে হাজির হয়, (নামাজ শেষে) সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহতায়ালার জিকির করতে থাকে, তারাই অল্প সময়ের মধ্যে উত্তম গণিমতসহ প্রত্যাবর্তনকারী। সুনানে তিরমিজি : ৩৬৪১।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Neutral
প্রথম আলো
মা-বাবার কবর জিয়ারতের দোয়া
ইসলাম ধর্ম
মা-বাবার কবরের পাশে গেলে মন বিষণ্ন হওয়া বা চোখ অশ্রুসিক্ত হওয়া স্বাভাবিক। তাই কবরের কাছে গিয়ে হা–হুতাশ করা ঠিক নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর আম্মার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে ক্রন্দন করেন। তাঁর সঙ্গীসাথীরাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আমার রবের কাছে আমার মায়ের কবর জিয়ারত করার অনুমতি চাইলে তিনি এর অনুমতি দিয়েছেন। কাজেই তোমরা কবর জিয়ারত করবে। কেননা, তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ) কবর জিয়ারত করার নিয়ম কবরের পাশে গিয়ে দোয়া পড়া, মা-বাবার মুক্তির জন্য দোয়া করাই জিয়ারতের উদ্দেশ্য। নিজেদের জন্যও দোয়া করা উত্তম। জিয়ারত শুরু করতে হয় এই বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম দারা ক্বাওমিম মুমিনিনা ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন।’ (মুসলিম) এর পর দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা ও ইখলাস এবং আয়াতুল কুরসি পড়তে হবে। তারপর মা-বাবার (মৃত ব্যক্তির) রুহের মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রার্থনা করে মোনাজাত করতে হবে। কবর জিয়ারতের সময় কবর জিয়ারতের জন্য কোনো সময়ের বিধিনিষেধ নেই। যেকোনো দিন যেকোনো সময় কবর জিয়ারত করা যায়। তবে জুমার দিন কবর জিয়ারত করলে জিয়ারতকারীর জন্যও তা ক্ষমালাভের কারণ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ কবর জিয়ারতের দোয়া কবর জিয়ারতের দোয়া সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যে দোয়াগুলো পড়তেন, তা হলো, ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আছার।’ এর অর্থ, ‘হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের আগে তোমরা কবরে গেছ এবং আমরা পরে আসছি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১,০৫৩) আসসালামু আলাইকুম দার ক্বাওমিম মুউমিনি না ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুনা। অর্থ: মুমিন ঘরবাসীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশা আল্লাহ, আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব। (সহিহ মুসলিম: ২৪৯) কবরস্থানে পবিত্র হয়ে গিয়ে প্রথমে সালামের উল্লেখসহ দোয়া পড়তে হবে। এ ছাড়া অন্য মুখস্থ সুরা পড়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে হবে। কবরস্থানে যা করবেন না মহানবী (সা.) কবরস্থানে বেশ কিছু কাজ না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলোর কয়েকটি তুলে ধরা হলো: ১.রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিয়ো না এবং কবরগুলোকে উৎসবের জায়গা বানিয়ো না।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২,০৪২) ২.রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরো পৃথিবীই মসজিদ, শুধু কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩১৭) ৩. কবরস্থানে পশু জবাই করা যাবে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামে (কবরের পাশে) কোনো জবাই নেই। জাহিলি যুগের লোকজন কবরে গাভি বা ছাগল জবাই করত।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩,২২২) ৪.কবরের ওপরে বসা নিষেধ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কবরের ওপর বসবে, এর চেয়ে উত্তম হলো আগুনের ওপর বসা। আর সেই আগুন যেন তার কাপড় পুড়িয়ে দিয়ে চামড়া পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯৭১) ৫.কবরের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা নিষেধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কবরের দিকে (মুখ করে) নামাজ আদায় করবে না এবং তার ওপর বসবেও না।’ (মুসলিম, হাদিস: ৯৭২)
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
কালের কন্ঠ
মৃত্যুর পর মুমিনের জীবন কেমন হবে
ইসলাম ধর্ম
মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সময়টুকু মানুষ কবর তথা সমাধিস্থলে অবস্থান করবে। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় এই সময়কাল ‘বারজাখ’ বলা হয়। বারজাখ অর্থ দুটি জিনিসের মধ্যবর্তীয় অন্তরাল। পবিত্র কোরআনে মৃত্যু থেকে কিয়ামতের মধ্যবর্তী সময়কে ‘বারজাখ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে পুনরায় প্রেরণ করুন। যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি যা আমি আগে করিনি। না, এটা হওয়ার নয়। এটা তো তার একটি কথা মাত্র। তাদের সম্মুখে বারজাখ থাকবে উত্থান দিবস পর্যন্ত। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৯৯-১০০) মৃত্যু থেকেই নতুন জীবন : মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নতুন জীবনে প্রবেশ করে। সেটা হলো ‘আলমে বারজাখ’। ইমাম শাবি (রহ.) বলেন, বারজাখ হলো দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যবর্তী একটি জীবন। যা যেমন পার্থিব জীবন নয়, তেমন পরকালীন জীবনও নয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/৩২১) ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসাবাদ : কবরের জীবনের প্রথম ধাপ হলো ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসাবাদ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তি বা তোমাদের কাউকে যখন কবরে রাখা হয়, তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখবিশিষ্ট দুজন ফেরেশতা আসেন তার কাছে। তাঁদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্যজনকে নাকির বলা হয়। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৭১) যা জিজ্ঞাসা করা হবে : বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের ভাষ্য মতে, কবরে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। তা হলো, তোমার প্রতিপালক কে? তোমার দ্বিন বা ধর্ম কি? তোমার নবী কে? (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩১২০) প্রশ্নের উত্তরে মুমিন ব্যক্তি বলবে, আমার প্রতিপালক আল্লাহ, আমার ধর্ম ইসলাম, আর তিনি হলেন আমাদের মাঝে প্রেরিত রাসুল মুহাম্মদ (সা.)। তখন ফেরেশতারা তাদের বলবে, জাহান্নামে তোমার জন্য নির্ধারিত স্থান দেখে নাও। আল্লাহ এই স্থানের পরিবর্তে তোমাকে জান্নাতে স্থান দান করেছেন। অতঃপর তাকে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় স্থান দেখানো হবে। অন্যদিকে মুনাফিক ও অবিশ্বাসীরা উত্তর দেবে আমি জানি না। তখন তাকে বলা হবে, তুমি জানতে চাওনি, তুমি পাঠ করোনি। এরপর সে শাস্তির মুখোমুখি হবে। (শহরুত তহাবিয়্যা : ২/৫৭২-৫৭৮) কবর না দিলেও কি শাস্তি হয় : আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস হলো মৃত্যুর পর সবাই মুনকার-নাকিরের প্রশ্নের মুখোমুখি হবে এবং বারজাখের শাস্তি ও সুখ ভোগ করবে। চাই তাকে দাফন করা হোক বা না হোক। এমনকি তার দেহ যদি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, হিংস্র প্রাণী তাকে খেয়ে ফেলে, সে পুরে ভস্ম হয়ে যায়, তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয় অথবা ছাই বানিয়ে তার দেহাবশেষ বাতাসে উড়িয়ে দেয় বা সমুদ্রে ডুবে যায়। যেমন নুহ (আ.)-এর সম্প্রদায় সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তাদের অপরাধের জন্য তাদের নিমজ্জিত করা হয়েছিল এবং পরে তাদের দাখিল করা হয়েছিল আগুনে। এরপর তারা কাউকে আল্লাহর মোকাবেলায় পায়নি সাহায্যকারী। ’ (সুরা নুহ, আয়াত : ২৫) ঘুমিয়ে থাকবে মুমিন ব্যক্তি : আলমে বারজাখে মুমিন ব্যক্তি জান্নাতের সুখ-শান্তি উপভোগ করবে এবং প্রশান্তচিত্তে ঘুমিয়ে থাকবে। হাদিসে এসেছে, মুমিনের উত্তরে সন্তুষ্ট হয়ে মুনকার-নাকির বলবে, আমরা জানতাম তুমি এ কথাই বলবে। তারপর সে ব্যক্তির কবর দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ৭০ গজ করে প্রশস্ত করা হবে এবং তার জন্য এখানে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাকো। তখন সে বলবে, আমার পরিবার-পরিজনকে সুসংবাদ দেওয়া জন্য আমি তাদের কাছে ফিরে যেতে চাই। তারা উভয়ে বলবে, বাসরঘরের বরের মতো তুমি এখানে এমন গভীর ঘুম দাও, যাকে তার পরিবারের সবচেয়ে প্রিয়জন ছাড়া আর কোনো ব্যক্তি জাগিয়ে তুলতে পারে না। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৭১) এদিকে ইঙ্গিত দিয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কবর হলো জান্নাতের উদ্যানগুলোর একটি উদ্যান অথবা জাহান্নামের গর্তগুলোর একটি গর্ত। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৬০) জাহান্নামিদের জন্য শাস্তি : জাহান্নামিরা মৃত্যুর পর থেকেই শাস্তির মুখোমুখি হবে। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর আল্লাহ তাকে তাদের ষড়যন্ত্র অনিষ্ট থেকে রক্ষা করলেন এবং কঠিন শাস্তি পরিবেষ্টন করল ফিরাউন সম্প্রদায়কে। তাদের উপস্থিত করা হয় আগুনের সম্মুখে সকাল-সন্ধ্যা এবং যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন বলা হবে, ফিরাউন সম্প্রদায়কে নিক্ষেপ কোরো কঠিন শাস্তিতে। ’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৪৫-৪৬) শহীদের মৃত্যু নেই : আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের বাহ্যত মৃত্যু হলেও, প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের কখনোই মৃত মনে কোরো না; বরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তারা জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দিয়েছেন তাতে তারা আনন্দিত এবং তাদের পেছনে যারা এখনো তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি তাদের জন্য আনন্দ প্রকাশ করে এ জন্য যে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৬৯-১৭০) মৃত্যুর পরও যারা নেকি লাভ করবে : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার যেসব কাজ ও তার যেসব পুণ্য তার সঙ্গে যুক্ত হয় তা হলো, যে জ্ঞান সে অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং তার প্রচার করেছে, তার রেখে যাওয়া সৎকর্মপরায়ণ সন্তান, কোরআন, যা সে ওয়ারিশি সূত্রে রেখে গেছে অথবা মাসজিদ, যা সে নির্মাণ করিয়েছে অথবা পথিক-মুসাফিরদের জন্য যে সরাইখানা নির্মাণ করেছে অথবা পানির নহর, যা সে খনন করেছে অথবা তার জীবদ্দশায় ও সুস্থাবস্থায় তার সম্পদ থেকে যে দান-খয়রাত করেছে, তা তার মৃত্যুর পরও তার সঙ্গে (তার আমলনামায়) যুক্ত হবে। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪১) মুমিন আত্মার সম্মিলন : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর মুমিন ব্যক্তির আত্মাকে যখন মুমিনদের রুহগুলোর কাছে নিয়ে যান। তোমাদের কেউ প্রবাস থেকে এলে তোমরা যেরূপ আনন্দিত হও, মুমিনদের রুহও ওই নবাগত রুহকে পেয়ে ততোধিক আনন্দিত হয়। মুমিনদের রুহ নবাগত রুহকে জিজ্ঞাসা করে যে অমুক ব্যক্তি দুনিয়াতে কী কাজ করেছে? তখন ফেরেশতারা বলেন, তার সম্পর্কে তোমরা কি জিজ্ঞাসা করবে? সে দুনিয়ার চিন্তা-ভাবনায় ছিল। যখন নবাগত রুহ বলে, সে কি তোমাদের কাছে আসেনি? তখন আসমানের ফেরেশতারা বলেন, তাকে তার বাসস্থান হাবিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৮৩৩)
ধর্মীয় শিক্ষা
Neutral
দৈনিক ইনকিলাব
অপুষ্টিতে গাজার শিশুরা, ক্ষুধায় মাথা ঘোরাচ্ছে
ইসলাম ধর্ম
বন্দি বিনিময়ের জন্য ইসরাইলকে যে শর্ত দিলো হামাস :: বৈশ্বিক নিষ্ক্রিয়তার নিন্দা এরদোগানের :: খান ইউনিসের ২০ শতাংশ বাসিন্দার জন্য ইসরাইলের আল্টিমেটাম যুক্তরাষ্ট্র যদি ইয়েমেনে হামলা করে তাহলে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজে হামলার হুমকি দিয়েছে দেশটির ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। গত বুধবার হুথি নেতা আবদেল-মালেক আল-হুথি এ হুমকি দিয়েছেন। ইয়েমেনের বেশিরভাগ ভূখ-ের নিয়ন্ত্রণে থাকা হুথি বিদ্রোহীদের নেতা আবদেল-মালেক আল-হুথি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি উত্তেজনা বাড়াতে চায় এবং আমাদের দেশে হামলা বা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর মতো বোকামি করতে চায় তাহলে আমরা বসে থাকব না। টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে তিনি আরো বলেছেন, কোনো মার্কিনি আমাদের টার্গেট করলে তাকে আমরা নিশানা করব। মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, স্বার্থ ও নৌ চলাচলকে আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও সামরিক অভিযানের নিশানা হবে। হুথি নেতা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চাইলে তাদের মনে রাখা উচিত যে, আমরা তাদের ভয় পাই না এবং তাদের পুরো জনগোষ্ঠীর মুখোমুখি হতে হবে। ইয়েমেনে মার্কিন সেনা পাঠানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, আফগানিস্তান ও ভিয়েতনামের চেয়ে তাদের পরিণতি খারাপ হবে। গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে লোহিত সাগরে বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করছে হুথিরা। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের কয়েকটি জাহাজ কোম্পানি সুয়েজ খাল দিয়ে নৌ চলাচল এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লোহিত সাগরে হুথিদের একের পর এক হামলার প্রতিবাদে ১০ দেশের জোট ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই জোটে যোগ দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বাহরাইন, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সিসিলিস এবং স্পেন। বন্দি বিনিময়ের জন্য ইসরাইলকে যে শর্ত দিল হামাস : ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ না হলে বন্দি বিনিময়ে কোনো আলোচনা হবে না বলে জানিয়েছে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী হামাস। গতকাল এক বিবৃতিতে গাজার শাসক গোষ্ঠীটি এই অবস্থান তুলে ধরেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তা হলো, আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ না হলে বন্দিদের নিয়ে বা বন্দি বিনিময়ে কোনো আলোচনা হবে না। ইসরাইল ৪০ বন্দির মুক্তির বিনিময়ে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু হামাস তাতে রাজি হয়নি বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে। ইসরাইলি প্রস্তাব নিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া বর্তমানে মিসরে রয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন, আর দরকার আরো মানবিক সহায়তা। এই প্রথমবারের মতো গাজার আরেকটি সংগঠন ইসলামিক জিহাদকেও আলোচনায় ডাকা হয়েছে। তারাও জানিয়ে দিয়েছে, গাজায় আটক প্রায় ১০০ জনের বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে আটক সব ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি দাবি করেছে। তারাও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি তুলেছে। আলোচনার সঙ্গে জড়িত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেন, হামাস মানবিক বিরতি চাচ্ছে না। তারা গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের পূর্ণ অবসান চায়। হামাস মনে করে, বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হলে ইসরাইল আরো নৃশংসভাবে হামলা চালাতে থাকবে। কাজেই বন্দিদের বিনিময়েই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দরকার। এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আমাদের সব বন্দির মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত গাজা যুদ্ধ বন্ধ হবে না। গাজা উপত্যকা থেকে কেউ যেন আর কোনো দিন ইসরাইলের জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করাকেও গাজা আগ্রাসনের অন্যতম লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন নেতানিয়াহু। বুধবার এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু এসব কথা বলেন। নেতানিয়াহু বলেন, যেসব লক্ষ্যে গাজায় অভিযান চলছে তার একটি হচ্ছে হামাসকে নির্মূল করা। বৈশ্বিক নিষ্ক্রিয়তার নিন্দা এরদোগানের : গাজা যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব এখনো কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করলেন প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। বুধবার দেশটির একটি বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তুর্কি প্রেসিডেন্ট গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে একে মানবতার জন্য লজ্জাজনক আখ্যায়িত করে বলেন, ইসরাইল যখন গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে তখন বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো নিষ্ক্রিয়। এটা খুব লজ্জাজনক। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ধর্মতত্ত্ববিদ সুলেমান উলুদাগ, ইতিহাসবিদ আলী বিরিঞ্চি, গায়ক এমেল সাইন, চিত্রশিল্পী আলহামি আতালে, পরিচালক সামি সেকেরোগ্লু, ডিজিটাল শিল্পী রেফিক আনাদোল, স্থপতি সিনান জেনিম এবং লেখক নাজান বেকিরোগ্লুসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। খান ইউনিসের ২০ শতাংশ বাসিন্দার জন্য ইসরাইলের আল্টিমেটাম : ইসরাইল একটি নতুন আলটিমেটাম জারি করেছে, অবরুদ্ধ গাজার প্রধান দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটির বিশাল এলাকার বাসিন্দাদের পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, জাতিসংঘ বলেছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় [ওসিএইচএ] বলেছে যে, ইসরাইল নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে যেখানে খান ইউনিস শহরের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে যা ব্যাপকভাবে বহির্গমনের জন্য চিহ্নিত ছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে এলাকাটি ১ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি লোকের বাসস্থান ছিল। এ অঞ্চলে ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্রও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যেখানে ১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিকে রাখা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই পূর্বে উত্তর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আরেক যোদ্ধাকে হারালো হিজবুল্লাহ : লেবাননের হিজবুল্লাহ বলেছে যে, ইসরাইলের সাথে সীমান্ত এলাকায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সাথে লড়াইয়ে তাদের একজন যোদ্ধা নিহত হয়েছে। লেবাননের গোষ্ঠীর একটি বিবৃতিতে যোদ্ধাটিকে ইব্রাহিম রাসলান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এটি বলা হয়েছে যে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলের ধ্বংসাত্মক আক্রমণের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতি হিজবুল্লাহর সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ‘জেরুজালেমের রাস্তায়’ হত্যা করা হয়েছে। গোষ্ঠীটি আরো বলেছে যে, তারা আল-আবাদে একটি ইসরাইলি সামরিক সাইট এবং উপযুক্ত অস্ত্র দিয়ে দুর্গকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং ‘নিশ্চিত হতাহতের’ ঘটনা ঘটিয়েছে। আলাদাভাবে, লেবাননের সরকারি বার্তা সংস্থা এনএনএ-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লেবানিজ গ্রুপটি বলেছে যে, তারা ‘বিরকাত রিশা সাইটের আশেপাশে একটি ইসরাইলি পদাতিক বাহিনীকে টার্গেট করে’ এবং ইসরাইলি সেনাদের হতাহতের ঘটনা ঘটায়। হিজবুল্লাহর পূর্ববর্তী বিবৃতি অনুসারে, ৮ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিহত যোদ্ধাদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৮-এ। অপুষ্টিতে গাজার শিশুরা ক্ষুধায় মাথা ঘোরাচ্ছে : দক্ষিণ গাজায় বাস্তুচ্যুত শিশুরা মুরগির জন্য কান্না করছিল, কিন্তু তাদের মা সারাদিনের জন্য পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য রেখে গিয়েছিলেন একটি মটরদানার টিন। এক ব্যক্তি তাকে কাঁদতে দেখে তার প্রতি করুণা করে রেখে গিয়েছিলেন সেটি। তিনি বলেছিলেন যে, তার বাচ্চাদের ওজন কমে গেছে এবং তারা পর্যাপ্ত না খাওয়ার কারণে মাথা ঘোরাচ্ছে। গাজার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আমার বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য ভিক্ষা করছিলাম এবং কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি সমাজকল্যাণ অফিসে যাই, তারা বলে মসজিদে যাও। আমি মসজিদে যাই, তারা বলে অ্যাফেয়ার্সে যাও’। কল্যাণ মন্ত্রণালয় যা সাধারণত কষ্টে থাকা মানুষের কাছে ময়দার মতো মৌলিক পণ্য বিতরণের আয়োজন করে। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী ফিলিস্তিনিদের অগণিত সমস্যার মধ্যে ক্ষুধা সবচেয়ে চাপে পরিণত হয়েছে। সাহায্য ট্রাকগুলো প্রয়োজনের সামান্য অংশই আনতে সক্ষম এবং যুদ্ধের বিশৃঙ্খলার কারণে বিতরণ অসম। কিছু ট্রাক খাবারের জন্য মরিয়া লোকরা থামিয়ে লুট করেছে। আর বিধ্বস্ত অঞ্চলের কিছু অংশ তাদের নাগালের বাইরে, কারণ প্রবেশের রাস্তাগুলো সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্র। এমনকি রাফাহতে, যেটির মধ্য দিয়ে মিসরে একটি ক্রসিং রয়েছে যার মাধ্যমে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো প্রবেশ করে এবং এটি এমন একটি এলাকা যেখানে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বেসামরিকদের আশ্রয় নিতে বলেছে, খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানির অভাব এতটাই তীব্র যে, এটি মানুষের ওজন হ্রাস করে এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাফাহ-এর প্রাথমিক পরিচর্যা চিকিৎসক সামিয়া আবু সালাহ বলেন, ‘আমরা লোকেদের বিষণœ অবস্থায় দেখতে শুরু করেছি’। তিনি বলেন, ওজন হ্রাস এবং রক্তাল্পতা একটি সাধারণ বিষয় এবং লোকেরা এত দুর্বল এবং ডিহাইড্রেটেড ছিল তারা বুকের সংক্রমণ এবং ত্বকের অবস্থার জন্য বেশি সংবেদনশীল। শিশুরা বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং তাদের বৃদ্ধি প্রভাবিত হবে। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সামরিক অভিযানে গৃহহীন গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার বেশিরভাগের মতো তাহানি নাসর রাফাহতে একটি তাঁবু শিবিরে শুধুমাত্র একটি বিষয়ের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন: কীভাবে পর্যাপ্ত খাবার এবং পানি খুঁজে পাওয়া যায় যাতে অন্তত একটি দিন কাটতে পারে। পেঁয়াজ একটি খাবার : ‘আমার বাচ্চারা আজ আমাকে বলেছে যে, তারা মুরগির গোশত খেতে চাইছে। আমি তাদের মুরগি কোথায় পাব? কোথায়? আমি কি জানি? আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন’ নাসর বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ‘দুদিন ধরে আমরা কোনো খাবার পাইনি। আমি কিভাবে আমার বাচ্চাদের বোকা বানাবো? কিছু পাস্তা দিয়ে? কিছু মসুর ডাল? যদি খুঁজে পেতাম’! তিনি বলেন, কখনও কখনও তিনি শুধুমাত্র পেঁয়াজকে খাবার তৈরির অবলম্বন করেছিলেন। নাসর তার তাঁবুতে মটরের টিন আনতে গেল সে বলল, একজন দয়ালু লোক তাকে দিয়েছে, যদিও সে নিজের জন্য কিনেছিল। ‘এই তো। সারাদিনের জন্য এইটুকুই’ সে রাগত স্বরে বলল। একটি চরম ঘটনা হওয়া থেকে দূরে, নাসরের দেয়া বিবরণটি রাফাহ এবং অন্য কোথাও রয়টার্সের সাথে কথা বলার অনেক সাক্ষাৎকারকারীর গল্পের প্রতিধ্বনি করেছে। লোকেরা দিনে মাত্র একবার খাওয়ার কথা বলেছিল, অপর্যাপ্ত পুষ্টিসহ অপর্যাপ্ত খাবার, রেশনের পানি, নোংরা পানি পান করে শিশুদের ডায়রিয়া হওয়ার কথা বলেছিল। ইসরাইলে হামাস-চালিত হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজা স্ট্রিপের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় লাগাতার বর্বরতায় ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে যাদের মধ্যে ৮ হাজারের বেশি শিশু এবং ৬ হাজারের বেশি মহিলা। সেখানকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, গাজায় ইসরাইল একটি মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়েছে। বাস্তুচ্যুত মহিলা মাহা আল-আলমি দক্ষিণ গাজা শহরের খান ইউনিসের একটি স্কুলে আটটি শিশু এবং নাতি-নাতনি নিয়ে আশ্রয় নিয়ে আছেন। তিনি বলেছেন যে, ক্ষুধার অভিজ্ঞতাই সবাইকে বেশি আহত করছে। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে বলছি, আল্লাহর ইচ্ছায় একবার যুদ্ধ শেষ হলে ফিলিস্তিনি জনগণের মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সামনে বসতে হবে’।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
ভোরের কাগজ
ধর্মকে কেন বারবার আঘাত করা হয়?
অন্যান্য
দিন দিন যেন দেশে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ বাড়ছে। আমাদের সমাজে দেখতে পাই মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং উপাসনালয়ে হামলা হতে। ভেঙে দেয়া হয় মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা। সম্প্রতি যা ঘটে গেল সেটা তো আমরা দেখলাম। রংপুরের পীরগঞ্জে জেলেপাড়ায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কিছু সন্ত্রাসী। এর আগে কুমিল্লায় পবিত্র কুরআন শরিফ রেখে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেছে কিছু সন্ত্রাসী। যাতে বাংলার হিন্দু-মুসলমান আলাদা হয়ে যেতে পারে, দাঙ্গায় জড়াতে পারে। সেটা তারা পেরেছেও, যার ফল হিসেবে কিছু ধর্মান্ধ যাচাই-বাছাই ছাড়া পূজামণ্ডপে ভাঙচুর চালিয়েছে। এরপর ফেনী বড় মসজিদে কিছু সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এভাবে এর শেষ কোথায় হয়, সেটাই বড় প্রশ্ন এখন! আমরা যদি একদম অতীতে ফিরে দেখি তবে দেখতে পাব ২০০২ সালের রঘুনাথ মন্দির হামলা, ২০১২ সালের কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা, ২০১৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিএনএস ইশা খাঁ ঘাঁটি সংলঘœ মসজিদে বোমা হামলা চালানো হয়। এছাড়া ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাজশাহীর বাগমারা এলাকায় একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় কিছু আত্মঘাতী হামলাকারী। এই হামলায় দুর্বৃত্তরাসহ নিহত হয় একজন এবং আহত হয় ৩০ জনেরও অধিক। ২০১৬ সালের ৮ জুন বগুড়ার শিয়া মসজিদের হামলা সম্পর্কেও আমাদের অজানা কিছু নয়। ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার একটি গ্রামে কালী মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ রকম হাজারো নথি আমাদের কাছে থাকতে পারে। কিন্তু এরপরও এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো সচেতনতা কিংবা আইনি পদক্ষেপ আমরা দেখছি না। আমরা মসজিদ ভাঙলে হিন্দুদের দোষারোপ করি আর মন্দির ভাঙলে মুসলমানদের দোষারোপ করে থাকি। কিন্তু মূলত অপরাধী কারা তা আমরা যাচাই করি না। আসলে অপরাধী কোনো ধর্মের নয়। এরা অন্য একটি দল কিংবা গোত্র। যারা ধর্ম বিশ্বাস করে না তারাই এসব কর্মকাণ্ড করে থাকে। আসলে এদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের দাঙ্গা তৈরি করে দেয়া। ইসলাম কখনোই এসব সমর্থন করে না। আমার জানা মতে কোনো ধর্মেই এসব নোংরা কাজ সমর্থন করে না। প্রতিটা ধর্মই শান্তি চায়। সারাদেশে ২ লাখ ৫০ হাজার ৩১৯টিরও অধিক মসজিদ রয়েছে। ধর্মপরায়ণ মানুষ না থাকলে এত মসজিদ তৈরি হতো না বাংলাদেশে। একইভাবে মন্দিরের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশে। ধর্মের প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে বলেই দেশে এত বেশি বেশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। কোনো ধর্মে মারামারি, হানাহানি এবং হামলা সমর্থন করে না। এটা কোনো ধর্মে উল্লেখও নেই। যারা এসব কথা বলে মানুষকে বিপথগামী করে তুলে তারা আসলেই ধর্মবিরোধী, দেশ ও জনগণের শত্রæ। তাই বর্তমান সরকারের কাছে প্রত্যাশা এসব কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের দেশ থেকে অতিদ্রুত উচ্ছেদ করা। সরকারেরও ধর্মের প্রতি আরো সহনশীল হতে হবে। বর্তমান সরকারের প্রতি মানুষের বিশ্বাস এবং ভালোবাসা আছে। তাই আমি আশা করি বর্তমান সরকার কোনো ধর্মকেই অবহেলা করবে না। প্রতিটা ধর্মের মানুষকে সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। বঙ্গবন্ধুর এই সাজানো সোনার বাংলায় যেন সব ধর্মের মানুষ সুন্দর এবং স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে সেটাই আমাদের কাম্য। দেশে যেন আর কোনো মসজিদ, মন্দির এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙতে না পারে সেদিকে নজর দেয়া অতীব জরুরি। আশা করি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টাকে গুরুত্বসহকারে দেখবেন। দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকলে তাদের ধর্মের প্রতি কখনোই আঘাত হানতে দেবে না বর্তমান সরকার। এটা আমরা বিশ্বাস। আমাদের এই সোনার বাংলায় ধর্মকে হাতিয়ার করে যেন কোনো ধরনের রাজনীতি করা না হয় সেটাও সবার মাথায় রাখতে হবে। আমাদের সবার এক হতে হবে। মুসলমানদের পাশে হিন্দু, হিন্দুর পাশে মুসলমান, এভাবেই সবার এক থাকতে হবে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমানসহ সব ধর্মের মানুষ যদি এক হয়ে কাজ করতে পারে তবে আমাদের এই সোনার বাংলা বিশ্বের মাঝে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে থাকবে। চাই শুধু একতা। সম্মান দিতে হবে প্রতিটা ধর্মের মানুষকে। সম্মান দিতে হবে প্রতিটা ধর্মকে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
বাংলাদেশ প্রতিদিন
রমজানে দান সদাকার ফজিলত
ইসলাম ধর্ম
ইসলাম ধর্মে দান সদাকা ও অন্যকে সহযোগিতার গুরুত্ব অপরিসীম। আর রমজান মাসে দানের গুরুত্ব ও সওয়াব অনেক বেশি। এ মাসের একটি নফল ইবাদত একটি ফরজ ইবাদতের সমান। আর একটি ফরজ ইবাদত করলে সত্তর গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে মানুষের উপকার করে’ (তাবারানি)। রসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় দানশীল। আর রমজান মাসে তিনি সবচেয়ে বেশি দান সদাকা করতেন। জিবরাইল (আ.) এ সময়ে তাঁর কাছে আসতেন এবং পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন। রসুল (সা.) তখন প্রবাহিত বাতাসের চেয়ে অধিক দান-খয়রাত করতেন (মুসলিম)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি তোমাদের দানকে প্রকাশ করো ভালো কথা, তাতে কোনো দোষ নেই, তবে যদি তোমরা তা গোপন রাখো এবং চুপে চুপে তা অসহায়দের দিয়ে দাও, তবে তা হবে তোমাদের জন্য বেশি উত্তম। এ দানের কারণে আল্লাহ তোমাদের বহুবিধ গুনাহ খাতা মুছে দেবেন, আর তোমরা যাই কর না কেন, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত আছেন’ (সুরা বাকারা-২৭১)। সুবহানাল্লাহ। সুতরাং বেশি বেশি দান-খয়রাত করা আমাদের উচিত। কখনো প্রকাশ্যে কখনো গোপনে। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা যা দান-সদাকা কর তা তোমাদের জন্যই কল্যাণকর, কারণ তোমরা তা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই খরচ কর। তোমরা আজ যা কিছু দান করবে আগামীকাল তার পুরোপুরি বিনিময় আদায় করে দেওয়া হবে (সুরা বাকারা-২৭২)।’ যারা দিন রাত গোপনে প্রকাশ্যে নিজেদের মাল সম্পদ ব্যয় করে তাদের মালিকের দরবারে তাদের এ দানের প্রতিফল সুরক্ষিত রয়েছে। তাদের ওপর কোনোরকম ভয়ভীতি থাকবে না, তারা সেদিন চিন্তিতও হবে না (সুরা বাকারা-২৭৪)। সাহায্য-সহযোগিতা দান-সদাকা করতে হবে দীন-দরিদ্র, ফকির-মিসকিন, এতিম, অন্ধ, বিধবা, অসহায় ও গরিব আত্মীয়স্বজনকে। রসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাওয়া হলো দান সদাকার উপযুক্ত পাত্র কারা? আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তারা তোমার কাছে জানতে চাইবে তারা কি খাতে খরচ করবে? তুমি তাদের বলে দাও, যা কিছুই তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, অসহায়, মিসকিন এবং মুসাফিরের জন্য খরচ করবে, তাই আল্লাহ গ্রহণ করবেন। যা ভালো তোমরা করবে, আল্লাহ তা অবশ্যই জানতে পারবেন’ (সুরা বাকারা-২১৫)। অসহায়দের প্রতি সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করে বিপুল সওয়াব লাভের শ্রেষ্ঠ সময় রমজান। আমাদের সমাজে অনেক গরিব-দুঃখী আছেন যারা দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে সাহরি ও ইফতারের সামান্য খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খান। বছরের এই সময়ে তাদের জীবনযাত্রায় দুর্ভোগ বেড়ে যায়। এ ধরনের মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমাদের প্রতিটি মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে একটি বীজের মতো, যে বীজটি বপন করার পর তা থেকে সাতটি শিস বেরোলো, এর প্রতিটি শিষে রয়েছে ১০০ করে শস্যদানা, আল্লাহ যাকে চান তার জন্য এটাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন’ (সুরা বাকারা-২৬১)। এই রমজানে গরিব আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নিন, তাদের মধ্যে কেউ আর্থিকভাবে অসচ্ছল হলে তাকে সাহায্য করুন। আপনজনদের ভালোবাসুন। গরিবদের সম্মান করুন। রসুল (সা.) বলেছেন, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ো, যে তোমার প্রতি অবিচার করে তাকে ক্ষমা কর’ (মুসলিম)। রহমত ও মাগফিরাতের মাসে দয়া ও ক্ষমার অনুশীলন করুন। এতিম, অসহায়, বিধবাদের খোঁজখবর নিন। তাদের মুক্তহস্তে দান করুন। তাহলে আল্লাহ খুশি হবেন। নাজাত পাওয়ার রাস্তা সহজ হবে। দান-খয়রাত সদাকা প্রাপকের হাতে পৌঁছে দিতে সচেষ্ট হোন।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
রমজানের প্রথম জুমা আজ
ইসলাম ধর্ম
পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম জুমা আজ শুক্রবার (১৫ মার্চ)। রহমতের দশকের চতুর্থ রোজায় পড়েছে বরকতময় এ জুমা। দিনটির বিশেষ গুরুত্ব কোরআন হাদিসে এসেছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনরা! জুমার দিন যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো, এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। এরপর নামাজ শেষ হলে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমা, (৬২), আয়াত, ৯-১০) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- সূর্য উদিত হয় এমন সকল দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনেই আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান হয়। এই দিনেই তাকে তা থেকে বের করা হয়। আর এই জুমার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। - সহিহাহ ১৫০২, সহিহ আবু দাউদ ৯৬১, মুসলিম, তা’লীক সহিহ ইবনু খুজাইমাহ ৩/১১৬, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪৮৮ [আল মাদানী প্রকাশনী] আগে মসজিদে যাওয়ার সওয়াব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন জুমার দিন আসে ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে আগন্তুকদের নাম লিখতে থাকে। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি উট সদকা করে। তারপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি গাভী সদকা করে। তারপর আগমনকারী মুরগি সদকাকারীর মতো। তারপর আগমনকারী একটি ডিম সদকাকারীর মতো। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন, তখন ফেরেশতারা তাদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারি, হাদিস, ৮৮২) দোয়া কবুল জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুমার দিনে এমন একটা সময়ে রয়েছে, যাতে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায় আল্লাহ তাই দেন। অতএব তোমরা আছরের শেষ সময়ে তা তালাস করো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮, নাসাঈ, হাদিস : ১৩৮৯)
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
যায়যায়দিন
নুহ (আ.) নবীর অবাধ্য ছেলে
ইসলাম ধর্ম
মহাপ্লাবন শুরু হওয়ার আগে হজরত নুহ (আ.) নিজের ছেলেকে ডাকলেন। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘পাহাড়প্রমাণ ঢেউয়ের মাঝে এ তাদেরকে নিয়ে বয়ে চলল। নুহ তার পুত্র যে আলাদা ছিল তাকে ডেকে বলল, হে আমার পুত্র! আমাদের সঙ্গে ওঠো, আর অবিশ্বাসীদের সঙ্গে থেকো না।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৪২) নুহ (আ.)-এর ছেলে যুক্তি দিলেন, আমি যদি পাহাড়ে গিয়ে উঠি, পাহাড়ের ওপর তো আর পানি পৌঁছাতে পারবে না। মহাপ্লাবন শুরু হলে পানি পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে পৌঁছাল। নুহ (আ.)-এর ছেলে ওই পানিতে ডুবে মারা যান। ওই ছেলে আল্লাহর অবাধ্য হয়েছিলেন। আল্লাহর আজাবের ব্যাপারে যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন। হজরত নুহ (আ.) নিজের ছেলেকে পানিতে ডুবতে দেখে আল্লাহর কাছে প্রশ্ন করলেন। ‘নুহ তাঁর প্রতিপালককে সম্বোধন করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র আমার পরিবারের একজন আর তোমার প্রতিশ্রুতি তো সত্য; আর তুমি তো বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৪৫) জবাবে আল্লাহ বলেন, ‘হে নুহ! সে তোমার পরিবারের কেউ নয়। সে অসৎ কর্মপরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে আমাকে অনুরোধ কোরো না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি যেন অজ্ঞদের শামিল না হও।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৪৬) নুহ (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করে বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে যাতে তোমাকে অনুরোধ না করি, এ জন্য আমি তোমার শরণ নিচ্ছি । তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না করো ও দয়া না করো, আমি ক্ষতিগ্রস্তদের শামিল হব।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৪৭ ) নবী নুহ (আ.) মনে করেছিলেন রক্তসম্পর্কীয় মানুষ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়। আর আল্লাহ জানিয়ে দিলেন সম্পর্কটা হয় ইমানের দিক থেকে। একজন মুমিনের কাছে আরেকজন মুমিন তার পরিবারের মতো আপন।
ধর্মীয় শিক্ষা
Negative
দৈনিক ইনকিলাব
খরা, অনাবৃষ্টি থেকে বাঁচতে গাছ অপরিহার্য
ইসলাম ধর্ম
কেউ যদি গাছ লাগায় সেখান থেকে যে কেউ উপকার গ্রহণ করুক তা আমার জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হবে। এমনকি কেউ যদি আমার লাগানো গাছ থেকে চুরি করে খায়, সেটাও বিফলে যাবে না। হাঁ, চুরির কারণে তার গোনাহ হবে, কিন্তু আমি সওয়াব পেয়ে যাবো। হাদিসে এসেছে : মুসলিম যখন কোনো গাছ রোপণ করে, তো এর যে ফল খাওয়া হবেÑ এটা তার জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হবে। এ থেকে যা চুরি যাবে তাও সদাকা হিসেবে গণ্য হবে। হিংস্র প্রাণীও যদি তা থেকে খায় তাও সদাকা হবে। পাখি খেলে সদাকা হবে। (এমনকি) যে কেউ যে কোনোভাবে এ থেকে (উপকার) গ্রহণ করবে তা সদাকা হিসেবে গণ্য হবে। (সহীহ মুসলিম : ১৫৫২)। এ বর্ণনার শেষ অংশ থেকে বোঝা যায়, শুধু ফলবান গাছ উদ্দেশ্য নয় এবং শুধু ফল খেয়ে উপকার গ্রহণ উদ্দেশ্য নয়, বরং যে কোনো প্রকারের গাছ এবং যে কোনো প্রকারের উপকার গ্রহণই সওয়াব অর্জনের মাধ্যম বলে গণ্য হবে। আরেক বর্ণনায় এসেছে : কোনো ব্যক্তি যখন গাছ লাগায়, তো এ গাছে যতো ফল হবে, তার আমলনামায় এ ফল পরিমাণ সওয়াব লেখা হবে। (মুসনাদে আহমাদ : ২৩৫২০)। রাসূলুল্লাহ (সা.) যেমন নিজ হাতে গাছ লাগিয়েছেন, গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহিত করেছেন, তাঁর সাহাবীগণও নিজেরা গাছ লাগাতেন এবং একে সওয়াবের কাজ মনে করতেন। এমনকি এটি যে একটি ভালো কাজÑ এ বিষয়ে কারো মাঝে অস্পষ্টতা বা অজ্ঞতা থাকলে তা দূর করতেন। হযরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি গাছ লাগাচ্ছিলেন, এমন সময় তার পাশ দিয়ে এক ব্যক্তি যাচ্ছিলো। তাঁকে গাছ লাগাতে দেখে লোকটি বলে উঠলোÑ আপনি রাসূলের সাহাবী হয়ে গাছ লাগাচ্ছেন! তখন আবু দারদা (রা.) তাকে বললেন, একটু শুনে যাও; আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যখন কেউ গাছ লাগায়, আর তা থেকে কোনো মানুষ বা কোনো প্রাণী খায়, এটা তার জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হয়। (মুসনাদে আহমাদ : ২৭৫০৬)। এ থেকেই বোঝা যায়, বৃক্ষরোপণের বিষয়ে নবীজীর উৎসাহকে সাহাবায়ে কেরাম কত গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করেছেন ও আমল করেছেন। মানুষের কল্যাণেই যেহেতু বেশি বেশি গাছ লাগানো প্রয়োজন, সবুজ ভূমির প্রয়োজন, ফলে নবীজী (সা.) শুধু গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহিত করেই ক্ষান্ত হননি বরং সবুজায়নের নতুন পথও উদ্ভাবন করেছেন। যে সকল জমি অনাবাদী পড়ে আছে সেগুলো যেন আবাদ হয়, সবুজ ভূমি বৃদ্ধি পায়, তাই নবীজী (সা.) অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করলেন। তিনি ঘোষণা করলেন : যে ব্যক্তি কোনো পতিত ভূমি আবাদ করবে তা তার মালিকানায় চলে আসবে। (জামে তিরমিযী : ১৩৭৮)। বৃক্ষরোপণের বিভিন্ন ফযীলতের ঘোষণার সাথে সাথে নবীজী (সা.)-এর সর্বোচ্চ গুরুত্বের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। এক হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন : যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগ মুহূর্তেও তোমাদের কারো হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তাহলে সে যেন তা রোপণ করে দেয়। (মুসনাদে আহমাদ : ১২৯০২)। যে বৃক্ষ আমার এতো এতো উপকার করে, বিনা প্রয়োজনে আমরা যেন তা না কাটি। এটি যেমন এ নিআমতের না-শুকরি হবে তেমনি নিজের ক্ষতি ডেকে আনা হবে। কারণ, বৃক্ষ যতো কমতে থাকবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। খরা, অনাবৃষ্টি দেখা দেবে। পৃথিবীর আবাদী অনাবাদীতে পরিণত হবে। মানুষসহ পশু-পাখি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। সুতরাং বিনা প্রয়োজনে আমরা গাছ কাটব না। এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : যে ব্যক্তি কোনো বড়ই গাছ কাটবে আল্লাহ তাকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। আবু দাউদ (রাহ.)-কে এ হাদিসের অর্থ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন : এ হাদিসের বক্তব্যটি সংক্ষিপ্ত। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যে ব্যক্তি অকারণে বা না-হকভাবে মরুভূমির কোনো বড়ই গাছ কাটবে, যেখানে পথিক বা কোনো প্রাণী ছায়াগ্রহণ করে, আল্লাহ তাকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (দ্র. সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৫২৩৯)। তবে কেউ কেউ বলেন, এ হাদিস হরম অঞ্চলের বড়ই গাছ কাটার সাথে সম্পৃক্ত। তো যাইহোক অকারণে গাছকাটা যে নিজেদের ক্ষতি ও সওয়াব থেকে মাহরূমিÑ উপরের আলোচনায় আশা করি তা স্পষ্ট হয়েছে। সুতরাং আমরা বেশি বেশি গাছ লাগাব, অকারণে গাছ কাটব না। দুনিয়াবী অনেক কাজের ক্ষেত্রেই সে কাজের প্রতি গুরুত্বারোপের সাথে সাথে- নবীজী তাঁর সাহাবীদের মানসিকতাকে আখেরাতমুখি করেছেন। তো বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রেও নবীজী এমনটি করেছেন। তাঁর প্রিয় সাহাবী গাছ লাগাচ্ছে তো তাকে জান্নাতে গাছ লাগানোর পথও বাতলে দিচ্ছেন : হযরত আবু হুরাইরা (রা.) একদিন গাছ লাগাচ্ছিলেন। এমন সময় নবীজী পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরাইরা! কী লাগাচ্ছো? তিনি বললেন, একটি চারা রোপণ করছি। নবীজী বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম রোপণের কথা বলে দেব? আবু হুরায়রা বললেন, আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন। তখন নবীজী (সা.) বললেন, বল, এর প্রতিটির বিনিময়ে জান্নাতে তোমার জন্য একটি করে গাছ লাগানো হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৮০৭)।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
যায়যায়দিন
রোজা না রাখলে গ্রেপ্তার
ইসলাম ধর্ম
পুরো বিশ্বে এখন রমজান মাস চলছে। এ কারণে বদলে গেছে চিত্র। এমন কি বিশ্বের বড় বড় শহরেও রোজার মাসে চিত্র থাকে ভিন্ন রকম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে সব রাষ্ট্রপ্রধানরা ইফতার পার্টির আয়োজন করেন। মধ্যপ্রাচ্যের রোজার মাসে খাদ্রপণ্য বিতরণের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। এদিকে বিভিন্ন দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এই সময় রোজা পালন করেন। কিন্তু সম্প্রতি এমন একটি দেশের খবর মিলেছে, যেখানে রোজা পালন না করলে প্রশাসনের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে নাইজেরিয়ায়। ইতোমধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে নাইজেরিয়া পুলিশ। মূলত আফ্রিকার এই দেশটির একটি প্রদেশে রোজার মাসে দিনের বেলা খাবার খেতে দেখার পর তাদের গ্রেফতার করা হয়। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইজেরিয়া ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও এখানকার ১২ প্রদেশে শরিয়া আইন চালু করা হয়। এই ১২ প্রদেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকই সংখ্যাগরিষ্ঠ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এসব প্রদেশের মধ্যে একটি হলো কানো। আর এখানকার ইসলামিক পুলিশ ‘হিসবাহ’ নামে পরিচিত এবং প্রতি বছর রমজান মাসে তারা খাবারের দোকান এবং বাজারে তল্লাশি চালিয়ে থাকে। গত মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃত ১১ জনের মধ্যে ১০ জন পুরুষ এবং একজন নারী। গ্রেফতারের পর তারা আর ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা মিস করবেন না বলে শপথ করার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। হিসবাহের মুখপাত্র লওয়াল ফাগে বিবিসিকে বলেছেন, আমরা মঙ্গলবার ১১ জনকে পেয়েছিলাম যার মধ্যে একজন নারীও ছিলেন, যিনি চিনাবাদাম বিক্রি করছিলেন এবং তাকে তার জিনিসপত্র থেকে খেতে দেখা গেছে এবং পরে কিছু লোক আমাদের এই বিষয়টি জানায়। তিনি বলেন, অনুসন্ধান ও তল্লাশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে অমুসলিমরা এই অভিযানের আওতার বাইরে। লওয়াল ফাগে বলছেন, আমরা অমুসলিমদের গ্রেফতার করি না। কারণ এটি (রোজা) তাদের পালন করার বিষয় নয়। শুধু একটি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলেই আমরা অভিযুক্তদের গ্রেফতার করি। আর তা হচ্ছে, যাদের রোজা রাখার কথা, সেসব মুসলমানের কাছে বিক্রি করার জন্য যারা খাবার রান্না করে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের সম্পর্কে ইসলামিক পুলিশের এই মুখপাত্র বলেন, তারা এখন থেকে রোজা রাখা শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুক্তি পেয়েছে এবং ‘তাদের মধ্যে কারও কারও পরিবার যেন তাদের পর্যবেক্ষণ করে, সে জন্য আমাদের তাদের আত্মীয় বা অভিভাবকদেরও ডাকতে হয়েছিল।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
যুগান্তর
বঙ্গবন্ধু ছিলেন খাঁটি মুসলিম নেতা
ইসলাম ধর্ম
ইংরেজদের নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনে উপমহাদেশের মুসলমানরা যখন কোণঠাসা জীবনযাপন করছিল, তখন আল্লামা ইকবাল স্বপ্ন দেখালেন আলাদা ভূখণ্ড না হলে একদিন উপমহাদেশে ইসলাম এবং মুসলমানদের নাম গন্ধও থাকবে না। তখন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং একে ফজলুল হক উপমহাদেশের মুসলমানদের দুর্দিন কাটিয়ে ওঠার জন্য মাঠপর্যায়ে কাজ করছিলেন।১৯৩৮ সালে গোপালগঞ্জে এক সভায় তারা দু’জন বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় মুসলমানদের মনে আলাদা ভূখণ্ডের স্বপ্নের বীজ বুনে দেন। ওই সভার স্বেচ্ছাসেবীদের নেতা ছিলেন স্কুলছাত্র মুজিব। অল্প সময়ের জন্য কথা হয় সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে। পরে সোহরাওয়ার্দী কলকাতা ফিরে গিয়ে মুজিবের নামে চিঠি পাঠায়। তখনও গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্রলীগ কমিটি গঠন হয়নি। সোহরাওয়ার্দীর আদেশ পেয়েই মুসলিম ছাত্রলীগ কমিটি গঠন করে জজবা নিয়ে কাজ শুরু করে দেন মুজিব। মুজিব নিজেই লেখেন, ‘তখন রাজনীতি শুরু করেছি ভীষণভাবে। সভা করি, বক্তৃতা করি। খেলার দিকে আর নজর নেই। শুধু মুসলিম লীগ আর ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নেই।’ শুরু হয়ে গেল মুসলমানদের বাঁচানোর জেহাদ। বঙ্গবন্ধু লেখেন, ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে হাজার হাজার বাঙালি মুজাহিদ কীভাবে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সিপাহী বিদ্রোহ, ওহাবি আন্দোলন, শরিয়ত উল্লাহ ও তিতুমীরের জেহাদের ইতিহাস আমার জানা ছিল। ওইসব ঘটনা বলেই বাংলার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতাম। এখানে বলে রাখা দরকার, ভারতবর্ষে তখন হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছিল। মুসলমানরা ইসলামের শত্রু মনে করে ইংরেজদের থেকে দূরে থাকার মতো মারাত্মক ভুল করে বসে। এ সুযোগে ইংরেজ সরকারের পা-চাটা গোলাম সেজে শিক্ষিত হিন্দুরা কারণে অকারণে মুসলমানদের পিঠের চামড়া তুলে নিত। বঙ্গবন্ধু বলেন, বিষয়টি আমার খুবই খারাপ লাগত। তখনও তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েননি।স্কুলের হিন্দু সহপাঠীদের ছুঁতমার্গ আচরণ দেখে বেজায় কষ্ট পেতেন। এক মুসলিম ছাত্রকে মারার প্রতিবাদে হিন্দু সহাপাঠীদের মেরে জেলও খেটেছিলেন স্কুল জীবনেই। তবে ধর্মীয় গোঁড়ামি যাকে বলে তা বঙ্গবন্ধুর মাঝে কখনই ছিল না।তিনি বলেন, ওই সময় হিন্দুরা যেমন মুসলমানদের দেখতে পারত না, মুসলমানরাও বক্তৃতা শুরুই করত হিন্দুদের গালিগালাজ করে। এসব আমার মোটেই ভালো লাগত না। হাশিম নামে এক মুরব্বি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘আমাদের লেখাপড়া করতে হবে। শুধু গালিগালাজ করে পাকিস্তান আসবে না।’ পাকিস্তান আনার স্বপ্নে বঙ্গবন্ধু এতই বিভোর ছিলেন যে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লেখেন, তখন আমি ইসলামিয়া কলেজের ল’র ছাত্র। ‘রাতে পড়তাম। দিনে পাকিস্তানের জন্য কাজ করতাম। পাকিস্তানই যদি না আনতে পারি তাহলে পড়ালেখা করে আর কী করব!’ বঙ্গবন্ধু তার বন্ধুদের বলতেন, ‘তোমরা পড়ালেখা করে মহাপণ্ডিত হয়ে যাও। আমাকে পাকিস্তান আনতে দাও।’ নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে পাকিস্তান এলো। ততদিনে বঙ্গবন্ধু তুখোড় নেতা হয়ে উঠলেন। বড় আফসোসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু দেখলেন, পাকিস্তান এসেছে ঠিক, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আগে অত্যাচার করত হিন্দু জমিদাররা। এখন অত্যচার করছে খোদ মুসলমান নেতারাই। সে সময়ই মহাকবি ইকবালের মতোই বঙ্গবন্ধুর মনে এমন ধারণা জন্মালো সে বাঙালির জন্য একটি আলাদ ভূখণ্ড না হলে একদিন দুনিয়ার বুকে বাঙালি আর তাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের নাম গন্ধও থাকবে না। তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখলেন। মাওলানা মহিউদ্দিন খান বড় সুন্দর করে বলেছেন, ‘গদি পেয়ে মুসলমান নেতারা মদিরার নেশায় এমনই ডুবে ছিলেন যে, পাকিস্তানের বড় বড় অংশ পর্যন্ত হাতছাড়া হয়ে গেল, এ নিয়ে কেউ টুঁ শব্দটিও করেনি।’ এবার পাকিস্তান সরকারই বঙ্গবন্ধু-মওলানা ভাসানীদের জেলে পুরে রাখলেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়লে বিস্তারিত জানা যাবে। যে কথাটি আজ জোর দিয়ে বলা দরকার তা হল, বঙ্গবন্ধু ছিলেন নিরেট একজন খাঁটি মুসলিম নেতা। ছিলেন খোলাফায়ে রাশেদার ছায়াতুল্য। জীবনের প্রতটি মুহূর্ত আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা এবং বিশ্বাসের জোরে পাহাড় সমান বাধাকে জয় করেছেন। তিনি যাদের সাহচর্যে ছিলেন, সহকর্মী হিসেবে যাদের পেয়েছেন, অনেকেই ছিলেন মাওলানা, সবাই ছিলেন কঠোর ধর্মভিরু, আউলিয়াভক্ত। ধর্মবিরোধীদের দু’চোখে দেখতে পারতেন না। অন্যায়ের সঙ্গে আপসহীন জীবনের সবক বোধহয় সবচেয়ে বেশি পেয়েছিলেন মর্দে মোমিন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী থেকে। বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়ে বারবার এ কথাই মনে হয়েছে। ইতিহাস বুঝি এভাবেই বিগড়ে যায়। আগাগোড়া কট্টর ইসলাম মানা মানুষটিকে নিয়ে আজ কী সব কাণ্ডকারখানাই না হচ্ছে। টয়লেট পেপারেও বঙ্গবন্ধু, বদনাতেও বঙ্গবন্ধু, চাঁদাবাজের মুখেও বঙ্গবন্ধু। যেন বঙ্গবন্ধু জীবন-যৌবন পানি করে চোর-বাটপাড়দের জন্য সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আমৃত্যু স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা সোনার মদিনার মতো সুখী হবে। যোগ্য বাবার যোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মদিনার সনদে দেশ চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আজ যারা কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা বলে মুখে ফেনা তুলছেন, তাদের মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল ইসলাম, শান্তি, সম্প্রীতি। যারা জীবন থেকে, রাষ্ট্র থেকে ইসলাম মুছে ফেলতে চায়, তারা যেন বঙ্গবন্ধুর নামটিও মুখে না আনে। এতে বঙ্গবন্ধুর আত্মা কষ্ট পাবে।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
হযরত আম্মার (রা.) এক সাহসি সাহাবী
ইসলাম ধর্ম
আরব দেশ,মরু ভুমির দেশ। বিরাজমান জাহেলি পরিবেশ। কোথাও নেই ধর্ম পালনের পরিবেশ। বিধর্মীরা দেব-দেবীর উপসনায় লিপ্ত।হিংসা-বিধেশ,খুন-খারাবী,মার-মারি,কাটা-কাটি,চুরি-ডাকাতি,ধষন,জেনা ব্যভিচার ছিল তাদের স্বভাবজাত চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। বিনা কারণে বছরের পর বছর চলছে যুদ্ধ। কোথায় শান্তিময় সমাজ।অমবশ্যার ঘোর অন্ধকারে উদয় হলো শান্তির সূর্যোদয়। সেই রুবর নাম হলো হযরত রাসুল (দ)।ফুটন্ত সৌরভ ছড়িয়ে পরে দিগ দিগন্তে। বঞ্চিত মানুষের হলো আশ্রয়।প্রস্ফুটিত হলো অশান্তিময় সমাজে,শান্তির বারি ধারা। বিশ^ নবী (দ) বলেন,‘বন্ধুরা তোমরা যা করেছ তা ঠিক নয়। তোমরা মুক্তি পুজা ছাড়।এ সব মিথ্যা ও অলীক। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি কর্তা। তাই এক আল্লাহকে মানো’। আরবের অধিকাংশ মানুষ ছিল অহংকারী,কলুষিত মনের অধিকারী। তারা নবী (দ) এর কথা না শুনে বরং তার বিরুধিতায় লিপ্ত ছিল। বিশ^ নবী (দ) ছিলেন একজন আল্লাহর মনোনীত রাসুল।তিনি (দ) বিরতিহীন ভাবে ইসলামের বাণী প্রচারের কাজ শুরু করেন।প্রিয় নবী (দ) এর সু মধুর বানী কাফের-মুশরিকদের কানে আঘাত করে। তারা আল্লাহ ও নবীর উপর ইমান আনে। শুরু হলো সাহাবীদের প্রতি চরম নির্যাতন। নির্যাতিত ব্যক্তিদের মধ্যে ইয়াসির (রা) ও সুমাইয়া (রা) ছিলেন অন্যতম সাহসি সাহাবী। হযরত ইয়াসির ও তার স্ত্রী হযরত সুমাইয়া (রা) যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন,তখন পুত্র আব্দুল্লাহ ও আম্মার (রা) ছোট ছিল। ইসলামের বাহক নবী (দ) এর মহা ডাকে সারা দিয়ে আব্দুল্লাহ ও আম্মার ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। তখনই স্বপরিবারেত নির্যাতনের শিকার হোন। ইসলামের চির শত্রু আবু জেহেল। তার বর্শার নিষ্ঠুর আঘাতে হজরত সুমাইয়া (রা) ক্ষত বিক্ষত দেহ। তিনিই হলেন ইসলাম ধর্মের প্রথম মহিলা শহীদ। তেমনি ভাবে হযরত ইয়াসির (রা) ও পুত্র সন্তান আব্দুল্লাহ আল্লাহর পথে শাহাদাত লাভ করেন।বেচে থাকেন শহীদ পরিবারের আরেক সাহসি মানুষ হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা)। তিনি ছিলেন এক বৈচিত্র ময় জীবনের অধিকারী। ইসলাম বিরুধী শক্তি তার উপর নানা ভাবে জুলুম,নির্যাতন চালাতে থাকেন। তিনি সব নির্যাতন নিরবে সহ্য করেন। অথচ আম্মার (রা) এর অন্তর,এক আল্লাহর প্রতি বিশ^াসে অবিচল ছিল। তিনি আল্লাহ,রাসুল (দ) ও ইসলাম ধর্ম থেকে এক বিন্দু পরিমান সরে যান নি।কাফেররা হযরত আম্মার (রা) কে জ¦লন্ত আগুনে শুইয়ে,পানিতে ডুবিয়ে মারার চেষ্টা অবাহৃত রাখেন। আল্লাহ জীবন ও মরণের একমাত্র মালিক। তার হুকুম ছাড়া কোন প্রাণীর বাচা বা মরা সম্ভব নয়। আল্লাহর অসীম কদুরত ও রহম দিয়ে প্রতি বারেই তিনি বেচে গেছেন। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা) ছিলেন রাসুল (দ) এর একজন নিবেদিত প্রাণ সাহাবী। একজন অগ্রগামী বীর সৈনিক। হযরত রাসুল (দ) ও দ্বীনের ডাকে সবার আগে হাজির। জীবন বাজি রেখে দ্বীন ইসলামের কাজ করেন। যুদ্ধের ময়দানে আল্লাহর উপর ভরসা ও এক বুক সাহস নিয়ে কাফেরদের বিরুদ্ধে বিরতিহীন ভাবে লড়াই করেন। চলছে ইয়ামামার যুদ্ধ। এক ভয়ানক যুদ্ধ।এ যুদ্ধে আম্মার জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ শুরু করেন। হযরত আম্মার (রা) একটি কান, ইসলামের চির শত্রু কাফেরের তলোয়ারের আঘাতে শহীদ হয়ে মাটিতে পরে।তাতে আম্মার (রা) এর কোন দুঃখ বা আফসোস নেই। তিনি খোলা তলোয়ার নিয়ে ছুটে জান শুত্রুর ভিড়ে। চারি দিকে শত্রু। করেন কচু কাটা। অপর দিকে মুসলিম বাহিনীর সব সৈনিক কাফেরদের চরম আঘাতে ছত্র ভঙ্গ হয়ে পরে। তখন হুযরত আম্মার (রা) এক বুক সাহস নিয়ে পাহাড়ের মত শক্ত করে দাড়ান। সাথীদের আহব্বান করেন, তোমরা যুদ্ধে ফিরে আস। আম্মার (রা) ডাক শুনে মুসলিম বাহিনীর সব সাহসি সৈনিক ফিরে আসে যুদ্ধে। শুরু হলো প্রান পণে যুদ্ধ। চারি দিকে লাশের পর লাশ। তারপর, মুসলিম বাহিনীর হাতে বিজয়ের পতাকা। উড়ছে পত পত করে। হযরত আম্মর (রা) এর সাহসিকতায় ইয়ামমার যুদ্ধে সবাই মুগ্ধ। হজরত আম্মার (রা) নবীজীর একজন পাণ প্রিয় সাহাবী ছিলেন। নবীজী তাকে অন্তরের অন্তর দিয়েই ভালোবাােসন।মদিনা শহর। চলছে মসজিদে নববীর ভিত্তি স্থাপনের কাজ। বিশ^ নবী (দ) নিজেই নির্মান কাজ করছে। হজরত আম্মার (রা) মাথায় ইট নিয়ে হযরত রাসুল (দ) এর পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। প্রিয় নবী (দ) সে সময় আম্মারের মাথার ধুলি-বালি নিজ হাতে পরিস্কার করে দিলেন। যার মাথায় নবী (দ( এর হাত, তিনি কতই না উত্তম,সুভাগ্যবান ব্যক্তি। একদিন নবী (দ) অতি কষ্টে আম্মার (রা) কে বলেন,‘আফসোস আম্মার! একটি বিদ্রোহী দল তোমাকে শহীদ করবে। তুমি তাদেরকে আল্লাহর আদেশের দিকে ডাকবে আর তারা তোমাকে ডাকবে জাহান্নামের দিকে’।সময় কারো জন্যে অপেক্ষা করে না। চলছে আপন গতিতে। চলছে ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী (রা) এর শাসন কাল। হজরত আলী (রা) ও হজরত মুয়াবিয়া (রা) এর মাঝে চলছে সিফফিনের যুদ্ধ। সে সময় হজরত আম্মার (রা) এর বয়স ৯১ বছর। এ বৃদ্ধ বয়সে যুদ্ধ ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকা তার কাছে মোটেও ভালো লাগল না।তিনি ছুটে আসেন যুদ্ধেও মযদানে। তিনি লড়াই করেন হজরত আলী (রা) এর পক্ষে, হজরত মুয়াবিয়া (রা) বিপক্ষে। চলছে তুমুল লড়াই। এ যুদ্ধে উভয় পক্ষে চার হাজার সৈনিক শাহাদাত বরন করেন। হজরত আম্মার (রা) সিফফিনের যুদ্ধেই শাহাদাত বরন করেন। হজরত আম্মার (রা) ছিলেন একজর অপরাজিত সাহসি সৈনিক,রাসুল (দ) এর প্রিয় সাহাবী। তিনি স্বাভাবিক জীবন-যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন।তিনি সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কারো সাখে কোন প্রকার আপোষ,মিমাংসা করেন নি।তিনি আল্লাহ ও রাসুলকে গভীর ভাবে ভালোবাসেন। ভালোবাসেন ইসলামকে। আল্লাহর রাস্তায় হাসি মুখে নিজের জীবন উৎসগ করেন। তার ত্যাগ তিতিক্সা কোন দিন ভুলার মত নয়। তার আর্দশ যদি আমরা পালন করি।তার মহান মানসিকতা সম্পপুর্ণ পুত্র সন্তান প্রতিটি পরিবারে গড়ে উঠুক এই কামনা করি।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
ভোরের পাতা
তাবলিগ জামাতকে নিষিদ্ধ করেছে সৌদি
ইসলাম ধর্ম
তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সতর্কতা জারি করেছে সৌদি আরব। এরই ধারাবাহিকতায় জুমার নামাজের খুতবায় এ সংগঠন সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী ডা. আব্দুললতিফ আল শেখ। গত সোমবার (৬ ডিসেম্বর) এক টুইট বার্তায় এ নির্দেশনা জানানো হয় তাবলিগ জামাত সম্পর্কে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, এটি সন্ত্রাসবাদের একটি প্রবেশপথ। এদের বিপদ সম্পর্কে মানুষকে বোঝান। এদের ভুলগুলো তুলে ধরুন। তাবলিগ জামাতের পাশাপাশি নিষিদ্ধ করা হয়েছে দাওয়া নামে আরেকটি সংগঠনকে। মন্ত্রী টুইটে জানিয়েছেন, মসজিদে ইমামদের তাদের ভাষণে উল্লেখ করা উচিত এরা কীভাবে সমাজের জন্য বিপজ্জনক। ১৯২৬ সালে দাওয়া নামের এ সংগঠনটির গঠিত হয়। তবলিগ জামাত ও দাওয়া দুটিই সুন্নি মুসলিমদের সংগঠন। অন্যদিকে সৌদি আরবের অধিকাংশ মানুষ আহলে হাদিস মতাদর্শের অনুসারী। দুই পক্ষই ইসলামের অনুশীলন আরও বেশি শুদ্ধ করার পক্ষপাতী হলেও দুই শিবিরের মধ্যে একটি সংঘাত রয়েছে। সারা বিশ্বে তাদের ৩৫০-৪০০ মিলিয়ন অনুসারী রয়েছে বলে দাবি সংগঠনের। সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাদের লক্ষ্যই হলো ধর্মীয় বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া এবং অত্যন্ত কড়াভাবে রাজনীতি এড়িয়ে চলা। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাবলিগ জামাত বিশ্বের অনেক অংশেই ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ ইসলামকে ‘শুদ্ধ’ করার জন্য ভারতে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের অর্থের মূল উৎস ছিল সৌদির দাতব্য সংস্থাগুলো। আরও কিছু দেশের সরকারও সৌদিকে অনুসরণ করে তাবলিগকে নিষিদ্ধ করতে পারে। তবে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে তাবলিগ নিষিদ্ধ করা কঠিন হতে পারে। কারণ এসব দেশে প্রচুর তাবলিগী জনসংখ্যা রয়েছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
দৈনিক ইনকিলাব
সহজ ও সুন্দর মৃত্যুর জন্য আপনজনদের করণীয়
ইসলাম ধর্ম
মৃত্যু অনিবার্য কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন,-‘হে নবী আপনি বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পালায়ন করছ, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের সাথে সাক্ষাত করবে। অতপর তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এমন সত্তার কাছে যিনি দৃশ্য-অদৃশ্য সকল কিছু জানেন। এরপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কর্ম সম্পর্কে অবগত করবেন।’ [সূরা জুমআ:৮] অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কিয়ামত দিবসে তোমাদেরকে দেওয়া হবে তোমাদের কর্মের পরিপূর্ণ প্রতিদান। যে ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হলো আর জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো সে সফলতা লাভ করল। [সূরা আলে ইমরান:১৮৫] পবিত্র এই আয়াত দুটির বার্তা হচ্ছে, মৃত্যু অনিবার্য। অনিবার্য এই মৃত্যুর ডাকে সবাই সাড়া দিবে। পাড়ি জমাবে দুনিয়ার ওপারে। সাড়া না দিয়ে কেউ পার পাবে না। কোনো কিছু ভালো বলে বিবেচিত হওয়ার জন্য সুন্দর সমাপ্তি জরুরী। এ বিষয়ে বাংলায় একটি প্রসিদ্ধ প্রবাদও আছে। প্রবাদটি হলো- ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’। বাস্তবতাও এমনি। যে কোনো বিষয় ভালোভাবে শেষ হলে তার প্রসংশার কোনো শেষ থাকে না। আবার শেষটা যদি কোনো কারণে খারাপ হয়ে যায়, তাহলে নিন্দা ও তিরিস্কারের ঝড় বয়ে যায়। কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে মৃত্যুর বিষয়টিও এমনি। পরপারে সুন্দর ও সুখময় জীবনের জন্য সুন্দর মৃত্যুর বিকল্প নেই। মৃত্যুটা যদি ঈমানের সঙ্গে হয়। বিদায়কালে ঈমানটা যদি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে দুনিয়ার পাহাড়সম দুঃখ-কষ্ট, ব্যাথা-বেদনা সবই তখন তচ্ছ। আর যদি এর বিপরীত কিছু হয়, শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্রবঞ্চনায় নিজের ঈমানটা খুইয়ে বসে, ঈমান হারিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়, তাহলে দুনিয়ার সকল সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ সব কিছুই তখন গৌণ। তার পরকালের পুরো জীবনটাই কাটবে শুধু অসহ্য দুঃখ-কষ্ট আর আযাব-গযবে। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমল তো শেষ অবস্থা অনুসারেই বিবেচিত হবে।’ [বুখারী, হাদীস:৬৬০৭] হাদীসটির ভাষ্যমতে যার মৃত্যু সুন্দর হবে, ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে, তার পরকালের জীবনটাও সুন্দর হবে। ফুলে-ফলে ভরে উঠবে তার পরকালীন জীবন। তাই সুন্দর মৃত্যু হওয়াটা পরম সৌভাগ্যের বিষয়। সহজ ও সুন্দর মৃত্যুর জন্য আপনজনদের করণীয় এ জন্য একজন মৃত্যুপথযাত্রীর আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের উচিত তার সুন্দর মৃত্যুর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। কুরআন-হাদীসের আলোকে একজন মৃত্যুগামী ব্যক্তির সহজ ও সুন্দর মৃত্যুর জন্য তার আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের কিছু করণীয় আছে। সেগুলো হলো- ১. তার জন্য দুআ করা এ আমলটি দূরের কাছের সবাই করতে পারেন। তার মৃত্যু যেন ঈমানের সঙ্গে হয় এবং সহজ হয়- এ দুআ করা। এ দুআটুকুর জন্য পাশে বা কাছে থাকার প্রয়োজন হয় না। যারা সংবাদ পেয়েছে সবাই এ দুআ করতে পারে। সুন্দর মৃত্যুর জন্য এ দুআ খুবই জররী। আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের এ দুআর কল্যাণে যদি মৃত্যুগামী ব্যক্তির মৃত্যু সুন্দর হয়, তাহলে তো সে চির সফল। মহা সৌভাগ্যবান। তাই এখন সুন্দর মৃত্যুর জন্য দুআটাই তার বেশি দরকার। এই দুআতে কেবল মৃত্যুগামী ব্যক্তির উপকার হবে- ব্যাপারটি এমন কিন্তু নয়; বরং দুআকারীরও এতে ব্যাপক উপকার হয়। এক হাদীসে আছে, কেউ যদি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য দূর থেকে দুআ করে, তাহলে ফিরিশতারা বলেন, দুআকারীকেও যেন দুআকৃত বিষয়গুলো দান করা হয়। [মুসলিম, হাদীস: ২৭৩২-২৭৩৩] তাই কোনো আপনজন মৃত্যুগামী ব্যক্তির সুন্দর মৃত্যু, সহজ মৃত্যু ও ঈমানের সাথে মৃত্যুর জন্য দুআ করলে, আশা করা যায়, দুআকারীরও মৃত্যু হবে সুন্দর, সহজ ও ঈমানের সঙ্গে হবে। ২. কালীমার তালকীন করা দ্বিতীয় করণীয় হলো, মাইয়িতকে কালীমার তালকীন করা। এ ব্যাপারে সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী রা. এর বাচনিক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীদের ‘লা ইলাহ ইল্লাহ’র তালকীন কর। [মুসলিম, হাদীস:৯১৬-৯১৭] ‘লা ইলাহ ইল্লাহ’র তালকীনের অর্থ হলো, মুমূর্ষ ব্যক্তির পাশে বসে মৃদু আওয়াজে [এমন আওয়াজ যেন কালিমার আওয়াজ মুমূর্ষ ব্যক্তি শুনতে পায়] কালিমা পড়তে থাকা। তবে মনে রাখতে এ অবস্থায় তাকে কিছুতেই মুখে উচ্চারণ করে কালিমা পড়ার আদেশ করা যাবে না। কোনো প্রকার জোরাজুরি করা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই নিয়ম হলো, তার পাশে বসে মৃদু আওয়াজে কেবল কালিমা পড়তে থাকা। কালিমা বলুন বা এ জাতীয় কিছু বলা যাবে না। তার পাশে বসে যখন এভাবে কালিমা পড়া হবে এবং তিনি যখন কালিমার আওয়াজ শুনতে পাবেন, তখন আশা করা যায়, তিনি নিজেই কালিমা পড়ে নিবেন। আর যার মৃত্যু হবে কালিমার সাথে। যার শেষ কথা হবে এই কালিমা, হাদীসের ভাষ্যমতে তিনি জান্নাতী। সাহাবী মুআয ইবনে জাবাল রা. এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যার দুনিয়ার জীবনের শেষ কথা হবে লা ইলাহ ইল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস:৩১১৬] ৩. মুমূর্ষ ব্যক্তির পাশে থেকে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করতে থাকা মুমূর্ষ ব্যক্তির জন্য তৃতীয় আরেকটি আমলের কথা হাদীসে পাওয়া যায়। সেটি হলো, মুমূর্ষ ব্যক্তির পাশে থেকে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করতে থাকা। সাহাবী মাকাল ইবনে ইয়াসার রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীদের পাশে বসে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত কর।’ [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস: ৩১২১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস:৩০০২] আপনজনদের উচিত মুমূর্ষ ব্যক্তির সুন্দর ও সহজ মৃত্যুর জন্য উপরোক্ত আমলগুলো গুরুত্ব দিয়ে করা।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
কালের কন্ঠ
কোরবানির পশু জবাইয়ের সুন্নত পদ্ধতি
ইসলাম ধর্ম
ইসলামী শরিয়ত সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কোরবানি আবশ্যক করেছে। সামর্থ্য থাকার পরও যারা কোরবানি করে না রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তবে এই ইবাদত কবুলের জন্য তা যথাসময়ে সঠিক পদ্ধতিতে করা আবশ্যক। নিম্নে পশু কোরবানির সময় ও পদ্ধতি তুলে ধরা হলো— কোরবানির সময় : কোরবানির সময়কাল হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। এই তিন দিনের যেকোনো দিন কোরবানি করা জায়েজ। তবে প্রথম দিন কোরবানি করা সর্বাপেক্ষা উত্তম। তারপর দ্বিতীয় দিন। তারপর তৃতীয় দিন। জিলহজ মাসের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পর কোরবানি করা শুদ্ধ নয়। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/২৯৬) একইভাবে ঈদুল আজহার নামাজের আগে কোরবানি করা বৈধ নয়। অবশ্য যে স্থানে ঈদের নামাজ বা জুমার নামাজ বৈধ নয়, সে স্থানে ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পরও কোরবানি করা জায়েজ। (কুদুরি, পৃষ্ঠা ১৯৮) নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কোনো ব্যক্তি ১০ ও ১১ জিলহজ যদি সফরে থাকে তারপর ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে বাড়িতে আসে, তবে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। যদি কোনো মুকিম ব্যক্তি গরিব হয় এবং ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে আল্লাহ তাকে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বানিয়ে দেন, তবে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/২৯২) কোরবানির পশু জবাইয়ের পদ্ধতি : নিজের কোরবানির পশু নিজ হাতে জবাই করা মুস্তাহাব। যদি নিজে জবাই করতে না পারে তবে অন্যের দ্বারা জবাই করাবে। এ অবস্থায় নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২৭২) জবাই করার সময় কোরবানির পশু কিবলামুখী করে শোয়াবে। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করবে। ইচ্ছাকৃত বিসমিল্লাহ পরিত্যাগ করলে জবাইকৃত পশু হারাম বলে গণ্য হবে। আর যদি ভুলক্রমে বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয় তবে তা খাওয়া জায়েজ আছে। (হেদায়া : ৪/৪৩৫) পশু জবাই করার সময় মুখে নিয়ত করা জরুরি নয়। অবশ্য মনে মনে নিয়ত করবে যে আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করছি। তবে মুখে দোয়া পড়া উত্তম। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/২৭২) জবাই করার সময় চারটি রগ কাটা জরুরি : ১. কণ্ঠনালি, ২. খাদ্যনালি, ৩-৪. দুই পাশের মোটা দুটি রগ, যাকে ওয়াজদান বলা হয়। এই চারটি রগের মধ্যে যেকোনো তিনটি যদি কাটা হয় তাহলে কোরবানি শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি দুটি কাটা হয় তবে কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (হেদায়া : ৪/৪৩৭) পশু জবাইয়ের মুস্তাহাব : জবাই করার আগে ছুরি ভালোভাবে ধার দিয়ে নেওয়া মুস্তাহাব। কোরবানির পশুকে এমনভাবে জবাই করা উচিত, যাতে পশুর কোনো প্রকার অপ্রয়োজনীয় কষ্ট না হয়। এমনিভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্থানে জবাই করা উচিত। জবাইকারী ব্যক্তির সঙ্গে যদি কেউ ছুরি চালানোর জন্য সাহায্য করে, তার জন্যও ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলা ওয়াজিব। ’ (হেদায়া : ৪/৪৩৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৩/৫৪৭, ফাতাওয়ায়ে শামি : ৯/৪৭৩) কোরবানির দোয়া : কোরবানির পশু কিবলামুখী করে শোয়ানোর পর নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করবে : ‘ইন্নি ওয়াজ জাহতু ওয়াজ হিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৭৯৫) এই দোয়া পাঠ করার পর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে পশু জবাই করবে। পশু জবাই করার পর নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করবে—‘আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মদ ও খালিলিকা ইবরাহিম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম।’ যদি একাধিক ব্যক্তি মিলে কোরবানি করে তবে ‘মিন্নি’র স্থলে ‘মিন্না’ পাঠ করবে এবং শরিকদের নাম পাঠ করবে। তবে তাদের নাম শুধু নিয়ত করলে হবে।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে কুপিয়ে হত্যা
বৌদ্ধ ধর্ম
খাগড়াছড়ি সদরের গুগড়াছড়িতে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বিশুদ্ধা মহাথের (৫২) নামের এ বৌদ্ধ ভিক্ষু গুগড়াছড়ি ধর্মসুখ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ। রবিবার দিবাগত মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে। গতকাল খাবার (ছোয়াইং) দিতে এসে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে বিহারের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামের একজন মহিলা। পরে গ্রামবাসী পুলিশে খবর দেন। বিহারে একাই ছিলেন তিনি। ১ নম্বর খাগড়াছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্ঞান দত্ত ত্রিপুরা জানান, ‘দুর্বৃত্তরা বিহারে ডাকাতি করতে এসে ভিক্ষুকে খুন করে থাকতে পারে।’ তবে নিহত বৌদ্ধ ভিক্ষুর ছোট ভাই ক্যউচিং মারমা জানিয়েছেন, বিহার অধ্যক্ষের হাতে তেমন নগদ টাকা ছিল না। দুটি মোবাইল ফোন খোয়া গেছে। খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রশীদ জানান, রবিবার মধ্যরাতে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা বৌদ্ধধর্মীয় গুরুকে কুপিয়ে ও মাথায় আঘাত করে খুন করেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আবদুল আজিজসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এদিকে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। উল্লেখ্য, এই ভিক্ষু ৩০ বছর ধরে ধর্ম প্রচার ও মানবসেবায় নিয়োজিত ছিলেন।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
কালের কন্ঠ
পবিত্র কোরআনে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে
ইসলাম ধর্ম
বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসা ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ। বায়তুল মুকাদ্দাস অর্থ পবিত্র ঘর। মসজিদুল আকসা অর্থ দূরবর্তী মসজিদ। মসজিদুল হারামের অবস্থান থেকে মসজিদুল আকসা দূরে অবস্থিত হওয়ায় বায়তুল মুকাদ্দাসকে কোরআনে মসজিদুল আকসা বলা হয়েছে।ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত এই মসজিদে মিরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) গমন করেন এবং সব নবী-রাসুলের ইমামতি করেন। এটি মুসলমানদের প্রথম কিবলা। পবিত্র কোরআনে বায়তুল মুকাদ্দাস ও ফিলিস্তিন অঞ্চল পুণ্যভূমি হিসেবে আলোচিত হয়েছে।মুসলমানদের প্রথম কিবলা : মসজিদুল আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা।এই মসজিদের দিকে মুখ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিরা নামাজ আদায় করতেন। হিজরতের ১৭ মাস পর কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ সংবলিত আয়াত নাজিল হয়। তাতে মসজিদুল আকসা থেকে মসজিদুল হারাম অভিমুখে নামাজের আদেশ দেওয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আকাশের দিকে তোমার বারবার তাকানো আমি অবশ্য লক্ষ করি। সুতরাং তোমাকে অবশ্যই এমন কিবলার দিকে ফেরাব, যা তুমি পছন্দ করো। অতএব তুমি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফেরাও। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তার দিকেই মুখ ফেরাও। আর যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে তা তাদের রবের প্রেরিত সত্য। তারা যা করে সে ব্যাপারে আল্লাহ অনবহিত নন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৪৪)রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গমনস্থল : মিরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সব নবী-রাসুল সমবেত ছিলেন। তিনি সেখানে পৌঁছার পর আজান ও ইকামাত দেওয়া হয়। নবী-রাসুলরা কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়িয়ে যান। জিবরাইল (আ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)- এর হাত ধরে ইমামতির জন্য সামনে বাড়িয়ে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) সব নবী ও রাসুলের ইমামতি করেন। (দ্র. সীরাতুল মুস্তফা, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯৫-২৯৬)তারপর তাঁর ঊর্ধ্বাকাশে ভ্রমণ শুরু হয়। আল্লাহ বলেন, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ১)বরকতময় ভূখণ্ড ফিলিস্তিন পৃথিবীর এক বরকতময় স্থান। এখানে অনেক নবী-রাসুলের আবাসস্থল ছিল। ইবরাহিম (আ.), ইসহাক (আ.), ইয়াকুব (আ.), মুসা (আ.), দাউদ (আ.), সুলাইমান (আ.), ঈসা (আ.) ও আরো অনেক নবী-রাসুলের অনুসারীরা এই ভূমিতে বসবাস করতেন। ফিলিস্তিন অসংখ্য নবী-রাসুলের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। এর আশপাশে অনেক নবী-রাসুলের সমাধি আছে। পবিত্র কোরআনের পাঁচ স্থানে মহান আল্লাহ ফিলিস্তিনকে বরকতময় ও পুণ্যময় ভূখণ্ড হিসেবে উল্লেখ করেছেন ১. ‘যার (মসজিদুল আকসার) আশপাশে আমি বরকত নাজিল করেছি, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ১)এই অঞ্চল প্রাকৃতিক নদ-নদী, ফল-ফসলের প্রাচুর্য এবং নবীদের বাসস্থান ও কবরস্থান হওয়ার কারণে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের দাবি রাখে। এ কারণে একে বরকতময় আখ্যা দেওয়া হয়েছে।২. ‘আর আমি তাকে (ইবরাহিম) ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই ভূখণ্ডে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৭১)বেশির ভাগ ব্যাখ্যাদাতার কাছে এ থেকে শাম (বর্তমানে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন) দেশকে বোঝানো হয়েছে, যাকে শস্য-শ্যামলতা, ফলমূল, নদ-নদীর আধিক্য ও বহু নবীর বাসস্থান হওয়ার কারণে বরকতময় ও কল্যাণময় বলা হয়েছে।৩. ‘যে সম্প্রদায়কে (মুসা ও বনি ইসরাইলকে) দুর্বল মনে করা হতো, তাদের আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি; এবং বনি ইসরাইল সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের শুভ বাণী সত্যে পরিণত হলো, যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৩৭)এখানে শাম বা সিরিয়া ও মিসর ভূমির কথা বলা হয়েছে, যাতে আল্লাহ তাআলা কওমে ফিরআউন ও কওমে আমালেকাকে ধ্বংস করার পর বনি ইসরাইলকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং শাসনক্ষমতা দান করেছিলেন।৪. ‘এবং সুলায়মানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বায়ুকে; সে তার আদেশক্রমে প্রবাহিত হতো সেই ভূখণ্ডের দিকে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি; প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমিই সম্যক অবগত।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮১)কল্যাণময় ভূখণ্ড বলতে শামকে (ফিলিস্তিন ও সিরিয়া) বোঝানো হয়েছে।৫. ‘ওদের (সাবা সম্প্রদায়) ও যেসব জনপদের প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলাম সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে দৃশ্যমান বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং ওই সব জনপদে ভ্রমণের যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম এবং ওদের বলেছিলাম—তোমরা এসব জনপদে নিরাপদে ভ্রমণ করো দিনে ও রাতে।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১৮)এই জনপদ বলতে মুলকে শাম বোঝানো হয়েছে। প্রাচীন শামদেশ হলো বর্তমান সিরিয়া, জর্দান, লেবানন ও ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এই জনপদ হলো বায়তুল মুকাদ্দাস। (রুহুল মাআনি, ২২/১২৯)এভাবে কোরআনুল কারিমে বায়তুল মুকাদ্দাস ও ফিলিস্তিন অঞ্চলের অসামান‌্য মর্যাদা ও বৈশিষ্ট‌্যময় হওয়ার বিষয়টি অলোচিত হয়েছে। কাজেই তা মুসলমানদের অনুরাগ ও ভালোবাসার উৎস এবং প্রাণের চেয়ে প্রিয় বস্তুতে পরিণত হবে—এটাই স্বাভাবিক।
ধর্মীয় শিক্ষা
Positive
সমকাল
শয়তানের পূজারি' ইয়াজিদি জনগোষ্ঠীর রহস্যময় সংস্কৃতি
ইসলাম ধর্ম
আরব দেশগুলোতে যেখানে ইসলামের জন্ম হয়েছে, সেখানেই আজও টিকে আছে পুরাতন ধর্ম ইয়াজিদি। ইয়াজিদি এমন এক সম্প্রদায় যারা নিজেদের ঐতিহ্য এবং স্বতন্ত্র ধর্ম পরিচয়কে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেও ধীরে ধীরে পৃথিবীর বুক থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এদের অত্যন্ত পবিত্র স্থান ‘লালিশ’। তারা লালিশকে মুসলিমদের ‘মক্কা’, খ্রিস্ট্রানদের জেরুজালেমের মতোই পবিত্র বলে মনে করে। লালিশ একটি ছোট্ট পাহাড়ে গড়ে উঠা গ্রাম। যেটি ইরাকের কুর্দিস্তানে (ইরবিল থেকে ১২৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে) অবস্থিত। অথচ সবুজে ঘেরা এই ছোট্ট পাহাড়ে মাত্র ২৫ জনের বাস। সেখানে ইয়াজিদিদের প্রধান ধর্মীয় নেতারা সবাই বাস করেন। সাত হাজার বছরের পুরোনো এই ধর্মীয় বিশ্বাসের অনুসারীর সংখ্যা বিশ্বব্যাপী সাত লাখ। এদের অনেকে জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক এবং অস্ট্রেলিয়াতে পুনর্বাসিত হয়েছে। অনেকে বিশ্বের অন্যান্য শরণার্থীদের সাথে মিশে এখনো উন্নত দেশগুলোতে আশ্রয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর হাজার হাজার ইয়াজিদি বাস করছে ইরাক আর সিরিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পে। ইয়াজিদি ধর্ম বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মীয় ঐতিহ্যের একটি। ‘ইয়াজিদি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল ‘আল্লাহর উপাসক’। এই শব্দটি মূলত ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। ইয়াজিদিরা তাদের দেবতাকে ‘ইয়াজদান’ বলে ডাকে। ইয়াজিদিজম কী? ইয়াজিদিরা বিশ্বাস করে যে ইয়াজিদিজম বা ইয়াজিদিবাদ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম ধর্ম এবং ইসলাম, খ্রিষ্টধর্মের কিছু কিছু বিষয় এক হওয়ায় এই ইয়াজিদি ধর্ম এই দুই ধর্মের মতোই অনন্য। ইয়াজিদিরা বিশ্বাস করে, ঈশ্বর এই পৃথিবী আর আদম-হাওয়াকে সৃষ্টি করতে সাহায্য করার জন্য সাতজন ফেরেশতা সৃষ্টি করেন। এরপর ঈশ্বর এই সাতজন ফেরেশতাকে বললেন, `তোমরা আদমের সামনে মাথা নত করো'। একজন বাদে বাকি ছয়জন ফেরেশতা ঈশ্বরের আদেশ পালন করলো। যে ফেরেশতা মাথা নত করলোনা ঈশ্বর তাকে পৃথিবীতে নির্বাসিত করলেন ময়ূর বেশে এবং সে `মালাইকা আত-তাউস' (ময়ূর ফেরেশতা) নামে পরিচিত হলো। পরবর্তীতে ঈশ্বর এই ফেরেশতাকে সকল ফেরেশতা এবং পৃথিবীতে মানুষের দায়িত্ব দেন। এটিই মূলত ইয়াজিদিদের উপর নিপীড়ণের মূল কারণ যেখানে দেখা যায় ইয়াজিদিরা একজন পতিত ফেরেশতাকে উপাসনা করে। ইসলাম এবং খ্রিষ্ট ধর্মমতে `শয়তান' হচ্ছে সেই পতিত ফেরেশতা এবং অনেক মানুষ বিশ্বাস করে ইয়াজিদিরা তাহলে শয়তানের উপাসক। কিন্তু ইয়াজিদিদের মতে, ইয়াজিদিরা শয়তানে বিশ্বাস করে না এবং শয়তান পাপের উৎস একথাও মানতে নারাজ। এদের বিশ্বাস ঈশ্বর প্রদত্ব সমস্ত ভালো কিছুই মানুষের জন্য এবং মন্দ যা তা সব মানুষেরই কাছ থেকে আসে। ইয়াজিদিরা ঈশ্বরকে এত পবিত্র মনে করে যে তারা সরাসরি তার উপাসনাও করে না। তাদের মতে, ইয়াজদান সমগ্র মানব সৃষ্টির স্রষ্টা, তবে তিনি মহাবিশ্বকে রক্ষা করেন না, এই কাজটি তার অবতার দ্বারা করা হয়, যাতে ময়ূর ঈশ্বর প্রধান হুহ। ইয়াজিদিরা ময়ূরের দেবতার পাশাপাশি তার ময়ূরের পালককেও পূজা করে। ইয়াজিদিদের আরেকটি ধর্মীয় বিশ্বাস হচ্ছে তারা প্রকৃতি পূজারী। তাদের মন্দিরের ফটকে একটি কালো রঙের সাপের প্রতিকৃতি থাকে। যাকে তারা ‘প্রকৃতির মা’ হিসেবে বিবেচনা করে। তারা কখনও সাপ হত্যা করে না, এমনকি সেটি বিষাক্ত হলেও। ইয়াজিদি ধর্মমতে অন্য ধর্মের কেউ ইয়াজিদি ধর্ম গ্রহণ করতে পারবে না। ইয়াজিদি হতে হলে তাকে ইয়াজিদি বাবা-মার সন্তান হতে হবে। এর মানে হলো কেউ ইয়াজিদি না হলে ইয়াজিদি হতে পারবে না। ধর্মীয় আরও কিছু প্রথা এই ধর্মকে দিন দিন সংকুচিত করে ফেলছে যার মধ্যে রয়েছে এদের বিবাহ নিজেদের ধর্মের মধ্যেই হতে হবে। ইয়াজিদিদের প্রার্থনা কেমন? ইয়াজিদিরা দৈনিক পাঁচবার প্রার্থনা করে। নিভেজা বেরিস্পেদে (ভোরের প্রার্থনা), নিভেজা রোঝিলাতিনে (সূর্যোদয়ের প্রার্থনা), নিভেজা নিভ্রো (দুপুরের প্রার্থনা), নিভেজা এভারি (বিকেলের প্রার্থনা), নিভেজা রোজাভাবুনে (সূর্যাস্তের প্রার্থনা)। তবে বেশিরভাগ ইয়াজিদি মাত্র দুই বারই প্রার্থনা করে আর তা হলো সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তর সময়। এই দুই সময় এরা সূর্যের দিকে এবং বাকি সময় গুলো লালিশের (যেখানে এদের পবিত্র মন্দির অবস্থিত) দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে। এই দৈনিক প্রার্থনা বাইরের লোকেদের উপস্থিতিতে করা নিষিদ্ধ। বুধবার হচ্ছে ইয়াজিদিদের পবিত্র দিন এবং শনিবার হলো বিশ্রামের দিন। ইয়াজিদিদের উৎসব কেমন? ইয়াজিদিদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের একটি হচ্ছে ইরাক এর উত্তর মসুলের লালিশে অবস্থিত শেখ আদি ইবনে মুসাফির (শেখ সাদী) এর মাজারে সাতদিনের হজ্বব্রত বা তীর্থভ্রমণ পালন। যদি সম্ভব হয় প্রত্যেক ইয়াজিদি তাদের জীবদ্দশায় একবার শেখ সাদীর মাজারে তীর্থভ্রমণের চেষ্টা করতে বলা হয়েছে। তীর্থভ্রমণের সময় তারা নদীতে গোছল করে। তাউস মেলেকের মূর্তি ধৌত করে এবং শেখ সাদীর মাজারে শত প্রদীপ জ্বালায়। এসময় তারা একটি ষাঁঁড় কুরবানি করে। ব্যাপ্টিস্ট খ্রিষ্টানদের মতো ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের শিশুদের সর্বাঙ্গ পবিত্র পানিতে ডুবিয়ে দীক্ষা দেন একজন পীর। ডিসেম্বর মাসে ইয়াজিদিরা তিন দিন রোজা রাখে। পরে পীরের সঙ্গে সুরা পান করে। ইয়াজিদিরা কেন নির্যাতিত? মূলত ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণেই ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের লোকজন নিপীড়ণের লক্ষ্য হয়েছে। তবে এই নিপীড়ন সবসময় সহিংস রূপে ছিলোনা। এদের ভূমি থেকে উচ্ছেদও এদের প্রতি নিপীড়ণের একটা কারণ। ধর্মীয় বিচার ছাড়াও আরেকটি কারণে ইয়াজিদিরা নিপীড়িত হয়েছে আর তা হলো সাদ্দাম হোসেন কর্তৃক উত্তর ইরাকে আরব বসতি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে অনারব ইরাকিদের বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা।
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Negative
কালের কন্ঠ
অস্ট্রেলিয়ায় সিরাতবিষয়ক সেমিনারে পাঁচ হাজার অতিথির সমাবেশ
ইসলাম ধর্ম
অস্ট্রেলিয়ায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সিরাতবিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দেশটির সিডনি শহরের অলিম্পিক পার্ক স্পোর্টস সেন্টারে তা অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামিক হাইকাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়া আয়োজিত এই সম্মেলনে মুসলিমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ এতে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় মুসলিম সম্প্রদায় ও দারুল ফতোয়াকে শুভেচ্ছা জানান অস্ট্রেলিয়ার গভর্নর জেনারেল ডেভিড হার্লি ও সংসদ সদস্য ক্রিস মিন্স।তা ছাড়া সরকারের মন্ত্রী জিহাদ দিব ও বিরোধীদলীয় নেতা জর্ডান লেন তাঁদের বক্তব্যে দারুল ফতোয়া অস্ট্রেলিয়ার নানামুখী কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।উদ্বোধনী বক্তব্যে অস্ট্রেলিয়ার দারুল ফতোয়ার প্রধান শায়খ সালিম আলওয়ান বলেন, ‘মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী শীর্ষক সম্মেলন উপলক্ষে আমরা একত্র হয়েছি। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) আমাদের সহনশীলতা, দয়া ও অনুকম্পার মূল্যবোধ শিখিয়েছেন। কারণ তিনি পুরো বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন।অস্ট্রেলিয়ার মুসলিমরা এই দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বিশেষত কর্ম ও প্রচার উভয় ক্ষেত্রে ঘৃণ্য চরমপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং মধ্যপন্থার দৃষ্টিভঙ্গি মেনে তাঁরা সমাজে সহনশীলতা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।’এ ধরনের কর্মসূচি বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করে। বিশেষত মিসরের আল-আজহার, মালয়েশিয়ার জাকিম, ইন্দোনেশিয়ার স্কলারস কাউন্সিল, মরক্কোর আল-কারাওইন ও তিউনিসিয়ার আল-জায়তুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রধান ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাছাকাছি নিয়ে আসে।বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে মালয়েশিয়ার ইসলামবিষয়ক জাতীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ড. কে এইচ ইয়াহিয়া খলিল, ইন্দোনেশিয়ার নাহদাতুল উলামার প্রতিনিধি ড. আবদুল গফুর মাইমোন, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, লেবানন, জর্দান, মিসর, মালয়েশিয়া, সিরিয়ার প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন জাতি ও ভাষার অসংখ্য ইমাম, ধর্মীয় নেতা, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদের আগমন ঘটেছিল।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
প্রথম আলো
মণ্ডপ ও বাড়ি যখন একাকার
হিন্দু ধর্ম
পুরান ঢাকার দুর্গোৎসবের সমারোহ মানেই শাঁখারীবাজার। এ সময় শাঁখারীবাজারের রূপ যেন বদলে যায়। বাজারের মূল সড়কের প্রস্থ বড়জোর ১০ ফুট হবে, দুই পাশে পুরোনো দিনের দোতলা, তিনতলা ভবন, তার নিচে শাঁখা, পূজার উপকরণসহ বিভিন্ন মনিহারি দ্রব্যের দোকান। সেই সড়কে ১৫ ফুট পরপর একটি করে পূজার মণ্ডপ— বয়স ৪০, ৫০ বা ৬০ বছর। রাস্তায় বাঁশের খুঁটি পুতে তার ওপর মাচা বসানো হয়েছে, সেই মাচার ওপর মণ্ডপ বানানো হয়েছে। তার নিচ দিয়েই হাঁটতে হয়, সেখানে হাঁটতে গেলে মানুষের গায়ে গায়ে লেগে যায়, তবু মানুষের কমতি নেই, নেই উৎসবের কমতি। পূজা উপলক্ষে রাস্তার ওপর আরও কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকান বসেছে। তারা সবাই পদ্মফুলসহ দুর্গাপূজার বিভিন্ন উপকরণ বিক্রি করছে। মূল পূজার অনুষ্ঠানের সময় সেখানে ঢাকের শব্দ ও উলুধ্বনিতে কান পাতা দায়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ অঞ্জলি দিতে আসেন, অষ্টমী ও নবমীর দিন কত জন অঞ্জলি দেন, সেই হিসাব করার সাধ্য কার! সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পরও কানে ঢাক ও উলুধ্বনির অনুরণন হয়। পূজার সময় এই ছোট্ট মহল্লার মানুষের যেন দম ফেলার ফুরসত থাকে না। এত এত পূজা, তার জোগাড় তো তাঁদেরই করতে হয়, এ তো আর কম ঝক্কি নয়! যাঁদের সে অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা সেটা বুঝবেন, কিন্তু যাঁদের তা নেই, তাঁদের পক্ষে সেটা বোঝা মুশকিল। নাওয়া-খাওয়া ভুলে এই পূজার পেছনেই সারাদিন লেগে থাকতে হয়। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের সবুজ স্বপন সংঘ পূজা কমিটির পূজা মণ্ডপ l ছবি: প্রথম আলো পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের সবুজ স্বপন সংঘ পূজা কমিটির পূজা মণ্ডপ l ছবি: প্রথম আলো শাঁখারীবাজারে যেমন বারোয়ারি পূজা আছে, তেমনি বাড়ির পূজাও আছে। শাঁখারী পুষ্পনাথ সেন ২০/২১ বছর ধরে নিজ বাড়ির পূজা করছেন। পঞ্চমীর দিন তাঁর সঙ্গে কথা হলো। তিনি বললেন, শাঁখারীবাজারে মোট নয়টি পূজা হয়। পাকিস্তান আমলে শাঁখারীবাজারে দুটি বা তিনটি পূজা হতো, স্বাধীনতার পর বেড়েছে। ফুরসত নেই তাঁর। কথার ফাঁকে ফাঁকেই বাড়ির লোকেরা পূজার আয়োজনের বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করছিলেন, তিনিও নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আরও বললেন, পূজার কটা দিন যে কীভাবে কেটে যায়, টেরই পাওয়া যায় না। এ সময় বাড়ি আর মন্দির যেন একাকার। খিচুড়ি-লাবড়া-লুচি-পায়েস—পূজার সময় এসবই তাঁদের খাদ্য। এই পূজার বিশেষত্ব হচ্ছে, তাঁরা শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন দেন না, চৈত্র মাসে একই প্রতিমায় বাসন্তী পূজা করার পর মূর্তি বিসর্জন দেন, যদিও সাধারণভাবে দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রতিদিনই তাঁরা দেবীর ভোগ দেন। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, দুর্গাপূজা মূলত চৈত্র মাসেই হতো। পরবর্তীকালে রাজা রামচন্দ্র শরৎকালে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। পূজার সময় এত মানুষের সমাগমেও শাঁখারীবাজারের বাসিন্দারা বিরক্ত হন না। এমনকি তাঁরা নিজেদের বাড়িতে অনেক দর্শনার্থীদের আপ্যায়ন করেন, প্রয়োজন হলে নারী দর্শনার্থীদের টয়লেট ব্যবহার করতে দেন। এসবই তাঁরা হাসিমুখে মেনে নেন। কারণ, তাঁরা জানেন, শাঁখারীবাজারে না এলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পূজা সার্থক হয় না। আসলে শুধু শাঁখারীবাজারই নয়, পুরান ঢাকার মণ্ডপে না ঘুরলে হিন্দুদের পূজা যেন সম্পূর্ণ হয় না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, একসঙ্গে এত পূজার মণ্ডপ ঢাকার আর কোথাও নেই। শুধু সূত্রাপুর থানাতেই ৪০-৪২টি পূজা হয়। আর এখানকার পূজার যে ঐতিহ্য রয়েছে, তার আকর্ষণও মানুষকে টেনে নিয়ে আসে। সেখানে গেলে মানুষ এক ঐতিহ্যের অংশে পরিণত হয়। বাংলাবাজারের পূজার বয়স এবার ৮২ হলো। কয়েক প্রজন্মের আয়োজকেরা এত দিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে এই পূজা করে আসছেন। সেখানকার আয়োজকেরা বললেন, অষ্টমীর দিন তাঁরা দুই হাজার মানুষকে খিচুড়ি, লুচি ও পায়েস দিয়ে আপ্যায়ন করেন, এলাকাবাসীর মধ্যে খিচুড়ি বিতরণ করেন। তাঁরা নবমীর রাতে আরতি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন আর দশমীর দিন গরিবদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করেন। ফলে পূজার কটা দিন দম ফেলার ফুরসত থাকে না। এলাকার হিন্দু-মুসলমাননির্বিশেষে সবাই তাতে অংশ নেন। তাঁরা বলেন, ঢাকার কিছু স্থানে এখন অনেক জাঁকজমকপূর্ণ পূজা হলেও পুরান ঢাকার আমেজ সেখানে নেই। সে কারণেই পুরান ঢাকার পূজা অনন্য। ওদিকে ঋষিকেশ দাস রোডের একরামপুর পূজা কমিটি ৪৪ বছর ধরে পূজা করছে। এর মধ্যে ৪১ বছর ধরে তারা একই স্থানে পূজা করে আসছে। এই পূজা কমিটির অনেক সদস্যই বীর মুক্তিযোদ্ধা আর কমিটির ১০ জন সদস্য মুসলিম ধর্মাবলম্বী। ঢাকা নগরে পূজার আমেজ পেতে হলে পুরান ঢাকায় যাওয়ার বিকল্প নেই। শাঁখারীবাজার থেকে নর্থ ব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার, ফরাশগঞ্জ, ঋষিকেশ দাস রোড, নারিন্দা, গেন্ডারিয়া—সব স্থানেই রয়েছে ঢাক ও উলুর মিলিত ধ্বনি। সঙ্গে আছে ঐতিহ্যের অংশ হওয়ার আহ্বান। দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শেষ হবে। কিন্তু দুর্গাপূজার পর পুরান ঢাকা ঝিমিয়ে পড়বে না, শুরু হয়ে যাবে লক্ষ্মীপূজার আয়োজন, আর তারপর তো কালীপূজা আছেই। সব পূজাই সেখানে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
ইসলামে ব্যভিচার গ্রহণযোগ্য নয়
ইসলাম ধর্ম
ইসলামে ব্যভিচার বিশেষত বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক অনুমোদন করা হয় না। এ ধরনের অপকর্মের অপরাধীরা যেমন আখিরাতের জীবনে কঠিন সাজার সম্মুখীন হবে তেমন দুনিয়ার জীবনেও তাদের কঠোরতম শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সাহাবা আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইমান হচ্ছে একটি সুন্দর পোশাক, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে তা পরিয়ে দেন। কিন্তু যখন কেউ ব্যভিচার করে, আল্লাহ তখন তার গা থেকে ইমানের পোশাক খুলে নেন। এরপর যদি সে তওবা করে তবে আল্লাহ তাকে আবার ওই পোশাক ফিরিয়ে দেন।’ বায়হাকি, আবু দাউদ, তিরমিজি ও হাকেম। রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমরা ব্যভিচার থেকে পরহেজ কর। কেননা এর ছয়টি খারাপ পরিণতি রয়েছে। যার তিনটি ইহলোকে ও তিনটি পরলোকে সংঘটিত হবে। ইহলোকের তিনটি হচ্ছে- তার চেহারার সৌন্দর্য লোপ পায়, তার আয়ু হ্রাস পায় এবং চিরকাল সে দরিদ্রতার ভিতর থাকবে। পারলৌকিক তিনটি হচ্ছে- সে আল্লাহর অসন্তুষ্টি, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তির সম্মুখীন হবে।’ -ইবনে জাওজি। রসুল (সা.) বলেন, ‘ইবলিশ শয়তান তার শিষ্যবাহিনীকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার সময় বলে দেয়, তোমাদের যে কোনো মুসলমানকে পথভ্রষ্ট করতে পারবে, তার মাথায় আমি নিজ হাতে মুকুট পরিয়ে দেব এবং সে আমার কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান বিবেচিত হবে। দিনের শেষভাগে সবাই ফিরে এসে ইবলিশের কাছে তাদের সারা দিনের কৃতকর্মের হিসাব দিতে থাকে। কেউ বলে আমি অমুকের পেছনে লেগে থেকে প্ররোচনার মাধ্যমে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করেছি। ইবলিশ বলে, তোমার এ কাজ তো তেমন কিছুই নয়, সে আর এক রমণীকে বিয়ে করে নেবে। এরপর আর একজন বলে, আমি সারা দিন অমুকের পেছনে লেগে থেকে নানা প্ররোচনার মাধ্যমে তার ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ বাধিয়ে দিয়ে এসেছি। ইবলিশ বলে, তোমার এ কাজ তো তেমন কিছুই নয়, অচিরেই তারা পরস্পরে মীমাংসা করে নেবে। এরপর আর একজন বলে, আমি সারা দিন প্ররোচনার মাধ্যমে অমুককে ব্যভিচারে লিপ্ত করিয়েছি। ইবলিশ এবার খুশি হয়ে বলে, হ্যাঁ, তুমি একটা কাজের কাজ ঘটিয়েছ। এরপর ইবলিশ তার মাথায় মুকুট পরিয়ে দেয়।’ আর এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেন, ‘যে লোক মদপানে অভ্যস্ত অবস্থায় (বিনা তওবায়) মারা যায়, আল্লাহ তাকে গাওতাত নামক নহরের পানি পান করাবেন। গাওতাত হচ্ছে, জাহান্নামে ব্যভিচারিণীদের যোনীপথ থেকে নির্গত দূষিত রক্ত ও পুঁজের প্রবহমান ঝরনাধারা।’ আহমদ, আবু ইয়ালা, ইবনে হিব্বান, হাকেম। অন্যত্র রসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শিরক করার পর অবৈধ নারীর গুপ্তাঙ্গে বীর্যপাতের চেয়ে জঘন্য কবিরা গুনাহ আর নেই।’ আহমদ, তাবারানি। ব্যভিচার থেকে বাঁচতে হলে দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মোমিনদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে ও তাদের যৌনাঙ্গের সুরক্ষা করে এবং মোমিন নারীদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে ও তাদের যৌনাঙ্গের সুরক্ষা করে।’ সুরা নুর, আয়াত ৩০-৩১। ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া এবং যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে এক শ বার বেত্রাঘাত করাই হলো একমাত্র শাস্তি। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে একই বিধান প্রযোজ্য। হাশরের মাঠে সবাই একত্রিত হবে। এদিন কারও পরনে কাপড় থাকবে না। এটি মানুষের চতুর্থ জগৎ। কবর হলো তৃতীয় জগৎ। হাশরের মাঠে নেকি ও পাপের ফয়সালা হবে। সেখান থেকে মানুষ চিরস্থায়ী জগতে পাড়ি দেবে। সেই চিরস্থায়ী জগতের নাম জান্নাত ও জাহান্নাম। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর নবীকে এ কথা বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন মানব জাতিকে খালি পায়ে, উলঙ্গ ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! এ অবস্থায় তো নারী-পুরুষ পরস্পরের দিকে তাকাবে। তিনি বললেন, হে আয়েশা! সেদিনকার অবস্থা এত ভয়াবহ হবে যে পরস্পরের দিকে তাকানোর কোনো কল্পনাই করবে না।’ বুখারি, মুসলিম। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা রসুলুল্লাহ (সা.) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন- “যেদিন জমিন তার যাবতীয় খবর বলে দেবে”। এরপর হুজুর (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা বলতে পার জমিনের সংবাদগুলো কী কী? সাহাবিরা আরজ করলেন আল্লাহ ও তাঁর রসুলই কেবল জানেন। আমরা জানি না। হুজুর (সা.) বললেন, জমিনের সংবাদ হলো জমিনের ওপর নারী-পুরুষ যা কিছু ভালো-মন্দ কাজ করেছে, কিয়ামতের দিন জমিন তার সাক্ষ্য দেবে। জমিন বলবে, আমার বুকের ওপর অমুক অমুক দিনে অমুক লোক এ কাজ করেছে। হুজুর (সা.) বললেন, এ-ই হলো জমিনের সংবাদ দান।’ আহমাদ, তিরমিজি। অর্থাৎ দুনিয়ায় যারা ব্যভিচারসহ অপকর্মে লিপ্ত হবে, আখিরাতে তা কোনোভাবে গোপন রাখা সম্ভব হবে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবর ও হাশরের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার তৌফিক দান করুন।
ধর্মীয় শিক্ষা
Negative
প্রথম আলো
ধর্ম মন্ত্রণালয় নেবে আইন উপদেষ্টা ও প্যানেল আইনজীবী
অন্যান্য
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসকের কার্যালয়ে আইন উপদেষ্টা ও প্যানেল আইনজীবী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ওয়াক্ফ প্রশাসনের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং ওয়াক্ফ এস্টেটের পক্ষে ও বিপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়ে একটি আইনজীবী প্যানেল গঠন এবং ওয়াক্ফ এস্টেটের বিভিন্ন বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য একজন আইন উপদেষ্টা নেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদন জমা দিতে হবে।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিভাগের জন্য আবেদনকারীদের ঢাকায় নিয়মিতভাবে বসবাসরত হতে হবে এবং অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রে যে বিভাগের জন্য আবেদন করা হবে সেই বিভাগে নিয়মিতভাবে বসবাস করতে হবে। আইন উপদেষ্টা বা প্যানেল আইনজীবী কোন পদের জন্য আবেদন করা হচ্ছে, তা উল্লেখপূর্বক আবেদন করতে হবে। প্যানেল আইনজীবীদের বিভাগভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। আবেদনকারী কোন বিভাগের জন্য প্যানেলভুক্ত হতে আগ্রহী, তা উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে।আবেদনপত্রে আবেদনকারীর নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, বয়স ও অভিজ্ঞতা ইত্যাদি উল্লেখ করে জীবনবৃত্তান্ত দিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি সংযুক্ত করতে হবে। আবেদনকারীর বয়স ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে ৫৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। আবেদনের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র, বার কাউন্সিলের সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদ এবং হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের তালিকাভুক্তির সনদসহ সব সনদের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত করতে হবে।আবেদনপত্রে আবেদনকারীর নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, বয়স ও অভিজ্ঞতা ইত্যাদি উল্লেখ করে জীবনবৃত্তান্ত দিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি সংযুক্ত করতে হবে। আবেদনকারীর বয়স ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে ৫৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। আবেদনের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র, বার কাউন্সিলের সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদ এবং হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের তালিকাভুক্তির সনদসহ সব সনদের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত করতে হবে।আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিভাগের প্যানেল আইনজীবীর ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বাংলাদেশ হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনায় কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বিভাগীয় পর্যায়ে ঢাকা বিভাগ ব্যতীত অন্য বিভাগের জন্য আবেদনকারীর ক্ষেত্রে জজ কোর্টে মামলা পরিচালনায় কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।ওয়াক্ফ প্রশাসকের পক্ষে মামলায় স্বাধীনভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, মামলার আরজি তৈরি, মামলার জবাব তৈরি এবং নথিতে আইনি মতামত প্রদানের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral
আলোকিত বাংলাদেশ
মক্কার আধ্যাত্মিকতায় মুগ্ধ হয়ে ব্রিটিশ ধনকুবেরের ইসলাম গ্রহণ
ইসলাম ধর্ম
ইসলাম গ্রহণ করেছেন প্রসিদ্ধ ব্রিটিশ অভিনেতা ও গায়ক ড্যানি ল্যাম্বো। বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী হিসেবেও বিশ্বব্যাপী তার ব্যাপক পরিচিতি। বৃহস্পতিবার সৌদি সংবাদ সংস্থা আল-আরাবিয়া ল্যাম্বোর ইসলামে প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ড্যানি ল্যাম্বোর ইসলাম গ্রহণের ঘোষণাটি বেশ চমকপ্রদ। তিনি মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামে ওমরাহ আদায়ের একটি ভিডিও ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করে গুরুত্বপূর্ণ এ ঘোষণাটি দিয়েছেন। ওই ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, আপনি জানবেন না যে- জীবন আপনাকে কোন পথে নিয়ে যাবে? আমি ব্যবসার কাজে সৌদি আরবে এসেছিলাম, কাজও দ্রুত শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে আমার সাক্ষাৎ হয় এমন এক ব্যক্তির সাথে, যিনি আমাকে পবিত্র মক্কায় নিয়ে আসেন। এখান থেকেই আমার নতুন এক আধ্যাত্মিক ও মানসিক সফর শুরু হয়ে গেল। আবেগঘন ওই ভিডিওতে ল্যাম্বোকে কাবার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতেও দেখা গেছে। আর এখন তিনি নওমুসলিম হিসেবে লন্ডনে অবস্থান করছেন। ইনস্টাগ্রামে সৌদি আরবের এক বন্ধুর সাথেও নিজের একটি ছবি পোস্ট করেছেন ব্রিটিশ ধনকুবের। ‘মক্কা সফর’ হাইলাইটস দিয়ে ওই বন্ধুর উদ্দেশে ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ আমার ভাই বাসিত। তুমি আমাকে জীবনের আসল অর্থ ও উদ্দেশ্য চিনিয়েছো।’ ব্রিটিশ এই অভিনেতার প্রকৃত নাম ছিল ড্যানি কার্ন। ইতালীয় সুপারকার ল্যাম্বরগিনির প্রতি তার ভালোলাগা প্রকাশ করার জন্য নামের সাথে ‘ল্যাম্বো’ যুক্ত করেছিলেন তিনি। তারপর থেকে তিনি ‘ড্যানি ল্যাম্বো’ হিসিবেই নিজের পরিচয় দিয়ে আসছেন। আর্থিক দিক থেকে ড্যানি ল্যাম্বো বেশ প্রভাবশালী। আল-আরাবিয়া জানায়, তার মোট সম্পদের মূল্য অন্তত ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড। এর বড় একটি অংশ তিনি লন্ডনে হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ করে উপার্জন করেছেন। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেন ড্যানি। তার দুই বোন ও এক ভাই রয়েছে। তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে গানকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। এর জন্য তিনি কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হন এবং তার একজন শিক্ষক তাকে ব্যর্থ মানুষ বলেও আখ্যায়িত করেন। সঙ্গীতের পাশাপাশি ড্যানি একজন হোটেল ব্যবসায়ী হিসেবেও কাজ শুরু করেন। যা তার সম্পদ বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। এভাবে মাত্র ২২ বছর বয়সে কোটিপতিদের তালিকায় নিজের নাম লেখান ড্যানি কার্ন থেকে ড্যানি ল্যাম্বো হওয়া ব্রিটিশ এই ধনকুবের, গায়ক ও অভিনেতা।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
দৈনিক ইনকিলাব
কাবার পথের মেহমান! লাব্বায়িক (উপস্থিতি) নিশ্চিত করুন
ইসলাম ধর্ম
হজ্ব ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন বা স্তম্ভ। আরবী ভাষায় হজ্ব শব্দের অর্থ যিয়ারতের সংকল্প করা। যেহেতু খানায়ে কাবা যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে মুসলমানরা পৃথিবীর চারিদিক হতে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের দিকে চলে আসে, তাই এর নাম হজ্ব রাখা হয়েছে। কিন্তু এ হজ্বের পেছনে এক সংগ্রামী, চিত্তাকর্ষক ও শিক্ষাপ্রদ ইতিহাস নিহিত রয়েছে। যারা এ বিশ্ব সম্মেলন কেন্দ্রে আল্লাহর মেহমান হিসাবে হাজিরা দিতে যাবেন, তারা যদি একটু গভীর মনযোগ সহকারে সে ইতিহাস অধ্যয়ন করে নেন তবে হজ্জ্বের প্রকৃত শিক্ষা ও কল্যাণ লাভ করা সহজ হবে। হজ্ব এলেই আমাদের হৃদয়স্পটে ভেসে ওঠে শিরকের মুলোৎপাঠনকারী মুসলিম মিল্লাতের অবিসংবাদিত সংগ্রামী নেতা ও পিতা হযরত ইবরাহিম আঃ এর কথা। যিনি মহান সৃষ্টিকর্তা ও প্রভুর সন্ধানে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ ও নক্ষত্রকে ব্যর্থ প্রভু ভেবে ভেবে অবশেষে সত্যের আলোর সন্ধান পেলেন এবং উদাত্ত কন্ঠে ঘোষনা করলেনঃ “তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক বলে মনে কর তাদের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নাই।” তিনি আরো বললেন ”আমি সব দিক হতে মুখ ফিরিয়ে বিশেষভাবে কেবল সেই মহান সত্তাকেই ইবাদাত-বন্দেগীর জন্য নির্র্দিষ্ট করলাম, যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই।” এ পুর্ণাঙ্গ মানুষটি যৌবনের শুরুতেই যখন আল্লাহকে চিনতে পারলেন তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে বললেনঃ ”ইসলাম গ্রহণ কর-স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন কর, আমার দাসত্ব স্বীকার কর। তিনি উত্তরে পরিস্কার ভাষায় বললেন: আমি ইসলাম কবুল করলাম, আমি সারা জাহানের প্রভুর উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করলাম, নিজেকে তার নিকট সোপর্দ করলাম। তিনি রাব্বুল আলামীনের জন্য শত শত বছরের পৈতৃক ধর্ম এবং এর যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান ও আকীদা বিশ্বাস পরিত্যাগ করলেন। অথচ পৈতৃক মন্দিরের পৌরহিত্যের মহাসম্মানিত গদি তার জন্য অপেক্ষা করছিল। যে গদিটিতে বসলে তিনি অনায়াসেই জাতির নেতা বনে যেতেন। চারদিক থেকে নযর-নিয়ায এসে জড় হত এবং জনগণ ভক্তি -শ্রদ্ধা ভরে মাথা নত ও হাত জোড় করে বসত। সাধারণ মানুষ হতে বাদশাহ পর্যন্ত সকলকে আজ্ঞানুবর্তী গোলাম বানিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু এ বিরাট স্বার্থের উপর পদাঘাত করে সত্যের জন্য দুনিয়া জোড়া বিপদের গর্ভে ঝাপিয়ে পড়তে প্রস্তুত হলেন। জন্মভূমি হতে বের হয়ে আরব দেশ সমুহ ঘুরতে লাগলেন। এ ভ্রমনে তার উপর অসংখ্য বিপদ এসেছে। রাত-দিন তিনি কেবল একটি চিন্তা করতেন, দুনিয়ার মানুষকে অসংখ্য রবের গোলামীর নাগপাশ হতে মুক্ত করে কিভাবে এক আল্লাহর বান্দায় পরিণত করা যায়। দেশত্যাগ ও নির্বাসনের দুঃখ-কষ্ট ভোগ করার পর বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহ তাকে সন্তান দান করলেন। তিনি তার জন্যও একই ধর্ম ও কর্তব্য ঠিক করলেন। সব কঠিন পরীক্ষায় পাশ করার পর চুড়ান্ত ও শেষ কঠিণ পরীক্ষা অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছিল যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত হযরত ইবরাহিম আঃ সবকিছু অপেক্ষা রাব্বুল আলামীনকেই বেশী ভালবাসেন কিনা, তার ফয়সালা হতে পারত না। তাই বৃদ্ধ বয়সে একেবারে নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তার সন্তান লাভ হয়েছিল সে প্রিয় সন্তানকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে পারেন কি না তারই পরীক্ষা নেয়া হলো। পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন। তখন চুড়ান্তরূপে ঘোষনা করা হলো যে, এখন তুমি প্রকৃত মুসলিম হওয়ার দাবীকে সত্য বলে প্রমান করেছ। এক্ষণে তোমাকে সারা পৃথিবীর ইমাম বা নেতা বানানো যায়। আল কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে এ কথাই বলা হয়েছে:-“এবং যখন ইবরাহীমকে তার রব কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সে সব পরিক্ষায় ঠিকভাবে উত্তীর্ণ হলেন তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, আমি তোমাকে সমগ্র মানুষের ইমাম বা নেতা নিযুক্ত করছি। তিনি বললেন, আমার বংশধরদের সম্পর্কে কি হুকুম ? আল্লাহ তা’আলা বললেন যালেমদের জন্য আমার ওয়াদা প্রযোজ্য নয়।”(সুরা বাকারা-১২৪) এভাবে হযরত ইবরাহিম আঃ কে দুনিয়ার নেতৃত্ব দান করা হল এবং বিশ্বব্যাপী ইসলাম বা মুসলমানদের চিরস্থায়ী আদর্শিক নেতা নিযুক্ত করা হল। জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাইল আঃ কে সাথে নিয়ে তিনি হিযাযের মক্কা নগরীকে কেন্দ্র করে আরবের কোণে কোণে ইসলামের শিক্ষাকে বিস্তার সাধন করলেন। আর পিতা পুত্র মিলে ইসলামী আন্দোলনের বিশ্ববিখ্যাত কেন্দ্র খানায়ে কাবা প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তা’আলা নিজেই এ কেন্দ্র নির্দিষ্ট করে দেন। খানায়ে কাবা সাধারণ মসজিদের ন্যায় নিছক ইবাদাতের স্থান নয়, প্রথম দিন হতেই এটা দ্বীন ইসলামের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের প্রচার কেন্দ্ররূপে নির্ধারিত হয়েছিল। এ কাবা নির্মানের মুল উদ্দেশ্য ছিল যে, পৃথিবীর দুরবর্তী অঞ্চলসমুহ হতে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী সকল মানুষ এখানে এসে মিলিত হবে এবং সংঘবদ্ধভাবে এক আল্লাহর ইবাদাত করবে, আবার এখান থেকে ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে তা বান্তবায়নে সচেষ্ট হবে । বিশ্ব মুসলিমের এ সম্মেলনেরই নাম হজ্ব। এ ঘরের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে হযরত ইবরাহীম আঃ এর দোওয়া শুনুন ঃ আল কুরআনে আল্লাহ বলছেন “এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহিম দুআ করেছিলেনঃ হে আল্লাহ ! এ শহরকে শান্তিপূর্ণ বানাও, আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তি পুজার শিরক হতে বাঁচাও। হে আল্লাহ! এ মুর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গোমরাহ করেছে। অতএব,যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার, আর যে আমার পন্থার বিপরীতে চলবে-তখন তুমি নিশ্চয়ই বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এ মহান ঘরের নিকট,এ ধুসর মরুভূূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি-এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামায কায়েম করবে। অতএব,হে আল্লাহ! তুমি লোকদের মনে এতদুর উৎসাহ দাও যেন তারা এর দিকে দলে দলে চলে আসে এবং ফল-মুল দ্বারা তাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর। হয়ত ইহারা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে।” সুরা ইবরাহীম-৩৫-৩৭ এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আরো বলেনঃ-“এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমের জন্য এ ঘরের স্থান ঠিক করেছিলাম-এ কথা বলে যে, এখানে কোন প্রকার শিরক করোনা এবং আমার ঘরকে তওয়াফকারী ও নামাযীদের জন্য পাক-সাফ করে রাখ। আর লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহবান জানাও-তারা যেন তোমার নিকট আসে, পায়ে হেটে আসুক কিংবা দুরবর্তী স্থান হতে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দ্বীন-দুনিয়ার কল্যাণের ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তু গুলোকে আল্লাহর নামে কুরবানী করবে, তা হতে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থ লোকদেরকে খেতে দেবে।” (সুরা হজ্জ-২৬-২৮) এ ঘরের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে পিতা পুত্র মিলে মহান আল্লাহর দরবারে আরো দু’আ করেছিলেন যা আল্লাহ নিজের ভাষায় কুরআনে বলেছেন:-“এবং স্মরণ কর, ইবরাহিম ও ইসমাইল যখন এ ঘরের ভিত্তি স্থাপন কালে দোওয়া করছিলেনঃ পরওয়ারদিগার! আমাদের এ চেষ্টা কবুল কর, তুমি সব কিছু জান এবং সবকিছু শুনতে পাও। পরওয়ারদিগার ! তুমি আমাদের দু’জনকেই মুসলিম-অর্থাৎ তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশাবলী হতে এমন একটি জাতি তৈরী কর যারা একান্তভাবে তোমারই অনুগত হবে। আমাদেরকে তোমার ইবাদাত করার পন্থা বলে দাও, আমাদের প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর, তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরোয়ারদিগার! তুমি সে জাতির প্রতি তাদের মধ্য হতে এমন একজন নবী পাঠাও যিনি তাদেরকে তোমার বাণী পড়ে শোনাবে,তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দিবে এবং তাদের চরিত্র সংশোধন করবে। নিশ্চয় তুমি সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন এবং বিজ্ঞ।”(সুরা বাকারা-১২৭-১২৯) যে শিরক উচ্ছেদ ও মূর্তি পূজা বন্ধ করার সাধনা ও আন্দোলনে হযরত ইবরাহীম আঃ ও ইসমাইল আঃ এর সারাটি জীবন অতিবাহিত করেছিলেন, কালের বিবর্তনে এ কাবা ঘরে আবার ৩৬০টি মুর্তি স্থাপন করা হয়। চারদিকে শিরক আর শিরক চলতে থাকে। লাত, মানাত, হুবাল, নসর,ইয়াগুস, উজ্জা,আসাফ, নায়েলা আরো অসংখ্য নামের মূর্তি তৈরী করে পূজা করত। হজ্বকে তারা তীর্থযাত্রার অনুরূপ বানিয়ে তাওহীদ প্রচারের কেন্দ্রস্থল কাবা ঘর হতে মূর্তি পূজার প্রচার শুরু করে ছিল এবং পূজারীদের সর্বপ্রকার কলা কৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত লোকদের নিকট হতে নযর-নিয়ায আদায় করত। হজ্জের অন্যান্য অনুষ্ঠান গুলোকে বিকৃতরূপ দিয়ে পালন করত। এ ভাবে ইবরাহীম আঃ ও হযরত ইসমাইল আঃ যে মহান কাজ শুরু করেছিলেন এবং যে উদ্দেশ্যে তারা হজ্জ-প্রথার প্রচলন করেছিলেন, তা সবই বিনষ্ট হয়ে যায়। অবশেষে হযরত ইবরাহীম আঃ এর দু’আরই ফসল মানবতার বন্ধু হযরত মোহাম্মদ সাঃ মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে শিরকের মূলোৎপাঠন করেন এবং মুসলিম মিল্লাতের পিতার হাড়ানো হজ্জের নিদর্শন গুলো পূনরুদ্ধার করেন। হজ্জের প্রতিটি পদে পদে আল্লাহর স্মরণ-আল্লাহর নামের যিকর, নামায,ইবাদাত ও কুরবানী এবং কা’বা ঘরের প্রদক্ষিণ। আর এখানে একটিমাত্র আওয়াযই মুখরিত হয়ে উঠে, হেরেম শরীফের প্রাচীর আর পাহাড়ের চড়াই উৎরাইয়ের প্রতিটি পথে উচ্চারিত হয়ঃ ”লাব্বায়িক আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক, লা শারিকা লাকা লাব্বায়িক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা শারিকা লাক” অর্থা হে প্রভু তোমার ডাকে আমি উপস্থিত। আমি এসেছি, তোমার কোন শরীক নাই, আমি তোমারই নিকটে এসেছি। সকল প্রশংসা একমাত্র তোমার জন্যে। সব নিয়ামত তোমারই দান, রাজত্ব আর প্রভুত্ব সবই তোমার। তুমি একক-কেউই তোমার শরীক নাই।” কাবার পথের যাত্রীরা কোথায় হাজিরা দিতে যাচ্ছেন আর হাজিরা দিতে গিয়ে কি বলছেন তা অবশ্যই গভীর মনোযোগের সাথে চিন্তা করতে হবে। এমনিভাবে হজ্বের প্রতিটি অনুষ্ঠান পালন করার সময় কি করা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে তা অনুধাবণ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষেই কি আমরা আমাদের বাস্তব জীবনকে শিরকমুক্ত করতে পেরেছি এবং আল্লাহর কাছে নিজেকে পুর্ণাঙ্গ মুসলিম হিসাবে পেশ করতে পেরেছি ? আত্মজিজ্ঞাসার জবাব যদি নাবোধক হয়। তবে আমরা লাব্বায়িক বলে এ বিশ্বসম্মেলন কেন্দ্রে হাজিরা দিব ঠিকই কিন্তু আল্লাহর হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত লেখা হবে। যেমন প্রানহীন নামায মন্দ কাজ হতে বিরত রাখতে পরছেনা, প্রানহীন রোযা তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি করতে পারছেনা ও যাকাত আমাদেরকে পবিত্র করতে পারছে না। তেমনিভাবে প্রানহীন হজ্ব আল্লাহর হাজিরা খাতায় অনুপস্থিতিই লেখা হবে। তাই কাবার পথের যাত্রীরা তাদের উপস্থিতিকে নিশ্চিত করার জন্য হজ্জে গমনের পুর্বে নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো প্রতি নজর দেয়া প্রয়োজন। শিরককে পরিত্যাগ করতে হবে:- শিরক একটি জুলুম। শিরকের গুনাহ আল্লাহ মাফ করবেন না। শিরক সমস্ত নেক আমলকে ধ্বংস করে দেয়। এ শিরক বর্তমানে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে আমাদের সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করেছে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় এ শিরককে পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ শিরক মুক্ত জীবন ও সমাজ গঠণ করার জন্যই হযরত ইবরাহীম আঃ ও হযরত মুহাম্মদ সাঃ আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাছাড়া মহান আল্লাহর সম্মানিত মেহমান হিসাবে তালবিয়া পাঠে বলা হচ্ছে ”আমি উপস্থিত। আমি এসেছি, তোমার কোন শরীক নাই, আমি তোমারই নিকটে এসেছি। তুমি একক-কেহই তোমার শরীক নাই।” এ কথাটিকে বাস্তব জীবনে রূপায়ন করতে হবে। দ্বিমুখী নীতি পরিহার করে,পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করতে হবে:-জন্মসূত্রে মুসলমান নয় বরং একজন পরিপূর্ণ মুসলিম হতে হবে, সারা জাহানের প্রভুর উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে, নিজেকে তার নিকট সোপর্দ করতে হবে। জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজ কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী হতে হবে। শুধু মাত্র পাচ ওয়াক্ত নামাযে আল্লাহকে প্রভু হিসাবে স্বীকার করা হলো কিন্তু জীবনের বিশাল অংশকে মানুষের তৈরী আদর্শের হাতে সোপর্দ করলে তিনি মুসলিম নন বরং একজন খাটিঁ মোনাফিক। প্রতি নামাযেই অসংখ্যবার বলা হচ্ছে: “আমরা তোমারই গোলামী করি আর তোমারই সাহায্য চাই”। অথচ নামাযের বাইরে তার বিপরীত কাজ করা হচ্ছে। এ এক মিথ্যাচার ছাড়া কি হতে পারে ? আর এ মিথ্যাচারকে বিশ্ব সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে যাবেন না। সেখানে গিয়ে যখন আপনি বললেন. “হে প্রভু তোমার ডাকে আমি উপস্থিত। আমি এসেছি, তোমার কোন শরীক নাই,আমি তোমারই নিকটে এসেছি। সকল প্রশংসা একমাত্র তোমার জন্যে। সব নিয়ামত তোমারই দান, রাজত্ব আর প্রভুত্ব সবই তোমার। তুমি একক-কেউই তোমার শরীক নাই।” অথচ বাস্তবক্ষেত্রে তার বিপরীত কার্য পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের দ্বিমুখী নীতি বা মুনাফেকী আচরণ আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে পরিত্যাগ করতে হবে। হজ্ব চেতনার অনুধাবন:-হজ্জের অনুষ্ঠানগুলো ঐতিহাসিক চেতনাকে সামনে রেখে পালন করতে হবে। আর এ চেতনাকে হযরত ইবরাহীম আঃ ও হযরত ইসমাইল আঃ ন্যায় শিরক উচ্চেদে এবং মানুষকে অসংখ্য মিথ্যা রবের নাগপাশ থেকে মুক্ত করার আপোষহীন সংগ্রামের কাজে ব্যবহার করতে হবে এবং এ সংগ্রাম নিজ নিজ এলাকায় ছড়িয়ে দেয়ার বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবেই হজ্জের স্বার্থকতা ও সুফল পাওয়া যাবে এবং আল্লাহর হাজিরা খাতায় উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাবে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Positive
বাংলাদেশ প্রতিদিন
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি উচিত নয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অন্যান্য
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটুক্তিকারীদের বিরুদ্ধে ভারত সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যারা আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছিল তারাও ক্ষমা চেয়েছে। তাই রাসুল (সা.) এর নির্দেশ মেনে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শনিবার বিকেলে নগরীর কুমারপাড়ায় বাংলাদেশের প্রথম আর্ট কলেজ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানুষ নানা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। ভারত সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই রাসুল (সা.) এর নির্দেশ মেনে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত হবে না।’ সিলেটে দেশের প্রথম আর্ট কলেজের যাত্রা প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, “সিলেট হচ্ছে আধ্যাত্মিক নগরী। বিভিন্ন সংস্কৃতি এখানে সংযুক্ত হয়েছে। এটি যেমন শাহজালালের পূণ্যভূমি, তেমনি শ্রীচৈতন্যেরও লীলাভূমি। আমেরিকা যখন আবিষ্কার হয়নি সেই ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে কিংবা ইউরোপে যখন রেঁনেসা আসেনি; তখন এই বঙ্গভূমিতে ১৪০৮ খ্রিস্টাব্দে চন্ডিদাস গেয়ে ওঠেছেন ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’।” তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সেই আলোকে বলা যায়, এই কলেজ থেকে অনেক মহৎপ্রাণ মহান মানুষ তৈরি হবেন। যাদেরকে নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারবো।’
ধর্মীয় সংস্কৃতি
Positive
ভোরের কাগজ
সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনির ছবিও পোড়াচ্ছে ইরানের বিক্ষোভকারীরা
ইসলাম ধর্ম
ইরানের খোরামাবাদ, যানজান ও আহভাজ শহরে রবিবার মিছিল থেকে দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির পদত্যাগ ও তার ‘নিপাত’ যাওয়ার দাবিতে স্লোগান দেয়া হয়েছে। আবহার শহরে বিক্ষোভকারীরা দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির ছবি সংবলিত সুবিশাল ব্যানারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আটত্রিশ বছর আগে ইরানে যে ইসলামিক বিপ্লব হয়েছিল, তার পর সে দেশে গ্র্যান্ড আয়াতোল্লাহ’র বিরুদ্ধে এই ধরনের বিক্ষোভ প্রায় নজিরবিহীন বলা চলে। বিবিসি পার্সিয়ান বিভাগের বিশ্লেষক কাসরা নাজি বলছেন, ইরানের বিভিন্ন প্রান্তে মূলত তরুণ ও পুরুষ এই বিক্ষোভকারীরা সরাসরি দেশ থেকে মোল্লাতন্ত্র উচ্ছেদের ডাক দিচ্ছেন। তাদের এই বিক্ষোভ ইরানের ছোট ছোট শহরেও ছড়িয়ে পড়ছে এবং ক্রমশ আরও ব্যাপক আকার নিতে যাচ্ছে বলেও তিনি মনে করছেন। এদিকে ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন চলতে থাকলে, শক্ত হাতে তা দমন করা হবে এমন হুশিয়ারি দিয়েছে দেশটির বিপ্লবী বাহিনী। দেশটিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জীবনমান নিম্নমুখী হয়েছে, এমন অভিযোগে তৃতীয় দিনের মত ইরানের বিভিন্ন বড় শহরে বিক্ষোভ চলছে। বিবিসি।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Negative
কালের কন্ঠ
গাজার ইতিহাস সংরক্ষণে ফিলিস্তিনি ৯ নারীর উদ্যোগ
ইসলাম ধর্ম
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার পুরনো বই ও দুর্লভ পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত সারা বিশ্বের গবেষকদের গবেষণায় সহায়তা করতে নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে সংরক্ষণের এই প্রকল্প গ্রহণ করে দি আইস অন হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। এর তত্ত্বাবধানে হাজার বছরের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নথিভুক্তির কাজ করছেন ফিলিস্তিনের ৯ উদ্যমী নারী। তাঁরা পুরনো বই, পাণ্ডুলিপি, পত্রপত্রিকা, পুরনো নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সংরক্ষণ করেন। ২০১৭ সাল থেকে তাঁরা এখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এই উদ্যোগে কাজ করছেন। তাঁদের এই প্রকল্পে সহায়তা করছে ব্রিটিশ মিউজিয়াম। এর মধ্যে শত বছর থেকে শুরু করে হাজার বছরের পুরনো অনেক গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপি আছে। এর মাধ্যমে ফুটে উঠবে ফিলিস্তিনের দক্ষিণাঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাস।কিন্তু ইসরায়েলের অবরোধের ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এই প্রকল্প। গাজা সীমান্তবর্তী এলাকার দীর্ঘ প্রতিবন্ধকতা গবেষণার নথি সংরক্ষণ কাজের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করছে। প্রকল্পের পুনরুদ্ধারে বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন হানিন আল-সারসাবি। তিনি জানিয়েছেন, এখানে দুর্লভ পত্রিকা, বই, সংবাদপত্র, নথি ও পাণ্ডুলিপি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের কাজ করা হয়।কয়েক ধাপে এসব কাজ সম্পন্ন হয়। প্রথমে এসব পাণ্ডুলিপির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাশাপাশি এসব সামগ্রীর কাগজের গুণমান, অম্লতা, কালির স্থিতিশীলতা এবং তা কার্বন বা লোহা হলে এর ধরন পরীক্ষা করে দেখা হয়। এরপর বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যা দেখা হয় এবং নরম ব্রাশ বা মেডিক্যাল ফোরসেপ বা কাঁচি ইত্যাদি ব্যবহার করে পৃষ্ঠা পরিষ্কার করা হয়। অতঃপর তা আর্কাইভে যুক্ত করা হয়।পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের কাজটি খুবই গুরুত্ব বহন করে। বিশেষত আরব ও ইসলামী জগতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এই পদ্ধতি অনুসরণ করে সংরক্ষিত হয়। আর দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ও বইয়ের গুরুত্ব যত বেশি হবে তা সংরক্ষণের গুরুত্বও তত বেশি হবে।আইস অন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক হানিন আল-আমসি বলেন, এই প্রকল্পে পিএইচডি ও স্নাতকোত্তরধারী ৯ জন বিশেষজ্ঞ ও গবেষক কাজ করছেন। তাঁদের আন্তর্জাতিক মান অনুসারে ডিজিটাল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তা ছাড়া গাজা ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু একের পর এক ইসরায়েলি বিধি-নিষেধের কারণে প্রকল্পের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ধর্মীয় প্রতিবেদন
Neutral